#তোমাতে_আমাতে ২
লেখা আশিকা জামান
পর্ব ০২
ও কাছে আসতেই আমার অসহ্য লাগতে লাগলো। আমি মা আর বাবাকে ডেকে বললাম আমার মাথা ব্যাথা করছে আমি বাসায় যাব। অদ্ভুতভাবে ইমন কোন টু টা শব্দ না করলেও। আমি গাড়িতে উঠতেই ও আমার পাশে এসে বসে পড়লো।
আমি কোন কথা বলছিলাম না। একপপর্যায়ে ইমন আমার মাথাটা ওর বুকের কাছে চেপে ধরে। তারপর বলে উঠে,
” খুব বেশি পেইন হচ্ছে। আসলে কয়েকদিন শরীরের উপর অনেক ধকল গেলোতো তাই হয়তবা এমনটা লাগছে। একটু চোখ বন্ধ করে থাকো। দেখো কেমন স্ট্রেস ফ্রি লাগে!”
আমি চুপটি করে চোখ বন্ধ করে থাকলাম। কই আমারতো স্ট্রেস ফ্রি লাগছে না
এই ইরিটেশন হচ্ছে কেন?
অদ্ভুতভাবে বাসায় এসেও থুম ধরে বিছানায় বসে থাকলাম।
ইমন তখন সু, আর মুজা খুলে টাই খুলতে খুলতে রুমে ঢুকে।
আমার রণচণ্ডী মূর্তি ওকে থামিয়ে দেয়।
” আদি, তুমি এই ভারি শাড়ী, গহনা এগুলো এখনো খুলোনি কেন?”
ঠিক আমার পাশে বসে পড়ে।
” কেন, এগুলো এখন ভালো লাগছেনা।”
আমি ওর দিকে ঘুরে বসি।
ও হয়তো আমার প্রশ্নের ধাচটা বুঝতে পারেনি। আমি আমার কানের দুল তাড়াতাড়ি খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারি।
ইমন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়। গলায় হাত দিতেই ও হাতটা ধরে ফেলে।
চোখে চোখ রেখে বলে উঠে,
” কি হয়েছে তোমার?”
আমি চোখ নামিয়ে নিতেই ও ধমকে উঠে,
” চোখের দিকে তাকাও বলছি।”
আমি তাকাতে পারিনা। নীল চোখ আমাকে বারবার দূর্বল করে দেয়। আমি আজ তাকাবো না।
” কি হলো তাকাও?”
” আমি চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারি না। আর সরো প্লিজ ভালো লাগছেনা।”
” আচ্ছা তাকাতো হবেনা। অন্যদিকে তাকিয়ে হলেও বলো কি হয়েছে তোমার?”
” কিছু হয়নি।
আমার কি কিছু হতে আছে? নেইতো..
যার স্বামী সারাক্ষণ এক্স এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ তার আর কি হওয়ার বাকী আছে?”
ইমন দাত ক্যালিয়ে হাসতে লাগলো।
আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে হাসতে হাসতে বললো,
” আদি সিরিয়াসলি এই কারণে তুমি সাপের ফোস ফোস করে উঠছো। ছিঃ ছিঃ ছিঃ তুমি কি হিংসুটে মাইরি!”
আমি ইমনকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলাম।কেমন বেহায়ার মত এখনো হাসছে।
” আমি বললেই হিংসুটে হয়ে গেলাম তাই না!”
” হুম, নয়তো কি?
আচ্ছা তুমিই বলো আমার মুখে কয়দিন তুমি ইউশার নাম শুনেছো? আজাইরা এই নির্দোষ মানুষটাকে দোষারুপ করে কি লাভ?
দেখো কেউ যদি কারো প্রশংসা করে বিনিময়েতো তাকেও প্রশংসা করা লাগে। নাহলে ওখানের সবাইতো অভদ্র ভাববে।”
” বিনিময়ে মানে কি হ্যা? এখন যদি ও তোমাকে কিস করে তাহলে তুমিও বিনিময়ে কিস করবে তাইতো? ”
ইমন বিছানা থেকে নেমে ঠাই দাঁড়িয়ে পড়ে।
” তোমার মাথা গেছে। আশ্চর্য ও আমাকে চুম্মা দিতে যাবে কেন?
