তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় ২ পর্ব-২৫+২৬

0
655

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৫.
ড্রইং রুমে একপাশে ওম সারা রুহি জাকিয়া বেদ সারিফ বসে আছে তাদের মধ্যে চলছে বিভিন্ন রকমের গল্প তবে তাদের চোখ করছে অন্যরকম কাজ একে অপরের চোখের দিকে তাক করিয়ে রেখেছে চোখে চোখে অন্যরকম কথা। সারা বেদ কিছুটা ছাড়ো ছাড়ো হলেও ওম জাকিয়া আর রুহি সারিফ একদম চোখে চোখ আটকে রেখেছে। কথার মাঝে সারা উঠে যেতেই বেদ একভাবে সারার যাওয়ার দিকে তাকায়, আগের দিনের রাগ টা এখনও তার মধ্যে বিদ্যমান আছে বেদ একবার চোট করে সারিফ রুহি জাকিয়া ওমের দিকে ওখান থেকে উঠে পড়ে তারা এখনও একে অপরের চোখে ডুবে আছে তাই কোথায় কে যাচ্ছে তার খেয়াল নেই।

সারা রুমের দিকে যেতে পিছন থেকে হঠাৎ টান মেরে পাশের দেয়ালে চেপে ধরে কেউ, সবাই এখন নিচেই আছে কেউ এখন উপরে আসবে না তাছাড়া এটা একদম কর্নারের দিকে তাই কেউ খেয়াল করবেনা। সারা তার সামনের দিকে তাকাতে দেখে বেদ কেমন করে তাকিয়ে আছে তার দিকে কিন্তু এমন তাকানোর মানে খুঁজে পায়না আর হঠাৎ করে এমন করে চেপে ধরায় সারা চমকে বেদের দিকে তাকায় বেদ কি কোনো প্রকার রেগে আছে কারন যখন বেদ তার উপর কোনো ভাবে রেগে থাকে তখনই তার সাথে এমনি ব্যবহার করে।

বেদ একদম সারার সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কিছুটা ঝুঁকে দাঁড়িয়ে যায়, তার উষ্ণ তপ্ত নিঃশ্বাস সারার মুখে আছড়ে পড়ছে সারা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

-“সেদিন খুব তো হেসে হেসে কথা বলে যাচ্ছিলিস আজ কেনো চুপ করে আছিস শুনি? বেদ হিসহিসিয়ে বলে ওঠে।

বেদের এমন কন্ঠস্বর শুনেই সারা কিছুটা কেঁপে ওঠে তাহলে সে ঠিক ছিল বেদ তার উপর রেগে আছে শুধু রেগে ভয়ংকর রকমের রেগে আছে সে তো বিশাল বড় ধরণের ভুল করে ফেলেছে বেদের কথা সে কি করে ভুলে গেলো তাকে কোনো ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখলেই যেনো বেদের মাথায় বাজ পড়ে।

-“কিরে মুখে কোনো কথা নেই কেনো? আজকে এত চুপচাপ কিসের জন্যে এখানে সেই ছেলেটা নেই বলে নাকি? আমাদের সাথে কথা বলতে গেলে বুঝি তোর হাসতে ভালো লাগেনা? বেদ রুক্ষ কন্ঠে বলে ওঠে।

-” ক কি যাতা কথা বলছিস বেদ ছাড় আমাকে লাগছে। সারা কিছুটা আমতা আমতা করে বলে ওঠে।

-“বাহ আমি যাতা কথা বলছি অবশ্যই আমি তো যাতা কথা বলি আর বাকিরা খুব ভালো কথা বলে তাইনা? বেদ আরো কিছুটা শক্ত কর ধরে বলে ওঠে।

-“লাগছে আমার বেদ..।

-” আমার লেগেছে শুধু লাগেনি জ্বলেছে তার বেলায় কি আমার জ্বালা পোড়া কমানোর জন্যে তোকে তো এইটুকু সহ্য করতে হবে। বেদ বলে ওঠে।

