তুমিময় আসক্তি পর্ব-২৮

0
1161

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“২৮”

–“”” চলে গেছে আরো দুদিন। রাশেদ মিয়া এখন মোটামুটি ভালো আছে। তার একটা পা ভেঙে গেছে৷ এছাড়া শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাত আছে। রাশেদ মিয়ার গাড়ির ব্রেক ফেল হয়ে এই এক্সিডেন্ট’টা হয়। দোলা এই দুদিন হসপিটাল থেকে যায়নি। দোলার চোখ মুখের অবস্থা খারাপ হয়ে আছে কান্না করার ফলে। এত পরিমাণ কান্না করেছে দুদিন যে,চোখ ফুলে টোপা টোপা হয়ে আছে৷ মুখটা শুকনো হয়ে আছে। নাকের ডগা লাল টকটকে বর্ণ ধারণ করে। রাশেদ মিয়ার একদিন পর জ্ঞ্যান ফিরে। রুদ্র অনেক কষ্টে দোলাকে সামলিয়েছে দুদিন। তানিয়া রোকনকে নিয়ে রুদ্রদের বাড়ি গেছে৷ রোকন একা বাড়িতে থাকতে পারবে না তাই রুদ্র বলে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। জাহির চৌধুরী পরদিন সকালে চলে যায়। রাশেদ মিয়াকে আরো কিছুদিন রাখা হবে হসপিটালে। রুদ্র সাফ জানিয়ে দিয়েছে রাশেদ মিয়া আর কোথাও কাজ করতে পারবে না৷ রোকন আর রাশেদ মিয়ার সব খরচ রুদ্র বহন করবে৷ যদিও এটা দোলা আর রুদ্রর বাবার সামনে বলেছে৷ রাশেদ মিয়া সুস্থ হলে তাকে বলবে রুদ্র এইটা মনস্থির করে সে।

–” দোলা এই দুদিন যেনো অন্য রুদ্রকে দেখেছে। রুদ্র ডক্টর এর সাথে কথা বলা ওসুধ নিয়ে আসা সব নিজ হাতে করেছে৷ আবার দোলাকেও আগলে রেখেছে প্রতি মুহূর্তে। দোলা রুদ্রতে আরো আসক্ত হয়ে গেছে। দোলার এখন মনে হয় সে রুদ্রকে বিয়ে করতে চেয়ে ভুল করিনি। তার সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো না। দোলা এখন তার বাবাকে ধন্যবাদ জানায় রুদ্রর মতো একটা জীবন সঙ্গী দেওয়ার জন্য। রুদ্রর মনটা কোমল। সেও ভালবাসতে জানে। কিন্তু পরিস্থিতি তাতে কঠিন আর হৃদয়হীন হতে বাধ্য করেছে। দোলার ভালোবাসা আবার সে কোমল আবেগী রুদ্রকে জাগিয়ে তুলেছে৷ দোলার অপেক্ষা এখন রুদ্র মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শোনার৷ দোলার পূর্ণ বিশ্বাস রুদ্র তাকে ভালোবাসি কথাটা বলবে একদিন।

–“” তিনদিনের দিন রাশেদ মিয়াকে বাড়িতে নেওয়া হয়। ডক্টর আরো দুদিন রাখতে চেয়েছিলো কিন্তু রাশেদ মিয়া হসপিটালে থাকতে চাইনা বলে বায়না ধরে। তাই রুদ্র রাশেদ মিয়াকে ডিসচার্জ করে নিয়ে আসে। ডক্টর বলেছেন রাশেদ মিয়াকে এখন প্রোপার রেস্ট নিতে হবে। তানিয়া আর দোলা আছে রাশেদ মিয়ার বাড়িতে। রুদ্র রাশেদ মিয়াকে রেখে চলে যায় একটা জরুরি কাজ পড়ে যাওয়াতে।

