তুমি আমার জিবন পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0
441

#তুমি_আমার_জিবন
#লেখিকা_তৃষা_খাতুন
অন্তিম পর্ব

“”সন্ধ্যা ৬ টা বাজে আব্রাহাম ভার্সিটি থেকে এসে দেখে আরু এখোনো ঘুমাচ্ছে। এতে সে কিছুটা চিন্তিত হয়। কি হলো কি মেয়েটার । চিন্তাই কপালে ভাঁজ পড়ে।

“”আস্তে আস্তে আরুর কাছে গিয়ে ওর কপালে হাত দিয়ে দেখে জর টর আসলো নাকি। নাতে এ সময়ে তো সে শুয়ে থাকে না ।

“””কপালে হাত রেখে বুঝতে পারে আরুর শরীর হালকা গরম হয়ে আছে। সে আর আরুকে না ডেকে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার‌ নিয়ে একবারে ফ্রেস হয়ে বের হয়।

“””আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে সে খেয়াল করে আরু ধরপর করছ উঠে বসে।সে আরুকে কিছু বলবে তার আগেই আরু উঠে দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করে। আব্রাহাম ও আরুর পিছন পিছন ওয়াশরুমে যাই।

“””আরু বমি করতে করতে ক্লান্ত। আজ সারাদিন বেচারা বমি করতে করতে শেষ। এদিকে আব্রাহাম পেছন থেকে আরুকে জরিয়ে ধরে রাখে। কারন আরু দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা। আব্রাহাম আরুর নাভির ওপরে চাপ দিয়ে ধরে রাখছে এতে আরুর বমি ভাব কিছুটা কমে যায়। আরু মুখে পানি দিয়ে তার পুরো শরীরটা আব্রাহামের ওপর ছেড়ে দেয়।

“”আব্রাহাম আরুকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ওয়াশরুম পরিস্কার করে। রুমে ঢুকে বিছানায় শুয়ে থাকা আরুকে আব্রাহাম তুলে বসায়। এদিকে সারা দিন বমি করাই আরুর শরীর নেতিয়ে পড়েছে। আরুর চোখ গুলো কেমন ঢুকে গেছে। মুখ টা শুকিয়ে গেছে।

“”আব্রাহাম আরুর দুই গালে হাত দিয়ে ধরে বলে ওঠে,

“”কি হয়েছে জান তোমার।

“আরু ক্লান্ত হয়ে বলে,

“”আমি যানিনা সকাল থেকে কেমন বমি হচ্ছে আর মাথা ঘুরাচ্ছে।

“আব্রাহাম চিন্তিত হয়ে বলে,

“”জান আমি যা ভাবছি তুমি ও কি তাই ভাবছো।

“”আব্রাহাম এর কথা শুনে আরু বলে,

“”হুম

“””আরুর কথা শুনে আব্রাহাম কিছুটা খুশি আবার কিছুটা চিন্তিত হয় পড়ে। কারন তাদের বিয়ে হয়েছে মাত্র ২ মাস আর এর মধ্যে আরু যদি কনসিভ করে তাহলে তো সমস্যা। কারন আরুর বয়স কম যদিও তাড়াহুড়াই তাদের বিয়ে হয়েছে আর এর মধ্যে বেবি। না আর আব্রাহাম ভাবতে পারছে না। সে আরুকে রেখে ফার্মেসি থেকে প্রেগন্যাসি কিট আনতে যায়।

___________________

“”রাত ৯ টা বাজে সবাই খাবার টেবিলে বসে রাতের খাবার খাচ্ছে। এদিকে আরু খাওয়া বাদ দিয়ে শুধু নাড়াচাড়া করে খাবার। সবার খাওয়া হয়ে গেছে।

“”আব্রাহাম খেয়াল করে আরু খাচ্ছে না তাই সে বলে, কি হলো খাচ্ছো না কেন

“”আরু আব্রাহাম এর দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে বলল,

“”আরে আমি খেলে শুধু বমি পাচ্ছে ।আর খাবার খেতে ইচ্ছে করছে না।

“আব্রাহাম বলে,

“”না খেলে তো হবে না জান। বেশি না খাও একটু খাও।

“”না আমি খাবো না (বাচ্চাদের মতো করে বলে)

