তুমি যে আমার পর্ব-১৭+১৮

0
823

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_17

‘শুধুমাত্র আজকে রাতটা আমি তোমার কথা শুনবো। বিনিময় তুমিও আমার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করবে।’
কথাটা বলেই তূর্য ওর তর্জনি আগুল দিয়ে বর্ষার চোখের জল মুছে দিলো।

বর্ষা তূর্য এর হাত ঝামটা দিয়ে গাল থেকে সরিয়ে দিলো। তূর্যর এতে রাগ মাথায় উঠে গেল। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করলো। আজ রাগ দেখাতে চায় না ও।

‘এত জেদ দেখিয়ে লাভ নেই বর্ষা মনি। তুমি স্বেচ্ছায় এসব করছ আমি তোমাকে কোন রকম জোর করিনি।’

‘লজ্জা করছে না এসব বলতে আপনার। আমি স্বেচ্ছায়! আপনি আমাকে বাধ্য করেছেন স্বেচ্ছায় রাজি হতে।’

‘বাধ্য করি আর যাই করি না কেন। স্বেচ্ছায় ই তো সবকিছু করবে আমি তো তোমায় জোর করব না। আসলে জোর করা আমি পছন্দ করিনা।’

‘ভালো মানুষের মতো কথা বলছেন কেন? আপনি একজন নিকৃষ্ট মানুষ। আপনার সাথে কথা বলতে আমার ঘেন্না করছে।দয়া করে আমার সাথে কথা বলবেন না আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে থাকুন।’

‘দূরত্ব রাখব! একটু পর তো দূরত্ব কমিয়ে একদম কাছে চলে আসবো। আর এখন তুমি দূরত্ব রাখার কথা বলছো ইটস নট ফেয়ার বর্ষা।’

বর্ষা কথা বলছে না। এই লোকের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না‌। আর না তার ওই মুখের দিকে দিকে তাকাতে ইচ্ছা করে। ও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
তূর্য ওর হাতের ব্যাগটা বর্ষার সামনে রেখে বলল,

‘এটা পড়ে ফেলো ঝটপট।’

‘কি এটা?’

‘শাড়ি!’

‘শাড়ি দিয়ে আমি কি করব?

‘কি করবে মানে! শাড়ি দিয়ে মানুষ কি করে! পড়বে এটা।’

‘আমি শাড়ি পরবো কেন আমি কি নতুন বউ! আর আপনি আমাকে শাড়ি পরতে বলছেন কেন? এমন ভাবে বলছেন যেন আপনি আমার হাজব্যান্ড। তাই হাজবেন্ডের ইচ্ছে হয়েছে বউকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখতে তাই পরতে বলছে । আমি কোন শাড়িটাড়ি পড়তে পারব না বিয়ে করে নিজের বউকে শাড়ি পড়তে বললেন।’

বলে ব্যাগটা ছুঁড়ে মারল বর্ষা।

‘তোমার সাহস তো কম না আমার আমার জিনিস ছুড়ে মারো।’

‘হুম মেরেছি। কি করবেন? আমাকে মেরে ফেলবেন!মেরে ফেলুন! তাহলে আমি আপনার মত রাক্ষসের হাত থেকে মুক্তি পাবো!’

‘আজকে তুমি যত বাজে কথাই বলোনা কেন আমি আজকে কিছুতেই রাগারাগি করবো না! আজকে একটা সুন্দর রাত আমি নষ্ট করতে চাইনা। আর কি যেন বলছিলে?বউকে পরতে বলবো। বউয়ের সাথে যা যা করতাম সব তো তোমার সাথে করবো। বিয়ে না করলেও তুমি আমার হাফ বউ হবে আজ। তাড়াতাড়ি শাড়িটা পড়ে ফেলো তুমি না হলে আজকে এই রুমের বাইরে যেতে চাইছিল তা ! তোমার ইচ্ছেটা পূর্ণ করা হবে না। তাই আমার কথা শোনো না হলে তোমার কথাটা আমি রাখতে পারব না।’

