দোটানা ২ পর্ব-২৭+২৮

0
507

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২৭

আরোহী মনে মনে অনেক যুক্তি করে নিয়েছে।

আমি বুঝে গেছি সোজা আঙুলে এই ঘি আর উঠবে না।এই আরুশিকে এখান থেকে ফুটাতে হলে বড় কিছু করতে হবে।আর আমাকে এবার কি করা উচিত তা আমি ভালোয় বুঝে গেছি।

আরুশি দরজা লাগিয়ে মুখ চেঁপে কান্না করতে শুরু করলো।আয়ান যেনো আন্দাজ করতে পারছে আরুশির ব্যাথা,যা ছিড়ে ফেলছে আয়ানের মন।আরুশির চোখের জল অস্থির করে রেখেছে ওকে।ওখানে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকবার আরুশির দরজায় ডেকেছে,আরুশি শুধু চলে যেতেই বলেছে ওকে তাই ব্যার্থ হয়ে চলে আসে সে।বর্তমানে বিছানায় চিত হয়ে পরে আছে আয়ান।নিজের মনের সাথে লড়াই করছে।

এ কি হলো আমার?কেনো আজ আমি আরুশির জবাব দিতে পারলাম না!কিন্তু কি জবাব দিতাম আমি ওকে,আমি তো নিজেই সে জবাব জানার লড়াই করছি নিজের মনের সাথে।আমি আরুশিকে নিয়ে অদ্ভুত এক টান অনুভব করি মনের ভিতর।যার নাম একমাত্র ভালোবাসা ব্যতীত আর অন্য কিছু না।তবে আমি কি করে অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারি, আমি তো আরুশিকে ভালোবাসি।আমি কি করে ওর জায়গা আরুশিকে দিতে পারি!কি করে আরুশিকে ভালোবাসতে পারি!

যেখানে আয়ান মনের সাথে লড়াইয়ে ব্যস্ত সেখানে সায়ান তাতে জয় লাভ করে নিয়েছে।

আমি আরুশিতে আমাদের ছুট্টো আরুশিকে খুঁজে পেয়েছি।আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।যাকে বলে ট্রু লাভ।ইয়েস আই লাভ আরুশি আর আমি ওকে কারো হতে দিবো না ও শুধু আমার আর আমি ওকে নিজের করেই নিবো।

আরুশি মায়ের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছে।

এখানে আসা আজ আমার সার্থক মনে হচ্ছে মা।আমি যে সফলতার অনেক কাছে চলে এসেছি।তবে সেই সফলতা পেতে গিয়ে যে আমার দ্বারা এমন কিছু হয়ে যাবে তা আমি কখনো ভাবি নি মা।এ আমি কি করে ফেললাম?পারবো কি এবার কিছু ঠিক করতে!তবে ঠিক করতে না পারলেও যে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।

পরদিন সকাল থেকেই আরুশি আয়ান সায়ানের থেকে নিজেকে দূর করে রাখছে।না তো ওদের সামনে পরছে আর না তো ওদের সাথে কথা বলছে।ওর এমন ব্যবহার আয়ান সায়ানের মনে বড্ড ক্ষত দান করছে।ওরা আরুশির সাথে নিজে থেকে কথা বলতে গেলেও আরুশি ওদের পাত্তা দেয় নি।ফলস্বরূপ দুজনই আশাহত হয়।বর্তমানে দুজনই মনে মনে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।

আর নয় আরুশি।আর পারছি না তোমার দূরত্ব সহ্য করতে।আজকেই আমার মনের সব কথা জানিয়ে তোমাকে নিজের করে নিবো।কারন আমি জানি তুমি আমাকে কখনোই ফিরিয়ে দিবে না।হোক না হোক তুমি এখনও আমায় ভালোবাসো,তুমি আমার ছিলে আর আমারই হয়ে থাকবে।কথাগুলো বলে সায়ান মুচকি হাসলো।

