তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব-৩০

0
3660

#তুমি_নামক_প্রাপ্তি
#পর্ব:30
#Suraiya_Aayat

” Sir ভাবী কই ? ভাবীকে তো দেখছি না কোথাও ৷ ভাবী কি এখনো আপনাদের চিনতে পারেনি ? মানে এখনো কি কিছু ই মনে পড়েনি ওনার ?”

আরিশ অত্যন্ত সাবলীল ভাবে মাথা নাড়িয়ে না জানালো, যার অর্থ আরু এখনো সুস্থ হয়নি ৷
আরিশের ভাবঙ্গিতে আবির নিরাশ হলো ৷ হতাশাগ্রস্ত হয়ে বলল
” আমাদের বিয়ের আগেও কি ভাবীর সব মনে পড়বে না ? ভাবী কি প্রানখুলে আমার বিয়েতে আনন্দ করতে পারবে না !”

আরিশ স্বাভাবিক ভাবেই বলল
” জানি না আবির, আরুপাখির সুস্থ হতে একদিন ও লাগতে পারে, কিংবা এক সপ্তাহ ,কিংবা এক মাস , কিংবা এক বছর কিংবা কখনোই নয় ৷”

আবির রুগ্ন কন্ঠে বলল
” Sir আপনার কষ্ট হচ্ছে না ভাবীকে এভাবে দেখতে ?”

আরিশ সাবলীল ভাবেই মাথা নিড়িয়ে বলল
” নাহ ৷”

আবিরের অবাক হয়ে যাওয়া মুখ দেখে আরিশ বলল
” জানোতো আবির সবসময় আমরা যেটাতে খুশি হয় সেই জিনিসটা হতেই হবে এমনটার কিন্তু কোন মানে নেই ৷ তেমনি আমি আমার চাওয়া পাওয়ার গুরূত্ব খানিকটা কম দিই যাতে সেগুলো অপূর্ণ থাকলেও কষ্টটা যেন কম হয় ৷ তেমনি আরু পাখির ক্ষেত্রেও ঠিক তেমন ৷ ও যে আমার কাছে আছে, দিনের শুরুতে আর দিনশেষে ওর মায়াবী মুখটা দেখে সবটা শুরূ আর সবটার শেষ হয় এটাই কি অনেক নই !”

আবির ভাবুকসুরে বলল
” তবুও sir …আপনি ভাবীকে এতো ভালোবাসেন জানি আপনার কষ্ট হয় ৷”

আবির আরিশের কথা শুনে ব্যালকনিতে আর্শিয়ানের সাথে বসে থাকা আরুর দিকে তাকাচ্ছে ৷ সেখানে খাঁচায় একটা দোয়েল পাখি এনেছে আরিশ , আরুর অবসর সময়ে তার সাথে কাটানোর জন্য ৷ যেদিন আরূ তার সব স্মৃতি ফিরে পাবে সেদিন আরিশ সেই দোয়েল পাখিটাকেও উড়িয়ে দেবে ৷ পাখিদের কে প্রান খুলে নীল আকাশে উড়তে দেখতেই মানায়, খাঁচার বদ্ধ জীবনে তাদেরকে বড্ড বেমানান লাগে ৷
আরুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে পুনরায় আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল
” ওই যে বললাম না চাওয়া পাওয়ার গুরূত্বটা কমিয়ে দিয়েছি যাতে অনাকাঙ্খিত কষ্ট গুলো মনে গভীর ভাবে আচড় কাটতে না পারে ৷”

আবির মুগ্ধ নয়নে আরিশের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ ও ওর জীবনে এই প্রথম একজন পুরুষের ওপর মুগ্ধ হয়েছে তার কথাবার্তায় আর তার ব্যাবহারে ৷ আরিশের প্রতি ওর মুগ্ধতা কমবার নয় ,দিন দিন যেন বেড়ে যাই ৷

আবিরকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে আরিশ বলল
” এই যে দেখোনা আমি কি কখনো ভেবেছিলাম আমি কখনো আবার জীবন ফিরে পাবো নতুন করে ! কিন্তু দেখো আল্লাহর রহমতে এবং তোমাদের সহযোগিতায় তো তা হয়েছে তাইনা !
সেদিন ওরা যখন আমাকে মেরে আমাকে রাত 12টাই নদীর ধারে ফেলে এসেছিলো তখন তো আমার মৃতপ্রায় অবস্থা ছিলো ৷ তারপর তো তোমাদের শুটিং দলের মাঝে থাকা একজন ঘুরতে এসে কাউকে নদীর ধারে পড়ে থাকতে দেখে তো তোমাদের ডাকে তারপর তোমরা গিয়ে আমাকে বাঁচাও ৷ আমাকে হসপিটালে ভর্তি করলে আমি টানা দশদিন আই সি ইউ তে ভর্তি ছিলাম ৷ এটা একটা পুলিশি তদন্তে নামলো, পরিচয় হলো মিহির আর মিনহাজ sir এর সাথে ৷ 10দিন পর চোখ মেলে যখন তাকিয়েছিলাম তখন সবটা কল্পনা বলে মনে হচ্ছিল ৷আঙুল নাড়ানোর ক্ষমতা অবধি ছিলো না, কেবলমাত্র কষ্টে চোখ দিয়ে কয়েকফোটা জল গড়িয়ে পড়তো ৷ প্রায়2 মাস হসপিটালে ভর্তি ছিলাম কিন্তু মাঝখানে একদিন প্রবল চেষ্টায় শুধু মাত্র আমার কি হয়েছিলো সেটা বলতে পেরেছিলাম আর এর সাথে যে নরীপাচারের একটি কেস খুব ভালো করে জড়িত আছে সেটাও বলতে পেরেছিলাম, কিন্তু মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ার কারনে সবটা ভালোভাবে জানাতে পারিনি৷ আমাকে সেই মূহুর্তে দূর্বল অবস্থায় বাসায় পাঠালে দ্বিতীয়বার যে আমাকে মারার জন্য যে তারা আবার আমাকে আ্যটাক করবে না এমন কোন সিওরিটি ছিলো না, তাই মিনহাজ সাহেব আমাকে তার বাসায় তার আর মিহিরের সাথে রাখার সিদ্ধান্ত নেন, মিহির sir এর একান্ত অনুগত ছাত্র, মিহিরের বউ মারা যাওয়ার পর থেকেই মিহির sir এর সাথে থাকতেন ৷ sir ও যেহেতু একাই থাকতেন ৷ আমিও যোগ দিলাম তাদের সাথে তাদের একান্ত সঙ্গী হয়ে ৷
সেখানে থেকে sir আমাকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসতেন ৷ মিহিরের সাথেও আমার ভালো সম্পর্ক তৌরি হয়, কিন্তু আমি আজো বুঝলাম না যে মিহির আমাকে তার নিজের আদর্শ একজন বলে মনে করে কেন ৷ ব্যাপারটা আজো আমার কাছে স্পষ্ট না ৷
এইভাবে কাটে একটা বছর ৷ পাঁচ বছরে আরুপাখিকে আমি ঠিক কতোটা চোখে হারিয়েছি তা হয়তো আমি বলে প্রকাশ করতে পারবো না ৷ তারপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আমার আর্শিয়ান আছে ৷আমার আরুপাখি আর আর্শিয়ান এই সমাজের সাথে কতোটা লড়াই করে একা আলাদা থাকে ৷ ভাবলেই নিজেকে অপরাধী মনে হতো কিন্তু মিনহাজ sir আমকে আত্মপ্রকাশে বাধা দিয়েছিলেন ৷ তবুও আমার আরুপাখি খর আর্শিয়ানকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন ছিলো তাই তোমাকে পাঠালাম সেখানে , ওদেরকে প্রটেক্ট করার জন্য ৷ আমারো টাকা পয়সার প্রয়োজন ছিলো তাই শুরু করলাম শুটিং, কিন্তু বাংলাদেশে থেকে শুটিং করলে আমার বিপদের আভাস পেয়ে শুটিং দলের রহমান চাচা আমাকে ম্যাক্সিকো তে পাঠান ৷ সেখান থেকেই সব খবরাখবর পেতাম ৷
আরিশকে থামিয়ে বললেন
” আর সেখান থেকেই তো আপনি আর্শিয়ানের জন্য এতো এতো চকলেট পাঠাতেন ৷”

