#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ২৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি
আরিফের জন্মদিন উপলক্ষে পুরো বাড়িতে আজ সাজসাজ রব। নকশি, আতিকা চৌধুরী এই দুজনে স্বতঃস্ফূর্ত ইচ্ছায় আজ সব কার্যক্রম চলছে। আজ অনেক দিন পর এমন আনন্দানুষ্ঠান হওয়ায় তাদের মন বেশ খুশিতে ভরপুর। মুসকানও তাদের সাথে অংশ নিয়েছে বটে তবে মন থেকে খু্শি হতে পারছে না।
মুসকান খেয়াল করেছে আজ সকালে আরিফ ভীষণ উদ্বিগ্নতার সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। আরিফের এই উদ্বিগ্নতার কারণ জানে মুসকান। আজই যে তাদের কাছে শেষ দিন টাকা পরিশোধ করার। আজ টাকা পরিশোধ করতে না পারলে যে তাদের জীবনে বড় ঝড় নামবে। তাই হয়তো আরিফ কোন শেষ চেষ্টা করতে গেছে।
মুসকান যখন নিজের মনে এসব ভাবনায় ব্যস্ত ছিল তখন হঠাৎ করে নকশি তার সামনে চলে আসে। মুসকানকে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে কোন ভাবনায় বিভোর দেখে তার চোখের সামনে চুটকি বাজায়। মুসকান নকশির দিকে তাকাতেই সে মৃদু হেসে বলে,
“এভাবে দাঁড়িয়ে কি ভাবছ তুমি?”
মুসকান জোরপূর্বক সামান্য হেসে বলে,
“তেমন কিছু না।”
নকশি মুসকানের হাতে কিছু বেলুন দিয়ে বলে,
“নাও এগুলোতে ফু দাও৷ ভাইয়া তো যেকোন সময় চলে আসবে। আমাদের কিন্তু তার আগেই সব এরেঞ্জমেন্ট করে রাখতে হবে।”
নকশি আর কিছু না বলে চলে যায় আতিকা চৌধুরীর কাছে। আতিকা চৌধুরী পায়েস রান্না করছিলেন। নকশি রান্নাঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই পায়েসের সুগন্ধ এসে হানা দেয় তার নাকে। নকশি নিজের খালামনির প্রশংসা করে বলে,
“বাহ, খালামনি। এই পায়েসের সুগন্ধই এত সুন্দর, না জানি খেতে আরো কত সুন্দর হবে। আমার তো ইচ্ছা করছে এখনই খেয়ে নেই।”
“এই খবরদার না। আগে আমার আরিফ এই পায়েস খাবে তারপর বাকি সবাই।”
নকশি চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“আচ্ছা।”
★★★
আরিফ নিজের চেনা জানা কোন যায়গা আজ বাকি রাখেনি। লাজলজ্জার মাথা খেয়ে অনেক আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছে হাত পেতেছে। কিন্তু তার কোন চেষ্টাই ফলপ্রসূ হয়নি। বেচারার এখন ডুকরে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। বারবার মনে পড়ছে আজ রাত ১২ টা বাজলেই তার জীবনে সর্বনাশ নামতে চলেছে। কারণ ঐ মেহরাব হোসেন এমনই হুমকি দিয়েছিল তাকে। সেদিন রাতে তুলে নিয়ে গিয়ে বারবার করে বলে দিয়েছিল,
“যদি এই মাসের শেষ তারিখ রাত ১২ টার মধ্যে আমি টাকা না পাই তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। তুই সহ তোর পরিবারের সবার উপর যে কি ভারী বিপদ নেমে আসবে সেটা তুই ভাবতে পারছিস না। তাই নিজের ভালো চাইলে এর আগেই আমার সব টাকা মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবি।”