এদিকে আয়ান।
না আমি আর পারছি না আরুশির কাছ থেকে দূরে থাকতে।আমাকে এটা মানতেই হবে আমি আরুশিকে ভালোবেসে ফেলেছি।ওর প্রেমে জব্দ হয়েছি আমি।ওকে ছাড়া আমার আর কোনো গতি নেই।আর যতোটুকু জানি সায়ান ওকে আবারও নিজের প্রেমের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে।তবে ও যাই করুক আরুশিকে আমি হাত ছাড়া করতে পারবো না।ওকে আমি নিজের করে নিবোই।আরুশি শুধু আমার।

আরুশি রুমে বসে ছিলো তখনি সায়ান সেখানে প্রবেশ করলো।আরুশি জিজ্ঞেস করলো তাকে কটমট কন্ঠে।

তুমি এখানে কি করছো সায়ান।

আসলে তোমাকে বলার তো অনেক কথা আছে আরুশি তবে এখানে বলবো না।আজ আমি তোমাকে অনেক কিছু বলবো, নিজের মনের সকল অব্যক্ত অনুভুতি আজ আমি তোমায় ব্যক্ত করবো।কিন্তু নির্দিষ্ট জায়গায় আর নির্দিষ্ট সময়ে।এই নাও।

আরুশির হাতে একটা বাক্স ধরালো সায়ান।

এটা কি?আর তুমি কি সব বলতে চাও?এখানেই বলে ফেলো?

এখানে একটা শাড়ি আর কিছু মেচিং জুয়েলারি আছে,ওগুলা পরে রেডি থেকো সন্ধ্যায় তোমাকে নিয়ে একটা জায়গায় যাবো।আর সেখানেই তুমি তোমার যা জানার জেনে যাবে।

আমি তোমার সাথে কোথাও যাবো না সায়ান?

প্লিজ আরুশি মানা করো না। শেষ বারের মতো একটা সুযোগ চাই।আজকের সন্ধ্যাটা আমার নামে করে দাও আজ ব্যার্থ হলে আর কখনো তোমার কাছে কোনো সুযোগ চাইবো না আমি।প্রমিজ।

কিছুক্ষন চুপ থেকে অল্প ভাবার পর আরুশি বললো।

আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাবো তোমার সাথে।

সায়ান স্বাচ্ছন্দ্যের একটা হাসি হেসে চলে গেলো।

সন্ধ্যায় আরুশি রেডি হলো খুব সুন্দর করে, সায়ানও আরুশির শাড়ির রঙের সাথে মিলিয়ে বেগুনি রঙের একটা শার্ট পরলো,আরুশিকে অপলকে অনেকসময় দেখলো সায়ান, ওর দেওয়া শাড়িতে বেশ মানিয়েছে আরুশিকে।অতঃপর আরুশিকে নিয়ে চললো সপ্নীল এক গন্তব্যে।খুব সাজানো গোছানো একটা জায়গায় নিয়ে গেলো সায়ান আরুশিকে।চারিদিকটাই আরুশির পছন্দ অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। আশেপাশে যেখানেই আরুশির চোখ পরছে সেখানেই বেলুন দিয়ে বড় করে লিখা আই লাভ ইউ আরুশি।ওই লিখাগুলো দেখে আরুশির যতোটা অবাক হওয়ার কথা তার এক কোনও আরুশি হলো না বরং স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো সায়ানের দিকে।সায়ান এগিয়ে এসে আরুশির দুই হাত আলতো করে নিজের হাতে নিয়ে বলতে শুরু করলো।

