তুমি যে আমার পর্ব-২১+২২

0
822

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_21

ফোন অফ করতে গিয়ে ভুলে ফোন রিসিভ করে ফেললো। বিরক্ত হয়ে নিবিড় চৌধুরী কাটতে যাবে তখন অপর পাশের ব্যক্তি কন্ঠ শুনে নিবিড় চৌধুরীর শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। হন্তদন্ত হয়ে ফোন কানে ধরে,

কান্নাও ভয় মিশ্রিত কণ্ঠ কানে এসে বাড়ি খায় নিবিড় চৌধুরীর। এতদিন পর মেয়ের কণ্ঠস্বর শুনে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কথা বলতে পারছেন না। এটা কি করে সম্ভব! তার মেয়ে তাকে ফোন দিয়েছে কিভাবে এটা হলো! কাঁপা গলায় তিনি বলেন,

‘প্রিন্সেস?’

বাবা কল ধরেছে বর্ষা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। বাবা মুখে প্রিন্সেস ডাক শুনে অর চোখে জল ভরে ওঠে।

‘বাপি…

‘আমার প্রিন্সেস। তুমি কোথায় আম্মু? তুমি এটা কার ফোন থেকে কল করেছো? এটা কার নাম্বার? তুমি কোথায় আছো তাড়াতাড়ি বলো আমাকে। কে তোমায় নিয়ে গিয়েছিলো? তুমি ফোন কিভাবে করলে? সব বলো আমাকে।’

‘ বাপি প্লীজ শান্ত হও তোমার প্রেসার হাই হয়ে যাবে।’

‘আমার কিচ্ছু হবেনা। আমার মেয়ে আমাকে ফোন দিয়েছে। তোমার জন্য আমরা পাগল হয়ে গেছি আম্মু। তাড়াতাড়ি তুমি কোথায় আছো বলো আমাকে। এখনি তোমাকে আমি বাসায় নিয়ে আসব।’

‘বাপি আমি কোথায় আছি? আমি জানিনা।আমাকে একটা ভুতূড়ে টাইপের বাড়িতে এনে রাখা হয়েছে। আমি অনেক কষ্ট করে এই ফোনটা চুরি করেছি। আর তোমাকে ফোন করেছি সাথে সাথে। তুমি আমাকে এখান থেকে যেভাবেই হোক নিয়ে যাও বাপি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি এখন লুকিয়ে আছি এই বাসায় কিভাবে আমি এই বাসার বাইরে বের হব তাও জানিনা।অনেক সিকিউরিটি গার্ড আছে বাসায়। সবার হাতে বন্দুক থাকে। আমার খুব ভয় লাগে। নাম্বারটা ঐ লোকটার যে আমাকে কিডন্যাপ করেছে। তিনি অসুস্থ আর আমি সেই সুযোগে তোমায় ফোন করেছি। তিনি সুস্থ হয়ে যাওয়ার আগে তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।’

‘তোমার কিচ্ছু হবে না আম্মু। তুমি ভয় পেয়ো না। বাপি আছে তো বাপি তোমার কিছু হতে দেবে না।’

‘আই মিস ইউ সো মাচ বাপি।’

নিবিড় চৌধুরী ফোন কেটে দিলেন তাড়াতাড়ি।বিছানা থেকে নেমে দ্রুত চশমা পরে পুলিশ কে কল করল আর তিনি সঙ্গে সঙ্গে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ডাক্তার এসে তূর্য কে দেখছে। পেটে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। তূর্য আস্তে আস্তে চোখ মেলে। শাওন রুমে দাঁড়িয়ে আছে আর ডক্টর ওষুধ লিখে দিচ্ছে। অসুস্থতার মাঝেও তূর্য বর্ষাকে খোঁজ করে। শাওন এসে জলপট্টি দেওয়ায় জ্বর অনেক কমে এসেছে। তূর্য রুমের চারপাশে চোখ রেখে বর্ষাকে খুঁজে কিন্তু পায় না। বর্ষা পালিয়েছে। কথাটা মস্তিষ্কে আসতে তূর্য শরীরের সমস্ত অসুস্থতা দূর করে বিছানায় উঠে বসে আর বুকে হাত রেখে আর্তনাদ করে ওঠে। শাওন দৌড়ে এসে কাঁধ ও বাহু চেপে ধরে বলে,

‘ কি করছিস?’

