দৃষ্টির অলক্ষ্যে পর্ব-১৬+১৭

0
400

#দৃষ্টির_অলক্ষ্যে
#পর্বঃ১৬
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)

উপস্থিত প্রত্যেকটা মানুষ কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলো।আজ যে সবকিছু উন্মোচন কেউ ভাবতে পারেনি। তূবা স্থবির দৃষ্টিতে চেয়ে নিজের বান্ধবীর দিকে। হুমায়রা যে এতো সহজে স্বীকার করবে সবকিছু তার কল্পনাতীত ছিলো। নিস্তেজ, নির্জীব স্বরে প্রশ্ন করল,

‘কি এমন ক্ষ’তি করেছি আমি তোর? যে তুই আমার জীবনটা দূর্বিষহ করে তুললি? অগোচরে আমার পিঠে একের পর এক ছু’ড়ির আ’ঘা’ত করেই গেলি?’

নিজের চুল টেনে ধরলো হুমায়রা। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুকণা। মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো সে।

‘কি করিসনি সেটা বল? এক এক করে আমার সব জায়গা তুই ছিনিয়ে নিয়েছিস। স্কুল, কলেজ সব জায়গায় আমার দাপট চলতো। প্রতিটা ক্লাসে আমি ফার্স্ট থাকতাম। স্কুল কলেজের প্রতিটা অনুষ্ঠানে টিচার সবার আগে আমাকে ডাকতো। ভার্সিটি আসার পর সব বদলে গেলো। ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক ফেস্টিভ্যালে টিচাররা তোকে ডাকতো। টপের ভেতরে তুই থাকতি। অসহ্য লাগতো আমার তোকে। সেজন্য তোদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ি। পড়ার সময় তোকে এটা সেটা বলে মনযোগ ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করতাম।’

‘টপে আমি ব্যতীত আরো অনেকে থাকতো। তাহলে টার্গেটটা কেন আমিই হলাম?’

তূবার প্রশ্নে বিষন্ন হাসলো হুমায়রা। ফয়সালের দিকে নেত্রপাত করলো। সেই দৃষ্টিতে রয়েছে না পাওয়ার আক্ষেপ, কষ্ট আর বেদনা।

‘তুই টার্গেট হওয়ার একটাই কারন। ফয়সাল ভাই। এই মানুষটাকে আমি একটু একটু করে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। উনি যেদিন প্রথম তামান্নাকে ড্রপ করার জন্য ভার্সিটি এসেছিলেন সেদিনই আমার উনাকে বেশ ভালো লাগে। ধীরে ধীরে এই ভালো লাগা ভালোবাসাতে রূপ নেয়। এরপর তামান্না আশেপাশে থাকতাম। জানার চেষ্টা করতাম ওরা কেমন মেয়ে পছন্দ করে। ওর ভাইয়ের কি কি পছন্দ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এখানেও বিধিবাম। তুই মাঝখানে চলে এলি। তামান্না উঠে পড়ে লাগল তোকে ভাইয়ের বউ করার জন্য। আমি কত ভাবে বুঝিয়েছি আমি ওর ভাইকে পছন্দ করি ও বুঝলই না। যেদিন তোদের বিয়ে হয় আমি সু’ই’সা’ই’ড করার চেষ্টাও করেছি। কিন্তু সাহস হয়নি। বার বার মনে হয়েছে তুই আমার শত্রু। এক এক করে তুই আমার সকল জায়গা নিয়ে নিয়েছিস। তোকে কিছুতেই সুখী হতে দেওয়া যাবে না। তারপর প্ল্যান করে আমি এসব করি। একজন গুপ্তচর লাগাই তোর পিছনে। তোর সার্বক্ষণিক কর্মকাণ্ডের খোঁজ খবর দেওয়ার জন্য। তোকে কোনো পুরুষের সংস্পর্শে দেখলে রংচং মেখে ভয়েস চেঞ্জ করে ফয়সাল ভাই এর কাছে উপস্থাপন করতাম।’

কথা শেষ করে দম নিলো হুমায়রা।ঠিক তখনই তার গালে সপাটে চড় বসিয়ে দিলেন রাশেদা খাতুন। উনার চোখ দিয়ে যেন অ’গ্নি ঝরছে।

‘তোমার মতো সন্তান যে মা জন্ম দিয়েছে তার মতো পোড়া কপালি আর কেউ নাই। আঁতুড় ঘরে তোমাকে মে’রে ফেলা উচিৎ ছিলো। যে একজন মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সংসার নষ্ট করে, একটা সুখের সংসারের শান্তি শেষ করে। সেই মেয়ে আমার সন্তান হলে গলা টি’পে মেরে ফেলতাম।মা হয়ে ছেলেকে করুণ অবস্থা দেখেছি শুধু তোমার কারনে।’

গালে হাত দিয়ে অশ্রুসিক্ত লোচনে রাশেদা খাতুনের পানে চেয়ে রইলো হুমায়রা।

‘তোমাকে যে নিজের আরেকটা মেয়ে মনে করতাম তারই প্রতিদান বুঝি দিলে?’

