তুমি আমারই পর্ব-১৫

0
2373

#তুমি_আমারই
#পর্ব_১৫
#Sumaia_Jahan

—- আয়সু আমি কিন্তু তোর সাথে রাগ করেছি হুম?

আদি স্কুল থেকে একটু দূরে একটা পুকুর আছে।আদি প্রতিদিন আমার জন্য এই পুকুর পাড়ে বসে থাকে।প্রতিদিনের মতো আজও বসে ছিলো। মাত্র আমি এসে ওর পাশে বসলাম আর তখনি ও আমাকে এই কথাটা বললো।কথাটা শোনার সাথে সাথে আমি অবাক হয়ে আদির দিকে তাকালাম আমি। আমি তো আমি কিছু করিনি তাহলে ও রাগ করবে কেন কোনো কারন ছাড়া?আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

—- আমি তো কিছু করিনি তাহলে তুমি আমার সাথে রাগ করলে কিভাবে?

আদি পুকুরে ডিল মারতে মারতে গম্ভীর গলায় বললো,

—- তুই অজকে অনেক বড়ো বড়ো দুইটা অপরাধ করেছিস।এখন আবার বলছিস কিছু করিসনি! আইসু তুই তো দিন দিন খুব মিথ্যুক হয়ে যাচ্ছিস!

অামি অবাকের উপর অবাক কি বলছে ও।আমি নাকি দুই দুইটা বড়ো বড়ো অপরাধ করেছি অথচ আমি কিছুই জানি না।পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি?আল্লাই জানে?আমি এবার ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,

—- সেই কখন থেকে কি আজে বাজে বলছো হে।পাগল হয়ে গেলা নাকি?

আদি মুখটাকে গম্ভীর করে বললো,

—- হে এখন তো আমাকে তোর কাছে পাগলই লাগবে!আর আকাশ কে তো পৃথিবীর সবথেকে ভালো মানুষ লাগবে।

এই ছেলে আজকে আমাকে নিশ্চিত পাগল বানিয়ে ছাড়বে।ওর কথার মাথামুণ্ডু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।আমি হতাশ কন্ঠে বললাম,

—- আদি তুমি মনে হয় আজকে অসুস্থ তাই আবলতাবল বকছো।আজকে তারাতাড়ি বাড়ি যাও বাড়ি গিয়ে একটু ঘুমাও তাহলে ভালো লাগবে।

আদি মুখ ফুলিয়ে বললো,

—- হুম এখন আমি বাড়ি চলে যাই আর তুই গিয়ে ওই আকাশের সাথে হেসে কথা বল!এখন তো আমাকে আর ভালো লাগে না এখন তো আকাশই তোর সব ওর সাথেই কথা বলবি!কিন্তু আমি থাকতে না তুই অন্য কারো সাথে কথা বলতে পারি না তুই শুধু আমারই হুম!

শতো বিরক্তর মধ্যেও তুই আমার কথাটা শুনে মনের ভিতর কেমন যেন একটা ভালো লাগা কাজ করছে।কিন্তু ও আমাকে সেই কখন থেকে আবোল তাবোল কথা বলেই যাচ্ছে তাই ঝাঁঝালো গলায় বললাম,

—- আকাশ আকাশ করছো কেন হে আর আমার আকাশ ভাইয়া কে ভালো লাগবে কেন?আর তখন কি বললে আমি নাকি কি বড়ো বড়ো দুইটা অপরাধ করেছি! বলো সেই বড়ো বড়ো অপরাধ গুলো কি?

আদি এখনো মুখ ফুলিয়ে বললো,

—- কোন মুখে জিজ্ঞেস করছিস আইসু তোর এই এত্তো বড়ো বড়ো অপরাধের কথা? তাও বলছি প্রথম অপরাধ হলো তুই একটু আগে আকাশের সাথে দুই মিনিট তিন সেকেন্ড হেসে কথা বলেছিস আর দ্বিতীয় অপরাধ হলো তুই ওই দুই মিনিট তিন সেকেন্ড পরে আমার কাছে এসেছিস।তুই কি মনে করেছিস আমি তোর বল তুই এত্তো বড়ো দুইটা অপরাধ করেছিস এখন কি শাস্তি দেবো তোকে?

