#তোর_নামের_রোদ্দুর
পর্বঃ১৬
লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
কিছুক্ষন আগ অবদি পুরো জায়গাটা কোনো কনসার্টের থেকে কম ছিলো না,এক মুহুর্তেই তা শশ্বানের মতো খা খা করছে।কারো মুখে কথা নেই।সাউন্ডবক্সে বাজতে থাকা ক্যারাওকে থেমে এখন দুরের কোনো ডালে বসা কাকের ডাক কানে বাধছে।আজ এক বিয়েরই দ্বিতীয় পর্ব ছিল।কিন্তু আমি তো এটাকেই প্রথম পর্ব ভেবে আনন্দ করার ধান্দায় ছিলাম।কার নজর লাগলো তাতে?খুব বেশি কিছু চেয়েছিলাম কি?খালি তো একটু ব্রাইডাল ডান্সই করতে চেয়েছিলাম।আলিফটা কতো খেটেখুটে পার্ফেক্ট গানটাই ধরেছিলো। “ঘোমটা খুলে নাচবে এখন বউ “।একটু এগোতে গেছি,ঠিক তখনি শুদ্ধ এভাবে সাক্ষাৎ দিলেন।
আমার হাত ধরে স্টেজে দাড়িয়ে উনি।একদম শান্তশিষ্টভাবে সবার দিকে তাকালেন।যীনাত আপু,মাহি,মৌনতা,সীমা ভাবি,তাপসী আপু,ইশান ভাইয়া,সিফাত ভাইয়া ওদের উরাধুরা নাচ ছেড়ে এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।বড়রাও বসা ছেড়ে দাড়িয়ে গেছে সব।আমি নিচদিক তাকিয়ে একপ্রকার কাপছি।পাশেই রাখা স্ট্যান্ডফ্যানের বাতাসটাও গায়ে লাগছে না বলে মনে হচ্ছে।আজ আবারো বড়সড় অপমান কপালে নাচছে।শুদ্ধ আমার হাত ধরেই নিচে নামলেন।এতোটুকো বাধা দেইনি।আড়চোখে সেজোকাকুকে এগোতে দেখলাম,আব্বু থামিয়ে দিলেন।ওয়াহ!আজ তোর নিজের পরিবারও তোকে বাচাতে আসবে না ইনসু।শুদ্ধ আমাকে নিয়েই সোজা আলিফের সামনে গিয়ে দাড়ালেন।ওর হাত থেকে মাউথস্পিকারটা কেড়ে নিয়ে বললেন,
-গানটা ভালোই গাও দেখছি।
আলিফ ভোলাভালা ফেইস বানিয়ে দাত কেলিয়ে বললো,
-জ্বী ভাইয়া।সবই আল্লার দান।
-নাচটাও পারো তাহলে?
আলিফ লাজুলাজুকভাবে বললো,
-কি যে বলেন না!আমি কলেজে হৃত্তিক লাইট।ফ্লিপফ্লপ সবই জানি।ডান্সের প্রাভু দেবা যাকে বলে।রেমো ডি সুজাও আমাকে ইনস্টাতে নক দেয়।মাইকেল জ্যাকসন বেচে থাকলে আমাকে শিষ্য বানানোর জন্য অধীর হয়ে থাকতেন।বাকিটা ইনসুর ধেকে শুনে নেবেন।নিজের গুনটা না হয় নাই গাইলাম!
শুদ্ধ আমাকে দেখিয়ে দাতে দাত চেপে বললেন,
-এটার সাথেও নেচেছো তার মানে।
এতোক্ষন চুপচাপ থাকলেও এবার বিস্ফোরিত চোখে তার দিকে তাকালাম।আলিফ ওর সেই বিখ্যাত দাত বের করা হাসি দিয়েই বললো,
-আজ্ঞে না ভাইয়া।এখনো অবদি না।তবে প্রিপারেশন নিয়েছি আজকের জন্য।আপনার অনুমতি থাকলে আজ ডুয়েট হয়ে যাক?আমি আর ইনসু!হোয়াট সে?