আরুশি আমি জানি আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।অমানুষিক আচরন করেছি তোমার সাথে।আমি যা করেছি তা ক্ষমা করার যোগ্যও না।তারপরও ক্ষমা চাই আরুশি।ক্ষমা করে দাও আমায়।আমি যে সত্যিই অমানুষ ছিলাম।ভালো খারাপের পার্থক্য কখনো বুঝি নি কিন্তু যখন থেকে তুমি জীবনে আসলে কেমন জানি বদলাতে শুরু করলাম।নতুন আমিকে জানতে পারলাম তোমার সাথে থেকে।ভালোবাসা আসলে কি তা জানতে এবং বুঝতে পারলাম।ভালোবাসতে শিখে গেলাম।নিজের ভিতরে থাকা মানুষটার সাথে পরিচিত হলাম।তোমাকে পাশে পেয়ে জীবনের সকল কুপথ থেকে সরে আসতে পারলাম।পারলাম নিজেকে পাল্টে ফেলতে।পারলাম সঠিক পথে চলে আসতে তোমার ভালোবাসার টানে।আজ যে আমি সত্যিই বদলে গেছি আরুশি শুধু তোমার জন্য।তোমাকে নিয়ে জীবনের বাকি পথটা হাঁটতে চাই আরুশি।তোমার হাতে হাত রেখে পার করে দিতে চাই যুগের পর যুগ।জীবনের শেষ নিশ্বাস টাও যে তোমার কোলেই নিতে চাই।ক্ষমা করে দাও না আমাকে।চলে আসো আমার জীবনে।আমরা কি পারি না সব তিক্ত অতীত ভুলে জীবনে নতুন একটা অধ্যায়ের সুচনা করতে।
অতপর আর দেরি না করে সায়ান হাঁটু গেরে বসলো আরুশির সামনে হাতে একটা ডায়মন্ড রিং নিয়ে আরুশির সামনে ধরে বললো…..আমি তোমাকে ভালোবাসি আরুশি।দেবে কি তোমার প্রেমে পাগল এই প্রেমিককে একটা সুযোগ?হবে কি আমার অর্ধাঙ্গিনী, কথা দিচ্ছি কখনো কষ্ট দিবো না আর তোমায়,আগলে রাখবো নিজের জীবন দিয়ে হলেও।কখনো নিরাশ করবো না কথা দিলাম।দয়া করে আজ ফিরিয়ে দিও না তুমি আমায়।

কথাগুলো বলে সায়ান ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে আশার আলো ফুঁটিয়ে তাকিয়ে রইলো আরুশির পানে।

আরুশি জবাবে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো।
আমিও তোমাকে ভালোবাসি সায়ান।

সায়ানের চোখে মুখে খুশির জলক ফুঁটে উঠলো।
অতিরিক্ত খুশি হয়ে বললো।
আমি জানতাম তুমি এখনও আমায় ভালোবাসো আর তুমি কখনোই আমাকে ফিরিয়ে দিবে না।আমি বাবা মায়ের সাথে আজকেই আমাদের বিয়ের কথা বলবো,আর বর্তমানে এই আংটিকে পরিয়ে তোমাকে নিজের জন্য জোরে নিবো।আই লাভ ইউ আরুশি।আই লাভ ইউ মোর মোর এন্ড মোর।
হাসিমুখে কথাগুলো বলে সায়ান আরুশির হাত নিয়ে আংটিটা পরিয়ে দিবে ঠিক তখনই……

চলবে……….
#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্বঃ২৮

সায়ান আরুশিকে আংটিটা পরিয়ে দিবে ঠিক তখন আরুশি অট্টহাসিতে ফেঁটে পরে যাতে কিছু বুঝতে না পেরে নিজের কার্জে সমাপ্তি ঘটিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো সায়ান,আরুশি হাসতে হাসতে ওর থেকে সরে অনেকটা পিছিয়ে গেছে সায়ান অবাক হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো আরুশিকে।

হাসছো কেনো আরুশি তুমি এভাবে?

আরুশি এবার হাসতে হাসতে বললো।

তুমি ভাবলে কিভাবে সায়ান যে তোমাকে আমি ভালোবাসবো!অতঃপর হাসি থামালো আরুশি।চেহারায় আনলো হিংস্রতা আর ঝাঁঝালো কন্ঠে বলতে শুরু করলো।
ভালোবাসা আর যাকেই হোক তোমাকে বাসা যায় না সায়ান।তুমি কি করে ভাবলে আমার মায়ের খুনিকে আমি ভালোবাসবো?আমি তোমাকে শুধু ঘৃণা করি সায়ান শুধু ঘৃণা করি।এতোটা ঘৃণা করি যততা তুমি কখনো কল্পনাও করতে পারো না।

তুমি যদি আমায় ঘৃণাই করো তবে এতোদিন আমার সাথে এতো ভালো ব্যবহার, আমার প্রতি এতো কেয়ার এসব কেনো ছিলো তোমার?আমার এতো খারাপ ব্যবহারের পরও তুমি আমার সাথে এতো ভালোমানুষি কেনো দেখালে?

