#তুমি_আমার
#পর্ব_১৮
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত
ভিতরটা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে সিরাতের।জিনিস ভাঙ্গার শব্দ হয় কিন্তু মন ভাঙ্গার কোনো শব্দ হয় না।তাইতো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন মানব মানবীর ওর হৃদয় ভাঙ্গার শব্দ কর্ণগোচর হচ্ছে না।চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখবে কখনও কল্পনাও করতে পারে নি।কাঁজলের সাথে লিপ কিসে লিপ্ত আবেশ।পেছন দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে।প্রায় পাঁচ মিনিট হলো দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু তাঁদের কোনো হেলদোলই নেই।তারা নিজেদের কামুকতা মিটাতে ব্যস্ত।জ্ঞানশূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ হুশ ফিরে এলো ওর।নিজেকে স্বাভাবিক করে চোখের জল হাতের উল্টো পিঠে মুছে রুমে প্রবেশ করলো।এরইমধ্যে আবেশ ছেড়ে দিলো কাজঁলকে।কাঁজল হাস্যজ্জ্বল মুখে কিছু বলতে যাবে আবেশকে তার আগেই সিরাত কলার চেপে ধরলো আবেশের।সিরাতের এমন রূপ দেখে হতভম্ব বিস্মিত আবেশ।চোখ মুখের অবস্থা দেখেই কলিজ্বা শুকিয়ে গেলে তাঁর।কি এমন হয়েছে যে এই মেয়ে আগুন হয়ে আছে।সিরাত ককর্শ কন্ঠে বললো,
“কি বলেছিলাম আপনাকে মনে নেই।বলেছিলাম না বাড়িতে বউ রেখে বাইরে পরকিয়া আমি মেনে নেবো না।তাহলে আজ কেন এই সিচুয়েশন তৈরী হলো।তখন তো বড় বড় কথা বলছিলেন।তাহলে আজ কেন উনাকে আপনি ছিহ”!ঘৃণায় মুখে ঘুরিয়ে নিলো সিরাত।আবেশ ওর কথার মানে বুঝতে না পেরে বললো,
“সিরাত কলার ছাড়ো।তুমি যা ভাবছো তা নয়।পুরোটাই ভুল বুঝাবুঝি।তোমার দেখায় ভুল আছে”।
“হোয়াট!আমার দেখায় ভুল”তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো সিরাত।”ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবো তারপর কাঁজল আঁখি যাকে ইচ্ছা তাঁকে বিয়ে করুন বা ফুর্তি করুন আমার কিচ্ছু যায় আসে না”।কাঁজল বোকার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে।আবেশও একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।কলার থেকে হাত ছাড়াডে ছাড়াতে বললো,
“যা জানো না তা নিয়ে কখনও কথা বলো না।একটু মাথা ঠান্ডা করে আমাকে সবটা বলার সুযো
গ দাও”।
“নো ওয়ে মিঃ আবেশ।আর কোনো সুযোগ দেওয়া যায় না।আপনি আমায় ঠকিয়েছেন।আমি আপনার স্ত্রী হয়েও এই স্পর্শগুলো পাইনি অথচ একটা বাইরের মেয়ে সেটা পেয়ে গেছে।তাহলে তাঁকে নিয়েই থাকেন সরে গেলাম আপনার জীবন থেকে”।
আবেশকে ছেড়ে হনহন করে রুম থেকে চলে গেলো সিরাত।আবেশের এখন মাথায় তুলে আছাড় মারতে ইচ্ছে করছে ওকে।ভালো একটা ব্যাপারকে কত খারাপ আর জঘন্য করে ভুল বুঝে চলে গেলো।চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কষ্ট পেয়েছে।আমি কি কষ্ট পাইনি সিরাত।যখন দিনের পর দিন তুমি রাদিফ হাসাহাসি আড্ডা দিয়েছো।সেদিন আমি কত আশা করে বলেছিলাম ঘুম ভেঙ্গে তোমাকে দেখবো অথচ রাদিফের জন্য তুমি আমার কথার অবাধ্য হলে।ওর ভাবনার মাঝেই কাঁজল বললো,
