#তুমি_ফিরে_এসো?
#পর্বঃ০৩
#Arshi_Ayat
আয়ুশীর কৌতুহলী চোখের দিকে তাকিয়ে তন্ময় বলল
“তুমি।”
সাথে সাথেই আয়ুশী ভ্রু কুচকে ফেললো তারপর বলল
“মানে কি?”
“মানে হলো ওই আহিনের আগে থেকেই আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু বলতে পারি নি আর যখন ওর সাথে তেমাকে ঘুরতে দেখতাম তখন আমার যে কেমন লাগতো তা তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।”
“ভালোবাসেন তো ভালোবাসার মানুষের সুখ কেড়ে নিচ্ছেন কেনো?কেনো আপনি আমাকে বিয়ে করছেন?আমি আপনাকে কখনোই ভালোবাসতে পারবো না।”
“ভালোবাসার জন্য একটু স্বার্থপর তো হতেই হয়।আর তুমি আমাকে না ভালোবাসলেও চলবে শুধু আমার সাথে থাকলেই হবে।”
“ঠিক করছেন না আপনি এটা আমি কিন্তু পালিয়ে যাবো।”
তন্ময় হেসে বলল
“পালিয়ে কোথায় যাবে?আহিনের কাছে?সে তো নিজেই বেকার তোমাকে খাওয়াবে কি?তোমার পালানোর কোনো জায়গা নেই।আর বিয়ের দুইদিন পর আমরা অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছি।তুমি ওখানেই থাকবে আমার সাথে।”
আয়ুশী মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো তারপর মিনতির সুরে বলল
“প্লিজ দয়া করুন।আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”
তন্ময় ওর পাশে বসে ওর চোখে চোখ রেখে বলল
“তাহলে আমার কি হবে?আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি।আমি কিভাবে থাকবো বলো?আহিনের কষ্ট টা বোঝো কিন্তু আমারটা কেনো বোঝো না।”
আয়ুশী কিছুই বলছে না শুধু কাদছে।তন্ময় আবার মুখ শক্ত করে বলল
“আমি তোমাকে আহিনের কাছে যেতে দেবো না।তুমি আমারই থাকবে সবসময়।আর এখন দশমিনিটের মধ্যে রেডি হবে আমরা বের হবো।”
এই বলে তন্ময় দ্রুত বের হয়ে গেলো।আয়ুশী কেঁদেই চলছে।দুইমিনিট পর ওর মা এসে কড়া গলায় বলল
“কি রে এভাবে মরা কান্না কাদছিস কেনো?তাড়াতাড়ি রেডি হ তন্ময় বসে আছে তো।”
আয়ুশী কান্না করতে করতে বলল
“মা আমি এই বিয়েটা করতে পারবো না।”
শান্তা বেগম ভ্রু কুচকে বললেন
“কেনো?”
“মা আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।”
শান্ত বেগম রাগান্বিত কন্ঠে বললেন
“আমরা তন্ময়ের বাবা মা কে কথা দিয়ে ফেলেছি তাই এই বিয়ে তোকে করতেই হবে।”
“মা আমি এই বিয়েতে সুখী হবো না তুমি প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো।তোমরা কি তোমাদের মেয়ের সুখ চাও না?”
“এখন ওদের না করে দিলে আমাদের সম্মান নষ্ট হবে।আমাদের সম্মানটা আগে।তাই আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না।তন্ময় ভালো ছেলে ও তোকে সুখেই রাখবে।”
এটা বলেই শান্তা বেগম চলে গেলেন।আয়ুশী বাম হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে একটা নীল রঙের শাড়ি পরলো।সাজলো না চুল ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো।তারপর তন্ময়ের সামনে এসে দাড়ালো।তন্ময় চোখ তুলে তাকিয়ে বলল
“রেডি তো?”
আয়ুশী শুধু মাথা নাড়ালো।তারপর ওরা বেরিয়ে পড়লো।তন্ময় গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আয়ুশী জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ তন্ময় বলল
“না সাজলও কিন্তু রূপবতী লাগে।”
“……..”
“তবে একটু কাজল দিয়ো।তুমি চোখে কাজল দিলে আমার বুকের ভেতর কাঁপন ধরে।”
“……”
“কথা নাই বা বললে সবসময় পাশে থাকলেই চলবে।”
তন্ময়ই শুধু কথা বলছে আয়ুশীর মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হচ্ছে না।একটা রেস্টুরেন্টে গেলো তারপর খাবার খেয়ে তন্ময়ের মায়ের সাথে দেখা করে আবার বাসায় চলে এলো আয়ুশী।
এভাবেই দিন চলে গেলো।আজ বৃহস্পতিবার।আয়ুশীর গায়ে হলুদ।এই কদিনে আয়ুশী অনেকবার আহিনকে ফোন দিয়েছে কিন্তু আহিন ফোন ধরে নি।
এখন সন্ধ্যা আয়ুশীকে স্টেজে নেওয়া হবে সাজানো টাও হয়ে গেছে।হঠাৎ দরজা ঠেলে কাউকে আসতে দেখা গেলো।সে এসেই আয়ুশীকে জড়িয়ে ধরে বলল
“কেমন আছিস?”
