#তুমি_শুধু_আমারই_হবে
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১১
অনামিকা তার শাশুড়ির রুমে এসে তার পাশে বসে। রুমে তিনি একাই ছিলেন, শ্বশুর হয়তো দোকান থেকে বাড়ি ফিরেনি এখনো।
মেরিনা বেগম অনামিকাকে রুমে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে যান।
” শরীর ঠিক আছে এখন তোমার? হঠাৎ এখানে?”
অনামিকা কিছু একটা ভাবলো। সে যে তার শাশুড়ির ওসব জেনে গেছে এটা কি আগেই বলা উচিৎ হবে!
অতঃপর অনামিকা সিদ্ধান্ত নেয় সে আগেই ওসব কথা তার শাশুড়িকে বলবে না। হাতে যেহেতু প্রমাণ আছে তাই মুহিবের সাথে কথা বলাই সঠিক হবে। মুহিব তো অবাক হয়ে যাবে তার মা আসলেই এমন কাজ করতে পারে! ওহ এটা তো আবার তার মা না তার সৎমা। নিজেকে সামলে নেয় সে।
” রুমে একা একা ভাল লাগছিল না তাই মামির রুমে গিয়েছিলাম। মামি বলল আজ নাকি মামি বাড়ি চলে যাবে তাই আপনাকে জানাতে এলাম।
” আজই চলে যাবে! কেন আর ক’টা দিন থেকে যাক, এত তাড়া কিসের? আর তাছাড়া তুমি তো এখনো সুস্থ হওনি, আর তিন চার দিন থাকুক। তুমি সুস্থ হলে তারপর যেতে বোলো তাহলে তোমারও ভালো লাগবে তারও ভালো লাগবে।
” মামি তো অনেক কাজ ফেলে রেখে আমার এখানে এসে থাকছে। প্রায় এক সপ্তাহ আছে তাই আমিও আর না করিনি যাক সমস্যা নেই। আর তাছাড়া আমি এখন আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ।”
” ঠিক আছে, যাবে কখন? ”
” এই তো সন্ধ্যার দিকে মামা এসে নিয়ে যাবে।”
” ঠিক আছে। কি রান্না করব বলো তো?”
” মা, আমি মামিকে বলেছি একটু গরুর মাংস রান্না করতে। ফ্রিজ থেকে বের করে রাখব এখন।”
” তোমার মামি এ বাড়ির অতিথি, সে কেন রান্না করবে?”
” মামির হাতের গরুর মাংস রান্নাটা খুব সুস্বাদু হয়, তাই আমিই মামিকে একটু রান্না করে দিয়ে যেতে বলেছি।”
” কেন? আমার হাতের রান্না ভালো না?”
” অবশ্যই ভালো, আমি তো খারাপ বলি নি। ”
” হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি। আচ্ছা তোমার মামিই রান্না করুক খেয়ে দেখে কত সুস্বাদু হয়!”
” ঠিক আছে মা আমি তাহলে আসছি।”
অনামিকা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই মেরিনা বেগম পিছন থেকে আবার ডাক দেন। অনামিকা দাঁড়িয়ে যায়।
” জি।”
” তুমি কি আর কিছু বলতে এসেছিলে?”
অনামিকার এবার খটকা লাগে, তবে কি উনি বুঝে গিয়েছেন যে আমি উনার সব জানতে পেরেছি! না না উনি বুঝবেন কি করে, উনাকে তো বুঝতেই দেওয়া হয় নি।
” না মা, আমি তো এটাই বলতে এসেছিলাম।”
” আচ্ছা ঠিক আছে যাও তাহলে।
অনামিকা নিজের রুমে গিয়ে কাগজের টুকরো দুটো নিজের বালিশের নিচে রেখে দেয়। সে মনে মনে চিন্তা করে এটা নিয়ে মুহিবের সাথে আগে আলাপ-আলোচনা করে নিতে হবে। কাগজের টুকরো দুটো প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগবে। মুহিব তার মাকে অনেক ভালোবাসে প্রমাণ ছাড়া তো সে বিশ্বাস করতে চাইবে না।
****
অনামিকা মিসেস রেহেনাকে রান্নাঘরে রান্নার কাজে সাহায্য করছে। বাহিরেই তার শাশুড়িও বসে তাদের সাথে কথা বলছে। মেরিনা বেগমের একটাই কথা আর দুই তিনটা দিন থেকে গেলেই হতো। রেহেনা বেগমের যে আর থাকার অবস্থা নেই সেটাও বুঝিয়ে বলেন।
ফোন বেজে ওঠায় মেরিনা বেগম নিজের রুমে চলে যান। এমন সময় রেহেনা বেগম অনামিকাকে কাছে টেনে নিয়ে পাশে দাঁড় করিয়ে দেন।
” কথা কি বলেছিস তোর শাশুড়ির সাথে? দেখে তো মনে হচ্ছে বলিস নি।”
” না মামি বলি নি, ভাবলাম মুহিবের সাথে আগে কথা বলব।”
” কাগজ ঠিকমতো রেখেছিস?”
