#তুমি_শুধু_আমারই_হবে
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১২
অনামিকা রুমে এসে পায়চারি করতে থাকে। কি করা যায় সেটা ভাবছে। এভাবে তো ভয়ে প্রিয় মানুষকে ছেড়ে দেওয়া যায় না। সব সমস্যার কোন না কোন স্যলিউশন অবশ্যই আছে। এভাবে ভয়ে চুপচাপ থাকলে মেরিনা বেগম আরো পেয়ে বসবে। আর এখন তো অনামিকা জানে তিনি তার আপন শাশুড়ি না তাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার এত দায় ও তার নেই। তার শুধু একটাই চিন্তা এই সমস্যা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়!
অনামিকা কিছু একটা ভেবে রুমের বাহিরে থেকে কিছুক্ষণ যাবৎ তার শাশুড়িকে ফলো করতে থাকে। সে নিশ্চিত তার শাশুড়ি প্রমাণ লোপাট করতে এতক্ষণে কাগজ ছিড়ে ফেলেছে। ছিড়ে নিশ্চয়ই ঝুড়িতে ফেলেছে, সেটা যেভাবেই হোক উদ্ধার করতেই হবে। মেরিনা বেগম কারো সাথে ফোনালাপ করছেন। কিছুক্ষণ পর ফোনটা রেখে ওয়াশরুমে চলে যান তিনি। অনামিকাও সুযোগ পেয়ে তাড়াতাড়ি করে রুমে ঢুকে পড়ে। সরাসরি ঝুড়ির কাছে যায়, সে যা ভেবেছিল তাই। কাগজের কয়েকটা টুকরো ঝুড়িতে পড়ে আছে। এত বুদ্ধিমতী মহিলাও এত কাঁচা কাজ করতে পারে ভেবে সে একটু অবাক হয়। টুকরো গুলো নিয়ে তাড়াতাড়ি করে নিজের রুমে চলে যায়। দরজা বন্ধ করে দেয় সে। রুমে এসেই বান্ধবী সাফাকে আবার কল দেয় সে। দুই একবার রিং হতেই ওপাশ থেকে কল রিসিভ হয়।
” হ্যালো সাফা…”
” হ্যাঁ রে বল।”
” আমি কাগজে আঁকা কিছু পেয়েছি আর আমার বউ ওরনা পাচ্ছি না। আমার শাশুড়ি সত্যিই ওসব করেছে। আমি প্রথমে বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না। উনি বলেছে দুইদিনের মধ্যে আমি যেন বাড়ি ছেড়ে, মুহিবকে ছেড়ে চলে যেতে। আমি যেন এসব ব্যাপারে মুহিবকে বলে কিছু করতে না পারি সেজন্য তাকেও বশ করে রেখেছে৷ কি করব বল তো? আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।”
” এতকিছু হয়ে গেছে আর তুই কিছুই বুঝতে পারিস নি? ”
“এই কয়েকদিনের অস্বাভাবিক ঘটনা ছাড়া তো কিছুই হয় নি।”
” তুই এখন বের হতে পারবি?”
” এখন! কিছুক্ষণ পর তো মুহিব আসবে। ”
” কতক্ষণ পর?”
” দেড় ঘণ্টার মত।”
” এই সময়েই হয়ে যাবে। তুই শুধু বেরিয়ে আয়। সমস্যা জিইয়ে রাখতে নেই, মূলসহ উপড়ে ফেলতে হয়। আমার পরিচিত ভালো একটা হুজুর আছে উনার কাছে এসব সমস্যা কিছুই না। তোর শাশুড়ি যতই ভয় দেখাক না কেন কিছুই করতে পারবে না।”
” আসলেই কি সম্ভব?”
” অবশ্যই সম্ভব, তোর কাছে তো কাগজটা আছে। তুই শুধু বের হয়ে আসবি। আজই সব সমাধান হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। ”
অনামিকা ফোনটা রাখে। সাফার কথামতো বের হবে কি না ভাবছে। অতঃপর সিদ্ধান্ত নেয় আর দেরি করা ঠিক হবে না। সমস্যা ছোট থেকে বড় হতে সময় নেয় না। সে মুহিবকে কল করে। মুহিব কল রিসিভ না করলে সে টেক্সট দিয়ে রাখে যেন সে ফ্রি হলেই কল দেয়।
অনামিকা রুম থেকে বের হয় বাহিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তখনই মেরিনা বেগম সামনে এসে দাঁড়ায়।
” যাচ্ছো কোথায়?”
” দুইদিনই তো থাকতে বলেছেন, এই দুইটা দিন অন্তত একটু আমার মতো থাকতে দিন প্লিজ।”
” যেখানে যাচ্ছো যাও, বেশি ওস্তাদি করার চেষ্টাও কোরো না এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।”
” যেতে বলেছেন চলে যাব। আমি আমার স্বামীর খারাপ কখনো চাইবো না।”
” সুবুদ্ধি হোক।”
অনামিকা আর কথা না বাড়িয়ে সেখানে থেকে বেরিয়ে পড়ে। তার হাতে বেশি সময় নেই, যা করার তাড়াতাড়ি করে ফেলতে হবে।
****
সাফা নির্দিষ্ট জায়গার নাম বলে দিয়েছে অনামিকাকে। অনামিকা সেখানেই অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সাফা আর তার হাজবেন্ড সেখানে চলে আসে। তাদের মধ্যে কিছু কথাবার্তা হয় এবং তারপর তিনজন মিলে রওয়ানা দেয়।
একটা বাড়ির সামনে এসে তিনজন দাঁড়ায়। তখনই অনামিকার ফোন বেজে ওঠে। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে মুহিব কল করেছে, সে সাথে সাথে কল রিসিভ করে।
” অনু কল দিয়েছিলে, কিছু লাগবে?”