বেদের এমন কথা শুনে বেলা চোখ তুলে তাকায় সারা বেদ কেমন ভাবে তার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ঘোর লেগে আছে মনে হচ্ছে বেদের চোখে তাহলে কি?না না সারা তার চিন্তা ভাবনা থামিয়ে দেয়।

-“কিরে কথা বলিস না কেনো তুই কথা কি আটকে গেছে? বেদ হাত উঠিয়ে বেলার গালে স্লাইড করতে করতে বলে ওঠে।

বেদের স্পর্শে সারার শরীরে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায় কেমন একটা শিরশিরানি অনুভব হয় আর বেদের নিঃসৃত তপ্ত নিঃশ্বাস তাকে কাঁপিয়ে তুলছে। বেদ এবার সারার মুখের সাথে নিজের মুখ স্পর্শ করে দাঁড়ায় বেদের অধর সারার মুখ স্পর্শ করে যাচ্ছে বেদ তার অধর সারার পুরো মুখ জুড়ে ছুয়ে যায় শেষে কানের একপাশে এসে এক কামড় বসিয়ে দেয়।

-“এরপরে যদি তোকে আর কোনো ছেলের সাথে দেখি কথা বলতে বা আগের দিনের মতো হেসে হেসে কারোর সাথে কথা বলতে দেখি তাহলে আজকের মাত্র যে ডোজটা দিলাম সেটা আরো বেশি হবে তোর হাসিটা শুধু আমার জন্যে বরাদ্দ সেখানে কারোর ভাগ নেই। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নে। বেদ সাবধানী কন্ঠে বলে সারা কে ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

বেদের ছেড়ে সারা নিজের শরীরকে টেনে রুমের মধ্যে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে পড়ে ফ্লোরে টুপ করে । এইমাত্র বলে যাওয়া বেদের কথা গুলো সারার মাথায় ঘুরছে এতদিন শুধু ধমক বকে তার কথা মানাতো বেদ আর সারাও কেনো জানি ভালো বাচ্চার মত সব মেনে নিত বলা ভালো বেদের কথা সে ফেলতে পারতো না। আজকের বেদের এই অধিকার বোধের মধ্যে সারা বন্ধুত্বের থেকেও বেশি দেখতে পেয়েছে তাহলে তার মনের কথায় ঠিক বেদ তাকে বন্ধুত্বের থেকেও বেশি কিছু ভাবে যেটা আরো বেশি গভীর।

—————

সাঁঝ বেলা একসাথে নিচে নামতে দেখতে পায় এক কোণে সারিফ রুহি জাকিয়া ওমের মধ্যে শুভ দৃষ্টি চলছে আর তার থেকে কিছুটা দূরে শান্তা আর সারা মিলে এই দৃশ্য মোবাইলে রেকর্ড করছে বেদ নিশান গিয়ে ওমকে আর বেদ গিয়ে রুহিকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে কিন্তু তাদের দেখে মনে হচ্ছে তাদের কে কেউ কলের পুতুল পরিনত করেছে তাদের টেনে তুলতে আবারো বসে পড়ছে। সাঁঝ বেলা ওদের দেখে নিয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকায়।

বেদ রুহিকে টেনে তুলে নিশান গিয়ে চেয়ার টেনে নেয় তারপরও রুহি বসার মত করে আছে শূন্যে, বেদ নিশান মিলে সব কটার থেকে চেয়ার টেনে সরিয়ে নেয়। এদিকে বেলাও গিয়ে শান্তা আর সারার সাথে যোগ দিয়েছে তারা মুখে হাত চাপা দিয়ে হেসে যাচ্ছে ওদের ওই কার্টুন মার্কা প্রতিক্রিয়া দেখে সাঁঝ একবার ওদের সকলকে দেখে নেয়।

