#তোমার_জন্য_ফিরে_আসা
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৩
আলিব পুকুর থেকে উঠে দাঁড়াতে ধপাস করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ইভা সাথে সাথে ওর হাত ধরে দেখলো প্রচন্ড ঠান্ডা এবং শরীর কাঁপুনি দিচ্ছে। ইভা পুকুর থেকে সাতটা পদ্মফুল এনে কুঁচিকুঁচি করে আলিবের শরীরে ছিটিয়ে দিলো। আলিবের হাতে আংটি এবং ইভার হাতের আংটি আলিবের হাতের মুঠোয় নিয়ে এক করলো। ধীরে ধীরে আলিবের শরীর কাঁপুনি দেওয়া কমে যাচ্ছে।
একটা কালো ছাঁয়া এসে বলে,
-তুই মুক্তি পেলি এবার উঠে দাঁড়া, চলে যা তোর আসল জীবনে।
আলিব স্বাভাবিক হয়ে উওর দিলো,
-সত্যি কি আমি আমার লক্ষ্যে পৌছাতে পেরেছি?
-হ্যাঁ পেরেছিস শুধু এই মেয়েটার জন্য নয়তো কখনো তোর অভিশপ্ত মুক্ত হতো না।
-একশো দিন পূর্ণ হতে আরো সময় ছিলো তাহলে এতো তাড়াতাড়ি আমাকে মুক্ত করলেন কেনো?
-কারন ও তোকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে তোর মায়ায় জড়িয়েছে,কেউ কোনো জ্বীন-ভূতেদের ভালোবাসতে পারে না কিন্তু তুই লড়াই করে ভালো কাজ করে ওর মন জয় করেছিস। মানুষ হয়ে বাঁচতে তোর কোনো বাঁধা নেই। তোর অভিশাপ মুক্ত করতে তুই জাদুমন্ত্রীর লেখা তথ্য যোগাড় করে সব কৌশল জেনেছিস আর নিজের অজান্তে পুকুরে মধ্যে যে নীল পদ্ম আছে ওটা হাতে এনেছিস নয়তো তোর মুক্তি হতো না।
কালো ছাঁয়ার কথা শুনে আলিব ইভাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“তোমার জন্য ফিরে আসা আমার স্বার্থক হলো ”
“আমি আপনাকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পেরেছি এতেই আমি অনেক খুশি ”
কালো ছাঁয়া বললো,
-এই মেয়ে তোর কি চাই বল? আমি তোর ইচ্ছে পূরণ করবো।
-আমার শুধু আলিবকে চাই ওকে নিয়ে যেনো বাকি জীবন পার করতে পারি (ইভা)
-তাই হোক কিন্তু আজ পূর্নিমার রাত শেষ হলে তুই তোর সমস্ত শক্তি, জাদু হারিয়ে ফেলবি।
-আমার কোনো জাদু শক্তি লাগবে না আমি ভালো ভাবে থাকতে চাই (আলিব)
-তোদের কথায় মেনে নিলাম আর আমার পক্ষ থেকে তোদের দুজনের হাতের আংটি টা দিয়ে দিলাম।
বলে কালো ছাঁয়া উধাও হয়ে গেলো সাথে ইভা আর আলিব হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে ইভার রুমে চলে গেলো। আলিব চলে যাবে, বিদায় জানাতে ইভা কাঁদছে। আলিব ইভার হাতটা ধরে বললো,
“আমার জন্য ফিরে আসা হলে তেমার জন্য আমার বেঁচে থাকা হবে, আমার মহারানী বিদায় বেলায় কষ্ট পেলে আমারও কষ্ট হয় সেটা বুঝো না? ”
“কেনো আপনি শুধু শুধু আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এসেছেন, আগেই তো আমি ভালো ছিলাম ”
আলিব ইভার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
“এতোদিন মহারানীর ঘুরতে যেতে চেয়েছে আজ আমি মহারানীর সাথে আমি ঘুরতে যেতে চাই, যাবে?”
“হুম যাবো ”
“চলো ”
নদীর ধারে নৌকা,পাশে একটা ঝোপের মাঝে জোনাকির মেলা। প্রকৃতি চাঁদের আলোয় সেজেছে এবং আলিব ইভাকে কাঁচের লাল-নীল চুড়ি পড়িয়ে দিলো। চুড়ির ঝনঝন শব্দে আরো ভালো লাগছে। আলিব নৌকার বৈঠা বেয়ে চলছে, ইভা মাঝে মাঝে পানির ছিটিয়ে দিচ্ছে আলিবের গায়ে। আলিব বৈঠা রেখে দিলো, আপন মনে নৌকা চলছে।
“মহারানীর চঞ্চলতা, হাসি,রাগ হলে গাল লাল হওয়া, লম্বা চুল খুব মনে পড়বে ”
“মনে পড়লেই আমার কাছে চলে আসবেন ”
“হুম আসবো ”
“আচ্ছা এবার বাসায় ফিরে যাই আপনার সময় শেষ হয়ে যাবে ”
“হ্যাঁ তোমার সাথে থাকলে কখন যে সময় ফুরিয়ে যায় বুঝতে পারি না ”
“আমিও ”
চারটা বেজে গেছে তাই ইভাকে পৌঁছে দিয়ে আলিব চলে গেলো। অন্য দিনের তুলনায় আজ ইভা বিছানায় শুতে কেমন যেনো ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।
সকাল নয়টা বাঝে এখনো ইভা ঘুম থেকে উঠে নি। ইভার মা ডাকতে আসে।
-সারারাত জেগে ফোন টিপে সকাল হলে ঘুমায়, লেখাপড়া দিন দিন গোল্লায় যাচ্ছে। এখন ঘুম থেকে না উঠলে ক্লাস শেষ হয়ে যাবে উঠ তো।
-মা আলিবের সাথে একটু থাকতে দেও
ইভার মা ইভাকে ধরে শোয়া থেকে উঠিয়ে বসায়। ইভা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ওর মা সামনে বসে আছে তাহলে আলিবের সাথে কাটানো সময় সেটা কি স্বপ্ন ছিল বাস্তবে না? কিন্তু হাতে তো একটা আংটি আছে।
-এবার ফ্রেস হয়ে কলেজে যা
ইভা মা রুম থেকে চলে গেলো। ইভা মনে পড়লো আলিবের কথা কিন্তু কেমন যানো স্বপ্ন লাগলো আবার হাতের আংটিটা সব হিসেব মেলাতে ইভা গুলিয়ে ফেলছে। তখন ইভার ফ্রেন্ড ইরা কল করে বললো কলেজে যেতে আজকেই এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। ইভা ফ্রেস হয়ে না খেয়ে কলেজ যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরলো। আনমনে হাঁটতে হাঁটতে কলেজের ক্যাম্পাসে ঢুকবে তখন চোখ গেলো একটা ছেলের দিকে ব্লু কালারের শার্ট পড়া, ছোট ছোট চাপ দাঁড়ি, গায়ের বর্ণ ফর্সা এটা তো আলিব ।
ইভার ফ্রেন্ড ইরা আর লিমা এসে বললো,
-তাড়াতাড়ি চল ক্লাস শুরু হয়ে যাবে
-তোরা যা আমি একটু পরে আসছি
-আরে না এখনই চল বলে ইভার হাত ধরলো লিমা। ইভা ওর হাত ছেড়ে দিয়ে,,,,,,
চলবে,,,,