#তুমি_আমারই
#পর্ব_২০
#Sumaia_Jahan
—- এটেনসোন প্লিজ! আজ আমি আপনাদের সামনে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এনাউন্সমেন্ট করবো।
লোকটার কথায় সবাই ওর দিকে গুরে তাকালো।রুহি লোকটার দিকে তাকিয়ে অবাকের উপর অবাক।কেননা লোকটা ওর চিরচেনা।এই লোকটার জন্যই তো এতো গুলো দিন অপেক্ষা করছিলো।আর এই লোকটা ওর সামনে আজ এভাবে দেখতে পাবে ওর কল্পনার অতিত।আর লোকটা ওর দিকে তাকিয়ে সবার অগচরে চোখ টিপ মারলো।রুহির মুখটা এবার অটোমেটিকলি হা হয়ে গেলো।ওর মনে হচ্ছে ও জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে। ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না ওর সামনে ভালোবাসার মানুষটি দাড়িয়ে আছে।সে তো এখন আসার কথা না!তার তো আরো দুইবছর পর আসার কথা।সে তো তাই বলেছিলো।
তিন বছর আগে রুহি আর আকাশের বিয়ে ঠিক করে রাখে ওদের বাবা মা।আকাশ রোদ্দুরের ছোট বেলার বন্ধু। আর আকাশের বাবা ও রোদ্দুরের বাবা একে অপরের বন্ধু ছিলো।সেখান থেকেই রোদ্দুরেের বাড়িতে আকাশের যাওয়া আসা ছিলো।রোদ্দুর বিদেশ চলে যাওয়ার পরও আকাশ রোদ্দুরের বাড়ি আসতো রুহিকে দেখার জন্য। তখন থেকেই আকাশ রুহিকে ভালোবাসতে শুরু করে।ওদের বাবারা যেহেতু আগে থেকেই বন্ধু ছিলো তাই আকাশ ওর বাবাকে রুহির কথা বললে উনি সাথে সাথেই রাজি হয়ে যান।আর ঠিক তখনই আকাশকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য বিদেশ যেতে হয় পাঁচ বছরের জন্য। তাই যাওয়ার আগে আকাশের সাথে রুহির বিয়ে ঠিক করে রাখে ওদের বাবা-মারা।রুহিও তখন থেকে আকাশ কে ভালোবাসতে শুরু করে। কিন্তু আকাশের তো আরো দুইবছর পর আসার কথা। তবে আকাশ কেন দুইবছর আগে আসলো?আর কিভাবেই বা আসলো?হ্যাঁ রুহির সামনে যে লোকটা দাড়িয়ে আছে সে আর কেউ না রুহির ভালোবাসার মানুষ আকাশ।রুহি নিজে নিজেই বললো,
—– না না আমি মনে হয় আজ আকাশ ভাইয়ার কথা বেশি বেশি মনে করছিলাম তাই হয়তো আকাশ ভাইয়াকে দেখছি।এটা আকাশ ভাইয়া হতেই পারে না।আকাশ ভাইয়া তো দুবছর পর আসবে।
কথাটা বলেই রুহি পিছনের দিকে ঘুরে চলে যাচ্ছিলো।এমন সময় আকাশ আবার সবার উদ্দেশ্য বললো,
—- আপনারা তো সবাই জানেন আমার সাথে রুহির বিয়ে ঠিক করা আছে।আজ কিন্তু এখানে দুটো কারনে আপনাদের কে ডাকা হয়েছে। এক আশপিয়ার জন্মদিন আর দ্বিতীয় কারনটা হলো রুহি আর আমার এনগেজমেন্ট।
কথাটা শুনে রুহি থমকে যায়।সাথে সাথে রুহির উপর লাইট পরলো। আর চারিপাশে হাতে তালির শব্দ ভরে গেলো।
ওইদিকে রোদ্দুর আর আমি দোলনায় বসে বসে আকাশের চাঁদ দেখছে।অনেকক্ষণ পর্যন্ত নিরবে রোদ্দুর আমার কাঁদে মাথা রেখে চাদ দেখছিলো।আমার হঠাৎ বিকেলের কথা মনে হলো।
—- আচ্ছা আদি বিকেলে তোমাকে এমন উদাসীন দেখাছিলো কেন?দেখে মনে হচ্ছিলো তুমি কিছু হারিয়ে ফেলের ভয় পাচ্ছিলে!
রোদ্দুর আমার কথা মাথা তুলে৷ বললো,
—- আসলে আমি ভয় পাচ্ছিলাম তুমি যদি আমাকে ভুল বুঝো আর আমাকে ক্ষমা না করো তাই আমি খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম।
আমি আবারও কিছু একটা ভেবে বললাম,
—- তা তো বুঝলাম কিন্তু তুমি কাকে যেন আনতে গিয়েছিলে?
রোদ্দুর আবার আমার কাঁদে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
—- তোমার আকাশ কে মনে আছে!
—- হুম আকাশ ভাইয়া কে তো মনে আছে কিন্তু ওনার চেহারা মনে নেই।উনি তো তোমার বন্ধু ছিলো।
—- হুম সেই আকাশ কে এয়ারপোর্ট থেকে আনতে গিয়েছিলাম।
তারপর রোদ্দুর আমাকে সবকিছু খুলে বলে।
আমি সব শুনে অবাক হয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে বললাম,
—- কিন্তু রুহি তো আমাকে কিছুই বলেনি! আজ যে ওর এনগেজমেন্ট!