–“”” দোলা দুপুরের রান্নাবান্না শেষ করে রাশেদ মিয়াকে খেতে দেয়। তানিয়া আর রোকন বসার ঘরে আছে। এর মধ্যে রুদ্রর আগমন হয়। রুদ্রর হাতে বেশ কিছু ফলমূল আর রোকনের জন্য চকলেট আইস্ক্রিম নিয়ে আসে। দোলা রান্নাঘরের সব কিছু গুছিয়ে বের হতেই সামনে রুদ্র বাধে৷ রুদ্র দোলার দিকে মোহনীয় চোখে তাকিয়ে আছে৷ দোলা এতখন কাজ করার ফলে ঘেমে-নেয়ে একাকার অবস্থা। কপালের উপর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে৷ সামনে থাকা বেবি চুল গুলো ঘামের সাথে লেপ্টে পড়ে আছে। মুখ লাল হয়ে উঠেছে দোলার। ওড়নাটা কোমরে গিট দিয়ে বাঁধা। এইভাবে দোলাকে দেখতে অতুলনীয় সুন্দর লাগছে রুদ্রর কাছে। একদম পাকা গিন্নি হয়ে উঠেছে যেনো দোলা। রুদ্রকে এমন মাদক চাহনি নিয়ে তাকাতে দেখে দোলা লজ্জামিশ্রিত চাহনি নিয়ে রুদ্র দিকে তাকিয়ে একটা লাজুক হাসি দেয়।
–‘ রুদ্র আর দোলার ভাব বিনিময়ের ব্যাঘাত দিয়ে রোকন রুদ্র হাত থেকে ফলমূল আর চকলেট নিয়ে নেয়৷ হঠাৎ এমন হওয়ায় রুদ্র ঘাবড়ে গিয়ে রোকনের দিকে তাকায়। আর রোকন একটা হ্যাবলা ক্লান্ত হাসি দিয়ে ওই গুলো নিয়ে সোফায় বসে৷ তানিয়া মুখ চেপে হাসে৷ কারণ সেই রোকনকে বলে এই কান্ডটা করার জন্য। দোলা সেখান থেকে দ্রত পায়ে চলে যায় ভেতরে ফ্রেস হতে। রুদ্র রোকনের সাথে বসে যায়।

–” রুদ্রও অনেক ঘেমে গেছে৷ প্রচন্ড গরম পড়ছে তার উপর রোদের মধ্যে বাইরে থেকে এসে গরম’রা যেনো উপচে পড়ছে তার উপর।

–” দোলা রুদ্রর জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে আসে৷ এরপর রুদ্র ফ্রেস হয়ে আসলে সবাইকে দুপুরের খাবার খেতে দেয়। বিকালে তানিয়া রুদ্রর সাথে বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হয়৷ দোলাকে রেখে রুদ্রর যেতে একদম ইচ্ছে করছে না৷ কিন্তু এখানে থাকবে কথাটা বলবে কি করে এটাও বুঝতে পারছে৷ রুদ্র যদি থেকে যাওয়া নিয়ে কিছু বলে তাহলে নিশ্চিত তানিয়া হাসাহাসি করবে৷ দোলাও বাদ যাবে না৷ তাই রুদ্র মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না৷ বারবার অসহায় চোখে দোলার দিকে তাকাচ্ছে৷ রাশেদ মিয়া সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত দোলা এখানে থাকবে এটা জাহির চৌধুরীর নির্দেশ। দোলারও খারাপ লাগছে তানিয়া আর রুদ্র চলে যাওয়াতে৷ বেশি খারাপ লাগছে রুদ্রর জন্য । তাই দোলাও রুদ্রর দিকে করুণ চাহনি নিয়ে তাকায়।।
–‘ রাক্ষস একটা। এক একা রেখে চলে যাচ্ছে৷ থেকে গেলে কি হয় একদিন৷ আমার জন্য একটু খারাপ লাগে না৷ ভালোই তো হবে তার৷ আমি ছাড়া তো সে ভালোই থাকে৷ আমি শুধু শুধু কষ্ট পায় উনার জন্য। আর কষ্ট পাব না৷ আর উনার কথা ভাবব না৷ থাকুন উনার মতো করে উনি আমিও দেখিয়ে দেব আমিও ভালো আছি রুদ্র দিকে তাকিয়ে দোলা এইসব কথা মনে মনে ভাবে। দোলার মুখে না বললেও মুখটা অভিমানের প্রকাশ ঠিকই দিচ্ছে।