শাওন এর দিকে রাগান্বিত চোখে তাকায় তূর্য।

‘কি হয়েছে এমন করছিস কেন? তুই অসুস্থ শুয়ে পড়েছিস। তোর পাকনামি জন্য তখন ডাক্তার দেখানো হয়নি। ড্রেসিং করানো হয়নি। এখন সারারাত কিভাবে পড়েছিলে দেখ।’

‘বর্ষা কোথায়?’সরাসরি জিজ্ঞেস করে তূর্য।

তূর্য এর কথা শুনে চমকে উঠে শাওন।ও সারা রুমে একবার স্ক্যান করে দেখে বর্ষা নাই‌ কোথাও নাই আর দরজাটাও ভুলে লক করা হয়নি।এই রুমে আসার পর থেকে তার রুম লক করা হয়নি। তূর্য এর ওই অবস্থায় দেখে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল শাওন। বর্ষার কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিলো। শাওন ঢোক গিলে তূর্য এর দিকে তাকায়‌।

‘আনসার মি।’

‘তূর্য আসলে আই এ্যাম সরি। আমি ভুলে দরজা লক করিনি এই সুযোগে মনে হয় বর্ষা পালিয়ে গেছে।’

‘ও কোথাও পালাতে পারেনি।বাসায় কোথাও ই আছে গার্ডদের চোখ এড়িয়ে বাসার বাইরে একপাও রাখতে পারবে না সারা বাসা চেক কর কুইক।’

‘হ্যাঁ করছি!’

বলেই শাওন ছুটে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। তূর্য ও বিছানা থেকে নামতে গেল তখন ডাক্তার কাকা ডেকে উঠলো,

‘একি তুমি এই শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?’

‘আমাকে এখন যেতেই হবে।’

‘তোমার শরীরের কন্ডিশন ভালো না। আবার জ্বর আসতে পারে। মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারো। তাই রেস্ট করো।’

‘এখন আমি রেস্ট কিছুতেই করতে পারবোনা।পাখির খাঁচা থেকে পালিয়ে গেছে। আমার খাঁচার পাখি আমি ছাড়া না পর্যন্ত সে পালাতে পারে না। আমি তাকে পালাতে দেবোনা।এই সাহসিকতা দেখানোর জন্য তার জন্য আমার স্পেশাল শাস্তি তো পাবেই।’

বলেই তূর্য রুমের বাইরে চলে এলো।বর্ষা এদিকে নিচু হয়ে নিচে নেমে এলো। বিশাল বড় এই বাসা। ওদের বাসার থেকে ও বড় আর কি সুন্দর সাজসজ্জা। হা করে তাকিয়ে র‌ইলো। দরজা খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। অনেক কষ্টের মেইন ডোর পেল। কিন্তু লাভের লাভ কিছু হলো না। এটাতো আর সিম্পল দরজা না। লক করা দরজা আমি এর পাসওয়ার্ড জানব কি করে। সোফার আড়ালে লুকিয়ে পরলো তাড়াতাড়ি বর্ষা। একটা সার্ভেন্ট কে দেখে। ভয়ে ওর হার্টবিট লাফাচ্ছে। দু’হাতে মুখ চেপে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। সার্ভেন্ট রান্নাঘরের দিকে চলে যেতেই বর্ষা সোফার আড়াল থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে ই শাওন সেখানে এলো দৌড়ে। শাওন আশেপাশে তাকাতেই বর্ষা সাথে সাথে বসে পড়লো‌ একটুর জন্য বেঁচে গেছে এখনই ধরা পড়ে যেতো।

