তোমার খোলা হাওয়া পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব

0
401

#তোমার_খোলা_হাওয়া
#অন্তিম_পর্ব
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)

“উষা কোনো কথা না বলে নিজের হাত ছাড়িয়ে রুমে চলে গেলো। উজান অসহায় চোখে উষা’র যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর উজানও ঊষা’র রুমের দিকে যেতে লাগলো। রুমে গিয়ে দেখলো ঊষা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ ঊষা নিজের পায়ে কিছু একটার স্পর্শ পেয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে উজান নিচে বসে ওর পা ধরতে নিচ্ছে”। এই দৃশ্য দেখে ঊষা ছিটকে দূরে সরে গিয়ে বললো…

‘একি? এসব আপনি কি করছেন? উঠুন উঠুন’।

‘ঊষা’?

‘আগে উঠুন তারপর কথা বলছি’।

‘এতোটাই পর করে দিয়েছো ঊষা? এখন আর তুমিও বলা যায় না’?

‘আমি তো কাউকে পর করি নি। আপনিই আমাকে পর করে দিয়েছেন’।

‘ঊষা’?

“ঊষা কিছু না বলে উজান’কে হাত ধরে উঠালো। উজান অশ্রুসিক্ত চোখে ঊষা’র দিকে তাকিয়ে আছে”। ঊষা কিছুক্ষণ উজানের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বললো….

‘কি বলবেন বলুন’?

‘আমাকে ক্ষমা করা যায় না ঊষা’?

‘আপনি তো কোনো ভুল করেন নি যে ক্ষমা করার প্রশ্ন আসছে’?

‘আমি ভুল করি নি, অন্যায় করেছি। আমি তোমার সাথে বড্ড অন্যায় করে ফেলেছি। আমি আমার জীবনের মূল্যবান সম্পদ’কে চিনতে পারি নি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে। আমাকে ফিরিয়ে দিবে ঊষা’?

………….

‘জানো লিজা যখন আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলো তখন কষ্ট হয়েছিলো কিন্তু কিছুদিন পর নিজেকে সামলে নিতে পেরেছিলাম কিন্তু তুমি চলে যাওয়ার পর আমি পাগলের মতো হয়ে গিয়েছি। আমি নিজেকে সামলাতে পারি নি। এই তিন মাসে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি তুমি আমার জীবনের কি! আমার জীবনের সব শূন্যতা’কে তুমিই পূর্ণতা দিয়েছো। আমার জীবনের সব শূন্যতা কাটিয়ে তুমিই আমার পূর্ণতা’।

“ঊষা ছলছল চোখে উজানের দিকে তাকিয়ে বললো, আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো? আবার যদি আমার উপর থেকে আপনার মন উঠে যায়’?

‘উজান কিছু না বলে হঠাৎ ঊষা’র হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। ঊষা মোটেও এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। ঊষা যেনো বরফের মতো জমে গেলো”। উজান কিছুক্ষণ শক্ত করে ঊষা’কে জড়িয়ে ধরে বললো….

‘আমার বুকে কান পেতে দেখো প্রতিটা হৃদস্পন্দন যে শুধুই ঊষা’র নাম নিচ্ছে। এগুলো কিভাবে মিথ্যে হয়ে যায়? আমি আমার অন্যায়ের জন্য মন থেকে অনুতপ্ত। তোমাকে আর কোনো অভিযোগ করার সূযোগ দিবো না। এতো এতো ভালোবাসা দিবো তুমি সব কষ্ট ভুলে যাবে। বিশ্বাস করো এবার ফিরিয়ে দিলে আমি সত্যি ম’রে যাবো তোমাকে ছাড়া। আমার ভালো থাকার একমাত্র কারণ তুমি। সেই তুমিই যদি আমার সাথে না থাকো আমি কি ভালো থাকতে পারবো? শেষ একটা সূযোগ চাইছি ঊষা। দিবে না’?

…….

‘ঊষা কিছু বলছো না যে’?

“ঊষা কিছু না বলে উজান’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। এটা যে কষ্টের কান্না নয়, সুখের কান্না। ঊষা জানতো উজানের সাথে দুরত্ব’ই পারে উজান’কে ওর মূল্য বুঝাতে। আল্লাহ তায়ালার উপর বিশ্বাস রেখেই ঊষা দূরে চলে এসেছিলো। ওর বিশ্বাস আল্লাহ তায়ালা রেখেছেন। ওর উজান’কে ওর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। ও যে উজান’কে বড্ড ভালোবাসে। কিভাবে ফিরিয়ে দিবে উজান’কে? ওর সাহস নেই উজান’কে ফিরিয়ে দেওয়ার। ঊষা’র দু-চোখের পানিতে উজানের টিশার্ট ভিজে যাচ্ছে। উজানেরও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। এতোদিন পর দু’জন দু’জনের ভালোবাসা ফিরে পেলো। দু’জনের চোখের পানি বলে দিচ্ছে দু’জন দু’জনকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে। হয়তো তাদের দুরত্বের মধ্যেই ভালোবাসা রয়েছিলো আজ তা পূর্ণতা পেলো”।

“উজান নিজের বুক থেকে ঊষা’র মাথা তুলে কপালে গভীরভাবে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিলো। উষা আবেশে চোখ বন্ধ করে রইলো। উজান ঊষা’র দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। ঊষা কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখে উজান ওর দিকে নেশাভরা চোখে তাকিয়ে আছে। উজানের চোখ যেনো বলে দিচ্ছে ঊষা কতটা কাছে পেতে চায়। ঊষা সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। এই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস ওর নেই। এই চোখে তাকালে মনে হয় ও যেনো কোনো গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে”। উজান ঊষা’র হাত দুটো ধরে বললো….