—“” একবার থেকে যাওয়ার জন্যে বললে কি হয়৷ ওকি বুঝে না ওকে ছাড়া থাকতে আমার এখন একদম ভালো লাগে না৷ নাকি সব বুঝেও অবুঝের মতো থাকে৷ আর বলবে কেনো৷ আমি না থাকলে তো তার জন্য ভালো। এমন গুমরোমুখো রাক্ষসের থেকে দূরে থাকতে তো চাই সে৷ থাক না একা যতদিন পারে৷ আমার কি৷ আমিও আসব না নিজ ইচ্ছেতে। রুদ্র মনে মনে ভাবে এইসব দোলার দিকে তাকিয়ে।
— দুজনের মনে একই প্রত্যাশা একই চাওয়া দুজন দুজনের কাছে থেকে যাওয়া। কিন্তু চাওয়া গুলো মনের মধ্যে আবদ্ধ থেকে গুমরে মরছে। মুখে সেটা প্রকাশ হয়েও হচ্ছে না।

-” রুদ্র’রা বেরিয়ে গেলে দোলা মুখটা মলিন করে ঘরে আসে৷ রোকন কোচিং-এ গেছে৷ দোলা আর রাশেদ মিয়া এখন বাড়িতে আছে৷
–” সন্ধ্যার একটু আগে আশা আসে দোলার বাড়িতে৷ সে আজ দোলার সাথে থাকবে বাড়িতে বলে এসেছে৷ দোলার মন খারাপটা আশাকে দেখে পালিয়েছে৷ আশায় আসায় দোলা খুশি হয়৷ রুদ্রর ভাবনা আপাতত মাথা থেকে বেরিয়ে যায়।

–“” রাত ৯টা৷ রাশেদ মিয়া রাতের খাবার খেয়ে ওসুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে৷ দোলা আর আশা বসে গল্প করছে ডিনার সেরে। রোকন তার ঘরে পড়ছে৷
–“” রুদ্র ভাইয়ার কি অবস্থা? আশার কথায় দোলা মৃদু হেসে বলে সে আছে তার মতো ভালোই কথাটা হতাশা নিয়ে বলে দোলা৷ আসলে রুদ্রর চলে যাওয়াতে দোলার মনে একটু অভিমানের জন্ম নেয়৷

-” আচ্ছা সে-কি আগের মতোই বিহেভ করে তোর সাথে নাকি একাট্টু চেঞ্জ হয়েছে৷ বেশ আগ্রহ নিয়ে বলে আশা৷ দোলা মুখে মিষ্টি একটা হাসি ঝুলিয়ে বলে আমি তার অনুভূতি, তার ভালো লাগা, তার মধ্যেকার আবেগকে স্পর্শ করতে পেরেছি আমি। আমার মায়ায় আবদ্ধ করেছি। এখন শুধু অপেক্ষা দুজন দুজনের ভালোবাসা প্রকাশ পাওয়ার। কথাটা বলতে দোলা লজ্জায় কুঁকড়ে উঠে। আশা দোলার কথায় ও দোলার লজ্জা মিশ্রিত মুখ দেখে উচ্চ স্বরে হেসে বলে বাবাহ দোলা তুই দেখি লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠছিস। তা বলি বরের ভালোবাসা পাওয়ার এত ইচ্ছে তোর নাকি ভালবাসা নিয়ে বসে আছিস কৌতুহলী হয়ে বলে আশা।

– দোলা এবার ভীষণ লজ্জা পায়৷ তাই দুইহাতে মুখ ঢেকে বলে তুই দিন দিন অনেক অসভ্য হয়ে যাচ্ছিস আশা৷
– যা বাবা তোমরা রোমাঞ্চ করলে দোষ নেই আর আমি বললে দোষ কথাটা বলে আশা মুখ চেপে হাসে। আর দোলা আশার দিকে ফ্যালফ্যালে চোখে তাকায়। এর মধ্যে দরজায় খটখট শব্দ হয়৷ হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ায় দোলা আর আশা দুজনেই চমকে উঠে।

— এখন আবার কে এলো বলে দোলা উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই চমকে যায় রুদ্রকে দেখে৷ রুদ্র গম্ভীর মুখে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। আর দোলা শকড হয়ে গেছে রুদ্রকে দেখে৷ এই সময় রুদ্রকে সে মোটেও আশা করিনি৷ দোলাকে অবাক হওয়া চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র গলাটা ঠিক করে বলে এইভাবে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি ভেতরে যেতে দেবে।
— দোলার হুস ফিরে রুদ্রর কথায় সরে গিয়ে রুদ্রকে ভেতরে আসার জন্য বলে। আশাও রুদ্রকে এই সময় দেখে অবাক হয়৷ দোলা বলেছিলো রুদ্র চলে গেছে আজ আর আসবে না৷ কিন্তু রুদ্র যে হাজির হবে এই সময় কেউ-ই ভাবিনি।
–‘ আশা মুচকি হাসি দেয় একটা রুদ্রকে দেখে। রুদ্র তার কোনো প্রতিউত্তর না করে জাস্ট একবার তাকায় আশার দিকে।

