তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-৩৭

0
1784

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৩৭
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

তিশান ভাই এখানে কিন্তু আসছে কেনো? এখানে চেনা জানার তো কিছু নেই। আমাদের দুই পরিবারের সম্পর্ক অনেক পুরোনো। আমার মেয়েকে আপনারা ছোটবেলা থেকে দেখছেন আমারও আপনার ছেলেকে ছোটবেলা থেকে দেখছি। আর ওরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসে। তাই এখানে কিন্তুর প্রশ্নই আসে না। আমি চাচ্ছিলাম আগামী শুক্রবার ওদের চার হাত এক করে দিতে।

আভিয়ান ঝটকা মেরে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় মহুয়া জাহানের হাত থেকে। ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে,

আপনার কী কমনন্সেস নেই? বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুদ্ধি কী হাঁটুর নিচে চলে গেছে? আমাদের ফেমিলির এই অবস্থা আপনি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছেন। আপনার কী মনে হয় এখানে কারো বিয়ে নিয়ে মাতামাতি করার মন আছে? আগামী শুক্রবার কেনো আরো ১০০ টা শুক্রবার আসলেও আমি বিয়ে করব না। যে পর্যন্ত না অহি সুস্থ হয়ে যায়। আপনার মেয়েকে বিয়ে দেবার যদি এতো তাড়া থাকে। তাহলে আপনার মেয়েকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিন। আমার কিংবা আমার পরিবারের কোনো আপত্তি নেই।

কথাগুলো বলে আভিয়ান এক মুহূর্ত দেড়ি না করে সোফা থেকে ওঠে পড়ে। ধুপ ধাপ পা ফেলে সিঁড়ি দিয়ে ওঠতে থাকে। ছোঁয়া আভিয়ানের পিছনে যেতে নিলে আভিয়ান দাঁড়িয়ে পড়ে। আভিয়ান পিছনে না ঘুরেই বলে,

আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চায়। আমার রুমে ইনফ্যাক্ট আমার রুমের আশেপাশেও যেনো কেউ না আসে।

আভিয়ান পুনরায় সিঁড়ি বেয়ে ওপরে চলে যায়। ছোঁয়া, হেলাল রহমান আর রেশমি রহমান অবাক চোখে আভিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তিশান আহম্মেদ সোফা থেকে ওঠে নিজের রুমে চলে যায়। মহুয়া জাহান হেলাল রহমানের সামনে এসে দাঁড়ায়।

ভাইয়া উনাদের কথায় কিছু মনে কর না। বাসার পরিস্থিতি তো বুঝতেই পারছ। কারো মন মানসিকতায় ভালো নেই। আভিয়ান অহিকে ভীষণ ভালোবাসে তাই তোমার সাথে এমন বিহেভ করে ফেলছে। আর তোমারও এই সময় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা ঠিক হয়নি।

৭৭

বন্যা ভার্সিটির ক্যান্টিনে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। তার মন ভালো নেই। আজকে যদি অহি, কণা আর সাফাত থাকত তাহলে এতক্ষণ ক্যান্টিন মাতিয়ে রাখত হৈ হৈ করে। এসব ভেবেই বন্যার কান্না পাচ্ছে। আজ কতগুলো দিন হলো কারো সাথে কারো দেখা হয় না, কথা হয় না। বন্যা তার ফোনে পাঁচজনের একটা গ্রুপ ফটো বের করে। ছবিটা তারা নদীর পাড়ে বেড়াতে গিয়ে তুলেছিল। সাফাত অহির চুল টেনে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অহি চোখ মুখ কুচকে গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কণা নোমানের চুল ধরে টানছে। আর তাদের সামনে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বন্যা মুহূর্তটাকে ক্যামেরা বন্দি করে ফেলে। বন্যা কণার হাসি মুখের ছবিটাতে হাত বুলিয়ে বলে,

কণা তুই কোথায়? আমাদের রেখে কোথায় হারিয়ে গেলি? আমাদের কথা কী তোর মনে পড়ে না? তুই তো বলেছিলি কখনো আমাদেরকে ছেড়ে কোথাও যাবি নাহ। তাহলে আজকে কোথায় হারিয়ে গেলি। তুই কী জানিস অহির কথা?

