তুমি যে আমার পর্ব-৫১

0
716

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_51

এক মাস হয়ে গেলো বর্ষা এখনো বাবার বাসায় আর আছে। তূর্য এই নিয়ে সরাসরি কথা বলতে চেয়েছে নিবিড় আহমেদ এর সাথে কিন্তু বর্ষা বলতে দেয়নি। বর্ষার বাবা ইদানিং খুব অসুস্থ। ভেতরে ভেতরে তিনি ভেঙে পরেছেন। মেয়ের দিকে তাকাতে পারে না। আবার তূর্যর মতো একটা গুন্ডাকে ও ভরসা করে মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে পারছেন না।তিনি খুব দুটানায় পরে গেছে। বিষন্ন মুখে থাকেন। আর আফসোস করেন। বর্ষা নিজের বাবার এমন মুখ দেখে তূর্য কে সামনে আসতে মানা করে দিয়েছে নিজেও কিছু বলে না। বাবার জন্য ও সব ছারতে পারবে কিন্তু ওর জন্য ওর বাবার কোন কষ্ট হোক এটা ও মানতে পারবে না। বাবা মা কে ও পৃথিবীর সব চেয়ে বেশি ভালো বাসে‌ তাদের মনে দুঃখ ও দিতে পারবে না কিছুতেই না।

তূর্যকে এসব বলার পর তূর্য খুব রেগে গিয়েছিলো। সেদিন রাতেও আবার এসেছিলো। আর রেগে বর্ষার বাহু চেপে ধরে চিৎকার করে বলেছিলো,

‘ তুমি আমাকে ছাড়ার প্লান করেছো বর্ষা এটা আমি তোমার থেকে আশা করিনি। আমি এখন ভালো হয়েছি তাই বলে ভেবো না আমার ভালোবাসা ত্যাগ করে আমি মহান হয়ে থাকবো এতোটা ভালো মানুষ আমি না। আমি আমার ভালোবাসাকে নিজের কাছে রাখার জন্য সব করতে পারি। তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে তোমাকে নেওয়ার জন্য এবার আর আমাকে কিডন্যাপ করতে হবে না‌। মাথা উঁচু করেই আমি আমার ব‌উকে নিয়ে যেতে পারবো। তোমার কথা ভেবে আমি চুপ আছি কিন্তু তাই বলে তোমাকে আমি জীবনে ও ছারবো এমনটা ভেবো না। তুমি যদি এমনটা করবে ভেবে থাক নিজের বাবা মার জন্য তাহলে আমিও আমার খারাপ রুপটা আবার তোমাকে দেখাতে বাধ্য হবো। আমি চাই তুমি এমনটা করো না। আমাকে তোমার বাপির সাথে কথা বলার চেষ্টা করতে দাও আমি সব ঠিক করেই তার সম্মতিতে তোমাকে আমার ঘরে নিয়ে যাব। এই বুকে তোমাকে জায়গা দিয়েছি তার মানে তুমি রাখবে আশা করবো।’

বর্ষার নরম মনটা তখন কেঁদে উঠে। লোকটা খুব কষ্ট পেয়েছে তার কথায় বুঝতে বাকি নাই বর্ষার। ওমন কথা বলার সময় ওর ও যে কতোটা কষ্ট হয়েছে লোকটা কি বুঝবে। তাকে ত্যাগ করা আর এই প্রাণ ত্যাগ করা যে বর্ষার কাছে সমান। এই লোকটাকে এক নজর দেখার জন্য তীর্থ কাকের মত করে বসে থাকে কবে বাপির মত বদলাবে আর সব আগের মতো হয়ে যাবে।

তূর্য বর্ষার মুখ ধরে বললো,

‘ আরিয়ান কে আমি কিছু করতে পারছি না তোমার বাপির জন্য। তোমার বাপিকে ও বলে রেখেছে ওর কোন ক্ষতি হলে সেটা নাকি আমিই করবো। কারণ আমার সব চেয়ে বড় শত্রু নাকি এখন ও। ওর জন্য আমি আমার চাল নষ্ট হয়েছে। তোমার বাবা সব জেনে গেছে। তাই তোমার বাবা ওকে নিজের প্রটেকশন এ রেখেছে। একবার ওকে হাতের কাছে পেলে আই সো এ্যাট ওকে আমি খুন করে ফেলতাম।’