বর্ষা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আজকে রাতে ওর সাথে কি কি ঘটবে সেসব ভেবে ভয়ে কুকড়ে উঠছে ও। এই লোকটার হাত থেকে রক্ষা পাবে না ও। আর নিজেও নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না কারণ সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ওকে এই লোকটার কাছে নিজেকে সপে দিতে ই হবে। নিজের সর্বস্ব যখন হারাবেই। তার আগেও জানতে চাই এসব এই লোকটা কেন করছে। বাপির সাথে এই লোকটার কি শত্রুতা?এতদিন ধরে আছে এখন অব্দি এই লোকটার নাম জানা হয়নি আর এমন খারাপ লোকের নাম ও জানতে চায় না। ও তূর্য এর চোখের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল,

‘সবকিছুর আগে আমি আপনার কাছে একটা সত্যি জানতে চাই বলবেন প্লিজ!’

‘কি সত্যি জানতে চাও?’

‘আগে বলেন আমি যা জানতে চাইবে তা আমাকে বলবেন!’

তূর্য কপালে সূক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে বলল,

‘আগে বল কি যদি বলা যদি যায় তাহলে বলবো।’

‘প্লিজ বলা না গেলেও বলবেন প্লিজ! আমি যে অপরাধের শাস্তি পাবো সেই অপরাধ টা আমি জানতে চাই। আমার বাপি আপনার সাথে কি করেছে যার জন্য আপনি তার এত বড় ক্ষতি করছেন। কেন তার উপর আপনার এত রাগ এত বিদ্বেষ। আমার একজন খুব ভালো মানুষ সে কারো ক্ষতি করতেই পারে না। আমার বাপি সত্যের পথ ছেড়ে কখনো অন্যায়ের পথে পা রাখেনি। আপনি জানেন বাপির এই পেশার জন্য বাপির হাজার হাজার শত্রু আছে। যারা বাপিকে দিনরাত ফোন করে হুমকি দেয়। কিন্তু বাপি কখনো ভয় পায় না। সত্য থেকে সরে যায় না। কি করেছে আমার বাপি আমি সত্যিটা জানতে চাই।’ কাঁদতে কাঁদতে বলল।

তূর্য বললো, ‘ তোমার বাপি খুব ভালো মানুষ কিন্তু সে আমার সাথে অন্যায় করেছে। আমার চোখে তিনি অপরাধী। আমার খুব কাছের মানুষ কে সে কেড়ে নিয়েছে। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে ফাঁসির রায় দিয়েছিলো। যা সে করেছিলোই না। আমি অনেক করে তোমার বাবাকে বলছিলাম আমার জন্য অপেক্ষা করতে করেনি‌। আমার অনুপস্থিতিতে সব শেষ করে ফেলেছে। আজ তাই করবো আমি তোমার সাথে।এখানে তোমার কোন অপরাধ নেই। তোমার ভুল তুমি নিবিড় চৌধুরী এর মেয়ে তার রক্ত তোমার শরীর এ বয়ছে।’

‘ আপনার কাছের লোক কে সে?

‘ এতো কিছু আমি বলতে পারবো না। যা বলেছি করো দ্রুত।’

‘ আর কি অভিযোগ? আমার বাপি নির্দোষ কে শাস্তি দেয় না।’

‘দিয়েছিলো। এসব নিয়ে আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাইনা।’

‘ কিন্তু….

‘ শাড়িটা পরো তারাতাড়ি।’

‘ কিন্তু আমি তো শাড়ি পরতে পারিনা।’

‘ যেভাবে পারো সেই ভাবেই পরো।’

‘আপনি আমাকে ব‌উ সাজাচ্ছেন কেন বলেন তো! বিয়ে করবেন নাকি?’

‘ আমার মাথা খারাপ হয়নি এখনো।’

বলেই তূর্য তিরস্কার হাসি দিয়ে চলে গেল। বর্ষার ফেলে রাখা ব্যাগটা নিজেই তুলে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। এই লোকটার কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়া থেকে মরে যাওয়ার ওর জন্য ভালো। কিন্তু ও মরে গেছে মাম্মা বাপি কেউ আরো কষ্ট দেবে। মরে গিয়ে আমি নিজে বেঁচে যাব কিন্তু
মাম্মা বাপ্পির তো কষ্ট যাবে না। এতটা অসহায় কেন করলে তুমি আমাকে আল্লাহ।

বাইরে থেকে দরজা ধাক্কা দিয়ে চেঁচিয়ে লোকটা বলছে,

‘বসে বসে ন্যাকা কান্না না-কেঁদে তাড়াতাড়ি রেডি হও না হলে বাইরে যেতে হবে না।’

বর্ষা আতংকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

‘আপনি দরজার বাইরে থেকে জানলেন কি করে আমি বসে কান্না করছি?’

