তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব-৩২

0
396

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_৩২)

৩বছর পর..

চৌধুরী বাড়িতে আবারো একবার চমকালো আলোর সূচনা। সকলের মুখেই হাসি ফুটে উঠেছে,সকলের মনেই নতুন আলোর সূচনা। চৌধুরী বাড়ির মধ্যমনি তুহা আর ফারাবির বিবাহবার্ষিকী আজকে। ৫ তম বিবাহবার্ষিকী সকলের আবদারে বিষয় আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফারাবি আর কাব্য আয়োজন করতে খুবই ব্যস্ত।। অনেকদিন পর সকলে আবারো একসাথে হবে।

কাব্য আর ফারাবি ওদের পারিবারিক ব্যবসাটাকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেছে। তুহা আর খুশি সংসার সামলানোর পাশাপাশি চাইল্ড কেয়ার হোমটাকেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কাব্যের মা একবছর আগে মা**রা গেছেন। সবাই নতুন করে সবকিছু সাজিয়ে নিয়েছে।

কাব্য আর খুশির একটা বিচ্ছু ছেলে হয়েছে সারাদিন বাড়ি মাথায় করে রাখে। কুহু আর আতিফের ও একটা ছেলে হয়েছে একবছর আগে। সন্তান নিয়ে সকলেই সুখে আছে।

মেধার ফাইনাল পরীক্ষার পরেই হুট করেই একদিন আশিক ওদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়, পাত্রের জায়গায় আশিককে দেখে মেধা আকাশ থেকে পড়লো,, মেধা আর আশিককে আলাদা করে কথা বলতে দেওয়া হলে…

– এই তুমি আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছো কেন?
– বিয়ে করবো তাই।
– বিয়ে করবে মানে কী? আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।
– তুমি চাও আর না চাও বিয়ে তো তোমার সাথেই আমার হবে জান।

আশিক মেধাকে রেখেই সবার কাছে চলে যায়।আশিক যেহেতু মেধাকে পছন্দ করে তাই কেউ আর আপত্তি করেনি সকলের অনুমতি নিয়েই ওদের বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়। মেধা আর আশিক ভালোই আছে ভালোবাসার মানুষটার সাথে।

সকলেই চৌধুরী বাড়িতে চলে এসেছে। মিহা এসে তুহাকে জড়িয়ে ধরলো।

– বোনু কেমন আছিস আমার।
– ভালো দিভাই তুই কেমন আছিস।
– ভালো।

মিহা আর আগের মতো নেয় এখন একজন দায়িত্বশীল নারীতে পরিনত হয়েছে,গায়েতে আগের মতো টপ বা সালোয়ার নেয় পড়নে শাড়ি চুলগুলো পনিটেইল বা খোলা নেয়, বিনুনি করা বা খোঁপা করে থাকে সবসময়। দায়িত্ব নিতে শিখে গেছে, প্রফেসর হিসাবে জয়েন করেছে কিছুদিন আগেই। আগের মতো মুখে আর বাচ্চামো দেখা যায় না তুহা অনেক অবাক হয় মিহাকে দেখে,মেয়েটা কত বড়ো হয়ে গেলো তাই না!

– দিভাই আমাদের পুচকি টা কোথায় তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না।
– দ্যাখ তোর দাদাই এর কাছে আছে। বাবা ভক্ত মেয়ে তো।

কথাটা বলেই দুইবোনে হেসে দিলো।

– মনি আমি এখানে।

বাচ্চার কন্ঠস্বর শুনে তুহা আর মিহা দুজনেই ওই দিকে তাকালো। একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে ফারাবি কোলে রে দাঁড়িয়ে আছে। মিহা দৌড়ে গিয়ে একপ্রকার ছিনিয়ে নিলো বাচ্চাটিকে, চুমু তে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো।

– আরে আসতে আমি ওকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি না কোথাও।(ফারাবি)
– যদি পালিয়ে যাও তো(মিহা)
– পালিয়ে আর যাবো কোথায় যে বাঁধনে তোর দিভাই আর আমার মিষ্টি মামনি বেঁধেছে সেখান থেকে কি বের হতে পারি বল।
– একদম। তা আমার মামনিটা তার মনির থেকে কি চাই।
– চকলেট আর এত আদর…..( হাতদুটো দিয়ে বুঝিয়ে )

বাচ্চাটির এমন কান্ডে সকলেই হেসে দিলো। বাচ্চাটা আর কেউ নয় চৌধুরী বাড়ির নয়নমনি,ফারাবি আর তুহার একমাত্র মেয়ে ফিহা চৌধুরী। সকলের আদরের ফিহা।

সকলেই একে একে ফিহাকে আদর করতে লাগলো। কেউ কেউ আবার গাল টিপছে,এতে ফিহা রেগে বললো…

– মা এই আঙ্কেলটা কি পঁ**চা আমার গালটা খালি টানছে। এই প**চা আঙ্কেল তোমাকে আমি প**চা গন্ধ ডিম খাওয়াবো আমার গালে হাত দিলে।