আর আমার কি বউ নাই যে অন্য কাউকে চুম্মা দিতে হবে। আমি কি লুইচ্চা?”
ইমনের বামপাশের কপালের কাছে লাল রগ ফুলে ফেঁপে উঠছে। চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে।
আমি উঠে গিয়ে ওর শার্ট এর কলার ধরে বলে উঠি,
” ইউশার মুখে নিজের প্রশংসা শুনতে খুব ভালো লাগে তাইনা।
সেজেগুজে তাই পার্টিতে যাওয়া হয়েছিলো।”
” তুমি কি বলতে চাইছো? আমি ইউশাকে দেখানোর জন্য সেজেগুজে গেছি!
আশ্চর্য!
আচ্ছা তুমি এত সেজেগুজে রঙ মাখিয়ে কাকে দেখাতে গেছিলা? তাহলে আমিও এখন বলতে পারি তুমি অন্যদের আকর্ষন করার জন্য সেজেগুজে বাহিরে যাও।
আমি বাসায় থাকলেতো ফকিন্নীর মত ড্রেসাপ পরে থাকো। কই আমার জন্যতো সাজোনা?
আর তোমার ভাবী’র ভাই নীরব ও কোন সাহসে হুট করে তোমার হাত ধরলো?”
” হ্যা, আমি উনাকে বলেছি আমার হাত ধরতে। উনাকে দেখানোর জন্য সেজে গেছি। হয়েছে! বল আর কিছু বাকী আছে? নাকি শেষ?”
চোখের কোণায় জল টপটপ করে পড়তে লাগলো। আমি ইমনের থেকে সরে গিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালাম।
ইমনের এই এতগুলো কথা আমার ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে গুড়িয়ে দিয়েছে। খুব কষ্ট হচ্ছে।
অনেক্ষন ব্যালকনিতে বসে ছিলাম। নিচে গাড়ীর আওয়াজ পেতেই বুঝে নেই সবাই এসে গেছে। বাড়ীতে হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। একটুপরেই দরজায় বেশ কয়েকবার নক হলেও আমি খুলি নি। ইমন ততক্ষণে ফ্রেস হয়ে শুয়ে পড়েছে। কপালে হাত দিয়ে। ওর দিকে তাকাতেই বুকের ভেতরটায় কাপন ধরে যাচ্ছে।
ভারী শাড়ী গয়না খুলে একটা লাইট ধরণের শাড়ী পরে নিলাম।
ফ্রেস হয়ে এসে বিছানার একপাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লাম। আজকে দিনের সব ঘটনাগুলো ফ্ল্যাশব্যাক হতে থাকলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে । চট করে মাথায় ভাবনাটা এসে পড়লো,
আম বোধ হয় এতোক্ষণ সব মিনিংলেস কাণ্ডকারখানা ঘটালাম।হ্যা সত্যিই সমস্তটাই ভ্যালুলেস। আমি না হয় অযথাই রাগারাগি করলাম কিন্তু ইমন ও কি করলো? আমাকে এতোগুলা কথা শুনাতে পারলো?
আবার মনটা বিষিয়ে উঠলো। দুচোখের কোণে অবিরত জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
আমি হয়তোবা বাকী রাতটা নিজের মধ্যেই ডুবে থাকতাম যদি না ইমন উদ্ধত ভঙ্গিতে খাট থেকে না নামতো।
লাইটের আলো চোখে লাগতেই চোখ মুখ কুঁচকে আমি ইমনের দিকে তাকাই।
কপাল ভাজ করে ইমন আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
” আদি, আমি চলে যাচ্ছি। আমার সবচেয়ে কি ভুল হয়েছে জানো, আজকে এখানে আসা।
আর দ্বিতীয় ভুলটা হয়েছে এইভাবে স্মার্ট সেজে আসা। এরপর থেকে কোথাও গেলে আমি লুঙ্গী আর পাঞ্জাবী পড়বো লাইক গ্রামের মাতবর টাইপ। আর হ্যা সাথে একটা ইয়া বড় ব্ল্যাক ছাতে নিব কেমন! ওহ হ্যা, শোন আমি না গালে কালি মাখব তাহলে আর মেয়েরা আমার দিকে তাকাবেনা ভালো হবেনা!”