‘আমি যেখানেই থাকি না কেন।তুমি আমার নজরে থাকো সবসময় বর্ষা মনি। তাই এত কিছু চিন্তা না করে কাজ করো তাড়াতাড়ি।’

বর্ষা চিন্তিত মুখ করে তাড়াতাড়ি ব্যাগটা ছিঁড়ে ফেললো। ব্যাগের ভেতর থেকে একটা লাল টকটকে জর্জেট শাড়ি বেরিয়ে এলো। ফ্যালফ্যাল করে শাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে বর্ষা। এই পাতলা শাড়ীটা আমাকে পড়তে হবে।
পড়তে না চাইলে জোর করে আমাকে পড়াবে।
তাই নিজেই পরি যেটুকু পারি পড়লাম। জর্জেট হ‌ওয়ায় বারবার খুলে যাচ্ছে বর্ষা পেটে দুহাত দিয়ে চেপে ধরে আছে। এই শাড়ি পড়ে তো ও এক পা ও এগোতে পারবে না। কিন্তু শাড়ি না পড়লেও যে ওকে এই রুমের বাইরে যেতে দেবে না। কতদিন এই ঘরের বাইরে যায়না মুক্ত বাতাস নেয় না। খোলা পৃথিবীর নিচে যাওয়ার জন্য ও মন টা ব্যাকুল হয়ে আছে।
তূর্য রুমে এসে বর্ষার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল বর্ষা অগোছালোভাবে শাড়ি পরে পেটে দুই হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে মুখে চিন্তার ছাপ।
তূর্য ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে বর্ষার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

‘কি হয়েছে?’

‘কিছু না!’

বলেই বর্ষা শাড়ির ঠিক রাখার চেষ্টা করে হাত সরিয়ে নিলো।আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে যেন এই অসভ্য শাড়িটা খুলে না যায়। কিন্তু মনে ওর আকাশ সমান চিন্তা কিভাবে হাঁটবে। এক পা এগুলে ও ত ওর শাড়ি খুলে যাবে। আল্লাহ আজকের মতো বাঁচিয়ে দাও জীবনে শাড়ি পড়বো না।

তূর্য ওর পিছনে গিয়ে চোখ বেঁধে দিল। ও চমকে ওঠে ছটফট করতে লাগলো।

‘একি আমার চোখ বাঁধছেন কেন?’

তূর্য কিছু বললো না। বর্ষা আবার বললো,

‘আপনি আমাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া কথা বলে মেরে ফেলতে চাইছেন না তো?’

‘You can’t talk less.’

”এবার চলো।’ চোখ বাঁধা সম্পূর্ণ হতেই বর্ষার হাত টেনে ধরে বললো তূর্য।

‘ টানছেন কেন? আমার চোখের বাঁধন খুলেন। না হলে আমি হাঁটবো কি করে? আর এমন করে টেনে ধরলেন কেন? আমার শাড়ি খুলে যাবে তো কোন রকম পরেছি। ছারুন হাত।’

বলেই হাত ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলো বর্ষা। তূর্য হাত ছেড়ে দিলো। বর্ষা হাতে ছাড়া পেয়ে দুই হাত উপরে তুলে চোখের বাঁধন খুলতে গেলো। কেবল খুলতে যাবে তখন ওকে তূর্য পাঁজকোলে তুলে নিলো। তাতে বর্ষা নড়ে ওঠে হাত পরে গেলো। ভয়ে ও তূর্য এর গলা জড়িয়ে ধরলো।

#চলবে……..

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_18

‘আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন! সত্যি করে বলুন!’