ধরা পড়লেও তূর্য লোকটা ওকে খুন করে ফেলবে। বাপি আমাকে বাঁচাতে পারবে তো। শাওন সোজা মেইন ডোর খুলে ঘরের বাইরে চলে গেল। এটা দেখে বর্ষার মুখে হাসি ফুটে উঠল। ও লাফিয়ে উঠে ছুটে গেল বাসার বাইরে। তূর্য ল্যাপটপের কাছে বসে আছে। সিসি ক্যামেরা চেক করতে। মাথা ঝিমঝিম করছে ওর।
বর্ষা বাইরে এসে শুধু সবুজ ঘাসের ভড়া জঙ্গল দেখতে পেল মৃদু আলোতে। এখন ওর হাতে তূর্যের ফোন ধরা। শাওন সবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে কাউকে বাইরে যেতে দেখেছি কিনা।

আর সবাইকে জরো করে বোঝাচ্ছে যেন ভালো করে গার্ড দেয় বর্ষা পালিয়েছে এটা ও বলে। তূর্য সিসি টিভি ফুটেছে সবার আগে শাওনকে দেখল ও বাসার বাইরে চলে গেছে। রাগে ওর শাওনের মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে। মাথা মোটা একটা ও বাইরে কি করছে? ও আগের ফুটেজ দেখতে লাগে আর বর্ষাকে দেখে কিভাবে ওর অসুস্থ অবস্থায় দেখে মেয়েটা চিন্তিত হচ্ছিলো। ওকে ডাকছিলো। ভয় পাচ্ছিলো। বুদ্ধি করে শাওন কে কল করেছে। ওর জন্য বর্ষাকে চিন্তিত মুখে দেখে কেন জানিনা তূর্যের ভালো লাগছিলো। কিন্তু সাথে সাথে ওর চেয়াল শক্ত হয়ে যায়। বর্ষা লুকিয়ে বাইরে চলে আসে আর বারান্দায় লুগিয়ে ওর বাপির সাথে কথা বলে।
সম্পূর্ণ দেখে ও দৌড়ে বেরিয়ে যায়।

নিবিড় চৌধুরী পুলিশ কে সব জানায়। পুলিশ তূর্য এর নাম্বার ও নেয়। আর নাম্বার ট্যাগ করে ফেলে।
ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে উঁকি দিচ্ছে বর্ষা তখন কেউ ওর বাহু শক্ত করে ধরে টেনে ধরে ও চমকে উঠে।

সামনে অসুস্থ তূর্য কে দেখে ওর দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়।

‘ আআআপনি…

তূর্য কিছু না বলে ঠাস করে চড় মেরে বসলো বর্ষা কে আর হাত দিয়ে ধরে টেনে হেঁচড়ে নিতে লাগলো।

‘কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন! ছাড়ুন আমাকে! আমি কোথাও যাবো না। আমার বাপি এখনি আমাকে নিতে আসবে।’

তূর্য বর্ষাকে নিয়ে টেনে হেঁচড়ে গাড়িতে তুলে। বর্ষাকে এভাবে নিয়ে যেতে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকায়। গাড়ি লক করে তূর্য শাওনের কাছে এসে ওকে কিছু একটা বলে গাড়িতে উঠে যায় তূর্য।

বর্ষা ভয়ে থরথরিয়ে কাঁপছে। ওর হাতে এখনো তূর্য এর ফোন সেখানে বাপির নাম্বার থেকে কল আসছে ও হতভম্ব হয়ে আছে। তখন তূর্য গাড়িতে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে। আর চট করেই বর্ষার হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নেয়।আর দ্রুত সিম বের করে ভেঙে ফেলে। তারপর জানালা খুলে ভাঙা টুকরো গুলো ফেলে ছিলো। বর্ষা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। তূর্য এগিয়ে এসে বর্ষার সিট বেল লাগিয়ে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে একবার তারপর গাড়ি চলতে শুরু হয়। কিছুটা আসতেই থেমে যায়। আর একটু হেলে পরে বর্ষা। তূর্য জানালা খুলে নিজের ফোনটা সজোরে আছড়ে ফেলে সেখানে। চমকে বর্ষা তূর্য এর রাগান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ে ওর নিঃশ্বাস চলাচল বন্ধ করে যাওয়ার অবস্থা। ওর সাথে কি ঘটবে ভেবে কুঁকড়ে ওঠছে।