বুঝতে পারো নি সায়ান বেবি ওকে ফাইন,তবে শুনো।খেলা খেলেছি আমি তোমার সাথে।যাকে বলে ছলনা,ছলনা করেছি আমি সায়ান,খেলা করেছি তোমার মন নিয়ে যেমনটা তুমি করেছিলো আমার সাথে।অনেক ভালোবাসতে না মেয়েদের শরীর নিয়ে খেলা করতে নাও আমি তোমার মন নিয়েই খেললাম।কেমন লাগলো আমার খেলা?

আরুশির কথা শুনে হতভম্ব হলো সায়ান।কি প্রতিক্রিয়া করবে ভেবে পাচ্ছে না।

কি হলো কথা বলছো না যে।বিশ্বাস হচ্ছে না, না সায়ান?ঠিক আমারও সেদিন বিশ্বাস হচ্ছিল না যে তুমি আমার মন নিয়ে খেলা করেছো,সুইটিকে যখন কিস করছিলে তখনও যেনো সব কল্পনা মনে হয়েছে যে এখনই ঘুম ভেঙে যাবে,তুমিতো আমারই কখনো আমায় ধোঁকা দিতে পারো না তবে তা হয় নি,সে টা চরম সত্য ছিলো।সেদিন তুমি শুধু আমার মন ভাঙো নি আমার ধৈর্যেরও বাঁধ ভেঙেছো।আমার রেপ করাতে চেয়েছে,এমনকি আমার মাও আজ তোমার জন্যই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আর এতো কিছুর পরও আশা করছো আমি তোমাকে ভালোবাসবো।কখনও না।সেদিন মায়ের কবরের মাটি ছুঁয়ে প্রতিঙ্গা করেছিলাম যে তোমাকে যতক্ষণ তার যোগ্য সাজা না দিবো ততক্ষণ অব্দি মায়ের কবরে দ্বিতীয়বার যাবো না।আর আজ আমি সফল ,দ্যা গ্রেট মি.সায়ান চৌধুরীর যার কারো জন্য মন কাঁদে না,যার নেশা একমাত্র মেয়েদের শরীর তার মনে জায়গা করে নিয়েছি নিজের।যার শান্তির কারন হয়ে উঠেছি আমি,তবে সে শান্তি তোমাকে পেতে দিবো না কখনো আমি সায়ান।প্রাণ চলে যাওয়া থেকেও বড় পীড়াদায়ক হয় বেঁছে থাকতে মরণ যন্ত্রণায় পুড়ে মরা,আর মন ভাঙার কষ্ট কোনো মরণ যন্ত্রণা থেকে কম হয় না সায়ান।আমি তোমার জন্য শুধু রাস্তার একটা ফকিন্নি ছিলাম, আর আমার একমাত্র পণ এটাই ছিলো তোমাকে এই ফকিন্নির কাছে দমানোর। আমাতেই দিশেহারা করা আর দেখো আজ আমি সফল।হয়তো আমার হাতে কোনো কানাকড়ি নেই তবে মনের সুখের দিক থেকে আজ আমি পরিপূর্ণ সুখি আর তুমি কাঙাল।রইলো তোমার ওই রিং ওটা পরিয়ে দিয়ো তোমার মতোই নোংরা কাউকে যে তোমার টাকার লোভে তোমার সাথে যেখানে সেখানেই রাত কাটাবে।

অতএব আরুশি যেতে নিলে সায়ান ওর হাত ধরে ওকে নিজের সাথে মিলিয়ে ধরলো।চোখে রাগের সাথে অসহায়ত্বেরও বাস,জ্বল চিক চিক করছে চোখের কোনে।ব্যাথার্থ ভঙ্গিতে বললো এবার সায়ান।