কথাটা শুনে আরিশ আর আবির দুজনেই হেসে ফেলল, অতঃপর তাদের দুজনের হাসির আওয়াজ শুনে আরু তাদের দুজনের দিকে তাকালো ৷ অর্থাৎ তাদের এই সকল কথা আরুর কান অবধি পৌচ্ছাছে ৷

” হমম তারপর আর কি সেখান থেকে দুই বছর পর ফিরে দেশে এসে মিহনাজ sir আর মিহিরের সাথে তাদের কাজে যোগদান করলাম ৷”

” হমমম আর আজ আপনারা সফল ৷ আর আপনাদের এতো দেরিতে হওয়া সফলতায় আমাদের দেরিতে বিয়ে🤧 ৷ যার শাস্তি স্বরুপ আপনাকে আর ভাবীকে বিয়েতে 10 দিন আগে আসতে হবে ৷”

আবির কতটা শেষ করতে না করতেই আরু ওদের সামনে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷
আবির থতমত খেয়ে বলল
” sir আমি কি কিছু ভুল বললাম ৷”

আরিশ ভ্রু কুঃচকে বলল
” কেন? এমন মনে হওয়ার কারন ?”

” আমার মনে হয় আমার এমন কথা শুনে ভাবী রাগ করে চলে গেছেন ৷”

আরিশ হেসে বলল
” নাহ, সেটা না ৷ ও কিছু মনে করেনি ৷তা তোমাদের বিয়ে কবে শুনি ?”

” এই তো sir 28 ই এপ্রিল ৷ আপনার কিন্তু আগে আগে যাবেন নাহলে কষ্ট পাবো ৷”

ওদের কথার মাঝখানে অনিকা খান আসলেন
” এই যে আবির বাবা তোমার বিয়ে তা তুমি এতো পরে জানাচ্ছো , কষ্ট পেলাম ৷”

আবির অনিকা খানকে সালাম করে বলল
” সরি আন্টি বলতে লেট করেছি বাট আপনার কিন্তু যাইতে লেট করবেন না ৷”

আরিশ আবিরের কথার মাঝে বলল
” মা আরু কোথায় ?”

” ও তো নীচে আছে ৷ করলার জুস বানাচ্ছে ৷ কাকে জানি খাওয়াবে ৷”

আরিশ অবাক হয়ে বলল
” কি বলতাসো তুমি এগুলা , কাকে খাওয়াবে ও ?”

” তা আমি জানি না, ওকে জিজ্ঞাসা করলে খাতায় লিখে বলল
“রাক্ষসকে খাওয়াবে, আজকে নিঘ্ঘাত কারোর কপালে শনি আছে ৷ আমার চিন্তা হচ্ছে ওটা তোর আব্বুকে না খাওয়ালেই হলো ৷”

আবির ভয়ে কাচুমাচু মুখ করে গ্লাসের জুসটা ঝপপট খেয়ে উঠে দাড়িয়ে পড়লো
” sir আমি বাসায় যাইতেছি , আমার শরীরটা ঠিক ভালো লাগতাছে না ৷ বাসায় গিয়ে ঘুমাবো ৷”

আরিশ অবাক হয়ে বলল
” কিন্তু তোমাকে যে ডিনার না করিয়ে ছাড়ছি না ৷”

আবির ভয়ে ভয়ে বলল
” না না ডিনার কি sir,কোনভাবেই না, আপনাদের সাথে ডিনার করলে আমার হবু বউ আমাকে আর আস্ত রাখবে না, ওকে তো আপনি চেনেন ও কেমন ৷”

অনিকা খান বললেন
” কিন্তু তুমি এই না বললে তোমার শরীরটা খারাপ , তুমি তাহলে ডিনার করতে যাবে কীভাবে ৷”

আবির ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে বলল
” না না আন্টি আমার সত্তিই শরীরটা খারাপ, আজ আসি, আল্লাহ হাফেজ ৷ আপনার কিন্তু তাড়াতাড়ি আসবেন ৷”