পুলিশ নাম্বার ট্যাগ করে যে ঠিকানা পেয়েছে সেই খানে আস্তে তিন ঘন্টা লাগলো। অর্থাৎ সকাল সাতটার তারা আসলো।এখানে এসে তারা একটা পুরাতন জঙ্গলে ঘেরা বাংলো পেলো। নিবিড় চৌধুরী ভেতরে ঢুকতে পাগল প্রায়।

পুলিশ বললো,

‘ এই বাসায় কেউ আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। বাড়ির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বহুদিন কারো পা পরে না এখানে।’

‘ আমার মেরে এখানেই আছে। তারাতাড়ি ভেতরে চলুন।’

‘জ্বি চলুন।’

ভেতরে গিয়ে সবাই অবাক হয়ে গেলো।
.

ঘুমের মধ্যে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখলো নিদ্রা।
রাতে শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এলো নিদ্রার। অভ্রকে ছেড়ে যেতে হবে সাথে ও এই স্বপ্ন টা দেখে।
সকালে ব্যাথা শরীর নিয়ে রেডি হয়ে গেলো নিদ্রা অভ্র এসবের কিছুই জানেনা। নিদ্রা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাঁধছিলো। শরীর কাঁপছে ওর কিন্তু অসুস্থতার কথা বলে আর এই বাসায় থাকতে চায় না।
নিজেকে স্বাভাবিক রাখার অনেক চেষ্টা করেও নিদ্রা সফল হতে পারলো না। মাথা ঘুরে নিচে পড়ে গেলো।
অভ্র বাথরুম থেকে বেরিয়ে নিদ্রাকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে ভয়ে ছুটে আসলো ওর কাছে।

#চলবে……..

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_22

পুলিশ দের সাথে নিবিড় চৌধুরী ওই জঙ্গলে ঘেরা বাংলোতে ঢুকে। বাইরে থেকে এমন বাজে অবস্থা এই বাসার যে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না এখানে কারো বসবাস আছে। কিন্তু বর্ষা তাকে এসব বলেছিল তাই তিনি জোর করে বাসার ভেতরে ঢুকে। পুলিশ তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেল। বাইরে যতটা বিচ্ছিরি অবস্থা ভেতরে ততটাই সুন্দর। কোন রাজপ্রাসাদের মতো। পুলিশ রাও এইসব দেখে থমকে যায়। আর তাদের সন্দেহ বাড়তে লাগে।
পুরো বাসা চেক করে। কার বাসা এটা জানার জন্য। কিন্তু কিছুই পায় না প্রমাণ বলতে কিছু নাই প্রত্যেকটা রুম ফাঁকা।
কয়েকটা আসবাপত্র ছাড়া কিছুই নাই‌। কোন ক্লু না পেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। আর পুলিশরা এই বাসা কার এসব জানার জন্য তদন্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো।

পুলিশ রা দুইদিন পর অনেক চেষ্টার পর একটু আশার আলো দেখতে পেলো। ওই বাসা কার নামে ঠিকানা পেলো না। কিন্তু একজনের হদিশ পেলো। তার মাধ্যমে আসল লোক কে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে চলে গেলো সেখানে।
রফিক ওখানকার রান্নার লোক ছিল এক সপ্তাহের মত কাজ করেছিল তারপর আর করেনি। ওকে আর রাখিনি।ও বুঝে উঠতে পারছেনা। একসপ্তাহ কাজ করলো সেইখান কার খোঁজ ওর কাছে নিতে কেন এসেছে?

পুলিশ দেখে এমনিতেই ও ভয় পায়। তারপর অর কাছে খোঁজ করতে এসেছে। ও ভয়ে কপালের ঘাম মুছে পুলিশের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে,

‘স্যার আমনেরা এইহানে ক্যান আইছেন?’

‘ তোর কাছ থেকে আমাদের একটা ইনফরমেশন দরকার! তুই এক সপ্তাহ মতো ওই বাসাটায় কাজ করেছিস! ওই বাসার মালিক কে আমরা তাকে খুঁজছি তুই আমাদের তার ঠিকানা দে।’

‘ স্যার কার ঠিকানা চাইতাছেন মালিকের?’

