তোকেই ভালোবাসি পর্ব-২৬

0
2640

#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক – তানভীর হৃদয় নীল
#পর্ব – ২৬

– হিয়া চেয়ারের মধ্যে বসে বসে হাসছে। হিয়ার হাসি আর কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে এটা হিয়ার কাজ। হঠাৎ ছোট্ট মামা রেগে বললো, তোদের কাউকে ছাড়বো না আমি। সব কটাকে এখানেই শেষ করে দেবো। বলেই রিভাল বার হাতে নিলেন।

– স্যার ওই এতোক্ষণ আমাদের আড়ালে থেকে সবকিছু ভিডিও করছিলো।(একজনকে ধরে এনে)

– ছোট্ট মামা কিন্তু না বলে।ওই লোকটাকে লাঠি দিয়ে ফ্লোরে দিলো। ফ্লোরে ফেলে দিয়ে লোকটার বুকের উপর পর পর কয়েকটা গুলি করলো।সাথে সাথে লোকটা মারা যায়।

ছোট্ট মামা – এবার তোর পালা। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে এনে।(হিয়াকে উদ্দেশ্য করে)

হিয়া – আমকে মেরে কোনো লাভ নেই আসাদ চৌধুরী। পুরো দেশ আজকে জেনে গেছে তোর অপকর্মের কথা। তোর মুখোশ আজকে খুলে দেয়েছি।(হাসতে হাসতে)

ছোট্ট মামা – তোর সাহস কি হলো আমাকে তুই করে বলার?(ধমক দিয়ে)

রাকিব – তোর মতো মানুষকে এর সাথে এর চেয়ে ভালো ব্যবহার করা যায় না। আর ভুলেও ওর কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করবি না। তাহলে কিন্তু এর ফল বেশি একটা ভালো হবে না।(রেগে গিয়ে)

ছোট্ট মামা – কী করবি তুই?

রাকিব – জেন্ত মাটির নিচে পুঁতে ফেলবো তোকে।(রেগে গিয়ে)

তানভীর – তোর মতো কুলাঙ্গার বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। নিজের হাতে বড় ভাইকে খুন করেছিস। আজকে আমাকে ধরার জন্য বড় বোনদের তুলে এনে। চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছিস।

– শেষ পর্যন্ত নিজের মেয়েকেও ছাড়লি না। কেমন বাবা তুই? মেয়ের জন্য কি তোর মনে একটুও দয়া নেই? চোখের সামনে মেয়েকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছিস।কী অপরাধ করেছে ওরা?(প্রচন্ডভাবে রেগে গিয়ে)

হিয়া – ওর মনে আবার দয়া? আর যদি থাকতো তাহলে চোখের সামনে। নিজের মেয়েকে এইভাবে কখনো কষ্ট দিতো না।

ছোট্ট মামা – ঠিক বলেছিস। আমার মনে করো জন্য কোন দয়া-মায়া নেই।আমি জানতাম তোদের দুইজনকে এতো সহজে এখানে তুলে আনতে পারবো না। সেই জন্যই তোদের মা বাবাকে সহ সবাইকে তুলে এনেছি।

– ভেবেছিলাম তোদের দুইজনকে এখানে তুলে এনে। তোদের মা বাবাকে মেরে। তারপর তোদের দুজনকে ফাঁসিয়ে দিবো। আর এটাও প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম যে পুলিশের হাতে যে ভিডিও গুলো দিয়েছিস। সবগুলো তোদের সাজানো নাটক ছিলো।কিন্তু এই মেয়ে আমার সমস্ত প্ল্যান নিমিষেই শেষ করে দিয়েছে।

হিয়া – কিছুদিনের মধ্যেই তোর জীবনটাও শেষ হয়ে যাবে।(হাসতে হাসতে)

তানভীর – সেই সুযোগ তুই আর দ্বিতীয় বার আর পাবি না। তার আগেই তোকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে।

ছোট্ট মামা – জানি আমি আমার অপরাধের শাস্তি পাবো। কিন্তু তার আগে তোদেরকে শেষ করে দিবো।

রাকিব – তোর তো অনেক ক্ষমতা। তাহলে আমাদের এতো ভয় পাচ্ছিল কেন? সাহস থাকলে আমাদের হাতের বাঁধন খুলে দে। তারপর দেখ কে কাকে শেষ করে?

