তোমার খোলা হাওয়া পর্ব-০২

0
356

#তোমার_খোলা_হাওয়া
#পর্ব_০২
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)

‘কি গো কালকে রাতে কেমন সময় কা’ট’লো? আমার দেবর’টা কতটুকু রোমান্টিক’?

“ঊষা কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঊষা কিই বা বলবে? উজান কি বলেছে এসব বললে তো উজানের মান-সম্মান’ই নষ্ট হবে। বাড়িতে ঝামেলা হবে”। এসব ভাবছিলো এর মাঝেই ঊষা’র জা বলে উঠলো….

‘আরে আমাদের কাছে লজ্জা পাওয়ার কি আছে শুনি? বলো না’।

‘আ…আসলে ভাবি’..

“পুরো কথা শেষ করার আগেই ঊষা’র বড় চাচী শাশুড়ী এসে সবাইকে তাড়া দিয়ে গেলেন নাস্তা করার জন্য তারপর আবার বাহির থেকে অনেক লোকজন আসবে নতুন বউকে দেখতে তাই কেউ আর কোনো কথা না বলে ঊষা’কে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে গেলো। ঊষা যেনো একটু হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সবাই নতুন বউকে ঘিরে ডাইনিং টেবিলে বসলো কিন্তু ঊষা’র চোখ বারবার একজন’কেই খুঁজছে সেটা হচ্ছে উজান, কিন্তু উজানকে কোথাও দেখতে পারছে না”। হঠাৎ ঊষা’র মা মেইন দরজার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো….

‘ওইতো উজান চলে এসেছে। ছেলেটাকেও বলি, কাল মাত্র বিয়ে করে নতুন বউকে নিয়ে আসলো আর আজকেই নতুন বউকে রেখে সাত-সকালে বাহিরে দৌঁড়াতে চলে গেছে’।

“শাশুড়ী মা’র কথা শুনে ঊষা ঘাড় ঘুড়িয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো উজান জগিং করে এসেছে। বেচারা হয়রান হয়ে গেছে”। উজান রুমের দিকে যাচ্ছিলো তখনই ওর মা উজানকে বললো….

‘উজান ফ্রেশ হয়ে এসে নতুন বউকে নিয়ে নাস্তা কর। মেয়েটা একা একা কি করে খাবে’?

‘কেন মা আমি কি ওকে খাইয়ে দিবো নাকি আশ্চর্য? আমি এখন খাবো না’।

“এটুকু বলেই উজান হনহন করে রুমে চলে গেলো। ঊষা কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলো। ওর চোখ ছলছল করছে। এই বাড়িতে ওর টিকে থাকা যে খুব একটা সুবিধার হবে না সেটা ও ভালো করেই বুঝতেই পারছে”। উষা’র শাশুড়ী মা কিছুক্ষণ চুপ থেকে কাচুমাচু হয়ে বললেন….

‘তুমি কিছু মনে করো না মা। ও একটু এমনই, কোথায় কি বলতে হয় জানে না। তুমি ওকে একটু নিজের মতো গড়ে নিও’।

‘সমস্যা নেই মা’।

“ঊষা’র শাশুড়ী মা আর কথা বাড়ালেন না। ঊষাও বেশি কিছু না বলে একটু খেয়ে নিলো। তারপর সবাই মিলে ঊষা’কে নিয়ে গিয়ে একটু সাজিয়ে দিচ্ছে। প্রতিবেশী’রা সবাই নতুন বউয়ের সাথে আলাপ করতে আসবে। আগামীকাল বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান হবে। একদিন হাতে সময় রেখেছে সবাই। উষা’র এসবে কোনো উৎসাহ নেই। তার মনে মেঘেরা ভিড় করে আছে কখন যেন বৃষ্টি হয়ে দু-চোখ বেয়ে নেমে আসবে। উজানের এমন ব্যবহার সহ্য করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে ঊষা’র। হওয়ার’ই কথা, কেউ যদি বিয়ের রাতেই জানতে পারে তার স্বামীর মনে অন্য কেউ আছে তাহলে সেটা কোনো মেয়ের পক্ষেই সহ্য করা সম্ভব হবে না। এসব ভেবে ঊষা’র চোখের কোণে অশ্রুরা ভিড় করতে শুরু করলো। তখনই সবাই মিলে কথা বলতে বলতে ঊষা’কে নিয়ে বসার ঘরের দিকে যেতে লাগলো। ঊষা সবার আড়ালে চোখ মুছে ঠোঁটে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে নিয়ে সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে লাগলো”।

“বেশ কিছুক্ষণ পর ঊষা রুমে এসে দেখে উজান ল্যাপটপে কি যেনো কাজ করছে। ঊষা কিছু না বলে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের জীবনের সমীকরণ মিলানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই কোনো হিসেব মিলাতে পারছে না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে এসে দেখে উজান এখনো আগের মতোই কাজ করছে। ঊষা বারবার হাত কচলাচ্ছে। সে উজানকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছে কিন্তু উজান ব্যাপারটা কেমনভাবে নিবে সেজন্য চুপ করে আছে। উজান একটু আঁড়চোখে ঊষা’র দিকে তাকিয়ে দেখলো”। ঊষা’র ভাবভঙ্গি দেখে উজান ল্যাপটপে চোখ রেখেই বলে উঠলো…

‘কিছু বলবেন’?

‘হঠাৎ উজানের কন্ঠ পেয়ে উষা হালকা একটু কেঁপে উঠে বললো, আ..আমাকে বলছেন’?

‘এই ঘরে আপনি ছাড়া আর কেউ আছে বলে তো মনে হচ্ছে না’?

……….

