তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব-১২

0
496

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_১২)

তুহার এলোমেলো লাগছে। একটার পর একটা ঝড় চলেই আসছে। কিভাবে সবকিছুর সামাল দেবে তুহা। নিজেকে সামলে রাখাটা যে বড্ড কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে ওর পক্ষে। আদোও কি পারবে সবকিছু মেনে নিতে।সবার ইচ্ছার মান রাখতে,, কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তুহার। সবটা কে ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দিলো।

২ দিন পর…

তুহা বাড়িতেই আছে, পরীক্ষায় রেজাল্ট না আসা পর্যন্ত বাড়িতেই থাকতে হবে। তুহা ভেবেছিলো আনন্দ করে কাটাবে কিন্তু ভাগ্য যে ওকে আনন্দে থাকতে দেবে না বলে ঠিক করেছে। তুহা বসে ফোন টিপছে তখন ওর মা আসলো ওর কাছে।

-তুহা মা।
-বলো মা।
-এই শাড়িটা পরে রেডি হয়ে থাক।

তুহার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলেও মিহা অবাক হয়ে বললো..
-কেন মা।
-আজকে তোর দিভাইকে দেখতে লোক আসবে।
-কি?
-হুম তুহাকে ভালো করে সাজিয়ে দিস।

তুহার মা ঘর থেকে চলে‌ গেলেন। তুহা অনুভূতিহীন। মিহা তুহাকে খোঁচা দিয়ে বললো…
-কি হলো বিষয়টা আজকে তোকে দেখতে আসবে এটা তুই জানতিস।

তুহা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো…
– শুধু দেখতে আসতে নয় আজকেই কাবিন হবে।

মিহা তো আকাশ থেকে পড়ছে।
-কি বলছিস এসব তুই দিভাই।
-হুম সব সত্যি কথা
-তুই কিছু বলবি না তুই রাজি হয়ে গেলি।
-আমার আর রাজি হওয়া। যেখানে আমাকে জানানোই হয়নি আজকে আমার কাবিন সেখানে রাজি হবার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে।
-কি বলছিস এসব।
-সব সত্যি বোন। আমার জীবনটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলো।
– দিভাই কার সাথে তোর বিয়ে তুই জানিস।
– হুম।
– কে?
– মেহতাব দা।

মিহা চমকালো। মেহতাবের সাথে তুহার বিয়ে সবটাই ওর মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর মেহতাবের বাড়ির লোক চলে আসলো। তুহাকেও আনা হয়েছে কিন্তু তুহার মাঝে কোনো অনুভূতি নেয়। তুহার বাবা মেহতাবের বাবাকে বললো…
– তাহলে ভাই শুভ কাজটা সেরেই ফেলি।

তখনি একটা কন্ঠস্বর শুনতে পাওয়া গেলো…
– কি শুভ কাজ সেরে ফেলতে চাইছেন শশুড় মশাই। শুভ কাজ তো আগেই সেরে ফেলা আছে।

কথাটা শুনে সকলেই দরজার দিকে তাকালো। তুহা সহ সকলেই চমকে উঠলো ফারাবিকে দেখে। তুহার বাবার রাগে মুখটা লাল বর্ন ধারন করলো,রাগে গজগজ করতে করতে বললো..
-তুমি কোন সাহসে এখানে এসেছে। এখুনি বেরিয়ে যাও এই বাড়ি থেকে।

ফারাবি তুহার বাবার কথাতে হালকা করে মুচকি হেসে বলল…
– আমি আপনার বাড়িতে থাকতে আসিনি। আর আমার থাকার ইচ্ছাও নেয় আমার বাবার ও আমার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে নিজের বাড়িতে থাকার।
– তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।
– অপমান আরে আপনি তো আমার গুরুজন আর কেউ গুরুজন কে কি অপমান করতে‌ পারে‌ বলুন তো।
– ফাজলামি করছো আমার সাথে। (রেগে)
– আমি ফাজলামি করছি না আপনি করছেন।‌আমার আর তুহার জীবনটা নিয়ে কেন খেলছেন আপনি। কেন আমাকে আর তুহাকে আলাদা করার জন্য এতটা উঠে পড়ে‌ লেগেছেন বলুন।

উপস্থিত সকলেই অবাক। বিশেষ করে‌ তুহা। তুহা তো‌ কিছুই বুঝতে পারছে না। তুহার বাবা শান্ত কন্ঠে‌ তুহাকে বললো…
– তুহা নিজের ঘরে যাও।
– তুহা কোথাও‌ যাবে না। তুহার ওহ সব সত্যি জানা প্রয়োজন।
– আমি বলছি তো তুহা ঘরে যাও( জোরে ধমক দিয়ে)

তুহা ওর বাবার ধমক শুনে কেঁপে উঠলো। ওখান থেকে চলে যেতে যাবে তার আগেই ফারাবি ওকে‌ টেনে নিয়ে ওর পাশে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কোমড়ে হাত রেখে জড়িয়ে রাখলো। তুহা তো শকের পর শক খাচ্ছে। আর তুহার বাবা রাগে ফোঁস ফোঁস করছেন।

– ফারাবি তুহাকে ছেড়ে দাও। তোমার কোনো‌ অধিকার নেয় ওকে এইভাবে ধরে‌ রাখার।

ফারাবি এইবার দ্বিগুন পরিমানে ক্ষেপে গেলো। তুহাকে নিজের সাথে আরো একটা শক্ত করে চেপে ধরে চিৎকার করে‌ বললো…