আয়ুশী মলিন মুখে জবাব দিলো
“ভালো।তুই?”
“এইতো ভালোই আছি।”
তারপর মেয়েটা সবাইকে ঘর খালি করতে বলল।সবাই চলে গেলে আয়ুশীর সামনে বসে ওর দিকে তাকিয়ে বলল
“বিয়েটা কেনো করছিস?”
“কিচ্ছু করার নেই আর।”
“আছে।”
“কি করবো?”
“পালিয়ে যা।”
“কোথায়?”
“আহিনের কাছে।”
“নাহ!!যাবো না।”
“কেনো?”
“ও গত রবিবার থেকে আমার ফোন ধরছে না।আর এই মুহুর্তে কিছু করাও সম্ভব না।”
“আচ্ছা আমি অন্য নাম্বার দিয়ে একবার চেষ্টা করে দেখি।”
আয়ুশী ছলছল চোখে বলল
“কেনো আরশি তুই কেনো ফোন করবি ওকে যখন ওর ই কোনো মাথাব্যাথা নেই।”
“ধূর তুই ভুল বুঝছিস।হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে তাই ফোন ধরছে না।”
“না আরু আমি ঠিকই বুঝছি ও ইচ্ছে করেই ফোন ধরছে না।সেদিন আমি পালানোর কথা বলেছিলাম কিন্তু ও না করে দিয়েছে।আসলে ও আমাকে ভালোইবাসে নি।”
“কি উল্টোপাল্টা বকছিস তুই আমি আহিনকে না দেখলেই তোর মুখে ওর যে বর্ণনা তোর প্রতি যে কেয়ারিং শুনেছি আমার মনে হয় না ও এমন করতে…..”
আর কিছুই বলতে পারলো না আরশি তার আগেই আয়ুশীর ফোন এলো।কিন্তু এখন কে ফোন দিলো এটা দেখার জন্য ফোন হাতে নিতেই আয়ুশীর চোখ বড়বড় হয়ে গেলো সে আরশিকে দেখিয়ে বলল
“এখন কেনো ফোন দিয়েছে?আমি ফোন ধরবো না।”
“পাগল নাকি তুই?তাড়াতাড়ি ফোন ধর।দেখ কি বলে।”
“না ফোন ধরবো না আমি।”
“এক চড় মারবো ফোন দে আমার কাছে।”
আরশি জোর করে আয়ুশীর হাত থেকে ফোন নিয়ে নিলো। তারপর রিসিভ করে বলল
“হ্যালো আমি আরশি বলছি আয়ুশীর বান্ধবী।”
“ওহ!!একটু আয়ুশীকে দেওয়া যাবে?”
“জ্বি দেওয়া যাবে।একটু ধরুন।”
“জ্বি।”
আরশি চাপা গলায় বলল
“না ধর কথা বল।”
আয়ুশী মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে বলল
“ঢঙের জ্বালায় বাচি না নে কথা বল নাহলে কিন্তু একচড় দিয়ে এই দাত ফেলে দেবো।”
আরশির রাগ দেখে আয়ুশী ফোন কানে দিয়ে বলল
“কেনো ফোন করেছো?”
“আয়ুশী আমরা পালাবো তুমি প্লিজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসো।”
“না আমি পারবো না। অনেক দেরি করে ফেলেছো তুমি।”
“কোনো দেরি হয় নি তুমি প্লিজ এসো।”
“আচ্ছা দেখছি কি করা যায়।”
“না তুমি আসবেই।আমি তোমার ভার্সিটির সামনে অপেক্ষা করবো।”
এটা বলেই আহিন ফোনটা রেখে দিলো।আরশি আয়ুশীকে ঝাঁকিয়ে বলল
“কি রে কি বলল?”
“পালাবে।আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে বলল।”
“হুম তো বসে আছিস কেনো?চল আমি তোকে দিয়ে আসি।”
“কিন্তু এইদিকে কি হবে?”
“এটা আমি দেখবো।তুই চল।”
“কিন্তু বের হবো কিভাবে?”
“এক কাজ কর আমি বের হবার পর তুই দরজাটা লক করে দিবি ভেতর থেকে।আমি নিচে গিয়ে বাগানের পশ্চিম সাইডে গিয়ে বারান্দার সাথে একটা মই লাগাবো।আর তুই ওইখান দিয়ে নেমে পড়বি।তোদের ওই সাইড দিয়ে তো জঙ্গল টাইপের তাই ওইখানে কেউ যাবে না।”
“আচ্ছা তুই যা আমি লক করছি।কাজ হয়ে গেলে আমাকে একটা মিসডকল দিস।”
“আচ্ছা।”
চলবে….?
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)