তুমি যে আমার পর্ব-৩১+৩২

0
812

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_31

আরিয়ান ঝামেলা শুরু করে দিলো। রিভলভার বের করে তূর্যর কপালে ঠেকাল। তাতে তূর্য এর মুখে ভয়ের কোন রেশ পাওয়া গেলো না। স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছে। আরিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে চেঁচিয়ে বললো,

‘ ওই মেমোরি কার্ড আমাকে দিয়ে দে। না হলে তোকে মারতে আমি এক সেকেন্ডও সময় নেবো না তূর্য।’

তূর্য আরিয়ানের কথা শুনে তাচ্ছিল্য করে হেসে উঠলো। তূর্য এর লোকেরা এসব দেখে তো সবাই বন্দুক বের করে আরিয়ান দের দিকে তাক করে রেখেছে। তা দেখে তূর্য বাম হাত উঁচু করে রিভলবার নিচে নামাতে বললো। সবাই অবাক হয়ে নামালো।

আরিয়ান তূর্য এর হাসির মানে বুঝতে পারছে না।
‘ তোর ভয় করছে না! তুই এমন করে হাসছিস কেন?’

‘ তোকে আমি ভয় পাবো হা হা হা। হাসির কথা বলিস না। তুই আমার কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে কি ভয় দেখাচ্ছি মৃত্যুর? আমি যে মৃত্যুর ভয় পায় না খুব ভালো করে এতো দিনে বুঝা উচিত তোর‌। আর আমাকে মেরেও তুই নিজের কাজে সফল হবি না। কারণ এর কপি আমার লোকের কাছে আছে। আমার কিছু হলে ওরা এটা ভাইরাল করে দিবে। আমি মরলেও দুই বাচবি না।’

আরিয়ান এসব শুনে বন্দুক নামিয়ে ফেললো। সাথে ওর লোকরাও। তূর্য মুখ বাঁকা করে হাসছে।
আরিয়ানের শরীর জ্বলে যাচ্ছে এই হাসি দেখে। কি করবে ও এখন। ওই শিশুদের কাল বিদেশে না পাঠালে ওর অনেক বড় লস হয়ে যাবে। কতো কোটি নিয়েছে সেসব সুদ করবে কি করে। দুশ্চিন্তায় হাত পা অবশ হয়ে আসছে।
তূর্য পায়ের উপর পা তুলে আরিয়ানের মুখটা দেখছে আর তাচ্ছিল্য হাসি দিচ্ছে।

আরিয়ান তূর্য কে সব বলে দিলো। এছাড়া উপায় নেয়। এসব ভাইরাল হলে ওকে জেলে গিয়ে পচে মরতে হবে। এখন এই তূর্যর কাছে নিচু হতে হবে। কিন্তু পরে এর প্রতিশোধ নিয়েই ছারবে ও।
তূর্য আরিয়ানের থেকে খবর নিয়ে সাথে সাথে শাওন কে কল করলো। আর জায়গায় ঠিকানা দিয়ে দিলো।

‘ এবার প্রমাণ দে।’

‘ ওয়েট এতো তারা কিসের।’

বলেই তূর্য উঠে দাঁড়ালো। আরিয়ান তা দেখে বললো,

‘ না দিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?’

‘ কি দেবো?’

‘ কি দিবি মানে! ইয়ার্কি হচ্ছে আমার সাথে! প্রমাণটা তাড়াতাড়ি দে না হলে বেচে ফিরতে পারবি না এখান থেকে!আমার সাথে চালাকি!’