আমি ওর কথা শুনে বলবো বুঝতে পারছি না। এগুলো নাকি কোনো অপরাধ।এই ছেলে আমাকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলেই এমন করে।আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না কেন এমন করে।আকাশ ভাইয়া ওরই বন্ধু। এখানে আসার আগে আকাশ ভাইয়া আমাকে ডেকেছিলো তো বড় ভাই এর মতো একজন মানুষ ডেকেছি তাই না দাড়িয়ে পারলাম না।সেজন্য কিছুক্ষন উনার সাথে কথা বলেছি।আর এই ছেলে সেগুলো দেখে আমি কয়সেকেন্ট উনার সাথে কথা বলেছি তাও হিসাব করে রেখেছে। একে এখন হাজার বার বুঝালেও বুঝবে প্রতিদিনই এমন করে।তাই হতাশ হয়ে বললাম,

—- ঠিক আছে আজকে থেকে আর কোনো ছেলের সাথে আর কথা বলবো না। যদি কোনো বড়ো ভাইয়ের মতো মানুষও ডাকে তাহলেও দাড়াবো এবার খুশি!

আদির আনন্দে চোখ চিকচিক করছে।যেন এর থেকে খুশি এ পৃথিবীতে ওর কাছে আর কিছুই নেই।ও খুশিতে আমার হাতটা ধরে বললো,

—- সত্যি আয়সু!তুই আর কোনো দিন কোনো ছেলের সাথে হেসে কথা বলবি না?

আমি ওর হাতের উপর হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে মাথা নেরে বললাম,

—- হুম সত্যি খুব প্রয়োজন ছাড়া কোনো ছেলের সাথে আর কখনো কথা বলবো না।

আমার কথা শুনে ওর খুশি আর দেখে কে মনে হয় পৃথিবীর সবথেকে বড়ো সুখ ও পেয়ে গেছে।তারপর বললো,

—- আমি আজকে খুব খুব খুশি।আয়সু দাড়া তোর জন্য একটা উপহার এনেছি?

আমি বললাম,

—- সত্যি!কই দেখি আর এতোক্ষণ দিলে না কেন?

আদি একটু হেসে বললো,

—- এখন তো দিচ্ছি! এই নে।

কথা টা বলেই একটা লকেট বের করে আমাকে লকেট টা পরিয়ে দেয়।লকেটাতে নীল রঙের একটা বড়ো পাথর আছে আর চারিপাশে নানা রকমের কারুকাজ করা।লকেটা অসম্ভব সুন্দর। আমি লকেট টা ধরে ধরে বার বার দেখছি আর লেকটার সৌন্দর্যে বার বার মুগ্ধ হচ্ছি।আদি বললো,

—- এই লকেট টা কিন্তু কোনোদিন গলা থেকে খুলবি না।এটা তোকে আমার কথা সবসময় মনে করিয়ে দিবে।কখনো আমাকে ভুলতে দিবে না।যখন আমি থাকবো তখন আমার জন্য মন খারাপ হলে এই লকেটার সাথে কথা বলবি।তখন মনে হবে আমি তোর সাথেই আছি।

শেষের কথা গুলো শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো।কেন থাকবে না? আমার আদি আমার সাথে সবসময় থাকবে কখনো কখনো যাবে না।আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় ঘন্টা বেজে উঠলো।আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এখন ক্লাস শুরু হবে।তাই এখন আর কিছু বলা হলো না।আমি উঠে বললাম,

—- আবার পরে কথা হবে এখন যেতে হবে।নাহলে ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে!

আদি মন খারাপ করে বললো,

—- এক্ষুনি যেতে হবে আর একটু থাকা যায় না?

আমি বললাম,

—- এখন যদি না যাই তাহলে ওই পেট মোটা স্যারের কাছে আবার বকা খেতে হবে।

আদি মুখ ফুলিয়ে বললো,

—- ঠিক আছে যা কিন্তু ওই আকাশের থেকে দুরে থাকবি নাহলে কিন্তু তোর কপালে দুঃখ আছে।

আমি একটু হেসে মাথা নেরে সাই দিয়ে চলে গেলাম পেট মোটা স্যারের ক্লাস করতে।

আদি ওখানেই বসে আশপিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

—- যেই আমি তোকে ছাড়া একমুহূর্তও থাকতে পারি না সেই আমি তোকে ছাড়া দশটা বছর কি করে থাকবো?