এবার চোখ আলিফের দিকে নিলাম।ও ভ্রু নাচিয়ে বুঝাচ্ছে,” কেমন দিলাম দোস্ত!ভাইয়া এখন জেলাস হবে তোকে নিয়ে।” পাশে যীনাত আপু,মাহি,মৌনতা একসাথে কপাল চাপড়ে উঠলো।একদম ধীরে মাথা নাড়িয়ে বুঝানোর চেষ্টা করলাম ওকে,” ভাই তোর কপাল তুই নিজে লেখালি।” ব্যাটা না বুঝে পান্জাবির কলার ঝাকিয়ে আরো সোজা হয়ে দাড়ালো,যেনো ওকে আমি বাহবা দিলাম।
অসহায়ভাবে শুদ্ধের দিকে তাকালাম আমি।উনিও আমার দিকেই তাকিয়ে।ফোনটা বের করে আমার হাত ছেড়ে দিলেন উনি।শ্বাস ফেললাম এতোক্ষনে।শুদ্ধ এবার আলিফের হাত ধরেছেন।আবারো শ্বাস আটকে গেলো আমার।আলিফকে কিছুটা এগিয়ে এনে ওর কাধে হাত রেখে ওকে নিয়ে এগোতে এগোতে বললেন,
-কথা আছে তোমার সাথে।চলো।
আলিফ কিছুটা হচকিয়ে গেছে।ফিরে ফিরে আমার দিকে তাকাচ্ছে।যীনাত আপু,সেজোকাকু,সিফাত ভাইয়া এগোচ্ছিলো,কিন্তু শুদ্ধ কিছুটা এগিয়েই থেমে গেলেন আলিফকে নিয়ে।তাই দেখে ওরাও থেমে গেলো।এবার সবাই মুচকি মুচকি হাসছেন।একদম কটকটে রোদের মধ্যে আলিফকে দাড় করিয়ে ওর হাতে নিজের ফোনটা গুজে দিলেন শুদ্ধ।বললেন,
-যা বুঝলাম,সিয়ার ফ্রেন্ড তুমি,মাল্টিট্যালেন্টেড তো হবেই।এটাই স্বাভাবিক।সিঙ্গার,ডান্সার অনেক হয়েছো।নাও বি দ্যা ডিজে ওয়ালে বাবু।
-জ্বী মানে ভাইয়া,ঠিক বুঝলাম না।
-বুঝে যাবে।এখানে দাড়াও।
-এখানেই?
-হ্যাঁ এখানেই।
-ইয়ে মানে ভাইয়া,রোদটা একটু বেশিই এখানে।
-হ্যাঁ।তো?
শুদ্ধের ওভাবে হ্যাঁ তো বলায় আলিফ কিছুটা দমে গেলো।আর কিছু বলে নি ও।ছেলেটাকে ওভাবে রোদে দাড় করিয়ে শুদ্ধ সুটের হাতা টেনে আবারো স্টেজের দিকে আসলেন।আলিফ আহম্মকের মতো হতভম্ব হয়ে ওভাবেই দাড়িয়ে।শুদ্ধ ইশারা করতেই একজন গিয়ে আলিফের হাতে থাকা শুদ্ধর মোবাইল সাউন্ড সিস্টেমের সাথে এটাচড্ করে দিলো।উপস্থিত সবার মতো আমিও হা হয়েই দাড়িয়ে।শুদ্ধ এগিয়ে আমার সামনে আসতেই বললাম,
-দ্ দেখুন,আমার ফ্রেন্ড ও।আলিফ তো…
শুদ্ধ ডানহাত ধরলেন আমার।কথা থেমে গেলো।উনি কৌতুহলীভাবে বললেন,
-হুম।আলিফ তো?