আমি অবাক হয়ে ওর কথা শুনতে লাগলাম।
একটুপরে ও আবার বললো,
” আদি , আমিতো মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট টপিকটাই স্কিপ করে গেছি।
আমার নীল চোখ ওখানেতো সবাই হারাতে চায় আই মিন তোমার ধারণা। এক কাজ করব কালকে গিয়েই প্রথমে চোখে লেন্স লাগাবো একদম ব্রাউন হবে। এই তুমি এবার হ্যাপিতো। ”
” জাস্ট স্টপ ইট! নীল চোখ ব্রাউন চোখ বানাবে! খুন করে ফেলবো।”
” কি সাংঘাতিক! খুন করে ফেলবা! কিন্তু আমি যে বহু আগেই তোমার প্রেমে খুন হয়ে গেছি। অবিরত খুন হয়েই যাচ্ছি। এখনো হচ্ছি!”
রাতদুপুরে আবার ইয়ার্কি হচ্ছে। উফ অসহ্য একটা!
” এই আদি আমি কিন্তু সত্যিই গেলাম।”
” রাতদুপুরে নাটক না করে শোয় বলছি!”
ধমকের সুরে কথাটা বলেই আবার বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
” আচ্ছা আদি তোমার কি কপাল! বর কি ভালো ড্রামা করতে পারে! তোমার তো প্রাউড ফিল করার কথা।”
” এই, তুমিকি বিছানায় আসবে? ইয়েস অর নোউ?”
” এসে কি হবে বলো, যেখানে বাচ্চাকাচ্চা ভ্যা ভ্যা করে বিছানা ভেজানোর কথা সেখানে স্বয়ং বউ কাজটা দায়িত্ব নিয়ে করছে। সেখানে কি করে বিছানায় আসি তুমিই বলো?”
” মানে কি, আমি কিভাবে বিছানা ভেজাচ্ছি? এই তুমি বললেটা কি? ক্লিয়ার,করো এক্ষুনি ক্লিয়ার! নইলে তোমার একদিন কি আমার একদিন?”
” কুল বেবি কুল!
আচ্ছা খামোকা অন্য মিনিং বের করছো কেন? আমি বলেছি তুমি কান্না করে বিছানা ভেজাচ্ছো।
সিম্পল!”
” তুমি মোটেও সিম্পল কিছু বলোনি। মেজাজ খুব খারাপ!
” ওকেই শোন, আমি না ব্যালকনিতে যেতে চেয়েছিলাম। ওখানেই যাচ্ছি। তোমার মেজাজ ভালো হলে আর লাস্ট চান্স আজকের রাতে কি একটু লক্ষীমন্ত বউ হওয়া যায়না?
আচ্ছা ধরো যদি,হুট করেই ইমনের লক্ষী আদিটা জেগে উঠে, তবে এক্টুখানি ডেকো। আই প্রমিজ ভালোবাসায় খামতি রাখবোনা।”
ধুর, এতোক্ষন চলে যাবে বলে কি ভয়টাই না পাইয়ে দিয়েছিল। হুম, জানিতো মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। যত্তসব!
ইমনের গগনবিদারী হাসির শব্দ আমার কানে মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনাচ্ছে। অবশ্য হাসির কারণটাও যে আমি। এক্ষুণি ব্যালকনির গ্লাস লাগানোর শব্দ হবে। অবশ্য সাথে সাথে বুকের কাঁপুনিটাও দ্বিগুন বেড়ে যাবে। আচ্ছা ইমন কি তা বুঝতে পারবে?
” লক্ষীমন্ত আদির, নীলচোখ ওয়ালা ইমুর বুকে মাথা রাখতে বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে।”
এরকম মেসেজ পাওয়ার পর ইমুটা নিশ্চয় ব্যালকনিতে বেকার দাড়িয়ে থাকবেনা।
চলবে..