তুমি_যে_আমার পর্ব :- ০৫ এবং শেষ

0
2765

গল্প :- #তুমি_যে_আমার
পর্ব :- ০৫ এবং শেষ
লেখক :- কাব্য আহম্মেদ
.
.
-:”মিরা তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও পার্লারের জন্য বেরোতে হবে। আর নিশি তুমিও মিরার সঙ্গে যাও (আম্মু)

–“হ্যাঁ মামুনি যাচ্ছি আমি পার্লার এ আপুর সঙ্গে.(নিশি)

–“তোমরা সেখান থেকে সোজা সেন্টারে চলে আসবে। আর বেড় হবার আগমুহূর্তে (মামনি আমায় জড়িয়ে ধরে বললো) “তোমার নতুন জীবন অনেক সুখের হোক মা, আমি এটাই আশা করি, তুমি আমার বড় মেয়ে আল্লাহ তোমায় অনেক বড় ভাগ্য দেয়, কাব্য তোমায় অনেক-অনেক ভালোবাসুক আমি এই কামনাই করছি,

আমি তখন মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।

তারপর পার্লারে বের হবার সময় নীলাকে একটা মেসেজ দিয়ে বললাম যে ঠিক দুপুরে যেন সে সেন্টারে চলে যায়।

এদিকে নিশিকে আমি সব বললাম। নিশি আমার একটা কথাও অবিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। আর যখন নিশিকে বললাম যে আমি কাব্য আর নীলার অন্তরঙ্গ কিছু ছবি দেখেছি তখন নিশি আর কিছু বললো না।
অবশ্য নিশি ব্যাপারটার সাথে-সাথেই কাব্যকে জানাতে চেয়েছিলো, কিন্তু আমি বললাম যে শুধু শুধু দরকার নেই ব্যাপারটা এখন জানানোর, ও সরাসরি নীলাকে বিয়ে করুক! তখন নিশি বললো।

–“আপু তাহলে তোমার কি হবে? তুমি এটা কি ভেবেচিন্তে বলছো?

–“হ্যাঁ আমি ভেবেচিন্তেই বলছি, আমি একটা বাচ্চার ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে পারিনা নিশি। নিজের সুখের জন্য তো কখনোই না।

কথাগুলো বলতে বলতে আমার নিজের চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়ছিলো।

–“আপু তুমি কান্না করছো তুমিও কি জিজু কে ভালোবাসো?

–“না আমি তাকে ভালোবাসি না। প্লিজ এসব প্রশ্ন আমাকে করবি না।

–“আপু তুমি আমাকে মিথ্যা বলছো কেন? তুমি তো তাকে ভালোবাসো। আপু তোমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসো, তাহলে কেন এরকম করছ?

–“নিশি যাইহোক আমি চাই না একটা বাচ্চার ভবিষ্যৎ নষ্ট হোক! এখন শোন আমি একটা চিঠি লিখেছি এই চিঠিটা নিয়ে কাব্যকে দিতে পারবি তো?

–“হ্যাঁ পারবো..
আচ্ছা আপু তুমি তাহলে এখন কি করবে?

–“এখন আমরা পার্লারে যাবো তুই সাজবি আর আমি সরাসরি বাসায় চলে যাবো। যখন বাসা থেকে সব মেহমান সেন্টারে চলে যাবে, আমি তখন চুপ করে বাসার চাবি দিয়ে বাসায় ঢুকে বসে থাকবো। আর নীলা
কাব্যর যখন বিয়ে হবে ঠিক এরপরে তুই সবাইকে জানাবি আমি কোথায় আছি। এর আগে কাউকে কিছু বলবি না। যে আমি বাসায় চলে এসেছি। পারবি তুই জিনিসটা করতে?

–“হ্যা আপু আমি পারবো।

তারপর যে কথা সেই কাজ যখন নিশি পার্লার থেকে বের হচ্ছে তখন সে আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না করে বললো।

–“আপু তুই অনেক দয়ালু রে, এরকম বড় মনের মানুষ খুব কম দেখেছি আমি এই দুনিয়ায়।

–“আচ্ছা ঠিক আছে এখন এত ইমোশনাল হওয়া লাগবে না। তুই চুপচাপ যা বলেছি তাই কর। আমি একটা রিক্সা নিয়ে বোরকা পড়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম।

কত আশা, কত স্বপ্ন ছিলো, এই দিনটা নিয়ে, কিন্তু সব এক নিমিষেই ভেঙে গেলো। ঘড়ির কাটায় ঠিক দুইটা বাজে আমি বাসায় পৌছে বোরকাটা কোনমতে খুলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। শরীরে একদম শক্তি লাগছে না, এই কয়েকদিন ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করিনি। কাব্য আজকে পুরোপুরি অন্যজনের হয়ে যাবে। মনে অনেক অশান্তি আর অস্বস্তি লাগছে, আস্তে আস্তে সময় কাটছে।