‘ হ্যা।’

‘ হেইডা আমি কন থিকা দিমু।’

‘কোথা থেকে দিবি মানে?ওই বাসার মালিক এর জন্য রান্না করেছিস। তাহলে চিনিস না তাকে তোরা। বিবরণ দে। তাদের নাম বল। আর তারা এখন কেউ বাসায় নাই তারা আছে কোথায়?’

‘স্যার মুই তো এসব কিছুই জানি না‌।’

‘বোকা পেয়েছিস আমাদের জানিস না! ওই বাসার কাউকেই তুই চিনিস না তাহলে তুই রান্না করতি কার জন্য।আর তোকের ওই বাসায় রান্নার কাজ টা দিয়েছিল কে আর এত তাড়াতাড়ি কাজ ছেড়ে দিলি কেন?’

‘ স্যার মুই তো ছারি নাই আমারে তো কাজে থেকে বের কইরা দিছে। বাসার মালিক রে জীবনে দেখি নাই কিন্তু আমারে নিছিল হাসেম চাচা। কাজে লিগা ঘুরতে ছিলাম। তখন ঐ হাসেমের লাগে আমার দেখা হয়। আর তিনি আমারে ওই বাসায় কাজটা দেয়। বলে দুপুরে রান্নাটা ভালো করতে হইবো রান্না কইরা দিয়াই চ‌ইলা আসতাম। কিন্তু এক সপ্তাহ পর কি হইল আমারে নিজে থেকে বের করে দিলো। কতো কইলাম চাকরিটা আমার দরকার। টাকা দিতো অনেক একটু কাজের জন্য অনেক টাকা এজন্য খুব করতে চাইছিলাম। কিন্তু আমার রাখেনাই কি করুম আর তারপর থেকে আমি আর ওই বাসায় যায় নাই‌। হাসেম চাচা রে ও আর খুইজা পাইনাই।’

‘সে হাসেমের ঠিকানা দাও।’

‘তার ঠিকানা ক‌ই থিকা দিমু। তার ঠিকানা তো আমি জানিনা।’

‘ হোয়াট‌? একটা বাসায় কাজ করলি আর তাদের কোন খোঁজখবর জানিস না হাসেমের নাম্বার আছে তো সেটা দে।’

‘ক্ষমা করেন স্যার তার নাম্বার ও তো নাই।’

পুলিশ হতাশ হয়ে ফিরে আসলো রফিকের থেকে কোন খবর পেল না। ও কিছুই জানে না সবকিছুই ধোঁয়াশা রয়ে গেল।

নিবিড় চৌধুরী পুলিশকে ফোন দেয়।

‘হ্যালো অফিসার, আমার মেয়ের কোনো খোঁজ পেয়েছেন?’

‘সরি স্যার আমরা এখনো কোনো খোঁজ পায়নি। ওই বাসার সবকিছু রহস্য রয়ে গেছে।
যার কাছে গিয়েছিলাম এত আশা নিয়ে তিনি ও কোন খবর দিতে পারেনি। কিন্তু তাকে আমরা নিজেদের সাথে নিয়ে যাচ্ছি। অন্য একজনের নাম বলছে হাসেম করে আমরা তাঁর মুখের বিবরণ দেখে হাসেমের ছবি আর্ট করে তাকে খুঁজবো আমার মনে হয় তার মাধ্যমে আমরা সবকিছু হদিস পেয়ে যাব।’

‘ওই নাম্বার কি খুলেছে?’

‘না স্যার ওই নাম্বারটা আর খোলা হয়নি এজন্য আমরা নাম্বারটা ট্যাগ করতে পারিনি আর।’

থানায় এসে অফিসার চেয়ারে বসে কফি চাইল।এত ঘোরাঘুরি করল। কিন্তু কোন খবর পাওয়া গেল না।মেয়েটাকে পাগলের মত হন্যে হয়ে খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না এত চেষ্টার পরেও কোনো ক্লু পাচ্ছে না। মাথা ব্যথা করছে কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।

‘স্যার আপনার কফি!’