“আবেশ সিরাত ব্যাপারটা ভালোভাবে নেয় নি।এখন কি করবে ও তো রাগ করে চলে গেলো”।
“আর নয় এবার সবকিছু ক্লিয়ার করা প্রয়োজন”।।আবেশ সিরাতের ক্লাসে গিয়ে ওর খোঁজ করলো কিন্তু ওরা কেউ নেই।বাইরে গিয়ে দেখলো সবকয়টা আড্ডা দিচ্ছে শুধু সিরাতই মিসিং।আরুকে ডেকে পাঠিয়ে সিরাতের কথা জিজ্ঞেস করতেই আরু বললো, ” জানি না”।এবার নিজেকে পাগল পাগল লাগছে আবেশের।মেয়েটা কখনও বুঝে নি ওকে।শুধু ভুল বুঝে গেছে।ওর অনুভূতির মূল্য দেয়নি সব সময় নিজের ভাবনা গুলোকে নিয়ে পরে থাকে। কিন্তু এবার বুঝবে ওকে ভুল বুঝার শাস্তি।
আজ চারদিন হলো সিরাতের সাথে দেখা নেই আবেশের।সেদিনের পর ওর বাসায় গিয়েও তাঁর দেখা পায় নি।রুমে ঘাপটি মেরে বসে ছিলো দরজা খুলে নি।ফোনে ট্রাই করেও পাওয়া যায় নি।সিয়ামের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পেয়েছে ফুপির বাসায় চার পাঁচদিনের জন্য চলে গেছে।ওর সাথে যোগাযোগের সমস্ত পথ বন্ধ।কিছুতেই নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না তাঁর।ওদিকে আবেশের অবস্থা বেহাল।চারদিন ভুল বুঝে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে যেটা আবেশের সহ্য হচ্ছে না।সিয়াম সবকিছু ঠিক আছে কিনা জিজ্ঞেস করায় আবেশ ঠিক আছে বলে কাটিয়ে দিয়েছে।এই কদিন কলেজে মন বসে নি আবেশের ক্লাস করাতে গেলেই সিরাতকে না দেখে ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে তাঁর।এতদিন ছুঁতে না পারলেও দু চোখে ভরে দেখেও তো তৃষ্ণা মিটাতে পেরেছে সে।কিন্তু আজ নিরুপায়।আরু হয়তো দুজনের টানাপোড়ন বুঝতে পেরেছে তাই আজ নিজের ভাইয়ের সাথে সরাসরি কথা বলার জন্য ওর রুমে ঢুকলো।কপালে হাত রেখে রুম অন্ধকার করে বিছানায় শুয়ে আছে আবেশ।আরু লাইট জ্বালাতেই বিরক্তি নিয়ে বললো,
“উফ অসহ্য!কে লাইট অন করলো?তাড়াতাড়ি অফ করো ভালো লাগছে না ঘুমাবো”।আরু ভাইয়ের পাশে গিয়ে মাথায় হাত রাখলো।আবেশ রাগে চোখ খুললো।আরুকে দেখে বললো,
“আরু ভালো লাগছে না প্লিজ চলে যা।তোর দুষ্টুমি সহ্য করার মতো মন মানসিকতা আমার নেই”।
“থাকবে কি করে মন সেটা তো সিরাত নিয়ে পালিয়েছে”।
“ফালতু না বকে চলে যা”।
“ফালতু বকছি না তো।এটাই সত্যি।আচ্ছা ভাইয়া সিরাতের সাথে তোমার কি হয়েছে।কেন কলেজ আসছে না।কারো সাথে কন্ট্রাক্ট নেই।রেজাল্টের পর খুশি মনে তোমার রুমে ঢুকেছিলো হঠাৎ কি এমন হলো যে তারপর আর ওকে দেখাই গেলো না”।আবেশ ফুস করে একটা শ্বাস ছাড়লো।কাঁজল ঘিরে সকল ভুল বুঝাবুঝির কথা বললো।আরু শুনে স্বাভাবিকভাবে বললো,
“ভাইয়া ধরো তোমার ভালোবাসার মানুষ তার উপর তোমার স্ত্রী যদি তোমার সামনে প্রতিনিয়ত তোমার সামনে একটি ছেলেকে নিয়ে চলাফেরা করে তার সাথে ভালো বিহেভ করে শুধু তোমার বেলায় ইগনোর তখন তুমি কি করবে”?আবেশের কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো।শুয়া থেকে উঠে বসে বললো,
“কি বলতে চাইছিস তুই”?