” আমি একটু বের হয়েছি তুমি আগেই বাসায় যেও না। দুজন একসাথে ফিরব।”
” বের হয়েছ! রাতের বেলা বের কেন হয়েছ? কিছু হয়েছে?”
” আরে না না তেমন কিছু না। সাফা কল দিয়েছিল অনেক দিন বের হওয়া হয় না তাই ভাবলাম বের হই। ভাইয়াও এসেছে সাথে।”
” আমার অফিস আধাঘন্টার মাঝে শেষ হবে, আমিও কি তোমাদের সাথে জয়েন করব?”
” চাইলে করতেই পারো। ”
” কোথায় আছো এখন?”
” বাসার আশেপাশেই, মাত্র দেখা হলো। এখনও সিদ্ধান্ত নিই নি কোথায় যাব! তুমি অফিস শেষ করে বের হও আগে তখন কল দিও, এখন কাজ করো।”
” আচ্ছা ঠিক আছে। রাখছি তাহলে, সাবধানে থেকো।”
অনামিকা কথা শেষ করে ফোনটা আবার ব্যাগে রেখে দেয়। তিনজন মিলে এবার বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।
******
হুজুরের বাড়ি থেকে কাজ শেষ করে প্রায় বিশ মিনিট ধরে তিনজন মুহিবের জন্য অপেক্ষা করছে। সে বলেছিল আধাঘন্টার মধ্যেই অফিস ছুটি হয়ে যাবে কিন্তু প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেল।
পাশে থেকে সাফা বলে ওঠে,
” এখন তো আর চিন্তার কিছু নেই তাই না? তুই একদম শাশুড়িকে ভয় পাবি না তবে ভাইয়া ঠিক না হওয়া অবধি একটু খারাপ থাকার অভিনয় করবি। হুজুর যা যা করতে বলল নিয়ম মেনে সব করলে দেখবি এক সপ্তাহের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর ভাইয়াকে প্রমাণ দেখালে সে বিশ্বাস করবে চিন্তা করিস না। আমরা রেস্টুরেন্টেই এসব নিয়ে কথা বলব।”
” না না তোদের কিছু বলতে হবে না। আমিই বাসায় গিয়ে বলব। আরও কিছু প্রমাণ লাগবে আমার।”
” কিসের প্রমাণ?”
” কাগজ দেখেই কেন বিশ্বাস করবে যে আমার শাশুড়িই এটা করেছে?”
” মানে?”
” আমার শাশুড়ি যে এটা করেছে এটাও তার জানতে হবে প্রমাণসহ। এটা যথেষ্ট না।”
” তুই অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে, যা করবি নিশ্চই ঠিক করবি।”
” চল এগোই। মুহিব হয়তো এখনই চলে আসবে।”
” আচ্ছা চল।”
তিনজন হেটে কিছুদূর যেতেই মুহিবকে পেয়ে যায়। বাহিরে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে সবাই যার যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
মুহিব আর অনামিকা হাটছে, চারপাশে অন্ধকার আর ছোট ছোট আলো আকাশে জোৎস্না ছড়ানো চাঁদ তাদের সঙ্গ দিয়েছে। অনামিকা এবার মুহিবের হাতটা ধরে।
” আজ থেকে আমরা নতুন রুটিনে চলব বুঝেছো?”
” নতুন রুটিন? কিসের রুটিন?”
” এই যে আমরা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে কি কি করব, ঘুম থেকে উঠে কি কি করব এসব।”
” আমার কোন আপত্তি নেই, তুমি মেনে চলতে পারলেই হলো।”
” আমি পারব। ”
” তাহলে আমিও পারব কিন্তু রুটিনটা করল কে?”
” যেই করেছে ভালো কিছু করেছে।”
” ঠিক আছে বাসায় চলো দেখা যাবে। ”
” এই নাও কাগজ, এখানে তোমার রুটিন। এটা তোমার প্রতিদিন মেনে চলতে হবে বলে দিলাম।”
” না মানলে?”
” আমাকে হারিয়ে ফেলবে।”
কথাটা অনামিকা ভারী গলায় বলে ফেলে। সাথে সাথে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। মুহিব ও পথচলা থামিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
” এসব কি ধরনের কথাবার্তা অনু? যা চাচ্ছো সবই তো করছি তবুও এসব কথাবার্তা কেন? আমার কিন্তু এসব কথা একদম ভালো লাগে না শুনতে।”
” স্যরি, আর বলব না।”
” হ্যাঁ সবসময় ভুলভাল কথা বলবে আর স্যরি বলবে।”
” আর বলব না বললাম তো। আল্লাহ না চাওয়া অবধি আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না।”
” কেউ কেনই বা আলাদা করবে আমাদের?”
” উফ বাদ দাও তো এসব। চলো এখন, অনেকরাত হয়ে গিয়েছে। ”
অনামিকা মুহিবের হাত ধরে আবার চলা শুরু করে দেয়। এই মানুষটাকে যে অনেক বেশি ভালোবাসে। এই মানুষটাকে কোনভাবেই হারানো যাবে না, তবে যে বেঁচে থাকার জন্য যে রঙটুকু খুব করে প্রয়োজন সেই রঙটুকুই যে নিঃশেষ হয়ে যাবে। ভালোবাসার মানুষকে সময়ের সাথে হারিয়ে ফেলতে নেই তাকে পেতে যু*দ্ধ করতে হয়। এই যু*দ্ধে ভালোবাসা হারিয়ে গেলে যে জীবনটাই বিবর্ণ হয়ে যায়।
চলবে……..