‘এতো ভয় পাস না। এটা আমি ভাইরাল করবো না। কিন্তু এই প্রমাণটা আমি তোকে দিয়ে দেবো না।’

বলেই তূর্য চলে যেতে নেই আরিয়ান রেগে ওর কলার চেপে ধরে। তা দেখে রাগে তূর্য এর কপালের রগ ফুলে উঠে আর হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আরিয়ানের গাল বরাবর ঘুসি মারে আরিয়ান ছিটকে পড়ে টেবিলের উপর। ছোটখাটো যুদ্ধ লেগে যায়। আরিয়ান ও ওর লোকদের আধমরা করে তূর্য ওর লোকদের নিয়ে বেরিয়ে আসে। ঘুসাঘুসি করতে গিয়ে ওর সানগ্লাসটা ভেংগেছে ভাংগা সানগ্লাস টা দেখতে দেখতে গাড়িতে উঠে বসে। শাওন কল‌ করে জানায় বাচ্চা দের উদ্ধার করেছে।

শাওন এর কাছে যায়। বাসায় আসতে রাত এগারোটার বাজে। একসাথে দুজন আসে।
বাসায় এসে ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল সেরে নেয়।
রুমে আসতেই ওর কল আসে। নাম্বার দেখেই ওর ঠোঁটের কোনে হাসি চলে আসে।

‘ হ্যালো অফিসার আদিল।’

‘ ইয়েস। কি খবর স্যার?’

‘তোমাকে আসতে বলেছিলাম বাসায় কিছু দরকারি কথা ছিলো।’

‘ ও হ্যা। আসলে একটা জরুরী কাজে গেছিলাম তাই আপনার ব্যাপারটা একদম ভুলে গেছি। আজকে বোধহয় আসতে পারবো না। আমি আপনার সাথে কাল মিট করি স্যার!’

‘ ওহ আচ্ছা সমস্যা নাই। কিন্তু আমি কি জন্য তোমাকে আসতে বলেছি তুমি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছ কি?’

‘ আমার মনে হয় পেরেছি। আমি আপনাকে সাহায্য করবো। আপনাকে আমি বিশ্বাস করি আর কেউ পাশে না থাকলেও আপনি আমাকে পাশে পাবেন স্যার।’

‘ থ্যাংক ইউ অফিসার এজন্যই তো আপনার সাথে আমি কথা বলি। আপনি আমাকে ওই লম্পটায খুঁজে এনে দিন। যে আমাকে নিঃস্ব করেছ।’

‘ চিন্তা করবেন না। তাকে খুব তারাতাড়ি পেয়ে যাবো।’

‘ মেয়েটার দিকে তাকাতে পারি না।’

‘ ও আচ্ছা রাখছি। কাল দেখা হচ্ছে কেমন।’

‘ আচ্ছা।’

তূর্য কল কেটে দিলো।

‘ আমার সাহায্যে আমাকেই খুঁজতে চায়। ও গড! কিন্তু আমি আপনার বিশ্বাস যোগ্য পাত্র হয়ে থাকব স্যার।আপনার বিশ্বাসযোগ্য না হলে যে আপনার কলিজাটা আমার হবে না। আপনি নিজের হাতে আমার হাতে তুলে দিবেন তাকে।’

শাওন ওর দিকে তাকিয়ে আছে সন্দেহ চোখে।

‘ ওই কি ভেবে হাসছিস?’

‘ কিছুনা।’

শাওন ওর ব্যাপার বাদ দিয়ে তিশাকে কল করলো।

.
নিদ্রা এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে যাচ্ছে না। আরিয়ানের ভয়ে যাওয়ার সাহস করতে পারছে না। ও বারান্দায় বসে ছিলো অভ্র ওর পাশে এসে বসলো। ওকে চিন্তিত দেখে বললো,

‘ কি হয়েছে? কি এতো চিন্তা করছিস?’

নিদ্রা চমকে উঠে তাকায়।

‘ কিছুনা।’

‘ মিথ্যা বলছিস?’

‘ আমার একা বাইরে যেতে ভয় করে আমি এখন কি করবো?’

‘ একা যাবি কেন? দরকার হলে আমাকে সাথে নিয়ে যাবি একা যাওয়ার দরকার কি?’

‘ হাসপাতালে যাব কি করে?’

