তোকেই ভালোবাসি পর্ব-১৯

0
1812

#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক – তানভীর হৃদয় নীল
#পর্ব – ১৯

– পরের দিন সকালে চোখ খুলতেই দেখি। নুসরাত আজকে ও আমার বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে। আজকে আর ডাক না দিয়ে। রাগে খাট থেকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। সাথে সাথে নুসরাতের ঘুম ভেঙ্গে যায়।

নুসরাত – খাট থেকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলি কেন?(কোমড়ে হাত দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে)

তানভীর – তো কী আদর করবো নাকি? কতোবার বলেছি আমার থেকে দূরে থাকতে?কথা কী কানে যায় না?(ধমক দিয়ে)

নুসরাত – তার জন্য তুই খাট থেকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিবি?আমি তোর বিবাহিতা স্ত্রী। আমার কী তোর কাছে আসার অধিকার নেই?কেন আমার সাথে এমন আচরণ করিস?(কেঁদে কেঁদে)

তানভীর – ন্যাকা কান্না বন্ধ কর। আর এইসব আজাইরা কথা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে নে। আজকেই ঢাকায় চলে যাবো।

– নুসরাত কিছু বলার আগেই ওয়াসরুমে চলে গেলাম।ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম।নিচে গিয়ে সবাই বসে গল্প করছে। আমি সোফায় গিয়ে বসতেই। রবিন ভাই বললো, তাহলে আজকে কী সত্যিই ঢাকায় চলে যাবে?

তানভীর – জ্বী ভাইয়া।আমি চাই ভাবি আর তিন্নি ও আমাদের সাথে ঢাকায় যাক।

নিশি – আমরা ঢাকায় গিয়ে কী করবো?

রবিন – যেতে না চাইলে যাওয়ার দরকার নেই।এই বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছি।এই সপ্তাহের ভিতরে আমাদের নতুন বাসায় চলে যাবো।

তিন্নি – না আমি চাচ্চুর সাথে ঢাকায় যাবো।

তানভীর – ভাইয়া বাসাটা যখন বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার কিছু দিনের মধ্যে নতুন বাসায় উঠবেন।এই কয়েক দিন না হয়। ভাবি আর তিন্নি আমাদের সাথে ঢাকায় থাকুক।

নিশি – ঠিক আছে।আমি আর তিন্নি তোমাদের সাথে যাবো। আমার দুই বান্ধবীদের সাথেও দেখা যাবে।আর এমনিতেও এই বাড়িতে এখন থাকতে ভয় করছে।

– তারপর তোমরা চলে গেলে। সারাদিন আমাকে একা একা বাসায় থাকতে হবে। তার চেয়ে ভালো নতুন বাসায় যাওয়া আগ পর্যন্ত।কিছু দিন ঢাকা থেকে ঘুরে আসি।

তিন্নি – সত্যি বলছো আম্মু।(খুশি হয়ে)

নিশি – হে। কেন..?তুমি কী খুশী হওনি?

তিন্নি – অনেক খুশি হয়েছি।(জড়িয়ে ধরে)

– তিন্নির দিকে তাকিয়ে রবিন ভাই আর না করতে পারলো না। তারপর সবাই মিলে আরো কিছুক্ষণ গল্প করলাম। সকাল আটটার নাস্তা করে।রেডি হয়ে ফ্যাক্টরিতে চলে গেলাম।

– ফ্যাক্টরিতে গিয়ে সবার সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়। তারপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে। মামুন ভাই আর ছয়জন লোক সাথে নিয়ে। রবিন ভাইয়ের বাসায় চলে আসলাম।

– বাসায় গিয়ে দেখি সবাই রেডি হয়ে বসে আছে।আমাকে দেখে রিয়া বললো, ফ্যাক্টরি থেকে আসতে এতক্ষণ লাগে?

তানভীর – সরি।আসতে একটু দেরি হয়ে গোলো। তোরা গিয়ে বাহিরে গাড়িতে উঠ।আমি একটু রুম থেকে আসছি।

রিয়া – রুমে আবার কী?

