তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-৩৮

0
1222

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৩৮
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

কণা দাঁড়িয়ে আছে তার শ্বশুরবাড়ির দরজার সামনে পাশে আদিয়াতও দাঁড়িয়ে আছে। আদিয়াত হাত বাড়িয়ে কলিংবেল বাজায়। দরজার খোলে দেয় ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে একটা মেয়ে। আদিয়াতকে দেখেই ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। আদিয়াতের পাশে যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে মেয়েটা খেয়ালই করেনি।

কণা এক দৃষ্টিতে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে না মেয়েটা সম্পর্কে আদিয়াতের কী হয়? বোন? নাকি অন্য কিছু? আদিয়াত এক ঝটকাই আরুহিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আরুহিকে ধাক্কা মেরে দুরে ফেলে দেয়।

কণা আরুহিকে ধরতে গেলে আদিয়াত কণার হাত ধরে ফেলে। উল্টো দিকে ঘুরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আরুহি এই বাসায় থাকলে কণাকে এখানে কিছুতেই রাখবে না। কণার লাইফ নিয়ে বিন্দু মাত্র রিস্ক সে নিবে না। আরুহিকে আদিয়াত এক ফোটা বিশ্বাসও করে না।

কী হলো আপনি চলে যাচ্ছেন কেনো? বাসার ভিতরে যাবেন নাহ?

না।

কেনো?

আদিয়াত কিছু বলার আগেই রাহেলা বেগম এসে উপস্থিত হয়। আরুহি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,

আদিয়াত তুমি আমাকে এভাবে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলে। তোমার সাথে এই মেয়েটা কে?

রাহেলা বেগম আরুহির কথাটা যাস্ট পাত্তা দিলেন নাহ। তিনি জানেন আদিয়াত এমনি এমনি কিছু করে না। আর এটাও জানেন আদিয়াত আরুহি কিছু না করলে ধাক্কা দেওয়ার জন্যও আরুহিকে টার্চ করবে না। রাহেলা বেগম আরুহির দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেন। আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে বলে,

কীরে তোরা ঐদিক ফিরে আছিস কেনো? বাসার ভিতরে আসবি না? তোরা আসবি আমাকে আগে বললে কত কিছু রেডি করে রাখতাম। তোর বাবা তোদের দুজনকে দেখে সারপ্রাইজ হয়ে যাবে। তোরা একটু দাঁড়া আমি বরণ ডালা নিয়ে আসি। বরণ করার পর বাসার ভিতরে আসবি।

মাম্মা আমরা বাসার ভিতরে আসব না।

কেনো?

মাম্মা আমি তোমাকে অনেকদিন আগে একটা কথা বলেছিলাম। তোমার হয়তো মনে নেই। আমি মনে করিয়ে দেই। আমি বলেছিলাম, এই মেয়ে (আরুহি) যেদিন আমাদের বাসা থেকে যাবে সেদিন আসবো। এই মেয়ে যতক্ষণ আমাদের বাসায় থাকবে ততক্ষণ আমি বাসার ত্রি-সীমানাই আসবো না। আর এখন তো আমার সাথে কণা আছে।

কণা আদিয়াতের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। মাথায় হালকা ঘোমটা দিয়ে রাহেলা বেগমের সামনে দাঁড়ায়। কণা রাহেলা বেগমকে ঝুঁকে সালাম করতে গেলেই রাহেলা বেগম আটকে দেয়।

পায়ে না বুকে আয়।

রাহেলা বেগমকে কণা জড়িয়ে ধরে।

তোকে তুই করে ডাকলাম বলে তুই কী আমার ওপর রাগ করলি? রাগ করলে তুমি করেই ডাকব।

একদম না। তুমি আমাকে তুই করেই ডাকবে আর আমি তোমাকে তুমি করে। বুঝছ?