-“এখানে কি সার্কাস হচ্ছে? সাঁঝ তীক্ষ্ণ ঝংকারময় ভাবে বলে ওঠে।

সাঁঝের হঠাৎ এমন তীক্ষ্ণ ঝংকারময় আওয়াজে চারিদিকে গম গম করে ওঠে সাঁঝের ওদের এমন প্রতিক্রিয়া দেখে নিজেরও হাসি পাচ্ছে তবুও হাসি চেপে রেখে যথেষ্ঠ গুরু গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে। সাঁঝের এমন কন্ঠস্বর শুনেই সবকটার ঘোর কেটে যায় আর সাথে সাথে সব কটা কার্টুন অবস্থায় থেকে বাস্তবে ফিরে ধাম ধাম করে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে। আর ওদের এমন অবস্থা দেখে শান্তা সারা বেলা নিশান বেদ জোরে জোরে হেসে ওঠে, সাঁঝ অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে রেখে নিজের হাসি কন্ট্রোল করে নেয়।

সবার হাসির আওয়াজ শুনেই সব কটা নিচেই পড়ে থেকে সবার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে তারা এতক্ষণ কি করেছে আচমকা নিচে পড়ে যেতে সব হালকা পাতলা ব্যথা পেয়েছে হাতে পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সামনে সাঁঝকে গুরু গম্ভীর ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সারিফ আর জাকিয়া মাথা নিচু করে নেয় রুহি জীব কেটে দাঁড়িয়ে থাকে আর ওম নিজের মাথা চুলকায়।

-“কি হচ্ছিলো এখানে? সাঁঝ গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে।

সাঁঝের এমন কন্ঠস্বর শুনে সব কটা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে আর বাকিরা নিজের ঠোঁট চেপে হেসে যাচ্ছে ।

-” কি হলো মুখে কথা নেই কেনো কি হচ্ছিলো এখানে? সাঁঝের আগের থেকে আরো গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে।

-“ভ ভা ভাই… সারিফ বলার চেষ্টা করে কিন্তু মুখ থেকে কথা বের হয়না।

-“কি ভ ভা ভাই লাগিয়ে রেখেছিস তুই কি তোতলা হয়ে গেছিস? সাঁঝ জিজ্ঞেস করে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে সারিফ তাড়াতাড়ি মাথা নাড়া দেয় আর এটা দেখে আরেক দফা সবাই চাপা হেসে ওঠে।

-“তাহলে ঠিক করে কথা বল । সাঁঝ পূর্বের ন্যায় বলে ওঠে।

-“স্যার আসলে মানে আমরা গল্প করছিলাম। ওম আমতা আমতা করে বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ ভাই আসলে আমি রুহিকে দেখছিলাম ওর চোখের দিকে তাকালে আমি ক্যাবলা হয়ে যাই। সারিফ ওমের কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে মুখ ফসকে বলে ফেলে।

-” কি? সাঁঝ জোরে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” না মানে ভাই আমরা গল্প করছিলাম হ্যাঁ গল্প করছিলাম। সারিফ জীব কেটে বলে ওঠে।

-” ওম তুমিও কি জাকিয়াকে দেখে ক্যাবলা হয়ে যাও নাকি? সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ মানে ওই আরকি। ওম বলে ওঠে।

-“গুড এইরকম মাঝে মাঝে ক্যাবলা হয়ে যাওয়া ভালো এত প্রিয়তমার চোখে নিজের জন্যে ভালোবাসা দেখা যায় গভীর ভাবে ডুব দেওয়া যায় প্রিয়তমার মনের মাঝে। সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে এবার সবাই মুখ টিপে হাসে তারা সাঁঝের কথার মানে ঠিক বুঝতে পারে আর এদিকে বেলা ভ্রু কুঁচকে সাঁঝের তাকায় তার লজ্জায় এখান থেকে পালাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মুখে কিছু ফুটে উঠতে দিচ্ছে না, গুরু গম্ভীর অ্যাটিটিউড নিয়ে থাকা সাঁঝও যে এমন সবার বেফাস কথা বলতেও জানে ভেবেই অবাক হয়ে যাচ্ছে বেলা। আর বেলার অবস্থা দেখে সাঁঝ মিট মিট করে হেসে যাচ্ছে।

চলবে….?

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৬.