বন্যার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে ফোনের স্কিনে। নোমান তার একটা হাত বন্যার থুতনির কাছে রাখে। বন্যার চোখের পানিগুলো নোমানের হাতের তালুতে পড়ে। নোমান আরেক হাত বাড়িয়ে বন্যার চোখের পানিগুলো মুছে দেয়।

আমার বন্যা রাণীর চোখের পানিগুলো এত সস্তা হয়ে গেলো। যে এখন আর আগমন বার্তা না পাঠিয়ে হুট হাট চলে আসে।

বন্যা অশ্রু সিক্ত চোখে নোমানের দিকে তাকায়। অন্য সময় হলে হয়তো নোমানের কথা শুনে হেসে দিত।

ডোন্ট ক্রাই। অশ্রু সিক্ত নয়নে তোমাকে মানায় নাহ। তোমাকে ক্রোধান্বিত নয়নে মানায়। আর আমার বন্যা তো স্ট্রং গাল। তাই না?

নোমান সব আবার আগের মত কবে ঠিক হয়ে যাবে? কবে কণা ফিরে আসবে? কবে বন্যা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসবে। আমার পাঁচজন একসাথে কবে এই ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিব? বল না?

সব ঠিক হয়ে যাবে। খুব তাড়াতাড়ি সবকিছু আবার আগের মত হয়ে যাবে। কণাকে তো খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। খুব তাড়াতাড়ি কণাকে খোঁজে পাব আর খুব তাড়াতাড়ি বন্যাও সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসবে। ( আশ্বস্ত ভরা কন্ঠে বলে)

নোমান বন্যাকে মিথ্যা বলে শান্তনা দিলেও। নিজে শান্ত হতে পারছে না। কী করে পারবে? আজকে কতগুলো দিন হয়ে গেলো কণার কোনো খোঁজ নেই। বন্যার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি।

৭৮

আভিয়াকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে কণা। জানালা দিয়ে সুর্যের আলো এসে কণার চোখ মুখে আছড়ে পড়ছে। সূর্যের আলো থেকে বাঁচার জন্য কণা আদিয়াতের বুকে মুখ লুকায়। আদিয়াতও কণাকে ভালো করে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। কিন্তু কণার ঘুম বেশিক্ষণ স্থির হলো না। শুয়া থেকে লাফ মেরে ওঠে বসে পড়ল। সাথে সাথে চোখ মেলে তাকায় আদিয়াতের। কণা নড়াচড়া করার ফলে তার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল অনেক আগেই। যাতে কণার ঘুম ভেঙে না যায় তার জন্যই শুয়ে ছিল।

কণাকে কান্না করতে দেখে আদিয়াত শুয়া থেকে ওঠে বসে। কণার দু গালে হাত রেখে চোখের পানিগুলো মুছে শান্ত গলায় জিঙ্গেস করে,

কী হয়ছে? খারাপ স্বপ্ন দেখেছ?

অহি ভালো নেই। আমাকে প্লিজ ঐ বাসায় নিয়ে চলুন নাহ। আচ্ছা না নিয়ে যান অহি, বন্যা, সাফাত ভাইয়া আর নোমান ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলিয়ে দিন নাহ। ওরা কেউ ভালো নেই আমাকে ছাড়া। আমার মন বলছে অহির কোনো বিপদ হয়েছে। প্লিজ আমাকে একটা বার কথা বলিয়ে দিন নাহ। আপনার কাছে আর কিচ্ছু চাইব নাহ।

তুমি জীবনে প্রথম আমার কাছে কিছু চাইলে। অন্য কিছু চাইলে হয়তো আমি নিজের জান দিয়ে হলেও তোমার চাওয়াটা পুরণ করতাম। কিন্তু আমি তোমার এই চাওয়াটা পূর্ণ করতে পারব না। আমি কিছুতেই তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিব না। আমি বলছি তো অহি সুস্থ আছে। তুমি কী আমাকে বিশ্বাস কর না?