অনেক কষ্টে সেদিন বর্ষা তূর্য কে শান্ত করে। তূর্য সেদিন‌ই জানিয়ে যায় এখন থেকে রাতে ও এখানেই আসবে‌‌। বর্ষা যেন জাগ্রত থাকে। বর্ষা না করলেও শুনে না। উল্টা বলে,

‘ এটা না মানলে কিন্তু আমি আমার শশুর এর সাথে এখনি সব কথা শেষ করবো।’

তখন বর্ষা মানতে রাজি হয়।

এইভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে আসা যাওয়া চলছেই আর সময় ও গরিয়ে যাচ্ছে।

সকাল ঘুম থেকে উঠে বর্ষা বাসা থমথমে অবস্থা দেখে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। গতকাল তূর্য আসেনি আগে জানিয়ে দিয়েছিল আজ আসবে না। মা বাবা কাউকে কোথাও না দেখে ওর কপাল কুঁচকে যায়। দুজনকে একসাথে কোথায় গেলো এই পাত সকালে? আর আমাকে না জানিয়ে বা এমন হঠাৎ করে কোথা গেলো। কাজের বুয়া আসে আটটায় এখন সাড়ে সাতটা আরো পরে আসবে। বাপি মাম্মা তো রুমেও নাই কোথায় গেছে। বর্ষা চিন্তিত মুখে সোফায় বসলো। তারপর রুমে এসে ফোন খোঁজে লাগলো অদ্ভুত ফোন কোথায়? কাল তো বালিশের নিচে রেখেই শুয়েছিলাম। ড্রয়িংরুমের লাইন্ড ফোন থেকে কল করতে এলাম। বাপি মাম্মার ফোন যেহেতু বাসায় নাই কল করে দেখি‌‌। ফোন যাচ্ছে না। কেমন জানি খটকা লাগতে শুরু করলো। বর্ষা তূর্য কে কল করতে গেলো নাম্বার মুখস্থ ওর কিন্তু এটায় ও যাচ্ছে না। দুই তিনটা বাড়ি মেরে মেইন ডোর খুলতে গেলো। ফোনের সাথে বাইর মানুষ ও গায়েব কি হচ্ছে এসব। কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে বিরক্তিকর শ্বাস ফেলে দরজা খুলে ফেলে।

দাড়োয়ান কাকাকে জিজ্ঞেস করে দেখি বাপিরা কখন বের হয়েছে আর কোথায় গেছে। দরজার বাইরে এক পা রাখতেই একটা স্পে করা হয় বর্ষার মুখে বর্ষা ঝাপসা চোখে দেখতে পায় কেউ ওকে ধরে ফেলেছে। বর্ষা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

এইটুকু ভিডিও দেখেই বর্ষা বাবা চিৎকার করে উঠে,

‘ আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও‌‌। কারা তোমরা কি চাও আমার কাছে?’

বর্ষার বাবাকে আর মা কে আজ সকালে আরিয়ানের লোক কিডন্যাপ করেছে। ওদের উদ্দেশ্য নিবিড় আহমেদ এর কাছে কিছু ডকুমেন্ট যেগুলোতে আছে আরিয়ানের সব অপকর্মের প্রমাণ যেটা হাতানোর জন্য আরিয়ান বেশ কিছু মাস আগে নিবিড় আহমেদ কে প্রাণে মারার প্লান করেছিলো। কিন্তু তূর্য যেটা জানতে পেরে বর্ষাকে কাজে লাগিয়ে হাতিয়ে নেয় আর নিবিড় আহমেদ কে বাচিয়ে দেয়। তূর্য ফাইলটা নিয়ে আরিয়ান কে অনেক ভাবে হেনস্তা করেছে। দিবে বলেও দেয়নি। সেটা আবার বিশ্বাস যোগ্য হতে তূর্য নিজেই নিবিড় আহমেদ কে ফিরিয়ে দেয়।
এসব আরিয়ান পরে জেনেছে। দুইদিন বাদে ওর কেস আবার সামনে আসবে সেটা নিবিড় আহমেদ আদালতে বলছে। তাই আর দেরি না করে কিডন্যাপ করেছে নিবিড় আহমেদ কে ভয় দেখিয়ে ফাইল নিবে। কিন্তু তা হলো না লোকটা এতো কঠিন একটুও ভয় নাই‌। জীবনের ভয় ও নাই তিনি নাকি মরতেও রাজি আর ব‌উ সে ও তো স্বামী যা বলে তাতেই হু হা করে। আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলো ওই বর্ষাকে নিজের কবজায় আনবে এক ডিলে দুই পাখি মারার প্ল্যান এটা‌। একদিন তূর্য আরেকদিন এই ব্যারিস্টার। দুজনকেই জব্দ করবে আজ আরিয়ান। অনেক নাটক করছে নিবিড় আহমেদ এর সামনে কিছু খাইস্টা লোক আমাকে একটুও বিশ্বাস করেনি। খালি অপমান অবজ্ঞা করেছে‌। সব সুদে আসলে বুঝে নিবো আজ।