‘ চাকরি ছেড়ে দে। তোর চাকরি করার কি দরকার। আমার ইনকাম এ কি তোর চলবে না।’

‘ তোর ইনকাম এ আমি চলবো কেন?’

‘ তো কার ইনকাম এ চলবি? বর এর ইনকাম এই তো ব‌উ চলে।’

‘ হুম জানি। কিন্তু আমি তোর ইনকাম এ চলবো কেন? তুই কি আমাকে ব‌উ মানিস?তুই তো আমাকে যেকোনো সময় ডির্ভোস দিয়ে দিবি।’

‘ আমি তোকে ডির্ভোস দেবো না।’

নিদ্রা অবাক হয়ে তাকালো,’ কেন? ভালোবাসিস আমাকে?’

‘ জানিনা। কিন্তু আমি তোকে ছারবো না। সারাজীবন তুই আমার ব‌উ থাকবি আর আমি তোর বর।’

‘ কি সব বলছিস? পাগল হয়ে গেলি নাকি? আর তোর বর্ষার কি হবে?’

‘ ওর আবার কি হবে?’

‘ তুই তো ওকে ভালোবাসতি। আরেকটা কথা তুই বর্ষার সাথে দেখা করেছিস আর?’

‘ না।’

‘ কেন?’

‘ ওর সাথে কেন দেখা করবো?’

‘ তুই ওকে ভালোবাসিস। বিয়ে করতে চাস এসব বলবি।’

‘ জোর করে সংসার ভাঙতি চাইছিস কেন? আমি বলছি তো আমি তোর সাথেই থাকতে চাই। বর্ষাকে আমি ভুলে যেতে চাই।’

‘ জোর করে আমাকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করিস না। আর আমাকে দয়া করিস না। আমি কারো দয়া নেবো না‌‌।’

‘ আমার ভালোবাসা তোর কাছে দয়া মনে হচ্ছে।’

‘ তুই ভালোবেসে এসব বলিস নি। তুই দয়া করে বলছিস।আমি কারো দয়া চাই না।’

অভ্র নিদ্রার এক হাত ধরে বললো।
‘ তোর মুখে ভালোবাসার কথাটা জানার পর থেকে আমার নিজের মধ্যে আমি পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি। তোকে যখন সেদিন পাওয়া গেল না। আমার মনে হয়েছিল তোকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। তোর কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যাব। কিছুক্ষণের জন্য আমার দুনিয়া থমকে গিয়েছিল। তোকে দেখে আমি আবার জীবন ফিরে পেয়েছিলাম। তোকে আমি ভালবাসি কিনা জানিনা কিন্তু আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না সেটা বুঝে গেছি। সারাক্ষণ তোর চিন্তা আমার মাথায় ঘুরপাক খায়। বিশ্বাস কর। বর্ষা ফিরে এসেছে জানা সত্ত্বেও আমার ওকে দেখতে যেতে ইচ্ছে করে নি। ওর জন্য সে আগের ফিলিংস আমি পাইনা। আর মনে হয় বর্ষার প্রতি শুধু আমার চোখের ভালোলাগা ছিল ভালোবাসা না। আমার ভালোবাসা অন্য কেউ। সেই অন্য কে ও টা…..

‘সে অন্য কেউটা আমি অন্তত না আমি জানি।’

বলেই নিদ্রা ভেতরে চলে গেল। আর অভ্র অসহায় মুখ করে বসে রইলো।

#চলবে……….

