গল্প :- #তুমি_যে_আমার
পর্ব :- ০৪
লেখক :- কাব্য আহম্মেদ
.
.
-“মিরার কথাটা শুনে আর বেশি কিছু বললো না কাব্য শুধু মিটিমিটি করে হাসছে!
মিরা এদিকে ভাবছে…
নিশির বাচ্চার আজ খবর আছে। কি দরকার ছিলো কাব্যকে বলার যে আমি ঘুমিয়ে আছি।
এরপর তারা চট্রগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স গিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করলো, অবশ্য মিরাও এখন কাব্যকে ভালোবাসতে শুরু করেছে, আর এরকম বোকা-বোকা স্বভাব থাকলে যে কোন মেয়েই প্রেমে পড়তে বাধ্য!
তারপর তারা ঘুরাঘুরি শেষ করে মিরাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে কাব্য চলে গেলো, মিরা তার রুমে এসে ভাবছে কাব্যর কথা, তখন একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মিরার ফোন আসলো।
–“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। (মিরা)
–“ওয়ালাইকুম আসসালাম। (একটা মেয়ে কন্ঠ)
–“আমি নীলা কাব্যর গার্লফ্রেন্ড, মিরা তোমার সাথে আমার খুব জরুরী কিছু কথা বলার ছিলো, যদি তোমার সময় হয়।
–“আমার সাথে কি কথা।
–“ফোনে বলা যাবে না। প্লিজ যদি একটু দেখা করতে,
–“আচ্ছা ঠিক আছে,
.
.
পরেরদিন…….
নীলার দেওয়া ঠিকানা খুঁজে দেখা করলাম। দেখলাম নীলা আগে থেকেই এসে বসে আছে…
–“হ্যালো, (আমি)
–“হাই কেমন আছো? (নীলা)
–“হ্যাঁ ভালো, বলো কি এমন তোমার জরুরী কথা,
–“আসলে কিভাবে যে বলবো।
–“তুমি একটা মেয়ে, আমিও মেয়ে, তাহলে সমস্যা কোথায়?
–“আসলে মিরা, আমি..
–“হুম তুমি?
–“আমি প্রেগন্যান্ট,
–“মা…মানে?
–“হ্যাঁ মিরা, আমি প্রেগন্যান্ট, কাব্য আর আমার, মানে আমাদের সন্তান গর্বে ধারণ করছি আমি।
নীলা এ কথা শুনে আমার মাথাই যেন আঁকাস ভেঙে পড়লো, আমি মাত্র একটু ভালোবাসিতে শুরু করছিলাম কাব্যকে, কিন্তু আমার একদম বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না যে কাব্য আর নীলার বাচ্চা হবে, আর এই ব্যাপারটাই কাব্য আমার কাছ থেকে লুকিয়েছে,
এ কদিনে কেন যেন আমি কাব্যকে অনেক ভালোবাসে ফেলছি হয়তো এইজন্য বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
–“আচ্ছা নীলা তুমি যদি সত্যিই প্রেগন্যান্ট হও তাহলে কাব্য এটা আমাকে কেন বলেনি, কাব্য আর আমিতো দুজন ভালো বন্ধু হয়েছিলাম? (আমি)
–“এটা হয়তো বলার মত কথা ছিলো না, আর তুমি প্রমাণ স্বরূপ কিছু দেখতে চাও? (নীলা)
–“হ্যাঁ দেখাও।
তখনই নীলা তার ফোন থেকে তার আর কাব্যর কিছু অন্তরঙ্গ ছবি আমাকে দেখালো। যেগুলো দেখার পরে আমার পা থেকে মনে হলো মাটি সরে গিয়েছে..
–“দেখো মিরা তোমার মনে প্রশ্ন হওয়াটা স্বাভাবিক, এজন্য আমি প্রমানসহ নিয়ে এসেছি। আর আমার কাছে ভিডিও ক্লিপ সহ আছে, তুমি চাইলে দেখতে পারো। (নীলা)
এ কথাগুলো শুনে আমার এমন লাগছিলো যে আমি সেইসব দেখে সহ্য করতে পারবো না এজন্য আমি বললাম।
–“না থাক আমি আর কিছু দেখতে চাই না। তবে একটা জিনিস বলবো, আমার কাছ থেকে ব্যাপারটা লুকিয়ে অনেক খারাপ করেছে কাব্য।
ওকে আমি বন্ধু ভেবেছিলাম কিন্তু সে আমাকে বন্ধু ভাবেনাই, ভাবলে আজকে হয়তো তোমাদের ব্যাপারটা আমার কাছ থেকে লুকাতো না।
–“দেখো মিরা আমার আর কাব্যর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, এই জন্যই ও এমন করেছে কিন্তু আমি জানি ও আমাকে-অনেক ভালোবাসে, আমাকে ছাড়া ও এক মুহূর্ত থাকতে পারবে না। আর হয়তো কাব্য রাগের বসে তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।
কিন্তু আমার বিশ্বাস কাব্য কখনো আমাকে ছাড়া সুখী হতে পারবেনা আর তাছাড়া আমাদের অনাগত বাচ্চা ও তো তার বাবাকে ছাড়া কিভাবে বাঁচবে বলো?
