তুমি আমারই পর্ব-১৪

0
2979

#তুমি_আমারই
#পর্ব_১৪
#Sumaia_Jahan

ছাদে দাড়িয়ে দাড়িয়ে অনবরত কেঁদেই চলেছি।আমার দিকবিদিক শুন্য হয়ে গেছে। আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।পর পর এতো গুলো ধাক্কা আমি নিতে পারছি না।হঠাৎ করে কিছু একটা মনে করে চোখ মুছে দৌড়ে রোদ্দুরের কাছে গেলাম। উনি নিজের রুমেই ছিলেন।তাই খোঁজে পেতে আমাকে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি।গিয়ে দেখি উনি ইজিচেয়ারে চোখ বন্ধ করে আছেন।আমি দৌড়ে উনার কাছে গেলাম আর উনাকে প্রশ্ন করলাম,

—- দিয়া আর ওর পরিবার আপনার প্ল্যানে সাই দিলো কেন?

রোদ্দুর চোখ বন্ধ করেই বললো,

—- কারণ ওদের সবার ভালো করে ব্রেনওয়াশ করেছি যে তুমি আর আমি দুজন দুজনকে প্রচন্ড ভালোবাসি কিন্তু তুমি তোমার বাপি আমাদের সম্পর্ক টা মেনে নিবেন না তাই এবাবে বিয়ে করলে উনি কিছু বলতে পারবেন না।আর তোমাকেও বলেতে বারন করে দিয়েছিলাম। সেজন্য তোমাকেও কিছু বলেনি ওরা।

আমি আবারও কিছু একটা ভেবে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

—- কিন্তু এতো কাঠখড় পুড়িয়ে আমাকে বিয়ে করেছেন তো প্রতিশোধ নিতে কই আপনি এখনো তো আমার উপর কোনো টর্চার করেন নি তাহলে আপনার প্রতিশোধ নেওয়া হলো কি করে?

উনি আমার কথায় বসা থেকে উঠে ভাব নিয়ে বললেন,

—- রোদ্দুর খানকে সবার সাথে ঘুলিয়ে ফেলো না মিসেস আশপিয়া খান। রোদ্দুর খানের স্টাইল সবার থেকে আলাদা।শারীরিক টর্চার করলে করলে যতোটা কষ্টের তার থেকে হাজার গুণ বেশি কষ্ট হলো একটা মনুষকে তার আপন জন আর তার ভালোবাসার মানুষ থেকে আলাদা করা।তুমি আমাকে হাজার মানুষের সামনে অপমান করেছো আর আমি তোমাকে তোমার ভালোবাসার মানুষ টার থেকে সারাজীবনের জন্য আলাদা করে দিলাম।

আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

—- আ প নি ক কি বলতে চাইছেন হে?

রোদ্দুর বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,

—- তুমি কি ভেবেছো আমি জানতে পারবো না আদির কথা। তুমি যে আদি নামের একজন সেই ছোট্ট বেলা থেকে ভালোবাসো তা আমি জানতে পারবো না।আমি তোমার সব কিছুই জানি।তাই তো তোমার এমন শাস্তির ব্যবস্থা করলাম।

তারমানে উনি আগে থেকে সবই জানতেন।আর আমি কি-না উনার থেকে আদির ব্যপারটা লোকানোর জন্য কতো কিছুই না করলাম।সত্যি উনি আমাকে অনেক বড়ো একটা শাস্তি দিলেন।তবে আমি কিছুতেই মেনে নিবো না আমাকে যে করেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে। আমি আদিকে ছাড়া বাঁচবো না।আচ্ছা আমি তো ইশার সাহায্য নিয়ে ভার্সিটি থেকে কোনো একভাবে পালাতে পারি। ওখানে বেশি গার্ড থাকে না। হে এইটাই এখন একমাত্র পালানোর পথ।আমি কালই পালাবো।আমার ভাবনার মাঝে রোদ্দুর আমার সমনে হাত নেরে বললো,

—- কোথায় হারিয়ে গেলে? শোনো আজ থেকে আর ভার্সিটি যাওয়া লাগবে না ঘরে পড়বে শুধু পরীক্ষার সময় গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসবে।