‘আর একটা কথা বললে, এখানে একটা আছাড় মারবো কিন্তু! বাচাল মেয়ে এতো কথা বলতে পারে।’

‘কি আপনি আমাকে বাচাল বললেন?’

‘বাচাল কে বাচাল বলবা না তো কি বলবো!’

‘আমাকে চোখ বেঁধে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন মেরে ফেলার প্লান করেছেন নাকি? বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আমাকে মারার প্ল্যান করছেন।এখন আবার বাঁচাল বলছেন!’

তূর্য রেগে নিজের হাতের বাঁধন আলগা করে দিলো। বর্ষা গলা জরীয়ে রাখা হাত সরিয়ে নিয়েছিল। এবার তূর্যের হাতের বাধন আগলা করায় পড়ে যেতে নিয়ে ভয় আর জাপ্টে ধরে গলা। আর ভয়ার্ত গলায় বলে,

‘আপনি তো খুব বাজে মানুষ। আমাকে সত্যি ফেলে দিতে চাইছেন!আমি কি আপনার কোলে উঠতে চেয়েছি! তাহলে কেন কোলে নিয়েছেন! আর এখন আবার ফেলে দিতে চাইছেন!’

‘তোমার মুখটা অফ রাখ। না হলে ফেলেই দেবো।’

ভয়ে বর্ষা আর কথা বললো না। ছাদে এনে তূর্য ওকে কোলে থেকে নামালো। বর্ষা ছাড়া পেতেই নিজের চোখের বাধন খুলে দিল তাড়াতাড়ি করে।
চোখ খুলে মৃদু আলোয় বুঝতে পারল ওরা ছাদে আছে। ও সবার আগে আকাশের দিকে তাকাল। খোলা আকাশ! কতদিন পর খোলা আকাশের নিচে আসলো! ওর আর তূর্য এর দিকে নজর নেই। তূর্য পাশের দোলনায় বসে ফোন টিপতে লাগলো। বর্ষা আবছা আলোতে পুরো ছাদ স্ক্যান করছে। খুবই বোরিং একটা ছাদ। একটা ফুল গাছের আকার বিকার ও নাই।ওর নিজের ছাদের কথা মনে পরে গেলো। ওর সমস্ত পছন্দের ফুল গাছ দিয়ে ভর্তি করে রেখেছে ছাদ‌। ছাদে গেলেই মনটা ভালো হয়ে যায় বর্ষার। ফুলের গন্ধে ম ম করে ওর ছাদ‌। এই ছাদে একটা ফুল নাই। খুব মিস করছে নিজের ছাদটাকে। কতদিন ফুলগুলো ছুঁয়ে দেখা হয়না! কি অবস্থায় পড়ে আছে কে জানে! ওর ফুল গাছে ও ছাড়া কারো হাত দেওয়া নিষেধ।
মন খারাপ হয়ে গেল বর্ষার। ছাদের এক পাশে চলে এলো হাঁটতে হাঁটতে। সেখানে শুধু কয়েকটা ক্যাকটাস গাছ দেখতে পেলাম।বর্ষা রেলিং এ হাত রেখে নিচে তাকালো। জঙ্গলে ঘেরা। মনে হচ্ছে একটা ভূতুড়ে বাড়িতে আছে! চারপাশে শুধু জঙ্গল! এমন জায়গায় কেউ বাড়ি করে। ও ভয় পেয়ে গেলো হালকা। তূর্য এর থেকে অনেক টা দূর চলে এসেছে বর্ষা। কিছুটা এগিয়ে এসে কাছাকাছি হয়ে দাঁড়ালো। মুক্ত আকাশের দিকে তাকাল আজকে জোসনা নাই। কেমন যেন মেঘলা হয়ে আছে আকাশ। এখনতো বৃষ্টির সময় না। তবুও কেন জানি মনে হচ্ছে আজকে বৃষ্টি হবে খুব বৃষ্টি হবে! শাড়ি পরে হাঁটা কষ্টকর তাই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করছে। আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে আছে বর্ষা। হুট করে এক ফোঁটা পানি এসে ওর নাকের ওপর পরল। ও ফট করেই চোখ মেলে তাকালো।