হুম বুঝেছি। আর তুই আমাকে মাম্মা বলে ডাকবি।

আমি তোমাকে মাম্মা বলে ডাকব না।

কেনো? তুই আমাকে নিজের আপন ভাবিস না। তাই তো মাম্মা বলে ডাকছিস না।

উফ তোমার কী আমাকে ইংরেজ বলদ মনে হয় যে, মাম্মা মাম্মা করব। আমি তো তোমাকে মামুনি বলে ডাকব।

আদিয়াত রেগে বলে, তুমি আমাকে অপমান করছ। তুমি আমাকে ইংরেজ বলদ বলছ?

বলার কী আছে? আপনি নিজেই তো সারাদিন প্রুভ করেন। দেখতেও বলদের মতো আর সারাদিন বিলায়ের মতো ম্যা ম্যা করে। হুহ।

আরুহি রেগে বলে, এই মেয়ে কে তুমি? তোমার সাহস কী করে হয় আদিয়াতকে অপমান করার? আন্টি তুমি এই মেয়েকে নিয়ে এতো আদিক্ষেতা কেনো করছ?

আদিয়াত কিছু বলতে যাবে তার আগেই তুর্যয় আহম্মেদ ( আদিয়াতের বাবা) আসে। উনি এসে আদিয়াত আর কণাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। কণাকে তিনি আগেই দেখেছিলেন আদিয়াতের ফোনে। তাই উনার কণাকে চিনতে একটুও অসুবিধে হয়নি। কণা আদিয়াতের দিকে তাকায়। আদিয়াত কণাকে ইশারায় বলে, পাপা। কণা গিয়ে তুর্জয় আহম্মেদকে সালাম করে।

তুর্জয় আহম্মেদ কণার মাথায় হাত রেখে মুচকি হেসে বলে, বেঁচে থাক মা। এবার আমার একটা মেয়ে গেলাম। ঘরে লক্ষি এসেছে।

তোমরা কণাকে দেখে নিয়েছ এখন আমরা চলে যাব। আর কণা তুমি যদি কিছু বলতেও চাও আমি শুনব না। তোমার এখনি আমার সাথে যেতে হবে।

রাহেলা বেগম মৃদু রাগ দেখিয়ে বলে, তুই তোর ভাব অন্য জায়গায় গিয়ে দেখা। তুই থাকতে চাইলে থাক না থাকলে নাই। আমি আমার মেয়েকে কোথাও যেতে দিব না।

আমি আমার বউকে এখানে কিছুতেই থাকতে দিব না। আমার বউ আমার সাথে যাবে। আমি যেখানে আমার বউ সেখানে।

তুর্যয় আহম্মেদ বলে, তুমি এই বাসায় কেনো থাকতে চাইছ না? কী সমস্যা এখানে থাকলে।

বউ মানে কী? আদিয়াত তুমি কখন বিয়ে করলে? তুমি কী করে আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পার? আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আদিয়াত। দেখ এই মেয়ের থেকে আমি অনেক বেশি সুন্দরী এবং স্মার্ট। দেখ এই মেয়ে গাইয়াদের মতো শাড়ি পড়ে আছে।

যাস্ট সাট আপ। তোমার সাহস কী করে হয় আমার ওয়াইফকে অপমান করার। তুমি কী আমার অভিভাবক? যে তোমার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে বিয়ে করতে হবে। তুমি আমাকে ভালোবাসো নাকি আমার সুন্দর ফেইস আর টাকা পয়সা কে? কণার সাথে তুমি নিজের তুলনা দিচ্ছ। কণার নখের যোগ্যও তুমি না। বাঙালি নারীর সৌন্দর্য শাড়িতেই। তোমাদের মতো মর্ডান ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়া মেয়েদের আমি ঘৃণা করি। নেক্সট টাইম যদি কোনো ভাব কণাকে তুমি ইনসাল্ট করার চেষ্টা কর। তাহলে থাপড়ায়া তোমার গাল লাল করে দিব।

আদিয়াত একটু দম নিয়ে বলে, পাপা তোমার উত্তর নিশ্চয়ই পেয়ে গেছো। এই মেয়ে পদে পদে কণাকে ইনসাল্ট করার চেষ্টা করবে। এই মেয়ে যেদিন এই বাসা থেকে চলে যাবে সেদিন আমি এই বাসায় আসব।