“””আব্রাহাম বলে ওকে খেয়ে না এ খাবার গুলো কিন্তু জুস টা তো খাও।

“”এ টা কিসের জুস(জুসের গ্লাসের দিকে ইশারা করে বলে)

এটা বেলের জুস।

এটা খেতে কেমন।

তুমি খেয়ে দেখো, কেমন খেতে।

আব্রাহাম এর কথা শুনে, আরু বেলের জুস টা খেতে শুরু করে।জুস টা খেয়ে সে মজা পাই তাই সে আব্রাহাম কে বলে,

জুস টা অনেক মজার , আমার জন্য কাল আবার আনবে।

আরুর কথা শুনে আব্রাহাম মুচকি হেসে বলল, আচ্ছা আনবো।

হুম।

______&_________

রাত বারোটা বাজে আরু আব্রাহামের বুকে গুটি শুটি মেরে শুয়ে আছে। আরু আস্তে আস্তে উঠে বসে ।আরুকে উঠতে দেখে আব্রাহাম বলে কি হলো উঠছো কেন।

আরু ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো করে বলে,

“”আমার না

“”আব্রাহাম বলে ,

‘’”কি আমার না বলো

“”আমার না তোমাকে,

“”কি আমাকে বলো।

“”আমার তোমার আদর খেতে ইচ্ছে করছে। কথা টা বলে আরুর আব্রাহাম কে জরিয়ে ধরে চুমু খাই আব্রাহাম এর কন্ঠ নালিতে। আরুর কথা শুনে আব্রাহাম বলে,

“”তুমি না অসুস্থ, তাহলে এ সব উদ্ভট কথা বলো কেন।

‘“আরু আব্রাহাম এর বুক থেকে মাথা তুলে বলে,

“”কোথাও কি লেখা আছে, যে অসুস্থ অবস্থায় আদর করা যাই না।

“”না কোথাও লেখা নেই। কিন্তু

“”আব্রাহাম এর কথা শেষ না হতেই,আরু বলে,

“”আমি কিছু‌ জানি না আমার এখন আদর চাই।

“”আব্রাহাম আরুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

“”জান তুমি অসুস্থ তোমার তো কষ্ট হবে।

আরুও আব্রাহামকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

আমি সহ্য করতে পারবো।

আরুর কথা শুনে, আব্রাহাম আরুকে ছেড়ে দিয়ে বলে,

সত্যি তো

আরু মুচকি হেসে বলল,

হুম

বাইরে কালব ঝড় উঠেছে। গাছ পালা গুলো সব এদিকে ওদিকে হেলে পড়েছে। বাইরে প্রচন্ড জোরে বাতাস বইছে।আর এ বাতাসের জন্য জানালার থাই গ্লাস গুলো তে শব্দ হচ্ছে। এদিকে চার দেয়ালের মধ্যে ও জড় বইছে। এ ঝড়এ শুধু দুইজন ব্যাক্তির ভাড়ি নিঃশ্বাস এর শব্দ শুনা যাচ্ছে।_

_______

দেখতে দেখতে কেটে যায় ৮মাস। সময় যে কি ভাবে কেটে গেল বুঝাই মুস্কিল।

সে দিন সকাল টেস্ট করে দেখে ২দাগ উঠেছে। আর শিওর হওয়ার জন্য হসপিটালে টেস্ট করে দেখে। আরু ৭ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা।

__

এদিকে সারে ৯ মাসের এতো বড় পেট নিয়ে, আরু রাইমার বিয়েতে উপস্থিত।

সেদিনের ঘটনার পর আর রাইমা আর রাইমার মা বুঝতে পেরেছে। তারা এমন করলে কাজের কাজ কিছুই হবে না উল্টো তাদের ভাই বোনের সম্পর্কটা নষ্ট হবে। তাই পুরোনো সব বাদ দিয়ে নিজের জীবন আগাতে, আজ রাইমার বিয়ে।