ফিহার এমন কথা শুনে সকলেই ফিক করে হেসে দিলো, মেধা ফিহাকে একটা কিস করে বললো…
– ফারাবি চৌধুরী মতো রাগ, তুহা চৌধুরীর মতো দুষ্টু। বাবা মেয়ে তো দেখি বাবা মায়ের কার্বনকপি।
– দেখতে হবে না মেয়েটা কার(ফারাবি)
– আমার(তুহা)
– আমার (ফারাবি)
– না আমার(তুহা)

ফারাবি আর তুহা ঝামেলা লেগে যায়, ফিহা সবার মুখের দিকে একবার করে তাকিয়ে ফারাবি আর তুহার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বললো…
– পাপা আর মা তোমরা ঝগড়া করছো কেন? মা পাপা কি তোমার খেলনা নিয়ে নিয়েছে যে তুমি ঝগড়া করছো পাপার সাথে।
– না মামনি তোর পাপা আমার কিছুই নেয়নি বরং দিয়েছে। আর কি দিয়েছে জানিস।
– কী?
– তোকে।

ফিহা কিছুই বুঝলো না ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো তুহার দিকে।

– অনেক কথা হয়েছে এবার চল কেক কা*ট*বি(কাব্য)
– না এখন নয়।(তুহা)
– কেন?(খুশি)
– একজন স্পেশাল গেষ্ট আসা বাকি আছে।
– কে সে?(কুহু)
– সারপ্রাইজ।

কেউই বুঝতে পারছে না। স্পেশাল গেস্টটা কে? সকলেই কৌতুহল হয়ে আছে জানার জন্য,তুহা ফারাবির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তুহার বাবা মা,ফারাবির মা বাবা সকলেই উপস্থিত আছে অনুষ্ঠানে।

– দাদু আমার চকলেট কোথায়। ( তুহার বাবার উদ্দেশ্যে ফিহা)

তুহার বাবা আলতো হেসে ফিহার গালে চুমু দিয়ে ওর হাতে একটা চকলেট দিলো। ফিহাও হেসে দাদুর গালে চুমু খেলো।

ফিহা চকলেটের প্যাকেটটা খুলছে তখনি কোথা থেকে শাওন অর্থাৎ তিশার ছেলে ওর হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে নিলো।

– দাভাই তুমি আমার হাত থেকে আমার চকলেট নিলে কেন?
– তুই এটা একা খাবি নাকি এটা আমিও খাবো।
– না এটা আমাকে আমার দাদু দিয়েছে আমি খাবো।
– তুই আমাকে একটা হামি খা আর আমি চকলেট।

শাওন হাসতে লাগলো,ফিহা রেগে গিয়ে শাওনের গালে কামড়ে দেয়।

– এই ফিহু কি করলি এটা তুই।
– আমার চকলেট দাও।

শাওন কথার পাত্তা না দিয়ে চলে গেলো ফিহা রাগে কাঁদতে লাগলো। ফিহার কান্না শুনে ফিহার ছোট দাদু মানে কাব্যের বাবা বললো…

– দিদিভাই কাঁদছো কেন?
– দাদু দাভাই আমার চকলেট নিয়ে নিয়েছে।
– কাঁদো না আমি তোমাকে চকলেট দেবো।
– সত্যি।
– হুম সত্যি।

ফিহা সকলের সাথে পাকা পাকা কথা বলতে ব্যস্ত। এখনকার বাচ্চা গুলো বাচ্চা তো নয় যেন আশি বছরের বুড়ো বুড়ি🥴.

– ওই তো এসে গেছে আজকের স্পেশাল গেষ্ট
ফারাবি দরজার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো। ফারাবির দৃষ্টি অনুসরণ করে সকলেই ওইদিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। মিহার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে আসলো…
– মেহতাব।

হ্যা দীর্ঘ ৩ বছর পর মেহতাব দেশে ফিরেছে তুহার কথাতে। মেহতাব সকলের সাথে কুশল বিনিময় করলো, একজায়গাতে দৃষ্টি আটকে যায় অতি চেনা যুবতী না অচেনা এক নারীর উপরে। শাড়িতেই নারী কথাতেই আছে আজকে সেটা নিজ চোখে উপলব্ধি করলো মেহতাব। মিহার পরনে নীল শাড়ি,চুলগুলো খোলা আছে ,আগের থেকে চুলগুলো বড়ো হয়েছে,হাতে একটা ঘড়ি,আর চোখে কাজল। অপরূপ লাগছে,মেহতাব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।
মিহাকে শাড়িতে অপরূপ লাগছে কই তুহাকে তো কখনোই এতটা সুন্দর লাগেনি তাহলে মিহাকে কেন এত সুন্দর লাগছে। সত্যি কী মিহাকে সুন্দর লাগছে নাকি ওর চোখেই সুন্দর লাগছে এই রহস্যের উদঘাটন করা সম্ভব হলো না তার আগেই তুহা বললো…

– আমাদের স্পেশাল গেষ্ট মেহতাব দা চলে এসেছে এইবার অনুষ্ঠান শুরু করা যাক।

সবাই কেকের কাছে যাচ্ছিল,তুহা ফারাবি আর ফিহা কেক কা*ট*বে বলে রেডি হচ্ছে। এমন সময়..

– দাঁড়াও…

একটা কন্ঠস্বর শুনে সকলেই আবারো দরজার দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো…

#চলবে….