-আ্ আলিফ তো খারাপ কিছু বলে নি।ও্ ও তো আসলেই ভালো গায়,ভালো নাচে।ওর কথায় এভাবে…
কিছুটা এগিয়ে দাড়িয়ে উনি বামহাতও ধরলেন আমার।চোখ বড়বড় করে তাকালাম তার দিকে।আশেপাশে তাকানোর কথা মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছে আমার।শুদ্ধ স্বাভাবিকভাবেই বললেন,
-হুম।ওর কথায় ওভাবে?
-আ্ আপনি ওকে ওভাবে রোদে দাড় করালেন কেনো?ওর দ্…
শুদ্ধ এবার আমার বামহাতটা তার কাধের উপর রাখলেন।আমার চোখ সেখানেই নিবদ্ধ।উনি আবারো বললেন,
-ওর দোষ ও তোর সাথে নাচতে চেয়েছিলো।এনিথিং এলস্?
কি বলবো?ছেলেটাকে তাই ওভাবে দাড় করিয়ে রাখবে?নিশ্চয় তাকে নিয়ে বলিনি,তাই জেলাস হচ্ছে।তুতলিয়েই বললাম,
-ত্ তো এখানে আমি একা একা বোর হচ্ছিলাম তাই ওভাবে বলেছে।আপনি তো নিজে নাচ জ্…
শুদ্ধ তার ডানহাতের আঙুলের ভাজে আমার ডানহাতের আঙুলগুলো আটকে দিয়ে বললেন,
-আমি নাচতে জানি না রাইট?
বিস্ময় নিয়ে আমি আশেপাশে তাকালাম।সবাই ঠোট টিপে হাসছে।শুদ্ধর দিকে চোখ ফেরাতেই উনি কোমড়ে বা হাত রাখলেন আমার।কিছুটা লাফিয়ে উঠে সোজা হয়ে দাড়ালাম।এবার কি?শুদ্ধের ঘাড়ের পাশ দিয়ে উকি দিয়ে দেখলাম বেচারা আলিফ মোবাইল হাতে ওই রোদের মধ্যেই দাড়িয়ে অসহায়ভাবে মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে আছে।শুদ্ধ বাকা হেসে ঘাড় নাড়াতেই তোমাকে চাই গানের স্টার্টিং টিউন বাজতে লাগলো।আরেকদফা চমকে উঠে শুদ্ধের দিকে তাকালাম।আমাকে নিয়ে দুলতে দুলতেই উনি গানের সাথেই গুনগুনিয়ে গাইতে লাগলেন,
” তোমার নামের রোদ্দুরে,আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে
জানি না যাবো কোদ্দুরে,এখনও…(ii)
আমার পোড়া কপালে,আর আমার সন্ধ্যে সকালে
তুমি কেনো এলে জানিনা,এখনও…
বিন্দু থেকে সিন্ধু হয়ে যাও
তুমি ইচ্ছে মতো আমাকে সাজাও
যদি সত্যি জানতে চাও,
তোমাকে চাই,তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও,তোমাকেই চাই….(ii)
হলো শুরু সাতদিনেই,এই খেলাধুলো রাতদিনের
জানি বারন করার সাধ্যি নেই,আর আমার
তোমার নামের মসজিদে,আর তোমার নামের মন্দিরে
আমি কথা দিয়ে এসেছি বারবার।
বিন্দু থেকে সিন্ধু হয়ে যাও
তুমি ইচ্ছে মতোন আমাকে সাজাও
যদি সত্যি……তোমাকেই চাই…(ii)
মনের গভীরে,ঘুমের শরীরে
তোমাকে নিয়ে,ডুবে যাবো
আমার কাছে,কারনেরা আছে
নিজেকে আমি খুজেই নেবো
যদি সত্যি…..তোমাকেই চাই…(ii) ”
সবাই হাততালির আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো আমার।শুদ্ধর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কিছুটা সরে দাড়ালাম।নিচদিক তাকিয়ে ভাবছিলাম কি হলো এতোক্ষন?ওনার সাথে নাচছিলাম আমি!প্রতিটা মুহুর্ত শুধু অবাক চোখে তাকে দেখেছি।আর সে?ঠোটে মুচকি হাসি আর চোখে মুদ্ধতা দেখেছি আজ আমি তার।
-নাচ,গান আমিও পারি।বাকি গুনগুলোও ঠিক সময়মতো দেখিয়ে দেবো তোকে।বি রেডি!