আরিফ মেহরাবের সেই হুমকির কথা মনে করে ঢোক গিলে। কোথায় পাবে সে এতগুলো টাকা? সর্বসাকুল্যে ১০ লাখ টাকা জোগাড় করতে পেরেছে যে। হাজার চেষ্টা করেও বাকি টাকার ব্যবস্থা করতে পারে নি। এত চিন্তার মধ্যে আরিফ এটাও ভুলে গেছে যে আজ তার জন্মদিন। ২২ থেকে ২৩ এ পা দিতে চলেছে সে।
আরিফ এমন টালমাটাল অবস্থায় খালি পায়ে হেটে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
★★★
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক রাত ১১ টা বেজে ৫০ মিনিট। সারাটা দিন বিভিন্ন জোগাড় করতেই কেটে গেছে সবার৷ এখন সবাই অপেক্ষা করছে আরিফের আগমনের। নকশি আরিফের সারাদিন এভাবে বাইরে থাকা নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করে মুসকানকে শুধালো,
“ভাবি ভাইয়া কোথায়? আজ সারাদিন কেন জানি তার দেখাই পেলাম না।”
মুসকান ভেবে পেল না কি বলবে৷ সে কিছু বলার আগেই আতিকা চৌধুরী বলে উঠলেন,
“ও নিশ্চয়ই আজ সারাদিন নিজের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েছে,পার্টি করেছে। প্রতিবার তো এমনই করে নিজের জন্মদিনে। আর একদম ১২ টার আগে উপস্থিত হয়ে আমাদের সাথে কেক কা’টে। চিন্তা করিস না। এক্ষুনি চলে আসবে।”
মুসকান ভাবলো, আদতেও কি আরিফ এখন পার্টি করার মুডে আছে? আরিফের মনে এখন কি ঝড় চলছে সেটা একমাত্র মুসকানই ভালো জানে। তাই সে আড়ালে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো শুধু।
এরমধ্যে হঠাৎ বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠল। আতিকা চৌধুরী বলে উঠলেন,
“ঐ যে, আরিফ বোধহয় চলে এসেছে। যাও মুসকান দরজাটা খোলো। আর নকশি তুই গিয়ে কেক, কেক কা’টার নাইফ নিয়ে আয় যা।”
মুসকানের বুক দুরুদুরু করে কাপতে থাকে। ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকাতেই যেন তার ভয় আরো বেড়ে যায়। আরিফ তো তাকে বলেছিল যে, ঐ মেহরাব ঠিক ১২ টার সময় কিছু করতে চেয়েছে। মুসকান ভয়ে কাপতে কাপতে গিয়ে দরজা খুলল। তবে মেহরাব নয়, আরিফই এসেছে। আরিফকে দেখে মুসকান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। সহসা জড়িয়ে ধরল আরিফকে।
আরিফ বেশ অবাক হয়ে গেল। মুসকানকে শুধালো,
“কি হয়েছে? সবকিছু ঠিক তো।”
“এখন অব্দি সব ঠিক আছে। আর আমি আশা করব আগামীতেও যেন ঠিক থাকে।”
অতঃপর দুজনেই ভেতরে আসে। আরিফ উপস্থিত হতেই নকশি কেক নিয়ে আসে। সবাই মিলে একস্বরে বলে ওঠে,
“হ্যাপি বার্থডে।”
আরিফ চমকে যায়। এত চিন্তার মাঝে তার তো এইদিনের কথা মনেই ছিল না। নকশি এগিয়ে এসে আরিফের সামনে কেক রাখে। অতঃপর মুসকানকে নিয়ে এসে আরিফের পাশে দাঁড় করিয়ে বলে,