‘রেখে যাও।’

কপি খাচ্ছে একটু শান্তি মত কিন্তু এই শান্তির আর বেশিক্ষণ রইল না দুই মিনিটের মাঝে দুজন লোক আসলো থানায় এসে সোজা তার কফি খাওয়ার ডিস্টার্ব করল।

বিরক্তের নাক মুখ কুঁচকে আসছে তার। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। একজন মহিলা ও একজন পুরুষ তারা এসে লোকটার সামনে চেয়ারে বসে পড়ল আর পুলিশ টার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘অফিসারঃ আপনি আমাদের মেয়েকে বাঁচান।’

আবার মেয়ে! পৃথিবীর সবার মেয়ের কি একসাথে প্রবলেম হতে হলো?মেয়ে হারিয়ে গেছে মেয়ে, কিডন্যাপ হয়েছে, এমন এই 15 দিনে পাঁচটা এসেছে। আবার আজকে আরেকটা‌। কোন দিকে যাব আমরা।

‘সরি এখন কোন কেস নেওয়া হবে না আপনারা পরে আসুন!’

‘এসব কি বলছেন পরে আসবো মানে। ওইদিকে আমার মেয়েটা মরে যাচ্ছে। আর আপনি পরে আসতে বলছেন?’

রেগে চিৎকার-চেচামেচি করতে লাগলো মাথা ধরেছে তারপরে সব আর নিতে পারল না দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘জ্বি বলেন।কলেজ থেকে আর বাসায় ফিরেনি নাকি বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে?

‘কোনোটাই না অফিসার!’

‘তাহলে কি?’

‘ আমাদের মেয়েকে ফাঁসিয়ে জোর করে বিয়ে করেছে। তারপর অত্যাচার করছে। এখন সে অসুস্থ হয়ে হসপিটালে পড়ে আছে।আমরা সেদিন গিয়েছিলাম জোর করে বিয়ে দেওয়ার জন্য। মেয়েকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কিন্তু তারা বলেছে তারা ফিরিয়ে দেবেনা।বউ হিসাবে মেনে নেবে কিন্তু তারা মেনে নেয় না। ছেলে অন্য একজনের প্রেমে মগ্ন। আর আমাদের মেয়েটাকে অত্যাচার করে অসুস্থ করে ফেলেছে। আমরা ওর হাজবেন্ড অভ্রের নামে কেস করতে এসেছি। অফিসার আদিল আপনি ওই ছেলেটাকে উচিত শিক্ষা দেবেন আমাদের মেয়ের উপর অত্যাচার করার জন্য।’

কেস লেখিয়ে চলে গেল শয়তানি হাসি দিয়ে নিদ্রার চাচা চাচি। বাইরে আসতেই তাদের ফোন বেজে উঠল।
হাতে নিয়ে দেখে আরিয়ানের কল।

‘হ্যালো বাবা!

‘তোমরা কোথায়?’ গম্ভীর গলায় বলল আরিয়ান।

‘থানায় এসেছিলাম নিদ্রার হাজবেন্ডের নামে কেস করতে। এবার খুব তাড়াতাড়ি ওদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। টেনশন নিস না নিদ্রা শুধু তোরই থাকবে।’

‘ওই ছেলেকে তো আমি খুন করে ফেলতাম ও আমার নিদ্রা কে বিয়ে করেছে। ওদের তাড়াতাড়ি আলাদা করো না হলে আমি আলাদা করতে আসলি কাউকে মরতে হবে।’

‘যা করার এবার পুলিশ করবে তুই মাথা গরম করিস না বাবু।’

‘ওকে রাখছি!’

আদিল ক্লান্ত হয়ে চেয়ারে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।

পাশ থেকে আদিলের এক বন্ধু টাইপের লোক এসে বললো, ‘কি ব্যাপার আদিল তোমার শরীর খারাপ নাকি? কেমন যেন অসুস্থ লাগছে!’