আরিয়ান কে দেখে নিবিড় আহমেদ খুব একটা অবাক হলেন না এই ছেলে প্রথম যেদিন তার কাছে এসেছিলো তার পরেরদিন‌ই এর সম্পর্কে সব জেনে গেছিলো। এজন্য নিজেকে আর নিজের পরিবারকে এর থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছে।
আদিল কে নিয়ে বলা সব কথাই সত্যি ছিলো। এজন্য মেয়েকে নিজের কাছে এনেছে আর গোপনে তিনি আদিলের খোঁজ খবর নিয়েছেন। তাতে আদিলের এর খারাপ কাজের দিকটা দেখতে পায়নি। অপরাধীকেই সে ওই রুপে আঘাত করেছে আর মৃত্যু না দিয়ে তাকে জেলে ঢুকিয়েছে শুধু মিনহাজুল কে পাওয়া যায় নি। সেই দোষটা দেওয়া হয়েছে গিয়াসউদ্দিন কে। কিন্তু এটা যে ঠিক না তিনি জানেন কারণ গিয়াসউদ্দিন এর সাথে মিনহাজুল এর সম্পর্কে খুব বন্ধুত্ব পূর্ণ তিনি এই কাজ করেননি। করেছে আদিল। সব অপরাধীকে থানায় এনে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দেয় কিন্তু তাকে কেন নিজে হাতে মারলো। সব উওর আছে আদিলের কাছে তাই আজ তার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো।
আদিলের খোঁজ খবর নিয়ে তিনি মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে চাইছো ‌ কারণ মেয়ে যে তার ওইখানেই আটকে গেছে তার আরো ভালো চাইতে গিয়ে তিনি আর কষ্ট দিতে চায়নি। এক মাত্র মেয়ে তার তাকে সব সময় আগলে রাখতে চেয়েছিল সুখের চাদড়ে মুড়িয়ে কিন্তু তার সেই কলিজার টুকরা কিনা পদে পদে আঘাতে জর্জরিত হচ্ছে তাও তার‌ই জন্য তাই তিনি ভেঙে পরেছিলো। আদিল তো খারাপ কিছু করছে না আর আদিল তার মেয়েকে যে পাগলের মতো ভালো বাসে তা তিনি সকাল বিকেল রাত বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতে পান। গাড়িতে হেলান দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বর্ষার বেলকনিতে।
বর্ষার অগোচরেই আদিল কতোবার আমার কাছে এসেছে তার একটা বাক্য‌ই বলেছে সে আমার কলিজাকে ভালোবাসে। এক সময় তা প্রতিশোধ থাকলেও পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। আর ভালোবেসে ফেলেছে বর্ষাকে।
কিন্তু তিনি মানেননি‌। আদিল তো তার সামনে মাথা নত করে পায়ে ও হাত দিয়ে নিজের সুখ হিসেবে আমার বর্ষা কে চেয়েছে।

তাই তিনি সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছিলো। আর আজ সকালেই কয়েকজন লোক তাদের বাসা থেকে কিডন্যাপ করছে তখন তারা বাগানে ছিলো নামাজ পরে আজ স্ত্রীর সাথে হাঁটতে এসেছিলেন তখনি এমন ঘটনা। তারপর হাত পা বাঁধা অবস্থায় পায়। ফাইলটার কথা আসতেই তিনি বুঝতে পারেন এক আরিয়ান। কারণ আগেই ওই ফাইল দেখে ফেলেছেন আর ওই আরিয়ানের মুখোশ খুলে গেছে। তাই তো কোর্টে এই ফাইল আগে তুলেছেন।
কিন্তু এখন তিনি কি করে নিজের মেয়েকে রক্ষা করবে। বাবা হয়ে মেয়েকে রক্ষা করতে তিনি বার বার ব্যর্থ হয়।