-” মিস রুহি এখন আপনি কোথায় পালাবেন আমার হৃদয় চুরি করে? সারিফ মৃদু কন্ঠে বলে ওঠে।

রুহি দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে লজ্জায় তার গালে রক্তিম আভা ছাড়িয়ে পড়েছে চোখ শরমে ঝুঁকে আছে আর ঠিক তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সারিফ তার চোখে মুখে খেলা করছে দুষ্টু হাসি সে প্রায় রুহির শরীরের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে একহাত রুহির মাথার কাছের দেওয়ালে রেখে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে মুখটা নিচু করে রুহির দিকে।

-“আপনাকে তো রীতিমতো আমার হৃদয় চুরি করার জন্যে গ্রেপ্তার করা উচিত ভাবা যায় সারিফ রওশনের হৃদয় কিনা এক রমণী চুরি করে নিলো এটা কি মানা যায়। সারিফ ফিচেল কন্ঠে বলে ওঠে।

-” ম মা মানে!রুহি কোনোরকম ভাবে বলে ওঠে।

-“বাহ্! আপনি দেখছি মানে টাও জানেন না হৃদয় চুরি করে নিলেন আর এখন বলছেন মানে? সারিফ দুষ্টু হেসে বলে ওঠে।

সারিফের কথা শুনে রুহি আরো বেশি কুকড়ে যায় কোনো রকমে মাথা তুলে সারিফের চোখে চোখ রাখে ভ্রু কুঁচকে। সারিফ রুহির তাকানো দেখে আরো একটু ঝুঁকে যায়।

-” হৃদয় চুরি মানে বোঝেন? আমার হৃদয় মন এখন কোনোটাই আমার আয়ত্তে নেই সবটাই আপনি চুরি করে নিয়ে আপনার দখলে করে নিয়েছেন। সারিফ ফিসফিসয়ে বলে ওঠে।

সারিফের এমন অবলীলায় বলে ফেলা কথাটা শুনেই চকিতে ঝুঁকে থাকা মাথা তুলে সারিফের চোখে চোখ রাখে দেখে তার দিকেই তাকিয়ে ঘোর লাগা চোখে তার চোখে সে নিজের জন্যে একরাশ ভালোবাসা মুগ্ধতা খুঁজে পায়। দুজনেই একই ভাবে তাকিয়ে আছে।

-“আপনি জানেন আপনার এই চুরির অপরাধের শাস্তি কি! আপনার শাস্তি হলো সারাজীবনের জন্যে আমার হৃদয়কে নিজের কাছে রাখতে হবে সারাজীবনের আমার হৃদয়ের রানী থাকতে হবে। বলুন শাস্তি মনজুর? সারিফ মৃদু হেসে বলে ওঠে।

সারিফের কথা শুনে ঝট করে রুহি মাথা নামিয়ে দেয় আগের তুলনায় মুখটা আরো বেশি রাঙা হয়ে ওঠে কোনো কথা না বলে সারিফকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে রুমে থেকে পালিয়ে যায়, সারিফ দেওয়ালে হেলান দিয়ে বুকে হাত বেঁধে মৃদু হেসে তাকিয়ে থাকে রুহির চলে যাওয়ার দিকে।

————–

বেলা ইয়ারফোন এর সাহায্যে lফোনে কথা বলতে হাতে ফাইল নিয়ে চেক করতে করতে সাঁঝের কেবিনে কোনো রকম নক না করেই ভিতরে পা বাড়ায় আসলেই বেলা কথা বলায় ব্যস্ত ছিল সাথে সাঁঝের কেবিনে আসার জন্যে তাকে আগেই নক না করে দিয়েছে তাই আজ আর নক করার ঝামেলা করতে যায়নি ভিতরে পা বাড়ায় । হঠাৎ কোনো আওয়াজে কথা বলতে বলতে ভিতরে ঢুকে বেলা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে তার কথা আটকে যায় স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে সামনের দিকে।