আমি মাথায় বাজ পড়লো।আমার শেষ আশাটাও কি শেষ হয়ে যাবে।ভার্সিটি না যেতে পারলে তো এখান থেকে কোনোদিনও পালাতে পারবো না আর আদির খোঁজও আর কোনোদিন পাবো না। না আমাকে যে করেই হোক ভার্সিটি যেতেই হবে।আচ্ছা উনি বুঝে ফেললো না আমি পালানোর মতলব করছি।আমি বললাম,

—- ভার্সিটি না গেলে আমার পড়াশোনা তো সব লাটে উঠবে।আমাকে ভার্সিটি যেতেই হবে….অন্তত পক্ষে কাল তো যেতে হবে সবার সাথে শেষ বারের মতো দেখা করতে হবে তো!

রোদ্দুর একটু হেসে বললো,

—- তুমি কি আমাকে বুদ্দু মনে করো?কাল তোমাকে যেতে দেই আর তুমি পালিয়ে যাও।বাহ!তোমার বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়!আমি বলেছি যখন আজ থেকে তোমার ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ তারমানে বন্ধই। এর অন্যথা হবে না।

শেষের কথা গুলো ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে রোদ্দুর রুম থেকে বেরিয়ে যায়।আর আমি সোফার উপর ধপ করে বসে পরি।আমি কি সত্যিই আদির থেকে সারাজীবনের জন্য আলাদা হয়ে যাবো।কোনোদিনকি খুজে পাবো আদিকে।তাহলে তো আমি মরে যাবো কারন আদিই যে আমার বেঁচে থাকার একমাত্র কারন।ওকে ছাড়া যে বাচতে পারবো না। আমার হাতটা আপনাআপনি আমার গলায় থাকা একটা লকেটের উপর চলে যায়।এই লোকেটা যে আদি আমাকে দিয়েছিলো এটাই যে আদির দেওয়া শেষ উপহার। আজ আদির কথা মনে পরছে খুব বেশিই মনে পরছে।….

দশ বছর আগে…..

আমি সবে মাত্র মাধ্যমিকে ক্লাস সিক্স এ উঠেছি।এখনো কোনো বন্ধু হয়ে ওঠে নি।তেমন কাউকেই চিনিনা সবসময় একা একাই থাকি।স্কুলের মধ্যেই একটা আইসক্রিমের দোকান ছিলো।আমি প্রতিদিন ওই দোকান থেকে আইসক্রিম খেতাম।তো একদিন আমি আইসক্রিম দোকান থেকে কিনে হাতে নিয়ে কিছুদুর যেতেই আমার হাত থেকে আইসক্রিম টা পরে গেলো আমি এখনো একটুও খেয়ে দেখেনি তাই আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো।এমন সময় আমার ক্লাসের কয়েকটা ছেলে আমার এমন অবস্থা দেখে হাসাহাসি করতে শুরু করলো।আর আমার চারপাশে ঘুরে ঘুরে আমার অবস্থা নিয়ে মজা করছিলো আর হাসাহাসি করছিলো।একে তো আমার আইসক্রিম টা পড়ে গেলো তারপর ওরা আমাকে নিয়ে এমন করতে ছিলো আমার অনেক খারাপ লাগলো সাথে সাথে আমি ফুপিয়ে কেঁদে দিলাম।পেছন থেকে কেউ একজন জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,

—– এখানে এসব কি হচ্ছে?

আমাকে নিয়ে মজা করা ছেলে গুলা ওই ছেলেটার কথায় ভয় পেয়ে গেলো আর আমতা আমতা বললো,

—- আদি ভাই কিছু হয়নি এখানে আসলে ও আমাদের সাথেই পড়ে তাই ওর সাথে একটু মজা করছিলাম এইটুকুই।

কথাটা বলেই ওরা দৌড়া চলে গেলো।আর আমি বোকার মতো ওখানেই দাড়িয়ে ছিলাম আমি কিছুই বুঝতে পারছি না এখানে কি হচ্ছে? ওই আদি নামের ছেলেটা আমার কাছে আসলো আর আমার কাছে এসে বললো,

—- বোকার মতো এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাঁদছিলে কেন? ওরা তোমার সাথে এমন করলো তুমি ওদের নামে স্যার ম্যাম এর কাছে কমপ্লেন করতে পারলে না?