বিয়ে বাড়ীতে সবাই বেস্ত। কেউ নতুন বর‌ কে নিয়ে,আবার কেউ নতুন বউকে নিয়ে। এদিকে আরু একটা রুমে শুয়ে আছে।তার আজকে ভালো লাগছেনা কিছুই। তার তল পেটে আস্তে আস্তে ব্যাথা হচ্ছে। বিয়ে বাড়ীতে সবাই বেস্ত কাকে এ কথা জানাবে বুজতে পারছে না সে।

আস্তে আস্তে ব্যাথা বাড়ছে। এদিকে আরু ব্যাথায় ছটফট করছে। আব্রাহাম একটা কাজে রুমে এসে দেখে আরু ব্যাথায় ছটফট করছে। সে আরুকে জরিয়ে ধরে বলে,

কি হয়েছে জান তুমি এমন করো কেন ‌। কোথায় কস্ট হচ্ছে বলো।

আরু কোনো রকম বলে,

আমার তল পেটে প্রচণ্ড ব্যথা করে।

আরুর কথা শুনে আব্রাহাম বুঝতে পারে আরুর প্রসব বেদনা উঠেছে।

সে আরুকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

-________________

ছোট বাচ্চার কান্নার আওয়াজ এ আব্রাহাম এর বাড়ির সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে।ওটি থেকে নার্সের হাতে কাপড়ে মোড়ানো নরম তুলতুলে দেহটাকে দেখে আব্রাহাম একটা হাসি দিয়ে বলে,

মাশাআল্লাহ আমার রাজকন্যা,আমার জান্নাত, তোমাকে সাগ্বতম।

নার্সের হাত থেকে বাবু টা নিজের কোলে তুলে নিয়ে আব্রাহাম আরু কেমন আছে জানতে চাই।

নার্সের থেকে জানে আরু ভালো আছে, আর নরমাল ডেলিভারি হওয়াতে বিকালেই ছুটি দিয়ে দিবে।

আব্রাহাম বাবু কোলে নিয়ে আরুর কেবিনে ঢুকে, দেখে আরু শুয়ে আছে।হাতে ক্যালেনা লাগানো। আব্রাহাম আরুর পাশে বসতেই আরু চোখ মেলে তাকাল, আরুকে তাকাতে দেখে আব্রাহাম একটা প্রাপ্তির হাঁসি দিয়ে বলে,

#তুমি_আমার_জিবন আর বাবুটাকে দেখিয়ে বলে, এটা আমার জান্নাত।

আব্রাহাম এর কথা শুনে আরু ও হাঁসি দেয়। হঠাৎ আব্রাহাম আরুর মেয়ে কান্না জুড়ে দেয়। তার কান্না দেখে আরু বলে,

তুমি বাবুকে আমার কাছে দাও ,ওর খুদা পেয়েছে। আমি ওকে খাওয়াবো। তুমি বাইরে যাও।

আরুর কথা শুনে আব্রাহাম বলে, বাবু খাওয়া বা খাওয়াও আমি , কেন বাইরে যাবো।

আব্রাহাম এর দিকে তাকিয়ে আরু বলে,

আমার লজ্জা করছে, তোমার সামনে খাওয়াতে।

আরুর কথা শুনে আব্রাহাম মুচকি হেসে বলল,

তোমার এমন কিছু কি আছে তা আমি দেখিনি।

আব্রাহাম এর কথা শুনে আরু, লজ্জা পেয়ে বলল,

অসভ্য

আব্রাহাম আরুর কে বলে,

আমি অসভ্য না হলে আজ আমরা মা বাবা হতে পারতাম না।

কথা টা বলে,আরু আর আব্রাহাম এক সাথে হেসে দেয়, তার হাসি দেখে ছোট বাবু কি বুজল কে জানি, সেও তার বাবা মার সাথে হেসে দেয়।
এভাবেই তারা হাঁসি খুশি জিবন যাপন করুক।

( সমাপ্ত)