বলে কোনরকম ছুটে বেরিয়ে গেল, আর একটু দেরী হলেই হয়তো আরুর বনানো জুসটা ওকেই খেতে হবে ৷

💖

সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে আরিশ ৷ আর্শিয়ানকে তার দাদা দাদীর রুমে দিয়ে আসতে গায়েছিলো, আর্শিয়ান জেদ করছে যে আজকে তাদের সাথে ঘুমাবে ,তাই না পেরে আর্শিয়ান হকে দিয়ে আসলো ৷ হলুদ রঙের পাজ্ঞাবীর হাতাটা সরিয়ে দিয়ে হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো, রাত 11.55 ৷ আরু হয়তো এতক্ষনে ঘুমিয়ে পড়েছে ৷
রুমে ভিতর গিয়ে দেখলো আরু দাঁত বার করে আরিশে দিকে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছে, আরিশের ভ্রু জোড়া আপনা আপনিই সংকুচিত হয়ে গেল ৷
ব্যাপারটা ঠিক সুবিধার নয় ৷ আরিশ আরুর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আরুর পাশ কাটিয়ে কোনরকম হাতটা বাড়িয়ে বালিশ টা নিয়ে সোফার দিকে যেতেই আরু খপ করে হাত ধরে ফেলল,,,,আরিশের মাথায় হাত ৷ টেবিলের ওপর রাখা করলার জুসটা ও দেখেছে, রুম থেকে তো আর পালিয়ে যাওয়া যাইনা তাই বালিশ নিয়ে চুপচাপ সোফার দিকে যাচ্ছিল যদি কোনরকম রক্ষা পাওয়া যাই ৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না ৷
আরু আরিশের সামনে গিয়ে আরিশের কাছে করলার জুসটা ধরে ঈশার করলো খাওয়ার জন্য ৷
আরিশ আবুলের মতো ব্যাবহার করে বলল
” আমি এটা খাবো কেন ?”

আরু ঈশারায় বলল
” কারন আপনার ডায়েবেটিস আছে ৷”

আরিশ সরে এসে বলল
“না না, আমার কোন ডায়েবেটিস নেই ,তাই এটা রেখে তুমি ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে ৷”

আরু আরিশের গা ঘেষে দাড়িয়ে এবার একটা কাগজে লিখলো
” আমি জানি আপনার ডায়েবেটিস আছে ,তাই এটা আপনার জন্য আমি ভালোবেসে এনেছি খাবেন না ! আপি না বলেন আমি আপনার বউ ৷”

আরিশ কাগজটা পড়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল
” রিয়েলি ! আমার সুগারটা যখন বেশি তখন তা যে কমাতেই হয় ৷”
কথাটা বলে জুসটা ঢকঢক করে খেয়ে আরুর দিকে তাকিয়ে বলল
” এবার সুগার কমে গেছে , বাট আই থিংক তা এখন বাড়ানোর প্রয়োজন ৷”

আরু অবাক চোখে আরিশের দিকে তাকালো, কি করতে চলেছে এখন আরিশ !

আরিশ এবার আরুর কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে এনে আরুর ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছোয়াতেই আরু শিউরে উঠলো ৷ ওর সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো ৷ ধাক্কা দিয়ে আরিশকে সরিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি গায়ে চাঁদর টেনে শুয়ে পড়লো ৷

আরিশ হসতে হাসতে সোফাতে গিয়ে শুয়ে পড়লো লাইট অফ করে ৷

হঠাৎই অন্ধকারে ওর গায়ে কিছু একটা পড়তেই উঠে ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে দেখতে লাগলো যে কি পড়লো গায়ে ৷ হঠাৎ পায়ের দিকে একটা কাগজ দেখতে পেল, বুঝতে বাকি রইলো না আরু লিখেছে, আর কি লিখেছে সেটাও জানে ৷
কাগজ খুলে দেখে তাতে লেখা
” উইইইমা নট সো টুইটুই + বেয়াদপ ৷”

আরিশ দেখে হাসতে হাসতে কাগজটা পাশে রেখে শুয়ে পড়লো ৷ আজ একটা এক্সট্রা শব্দ add হলো ” বেয়াদপ “😂

#চলবে,,,,