কথাটা বলে উনি তায়্যিবকে নিয়ে হাটা লাগালেন।আমার চোখ এবার বেরিয়েই আসবে।মেয়ের দল আবারো কলকলিয়ে হাজির।পাশ থেকে নানাভাবে নানা কথা বলে চলেছে।কিন্তু ওই যে!এখনও বাস্তব কি না সেটাও ভাবছি,বাস্ত প্রমান পেয়ে এরপর কি হবে সেটাও ভাবছি।শুদ্ধের এই ব্যবহার?
বড়রা বেশিরভাগই বাসার ভেতরে চলে গেছেন।স্টেজে বসে শুদ্ধর দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।উনি সবার সাথে দাড়িয়ে হাসিমুখে কথা বলছেন,জুসের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছেন আর আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছেন।চোখাচোখি হতেই চোখ ফিরিয়ে নিতাম আমি আগে।কিন্তু আজকের ঘটনায়,বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছি না বলে অভ্যাসটাতেও খুত ধরেছে।শুদ্ধ দুরে দাড়িয়েই একবার চোখ পাকিয়ে আস্তে করে বললেন হোয়াট!এইতো!কেলো করেছে!!!তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম আমি।
আলিফ দুটো ফ্যানের মাঝখানে বসে মাথায় পানি দিচ্ছে আর চাপড়াচ্ছে।বেচারা পুরো গানটা চলাকালীন রোদেই দাড়িয়ে ছিলো।গান শেষে শুদ্ধই ওকে এনে জুস,ঠান্ডা পানি দিয়ে চুলটা,পান্জাবির কলারটা ঠিক করে দিয়ে ফ্যানের কাছে বসিয়ে দিয়েছেন।প্রথমে করুনা হলেও পরে ভাবলাম ঠিকই হয়েছে।কে বলেছিলো,শুদ্ধর সামনে ওভাবে বলতে?এবার তো মানুষ বুঝে চলতে শিখুক হারামিটা।সীমা ভাবি এগিয়ে এসে বললো,
-ইশ্!ছেলেটার কি দশা করেছে!
আমি অপরাধীর মতো তাকালাম ওর দিকে।তাপসী আপু বললো,
-ভাগ্যিস ইশান যায় নি সুট পরতে!
মৌনতা এতোক্ষন আলিফের কাছেই ছিলো।এগিয়ে এসে বললো,
-আলিফের অবস্থা খারাপ।রোদে পেকে গেছে ও।
আলিফও এগিয়ে আসলো।ওর পান্জাবির অনেকটাই ভিজে গেছে।খিচে উঠে বললো,
-আগে কইতি,তর জামাই ট্রিগারের মতো সেন্সিটিভ!আইতাম না আমি!
-ভাই,আমি তো…
-রাখ তর ভাই!এই ভাই ভাই কইরা দুনিয়া উল্টায়া ফালাস!এখন আমি সর্বজনীন ভাই!সিঙ্গেল কমিটির সভাপতি।
-তাহলে তো ইয়াশাও সিঙ্গেল।ওই মনু,কালই ওইযে ওর পিছনে ঘোরে কি যেনো নাম?মেহেদী।ওকে বলবি ইয়াশাকে প্রোপোজ করতে।
আলিফ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললো,
-এই বিয়া বাড়িতে বর কনে বাদে সব সিঙ্গেল।আমিও থাকতে চাইলাম,দিলি না তুই ইনসু।তুই খবরদার কতা কইবি না আমার লগে।আমি খাইয়াই চইলা যামু ওহন।
মৌনতা বললো,
-তো রাগ করে না খেয়ে চলে যা।
-আলিফ খাওয়ার উপর রাগ দেখায় না।
সবাই মিলে হাসলো।তারপর শুরু শুদ্ধর নাচ,আচরন নিয়ে আমাকে পচানো।কিন্তু আমি তো জানি,এই ভালো ব্যবহারগুলো যখন তখন উল্টোতীর হয়ে ফিরবে।ভয় করছিলো।প্রকাশ করলাম না।মাহিকে দেখলাম পাশে দাড়িয়ে উকিঝুকি দিতে।যেনো কাউকে খুজছে।আমি উঠে দাড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম,
-কাউকে খুজছো?