‘আমাকে ক্ষমা করে দাও ঊষা৷ এই ধরনের অন্যায় আমি আর কখনো করবো না। তোমার কোনো কষ্ট হতে দিবো’।

‘ঠিক আছে, ঠিক আছে কিন্তু এটাই শেষ। এরপর আর কখনো এমন করলে আমি সত্যি অনেক দূরে’…

‘চুপ একদম এসব কথা বলবে না। আচ্ছা এখন বলো ডিভোর্স পেপার কেন পাঠিয়েছো? আবার তুমি সাইনও করে দিছো? এতো সাহস তোমার’?

‘ঊষা কিছু না বলে ফিক করে হেসে দিলো’।

‘উজান ভ্রু কুঁচকে বললো,কি হয়েছে? হাসছো কেন’?

‘ওটা আসল ডিভোর্স পেপার ছিলো না। তোমার রিয়েকশন কি হয় জানার জন্য নকল পেপার পাঠিয়েছিলাম’।

‘তবে রে’…

“ঊষা পুরো রুম ভরে দৌঁড়াচ্ছে আর খিলখিল করে হাসছে। উজানও ঊষা’র পিছনে পিছনে দৌঁড়াচ্ছে। হঠাৎ উজান ঊষা’কে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। দৌঁড়ানোর ফেলে দু’জনেই হাঁপিয়ে উঠেছে। উজান এক দৃষ্টিতে ঊষা’র দিকে তাকিয়ে আছে। ঊষা’র যখন খেয়াল হয় তখন বুঝতে পারে এখন কি হতে চলেছে। উজান ক্রমশ ওদের মাঝের দুরত্ব কমিয়ে ফেলছে। দু’জনেই ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। মুহুর্তেই দু’জনের দুরত্ব ঘুচিয়ে উজানের ওষ্ঠ ঊষা’র ওষ্ঠের সাথে হালকা স্পর্শ করতেই ঊষা কেঁপে উঠে উজানের শার্ট খা’ম’চে ধরে। দু’জন দু’জনকে নিয়ে মেতে উঠে। গভীরভাবে দু’জন দু’জনের হয়ে যেতে চাচ্ছে। মুহুর্তেই দু’জনের শ্বাসপ্রশ্বাস আর সুখময় অনুভূতি প্রকাশে মুখরিত হয়ে উঠলে পুরো রুম”।

(তারপর আমি আর কিছু জানি না🥱)

————–
‘বাবাই বাবাই দেকো আম্মু আমালে বকেচে’।

‘কিহ! আমার বাবাই’টাকে আম্মু বকেছে। চলো আমরা আম্মুকে বকে দেই’।

‘কে কাকে বকবে শুনি’?

‘এই তোমার এতো সাহস আমার বাবাইকে বকো’?

‘আহ্লাদ দিও না মেয়েকে। মাথায় তুলে ফেলছো তো। তোমার মেয়ে কোনো কথা শুনে আমার? দুধ খেতে বলেছি সে না খেয়ে ফেলে দিয়েছি। এখন কেমন লাগে’?

‘ছিঃ বাবাই তুমি এই কাজ করেছো কেন? খাবার নষ্ট করা কি ভালো কাজ বলো? আর করবে না এমন’?

‘আত্তা বাবাই। উম্মাহ্’।

‘উম্মাহ্ আমার সোনা মা টা’।

‘হ্যা শুধু বাবাই’কেই আদর করা হচ্ছে। মা’কে তো কারো মনে নেই’।

“এভাবেই ওদের খুনসুটি চলতে লাগলো। সময় প্রবাহমান। সময় কিভাবে চলে যায় কেউ বুঝতে পারে না। সময়কে ধরে রাখার ক্ষমতা কারো নেই। ঊষা আর উজানের জীবন থেকে পার হয়ে গেছে ২ বছর। আধো আধো বুলিতে যে এতোক্ষণ কথা বলছিলো সে হচ্ছে উজান আর ঊষা’র মেয়ে ঊষসী। উজান আর ঊষা তাদের অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে গিয়েছে। এখন তারা অনেক ভালো আছে। দুঃখের সময় কাটিয়েই আসে সুখের সময়। দুঃখ আর সুখ একই পয়সার এপিঠ-ওপিঠ। আল্লাহ তায়ালা সবার জীবনেই সুখ লিখে রাখে। হয়তো কারো’টা আগে আসে আর কারো’টা পরে আসে। তেমনই উষা আর উজানের জীবনে এখন সুখের সময়। উজান এখন ঊষা’কে অনেক ভালোবাসে। ঊষা’কে ছাড়া কিছুই বুঝে না। সবাই সবার জীবনে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। আপনারাও ওদের দাম্পত্য জীবনের জন্য দোয়া করবেন যেনো ওরা সবসময় এভাবেই ভালো থাকে”।

~~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~~

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)