মনোয়ারা বেগমের কথায় মাথা নত করে ফেলে সে।

‘প্রথম থেকেই আপনাকে আমার পছন্দ ছিলো না। আপনার হাবভাব কেমন যেন ছিলো। আপনি আমার স্ত্রী সম্পর্কে যেসব বানোয়াট কথা বলেছেন তা যদি কোনো ছেলে বলতো তাহলে তাকে কি করতাম নিজেও জানি না। মা বাবা আমাকে আদব কায়দা শিখিয়েছ। মেয়েদের গায়ে হাত তু’ল’তে নিষেধ করেছে।’

তূবা বড় বড় কদম ফেলে মিলনের বউয়ের সম্মুখে এসে দাঁড়াল। তার দু’টো হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।

‘আপনার কাছে আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব ভাবি। বড়সড় সাহায্যটা আপনিই করেছেন। এসব কথা বাহিরের কাউকে বলা যায় না। আপনাকে এখানে উপস্থিত রাখার একটাই কারন কখনো যেন আমাকে আর মিলন ভাইকে নিয়ে আপনার মনে অবিশ্বাসের জাল বুনা হয়। প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয় সবাই পায়। আমি আমার স্বামীকে ভীষণ ভালোবাসি।’

মাঝে ফোড়ন কা’টে হুমায়রা।

‘আমি কি সবই মিথ্যে বলেছি? তুই আবাসিক হোটেলে যাসনি?’

রাগে কপালের শিরা ফুলে উঠে ফয়সালের। চক্ষু জোড়া দিয়ে যেন অ’গ্নি বর্ষিত হচ্ছে। সেই অ’গ্নি শিখা ভ’স্ম করে দিবে হুমায়রা কে। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে বড় বড় পা ফেলে হুমায়রার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। দু’হাতে গলা চি’পে ধরলো হুমায়রার। দ’ম আঁটকে এলো হুমায়রার। নিঃশ্বাস নিতে না পেরে কুঁকাতে শুরু করে। ফয়সালের হাত থেকে বাঁচার আপ্রাণ প্রয়াস চালাচ্ছে। ফয়সাল দাঁতে দাঁত পিষে বলে,

‘এতোকিছু করলে আমি তূবাকে ছেড়ে দিবো? ভাবলি কি করে? আমি সারাজীবন নিঃসঙ্গ থাকলেও অন্য কাউকে গ্রহণ করতাম না। কষ্ট হচ্ছে না নিঃশ্বাস নিতে? আমারও এতোদিন হয়েছে। নিজের রুমটায় যখন বউ আর মেয়েকে না দেখতাম নিঃশ্বাস ব’ন্ধ হয়ে আসতো আমার। মানসিক যন্ত্রণায় জর্জরিত হয়েছি আমি।’

‘ফয়সাল ভাই এসব নর্দমার কীট মে’রে কেন হাত নোংরা করবেন?’

‘বাঁধা দিও না তাহমিদ আজ একে মে’রে’ই ফেলবো।’

কেউ ছাড়াতে পারছে না ফয়সালকে। তূবা তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসলো তার কাছে। ধমকে বলল,

‘ফয়সাল ছাড়ো ওকে।ও ম’রে যাবে। তুমি ওর কথা বিশ্বাস করো কেন?কেউ কিছু বললে যাচাই না করে তুমি তার কথা বিশ্বাস করে নিবে?’

তূবার কথা তোয়াক্কা না করে ফয়সাল আরো চে’পে ধরলো হুমায়রার গলা। অবস্থা বেগতিক দেখে আশেপাশের মানুষ গুলোকে পরোয়া করলো না তূবা। লাজ শরম একপাশে ফয়সালকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো নিবিড়ভাবে। তূবার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে আগে মেয়েটাকে বাঁ’চা’তে হবে। না হলে বড় কোনো অঘটন ঘটে যাবে।

তূবার শক্ত আলিঙ্গনে হাত আলগা হয়ে এলো ফয়সালের। তূবার স্পর্শে শীতল হয়ে এলো মন মস্তিষ্ক। রাগ,ক্রোধ, রোষ যেন এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো। শিরদাঁড়া বেয়ে নিম্নমুখে প্রবাহিত হলো তরল স্রোত। সকল শক্তি বল যেন একটু একটু করে নিঃশেষ হতে লাগল। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে। সবাই যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