-হ্যাঁ ইনসু ভাবি,ওই অ্যারোগেন্টটা আজ আস্….
এটুকো বলেই মাহি আটকে গেলো।নিজেকে সামলে মেকি হেসে বললো,
-আ্ আরেহ্,কাকে খুজবো?ক্ কাউকেই না।
আমি চোখ ছোটছোট করে বুকে হাত গুজে বললাম,
-এই অ্যারোগেন্টটা কে?
-ক্ কেউ না বললাম তো ইনসিয়া ভাবি।এতো বেশি ভাবো না তুমি!
আলিফ হাতের দশআঙুল এক করে মাঝখানে ঢুকে লজ্জার মতো করে বললো,
-কিবে,ডিকিউ!ডোন্ট টেল মি তোর এই ননদীনি আমার উপ্রে ক্রাশ খাইছে!
মাহি ভ্রুকুচকে তাকালো ওর দিকে।ঠোট টিপে হেসে বললাম,
-খেলেই বা কি?তুই তো ইয়াশাকে…
-আরে আরে,ছাইড়া দিমু।কিয়ের ইয়াশা?সব ধোয়াশা আর কুয়াশা!আরে,ওয় তো ধরাছোয়ার বাইরে।খালি গিলবো আর টাকা উরাইবো আমার।তুই খালি ক!কি?মাহি ভে?খাইছো নাকি?ক্রাশ?
মাহি দাত কেলিয়ে বললো,
-জ্বী না।তবে সারপ্রাইজ আছে আপনার জন্য।
-উম্মাই আল্লাহ!কয় কি?সরাসরি সারপ্রাইজ?দেহাও দেহি!
মাহি ওর হাতের ফোন উচিয়ে ধরে বললো,
-এই হলো আপনার ইয়াশাকে নিয়ে ভয়েজ রেকর্ডিং।
আমি আমার হাতে থাকা আলিফের ফোন উচিয়ে ধরলাম।ওটা কিছুক্ষন আগে ও যখন মাথায় পানি দিচ্ছিলো,মৌনতা দিয়েছে আমাকে।বললাম,
-এই রইলো ইয়াশার ফোন নাম্বার।
আলিফ রসগোল্লার মতো চোখ বানিয়ে তাকিয়ে রইলো।তারপর অনেকবার সরি বলে মাহির কাছ থেকে বিদায় নিলো ও।আমি হাসতে হাসতেই মাহিকে বললাম,
-ও এমনই।এজন্যই ভালোলাগে ওকে।
-বাট আই থিংক আই স্টার্টেড্ লাইকিং অ্যারোগেন্ট।
-কিহ্?
-ন্ না মানে,একটু অ্যাটিচিউড্,রাগ,মুডি এগুলো ভালো লাগে আমার।যেমনটা শুদ্ধ ভাইয়া!ওমন।
শুদ্ধর কথা মনে পরতেই আবারো গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো আমার।এই সবার সামনে এমন ব্যবহার করছেন।সবাই চলে গেলে আমার কপালে কি আছে কে জানে!!!