– অধিকার দেখাচ্ছেন আমাকে। আমাকে অধিকার দেখাচ্ছেন। এখানে উপস্থিত মানুষের মধ্যে সবথেকে ভালো করে‌ আপনি জানেন তুহার প্রতি আমার অধিকারটা ঠিক কি।
– তোমার কোনো অধিকার নেয় আমার মেয়ের প্রতি। সব অধিকার আমার আর আমি যেটা ভালো‌ বুঝবো সেটাই করবো।
– দেখুন আমি চাইলেও অস্বীকার করতে‌ পারবেন না তাই চেঁচিয়ে কোনো লাভ সবথেকে বড়ো সত্যি তো এটাই যে, এখানে তুহার প্রতি কারোর যদি অধিকার থেকে থাকে সেটা একমাত্র আমি। তুহার প্রতি সবথেকে বেশি অধিকার আমার।

তুহার তো রীতিমত মাথা ঘুরছে। বাবা আর ফারাবি রীতিমত যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছে। আর তার মধ্যে এদের দুজনের মধ্যে কার সবথেকে বেশি অধিকার তুহার উপরে‌ সেটা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। তুহার মাথায় কিছূই ঢুকছে না।‌বাবার তো অধিকার থাকবেই কিন্তু ফারাবির অধিকার মানে!

তুহার বাবা আরো উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন। রাগে জেদে চেঁচিয়ে বললেন…
– তহুরা তোমার ভাইয়ের ছেলেকে বলো আমার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে।
– মনিকে কিছুই বলতে হবে না আমি বেড়িয়ে যাবো ঠিকই কিন্তু একা নয় আমার স্ত্রীকে নিয়েই যাবো।
– খবরদার ফারাবি এইরকমই কিছুই করবে না তুমি।
– অনেক সহ্য করেছি। আর নয়। দিনের পর দিন সবকিছু মেনে নিয়েছি তাই বলে আমি এটা কিছুতেই মেনে নেবো না আপনি আমার বিবাহিত স্ত্রী কে অন্য কারোর সাথে বিয়ে‌ দেবেন।

তুহা একবার ওর বাবার দিকে আর একবার ফারাবির দিকে তাকাচ্ছে। ওর অবস্থা দফারফা। কে কার স্ত্রী সবকিছু তো‌ মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ফারাবির কথাটা শুনে মেহতাবের বাবা বললেন…

– মিরাজ ভাই এসব কি বলছে ফারাবি। তুহা বিবাহিত স্ত্রী মানে কিছুই তো‌ বুঝতে পারছি না।
– ভাই ওর কথা বাদ দাও। ওহ ভুল বলছে‌ সবকিছু যাতে এই বিয়েটা না হয়।
– মামা আপনি আর কত মিথ্যে বলবেন। একটা সত্যকে আড়াল করতে গিয়ে আপনি যে মিথ্যার পর মিথ্যা বলে যাচ্ছেন। আচ্ছা সবকিছু থেকে আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন তুহা ফারাবির বিয়ে হয়নি।
– মেহতাব ( চিৎকার করে উঠলেন তুহার বাবা)
– মামা চিৎকার করে কোনো লাভ নেয় সত্যি তো এটাই। কেন ওদের দুজনকে আলাদা করতে‌ চাইছেন।কেন ওদের পবিত্র সম্পর্কটাকে শেষ করতে চাইছেন বলুন।
– বোন তোর ছেলেকে চুপ করে থাকতে বল। তোর তো‌ কোনো কিছুই অজানা নয়।
– দাদা আমি সবটাই জানি কিন্তু তার জন্য তুহা আর ফারাবির দোষটা কোথায়। ওদের তো কোনো দোষ নেয় তাই বলি কি ওদেরকে তুমি মেনে নাও।

– আহ্.. আহ্ আহ্

তুহার বাবা বুকে হাত দিয়ে হেলে পড়লেন। তুহা চিৎকার করে উঠলো বাবা বলে। সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়লো ওনাকে নিয়ে। ফারাবি আর মেহতাব ওনাকে ধরাধরি করে ওনাকে নিয়ে গাড়িতে তুলে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।

তুহা মিহা ওহ ওদের মা কান্নাকাটি করছে। প্রায় সকলেই হসপিটালে চলে এসেছে। সকলেই ওদের আশ্বস্ত করছে। এমন সময়ে ডক্টর এসে জানায় …
– মিরাজ সাহেবের একটা ছোটখাটো হার্ট এ্যাটাক করেছে। ওনাকে কোনোভাবেই চিন্তিত বা উত্তেজিত করা যাবে না নাহলে যেকোন বড়ো কিছু হয়ে যেতে পারে। আর তুহা বলে কাউকে উনি বারবার খুঁজছেন।

তুহা কে সবাই বললো ভেতরে যাবার জন্য। তুহা ধীর পায়ে ওর বাবার কেবিনে গেলো। তুহা তো ওর বাবাকে ওই অবস্থাতে দেখে কেঁদে দিলো।

– মা এইখানে আয়( ধীরকন্ঠে)

তুহা ওর বাবার কাছে বসতেই ওর বাবা ঢুকরে কেঁদে উঠলো। তুহা ব্যস্ত হয়ে পড়লো, ওর বাবা কে কাঁদতে দেখে।
-বাবা কেঁদো না। আমি তো তোমার কাছেই আছি বলো।
-মারে আমার একটা শেষ আবদার রাখবি।
-বাবা এইভাবে বলো কেন, শেষ আবদার তুমি যা বলবে তাই হবে।

তুহার হাতটাকে আগলে তুহার বাবা একটা আবদার করলেন। বাবার আবদার শুনে তুহা চমকে উঠলো….

#চলবে….