বৃষ্টি হবে তাহলে আজ অনেকদিন পর এই খোলা আকাশের নিচে এসেছে। আর আজকে বৃষ্টি এই বৃষ্টিতে আজ বর্ষা ভিজবে খুব করে বুঝবে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি ওর জন্য আসছে। ওর এই কষ্টের মাঝে বৃষ্টির ফোঁটা কিছুটা সুখ নিয়ে আসছে।বৃষ্টি মানুষকে বরাবরে আনন্দ দেয় বর্ষার বৃষ্টি খুব একটা পছন্দ না হলে আজকে বৃষ্টির আগমনকে আনন্দ দিচ্ছে ওকে। বৃষ্টি ওর পছন্দ না হ‌ওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে জামাকাপড় ভিজে নষ্ট করে দেয়। এমন অনেক সময় গেছে বৃষ্টির জন্য ওর স্পেশাল দিন তাতে স্পেশাল জায়গায় যেতে পারেনি ঘরে বসে কাটাতে হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে ওর সাজ নষ্ট হয়ে গেছে। সাজগোজ নিয়ে খুব সিরিয়াস বর্ষা। কোথাও গেলে অনেকটা সময় ধরে সাজতে বসে যায়। আর তখন যদি রাস্তায় বৃষ্টি হয় তো ও এক পা বাইরে রাখতে পারে না গাড়ি থেকে। জামাকাপড় ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে যায় আর বিচ্ছিরি একটা কাণ্ড ঘটে।
এই একটা কারনে ওর বৃষ্টি পছন্দ না অসময়ে বৃষ্টি এসে ওকে বিপদে ফেলে।

হাতে টান পরায় চমকে উঠে। তূর্য বৃষ্টি নামতে দেখে দৌড়ে এসে বর্ষার হাত ধরে টেনে সাইটে নিয়ে আসে। কিছু বলে উঠতে পারেনি বর্ষা। এভাবে টেনে আনায় ওর কুচি খুলে গেছে। এতে বর্ষা রেগে সাথে আবার আজ বৃষ্টি তে ভিজতে ইচ্ছে হয়েছে ওর।আর লোকটা কিনা ওকে নিয়ে এলো।
বর্ষা রেগে হাত ঝামটা দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো।

‘আপনি আমাকে টেনে আনলেন কেন এভাবে?’

‘টেনে আনব না তো কি করব বৃষ্টি হচ্ছে ডাকি শোনো না কেন? এজন্যইতো টেনে আনতে হল!’

‘আমি কি বলেছি আমাকে বৃষ্টির মাঝখান থেকে টেনে আনুন। আমিতো বৃষ্টিতে ভেজার জন্য চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম।আপনার বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছে নাই আপনি এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন আমাকে ডাক দিতে গেলেন কেন?’

‘হোয়াট এ রাতের বেলা তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে!’

‘হ্যাঁ ভিজবো তো কি হবে!আর আপনার এই টানাটানির জন্য আমার শাড়ি কি হলো? আপনার জন্য আমার শাড়ি খুলে গেছে! কতো সাবধানে শাড়িটা সামলে রেখেছিলাম আর আপনি পুরো লন্ডভন্ড করে দিলেন সহ্য।’

অন্ধকারে শাড়ির কুচি তুলে অন্যদিকে ফিরে বর্ষা শাড়ি গুজে নিল উল্টাপাল্টা করেই।
তারপর আবার ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

পেছন থেকে তুর্য বলে উঠলো, ‘আবার কোথায় যাচ্ছ?’

‘বললাম না আমি বৃষ্টিতে ভিজবো আর আপনি আমাকে বাধা দিবেন না। কারন আপনি বলেছেন আমাকে কিছু সময় নিজের মতো কাটাতে দিবেন।’