নিজের গলায় হাত দিয়ে খুঁক খুঁক করে কাশছে হুমায়রা। এতোক্ষণে যেন দেহে প্রান ফিরে পেলো। চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে গেছে। তামান্না এক গ্লাস পানি এনে দিলো হুমায়রাকে।

ফয়সালকে জড়িয়ে ধরার পর তার গায়ে দেওয়ার পারফিউমের ঘ্রান তূবার নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করতেই বড্ড বিদঘুটে ঠেকল। নাড়িভুড়ি উল্টে এলো তার। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েও পারলো না। হড়হড় করে ফয়সালের গাঁয়ের উপরই বমি করে দিলো। হতবিহ্বল, অবরুদ্ধ হয়ে গেলো ফয়সাল সহ সবাই। এইতো ভালো ছিলো এখন আবার কি হলো?

আতংকিত, ভীতিগ্রস্ত কন্ঠে ফয়সাল বলল,

‘তুমি বমি করো আমার সমস্যা নেই।’

নিজের থেকে ফয়সালকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল তূবা। কন্ঠনালী দিয়ে কোনে শব্দ বের হচ্ছে না তার। কথা বলতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার। মুহূর্তেই তার পুরো শরীর একেবারে নেতিয়ে গেলো। নিভু নিভু করছে দু-চোখ। দূর্বল কন্ঠে বলল,

‘ফয়সাল ছাড়ো আমাকে। অসহ্য লাগছে আমার।’

তূবার জেদ ভেবে আরো একটু নিজের সাথে চেপে ধরলো ফয়সাল। আবারও বমি করে দিলো সে।

‘ফয়সাল পাগলামি করো না। আমার হাত ছাড়ো। তোমার পারফিউমের বিচ্ছিরি গন্ধটা আমি আর নিতে পারতেছি না। আমার অসহ্য লাগছে।’

হাতের বাঁধন ঢিলে হয়ে এলো ফয়সালের। ছাড়া পেতেই সেখানেই বসে পড়লো সে। মনোয়ারা বেগম আর রাশেদা খাতুন সমানে তূবার পিঠ মালিশ করতে লাগলেন।

একটু স্বাভাবিক হতেই সোফায় গিয়ে বসল সে। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।

মনোয়ারা বেগম জায়গাটা পরিষ্কার করে এসে মেয়ের পাশে বসলেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই মিলন আর তার স্ত্রী চলে গেলো। কারন একটু একটু করে রাত বাড়ছে। ফয়সাল কিছুটা দূরত্বে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। রুমের এককোনায় এখনো হুমায়রা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। চোখ মেলে একবার তাকাল তূবা। পুনরায় আবার চোখ বন্ধ করে নিলো। তাহমিদকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘তাহমিদ হুমায়রা কে ওর বাসায় পৌঁছে দিয়ে আয়।’

বিস্ফোরিত চোখে তাকায় হুমায়রা। স্থির চোখে চেয়ে রইলো তূবার দিকে। তাহমিদ আমতাআমতা করে বলল,

‘আমি?’

‘হ্যা, তুই।আর হুমায়রা, তোকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। তুই আমার বান্ধবী বোন সবকিছু। হয়তো তোর কাছে আমি বা আমরা কিছু না হতে পারি। তবে তোকে নিজের একটা অংশ মনে করতাম। যাইহোক ভালো থাকিস সব সময়। বলেছিলাম আজ সবকিছুর ইতি ঘটবে।অগোচরে থাকা সবকিছু সম্মুখে আসবে। সবকিছু সম্মুখে তো চলে এসেছে এখন ইতি ঘটবে বন্ধুত্বের। যে বন্ধুত্বের স্থায়িত্ব ছিলো বহু বছর। তোর সাথে যোগাযোগ থাকলে আমার পূর্বের কষ্ট গুলো মনে পড়ে যাবে।’

তামান্না কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই তূবা পুনশ্চ বলল,

‘আর কিছু বলার দরকার নেই তামান্না। বুদ্ধিমানদের বেশি কিছু বলে বুঝাতে হয় না।এরা অল্প কথায় বুঝে যায়। আই থিংক, হুমায়রা বুদ্ধিমতি।’

তাহমিদ হুমায়রার কাছে গিয়ে বলল,

‘চলো।’

হুমায়রা এক পলক তূবা আর তামান্নার দিকে তাকালো। তারপর মাথানিচু করে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো।