দেখো আরুশি আমি যখন এসব করেছি তখন আমি অধম ছিলাম আর এখন আমি পূর্ণাঙ্গ মানুষ,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আরুশি,আমি আর কখনো তোমাকে নিরাশ করবো না।তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসবো প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি থাকতে পারবো না তুমি ছাড়া।কথাটা বলার সাথে সাথে আরুশি সায়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ওর গাল বরাবর একটা চড় বসিয়ে দিলো,তারপর গর্জে বললো।

ভালোবাসা,কি বুঝো তুমি ভালোবাসার?বড় দাবি নিয়ে বলছো ভালোবাসো।সেদিন কোথায় গিয়েছিলো ভালোবাসা যেদিন রেপ করাতে গুন্ডা পাঠিয়েছিলে,যেদিন অসহায়ের মতো রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছিলে।সুইটির সাথে কার রঙিন মুহুর্ত যাপন করছিলে ঝড়ে আমাকে একা দাঁড় করিয়ে।সেদিন কোথায় গেছিলো ভালোবাসা যেদিন আমাকে প্রাণে মারার জন্য প্রচেষ্ঠার উপর প্রচেষ্ঠা করেছিলে?আমাকে অপমান করতেও কোনো পথ ছাড়ো নি কখনো সেদিন কোথায় গেছিলো ভালোবাসা। বলো সায়ান?

আমি তো সবকিছুর জন্য ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে।

শুধু ক্ষমা চাইলেই কাউকে ক্ষমা করা যায় না সায়ান,আর এসবের জন্য তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিতেও পারি তবে আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করবো না।

তোমার মায়ের মৃত্যুর জন্য আমি কি করে দায়ী আরুশি।

হ্যাঁ একমাত্র তুমিই দায়ী, সেদিন তোমার কাছে দু লক্ষ টাকা পানির সমতুল্য হলেও তা আমার কাছে ছিলো আমার মায়ের প্রাণ।কিন্তু তুমি নিজের দম্য বজায় রাখতে গিয়ে আমাকে সে টাকাগুলো দাও নি যা আমি একদিন ঠিকই তোমাকে শোধ করে দিতাম তবে না তুমি তা হতে দিলে কই,আর তোমার সেই দম্যের ফলস্বরূপ চলে গেলো আমার মা।আর আজ আমি তোমার সে দম্য ভেঙে দিলাম সায়ান।গুড বাই।ভালো থেকো।

আরুশি চলে যায় সেখান থেকে সায়ান ওকে পিছনে বার বার ডেকে চলেছে ওর নাম নিয়ে কিন্তু আরুশি সেই পিছু ডাকগুলোতে কান দেওয়া জরুরি মনে করে নি। এদিকে ঘটে যাওয়া ঘটনা মেনে নিতে পারছে না সায়ান আরুশিকে যে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছে সে,হাটু মুড়ে বসে চিৎকার করে উঠে আরুশি নাম নিয়ে,চোখ দিয়ে গড়িয়ে নামে অজস্র জল,উঠে এসে সব সাজগোজ ছিঁড়ে দেয় সেখানকার।

আরুশি চোখের জল মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে বাড়িতে প্রবেশ করে।এই জল যে কষ্টের না বরং জয়ের।চৌধুরী বাড়িতে আসার লক্ষ্য আজ পূর্ণ হলো ওর।পেরেছে সায়ানকে আঘাত করতে।পেরেছে তাকে তার অবস্থান দেখাতে,এবার তার কাজ শেষ,চলে যাবে বহুদূর,থাকবে না আর কোনো বন্ধনে,সেই ভাবনাতে নিজ কক্ষের পানে পা বাড়ায়,কিন্তু রুমে ঢুকে লাইট অন করার আগেই অবাক হয় আরুশি,সারাটা রুম সাজানো।চারিকেই অজস্র মোমবাতি জ্বালানো সাথে ফুল আর হরেক রকম বেলুন শোভা পেয়েছে,রুমের ফ্লোরেও ফুলের ছড়াছড়ি।ফুলের একটা বড় হার্টের ভিতর ফুল দিয়েই লিখা “লাভ ইউ আরুশি” সবকিছু দেখে ভাবলেশহীন হয় আরুশি তখন পিছনে শুনতে পায় দরজা লাগানোর শব্দ, পিছন মুড়ে তাকালো আয়ানকে দেখতে পায় আরুশি।মুখে একটা উজ্জ্বল হাসি টাঙিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান।অবাকত্ব নিয়ে আরুশি জিজ্ঞেস করে বসলো।

এসব কি স্যার?