আর মিরা দেখো তুমি খুব ভালো মেয়ে, তুমি কাব্যর চেয়ে ভালো ছেলে পাবে আশা করি। (নীলা)
নীলা খুব সাবলীলভাবে সবগুলো কথা বলছিলো, কিন্তু আমার মুখে এক ফোটাও হাসি আসছিলো না, চোখ দিয়ে অশ্রু কোন রকমে আটকে রেখেছিলাম। কারণ নীলার সামনে নিজেকে দুর্বল প্রমাণিত করা যাবেনা,
না হলে ও হয়তো বুঝে যাবে যে আমিও এখন কাব্যকে ভালোবাসি। আর আমি চাইনা, যে আমার হবে না,
তার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র ভালোবাসা আছে এটা কেউ জানুক।
.
এরপর নীলার সাথে কথা বলে চলে আসলাম।
আজকে দুইদিন হলো কাব্যর সাথে আমি কথা বলছি না, প্রতিটা ফাংশন হচ্ছে ঠিকই কিন্তু আমার ভালো লাগছেনা,
আমি যেহেতু ওয়াদা করেছি যে নীলার সঙ্গে কাব্যর বিয়ে হবে, তখন কাব্যকে আমি নীলার সঙ্গেই বিয়ে দিবো। কারন একটা অনাগত বাচ্চার থেকে আমি তার পিতার ছায়া কেড়ে নিতে পারিনা, আর যাইহোক কাব্যর সাথে নীলা যে ধরনের সম্পর্ক ছিলো এরপরে তো আর বলার কিছু থাকেনা।
এদিকে নিশি আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে? কি হয়েছে?
আমি নিশিকে এখনো কিছুই জানায়নি কারন আমি যদি নিশিকে কিছু জানায় সে নির্ঘাত মাকে বলে দিবে আর এখন যদি মামনি এসব ব্যাপারে জানে তাহলে একটা না একটা সমস্যা তৈরি হবে, আমি চাচ্ছি বিয়ের দিন আমি চলে যাবো এবং নীলার সঙ্গে কাব্যর বিয়ে দেবার ব্যাবস্থা করেই যাবো। আর বিয়ের দিন এইসব নিশিকে জানাতে হবে।
–“নিশি তোমার সঙ্গে কিছু কথা ছিলো। (কাব্য)
–“হ্যাঁ দুলাভাই বলো। (নিশি)
–“মিরার কি হয়েছে একটু বলতে পারবে? প্রতিটা ফাংশনে ও কেমন যেন অন্যমনষ্ক থাকছে? চেহারাও কেমন যেন হয়ে গেছে! আমার সঙ্গে ঠিকমতো কথাও বলছে না! আমি বুঝতে পারছি না ও এমন কেন করছে?
–“ভাইয়া আপু আসলে আমাকেও কিছু বলছেনা, আমি ওকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছি, কিন্তু কিছুই বলে নাই। ও হয়তো নিজের মতো একা একা থাকতে চাচ্ছে কয়েকদিনে বিয়ে হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে এজন্য, আচ্ছা দেখি তেমন কোনো কারণ তো হবে না,
ও নিয়ে চিন্তা করো না জিজু, কাল তোমাদের বিয়ে এখন একটু হাসিখুশি থাকো,
–“নিশি আরেকটা কথা ছিলো..
–“হ্যাঁ বলে ফেলো!
–“কিভাবে বলবো আসলে বুঝতে পারছি না! তোমার আপুর সবথেকে পছন্দের জায়গা কোনটি? আর… মানে… আর একটা কথা ছিলো আর কি…
–“আপুর পছন্দ-অপছন্দ জানতে চাচ্ছন?
–“হ্যাঁ তা চাচ্ছি, তবে আরো একটা কথা!
–“কি কথা? সেটা তো বলবে?
–“আরে বুঝতে পারছো না?
তখন পেছন থেকেই কাব্যর ভাই রায়হান একথাটি বলে উঠলো।
–“না বুঝতে পারছি না? ভাইয়া ভাবির প্রেমে পড়ে গেছে এখন ভাবিকে কিভাবে প্রপোজ করবে সেই টেনশনে আছেন! আর তোমার চেয়ে ভালোভাবে পছন্দ-অপছন্দ তো কেউ জানে না তাহলে কিভাবে কি করতে হবে, সেটা তো তুমি বলবে। (রায়হান)
–“ও মাই গড জিজু সত্যি?
–“হুম শালী সাহেবা সত্যি।
এখন আপনি বলেন আমি কিভাবে কি করতে পারি? আপনার বোনের মন জয় করার জন্য? আর আমি চাচ্ছি বাসর রাতেই তাকে আমি ভালোবাসার কথাটি জানিয়ে দেবো..