সময়টা যেন ঠিকমতো কাটছে না, অনেক অস্থির লাগছে ওজু করে নামাজ পড়লাম যোহরের, কোরআন শরীফ পড়তে থাকলাম অনেকক্ষণ, কোরানশরীফ পরা শেষে আসরের আযান যখন দিচ্ছে তখন একবারে আসরের নামাজটা পড়ে উঠলাম, ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সাড়ে পাঁচটার মত বাজে, এতক্ষণে কাব্যর বিয়ে হয়তো হয়ে গিয়েছে, তারা দুজন হয়তো বাসায় চলে গিয়েছে, কিছুক্ষণ পরেই মা-বাবা আসবে তাদের হাজারটা প্রশ্ন, হাজার প্রশ্নের উত্তর দেয়া লাগবে। আমার বাবা মার নাম আমার জন্য হয়তো খারাপ হয়ে গেলো, কিন্তু আমি জানি আমার মামনি আর বাবা যখন জানবে আমি একটা অনাগত শিশুর জন্য এটা করেছি, তারা কখনোই আমাকে দোষ দিবেন না। এইটুকু আমার পরিবারের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।

এসব ভাবতে ভাবতে বারান্দায় গেলাম। তখন দরজায় আওয়াজ পেলাম, বাসায় নিশ্চয়ই সবাই ফিরে এসেছে। আমি প্রস্তুত হচ্ছি প্রত্যেকের প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য।

বারান্দায় গিয়ে গ্রিলে হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছি, চোখটা বন্ধ করে রেখেছি কারণ এখন মামণি হয়তোবা এসে আমায় প্রশ্ন করবেন।

ঠিক তখন আমার কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম আর আমি পিছন ঘুরে তাকিয়ে খুব বেশি অবাক হয়ে গেলাম কারন পিছনে কাব্য দাঁড়িয়েছিলো।

কিন্তু কাব্য এখন এখানে কেন মনের ভিতর হাজারটা প্রশ্ন ঘুরছে। আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই কাব্য আমার মুখে আঙ্গুল দিয়ে বললো।

–“অনেক হয়েছে মিরা, আর একটা কথাও বলবেনা তুমি। তুমি ভাবতে পারলে কিভাবে এসব কিছু? আর আমি কি কাউকে ঠকাতে পারি?

আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। ও কি বলছে?
তখন পেছন থেকে নিশি এসে বললো!

–“আপু তুই বড় ভুল করেছিস রে মানুষ চিনতে..

–“মানে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না নিশি?

–“নিশি তুমি আমাকে আর তোমার আপুকে পাঁচটা মিনিটের জন্য…

–“হ্যাঁ হ্যাঁ জিজু বুঝেছি তোমার বলতে হবে না..
তোমরা দুজন কথা বলো আমি বাইরে যাচ্ছি।

এই বলে নিশি বাইরে চলে গেলো, আর আমার হাতে আমারই দেওয়া চিঠিটা এগিয়ে দিয়ে কাব্য বললো।

–“মিরা তুমি এই চিঠির ভেতরে লিখেছো আমি যদি একদিনের জন্য হলেও তোমাকে সম্মান করে থাকি, তাহলে যেন আমার অনাগত সন্তানের জন্য আমি নীলার সঙ্গে বিয়েটা করি।

আচ্ছা মিরা কোন অনাগত সন্তানের কথা বলছো তুমি? আর ওর সাথে আমার এমন কিছুই হয়নি যার জন্য নীলা প্রেগন্যান্ট হবে। আর ও আমার কোন সন্তান সম্ভবা হয়ে যাবার পরেও আমি তাকে ছেড়ে দেবো? আমি এরকম খারাপ কাজ কখনো করতেই পারি না।
যদি এমন কোনো সম্পর্ক আমাদের মাঝে থাকতো তাহলে আমি অবশ্যই নীলাকেই বিয়ে করতাম।

মিরা নীলা তোমাকে কি বলেছে আমি জানিনা, কিন্তু তুমি কেন বিশ্বাস করে নিয়েছো? একটাবার আমাকে কোন প্রশ্ন করলেনা কেন? (কাব্য)

–“নীলা আমাকে আপনাদের দুজনের অন্তরঙ্গ কিছু ছবি দেখিয়েছে, সেসব ছবি দেখে আমি ভেবেছি….

–“ছবি হা’হা এগুলো এডিট করা যায় না মিরা?
তুমি এসব কিভাবে ভাবলে? শুনো তাহলে।

নীলার মনে একটা জেদ কাজ করছে একটা হিংসা কাজ করছে, সে আমাকে বলেছিলো যে আমি তোমাকে বিয়ে কিভাবে করি, সে দেখে নেবে,
সে আমাকে আরো বলেছিলো, সে আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় না, আর আমি অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যাই, এটাও সে চাচ্ছেনা, তুমি কি এটা জানো যে নীলা অন্য একজনের সাথে প্রেম করে? আর এখন সে আমার বিয়েটা ভাঙ্গানোর জন্যই এ কাজ করেছে?
সে আমাকে বিয়ে করতে চায় না। হ্যাঁ তোমার কথামত নীলা আজকে এসেছিলো ঠিকই, কিন্তু আমাকে বিয়ে করতে নয়। আচ্ছা তার আর আমার কিছু রেকোডিং তোমাকে শোনাই, যেটার রেকর্ড মিশি করে নিয়ে এসেছে..
.
.
তারপর আমি রেকর্ডিং শুনে বুঝতে পারলাম যে নীলা অন্য জনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এবং সে কাব্যকে আর আমাকে দূর করার জন্য সে এই ধরনের কথা বলেছিলো।