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_32

হালকা ঠান্ডা পরা শুরু করেছে। সিজন পরিবর্তন হচ্ছে তাই চারপাশে ঠান্ডা জ্বর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কখন জানি বর্ষার গা কাঁপিয়ে জ্বর চলে আসে।
ছোট বেলকনিতে বসে ঠান্ডা উপভোগ করছে বর্ষা। উপভোগ করতে পারছে কি জানা নেই। মনটা হয়ে আছে বিষন্ন। অচেনা রাস্তা, অচেনা জায়গা, সব কিছু অচেনা। আটটা বোধহয় বাজে দুইদিন পর থেকে বর্ষার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ফাইনাল পরিক্ষা কিন্তু তাতে বর্ষার মধ্যে কোন রকম উত্তেজনা নাই‌। ব‌ই খুলে‌ রেখেই বারান্দায় এসে বসে আছে। আগেও যে লেখা পড়া নিয়ে খুব সিরিয়াস ছিলো তা না কিন্তু পরিক্ষার আগের দুইদিন খুব করে পরতো কিন্তু এখন আর তাও হচ্ছে না। হবে কি করে মনের শান্তি না থাকলে কি আর কিছু করে ভালো লাগে? লাগেনা! পড়ালেখা থেকে তো মন উঠেই গেছে। কলেজে গিয়ে এক দন্ড দাঁড়াতে পারে না সবাই ওর দিকে কেমন নজরে যেন তাকিয়ে থাকে যেন বর্ষা কলেজে স্টুডেন্ট ই না এলিয়েন। কেমন কৌতুক করে কথা বলে। এটা শুধু সম বয়সীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে‌ মানা যেতো কিন্তু এসব তো স্যার ম্যাম এর দিকে থেকে ও দেখা যায়।
তারা ও খুব একটা কথা বলে না। কেমন গা ছাড়া ভাব নিয়ে থাকে যেন চিনেই না। আগেই যেই স্যার ম্যাম রা আমাকে দেখলে কতো আদর স্নেহ করতো তার রেশ মাত্র নাই। সব যেন হারিয়ে গেছে।

এক সপ্তাহ হলো নতুন এই বাসা নেওয়া হয়েছে। দুটো রুম একটা কিচেন রুমে। এইখানে আসার পর আর বর্ষা রুমে থেকে বের হয়নি। বর্ষার ভেতরটা ফেটে যায় এসব দেখলে। নিজের বাসা যেখানে জন্ম নেওয়ার পর থেকে থেকেছে কতো শত স্মৃতি সব ফেলে কোথায় পরে আছি।
হাচ্চু বলেই বর্ষা মুখে হাত দিলো পর পর তিনটা হাঁচি দিলো। ঠান্ডা মনে হয় লেগেই গেলো।
মাম্মা ছুটে এলো বর্ষা বর্ষা করে।

‘ বর্ষা ক‌ইরে!’

বর্ষা উঠে রুমে চলে এলো, ‘ হুম বলো।’

‘ তুই এই ঠান্ডায় বারান্দায় বসে ছিলি এই হাতা কাটা ড্রেসে?’

‘হুম।’

‘ জ্বর বাধাবি তো। পরতে বস। না পড়ে ওইখানে কি করছিলি।’

‘ এমনি বসে ছিলাম।’

মাম্মা বারান্দায় দরজা আটকে চলে গেলো।

রাতে সত্যি জ্বর চলে এলো। জ্বরে বর্ষা বরাবরই কাতর হয়ে যায়। আবোলতাবোল বলে। আর পানির পিপাসা পায় খুব। আজ ও রাত তিনটায় পানির তৃষ্ণায় চোখ মেলে তাকালো। কিন্তু উঠতে পারছে না শরীর এতো ব্যাথা আর মাথাটা ভার হয়ে আছে।
বর্ষা জ্বরের ঘোরে গোঙরাতে লাগলো সেই শব্দ পেয়ে ওর মা ছুটে এলো মেয়ের কাছে। আর বর্ষার গায়ে হাত দিয়ে আঁতকে উঠলো,

‘ হায় আল্লাহ কতো জ্বর এসেছে।’

বাপি ও চলে এসেছে। বর্ষা পানি পানি করছে। মাম্মা তা দেখে দৌড়ে পানি এনে খাওয়ালো। তিতা বিষ যেন খেলো বর্ষা ও মুখটা কুঁচকে ফেললো।ভেতরটা তিতা হয়ে গেছে।