‘তামান্না তোর ভাইকে বল পরিষ্কার হয়ে নিতে। আর এমন বাজে পারফিউম যেন আর ব্যবহার না করে।’

ফয়সাল আহাম্মকের ন্যায় তূবার দিকে তাকিয়ে। চোয়াল ঝুলে গেলো তার।

‘এটা তো তুমিই আমাকে গিফট করেছিলে।’

‘তামান্না তোর ভাইকে বল বেশি কথা না বলে যেন লম্বা একটা শাওয়ার নেয়।’

কিছু না বলে ফয়সাল চলে গেলো তাহমিদের রুমে। ফয়সালের পিছু পিছু সোহেলও চলে গেলো। রাশেদা খাতুন তূবার একটা হাত ধরে বলল,

‘আমার দিকে তাকা তো।’

চোল মেলে তাকায় তূবা।

‘তোর কি গতমাসে হয়েছে?’

শ্বাশুড়ির দিকে ভ্রু যুগল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো সে। মনোয়ারা বেগম কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে খুশিতে উনার চোখ দু’টো চকচক করে উঠলো। চোখ বন্ধ করে ভাবলো তূবা। অতঃপর এপাশ ওপাশ মাথা দুলিয়ে না বুঝালো। বয়সের ভাড়ে ভাঁজ পড়া অধর জোড়া প্রসারিত করে বললেন,

‘আমার অনুমান সত্যি হয়।’ কথাটা বলতেই উনার কাঁধে হাত রাখে মনোয়ারা বেগম।

‘তোমরা যাও আমার তূবার সাথে কিছু কথা আছে।’

‘কোনো বাড়তি কথার দরকার নাই সবাই ক্লান্ত ঘুমোতে যা।’

‘বেশি কথা বলো না তো। খুব বেশি প্রয়োজন তাই বলছি। আর মা ফারিয়ার পাশে আমার মেয়েও ঘুমোচ্ছে। নির্ঘাত এতোক্ষণে কাঁথা নোংরা করে ফেলেছে। একটু বদলে দিবে?’

মেয়েকে চোখ রাঙিয়ে চলে গেলেন রাশেদা খাতুন আর সাথে মনোয়ারা বেগমও।

‘হ্যা রে ভাইকে কি আরো শাস্তি দিবি?’

‘তোর ভাইয়ের তো সবে শাস্তি শুরু। আমি সব হিসাব কড়ায়গন্ডায় নিবো।’

তামান্না অসহায় ভঙ্গিতে বলল,

‘বেচারাকে আর শাস্তি দিসনা। এই কয়দিনে একেবারে নাজেহাল অবস্থা হয়েছে। আমাকে ক্ষনে ক্ষনে ফোন করে জিজ্ঞেস করতো, ‘ তূবা কি আমাকে সত্যিই ছেড়ে দিবে? আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তুই ওকে বুঝা না।’ আমার না সত্যি ভাইয়ের জন্য মায়া হতো।’

‘শাস্তি কেন দিবো না বল? তার আরো আগে উচিৎ ছিলো না আসল কার্লপ্রিট খুঁজে বের করা?’

‘আচ্ছা যা হওয়ার হয়ে গেছে। তুই রুমে যা আমি ভাইকে পাঠাচ্ছি। তবে আগেই বলে রাখছি তুই আর আমি আজ একসাথে থাকবো। কতদিন পরে সুযোগ হল। পুরুষের দল একসাথে থাকবে।’

___________________

কপালে হাত ঠেকিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে তূবা। বড্ড ক্লান্ত লাগছে তার। ফারিয়া আর তামান্নার মেয়ে পুতুল নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। কপাল থেকে হাত সরিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসলো সে। এই সময়টাই বেস্ট ছিলো। নেই কোনো চিন্তা নেই কোনো টেনশন। কারো প্রতি কোনো অভিযোগ নেই।

তূবার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াল ফয়সাল। তূবার দিকে স্থির মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কয়েকঘন্টায় যেন তূবার মুখটা শুকিয়ে এতোটুকু হয়ে গেছে। কয়েক পা সামনে এগিয়ে যেতেই হাত দিয়ে থামিয়ে দেয় তাকে। তূবার বাঁধা প্রয়োগে হতবুদ্ধি হয়ে গেলো সে।

#চলবে

#দৃষ্টির_অলক্ষ্যে
#পর্বঃ১৭
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)

হতভম্ব হয়ে কিয়ৎকাল চেয়ে থেকে ক্ষীন স্বরে বলল,

‘অনেক তো শাস্তি দিলে আবার কি?’ তারপর বুকের বাপাশে শাহাদাৎ আঙুল দিয়ে ইশারা করে পুনর্বার বলল,