তানভীর – কিছু না।তোরা গাড়িতে গিয়ে বস। আমি যাবো আর আসবো।

রিয়া – ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি আসবি কিন্তু।

– আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি রুমে চলে গেলাম।রুমে গিয়ে ড্রয়ার খুলে চেকটা নিয়ে চলে আসলাম। বাহিরে গিয়ে রবিন ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে।নিজে ড্রাইভ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

– তাপর ঢাকায় পৌঁছে আমাদের কেনা বাসার সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে। গাড়ি থেকে নেমে দেখে শুভ দাঁড়িয়ে আছে। এখানে শুভকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম। আমি কিছু বলার আগেই মামুন ভাই বললো,কি অবাক হচ্ছো তাই তো?

তানভীর – হুম।(মাথা নাড়িয়ে)

মামুন – অবাক হওয়ার কিছু নেই।শুভরাও এখানেই থাকে।মানে তোমার বাসার পাশের বাসায়।শুভই আমাকে এই বাড়িটার খুঁজ দিয়েছিলো।(কিছু হেসে)

তানভীর – আমাকে জানান নি কেন?

শুভ – আমি না করেছি তাই।

তানভীর – ঠিক আছে। বাসার ভিতরে চল।

– বাসার ভিতরে যাওয়ার পর রিয়াদেরকে রুম দেখিয়ে দিয়ে।আমি মামুন ভাই আর শুভ একসাথে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।

– রাত আটটার দিকে আমি শুভ আর মামুন ঘুরতে বের হলাম।সাথে কোনো লোক জন নিয়ে যায় নি। ঘুরাঘুরি শেষ করে বাসায় আসার সময়। হঠাৎ একজন মেয়ে আমাদের গাড়ির সামনে এসে কাঁদতে কাঁদতে বললো, প্লিজ ভাইয়া আমাকে বাঁচান।ওরা আমাকে নিয়ে মেরে ফেলবে।

– মেয়েটির কথা শুনে গাড়ি থামিয়ে তিনজন গাড়ি থেকে নামলাম।গাড়ি থেকে নেমে তিনজন মেয়েটির কাছে গেলাম। মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছে জান্নাতের সমবয়সী। কিছুটা অন্ধকার থাকায় তার চেহারা ভালো করে দেখা যাচ্ছে।

তানভীর – কী হয়েছে আপু?এখানে তো তেমন কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা।

মেয়েটি – ওরা আমার পেছনেই ছিলো। প্লিজ আমাকে আপনাদের সাথে নিয়ে যান।ওরা আমাকে পেল মেরে ফেলবে।(ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে)

মামুন – এই মেয়ে বলে কী? মাথা নষ্ট হয়ে গেছে নাকী?

শুভ – এই নির্জন রাস্তায় মানুষ দেখলেন কোথায় আপনি?

মেয়েটি – প্লিজ ভাইয়া। আমি আপনাদের হাত জোড় করে বলছি। আপনারা আমাকে বাঁচান। তার না হলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে?( কাঁদতে কাঁদতে )

– ওরা বাঁচাবে তোকে?এই শহরে এমন কোনো লোক নেই।আমাদের কাছে বাঁধা দেওয়ায়।আমাদের হাতে মরতে তোকে হবেই।

– পেছনে তাকিয়ে দেখি পাঁচজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।কিছু বলার আগেই মেয়েটি রাস্তায় বসে। কাঁদতে কাঁদতে আমার পা জড়িয়ে ধরে বললো, প্লিজ ভাইয়া আমাকে বাঁচান।ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।

তানভীর – আপনি ভয় পাবেন না।আমরা থাকতে কেউ আপনাকে কিছু করতে পারবে না।(রাস্তা থেকে উঠিয়ে)

– এখানে এইসব হিরোগিরি দেখাতে আসিস না। এইসব অন‍্য কোথাও গিয়ে দেখা।ভালোই ভালোই মেয়েটাকে আমাদের হাতে তুলে দে।

তানভীর – আপনাদের সমস্যা কী? কেন ওকে মারতে চাইছেন? ও কী ক্ষতি করেছে আপনাদের?