নিবিড় চৌধুরী মেয়ের মাথায় কাছে বসে আছে। ডাক্তারকে কল করলো উঠে গিয়ে।বর্ষার মা মেয়ের মাথা পানি ঢালছে। আর চোখের জল ফেলছে। এতো রাতে ডাক্তার কল রিসিভ করলো না। তাই আবার বসে পরলো।মেয়ের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে আছে দুজনে মেয়ের পাশে বসে রাত পার করে দিলো।

সকালে ডাক্তার নিজেই কল করলো। আগের মতো আন্তরিকতা পাওয়া গেলো না কথায়। বিরক্ত সুরে কথা বলছে। ডাক্তার রিমান বর্ষা দের পারিবারিক ডাক্তার। তিনি বর্ষাকে নিয়ে যেতে বললো তিনি নাকি ব্যস্ত বাসায় আসতে পারবে না। অনেক অনুরোধ এর পর রাজি হলো কিন্তু সেটা এগারোটার আগে না।

বর্ষার জ্বর একটু ও কমে নি। ওর মা খাবার রেডি করতে চলে গেলো। কিছু খাইয়ে নাপা খাইয়ে দিবে তাই। নিবিড় চৌধুরী রুমে এসে একটু চোখ বন্ধ করলো। তিনি কি ভেবে যেন আদিলকে কল করার কথা ভাবলো। আদিল তাকে অনেক সাহায্য করেছে। বাসা ঠিক করা থেকে এখানে আসার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বাসায় ও এসেছে কয়েকবার। কিন্তু বর্ষা আদিল কে দেখে নি দেখবে কি করে মেয়ে যে তার ঘর ছেড়ে বের হয় না। সারা দিন বসে থাকে ব‌ই নিয়ে। পরে না এতো আসলে ব‌ই সামনে নিয়ে আনমনে কি যেনো ভাবে।

ডাক্তার নিয়ে এলো আদিল নয়টার আগেই। ফোন করে জানানোর আধা ঘন্টার মধ্যে এসে হাজির। নিবিড় চৌধুরী এতোটা আশা করেনি। ডাক্তার বর্ষাকে দেখে চলে গেলো।
বর্ষা জ্বরের বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে। চোখ একটু একটু খোলা তাতে ও তূর্য কে চিনতে পেরেছে। অবাক হয়ে ও তূর্য এর দিকে তাকিয়ে আছে আধো আধো চোখে। কথা বলতে চাইছে কিন্তু দূর্বলতা ওকে কথা বলতে দিচ্ছে না। ও ভাবছে, আমি এসব কি দেখছি? তূর্য বাপির সাথে কথা বলছে। এটা কি করে সম্ভব? না না আমি হয়তো জ্বরে ভুল দেখছি এটা তূর্য না। বর্ষা চোখ খিচে বন্ধ করে র‌ইলো। বাপির আওয়াজ আসছে না ও নিজের গালে কারো স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো। তাকাতে পারছে না মাথা ব্যাথায় কথাও বলতে পারছে না। কিন্তু অপরজনের কথা শুনে ওর হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো।
‘ বর্ষা মনি তুমি ভুল দেখো নি।’

লোকটার নিশ্বাস আমার কানের কাছে পরছে এই স্পর্শ আমার চেনা।আমার শরীর কাঁপছে। আর কিছু মনে নেই যখন চোখ খুলি সন্ধ্যা তখন। শরীরের ব্যথা একটু কম আমি মাথা চেপে ধরে খাটে বসে পরি।
আস্তে সব মনে পরে নিজেই নিজেকে শান্তনা দেয়। ওইটা তূর্য হতেই পারেনা। আমি জ্বরে আবোলতাবোল দেখেছি সিউর।
তূর্য এখানে কি করে আসবে? মা বাবা আছে। আর তিনি আসবেই বা কেন? তিনি যা চেয়েছিল পেয়েছে এখন আর কি চাইতে পারে। সব তো শেষ।
বাথরুমে থেকে বেরিয়ে দেখলো মাম্মা বসে আছে।

‘ কখন উঠলি? আমাকে ডাকলি না কেন? এখন কেমন লাগছে?’