‘তোমার শূন্যতায় এখানটায় পুড়ে তো। প্রচন্ড কষ্ট হয়। যেই কষ্টের ব্যাখ্যা কখনো করা যাবে না।’

আরো একটু এগিয়ে আসতেই চোখ রাঙানি দিলো তূবা।

‘খবরদার আর এক ইঞ্চি কাছেও আসবে না তুমি। খুব খারাপ হয়ে যাবে। তোমার শাস্তি তো তোমাকে এখনও দিলামই না।এখনো শুরু হয়নি তোমার শাস্তি।’

ফয়সাল অসহায় ভঙ্গিতে বলল,

‘একটা মাস কি কম সময়? আর কত শাস্তি দিবে? আমার চোখ দু’টোর দিকে একটা বার তাকাও।অনিদ্রার সাক্ষী এই চোখ দু’টো। আর পুড়িও না তূবা আল্লাহর দোহাই লাগে।’

ফয়সালের দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে হাসলো তূবা। একটা সময় পর হাসি মিলিয়ে গিয়ে অক্ষিকোটরে জমায়েত হতে লাগলো অশ্রুকণা।

‘এক মাস আর পাঁচ বছর কি সমান হলো? হয়নি তো জনাব। একটাবার তুমি সব খোলে বলতে।শুধু একটাবার। তাহলে আজ এতোকিছু হতোই না। একমাসে নাজেহাল হয়ে গেলে? আর আমি? আমি যে গত পাঁচটা বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিনিয়ত তোমার দহনে পুড়েছি। সেই বেলা? আমি তো জানতামও না আমার অপরাধ কি। কিন্তু তুমি তো জানো। শেষবার তুমি কি বলেছিলে? ভুলে যাওনি নিশ্চয়ই? একটা বার আমার জায়গায় নিজেকে দাঁড় করাও তো। কি করতে তুমি? যখন তোমার মর্জি হতো কাছে টেনে নিতে। তোমার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে থাকতাম।সবকিছু সামলে একটু সময় বের করে সাজগোজ করে তোমার জন্য বসে থাকলেও একটাবার আমার দিকে তাকাতে না। হয়তো আমাকে ভালোবাসো না। আর বিশ্বাস তো কখনো করোইনি। তাই তো আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছে,,,,,,,

ফয়সাল একছুটে এসে তূবার মুখ চেপে ধরলো। কম্পিত কণ্ঠে বলল,

‘যাই শাস্তি দাও ছেড়ে যাওয়ার কথা বলো না। আমার তোমাদের লাগবে। তোমাদেরকেই লাগবে।’

ফয়সালের হাতটা ঝাড়া দিয়ে দূরে সরালো সে।

‘দূরে যাও তো দূরে যাও। একেবারে আমার কাছে আসবে না।’

ফয়সাল অপলক তাকিয়ে রইলো তূবার দিকে। তারপর দরজার কাছে গিয়ে ভালো করে আঁটকে নিজের কান ধরলো ফয়সাল। স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের মতো ওঠবস করতে লাগলো সে। ফয়সালের রাগ ভাঙানোর অভিনব কৌশল গোচরীভূত হতেই খুব হাসি পেলো তূবার। তবে সেই হাসি অন্তরেই মাঝেই সীমাবদ্ধ রইলো। মোটেও হাসা যাবে না। এই যে তাকে অবিশ্বাস করলো তার শাস্তি তো পেতেই হবে। ভ্রু উঁচিয়ে পুরো মুখ জুড়ে গাম্ভীর্যের রেখা টানল সে। যেন সামনের মানুষটা ওঠবস করে ম’রে গেলেও তার কিছু যায় আসে না।

ক্লান্ত হয়ে তূবার মুখোমুখি হয়ে মেঝেতে বসে পড়লো ফয়সাল। নিজের মাথাটা রাখলো তূবার কোলে। তূবার একটা হাত নিজের মাথায় রেখে কাতর স্বরে বলল,

‘একটু হাত বুলিয়ে দাও না।’

ফয়সালের কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না তূবা। স্থির হয়ে রইলো। ফয়সাল ধরা গলায় বলে,