#চলবে…
#তোর_নামের_রোদ্দুর
🎁সারপ্রাইজ পর্ব🎁
লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
আজকের ঘটনাগুলো বেশ অদ্ভুত ছিলো।কিছু তো হয়েছে শুদ্ধর।নইলে এতো সহজে উনি রিসেপশনে যেতেন না।ছবি তোলা,গেস্ট এটেন্ড করা,এমনকি আমার সাথে ডুয়েট নাচ!এগুলোও সম্ভব?কিভাবে?কেনো?ছবি তোলার সময় হেসেছেন উনি!নাচ করার সময় আমি হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকলেও উনি যথেষ্ট গুছিয়ে স্টেপসগুলো গানের ছন্দে মিলাচ্ছিলেন,এমনকি আমারটাও মানিয়ে নিচ্ছিলেন।নাচ করার সময় অন্যরকম লাগছিলো তাকে,তার স্পর্শকে।কি হয়েছে ওনার?কাল রাতে জ্বর থেকে অতিরিক্ত কিছু হয়ে যায়নি তো?আমি ভুলভাল ওষুধ খাইয়ে দি নি তো?ইয়া আল্লাহ!এখন কি হবে???
আকাশকুসুম ভাবতে ভাবতে রুমে আসলাম।দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখি শুদ্ধ হুইস্টলিং করতে করতে আয়নার সামনে দাড়িয়ে দুহাতে চুল উল্টাচ্ছেন।ছোটখাটো শক পেয়ে দরজার কাছেই দাড়িয়ে রইলাম।হুইস্টলিং?এ তিন বছরে উনি হেসেছেন কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে।আজ উনি হুইস্টলিং করছেন?
শুদ্ধ আয়নার ভেতর দিয়ে আমার দিকে তাকালেন।হুইস্টলিং করতে করতেই ভ্রু নাচিয়ে বুঝালেন কি হয়েছে।নিজেকে সামলে মাথা নেড়ে কিছু না বুঝালাম।নিচদিক তাকিয়ে আস্তেধীরে বেডের দিকে এগিয়ে গেলাম।
-কি হয়েছে?
আচমকাই একদম কাছে শুদ্ধের আওয়াজ পেয়ে পিছন ফিরতে যাবো,ওনার বুকের সাথে ধাক্কা লেগে বিছানায়তেই পরে গেলাম।কোনোমতে পিছনে দুহাত দিয়ে শোয়া থেকে বেচে আধশোয়া হয়ে আছি।সামনে শুদ্ধ একহাত বুকে গুজে আরেকহাত ঠেকিয়ে নিজের থুতনি ধরে আছেন।চোখ বড়বড় হয়ে গেলো আমার।উনি আমার দিকে ঝুকে আবারো বললেন,
-কি হয়েছে তোর?
আমার?আমার কি হয়েছে?নিজে যে দুনিয়া গায়েবি আচার ব্যবহার করছেন তারবেলায়?কাপাকাপা গলায় বললাম,
-ক্ কি হবে?ক্ কিছু না।
উনি সোজা হয়ে দাড়ালেন।কোনোরকম ফাক পেয়ে উঠে আসলাম ওখান থেকে।শ্বাস নিয়ে কাবার্ডের বা পাশের পাল্লা খুলে ভেতরে ঢুকে জামা বের করছিলাম।এই লেহেঙ্গায় আর কতোক্ষন?কাবার্ড লাগাতেই দ্বিতীয়বারের মতো আতকে উঠলাম।পাশের দিকটায় উনি হেলান দিয়ে দাড়িয়ে নিজের নখ দেখছেন।
-কি হয়েছে?এভাবে ভয় পাচ্ছিস কেনো?
একটা শুকনো ঢোক গিলে হাতে ভাজ দেওয়া জামা এলোমেলো করতে করতে বললাম,
-ক্ কই?ক্ কিছুই না।
সরে আসছিলাম।শুদ্ধ সামনে পথ আগলে দাড়ালেন আমার।উনি এগোতেই আমি পিছিয়ে কাবার্ডে লেগে গেলাম।আমার ঘাড়ের পাশ দিয়ে কাবার্ডে হাত রাখলেন উনি।বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছি আমি।উনি বাকা হেসে বললেন,
-কি হয়েছে?