আমি চোখ মুছে বললাম,

—- আমার আইসক্রিম টা পড়ে গিয়েছিলো আর ওরা আমাকে নিয়ে বাজে বাজে কথা বলছিলো আমি খুব কষ্ট হচ্ছিলো তাই তো কেঁদেছি।আর তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ওদের কে তাড়ানোর জন্য। আচ্ছা ওরা তোমাকে দেখে এবাবে পালালো কেন? তুমি বাঘ নাকি?

কথাটা বলেই হেসে দিলাম। আর আদি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আদিও একটু হেসে বললো,

—- না আমি বাঘ না কিন্তু ওদের অনেক বড়ো আর ওরা আমাকে ভয় পায় তাই ওভাবে পালিয়েছে।

আমি একটু ভাবার চেষ্টা করে বললাম,

—- ওহ্ তুমি অনেক বড়ো তাই তোমাকে ওরা ভয় পায় কিন্তু আমার তো তোমাকে একটুও ভয় লাগছে না।

আদি হেসে বললো,

—- কারন তুমি তো কোনো খারাপ কাজ করো নি তাই আর যারা খারাপ কাজ করে তারা সবসময় ভয় পায়। তোমার তো এখনো নামটাই জানলাম না তোমার নাম কি?

আমি বললাম,

—- ওহ্ হে তোমাকে তো আমার নামটাই বলিনি আমার নাম আশপিয়া।সুন্দর না নামটা?

আদি বললো,

—- হুম নামটা খুব সুন্দর কিন্তু নামটা একটু বেশি বড়ো তাই আমি তোমাকে……..হে আইশু বলে ডাকবো। তোমার কোনো সমস্যা নেই তো?

আমি হেসে বললাম,

—- হে হে তুমি এত্তো বড়ো হয়েও আমার নামটা বলতে পরো না আর কিন্তু তোমার অনেক ছোটো হয়েও বলতে পারি।ঠিক আছে তোমার কষ্ট হলে তোমার এই ছোট্ট নামেই ডাইকো।

আদি মাথা চুলকে বললো,

—- হুম আমি বড়ো হয়েও পাড়ি না….. আচ্ছা তোমার তো আইসক্রিম টা পড়ে গেছে তো চলো অরেকটা আইসক্রিম খাবে।

আমি মন খারাপ করে বললাম,

—- আমার কাছে আর আইসক্রিম কেনার টাকা নেই তাই আর আজকে আর আইসক্রিম খাবো না কালকে খাবো।

আদি আমার হাত ধরে যেতে যেতে বললো,

—- তোমাকে টাকার কথা বলেছি?শুধু বলেছি আইসক্রিম খেতে।

আমি বললাম,

—- কিন্তু টাকা দেবে কে?

আদি বলললো,

—- তা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না তুমি শুধু আইসক্রিম খাবে।

আমি খুশিতে লাফিয়ে ওঠে বললাম, ” ইয়ে ” আসলে আমি আইসক্রিম খেতে খুব ভালোবাসি। তারপর আদি আমাকে দোকান থেকে আইসক্রিম কিনে দেয়। ও আর আমি আইসক্রিম খেতে খেতে অনেক গল্প করলাম।আমাদের মধ্যে অনেক ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।আদি আমার স্কুলেই ক্লাস টেইনে পড়ে।তাই আমাদের প্রতিদিন স্কুলে আসলেই আমরা গল্প করতাম।আর ও আমাকে অনেক সাহায্য করতো।আমার খুব কেয়ার করতো। ওর ভয়ে আমাকে কেউ কিছু বলতো পারতো না।আমার থেকে আদি অনেক বড়ো হলেও ওকে আমি ভাইয়া বলে ডাকতাম না ওকে আদি বলেই ডাকতাম

চলবে,,,,,,

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]