আরিয়ান তূর্য কে কল করে একটা কথা বলেই ফোন রেখে দিলো,
‘ তোর প্রাণ ভোমরা তো আমার কাছে রে তূর্য। অনেক হেনস্তা করেছিস এবার আমি তার হিসেব নেব। কু* বাচ্চা তোর জন্য আমি আমার নিদুকে পাইনি আজ তোর ভালোবাসা কেও আমি তোর থেকে পারা জীবনের জন্য কেড়ে নিব। নিদুকে তো আমার জীবন থেকে সরিয়েছিস আমি বর্ষাকে এই পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেবো। কিন্তু তার আগেই একটু টেস্ট না করলে হয় বল যত‌ই হোক তোর পছন্দ করা মেয়ে। এই ঝামেলায় অনেক দিন ধরেই এমন স্বাদ নেওয়া হয়না এবার একটু মন ভরে নেওয়া যাবে কি বলিস।’

তূর্যর কপালের রগ ফুলে উঠেছে আরিয়ানের কথা শুনে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেছে। আরিয়ান তূর্য কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিয়েছে তূর্য থানায় বসে ছিলো। ওর সামনে বসে আছে একজন জুনিয়র অফিসার নাম মিলন। তূর্য ফোন হঠাৎ ই জোরে আছাড় মেরে দাঁড়িয়ে পরে। মিলন ভয়ে এক কোনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ স্যারকে রাগতে দেখে ও ভরকে গেছে।ওর কোন কথায় কি স্যার রাগ করলো এতোক্ষণ তো স্যার হাসি মুখে ছিলো আচমকা কি এমন শুনলো ফোনে যে এতোটা রেগে গেলো। তূর্য একটা লাথি মারলো চেয়ারে তারপর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে উন্মাদের মতো বেরিয়ে এলো। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তূর্য এর যাওয়ার পানে। এমন বিহেভ এর কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না কেউ।

.
বর্ষা একটা অপরিচিত বিছানায় শুয়ে আছে দেখে চমকে ওঠে বসলো। সব মনে পরতেই আরো ভয়ে কেঁপে উঠলো। এটা কোথায় আছে বুঝতে পারছে না ও এমন ঘটনা আগেও হয়েছে ওর সাথে। ও ভাবছে যত কিডন্যাপ করার সবাই কি আমাকেই করে নাকি। এবার ও কি তূর্য কিডন্যাপ করেছে? বর্ষা চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছে একটা পোশাকের দিকে। লাল টকটকে শাড়ি। ও উঠে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে শাড়িটা হাতে নিলো। ওয়াও বলে উঠলো। শাড়িটা মারাত্মক সুন্দর। এক দেখায় পছন্দ হয়ে গেছে। কিন্তু এইভাবে কিডন্যাপ করে বিছানায় যত্ন সহকারে শুইয়ে রেখেছে আবার শাড়ি খাবার ও রেখে গেছে। এটা তূর্য ছাড়া কেউ হবে ই না‌। সিউর বাপির উপর রাগ করে তূর্য এমনটা করছে আবার আমাকে কিডন্যাপ করেছে। কিছুটা হাসি পেলেও বর্ষা রাগ করলো তূর্য এর সাথে এমন ভাবে সকালে ভয় দেখানো হয়েছে তাকে আবার বাপির অনুমতি ছাড়া এসব করেছে আজ সামনে আসুক কথায় বলবো।

শাড়িটা রেখে খেতে বসে গেলো। ইদানিং ওর খালি খিদে পায়। এতো পেটুক কি করে হলো ও নিজেই অবাক হয় নিজের কান্ডে। খাবার দেখলে তো না খেয়ে থাকতেই পারবে না তার মধ্যে দশটা বাজে। খিদে ও পেয়েছে। বর্ষা আয়েশ করে খাচ্ছে সাথে দুশ্চিন্তা ও হচ্ছে সকালে বাবা মা গেছিলো কোথায়?
তূর্য এতো সব করলে বাপি জানলে তো কষ্ট পাবে যদি অসুস্থ হয়ে পরে?