–” দোলা দরজাটা বন্ধ করে এসে রুদ্রকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুদ্র বলে বাবা পাঠালেন আমাকে। রাতে কোনো দরকার হতে পারে ভেবে পাঠিয়ে দিলেন৷ আমার কিন্তু একদম ইচ্ছে ছিলো না আসার৷ বাবার জন্যই আসা। রুদ্রর কথায় দোলা একটা সেন্টি খাওয়া লুক নিয়ে তাকায়।
— রুদ্র দোলাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুমের মধ্যে চলে যায়। আর দোলা আশার দিকে একবার আরেকবার রুদ্র চলে যাওয়ার দিকে তাকায়।

–‘ কি রে তুই না বললি ভাইয়া আর আসবে না তাহলে? সে তো আমিও জানতাম উনি আসবে না ক্ষীণ স্বরে বলে দোলা। কিন্তু দোলা অনেক খুশি রুদ্রকে দেখে৷ রুদ্রকে খুব মিস করছিলো সে এতখন। যতই মুখে বলুক সে রুদ্রকে নিয়ে ভাববে না৷ কিন্তু রুদ্র যে তার সকল ভাবনা জুড়ে সব সময়ই থাকে।

–” রোকন রুদ্রকে দেখে ভীষণ খুশি। রোকনের সাথে রুদ্রর বন্ডিং টা অনেক ভালো জমে গেছে। রুদ্র রোকনের সাথে খুবই ফ্রেন্ডলি বিহেভ করে যার জন্য রুদ্রকে রোকনের অনেক ভালো লাগে।
-‘
-” কেটে যায় আরো ১৫ দিন। দোলা এখন রুদ্রর বাড়িতে৷ রুদ্র প্রতিদিনই এটা ওটা অজুহাত দিয়ে দোলার কাছে যেতো৷ দোলা রুদ্রর ব্যাপারটা ঠিকই বুঝতে পারতো। রুদ্র যে তাকে ছাড়া আর থাকতে পারে না এটা দোলা অনেক আগেই বুঝেছে৷ তারপরও না বোঝার ভান করে থাকে সে রুদ্রর সামনে। যাতে রুদ্র সব বুঝতে পেরে লজ্জা না পায়৷ দোলা চাই রুদ্র তার আশেপাশে থাকুক৷ তার প্রতি খুব করে আকৃষ্ট হোক৷ দোলা এই মানুষ টাকে তার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে চাই। তার মধ্যেকার হতাশা, না পাওয়া ভালোবাসার কষ্ট সব কিছু দূর করে নতুন করে সব কিছুর জন্মদিতে চাই৷ গম্ভীর রুদ্রনীল চৌধুরী থেকে হাসিখুশি রুদ্রনীলে পরিনত করতে চাই।

–‘ রাশেদ মিয়া এখন ভালো রকমই সুস্থ। রুদ্র রাশেদ মিয়াকে তার সিদ্ধান্ত জানায়৷ রাশেদ মিয়া রুদ্রর উপর আর কোনো কথা বলতে পারে না৷ দোলা খুব খুশি হয়। রুদ্র প্রতি তার শ্রদ্ধা সম্মান বেড়ে যায়৷ দোলার পরিবারকে যে, সে আপন করে নিয়েছে এটাই অনেক বড় পাওনা দোলার কাছে৷ রুদ্রর সব কিছুতে দোলা এখন জড়িয়ে যাচ্ছে৷ শুধু রুদ্রর ভালোবাসি বলাটা বাকি। এটাও হয়তো খুব শীগ্রই দোলা রুদ্রর থেকে শুনতে পাবে। দোলা সেদিনটার জন্য খুব এক্সাইটেড।