দিশা মেঝেতে লুটিয়ে পড়েছে ঠোঁটের কোন বেয়ে রক্তের রেখা দেখা দিচ্ছে আসলেই বেলা যখনই রুমের ভিতরে পা তখনই সজরে দিশার গালে কষে থাপ্পড় পড়ে। বেলা চোখ ফিরিয়ে সোজা তাকাতেই দেখে সাঁঝ রাগে চোখ মুখ লাল করে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই মুহূর্তে সাঁঝকে ভীষণ হিংস্র দেখাচ্ছে কোনো ভাবেই নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারছেনা, সাঁঝকে এই অবস্থায় দেখে বেলা বুঝতে পারে সাঁঝ ভীষণ রেগে গেছে নিশ্চয় এমন কিছু ঘটেছে যে সাঁঝের রাগ ব্ল্যাস্ট করে গেছে আর বর্হিপ্রকাশ হিসাবে সেটা পড়েছে দিশার উপরে। বেলা এখনও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে কোনো কথা না বলে,সাঁঝ সামনে তাকাতেই দেখে বেলা তার দিকে তাকিয়ে আছে।

-“আকাশ! আকাশ । সাঁঝ জোরে জোরে চিৎকার ডেকে ওঠে।

-” ইয়েস স্যার। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে রুমে ঢোকে আকাশ।

আকাশ একবার ফ্লোরে পড়ে থাকা দিশার দিকে তাকিয়ে তার পাশে দাঁড়ানো বেলার দিকে তাকিয়ে নিয়ে সোজা তার বসের দিকে তাকায়, তার আর বুঝতে বাকি নেই যে নিশ্চয় এমন কিছু ঘটিয়েছে যে তার স্যার এমন হিংস্র হয়ে উঠেছে।

-” ওকে যেনো আমি আর কখনো এই অফিসে না দেখতে পাই, ওর সাথে কোম্পানির যতো গুলো কন্ট্রাক্টড আছে সব গুলোই এখুনি ক্যান্সেল করে দাও,ওর সাথে আমাদের সমস্ত এগ্রিমেন্ট ক্যান্সেল করো ফাস্ট। সাঁঝ রুক্ষ ভাবে বলে ওঠে।

-” ইয়েস স্যার। বলে আকাশ রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

দিশা এতক্ষণ ফ্লোরে বসে বসে চুপচাপ ফুফিয়ে যাচ্ছিলো গালে হাত রেখে আর সাঁঝের সব কাজ দেখছিল তবে সাঁঝের শেষ কথাটা শুনে একটু জোরে কেঁদে ওঠে।

-” হে ইউ গেট আউট। আউট। এই রুম থেকে এই অফিস ছেড়ে নিজের জিনিষ গুটিয়ে এখুনি বেরিয়ে যাও, আর কখনো এই মুখ এই অফিসে না দেখি। আউট। হুঙ্কার দিয়ে বলে ওঠে সাঁঝ।

দিশা একবার সাঁঝের দিকে তাকিয়ে ভয়ে কেঁপে উঠে কান্না করতে করতে কোনো রকমে উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় এতক্ষণ ভয় না পেলেও এইমাত্র সাঁঝের কন্ঠস্বর শুনেই ভয়ে তার গলা শুকিয়ে আসে। দিশা রুম ছেড়ে যেতেই সাঁঝ একহাত কোমরে রেখে নিজের কপালে স্লাইড করছে তার ভিতরে রাগ এখনও বিন্দুমাত্র কমেনি।