‘আরে না ওই নিবিড় চৌধুরীর মেয়েকে খুঁজতে খুঁজতে অর্ধেক পাগল হয়ে যাচ্ছে আমি।’

‘হ্যাঁ তা তো বটেই। লোকটা খুবই চালাক না হলে এত বড় বড় পুলিশ অফিসাররা খুঁজেও তার হদিস মিলছে না ভাবা যায়।’

‘আর তার এই সমস্ত প্যারা আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে! ওনার জন্য আমি দিনরাত একটা টাইম শান্তিতে চোখ বুজে উঠতে পারি না। সারাক্ষণ ফোন দিতে দিতে আমার মাথাটাই খারাপ করে দেয়।’

‘কেসটা আমার উপর ছিল ভাগ্যিস তোমার উপর দিতে পেরেছিলাম। এজন্য আমি শান্তিতে আছি না হলে এসব প্যারা তো আমাকে সহ্য করতে হতো।’

‘শালা আমাকে ফাঁসিয়ে এখন আনন্দের হাসি দিচ্ছিস।’

‘ তা তো দিচ্ছি ই।এখন আবার এরা কার জন্য এসেছিল?’

‘ওনাদের মেয়েকে নাকি জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে ছেলের সাথে। এখন অত্যাচার করে হসপিটালে ভর্তি হয়ে আছে। ওনারা নাকি বিয়ের খবর কিছুই জানতেন না। আজকে আর কোন জায়গায় যাচ্ছিনা সব পরে দেখা যাবে।’

‘ হুম রেস্ট নাও। আসি।’

আদিল এর সামনে থেকে চলে গেলো।

বর্ষাকে একটা অন্ধকার রুমে দুইদিন ধরে হাত পা বেঁধে ফেলে রেখেছে। সেদিন ওই সাহসিকতা দেখানোর জন্য। বর্ষার চোখ বন্ধ পেটে খিদের যন্ত্রণা আর হাত পা বেঁধে রেখে খুব শক্ত করে এজন্য ওর অবস্থা খুব খারাপ। একবার ও আলো জ্বলে নি। কেউ আসিনি। মুখ ও বাঁধা এজন্য ও আওয়াজ ও করতে পারে না। সারা শরীর এ অসহ্য যন্ত্রণা হয় ওর। আজকেও জ্ঞান ফিরতেই চেয়ারে বাঁধা হাত পা নাড়াতে যায় আজ ব্যাথা কম লাগছে।
কাল তো ছিঁড়ে যাচ্ছি লো। ও বাঁধন ছুটানোর জন্য নড়াচড়া করলো তারপর দূর্বল শরীর নিয়ে পরে র‌ইলো। আর জ্ঞান হারালো।
চোখ খুললো কারো স্পর্শে। আধো আধো চোখ মেলে একটু আলোর ঝলকানি এসে ওর চোখে লাগলো। ও সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে আবার তাকালো। ওর সামনে বসে আছে তূর্য। ও দেখতে পেলো ও চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় নেই। তূর্য ওকে নিয়ে বিছানায় আছে। তূর্য ওর চোখের পানি মুছে দিচ্ছে তারপর ওর কপালে গালে চুমু খেয়ে যাচ্ছে। বর্ষা কথা বলতে চাইলো পারলো না। না খেয়ে ওই ভাবে বাধা অবস্থায় থেকে ওর সারা শরীর নিস্তেজ হয়ে গেছে। কোন শক্তি নাই।

ও নড়াচড়া করতে পারছে না। শুধু চোখ মেলে তূর্য নামক এই পাষাণ লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। তূর্য ওর উপর থেকে উঠে এসে পায়ের কাছে বসে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে। আঘাত পাওয়া জায়গা ফূ দিয়ে দিয়ে মলম লাগাচ্ছে। আর তাতে বর্ষা কেঁপে উঠছে। সেদিন বর্ষা ওসব করার পর তূর্য ওকে ওর অন্য বাড়ি নিয়ে আসে আর রেগে ওকে একটা রুম হাত পা বেঁধে রুম অন্ধকার রেখে চলে যায়।
তূর্য ওর মলম লাগানো শেষ করে বর্ষাকে সুপ খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়। তারপর ওর মুখের কাছে ঝুঁকে বলে,

‘ তোমার জন্য আমাকে অনেক কিছু সাফার করতে হয়েছে তাই এতোটা কঠোর আমাকে হতেই হলো।আগেই বলেছিলাম বাড়াবাড়ি করো না। সময় মতো পৌঁছে দেবো।শুনলে না এবার ভোগ করো বর্ষা মনি। ‘

বলেই তূর্য বর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে র‌ইলো।

#চলবে…..