–‘” দোলা রত্না চৌধুরীর ব্যাপারটা নিয়ে আর এগুতে পারিনি। তার বাবাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এদিকটা আর হয়ে উঠেনি। দোলা আবার রত্না চৌধুরীর ব্যপারে খোঁজ নিতে শুরু করে। সজল এসেছে দুদিন হয়েছে। তানিয়া দোলাকে জানায় কথাটা। তানিয়া আর সজলের সম্পর্কটা এখন খুবই ঘনিষ্ঠ আকার ধারণ করেছে৷ ফ্রেন্ডশিপে আর আটকে নেই তাদের সম্পর্কটা। সজল তানিয়াকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেয় অনেক আগে৷ তানিয়াও সজলকে পছন্দ করত তাই সেও হ্যাঁ বলে দেয়৷ এখন তাদের প্রেমের সম্পর্ক খুব ভালো ভাবে চলছে। যদিও দোলাকে তানিয়া এখনো কিছু বলেনি সে ব্যাপারে।

–” দোলা সজলের সাথে দেখা করতে চাই৷ আর সেটা আলাদা জায়গায়। দোলা সজলকে ফোন দিয়ে জানায় তার সাথে কোনো নির্জন জায়গায় দেখা করবে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে তার সাথে৷ সজল কৌতুহল নিয়ে দোলাকে অনেকবার জিজ্ঞেস করে কি কথা বলতে চাই কিন্তু দোলা জানায় সামনে থেকে সবটা বলবে৷ সজল দোলাকে একটা পার্কে যাওয়ার জন্য বলে। ওইখানে দুপুরের দিকটা বেশ ফাকা থাকে। দোলা সজলের কথা মতো হ্যাঁ বলে। দোলা ভাবতে থাকে তানিয়াকে বলবে কি বলবে না৷ তাছাড়া কলেজ গেলে তো তানিয়াও যাবে তার সাথে৷ তাই তানিয়াকে না বলে যাওয়াটা ঠিক হবে না তার। তবে দোলা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে কালকের দিনটার জন্য।

–“” রুদ্র অফিস থেকে এসে ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে৷ দোলাকে রাজের ব্যাপারটা বলবে৷ কিন্তু কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে না৷ এইসব ঝামেলার মধ্যে রুদ্র রাজের কথাটা ভুলে গিয়েছিলো। রাজ এসে নিজ দায়িত্বে মনে করে দিয়ে গেছে আবার৷ সাথে রুদ্রকে একগাদা কথাও শুনিয়ে গেছে৷
— দোলা এতখন তানিয়ার ঘরে ছিলো রুদ্র কখন এসেছে দোলা দেখেনি৷ দোলা ঘরে আসতেই রুদ্রকে দেখে চমকে উঠে।
– আপনি কখন এসেছেন নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে দোলা। রুদ্র স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়। দোলা রুদ্রর জন্য কফি নিয়ে আসতে যায়।

–‘ কফি হাতে রুদ্র বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। দোলা আপন মনে নিজের কাজ করছে ঘরের মধ্যে। জামা কাপড় ভাঁজ দিয়ে কাবার্ডে তুলে রাখছে৷ রুদ্র এক চুমুক কফি নিচ্ছে আর দোলার দিকে তাকাচ্ছে৷ দোলা ঘর থেকে রুদ্রর উপর নজর রাখছে৷ রুদ্র কিছু একটা বলতে চাই দোলা এটা বুঝতে পারছে। রুদ্র অস্থিরতা মনোভাবই বলে দিচ্ছে রুদ্র তাকে কিছু বলতে চাই। দোলা ঘরের মধ্যে থেকে রুদ্র দিকে তাকালে দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়৷ রুদ্র সাথে সাথে অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়৷ দোলা একটা তপ্তশ্বাস ফেলে বারান্দায় এগিয়ে যায়৷

–” আপনি কি কিছু বলবেন আমায়? দোলার হঠাৎ কথায় রুদ্র চমকে উঠে বলে এহ। হুম। দোলা রুদ্রর কথায় ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে বলুন কি বলবেন?