– এতো কিছু জেনে তুই কি করবি? আমাদের শিকার আমাদের হাতে তুলে দে।(ধমক দিয়ে)

তানভীর – আর যদি না দেই?

– তোকেও মেরে ফেলবো। বসের হুকুম কেউ আমাদের কাছে বাঁধা দিলো।তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে।

তানভীর – কে আপনাদের বস?

– মন্ত্রী আসাদ চৌধুরী।

– এতো কথা না বলে। গিয়ে মেয়াটাকে নিয়ে আয় যা।( জোড়ে ধমক দিয়ে)

তানভীর – বাঁচতে চাইলে এখান থেকে চলে যা।মেয়েটাকে তার বাসায় যেতে দে।

– বাসায় কেউ থাকতে তো যাবে।এই চল আমাদের সাথে।(হাত ধরে টেনে)

– সাথে সাথে পেছন থেকে শুভ এসে মেয়েটির বাম হাত ধরে ফেলে। যার কারণে মেয়েটি দাঁড়িয়ে যায়।এটা দেখে রেগে গিয়ে ওদের মধ্যে একজন এসে।চাকু দিয়ে শুভর পেটে আঘাত করতে চাইলো।

– সাথে সাথে আমি ডান হাতে চাকুটা ধরে ফেলি।যার কারণে আমার হাত কেটে রক্ত পড়তে শুরু করলো। আমার হাত থেকে রক্ত পড়তে দেখে। মামুন ভাই রিভাল বার বের করে লোকটার বুকে গুলি করলো।

– সাথে লোকটা মাটিতে পড়ে যায়। পাশের জন ভয়ে মেয়েটির হাত ছেড়ে দেয়। মামুন ভাইয়ের হাতে রিভাল বার দেখে। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন রিভাল বার বের করে। মামুন ভাইকে মারার জন্য।

– সাথে সাথে মামুন ভাইয়ের হাত থেকে রিভাল বার নিয়ে। মামুন ভাইকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলাম।রিভাল বার হাতে নিয়ে পর পর কয়েকটা গুলি করলাম ওদের উপর।সাথে সাথে সবকয়টা মাটিতে পড়ে গেলো।

মামুন – ছোট্ট ভাই তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলো।তোমার হাত দিয়ে অনেক রক্ত বের হচ্ছে। এখানে বেশীক্ষন থাকা যাবে।

শুভ – হে ভাই তাড়াতাড়ি চল। তোর হাত দিয়ে অনেক রক্ত বের হচ্ছে। সামনে একটা হাসপাতাল আছে।

– আমাকে কিছু না বলতে দিয়ে।দুজনে আমাকে টেনে গাড়িতে তুলে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর। একজন মহিলা ডাক্তার।আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলেন।

– হাতের ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে।ওই রুম বের হওয়ার সময় তানিশা আপুর সাথে ধাক্কা লেগে যায়। আমাকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে।জিগ্গেস করলো, তুই, তুই এখানে কি করছিস?

– কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।

তানিশা – কি হলো কথা বলছিস না কেন? ভাবি ও তোমার কেবিনে এসেছিলো কেনো?

তানভীর – ভাবি মানে?

তানিশা – ওনি তামিম ভাইয়ের বউ। আমাদের ভাবি। কিন্তু তুই এখানে কি করছিস?

তানভীর – সরি।আমি জানতাম না।ওনি তামিম ভাইয়ের বউ।জানলে কখনো এখানে আসতাম না।মামুন ভাই ওনাদের বিলটা দিয়ে চলে আসেন।

– বলেই হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ওখানে ফেলে দিয়ে। তাড়াতাড়ি হাসপাতাল থেকে বাহির চলে আসলাম।

শুভ – এটা কী করলি তুই?

মামুন – তাড়াতাড়ি চলো আমার সাথে।

– তারপর মামুন ভাইয়ের সাথে একটা ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। ওখান থেকে হাতে ব্যান্ডেজ করে। কিছু ঔষধ নিয়ে বাসায় চলে গেলাম। মেয়েটাকে নুসরাতের ঘুমাতে বলে।আমি অন্য একটা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।পরের দিন সকালে………।

চলবে।