রেকর্ডিং শুনে আমার চোখের পানি আর কোন বাধা মানছে না। এই কয় দিনের এত কষ্ট এই সব সহ্য করেছি আমি সব মিথ্যা বিশ্বাস করে। কাব্যকে ভুল বুঝেছিলাম।

–“মিরা শুধু একটা বার তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করতে? আমি তোমাকে সব বলে দিতাম। হ্যাঁ এটা সত্যি আমি নীলাকে অনেক ভালবাসতাম। কিন্তু আমার জীবনে তুমি আসার পর থেকে নীলার চেয়েও বেশি আমি তোমাকে ভালোবাসি। এখন আমি আমার দিন রাত কিছুই কল্পনা করতে পারিনা তোমাকে ছাড়া। প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না, আমি মরে যাবো, আমি বেঁচে যদিও থাকি তবে মরা লাশের চেয়ে বেশি আর কিছু নয়। আমার মনটা মরে যাবে। প্লিজ।

কথাগুলো শুনে আমি ঠিক থাকতে পারলাম না, আমি তখন কাব্যর হাতটা ধরে বললাম।

–“হ্যাঁ আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি, আমিও থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া। আর আমি তোমার খুশির জন্য এসব করতে চেয়েছিলাম।

তারপর যেই আর কিছু বলতে নিবো তখনই কাব্য আমায় জড়িয়ে ধরলো এবং বললো।

–“তোমার কিছু বলতে হবেনা আমি সব বুঝতে পেরেছি। ভুলটা আমার ছিলো, ভুলের শুরুটা আমার জন্যই হয়েছিলো, আর এই জন্য আমি তোমার কাছে মাফ চাচ্ছি। তোমার প্রত্যেকটা কষ্টের জন্য আমি দায়ী। এখন তুমি তাড়াতাড়ি করে রেডি হও প্লিজ। কাজী সাহেব বাইরে বসে আছেন এবং আমাদের পরিবারের সবাই বাইরে বসে আছে তুমি রেডি হলেই বিয়েটা হয়ে যাবে।

তারপর আমি বউ সাজলাম, হ্যাঁ পার্লার থেকে সাজার সময় ছিলো না তবে, আমার বোন নিশি কম কিসের? সে পার্লার এর চেয়ে ভালো সাজাতে পারে.. খুব সুন্দর করে আমাকে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুতুলের মত সাজিয়ে ফেললো আমার বোনটা। এখন খুব খুশি লাগছে আয়না সামনে ভালোমতো নিজেকে দেখলাম, না আমাকে যদিও খুব রোগা লাগছিলো এই কয়দিন। তবে এখন চেহারায় যেন রং ফিরে এসেছে। হয়তো একেই বলে ভালোবাসার রং। লাল টুকটুকে বউ সাজলাম কাব্যর জন্য, শুধুমাত্র আমারই কাব্যর জন্য,

তারপর আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো সুন্দরভাবে, আলহামদুলিল্লাহ। এখন আমি বাসর ঘরে যাবো। সব সময় যা হয়, বউ বাসর ঘরে বসে থাকে, আর জামাই কিছুক্ষণ পরে বাসর ঘরে আসে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে উল্টো হয়েছে, আল্লাহই জানে এখন কি হবে, কারন কাব্য সেই সন্ধ্যা থেকে কি করছে ঘরের ভেতরে..
আমাকে ঢুকতে দেয়নি এতক্ষণ,

এখন বাসর ঘরে যাচ্ছি। আমার শাশুড়ি আমাকে অনেক আঁদর করে, একদম নিজের মেয়ের মতো।
তিনি আমাকে বাসর ঘরের দরজার সামনে নিয়ে গেলেন এবং বললেন।

–“এখন ভেতরে যাও মা এবং বেস্ট অফ লাক।

কথাটা শুনে খুব বেশি লজ্জা লাগলো, তারপর আমি রুমে ঢুকলাম, ঢুকে দেখি রুমটা পুরো ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো বেলি ও রজনীগন্ধা ফুলের ঘ্রাণে ভরপুর একদম আমার স্বপ্নের মতো করে সাজিয়েছে ঘরটা,
দরজাটা আটকাতে খুব মিষ্টি আওয়াজে গান চলতে শুরু করলো।

-তুমি যে আমার ওগো,
তুমি যে আমার,

কানে কানে শুধু একবার বলো
তুমি যে আমার..

ঠিক তখন পেছন থেকে কাব্য আমায় জড়িয়ে ধরে কানের কাছে আস্তে করে ব বললো!

-“তুমি শুধুই আমার অনেক ভালোবাসি বউ,
.
.
সমাপ্ত…….