তোমাকে মনের ভাব ব্যক্ত করার ছোট্ট প্রচেষ্টা।দেখো আরুশি আমি কখনো কারো প্রেমে পরি নি আর কাউকে ফেলতেও চাই নি নিজের প্রেমে,তাই প্রপোজ কিভাবে করে আমি তা ভালো করে জানি না।কখনো ভাবি নি কাউকে এভাবে প্রপোজ করবো,তবে মনটাও যে এভাবে কারো হাতে চুরি হবে তাই বা জানতাম কোথায়!আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি আরুশি।তোমার মন অন্য কেউ চুরি করুক তার আগে তাতে নিজের নাম লিখে দিতে চাই আমি।আমাকে তুমি ভুল বুঝো না।মনের অজান্তেই তোমাকে ভালোবেসেছি আরুশি।তোমাতে বেঁচে থাকার সন্ধান খুঁজে পেয়েছি।খুঁজে পেয়েছি আমার ছোট্ট আরুশিকে।তুমি যে আমার কাছে এখন আমার নিশ্বাসের সমতুল্য হয়ে গেছো।চলে আসো আমার জীবনে।কথা দিচ্ছি আগলে রাখবো জীবনভর,কথাগুলো বলে আয়ানও হাঁটুগেরে আরুশির সামনে বসে পরলো হাতে হিরের একটি আংটি নিয়ে,আরুশির চোখ টপকে বেড়িয়ে এলো নোনাজল,আয়ান ওর দিকে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরুশি কোনো একটা জবাব মুখ দিয়ে ফুঁটাবে তার আগেই লিজান চাচা দরজায় ডাকতে শুরু করেন।

আরুশি মা দরজা খুলো সায়ান সাহেব কেমন জানি করতাছেন।বাড়িতে আমরা কাজের লোক ছাড়া আর কেউ নাই।কথাটা শুনে ছোটে বাইরে চলে আসলো আরুশি আরুশি আসতে গিয়ে ওর কাপড়ে লেগে আয়ানের হাতের হিরের আংটিটা পরে গেলো,আয়ান ভাবলেশহীন হয়ে বসে রইলো অল্পক্ষণ সেখানে অনেকটা পাথর ভঙ্গিতে অতঃপর বর্তমানের অবস্থা কিছুটা খেয়ালে এলে আয়ানও গেলো আরুশির পিছন,সায়ান ফ্লোরে পরে কাতরাচ্ছে,আরুশি ছোটে গিয়ে ওকে ফ্লোর থেকে উঠিয়ে ওর মাথা নিজের কোলে রাখলো,অনেকটা অস্থির হয়ে সায়ানকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো।

কি হয়েছে সায়ান তুমি এমন করছো কেনো?কি হয়েছে তোমার?