‘দাও না একটু হাত বুলিয়ে।’৷ তূবা আলতো করে ফয়সালের মাথায় হাত বুলাতে লাগল।

‘তুমি জানো আমি কত রাত শান্তিতে ঘুমোতে পারিনা? নিজের ভুলে সবকিছু হারানোর যন্ত্রণা এই পৃথিবীতে আর দুটো হয় না। নিদারুণ সেই যন্ত্রণা। আমি তোমাকে ভালোবাসি তূবা। তোমরা বার বার বলো না কেন সব বলিনি। আমার মনে হতো যদি সব সত্যি হয় আর তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও, তখন? ফারিয়া আমার কাছে আমার দুনিয়া। ও যখন আমাকে বাবা বলে ডাকে তখন আমার কাছে দুনিয়ার সবকিছু তুচ্ছ লাগে।’

তূবার কোমর প্যাঁচিয়ে ধরলো সে।

‘আজ আমি শান্তির ঘুম দিবো।’

ঘুমের মাঝে ঠোঁট উল্টে কান্না শুরু করলো তামান্নার মেয়ে। মাথা সামান্য উঁচু করে তার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো ফয়সাল।

বাঁকা হাসলো তূবা। রগড় গলায় বলল,

‘তা তো হচ্ছে না জনাব। আজ দুই বান্ধবী একসাথে ঘুমাবো।আর আপনারা পুরুষ পার্টি একসাথে। তবে আপনি কবে নাগাদ শান্তির ঘুম দিতে পারবেন তা বলতে পারছি না।কারন আপনার শাস্তির মেয়াদকাল শেষ হয়নি এখনো। কবে শেষ হবে তাও বলতে পারছি না। আমি বাড়িতে থাকবো সাথে আমার শ্রদ্ধাভাজন শ্বাশুড়ি মাও আমার সাথে এই বাড়িতে থাকবে। আপনি একা একা ওই বাড়িতে থাকবেন।’

‘আমার সকল সহায় সম্পদ, হিরে, রত্ন এইখানে রেখে ওই বাসায় থাকবো? এতো ঠেকা পড়েনি। আমিও আমার সব জামা কাপড় নিয়ে এখানে শিফট করবো।’

তূবা মুখ ভেঙচিয়ে বলে,

‘সুখে থাকতে ভূতে কি’লা’য়। এখন খাও ভূতের কি’ল।এই বাড়িতে তোমার জায়গা নেই।’

‘জেলের কয়েদিকেও তো কোনো না কোনো উপলক্ষে সাজা মাফ করে দেওয়া হয়। আমাকেও আমার মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে সকল শাস্তি মওকুফ করো।’

কোনো ভাবান্তর হলো না তূবার।

‘আচ্ছা ঠিক আছে মাফ যেহেতু পাবো না সান্ত্বনা হিসেবে কিছু একটা দাও।পরের টা হয় পরে দেখা যাবে।’

‘তুমি যাবে?’

‘যাবো না। আগে কিছু একটা দাও। দেখ পুতুল কাঁদছে। তোমার একটু মায়া হচ্ছে না?’

পুতুলের মতো বাচ্চা মেয়েটার এক পলক তাকালো। মৃদু শব্দে কাদঁছে। ঘন ঘন কয়েক বার শ্বাস ফেলে ফয়সালের ঘর্মাক্ত কপালের চুল গুলো সরিয়ে সেই ভাঁজে নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়াল।

ফয়সালের শুষ্ক ওষ্ঠে ফোটল তৃপ্তির হাসির। ফয়সালের ঠোঁটে হাসি দেখে রাশভারি স্বরে তূবা বলল,

‘এখানে হাসির কিছু হয়নি। ভালোবেসে আমি চুমু টুমু দেয়নি। এটা আমি আমার সন্তানের বাবা
কে দিয়েছি। সে ছিল বলে আমার কলিজার টুকরোকে পেয়েছি।’

ঠোঁটের হাসি বজায় রেখে উঠে দাঁড়ায় ফয়সাল। তূবার দু’গাল আলতো করে ধরে অধরে অধর ছুঁয়ে দিলো। হকচকিয়ে গেল তূবা। এটা সে কল্পনাও করেনি।

‘ভালোবাসাটা সন্তানের বাবার জন্য থাকলেই চলবে।’

দরজার ছিটকিনি খুলে বাইরে চলে গেলো সে। কিন্তু হতবিহ্বল হয়ে বসে রইলো তূবা।

_______________________

সকাল এগারোটা পয়তাল্লিশ। মাত্রই ট্রেন থেকে নামল নাযীফাহ। কোলাহলপূর্ণ স্টেশন। কেউ নামছে ট্রেন থেকে আবার কেউ ওঠছে। হকাররা এটা ওটা নিয়ে প্রতিটা জানালার কাছে গিয়ে সবাইকে জিজ্ঞেস করছে কিছু নিবে কিনা। বহুদিন পরে নিজের জেলায় পা রেখে লম্বা শ্বাস টেনে নিলো ভেতরে। কতদিন পরে আসলো। চোখ বুলিয়ে পুরো স্টেশন দেখল নাযীফাহ। ভিন্নতা এসেছে বেশ। রোদের প্রখরতা বাড়ছে ক্ষনে ক্ষনে। সেখানে বিলম্ব না করে নাযীফাহ পা বাড়ালো সিএনজি স্ট্যান্ডের দিকে। বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় আরো এক থেকে দেড় ঘন্টা। অপ্রত্যাশিত ভাবে বাবা মা তাকে দেখলে নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে?