” হ্যাঁ মামি, আমার বালিশের নিচেই রেখেছি।”
” ঠিক আছে, আর শোন একটু সাবধানে থাকিস মা। যে বাড়িতে শত্রু আছে সে বাড়িতে যখন তখন বিপদ ঘটতে পারে।”
” তুমি চিন্তা করো না মামি। আমি সবটা সামলে নেব ইন শা আল্লাহ। ”
” সাবধানে থাকিস মা।”
কথা শেষ করে রেহেনা বেগম রান্নায় মন দেন। অনামিকাও যা যা কাজ বাকি আছে তা করতে থাকে।
****
সন্ধ্যাবেলায় রেহেনা বেগমকে বিদায় দিয়ে অনামিকা নিজের রুমে যাচ্ছিল এমন সময় মেরিনা বেগম পিছন থেকে বলে ওঠে,
” তুমি কি আমাকে কাঁচা খেলোয়াড় ভেবেছো নাকি? কি ভেবেছো তুমি আমার আড়ালে কিছু করতে পারবে? ”
অনামিকা পিছন ঘুরে তাকায়। শাশুড়ির কথা ঠিক বোধগম্য হয় না তার।
” বুঝলাম না মা।”
মেরিনা বেগম হাতে থাকা কাগজখানা উঁচু করে অনামিকাকে দেখায়। অনামিকা এবার বুঝে যায় বালিশের নিচে রাখা কাগজটা তার শাশুড়ির হাতে। কিন্তু তিনি বুঝলেন কি করে যে অনামিকা সব বুঝে গিয়েছে!
মিসেস মেরিনা কিছটা এগিয়ে এসে বলে,
” তুমি কি ভেবেছো এসব কথা তুমি মুহিবকে বলবে আর সে বিশ্বাস করে নিবে? আমি এত কাঁচা কাজ করি না। বলে দেখো তাকে বিশ্বাস করাতে পারো কি না। আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি তুমি এখানে টিকতে পারবে না। তোমার মতো মেয়ের যোগ্যতা নেই এ বাড়ির বউ হওয়ার।”
” আমাকে কেন পছন্দ করেন না মা? কি করেছি আমি বলবেন একটু?”
” পছন্দ না মানে পছন্দ না। তোমাকে আমি এই বাড়িতে কিছুতেই সহ্য করতে পারি না।”
” তাই বলে আপনি কালোজা*দূর আশ্রয় নিবেন মা? আপনার ছেলে আমার সাথে সারাজীবন থাকতে চায়, আমি চাই, আমরা দুজনই চাই তাহলে আপনার কিসে সমস্যা? আপনি না মা? মা হয়ে এমন কেন করছেন? আমাদের দুজনকে আলাদা করার জন্য এখন আপনি উঠেপড়ে লেগেছেন? ”
” হ্যাঁ আমি কুফ*রিকালামের / কালোজা*দূর আশ্রয় নিয়েছি। আমার কথামতো প্রথমদিকেই মুহিবকে ডিভোর্স দিলে আর এতকিছু করতে হতো না। তোমার কাছে এখন একটাই রাস্তা আর সেটা হচ্ছে নিজে থেকে দুদিনের মাঝে এ বাড়ি ছেড়ে মুহিবের জীবন থেকে চলে যেতে হবে নইলে আমি কালোজা*দু নষ্ট করব না যার কারণে এক মাসের মাঝে তোমাদের সম্পর্ক এমনিতেই নষ্ট হয়ে যাবে। মুহিবকে তুমি কিছুই বুঝিয়ে ঠিক করে নিতে পারবে না। মুহিব বর্তমানে আমার বশে। সে তোমার তোমাকে ভালোবাসবে, যত্ন নিবে কিন্তু আমার বিরুদ্ধে তুমি তাকে কোন কথা বললে সে কিছুতেই বিশ্বাস করবে না। এবার দেখো তুমি কি চাও, দুদিনের মাঝে নিজে থেকে চলে যাবে নাকি সম্পর্ক শেষ করেই যাবে! দেখ বাবা তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিও আমার হাতে বেশি সময় নেই মুহিবের জন্য মেয়ে পছন্দ করে রেখেছি। ওর বিয়ে দেব খুব তাড়াতাড়ি। মুহিবের কোন ক্ষতি না চাইলে তাড়াতাড়ি ওর জীবন থেকে বিদায় হও।”
” মা আপনি কিন্তু খুব ভুল করছেন। উপরে কিন্তু আল্লাহ আছেন, তিনি সবকিছু দেখছেন। সবকিছুর হিসেব আপনাকে দিতে হবে মা।”
” আমার হিসেব আমি দেব, তোমাকে তো আর দিতে হবে না। তুমি ওসব নিয়ে ভেবো না, তুমি শুধু বিদায় হয়ে উদ্ধার করো।”
” এমন করবেন না মা প্লিজ, আমার ভালো থাকাটা কেড়ে নিবেন না। আপনারও তো মেয়ে আছে, আমাকে তার মত একটু ভাবুন। আমি তো আপনাকে মায়ের মতই দেখি।”
” একদম তুলনা করতে আসবে না। আমার মেয়ে আমার মুখের ওপর কখনো কথা বলে না। আমার মেয়ে আর তোমার মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য। ”
” মা আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ।”
” দূর হও সামনে থেকে আর যত তাড়াতাড়ি পারো বাড়ি থেকেও। শুধু শুধু জল ঘোলা করার চেষ্টাও কোরো না যদি মুহিবকে ভালোবেসে থাকো।”
মেরিনা বেগম আর কোন কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমের ভেতর চলে যান। অনামিকা সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কি করবে সে? এখন তার কিইবা করার আছে? তবে কি প্রিয় মানুষের সাথে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার কোন উপায় নেই? ভাগ্যে কি সে মুহিবকে চেয়ে আসে নি!
চলবে……