–‘” তোমার ফ্রেন্ড আশা আছে না৷ ওকে রাজ পছন্দ করে। মানে ভালোবাসে। কিন্তু আশাকে সেটা রাজ বলতে পারছে না৷ রাজের বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য পেশার দিচ্ছে । রাজ চাই আশাকে বিয়ে করতে৷ তুমি যদি আশার সাথে কথা বলতে এই ব্যাপারে৷ রাজ কিন্তু অনেক ভালো ছেলে। ওর সাথে… বাকিটা বলার আগে দোলা হাত উঁচিয়ে রুদ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলে রাজ ভাইয়াকে আমি চিনি এতদিনে একটু হলেও। উনি যথেষ্ট ভালো মানুষ। আশার সাথে যদি উনার বিয়েটা হয় আশা অনেক সুখে থাকবে এটাও জানি৷ কিন্তু আমি ঠিক বলতে পারছি না আশা কি বলবে এই ব্যাপারে। আমি ওর সাথে কথা বলতে পারি। তবে আমার মনে হয় আশার বাড়িতে রাজের বাড়ির মানুষ গিয়ে কথা বললে আরো বেশি ভালো হয়৷

–” আমি যাব দরকারে রাজের সাথে আশার বিয়ে নিয়ে কথা বলতে। রুদ্র কথায় দোলা মলিন চোখে তাকায়। নিজের বিয়েটা ঠিক করতে পারলো না এখনো এসেছে বন্ধুর বিয়ে নিয়ে ভাবতে রাক্ষস একটা মনে মনে বলে দোলা। দোলার স্থীর চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র ভ্রু কুচকে বলে কি হলো কোন রাজ্যে হারিয়ে গেলে। কি করবো সেটা বলো৷ রাজ তো আমায় পাগল করে দিচ্ছে আশার জন্য।

–” দোলা একটু ভেবে বলে আচ্ছা আমি আশার সাথে কথা বলে আপনাকে জানাবো। রুদ্র মাথা ঝাকিয়ে ওকে বলে। হঠাৎ দোলার গা গুলিয়ে আসে। শরীরটা খারাপ করতে থাকে। দোলা দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। দোলার কাজে রুদ্র চমকে উঠে অবাক হয়ে তাকায়। রুদ্রও দোলার পিছু পিছু ওয়াসরুম পর্যন্ত যায়। দোলা বমি করছে৷ রুদ্র ব্যস্ত হয়ে যায় দোলাকে বমি করতে দেখে৷ হঠাৎ এমন হওয়ার কারণ কি রুদ্র বুঝতে পারছে না।

–” রুদ্র দোলাকে শক্ত করে ধরে আছে। দোলা অনেক ক্লান্ত হয়ে যায় বমি করার পর। রুদ্র দোলাকে ধরে খাটে বসিয়ে দেয়। এসির পাওয়ারটাও বাড়িয়ে নেয়। কারণ দোলা অনেক ঘেমে গেছে বমি করার ফলে। রুদ্র জগ থেকে পানি নিয়ে দোলার সামনে ধরলে দোলা এক নিশ্বাসে সবটুকু পানি খেয়ে নেয়। দোলার মধ্যে ভীষণ অস্থির অস্থির লাগছে। রুদ্র দোলাকে ধরে শুয়ে দিয়ে ডক্টরকে কল করতে যায় কিন্তু দোলা রুদ্রকে বাধা দেয়। রুদ্র ভ্রু কুচকে তাকালে দোলা বলে হয়তো গ্যাস্টিকের সমস্যার জন্য এমন। একটু পর ঠিক হয়ে যাবে। রুদ্র তাও দোলার কথা না শুনে ফোন করতে গেলে দোলা ফোনটা নিয়ে নেয় রুদ্রর থেকে।

–‘ রুদ্রর মধ্যে প্রচন্ড টেনশন কাজ করছে। হঠাৎ দোলার এমন শরীর খারাপ হওয়ার মানে বুঝতে পারছে না। তানিয়া দোলার শরীর খারাপ শুনে ছুটে আসে। দোলা তাকেও আশ্বস্ত করে সে ঠিক আছে বলে। দোলা রুদ্রর মুখের দিকে তাকায় ক্লান্ত চোখে। রুদ্রর মধ্যে চিন্তা, তীব্র ভয় সব কিছু উপলব্ধি করতে পারছে দোলা৷

— আচ্ছা উনার মধ্যে এই চিন্তা এই ভয়ের ছাপ এই গুলো কি আমার জন্য? আমার শরীর খারাপে উনি এত চিন্তিত? আমি উনার কাছে এতটা ইমপোর্টেন্স? উনি আমাকে হারানোর ভয় পাই সত্যি রুদ্রর দিকে তাকিয়ে এই গুলো ভাবে দোলা৷ আর রুদ্র অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে।

— চলবে….