“এটা বিয়ের পর তোমার প্রথম বার্থডে। তাই কেক কে’টে প্রথম টুকরোটা কিন্তু ভাবিকেই খাওয়াবে।”
আরিফ মৃদু হেসে কেক কা’টতে নেয়। এমন সময় হঠাৎ করে একদল লোক বাড়িতে প্রবেশ করে। সাথে সাথেই মোমবাতির সব আলো নিভে যায়। আতিকা চৌধুরীর বুক কেপে ওঠে।
সামনে তাকাতেই সবাই দেখতে পায় বন্দুক সহ বিভিন্ন অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হাজির একদল মানুষ। তাদের সকলকে দেখে ভয়ে কেপে ওঠেন আতিকা চৌধুরী। এরমধ্যেই সকলের মধ্যমনি হয়ে হাজির হয় মেহরাব হোসেন। বছর ৩০ এর তাগড়া যুবক। যার চোখ-মুখে ভয়ানক রাগ জেদই তার ভয়াবহতার প্রমাণ দিচ্ছে।
মেহরাব হোসেন সবার সামনে গর্জন দিয়ে বলে ওঠে,
“এদের সবাইকে এই বাড়ি থেকে বের করে দে। এই বাড়িটা এখন আমার।”
আতিকা চৌধুরী হতবাক হয়ে যান মেহরাবের কথা শুনে। অনেক ভীত থাকলেও বুকে সাহসের সঞ্চার করে বলে ওঠেন,
“এসব কি বলছেন আপনি? আমাদের বাড়ি থেকে আমাদেরই বের করে দিতে চাইছেন!”
মেহরাব তাচ্ছিল্য হেসে বলে, “ভুল করছেন খালাম্মা। এই বাড়িটা আর মোটেই আপনাদের নয়। আপনার ছেলে আমার থেকে টাকা ধার নিয়েছিল। আর সেইসময় ও একটি কাগজে সই করেছিল। এই যে সেই কাগজ, যেখানে লেখা সুদসমেত সম্পূর্ণ টাকা সঠিক সময়ে শেষ করতে না পারলে আরিফ চৌধুরীর স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তির মালিক হবো আমি। সো, ফ্রম নাও ইটস মাই প্লেস।”‘
আতিকা চৌধুরী আরিফের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন,
” উনি এসব কি বলছেন আরিফ?”
আরিফ মাথা নামিয়ে নেয়৷ মুসকান দৌড়ে নিজেদের রুমে যায়। ঘুমন্ত মুসকানকে কোলে তুলে নিয়ে পরম মমতায় আগলে নেয়।
আতিকা চৌধুরী বলে ওঠেন,
“এভাবে কিছু হতে পারে না। দেশে একটা আইন আছে। এভাবে হঠাৎ আপনারা এসে আমাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে পারেন না।”
মেহরাব বিকট হেসে বলে,
“এই মেহরাব কোন আইন মানে না। এই মেহরাব যখন যা বলে তাই আইন হয়ে যায়।”
অতঃপর নিজের পোষা গু’ন্ডাদের আদেশ দেয়,
“এই তোরা দেখছিস কি? এদের সবাইকে আমার বাড়ি থেকে বের করে দে। আর একটু আগে যে একটা মেয়ে দৌড়ে পালালো ওকেও টেনে এনে বের করে দে।”
আরিফ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতেই তার মাথায় বন্দুক ধরা হলো। দুজন লোক গেল মুসকানকে আনতে।
মুসকান রুহিকে কোলে নিয়ে আল্লাহকে ডাকছিল। এমন সময় হঠাৎ দুজন লোক চলে আসে৷ তারা মুসকানকে বলে,
“এই চল, বের হ এখান থেকে।”
“এটা আমার রুম, আমার শ্বশুর বাড়ি। আমি কোথাও যাবো না।”