রোদ্দুর ভাব শীল ভাবে বললো,
—- রুহি তো নিজেই জানে না আজ ওর এনগেজমেন্ট!
—- কিহহহ?
—- আকাশ রুহিকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো তাই ওকে না জানিয়েই আজ আকাশ এসেছে।আজ যে আসবে আকাশের সে কথা সবাই জানতো শুধু রুহি আর তুমি ছাড়া। এতোক্ষণে মনে হয় আকাশ এনগেজমেন্ট এর এনাউন্সমেন্ট করেও দিয়েছে।
আমি রোদ্দুর কে আমার কাঁধ থেকে সরিয়ে বললাম,
—- তো আমরা এখানে কি করছি? আমাদের তো এখন নিচে থাকার কথা উচিৎ!চলো আমরা এখনি নিচে যাই!
কথাগুলো বলেই রোদ্দুর আমি চলে যেতে নিলাম।কিন্তু রোদ্দুর মুখ ফুলিয়ে ওখানে বসে রইলো।আমি ওর এমন কান্ড দেখে ভ্রু কুঁচকে বললাম,
—- তুমি এখনো বসে আছো কেন?
রোদ্দুর মুখ ফুলিয়ে বললো,
—- এখুনি যেতে হবে?
আমি বুঝতে পারছি এই অলস সারারাত এখানেই বসে থাকার প্লান করে বসে আছে।তাই রোদ্দুরের দুই হাতে ধরে টেনে নিচে নামতে লগলাম।
এদিকে রুহির সামনে আংটি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।রুহি এখনো ঘোরের মধ্যে রয়েছে।ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ওর সামনে আকাশ দাড়িয়ে আছে। আকাশ রুহির অবস্থা বুঝতে পেরে একটা মুচকি হাসি দিয়ে রুহির হাতটা টেনে আংটি টা পরিয়ে দিলো।আবারও চারিপাশে হাত তালিতে ভরে গেলো।
আমি আর রোদ্দুর নিচে নামতে নামতেই দেখি রুহির আংটি পরানো হয়ে গেলো।আমি রোদ্দুরের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
—- দেখেছো ওদের এনগেজমেন্ট তো শেষ হয়ে গেলো!সব হয়েছে তোমার জন্য। এই তুমি আদো বিদেশ গিয়েছিলে তো? আমার কিন্তু এখন সন্দেহ হচ্ছে!
রোদ্দুর চমকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
—- কেন?
আমি একটু ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
—- না মানে তুমি এতো বছর বিদেশে থেকেও এমন অলস কি করে?আমি তো জানি বিদেশের লোকেরা খুব টাইম মেনটেইন করে চলা চল করে।আর তুমি সেখানে এতো বছর থেকেও এতো অলস কি করে?
রোদ্দুর মুখ ফুলিয়ে বললো,
—- আমি এতো বছর বিদেশে থাকলেও আমি কিন্তু একদম পিউর বাঙালি। আর বাঙালিরা একটু আগটু অলসতামি করবেই এটা স্বাভাবিক।এতে এতো ভাবার কিছু নাই।
শ্বাশুড়ি মা এসে বললো,
—- তোরা আবার ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিস!আজ তো তোদের মধ্যে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিয়েছিস।তারপরও তোদের ঝগড়া বন্ধ হলো না!তোদের নিয়ে যে আমি কি করবো আল্লাহই জানে!
কথাটা বলেই হাসতে হাসতে চলে গেলেন।আর আমি রোদ্দুর দিকে চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে বললাম,
—- মা কি করে জানতো আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো আর সেটা এখন আর নেই?
রোদ্দুর আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে ডোন্ট ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সিরি বেয়ে নিচে নেমে গেলো।আর আমি ভ্যবলার মতো ওখানেই দাড়িয়ে রইলাম।তারমানে সবাই সব কিছু জানতো। শুধু মাত্র আমি কিছু জানতাম না।আমার ভাবনার মাঝে দিয়া কোথা থেকে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
—- ম্যাডামের রাগ কি এখনো কমেনি?
আমি ওর দিকে একবার তাকিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললাম,
—- রাগ করমো না তো কি আপনার গলায় মালা দিবো?কেমন বন্ধু তুই একটা বার আমাকে সব কিছু বলতে পারলি না!তাহলে তো আর এতো কিছু হতোই না।
দিয়া আমাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে করুন ভাবে বললো,
—- বিশ্বাস কর দোস্ত আমিও সব কিছু ভালোভাবে জানতাম না।রোদ্দুর ভাইয়া যেটুকু জানতো আমিও সেটুকুই জানতাম।আর আমি তোকে বলতাম কিন্তু রোদ্দুর ভাইয়া আমাকে বলতে দেয়নি তাই তোকে কিছু বলতে পারিনি।প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দে।
আমিও আর রাগ করে থাকতে পারলাম না।কি করেই বা রাগ করবো ওকে যে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি। তাই ওকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।আর বললাম,
—- আমিও তোকে ভুল বুঝে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি আমাকেও ক্ষমা করে দে।
দিয়া আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,
—- আমি অনেক সৌভাগ্যবতী যে জীবনে তোর মতো একজন বন্ধু পেয়েছি।
চলবে,,,,,,