দম আটকে আসছে আমার।লোকটা এমন করছে কেনো?সেদিনের মতো আজও কি বড়সড় শাস্তি কপালে নাচছে আমার?এতোবড় দোষের কি করলাম?কোনটা?ওষুধ খাওয়ানো?সুট পরানো?ইশান ভাইয়াকে নিয়ে ছবি তোলা?আলিফের সাথে নাচতে চাওয়া?কোনটা?
-ক্ কিছু না বললাম তো।দ্ দুরে যান।
উনি হাত সরিয়ে নিজেও একটু সরে দাড়ালেন।শ্বাস স্বাভাবিক হলো আমার।চেন্জ করবো বলে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়েছি,শুদ্ধ হাতের কব্জি ধরে হেচকা টানে আবারো নিজের সামনে দাড় করালেন আমাকে।কি রিয়্যাক্ট দেবো বুঝে উঠতে পারছি না।তবে বিস্ময় আমার সব সীমা পার করছে তা টের পাচ্ছি আমি।শুদ্ধ ঠোটে সেই এক টেডি স্মাইল ঝুলিয়ে বললেন,
-পালাচ্ছিস কেনো?
-কিছু না।
-ভয় পাচ্ছিস?
-কিছু না।
-তোর জন্য সুট পরলাম।সরি।পরলাম কই?পরতে বাধ্য করলি আমাকে।এবার বল,কেমন দেখাচ্ছে আমাকে।
-কিছু ন্..
কি বলছি নিজেও জানি না।পরে ওনার ভ্রুকুটি দেখে হুশ ফিরতেই বললাম,
-ভ্ ভালো।ভালো দেখাচ্ছে।আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ!
-শুধুই ভালো?
-অ্ অন্নেক ভালো।অনেক ভালো।এবারতো ছেড়ে দিন প্লিজ!
আমার কথাকে গ্রাহ্য করে শুদ্ধ হাত ছেড়ে দিলেন আমার।বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিলাম।শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি ওভাবেই বাকা হাসছেন।যা বিপদসংকেত মনে হলো আমার কাছে।তাড়াতাড়ি সরে আসবো বলে পিছন ফিরতে যাচ্ছিলাম।কিন্তু পিছন ফেরার আগেই উনি কোমড় জরিয়ে ধরলেন আমার।মাঝের দুরুত্বটাও বিলীন হয়ে গেছে সেই সাথে।হাতদুটো থেকে জামাটা পরে গেছে।আর সে হাত আপনাআপনি শুদ্ধর কাধে চলে গেছে।মাথা বাকিয়ে যতোটুকো পিছিয়ে রাখা যায়,রেখেছি।বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা যেনো ট্রেনের বেগে ছুটছে আর শুদ্ধের তপ্ত নিশ্বাস মুখে পরতেই সে বেগ যেনো ত্বরন পাচ্ছে।লাবডাব শব্দটা বাইরে থেকেই শোনা যাচ্ছে আমার।আর হাত পা যেনো অবশ হয়ে আসছে ক্রমশ।
-তোর এজমা আছে?
মুহুর্তেই গায়ে আগুন ধরে গেলো আমার।সবটা ভুলে চেচিয়ে বললাম,
-আমাকে দেখে আপনার হাপানি রোগী মনে হয়?
উনি ঠোট টিপে হেসে বললেন,
-তোর এই কাপুনি,শ্বাসকষ্ট দেখে মনে হয়।
আমি কিছুটা হচকিয়ে গেলাম।চোখ নামিয়ে নিলাম।কান গরম হয়ে গেছে।শরীরটাও নুইয়ে যাচ্ছে।শুদ্ধ ওনার মুখ এগিয়ে আমার কানের কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বললেন,
-ইটস্ মাই টার্ন নাও।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুখ হা হয়ে গেলো আমার।মাথা তুলে তার দিকে তাকালাম।উনি ঠোট কামড়ে ধরে হাসছেন।ওনার টার্ন?কিসের?যেটুকো শ্বাসপ্রশ্বাস চলছিলো আমার তাও এবার থেমে যাবে,টের পাচ্ছি আমি।উনি বললেন,
-তোকে কেমন দেখাচ্ছে সেটা শুনবি না?