“হ্যাঁ ভাইয়া সিরাত তোমায় ভালোবাসে।নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে।কিন্তু কখনও প্রকাশ করে নি।তোমাকে তিথির সাথে সহ্য করলো কিন্তু কিছু বললো না।কাঁজল ম্যামের সাথে সহ্য করলো তখনও কিছু বললো না।শুধু আড়ালে চোখের জল ফেলে গেছে।তোমার ছোট ছোট কেয়ারগুলো নিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে।তোমার কিছু মূহুর্তের ভালো ব্যবহার খুশিতে ওর চোখ চিকচিক করতো।কিন্তু এতকিছুর পর যখন শেষ মূহুর্তে তোমাদের একসাথে দেখলো তখন কি করে সহ্য করবে।তাই হয়তো নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।আচ্ছা তুমি বলো তুমি কি পারতে”?
হতভম্ব বিস্মিত আবেশ।সিরাত তাকে ভালোবাসে এটা সত্যি।কিন্তু কখনও তো বুঝে উঠতে পারে নি।অনুমান করলেও বারবার ও সে অনুমানকে মিথ্যা প্রমাণিত করে দিয়েছে।সেজন্যই বুঝি ওইদিন রেস্টুরেন্টে এমন করেছে।আর সেদিন এই জন্য এতটা কাঁদছিলো।ইডিয়ট বিয়ে তো হয়েই গেছে তাহলে এত উদার সাজলো কেন।যদি এসব না করতো তাহলে আমার মনে খটকা লাগত না।, ওকে নিয়ে উল্টা পাল্টাও ভাবতাম না শিট!
আজকাল রাদিফ অনিশ্চয়তায় ভুগে তার মায়াবিনীকে নিয়ে।মাঝে মাঝে বক্ষস্থলে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হয়।সেদিন ওর কাউকে ভালোবাসে কথাটা শোনার পর থেকে কিভাবে বলবে নাকি নিজের ভালোবাসার কথা বলবে না সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে।সব অনিশ্চয়তাকে পেছনে ফেলে আগামীকাল মায়াবীনিকে কথাটি বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাদিফ।একবুক সাহস নিয়ে তার সামনে দাঁড়াবে ।পজেটিভ নেগেটিভ যাই হোক সব শুনে ছাড়বে।যদি সত্যি কাউকে ভালোবাসে তাহলে নিজে দূরে সরে যাবে।সব ভালোবাসার যে পূর্ণতা পেতে হবে এমন তো নয়।অপূর্ণতার মাঝেও অনেক পূর্ণতা লুকায়িত থাকে।ভালোবাসার মানুষটার সুখেই তার সুখ ভেবে চলে যাবে।আবারও নিজের একাকিত্বকে গ্রহণ করে সকলের থেকে দূরে চলে যাবে।
আজ ছয় দিন পর সিরাতের দেখা পেলো আবেশ।চোখে মুখে শুষ্কতা বিদ্যমান।এ কদিন যে ভালো কাটেনি তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেশ।কলেজ ক্যাম্পাসে রাদিফের সাথে দেখেই মেজাজ হারালো আবেশ।দুজনে হেসে হেসে কথা বলছে যা ভিতরটায় আরো বেশি আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।এতদিন ওকে যন্ত্রণা কষ্টে রেখে নিজে দিব্যি খুশিমনে হেঁটে চলেছে।পাবলিক প্লেস বিধায় কিছু বললো না।নিজের রুমে গিয়েই পিয়ন কে দিয়ে ডেকে পাঠালো ওকে।কিন্তু সিরাত তার কথার তোয়াক্কা করলো না।আবেশ বারান্দায় দাঁড়িয় আবারও পিয়ন পাঠালে আবেশের চোখে চোখ রেখে না করে দেয়।পিয়ন এসে খবর দিলে ঝড়ের বেগে ছুটে যায় আবেশ।কোনোদিক না তাকিয়ে ওর হাত ধরে টানতে থাকে।রাদিফ হ্যাবলার মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সবটা।সিরাত নিজেকে ছাড়ানোর জন্য হাত মোচড়া মোছড়ি করছে কিন্তু ছাড়াতে ব্যর্থ সে।হাতের বাধন আলগা হওয়ার বিপরীতে আরও শক্ত হচ্ছে।এত জোরে চাপ দেওয়ায় হাত পুরো জ্বলছে।সিরাত সহ্য করতে পারছে না।টানতে টানতে কলেজের বাহিরে নিয়ে ওর গাড়িতে ছুড়ে মারে।দ্রুত নিজে গাড়িতে উঠে গাড়ি লক করে স্ট্যার্ট দেয়।সিরাত বোরুনোর জন্য দরজা ধাক্কাচ্ছে কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।এদিকে কলেজের একজন টিচারের এমন বিহেভে সবাই শকড।যে যার মতো মন গড়া কাহিনী বানিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে।
#চলবে