সিএনজির ঝাঁকি ঝুঁকি খেয়ে চিরপরিচিত বাজারে এসে পা রাখল নাযীফাহ। বাজারের ডানপাশের পথটার দিকে তাকালো। এই পথে সে স্কুল যেত। সরু পথ আর সরু নেই বেশ চওড়া হয়েছে। একটা গাড়ি অনায়াসে আসা যাওয়া করতে পারবে। বাজারের দোকানপাটেও বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আগে গুটি কয়েক দোকান ছিলো আর এখন পুরোই জমজমাট। পুরো বাজারটা এক পলক দেখল সে। বেশির ভাগ দোকানই বন্ধ। দুপুর বলে হয়তো সবাই বাড়ি চলে গেছে। হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ মাত্র বাজারে।

মধ্য বাজার পেরিয়ে যখন নিজের বাড়ি যাওয়ার কাঁচা রাস্তাটায় পা রাখল তখন কেউ উচ্চশব্দে বলে উঠলো,

‘নাযুপা না তুমি? কতদিন পর গ্রামে ফিরলা। কেমন আছো আপা?’

সামনের মানুষটার দিকে নেত্রপাত করল নাযীফাহ। পনেরো কি ষোলো বছর বয়সী এক কিশোর। গালভরে মাত্রই দাড়ি ওঠা শুরু হয়েছে। নাযীফাহ একগাল হেসে বলল,

‘হাফিজ?’

হাফিজের চোখ দুটো যেন খুশিতে চকচক করে উঠলো।

‘আমারে চিনছো আপা?’

শব্দহীন হেসে মাথা দুলায় নাযীফাহ। হাফিজ নাযীফাহ’র হাত থেকে ট্রলি টেনে নিয়ে নেয়।

‘ঢাকা থাইক্কা আইছো আপা। এইডা আমিই লইয়া যাই।’

জোরাজোরি করেও নাযীফাহ ওর থেকে আর ট্রলি নিতে পারেনি।

‘জানো আপা, আমি এইবার এসএসসি পরীক্ষা দিছি। তুমি বাড়ি থাকতে তো তোমার কাছে অংক পড়তাম। তোমার মতো কেউ পড়ায় না আপা। তুমি কত সুন্দর কইরা বুঝাইতা।’

‘তোকে না আগে বলেছি এভাবে কথা বলবি না। শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবি।’

‘গেরামের টান গো আপা।’

কথা বলতে বলতে বাড়ির উঠানে পা রাখল নাযীফাহ।

‘ও চাচি, দেহো কেডা আইছে।’

হাফিজের ডাকে ঘর থেকে বের হয়ে আসে ফাহমিদা বেগম। মেয়েকে দেখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শক্ত করে দরজায় ধরেন তিনি।এতোগুলো দিন পরে মেয়েকে কেঁদেই ফেলেছেন। বড় বড় পা ফেলে মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় নাযীফাহ। মেয়েকে হাতের কাছে পেয়ে সারা মুখে হাত বুলাতে লাগলেন। কপালে সুদীর্ঘ এক চুমু দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন তিনি।

_________________

বাবার একহাত জড়িয়ে ধরে বসে আছে নাযীফাহ। খালেদ মোশাররফও পরম মমতায় আগলে রেখেছেন মেয়েকে। আজ যেন মনটা শান্ত হলো উনার। সেই কবে মেয়েকে ঢাকা গিয়ে দেখে এসেছিল। আর আজ বহুদিন পর দেখল। পুরো গ্রাম হয়ে গেছে নাযীফাহ বাড়ি এসেছে। এক এক করে অর্ধেক গ্রামের মহিলারা দেখে গেছে তাকে। বড় অস্বস্তি হচ্ছিল তার। সে কি নতুন বউ নাকি জেলখানার কয়েদি যে তাকে এভাবে জনে জনে এসে দেখে যেতে হবে? মাথার উপর সাঁই সাঁই করে পাখা ঘুরছে। মৃদুস্বরে নাযীফাহ বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল

‘ফাহিম কোথাও বাবা? সবাই তো এসে দেখে গেল আমাকে।তোমার ছেলেকে খবর পায়নি?’