ছোট্ট মামা – কি করবি তোরা? একজন তো আমার লোকদের হাত থেকে। সাংবাদিকদের এই মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে হাত কেটে ফেলেছে। তার হাতে এখনও ব্যান্ডেজ করা।আর তুই একা আমার দুজন লোককে তো কিছু করতে পারবি না।(হাসতে হাসতে)

রাকিব – হে ওই রাতে তোর পাঁচজন লোকে ওই শেষ করে দিয়েছিলো। আমাদের দুজনকে মারার জন্য। তোর ছেলে লোকজন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ গিয়েছিলো।সেই রাতে আর ওকে সেখান থেকে জীবিত ফিরতে দেয় নি। তোর ছেলের বেশ কয়েক জন বন্ধুদের কেও মেরে শেষ করে দিয়েছে।

– এমপি আনিস রায়হান তার ছেলে অনিক, কলেজের প্রিন্সিপাল,পুলিশ অফিসার,ওকিল, কলেজের সভাপতির ছেলে আশরাফুল কে আমরাই মেরেছি। যদিও সত্যিটা সবাই জানে না।

– কিন্তু সবাই জেনে গেছে তুই ওদের কে মেরেছিস। অবশ্য ওরা প্রত্যেকেই অপরাধের সাথে জড়িত। এইসব করা হয়েছে তোকে ফাঁদে ফেলার জন্য।

ছোট্ট মামা – এতো বড় সাহস তোদের কি করে হলো?(জোরে ধমক দিয়ে)

তানভীর – গলা নামিয়ে কথা বল। সাহসের কি দেখেছিস তুই? তোকে শেষ করতেও আমার দুমিনিট লাগবে না। তোর ভাগ্য ভালো তোকে এখন পর্যন্ত কিছু করে নি।

রাকিব – আমরা যে নির্দোষ। সেটা একমাত্র তোকে দিয়েই আমরা প্রমাণ করতে পারবো‌। যার কারণে তোকে এতো দিন কিছু করেনি। কিন্তু আজকে আমাদের ফাঁসাতে গিয়ে। তুই নিজেই ফেঁসে গেছিস।

– সত্যিটা আজকে তুই নিজেই বলে দিয়েছিস।পুরো দেশ আজকে জেনে গেছে।বড় মামার খুনী আমরা দুজনে না তুই। এখন দেখ কে ফাঁসিতে ঝুলে?(হাসতে হাসতে)

ছোট্ট মামা – তোদের কে আমি……….

– আর কিছু বলতে পারলো না।তার আগেই ঝড়ের গতিতে গুলি আওয়াজ শুরো হলো। মিনিটের মধ্যে মামার সব লোকজন ফ্লোরে পড়ে গেলে। তাকিয়ে দেখি মামুন ভাই আমাদের লোকজন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

– হঠাৎ করে এমনটা হবে। মামা হয়তো সেটা ভাবতে পারেনি। প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়ে চারিদিকে বেশ কয়েকবার ভালো করে তাকিয়ে দেখলো।

তানভীর – দেখেছিস তো সাহস কাকে বলে?

ছোট্ট মামা – তোকে আমি ছাড়বো না।(প্রচন্ডভাবে রেগে গিয়ে)

– বলেই ছোট্ট মামা রিভাল বার হাতে নিলেন।রিভার বার হাতে নিয়ে আমাকে টার্গেট করে গুলি করলো। এমন সময় নুসরাত দৌড়ে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো।আর গুলিটা এসে নুসরাতের গাঁয়ে লেগে যায়। সাথে সাথে নুসরাত ফ্লোরে পড়ে যায়।

– দ্বিতীয় বার গুলি করার আগেই পুলিশ অফিসার এসে মামার হাতে গুলি করে। যার কারণে মামার হাত থেকে রিভাল বার ফ্লোরে যার। সাথে সাথে চারজন পুলিশ দৌড়ে গিয়ে মামার হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়।

– নুসরাতের দিকে তাকিয়ে দেখি রক্তমাখা শরীরের ফ্লোরে পড়ে আছে। নুসরাতের এই অবস্থা দেখে পুরো নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম।মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না। হঠাৎ করে এমনটা হয়ে যাবে ভাবতে পারে নি।

মামুন – ছোট্ট ভাই তুমি নুসরাতকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাও। বাহিরে আমাদের লোকজন গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি এদিকটা সামলে নিবো।

– কোনো কথা না বলে নুসরাতকে কোলে করে নিয়ে বাহিরে চলে আসলাম। বাহিরে এসে নুসরাতকে গাড়ি করে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।

– হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর। ডক্টর এসে নুসরাতের অবস্থা দেখে।তাড়াতাড়ি নুসরাতকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেলো।

– কিছুক্ষণ পর একজন নার্স এসে বললো, রোগীর অবস্থা বেশি একটা ভালো না। এখুনি অপারেশন করতে হবে। তার জন্য দুই ব্যাগ বি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন।

– যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনি রক্তের ব্যবস্থা করুন।রক্ত না পেলে আমরা অপারেশন করতে পারবো না। এতে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে।

তানভীর – আপনারা অপারেশনের ব্যবস্থা করুন। আমার রক্ত বি পজেটিভ।আমি রক্ত দেবো।

নার্স – ঠিক আছ। চলুন আমর সাথে।

– তারপর নার্সের সাথে একটা রুমে গেলাম।রুমে গিয়ে রক্ত দেওয়া শেষ হলে। কিছুক্ষণ পর বাহিরে চলে আসলাম। বাহিরে এসে দেখি সবাই দাঁড়িয়ে আছে।রিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। হঠাৎ জান্নাত এসে যা বললো শুনেই পুরো অবাক হয়ে গেলাম।

#চলবে