‘ মাথাটা ভার হয়ে আছে। এমনিতে আগের থেকে ভালো লাগছে!’

আমি বিছানায় বসে পরলাম। মাম্মা মাথা হাত রেখে জ্বর চেক করলো। আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ বাসায় কি কেউ এসেছিলো মাম্মা?

‘ হুম ডাক্তার এসেছি।’

‘ ওহ।’

‘ আর অফিসার আদিল এসেছিল। তিনিই তো ডাক্তার নিয়ে এসেছিলো। ছেলেটা কি ভালো রে আমাদের অনেক সাহায্য করছে।’

‘ ওহ্।’

তার মানে সেসব সত্যি আমার ভ্রম ছিল।

.
জ্বর নিয়ে ই দুইদিন বর্ষা মনোযোগ দিয়ে পড়লো। আজ প্রথম পরিক্ষা। তিশা এসেছে ওকে নিতে দুজন একসাথে বেরিয়ে পরলো। গায়ে হালকা জ্বর আছে। ওইভাবে হালকা একটু খাবার খেয়ে কলেজে এসে পৌঁছায়।
তিন ঘন্টার আধাঘন্টা আগেই বর্ষা পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে যায়। অনেক কষ্টে পরীক্ষা দিয়েছে মনে হয় জ্বর বেড়ে গেছে শরীর কেমন গরম হয়ে আসছে। মাথা ঘোরাচ্ছে যেটুকু লিখেছে তাতে চলে যাবে বাংলা পরীক্ষা তাই অতটা পেরেশানি হতে হয়নি ওকে। মাথায় আঙুল চেপে বাইরে আসতেই একটা পরিচিত মুখ দেখে ওর শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ঠোট কামড়ে হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে। ও চোখ বন্ধ করে আবার তাকায় না এখনো দাঁড়িয়ে আছে। এসব কি হচ্ছে এখানে ওই লোকটা কোথা থেকে এলো? আমি কি পাগল হয়ে গেলাম নাকি যেখানে-সেখানে উনাকে দেখতে পারছি কেন? চোখ ঢলে আবার তাকাতেই দেখে তূর্য ওর একদম কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে। এতটা ভয় পেলে যে ও সাথে সাথে ঢোলে পরলো তূর্য এর গায়ের উপর জ্ঞান হারিয়ে।

চোখ খুলে বর্ষা নিজেকে নিজের রুমে দেখতে পেল। চমকে উঠে বসলো। আবার ও তূর্য কে দেখলো কেন?

মাম্মা বলে চেঁচিয়ে উঠলো। ও তো কলেজের সামনে ছিল বাসায় আসলে কিভাবে।

‘ কি হয়েছে চেঁচামেচি করছিস কেন?’

‘ আমি বাসায় আসলাম কিভাবে?’

‘তিশা তো তোকে বাসায় নিয়ে আসলো। তুই নাকি বাসার সামনে এসে জ্ঞান হারালি আমরা গিয়ে তোকে নিচে থেকে নিয়ে আসলাম।’

‘কিহ তিশা? ও কিভাবে আমি তো ওর আগেই….

‘কি বলছিস কিছু বুঝতে পারছিনা!’

‘কিছু না মাম্মা তুমি যাও!’

মাম্মা কে এসব বলে চিন্তায় ফেলতে চাইলো না বর্ষা তাই কিছু বলল না। কিন্তু তিশা আমাকে নিয়ে আসলো কিভাবে জানতে হবে। ফোন বের করে কল করলো ওকে।

#চলবে……..