কণা কিছু না বলে আদিয়াতকে জড়িয়ে ধরে।

আমি তোমাকে এখন কারো সাথে যোগাযোগ করতে দিতে পারব না। আমি চাই না তুমি অহির কথা জানো। তুমি যদি ওদের সাথে যোগাযোগ কর তাহলে জানতে পেরে যাবে অহির অসুস্থতার কথা। মিথ্যা বলার জন্য সরি প্রেয়সী। আমি তোমাকে সত্যিটা জানতে দিব না। ( মনে মনে )

আদিয়াত কণার মাথায় কিস করে বলে, আজকে তোমাকে আমার বাবা-মার কাছে নিয়ে যাব। আমার মাম্মার সাথে দেখা হলে তোমার মন একদম ভালো হয়ে যাবে। ওহ সরি আজকে থেকে তো আমার একার মাম্মা না তোমার তো মাম্মা। তাড়াতাড়ি গোসল করে রেডি হয়ে নাও। তোমাকে নিয়ে একটু পরেই বের হয়ে যাবে।

৭৯

আভিয়ান ছাদের ওপর বসে আছে। উদাস হয়ে একটা ফুল গাছের দিকে তাকিয়ে আছে।
তখনি আভিয়ানের ফোনটা বেঁজে ওঠে। ফোনের স্কিনের নামটা দেখেই আভিয়ানের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেশ দেখা যায়।
আভিয়ান তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে।

হ্যালো

__________________

আপনাকে ভুলে গেলে তো মনে করব।

__________________

আই মিস ইউ টু।

__________________

আমিও অপেক্ষায় আছি ক………….

আভিয়ান আর কথাটা সম্পূর্ণ করলা না। কারণ তাকে কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। তাড়াতাড়ি ফোনটা কেটে গাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাই। তাকে ছোঁয়া পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে। আভিয়ান সামনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,

ছোঁয়া তুমি এখানে কেনো এসেছো? আমি বলেছি না আমাকে একটু একা থাকতে দিতে। ( ধমক দিয়ে কথাটা বলে)

তুমি এভাবে কথা বলছ কেনো?

কীভাবে কথা বলছি?

ছোঁয়া আভিয়ানের সামনে এসে দাঁড়ায়। ইনোসেন্ট মুখ করে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,

তখনকার জন্য সরি। আমি জানি তোমাদের মনের অবস্থা এখন ভালো নেই। আমারও মনের অবস্থা ভালো নেই। অহির এই অবস্থা। আমি জানতাম আব্বু তোমাদের এখানে বিয়ের কথা বলতে এসেছে। সরি বলছি তো এখনো কী আমার ওপর রাগ করে থাকবে?
এই দেখ কানে ধরে সরি বলছি। প্লিজ রাগ করে থেকো না।

আভিয়ান ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমি কী তোমার ওপর রাগ করে থাকতে পারি?

__________________

আভিয়ান শাওয়ার নিচ্ছে প্রায় ১ ঘন্টা ধরে। শরীর ঘষতে লাল করে ফেলছে। আরো আধা ঘন্টা শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়।

৮০

মাম্মা আর পাপা কাউকে বলি নাই যে আজকে তোমাকে নিয়ে আসব। আমি ভাবছি উনারা দুজন তোমাকে দেখে কী করবে? সারপ্রাইজড হবে না শকড।

কণা দাঁড়িয়ে আছে তার শ্বশুরবাড়ির দরজার সামনে পাশে আদিয়াতও দাঁড়িয়ে আছে। আদিয়াত হাত বাড়িয়ে কলিংবেল বাজায়। দরজার খোলে দেয় ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে একটা মেয়ে। আদিয়াতকে দেখেই ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।

চলবে …….