একটা লোক এগিয়ে এসে মুসকানের চুলের মুঠি টেনে ধরে। সহসা রুহি পড়ে যায় তার কোল থেকে। বাচ্চাটা কান্না করতে শুরু করে। তবুও এই পাষাণদের মন গলে না। মুসকানকে চুল ধরেই টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে। আরেকজন রুহিকে কোলে তুলে নিয়ে আসতে থাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ২৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মুসকানের চু’লের মুঠি ধরে টেনে এনে ধা”ক্কা দিয়ে তাকে মেঝেতে ছু’ড়ে মা’রে মেহরাব হোসেনের লোক। মুসকান আঘাত পায় ভীষণ। কষ্টে মৃদু আর্তনাদ দিয়ে ওঠে। আরিফ এগিয়ে এসে মুসকানকে টেনে তোলে।
নকশি এসব দেখে ভীষণ রেগে যায়। মেহরাব হোসেনের সামনে গিয়ে বলে,
“আপনি কি মানুষ? ছি! আপনি কিভাবে একজন মেয়েকে এভাবে অসম্মানিত করতে পারলেন। নারীজাতী হলো মায়ের জাতি। তাদেরকে সম্মান দিতে হয়। আর আপনি…”
মেহরাব তাচ্ছিল্য করে বলল,
“মেয়েদের জন্মই হয় পুরুষদের পায়ের তলায় পিষে ম’রার জন্য। এছাড়া তাদের আর কোন মূল্য নেই।”
মেহরাবের মুখে মেয়েদের সম্পর্কে এত বাজে কথা শুনে কোনভাবেই সহ্য করতে পারল না নকশি। তার চোখ মুখ আগ্নেয়গিরির লাল আভায় ছেয়ে গেল। হাত নিশপিশ করতে লাগল এর যোগ্য জবাব দিতে। আর মস্তিষ্ক মনের কথাটা শুনেও নিলো।
নকশি দ্রুত বেগে থা’প্পর বসিয়ে দিল মেহরাব হোসেনের গালে। অতঃপর দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“যেই মেয়েদের নিজের পায়ের তলার জিনিস ভাবেন তার হাতের থা’প্পর খেয়ে দেখুন কেমন লাগে।”
মেহরাব রেগে তাকালো নকশির দিকে। তার মুখের ভঙ্গিমাই প্রমাণ করে দিচ্ছে তার মনে এখন কি পরিমাণ রাগ জমা হয়েছে। মেহরাবের লোকেরাও হতবাক। তাদের বসকে যে এভাবে অপমানিত হতে হবে তাও একটা মেয়ের কাছে সেটা তারা ভাবে নি। বন্দুক নিয়ে এগিয়ে আসতে চাইলে মেহরাব তাদের হাত দিয়ে ইশারা করে থামিয়ে দেয়।
নকশির দিকে হাত বাড়াতেই সে নিজের গাল ঢেকে ধরে। কিন্তু মেহরাব নকশিকে অবাক করে তার হাত দুটো আলতো করে স্পর্শ করে। নকশি কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। মেহরাব নকশির হাত দুটো হঠাৎ করে শক্ত করে মুচড়ে ধরে। নকশি ব্যাথায় আর্তনাদ করলে সে বলে,
“তোর এত বড় সাহস একটা সামান্য মেয়ে হয়ে মেহরাব হোসেনের গায়ে হাত তুলিস! যার ভয়ে গোটা শহরের লোকেরা তদস্থ তার গায়ে হাত তোলার সাহদ দেখিয়েছিস তুই। এখন দেখ আমি কি করি। তোর এই হাত কে’টে কু’*র শেয়ালদের না খাওয়ালে আমার শান্তি নেই।”
নকশি অনেক ভয় পেয়ে গেলেও সেটা প্রকাশ করে না। বরঞ্চ সাহস দেখিয়ে বলে,
“আপনার মতো মানুষদের থেকে এর থেকে বেশি আর কি আশা করা যায়। আপনি তো মেয়েদের মানুষই মনে করেন না। আপনার কাছে নাকি মেয়েরা দূর্বল। তাহলে সেই দূর্বল নারীদের উপর অত্যাচার করে কি আপনি নিজেকে সুপুরুষ ভাবছেন? না মিস্টার, আসলে আপনি একজন কাপুরষ।”