‘কি হলো? কিছু বলবেন? কিছু বলার থাকলে বলুন নয়তো কোথাও গিয়ে বসুন। এভাবে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন না আমার কেমন যেন লাগে’।

‘ঊষা তাও কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। এবার উজান ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে ঊষা’র দিকে তাকালো’। উজানের চাহনি দেখে ঊষা একটু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো…

‘আ..মি আ..পনার অতীত সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম। আমাকে বলবেন’?

‘উজান চোয়াল শক্ত করে বললো, আমার ব্যাক্তিগত বিষয়ে আপনাকে নাক গলানোর কোনো অধিকার আমি দেই নি’।

‘উষা কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে’।

‘আমি আশা করবো নেক্সট টাইম আপনি আমার কোনো বিষয়ে ইন্টারফেয়ার করবেন না’।

‘স.. স্যরি’।

‘হুম। আর একটা কথা আপনি এই বাড়িতে যেমন খুশি থাকুন কিন্তু আমার বউ সাজতে আসবেন না’।

“এটুকু বলেই হনহন করে রুম থেকে চলে গেলো। উজান চলে যেতেই ঊষা’র দুচোখ বেয়ে অশ্রুরা ঝড়ে পড়ছে। ওর জীবন’টা কেন এমন হলো? সে তো এমনটা চাই নি। সে তো চেয়েছিলো স্বামী,সংসার নিয়ে ভালোভাবে জীবন কা’টা’বে। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো। সে উজানের মন কিভাবে জয় করবে? পারবে তো জয় করতে? এসব ভাবছিলো এর মাঝেই ঊষা’র শাশুড়ী মা রুমে আসলেন। শাশুড়ী মা’কে দেখেই উষা হকচকিয়ে উল্টো ঘুড়ে চোখ মুছে নিলো”। ঊষা’র শাশুড়ী মা ঊষার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন…..

‘আমার ছেলেটাকে তোমার’ই ঠিক করতে হবে মা। আমার ছেলেটা অনেক কষ্ট পেয়েছে তাই ওর মন এমন শক্ত হয়ে গেছে। তোমাকেই ওর মন নরম করতে হবে। আমার আগের হাসি-খুশি ছেলেটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। পারবে না’?

‘পারবো মা’।

“উষা’র শাশুড়ী মা ঊষা’র মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন। ঊষাও লেপ্টে রইলো। এক মা ছেড়ে এসে আরেক মা পেয়েছে। তাকে যে পারতেই হবে উজানের মনে নিজের জন্য জায়গা তৈরি করতে। সে হাল ছাড়বে না। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবে”।

——–

“আজ উজান আর ঊষার বৌ-ভাত। বাড়ি ভর্তি মেহমান। পার্লারের লোকরা উষা’কে সাজাচ্ছে। ঊষার একটু খুশি খুশি লাগছে কারণ তার বাবা-মা আজকে আসবে। কিন্তু উজান এই অনুষ্ঠানে থাকতে চাচ্ছে না। তার মা অনেকবার বলার পর রাজি হয়েছে। উজানকে তার কাজিনরা রেডি করছে। উজানের প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে কখন যে এসব থেকে একটু রেহাই পাবে শুধু সেটাই ভাবছে। উষা মেরুন আর গোল্ডেন কম্বিনেশনের একটা লেহেঙ্গা পড়েছে সাথে ভারি মেকাপ আর ভারি ভারি অলংকার। উজানও মেরুন আর গোল্ডেন কম্বিনেশনের একটা শেরওয়ানি পড়ছে। অপূর্ব দেখতে লাগছে দু’জনকে। দু’জন রেডি হয়ে গেলে সবাই তাদের নিয়ে স্টেজে পাশাপাশি বসিয়ে দিলো। বেশ মানিয়েছে দু’জনকে। উজান একবারও ঊষার দিকে তাকায় নি। ঊষা আঁড়চোখে কয়েকবার উজানের দিকে তাকিয়েছিলো অবশ্য কিন্তু কিছু বলে নি”। উজান মুখ গম্ভীর করে বসে আছে দেখে ঊষা ফিসফিস করে বললো…

‘একটা কথা বলবো’?

‘বলুন’।

‘আমাদের সম্পর্ক’টা যে আর পাঁচটা স্বামী-স্ত্রী’র মতো না সেটা কাউকে বুঝতে দিবেন না প্লিজ। এতে বাড়ির মান-সম্মান নষ্ট হবে। বাহির থেকে অনেক লোকজন এসেছে আপনি এভাবে গম্ভীর মুখে বসে থাকলে তারা কি ভাববে বলুন’?

“উজান একটু আঁড়চোখে উষা’র দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বসলো। তা দেখে উষা’র ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি উঁকি দিলো। মানুষ’টা হাসলে কত সুন্দর লাগে কিন্তু সারাদিন কি গম্ভীর হয়ে থাকে এসব ভেবে ঊষা একটা হতাশার নিশ্বাস ছাড়লো। সবাই এসে একে একে ঊষা আর উজানের সাথে দেখা করে যাচ্ছে। সবার মুখে শুধু একটাই কথা এতো মেয়েটা তো ভারি মিষ্টি। কিন্তু এসবে উজানের কোনো হেলদোল নেই সে তার কিছু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ব্যস্ত। এর মাঝেই ঊষা’র বাবা-মা আরও আত্মীয়-স্বজন সবাই চলে এসেছে। উষা তাদের দৌঁড়ে গিয়ে বাবা-মা’কে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। ৩ দিন পর বাবা-মা’কে দেখলো কিন্তু মনে হচ্ছে কতদিন পর তাদের দেখলো। সবার সাথে কুশল বিনিময় করে উষা আবার নিজের জায়গায় গিয়ে বসলো”।

#চলবে….

(রি-চেইক করি নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ। গল্পটা নিয়ে কার কি অনুভুতি শুনি🫣)