বেলা সাঁঝের দিকে এগিয়ে যায়, এই মুহূর্তে সাঁঝের রাগ কমাতে হবে না হলে কোথায় কি করে বসে ঠিক নেই। হাতে থাকা ফাইল টেবিলের উপরে রেখে সাঁঝের পাশে দাঁড়িয়ে সাঁঝের বাহুতে হাত রাখে, সাঁঝ কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করায় সাঁঝ বেলার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থেকে হুট করে একটানে নিজের বুকের ভিতরে জড়িয়ে মিশিয়ে নেয় বেলাকে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে নিজের সাথে বেলাও হাত উঠিয়ে সাঁঝের পিঠে আর কোমরে শক্ত করে ধরে। কোনো কথা না বলে বেলাকে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখে নিজেকে শান্ত করতে থাকে নিজের ভিতরে হিংস্র রাগটাকে শান্ত করতে থাকে, বেলার স্পর্শে আসতে আসতে করে যেনো রাগটা শান্ত হতে থাকে। বেলাও কোনো কথা বলে সাঁঝের বুকের মধ্যে মিশে থাকে তার মাধ্যমে সাঁঝকে শান্ত করানোর চেষ্টা করে, বেলা ক্রমাগত সাঁঝের পিঠের উপরে বুলিয়ে যায় বেলার কাছে সাঁঝের এই রাগ নতুন নয় তাই বেলার জানা আছে সাঁঝের রাগ ভয়ংকর হুট করে যেমন রাগে না তেমনি একবার রেগে গেলে আর তখন থামিয়ে রাখা খুব মুস্কিল। তবে বেলার মনে এখন চলছে প্রশ্নের ঝড় কি এমন হয়েছিলো যার জন্যে সাঁঝের এমন ভয়ংকর ভাবে রেগে গেলো, বেলা তার ভাবনার মাঝে অনুভব করে সাঁঝ কাঁধে নিজের মুখ ঘষতে থাকে অনবরত বেলা সাঁঝের বুকের মধ্যে মিশে থেকে হালকা কেঁপে ওঠে, আলতো করে সাঁঝ তার অধর ছুয়ে দেয় বেলার ঘাড় গলায় বেলার শ্বাস প্রশ্বাসের গতি দ্রুত বেড়ে যায় সাঁঝ বেলার অস্থিরতা অনুভব করে মাথা উঠিয়ে বেলাকে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে বেলার কপালে নিজের অধর ছুয়ে গভীর স্পর্শ করে। বেলাকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে চেয়ার টেনে নিজে বসে বেলাকে টেনে নিজের কোলের উপরে বসিয়ে নেয় এক হাত দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে সামনে রাখা ল্যাপটপ টা নিজের দিকে টেনে নেয় দ্রুত পুরো ফুটেজ সিস্টেম থেকে কেবিনের ফুটেজ টা অন করে কিছুক্ষণ আগের ঘটে যাওয়া মুহূর্ত প্লে করে দেয়, বেলা সাঁঝের মুখের দিকে তাকালে সাঁঝ বেলার অধরের টুপ আলতো করে চুমু বসিয়ে ল্যাপটপ দেখতে ইশারা করে। বেলা সাঁঝের কথা মতো সামনের দিকে তাকায় সাথে সাথে তার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে যায় চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।

বেলা কেবিনে আসার কিছুক্ষণ আগেই দিশা কেবিনে ঢোকে তবে কোনও কথা ছাড়াই সাঁঝের কাছে গিয়ে পিছন দিকে থেকে সাঁঝকে জড়িয়ে ধরে সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় তবে দিশা কিছুটা সরে গিয়েও আবারো আগ্রাসী হয়ে সাঁঝের ঠোঁটের উপর আক্রমণ করতে যায় আর সাথে সাথে দিশার গালে কষে থাপ্পড় মারে সাঁঝের এমন থাপ্পড় সহ্য করতে না পেরে দিশা ফ্লোরে পড়ে যায় আর বাকিটা তো বেলা নিজের চোখে দেখেছে।

বেলা চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে দেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে একভাবে, সাঁঝের দিকে তাকাতেই বেলার মাথায় আসে তার মনের কথাও কিভাবে বুঝে যায় এই লোকটা একটু আগেই সে ভাব ছিল কি এমন ঘটেছে আর সেটা বেলার কোনো কিছু বলা বা জিজ্ঞেস করার আগেই দেখিয়ে দিলো বেলা একভাবে তাকিয়ে থাকে সাঁঝের দিকে তার মধ্যে থাকা রাগ টা মুহূর্তেই হাওয়া হয়ে গেছে।

চলবে….?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।