মেহরাবের মাথা ভীষণ গরম হয়ে গেল। সে নিজের পকেট থেকে রিভালবার বের করে তাক করলো নকশির মাথায়। এতক্ষণ সাহস দেখালেও এবার যেন নকশির সব সাহস মিইয়ে গেল। ভীতু বেড়ালের মতো জড়োসড়ো হয়ে গেল সে।
আতিকা চৌধুরী আৎকে উঠলেন এই দৃশ্য দেখে। এগিয়ে এসে মেহরাবের উদ্দ্যেশ্যে হাতজোড় করে বললেন,
“ও ছোট মানুষ, ওর ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ ওকে ক্ষমা করে দিন। আপনারা যা বলবেন আমরা তাই করবো। এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাব। কিন্তু আপনি ওর কোন ক্ষতি করবেন না প্লিজ।”
নকশি ভীট টতস্থ অবস্থাতেই বুকে সাহসের সঞ্চার করে বলে,
“তুমি একদম এই শ*তানটার সামনে হাতজোড় করবা না খালামনি। এরকম কী*টদের ভয় পেতে নেই। দেশে আইন আছে, পুলিশ স্টেশন আছে। আমরা আইনের সাহায্য নেব।”
নকশির কথায় বিকট হাসতে লাগল মেহরাব। হাসতে হাসতেই বলল,
“পুলিশ করবে তোমাদের সাহায্য! হাস্যকর। আইনত এখন এই বাড়ি আমার নামে। আর তোমরা এখানে জবরদখল করে বসে আছো। সো বেশি সাহস দেখিও না।”
নকশির ঘৃণা তীব্র থেকে তীব্রতর রূপ নেয় মেহরাবের প্রতি। আচমকাই থুতু ছিটিয়ে দেয় মেহরাবের মুখে। মেহরাব আবার অপমানিত হয় সবার সামনে। নকশির অন্তর একটু ঠান্ডা হয়। সে বলে,
“দেখ কেমন লাগে।”
মেহরাব এবার ভীষণ রাগান্বিত হয়ে যায়। তার রাগের বহিঃপ্রকাশও ঘটে। রিভালবার দিয়ে উপরের দিকে প্রথমে একটা ফা’কা বু*লেট ছু*ড়ে সে। যাতেই কেপে ওঠে সবাই। অতঃপর দ্বিতীয় গু*লি চালায় ঠিক নকশির ডান হাত লক্ষ্য করে। নকশির হাত ভেদ করে গু*লি বেরিয়ে আসে। নকশি আর্তনাদ করে হাত ধরে বসে পড়ে। আতিকা চৌধুরী, মুসকান ও আরিফ এসে তাকে আগলে ধরে।
আতিকা চৌধুরী কান্নায় ভেঙে পড়েন। নকশিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“তুই এত তর্ক করতে গেলি কেন নকশি? না জানি এখন আমাদের কত বড় ক্ষতি করে দেবে এরা। আমাদের কথা নাহয় বাদ দিলাম। কিন্তু তোর কিছু হয়ে গেলে আমি যে আতিফাকে মুখ দেখাতে পারব না।”
নকশি নিভু নিভু চোখে ক্ষীণ স্বরে বলে,
“তোমরা প্লিজ কেউ আমায় বি*ষ এনে দাও। আমি বি** খেয়ে ম*রতে রাজি আছি। কিন্তু এই পি*শাচটার হাতে মরলে আমার আত্মা শান্তি পাবে না।”
নকশির কথাটা কর্ণগোচর হয় মেহরাবের। রাগ হয় প্রচুর তার। রাগে গজগজ করতে থাকতে। এই প্রথম কারো চোখে সে নিজের জন্য ভয়ের থেকে বেশি ঘৃণার এমন বহিঃপ্রকাশ দেখল। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না এটা। নিজেকে পরাজিত মনে হচ্ছে। মেহরাব চিৎকার করে তার লোকদের আদেশ দেয়,