কেনো আরুশি? তুমি জেনে কি করবে বলো?আমি নিজেকে সাজা দিয়েছি।কারন তুমি আমায় যে সাজা দিয়েছিলে তা আমি সয়ে যেতে পারি নি।তুমি ঠিকই বলেছিলে বেঁচে থেকে মরন যন্ত্রণা সহ্য করার মতো পীড়াদায়ক আর কিছু হয় না। তোমার দূরত্ব আমাকে মরণ যন্ত্রনা দিচ্ছিলো বড্ড আরুশি তাই নিজেকে মুক্তি দেওয়ার সহজ পথ বেঁছে নিলাম,হয়তো দূরে কোথাও গিয়ে মরতে পারতাম তবে শেষবার যে তোমাকে দেখার লোভটাও ধরে রাখতে পারি নি তাই তোমার কাছে এসেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলাম।পারলে ক্ষমা করে দিও আমায়।অতঃপর জ্ঞান হারালো সায়ান,আরুশি একপাশে একটা বিষের বোতল পরে থাকতে দেখতে পেলো,আয়ানও সেখানে চলে এসেছিলো অনেকটা আগেই তাই বিষয়টা বুঝতে ওরও বাকি রইলো না।হাজারো ঝগড়া আর মনোমালিন্য থাকলেও দিনশেষে আয়ান সায়ানের একটাই পরিচয় ওরা একই মায়ের গর্ভে লালিত দুটি অংশ,রক্তের টান যে চাইলেও ছেঁড়া যায় না,সায়ানের এ হাল দেখে আয়ান নিজেকে আটকাতে পারে নি,সায়ানকে কোলে নিয়ে এবার চললো হাসপাতালের উদ্দেশ্য। আরুশিও সাথে।মা-বাবা সব গেছেন মিস্টার আর মিসেস চৌধুরীকে এয়ারপোর্টে থেকে আনতে আজ উনারা ওয়ার্ল্ড টুর থেকে বাড়ি ফিরছেন তাই।সে সুযোগেই আয়ান বাড়িতেই আরুশির জন্য স্যারপ্রাইজটা প্লান করে,এদিকে আরুশি বাড়িতে আসার একটু পর সায়ানও এসে পরে বাড়িতে বিষ সে আগে খেয়েই এসেছিলো, শেষবার আরুশির চেহারা দেখার যে খুব বড় এক আকাঙ্খা ছিলো ওর।তখন আরুশির রুমে আসার আগেই বাইরে পরে গেলো সায়ান লিজান চাচা ওকে দেখতে পেলেন অতঃপর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে আরুশিকে ডাকতে আসেন।
বর্তমানে আয়ান আরুশি হাসপাতালের বেঞ্চে বসে আছে।ডাক্তার সায়ানকে দেখছেন,এদিকে সময়ের সাথে আরুশির অস্থিরতাও বাড়ছে বড্ড,তাই উঠে এদিক ওদিক হাঁটছে আর সায়ানের কেবিনের ভিতর বার বার উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে,ভাইয়ের উক্ত অবস্থায় আয়ানের মন এমনিতেই মর্মাহত এদিকে সেই অনুভুতি আরও প্রখর হয়ে উঠার কাজ আরুশির সায়ানের জন্য অস্থিরতাই করে দিচ্ছে। মনে ভয় হচ্ছে বড্ড আয়ানের যদি আরুশি ওকে ভালো না বেসে থাকে।সায়ানের জন্য তো অনেক অস্থিরতা দেখাচ্ছে আরুশি তার মানে কি আরুশি সায়ানকে ভালোবাসে,আয়ানকে ভালোবাসে না!এমনটা হলে কি করবে আয়ান!পারবে কি আরুশিকে ছাড়া বাঁচতে?

প্রায় ঘন্টা খানিক পর ডাক্তার জানালেন সায়ান ঠিক আছে,ও অনেক কঢ়া ধরনের বিষ খেয়েছিলো আরও বেশি দেরি হলে ওকে বাঁচানো যেতো না ,অনেক কমপ্লিকেশনের পর উনারা ওকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন,বর্তমানে ও ঠিক আছে তবে ওর যথেষ্ট পরিচর্যা করার কথা জানালেন উনারা।

সবাই চলে আসার পর বিষয়টা জানতে পারে।এতে সবাই ভয় পায় অনেক।মায়েরা যে কতো কেঁদেছেন তা শুধু উনারাই জানেন,সায়ানের জ্ঞান ফিরে পরদিন সকালে।দাদা দাদিও ফিরে এসেছেন।দুজনের চোখ থেকেও জল সরে নি।সবাই উক্ত জিনিসের কারন জানতে চাইলে কেউই জানায় নি কারনটা যে জায়গাতে আয়ান আরুশির কাছ থেকে সেই কারন আগেই জেনে গেছিলো।তবে বলে নি কাউকে।সায়ানকে বাড়ি নিয়ে চলে আসা হয়।সায়ানের খেয়াল আরুশিই রাখছে,পুরো খেয়াল করছে সায়ান যেনো আবারও এমন কিছু না করে বসে,এদিকে আরুশির সায়ানের প্রতি এতো খেয়াল করা ক্ষত দান করছে আয়ানের মনে।

চলবে………..