কথাটা বলেই আদি মন খারাপ করে কিছুক্ষন ওখানে বসে থেকে পরে উঠে নিজের ক্লাসে চলে গেল।
হাসি খুশিতে একটা বছর কেটে গেলো।দুইমাস আগে আদির এসএসসি পরীক্ষা হয়েছে আজ ওর রেজাল্ট বের হয়েছে।আদি খুব ভালো রেজাল্ট করেছে কিন্তু ওর মনে একটু খুশি নেই ওর যে ওর প্রিয়তমাকে ছেড়ে দশটা বছর থাকতে হবে।এটা যে আদির কাছে কতটা যন্ত্রণার তা বলে বোঝানো যাবে না।ও বসে অপেক্ষা করছে ওর প্রিয়তার থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য। কিছুক্ষন পর আশপিয়া এসে আদির পাশে বসে।

আজকে আদি কে খুব মন মরা লাগছে।কিন্তু আমি তো আজকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলি নি তাহলে?আমি আদির কাঁধে হাত দিয়ে বললাম,

—- আদি কি হয়েছে? দেখ আজকে কিন্তু আমি কোনো ছেলের সাথে কথা বলিনি! তাও কেন মন খারাপ করে আছো প্লিজ বলো!দেখ তুমি এবাবে তাকলে আমার একটুও ভালো লাগে না।

আদি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

—- আয়সু তুই আমাকে কখনো ভুলবি নাতো আমাকে কথা দে আমার জন্য অপেক্ষা করবি।

আমি হতবাক কি বলছে ও এসব?আমি অবাক কন্ঠে বললাম,

—- তোমাকে কেন ভুলবো আর অপেক্ষা করতে হবে কেন এগুলো কি বলছো?আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

আদি সামনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

—- আমাকে দশবছরের জন্য বিদেশে যেতে হবে পড়াশোনার জন্য। আমার বাবার অনেক দিনের ইচ্ছা আমাকে বিদেশে পড়াশোনা করানোর।তাই বাবার ইচ্ছা পুরণ করার জন্য আমাকে বিদেশে যেতে হবে।আর আজই আমার ফ্লাইট আজ রাতেই আমাকে প্লেনে উঠতে হবে। আর দশ বছর পরে পড়াশোনা কমপ্লিট করে দেশে ফিরতে পারবো। আমাকে এই দশ বছরে কিন্তু ভুলে যাবি না।আর আমাকে তুই এখুনি কথা দে আমার জন্য তুই অপেক্ষা করবি!

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে ছলছল চোখে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।আমি ওর কথা শুনে কেঁদে দিলাম। আমার ভিষন কষ্ট হচ্ছে আমিও যে আদি কে একদিনও না দেখে থাকতে পারি না। কি করে থাকবো দশ দশটা বছর।আমার কান্না করা দেখে আদি আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,

—- কাঁদছিস কেন আমার আয়সু না খুব স্টং।শোন আয়সু আমাদের বিয়েটা কিন্তু একদম ইউনিক ভাবে হবে সবার থেকে আলাদা ভাবে হুম।আর এই দশ বছর আমি দুরে থাকছি বলে এই ভাবিস না তুই যা খুশি তাই করবি। আমি কিন্তু তোর উপর নজর রাখবো যদি দেখি কোনো ছেলের সাথে হেসে কথা বলেছিস তাহলে কিন্তু তোর কাঁপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম।আর আমি কখন থেকে হাত বাড়িয়ে রেখেছি এবার তো আমার হাত ব্যথা হয়ে যাবে এবার তো কথা দে!

আমি চোখ মুছে হাসি মুখে বললাম,

—- কথা দিচ্ছি দশ বছর কেন হাজার বছরও যদি অপেক্ষা করতে হয় তাহলেও আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো কথা দিলাম।

চলবে,,,,,

[ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন। 🙂]