“যা এক্ষুনি যা! যেখান থেকে পারবি, যেই ডাক্তারকে পারবি ধরে নিয়ে আসবি। আসতে না চাইলে বেধে নিয়ে আসবি। বাট আমি আর ১০ মিনিটের মধ্যে একজন ডাক্তারকে এখানে দেখতে চাই।”
মেহরাব কথাটা বলতে না বলতেই তার ডান হাত খ্যাত কুদ্দুস বলে উঠল,
“চিন্তা করবেন না বস। আমি এক্ষুনি একটা ডাক্তার নিয়ে আসছি। চান্নু, মান্নু তোরা আমার সাথে চল।”
তিন জনে মিলে বিদায় নিতেই মেহরাব তাকায় নকশির দিকে। ব্যাথায় কাতড়াচ্ছে মেয়েটা। তবে ব্যাথার থেকে ঘৃণা বেশি প্রতিফলিত হচ্ছে তার চেহারায়। যা মেহরাবের প্রতিটি লোমকূপে যেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। মেহরাব নিজের হাত শক্ত করে নেয়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে বলে ,
“এই মেয়েকে আমি উপযুক্ত শাস্তি দেবোই। এর এত বড় সাহস যে, আমার গায়ে হাত তোলে, আমার মুখে থুতু ছেটায়। এ যা অপরাধ করেছে তার জন্য মৃত্যুর শাস্তি যথেষ্ট নয়। বরঞ্চ আরো বড় কোন শাস্তি ডিজার্ভ করে সে। যেই শাস্তি আমি ওকে দিয়েই ছাড়ব।”
মেহরাব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখতে লাগল। দশ মিনিট অতিবাহিত হতে না হতেই কুদ্দুসরা হাজির হলো। সাথে একজন ডাক্তারও এনেছে। কুদ্দুস এসেই প্রসন্নচিত্তে বলল,
“এই যে ডাক্তার নিয়ে এসেছি বস। একটু দূরের একটা হাসপাতাল থেকে ধরে এনেছি। প্রথমে তো আসতেই চাইছিল না। পরে মাথায় বন্দু+ক ধরতেই রাজি হয়ে গেল।”
মেহরাব চোখ পাকিয়ে বলল,
“এনাকে বল ঐ মেয়েটার চিকিৎসা করতে।”
মুসকান ইতিমধ্যেই নকশির আঘাতের স্থানে জীবাণুনাশক লাগিয়ে সেখানে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। ডাক্তার এগিয়ে এসে সেই ব্যান্ডেজ খুলতে চাইলে নকশি প্রতিবাদ করে বলে,
“চলে যান আপনি। আমার কারো দয়া লাগবে না। জু* মে*রে গরুদান হচ্ছে।”
ডাক্তার অসহায় চোখে মেহরাবের দিকে তাকাতেই সে ব*ন্দুক তাক করলো ডাক্তারের দিকে। অগত্যা তিনি বাধ্য হয়ে অনুনয়ের সুরে বললেন,
“প্লিজ কো অপারেট করুন। ঘরে আমার বউ বাচ্চা আছে। আপনি যদি কো অপারেট না করেন তাহলে এই লোকটা আমায় শে**ষ করে দেবে।”
মেহরাবের দিকে ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ডাক্তারকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো নকশি। ডাক্তার ক্ষতস্থান পর্যবেক্ষণ করে বলল,
“ওনাকে ইমিডিয়েলটি হসপিটালে নিতে হবে। নাহলে বড় ইনফেকশনের আশংকা আছে।”
নকশি প্রতিবাদী সুরে বলে,
“আমি ম*রে যাব তবু যাবো না কোথাও।”
নকশির এমন ত্যাড়া কথা শুনে মেহরাব অনেক বেশি রাগান্বিত হয়৷ এগিয়ে এসে জোরপূর্বক কোলে তুলে নেয় নকশিকে। গর্জে উঠে বলে,
“তুমি যাবে না তো তোমার ঘাড় যাবে।”
বলেই হনহন করে হাটতে শুরু করল।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