তূর্য আর কিছু বলতে পারলো না বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো। বর্ষা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে ছাদের মাঝখানে গিয়ে দুই হাত মেলে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ফোঁটা অনুভব করছে, লাফালাফি করছে। চিৎকার করছে। বৃষ্টিকে এভাবে অনুভব করা হয়নি কখনো বর্ষার। আজ এই বৃষ্টির পানিতে ভিজে কিছুক্ষণের জন্য সমস্ত কষ্ট ভুলে গেছে। প্রাণ খুলে হাসছে বর্ষা। বৃষ্টির টিপটপ শব্দ আর সাথে বর্ষা প্রাণখোলা হাসির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে ছাদ। বর্ষা ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। তূর্য পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে‌। বৃষ্টির মধ্যে একটু পর পর অন্ধকার পৃথিবী আলোকিত হয়ে উঠছে ছোট ছোট বাজ পরায়। আর তাতে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে বর্ষা শরীরের প্রতিটা ভাঁজ। ওর শরীরে পাতলা শাড়ি বৃষ্টির পানিতে ভিজে শরীর এর সাথে লেপ্টে আছে। আলোকিত হতেই তা স্পষ্ট ভাবে তূর্য এর চোখে ধরা দিচ্ছে। ঘোর লাগা চোখে তূর্য তাকিয়ে আছে। বর্ষাকে এভাবে দেখে তূর্য ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। ঘোরের মধ্যে ও মৃদু পায়ে হেঁটে বর্ষার একদম নিকটে চলে আসে।

কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে বর্ষা চমকে উঠে। চোখ মেলে নিজের খুব কাছে তূর্য কে দেখে। তূর্য ওর দিকে নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বর্ষা তা দেখে ঢোক গিলে। ওর বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। তূর্য ওর এক হাত বর্ষার শাড়ি ভেদ করে কোমর ধরেছে। আরেকহাত বর্ষার গালে।

‘ক ক কি করছেন? তোতলাতে তোতলাতে বললো।

তূর্য ওর আঙুল বর্ষার পাতলা ভেজা ঠোঁটের উপর রেখে বলে, হুশশ

বর্ষা চুপ করে যায়। নিজের ঠোঁটের ওপর তূর্য এর হাতের স্পর্শে ওর সারা শরীর কেঁপে ওঠে। তূর্য বর্ষার ঠোট থেকে হাত গলা পর্যন্ত টেনে নামিয়ে আনে। বর্ষা শক্ত করে ঠোঁট কামড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষার ঠোঁট কামড়ানো দেখে তূর্য এক সেকেন্ড সময় নেয় না বর্ষার অধরে নিজের অধর নিতে।

বর্ষা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্তব্ধ হয়ে। তূর্য ওর ঠোটে একের পর এক চুমু খেয়েই যাচ্ছে। না কিছু বলতে পারছেন না সইতে পারছে। তূর্য বর্ষার থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে বর্ষার ঠোট কামড়ে ধরে। ব্যথায় বর্ষা চোখ কুঁচকে ফেলে। আর বাধ্য হয়ে ওকে ও সাড়া দিতে হয়। বৃষ্টির মধ্যে দুজন দুজনের অনেক টা কাছে চলে আসে। তূর্য ওর ঠোট থেকে সরে আসতেই বর্ষা ওকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেয়। আর হাঁপাতে লাগে।

তূর্য এগিয়ে এসে বলে, ‘ নিজের প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে গেছো নাকি? তোমার নিজে থেকে কাছে আসার কথা ছিল।’

‘আমি কিছুই বলিনি!’

‘তাহলে সরিয়ে দিলে কেন?’

‘আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।এতো সময় কেউ নেয়।’

‘হোয়াট।’

‘হুম’

তূর্য মাথায় হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষার এখন শীত লাগছে। ও জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে শীতে কাঁপছে। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে বৃষ্টিতে আছে।
তূর্য ওর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো ও বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছে।

‘এখন কাঁপছো কেন ভেজার শখ মিটে গেছে নাকি?’

বর্ষা কিছু বলল না। তূর্য ও কিছু আর কিছু না বলে ভেজা শার্টটা ঝুঁকিয়ে নিলো। বৃষ্টির বেগ বেড়ে চলেছে। বর্ষা দিকে তাকিয়ে থাকা যাচ্ছে না খুব বাজেভাবে আকর্ষণ করছে মেয়েটা ওকে। ও আর এক মুহূর্ত নষ্ট না করে। এগিয়ে এসে বর্ষাকে কোলে তুলে হাঁটা দিলো রুমের দিকে।

#চলবে……