চুপ করেই আছি।শুদ্ধ নিজের সাথে আরো কিছুটা জাপটে ধরলেন আমাকে।চোখে চোখ রেখে কিছুটা সময় দেখেছি তাকে।বরই অদ্ভুত মানুষটা।বোঝা বরই কঠিন ওনাকে।উনি আমার গালের পাশে ওনার মুখ এনে ঘোর লাগা কন্ঠে বলতে লাগলেন,
-আমার শ্যামাপাখি আজ আমার মনের মতো করে সেজেছে।কাজলহীন চোখের ওই ঘন পাপড়ি পলক ফেলতেই মৃদ্যু কেপে উঠে আমার চারপাশে ভুমিকম্প তুলে দিচ্ছে।চোখজোড়ার দুরন্তপনা বরাবরের মতোই ঝড়ের কারন।হাতের চুড়িগুলোর শব্দ কানে বাজলেই মন জুরে দমকা হাওয়া বয়ে যায়।কানের দুলে পড়া একফালি রোদ্দুর ঝলসে দিয়ে যায় আমার চোখ।হাটার সাথে দুলতে থাকা মাত্রাতিরিক্ত ঘেরের লেহেঙ্গাটা রঙিন করে দিয়ে যায় চারপাশটা।ছাড়া চুলগুলো ছুটে এসে চোখমুখ ছুইয়ে দিতেই পাগল পাগল লাগে নিজেকে।ডুব দিতে ইচ্ছা করে ওদের সুঘ্রানে।আর এই ঠোটজোড়া!কি বলে ব্যাখা দেবো এদের শ্যামাপাখি?এদের দেখলে যে সম্মোহনী হারিয়ে যায় আমার।বড্ড টানে এরা আমাকে।
শুদ্ধ কোমড় ছেড়ে দু গাল ধরলেন আমার।একবার তার হাতের দিকে তাকিয়ে আমি আবারো তার দিকে তাকালাম।নাহ্!উনি আজ নিজের মধ্যে নেই।চোখদুটোর চাওনি অসম্ভব গভীর।দুহাতে লেহেঙ্গাটা খামচে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।আজ ওই চোখে তোর সর্বনাশ আকা ইনসিয়া।শেষ করে দেবে তোকে আজ ওই চোখ।তাকাস না ও চোখের দিকে তুই।তাকাস না!
গুনে গুনে ছ সেকেন্ড পর ঠোটজোড়া ছাড়া পেলো আমার।নিচদিক তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।মনে হলো যেনো অলিম্পিকে দৌড় লাগিয়ে আসলাম মাত্র।কি হয়েছে সেটা বুঝ আসতেই এক আকাশসম বিস্ময় নিয়ে মাথা তুলে শুদ্ধের দিকে তাকালাম আবারো।উনি মুচকি হেসে আমার কপালে ঠোট ছুইয়ে বললেন,
-ক্যাবলাকান্ত সিয়া!গার্ডেনে বলেছিলাম না,সব গুন দেখাবো আমার?ভালোবাসবো বউ!খুব ভালোবাসবো তোকে!
কথাটা বলেই ভাবলেশহীনভাবে এলোমেলো পা ফেলে উনি চলে গেলেন ওয়াশরুমে।আমি এখনো ঠায় মেরে দাড়িয়ে।বড়সড় শক বলতে এর বেশি কিছু হতে পারে না।ফ্রিজড্ হয়ে দাড়িয়ে থেকে শুধু এইটাই ভাবতে লাগলাম,এটা কি ছিলো!!!
#চলবে…