খাওয়া শেষ করে চিন্তিত মুখে তূর্য এর অপেক্ষায় বসলো। দরজা জানালা এমন বন্ধ করে রেখেছে কেন ও বুঝতে পারছে না। তবুও শান্ত হয়ে বসে আছে মাঝে মাঝে পায়চারী করছে বাপির চিন্তায়।

হঠাৎ বর্ষার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। ও সাথে সাথে বিছানার হাতল ধরে বসে চোখ বন্ধ করলো কেমন জানি লাগছে। মাথাটা খুব ঘুরছে চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আসছে তূর্য বলে চিৎকার করে বিছানায় পরে গেলো।

.
বর্ষা যখন চোখ মেললো নিজেকে হসপিটালের বেডে পেলো তূর্য ওর হাত ধরেই বসে ছিলো। বর্ষা চোখ মেলেই তূর্য কে দেখে উঠে বসলো। আর জিজ্ঞেস করলো,

‘ আমি হসপিটালে কেন? আপনি না আমাকে একটা রুমে আটকে রেখেছিলেন! এখানে নিয়ে এসেছেন কখন। আপনি আবার বাপির অনুমতি ছাড়াই আমাকে কিডন্যাপ করেছেন কেন? বাপি কিন্তু খুব রাগ করবে আপনার কাছে আমাকে আর যেতে দেবে না।’

‘ তুমি শান্ত হ‌ও। আমার কাছ থেকে আমার আত্মা কে আলাদা করার কারো সাহস না। তোমার ওই বাপিও ও না।’

‘ আপনি কিন্তু কথা দিয়েছিলেন বাপির অনুমতি ছাড়া আমার সাথে এমন করবেন না। আমি বাপিকে কষ্ট দিয়ে আপনার কাছে যেতে পারবে না’

‘ জানি তো। ‘

‘ আমার তখন কি যেন হয়েছিলো হঠাৎ মাথা ঘুরছিলো তারপর কিছু মনে নেয়। আপনি কখন এসেছিলেন?’

তূর্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘ একটু পরেই‌। ‘

‘ সামান্য মাথা ঘুরানোতে হসপিটালে এনেছেন কেন? আমার কি বড় কোন অসুখ হলো নাকি? আমার না কয়েকদিন ধরেই খালি খিদে পাচ্ছিল, মাথা ঘুরাচ্ছি শরীর ভাল লাগছিলো! এসব কি কোন বড় রোগের লক্ষণ আপনার মুখটা এমন শুকনো একটু খানি হয়ে আছে কেন? বাপি মাম্মা কি জানে আমি হসপিটালে আ..’

তূর্য বর্ষার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো।

‘ চুপ করো জান। এতো কথা বলো না উত্তেজিত হয়না। তোমার কিছু হয়নি। কিন্তু কয়েকদিন পর হবে‌।’

‘ মানে?’ অবাক হয়ে বললো বর্ষা।

তূর্য বর্ষার ঠোঁটের উপর ছোট করে চুমু খেয়ে নেয়।

‘ আরে এই হসপিটালে কি করছেন আপনি। সরুন।’

খানিক রেগে বললো বর্ষা।

তূর্য সরে এসে বললো, ‘ আমার ব‌উকে আমি যেখানে খুশি সেখানে আদর করবো তোমার কি?’

‘ আপনি এতো নির্লজ্জ কেন?’

‘ নির্লজ্জ না হলে কি আমি আজ বাবা হবার খবরটা শুনতে পেতাম।’

বলেই তূর্য বর্ষার পেটের কাছে মুখ নামিয়ে নিলো। আর কামিজের উপর দিয়েই ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।বর্ষা তূর্য এর এমন কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে গেলো। বিস্ময় হতবম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে তূর্য এর দিকে।

‘ বর্ষা আমরা বাবা মা হতে যাচ্ছি। এমন একটা দিনে এমন খবর শুনতে পারবো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার যে কেমন অনুভূতি হচ্ছে তোমাকে বুঝাতে পারবো না জান। তোমার এই ছোট পেটে আমার অংশ আছে ভাবতেই আমার অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছে। আমি আমার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছি না বর্ষা।’
বর্ষা তো থমকেই গেছে ওর মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে যেন। হঠাৎ দরজা দিয়ে একজনকে আসতে দেখে বর্ষার হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠলো। তূর্য তখন ও বর্ষার পেটে মুখ গুজে আছে। বর্ষা ভয়ার্ত চোখ সামনে তাকিয়ে আছে‌। ওর হাত পা কাঁপছে। বর্ষার চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়।

#চলবে……