–“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে টেনশন করা লাগবে না, যখন আপনার শালিকা আপনার সাথে আছে,
আপুর সব পছন্দ-অপছন্দ ভালোলাগা-মন্দলাগা সবকিছু সে একটা ডাইরির মধ্যে লিখে রাখে, আর প্রতি বছর একটি করে নতুন ডাইরি লিখে ও। আমি ওর এই বছরের ডাইরিটা আপনাকে দিয়ে দিবো। তখন আপনি আপনার বউয়ের পছন্দ-অপছন্দ সব দেখে নিতে পারবেন, আর আপু একটু ফিল্মি টাইপের, তাহলে ফিল্মি প্রপোজাল ওর পছন্দ হবে বলে মনে হয়, তারপরেও আমি আপনাকে ডাইরিটা দিয়ে দেবো পড়ে নিয়েন।
–“কবে দিবে?
–“আজকে তো সেন্টারে নিয়ে আসিনি, কাল বিয়ে যখন হবে তখন আমি দিয়ে দেবো, আর অ্যারেঞ্জমেন্ট এর ব্যবস্থা করা হয়ে যাবে চিন্তা করো না দুলাভাই..
–“আর বিয়ে তো আপনারা দুপুরে করছেন, সুতরাং রাত পর্যন্ত সময় পাবেন! তখন সব অ্যারেঞ্জমেন্ট করে নিয়েন, ঠিক আছে?
–“ওকে আমার আঁদরের শালিকা!
–“আচ্ছা এত আঁদর আজকে করা লাগবে না, কালকে বউকে ভালোবাসার কথা জানানোর পরে শালিকাকেও একটু ভালোবাসা দিয়েন।
–“হাহা আচ্ছা…..
.
.
.
এদিকে আমার,
প্রত্যেকটা ফাংশনে পরিবারের প্রতিটি মানুষ যে কত খুশি ছিলো কত বেশি আনন্দঘন মুহূর্ত কেটেছে সবার জন্য তা তাদের না দেখলে বুঝার উপায় নেই।
কিন্তু আমি জানি,
আমার মনের ভিতরটা দিয়ে কি যাচ্ছে?
এখন একটা-একটা করে দিন যাচ্ছে আর একটু-একটু করে আমি কাব্যর থেকে দূরে চলে যাচ্ছি, সবাই জানে আমি আর কাব্য এক হয়ে যাবো আগামীকাল সকালে। কিন্তু এটাতো সম্ভব হবে না, আজকে রাতটা পাহাড়ের মত কাটছে আমার, কেমন যে লাগছে আমার কাউকে আসলে বলে বোঝাতে পারবোনা।
কাল সকাল হলেই তো নিশিকে আমার সব জানাতে হবে, কিভাবে ও কথাটা নিবে, ও কি আমায় বুঝবে? নাকি ভাববে আমি বেশি দয়ালু হয়ে গেছি?
কিন্তু আমি যদি বাচ্চাটার জন্য তার বাবাকে ফিরিয়ে না দেই, তাহলে আমি স্বার্থপর হবো, আর আমি এরকম স্বার্থপর হতে চাইনা!
একটা সন্তানের থেকে তার পিতার ছায়া কেড়ে নিতে চাই না আমি, আবার অন্যদিকে যদি আমি আমার ভালোবাসার মানুষটিকে দিয়ে দেই? তাহলে হয়তো সারাটা জীবন আমার কষ্টে কাটাতে হবে!
আর কষ্টে থাকলে নিজেই থাকা ভালো, আমার এ কষ্টের বিনিময় যে একটা সন্তান তার পিতা পাবে একটা পরিচয় পাবে এটাই সবথেকে বড় কথা..
.
.
.
দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের দিনটাও চলে এসেছে সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে, পরিবেশটা খুব সুন্দর! আকাশটা মেঘলা, খুব মোহনীয় একটা দিন আজ,
সবাই বলে যে বিয়েতে বৃষ্টি হয় সেই বিয়েতে নাকি সুখ হয়। হয়তো কাব্য আর নীলার বিয়েতে অনেক সুখ হবে। তারা হয়তো একত্রে অনেক সুখে থাকবে।
আর থাকবেনা-ই বা কেন? আর কিছুদিন পরে যে ওদের ভালোবাসার স্মৃতি স্বরূপ ওদের সন্তান আসছে পৃথিবীতে। সুখ তো হবেই ইনশাআল্লাহ্
আর আমিও চাই আল্লাহতালা যেন ওদের খুব ভালো রাখে। আমি চাই কাব্য সবসময় ভালো থাকুক।
যার সাথেই থাকুক, এই কয়টা দিনের মধ্যেই আমি কাব্যকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি, আর এজন্য আমি সবসময় চাইবো ও যেন সুখে থাকে সেটা যার সঙ্গে থাকুক না কেন……..
.
.
চলবে……………