‘কলেজে তো ছুটি হওয়ার কথা। কোথায় কি কি করছে আল্লাহ জানে।’

ফাহমিদা বেগম এসে মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন।

‘ গোসল করে আয় ভাত খেয়ে নিবি।’

মায়ের পেট জড়িয়ে ধরলো সে।আহ্লাদী স্বরে বলল,

‘ডাল ভর্তা বানিয়ে দিবে মা? ঢাকায় কতবার ট্রাই করছি কিন্তু তোমার মতো হয় না মা। কিছু একটার কমতি থেকে যায়।’

‘তুই গোসল করে আয় আমি বানাচ্ছি।’

গোসল করে এসে নাযীফাহ দেখল ফাহমিদা বেগম সবকিছু রেডি করে বসে আছে। মাথা থেকে তোয়ালেটা নামিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।

‘তুমি খাইয়ে দাও মা।’

নৈঃশব্দ্যে ফাহমিদা বেগম মেয়েকে খাইয়ে দিতে লাগলেন। খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই এটো প্লেটটা নিয়ে ফাহমিদা বেগম কলপাড়ের দিকে পা বাড়ায়। আঁচল টেনে ধরে নাযীফাহ। চোখ দু’টো নয়নবারিতে টইটম্বুর। ফাহমিদা বেগম একটু কাছে আসতেই উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নাযীফাহ। এক নাগাড়ে ফুঁপিয়ে চলেছে সে। ফাহমিদা বেগমও বেগমও কাঁদছেন। কিন্তু তার কান্নায় কোনো শব্দ নেই।

‘প্রকৃতি আমার সাথে এমন কেন করছে মা?’

হন্তদন্ত হয়ে কেউ ঘরে প্রবেশ করলো। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

‘কেউ আমার নাযু মা কই?’

কন্ঠস্বরের নিনাদ কর্ণগোচর হতেই মুখে হাসি ফুটল নাযীফাহ’র। আনমনে বলে উঠলে, ‘বকুল ফুফু?’

___________________

আনমনে একের পর এক ফাইলের পাতা উল্টাচ্ছে তাহমিদ। কিছুই ভালো লাগছে না তার। আজ অফিস এসে শুনল নাযীফাহ এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছে।

‘স্যার, এভাবে অপেক্ষা না করে সোজাসাপটা বলে দিলেই তো পারেন।’

তনয়ার কথায় সম্বিত ফিরে পেলো তাহমিদ। মলিন হেসে জবাব দেয়,

‘এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই যে সোজাসাপটা বলে দিবো। আগে পরিস্থিতি কে অনুকূলে আনি তারপর সব বলবো সব। বায় দ্য ওয়ে, তুমি কি জানো ও কি কারনে গ্রামে গেছে?’

এপাশ ওপাশ মাথা দুলায় সে।

‘জিজ্ঞেস করেছিলাম। বেশি কিছু বলেনি শুধু বলেছে খুব দরকার যাওয়া।’

কপালে চিন্তার বলিরেখা ভাসমান হয় তাহমিদের।

‘জানো খুব টেনশন হচ্ছে। যদি বিয়ে সংক্রান্ত কিছু হয়,তখন?’

‘আপনি এক কাজ করেন, আপনি তো নতুন একটা সিম নিয়েছেন। ওই নাম্বার থেকে একটা মেসেজ করেন। দেখেন কি রিপ্লাই আসে।’

‘ভালো কথা মনে করেছো তো।আমি এখনি মেসেজ দিচ্ছি। তুমি কিন্তু ইনটেলিজেন্স আছো। সেদিন সামান্য লুকিং গ্লাসে বার বার নাযীফাহকে দেখেছি বলে কিভাবে আমার পেট থেকে কথা আদায় করে নিলে।’

মুচকি হেসে সেখান থেকে প্রস্থান করলো তনয়া।

তাহমিদ মোবাইলের কভার খুলল। কিন্তু সেখানে সিমটা নেই। আঁতকে উঠল সে।এখানেই তো রেখেছিলো গেলো কোথায়? রুমের মধ্যে কোথাও রাখেনি তো। নাকি হারিয়ে গেল? মনটা খচখচ শুরু করলো তার।কপালে হাত ঠেকিয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো। অনেকদিন যে সে ওই নাম্বার থেকে কোনো ক্ষুদে বার্তা পাঠায় না নাযীফাহ কি ভুলে গেছে নাকি সেও খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছে?

#চলবে।

বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।