৮১

সাফাত অহির হাত ধরে বসে আছে। চোখ দিয়ে টপ টপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। তবে এটা কষ্টের না সুখের কান্না। ডক্টর বলেছে, অহি হয়ত খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। অহির শারীরিক অবস্থা আগের থেকে অনেকটা বেটার।

অহি তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও। আমি তোমাকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না। তোমার মুখে আমার নামটা শোনার জন্য অস্থির হয়ে আছি। আমার মন বেকুল হয়ে আছে তোমার কন্ঠসর শোনার জন্য।

সাফাত অহির কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। সে আর পারছে না তার প্রেয়সীকে এভাবে দেখতে। তার প্রেয়সী তো এমন নিরব নিস্তব্ধ ছিল না। সে তো তার হাসি, খুশি, বাচাল রাণীকে ফিরে পেতে চায়।

অহি তুমি খুব খারাপ। তুমি আমাদের সবার কষ্টটা দেখতে পাচ্ছো না। তুমি বলো না তুমি কণাকে খুব ভালোবাসো। তুমি আমাদের কাউকে ভালোবাসো না। না আমাকে না কণাকে। তুমি যদি কণাকে ভালোবাসতে তাহলে কণার বিপদের সময় এভাবে চুপ করে থাকতে পারতে না। আমি জানি কণার ব্যাপারে অল্প কিছু হলেও তুমি জানো। তোমার মাধ্যমেই আমরা জানতে পারব কণা কোথায় আছে? প্লিজ অহি চোখ খোল না। প্লিজ একবার আমার দিকে তাকাও না।

৮২

মহুয়া জাহান আর তিশান আহম্মেদ কণার সমস্ত জিনিস বাইরে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। কণার একটা ছবি গিয়ে পড়ে আভিয়ানের পায়ের কাছে। ছবির কাঁচটা ভেঙে গেছে ফ্রেমটাও ফেটে গেছে। আভিয়ান ছবিটা হাতে তুলে নেয়। ছবিটা হাতে নেওয়ার সময় ভাঙা কাঁচ দিয়ে আভিয়ানের হাত কেটে যায়। আভিয়ান সেটাকে পাত্তা না দিয়ে উনাদের প্রশ্ন করে,

তোমরা এইগুলো বাইরে ছুঁড়ে ফেলছ কেনো?

তিশান আহম্মেদ রেগে বলে, ফেলব না তো কী করবো? ওর জন্য আজকে অহির এই অবস্থা। এখন তো শুধু ওর জিনিস ছুঁড়ে ফেলছি। ঐ বজ্জাত মেয়েকে সামনে পেলে ওকে খুন করে ফেলতাম।

মহুয়া জাহান এগিয়ে এসে বলে, আমি জানতাম কণা অহিকে সহ্য করতে পারে না। কারণ সবাই ওর থেকেও অহিকে ভালোবাসে। মনে মনে যে অহির প্রতি এতো ঘৃণা পুষে রেখেছে সেটা বুঝতে পারিনি। ওর ঘৃণায় অহির এই অবস্থা। আল্লাহ আমি কী পাপ করেছিলাম যে, ওর মতো একটা খারাপ মেয়ে আমার গর্ভে দিয়েছিলে।

এই জিনিসপত্র কী এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখবে?

না। সব একসাথে করে বাগানে পুড়িয়ে ফেলব।

আভিয়ান রেগে বলে, এই মেয়ের জিনিসপত্রের ছাইও আমি এ বাড়িতে দেখতে চায় না। সব জিনিসপত্র নিয়ে নদীর পাড়ে যাচ্ছি। সবকিছু সেখানে পুড়িয়ে ছাই নদীতে ফেলে দিব। এই মেয়ের সমস্ত স্মৃতি আমাদের জীবন থেকে মুছে ফেলব।

আভিয়ান একটা সার্ভেন্টকে ডেকে বলে কণার ব্যবহৃত সমস্ত জিনিস গাড়িতে তুলতে। সার্ভেন্টরা সবকিছু গাড়িতে তুলে দেয়। আভিয়ান চলে যায় কণার সমস্ত জিনিস নিয়ে।

চলবে…….