নীরব সাক্ষী পর্ব-২৫+২৬

0
506

#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-২৫
.
.
.
এদিকে রিদ বাড়িতে সবটা জেনে প্রচন্ড রেগে যায় ৷ রাগে থরথর করে কাঁপছে রিদ ৷ চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ফেলে রাগ টা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে রিদ আর সামনে দারিয়ে আছে প্রিয়ন্তি ৷ ভয়ে দাঁত দিয়ে নখ কেটে যাচ্ছে ৷

“” বাবা এখন কোথায়?””

“” রিমা খালার রুমে দরজা বন্ধ করে ভিতরে আছে..””

রিদ আর দারালো না রেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেল রিদের পিছু পিছু প্রিয়ন্তি ছুটলো ৷ রিদ তার গেস্ট রুমে সামনে গিয়ে দেখে রিয়ানা বেগম শুয়ে আছে ৷ মা কে গেস্ট রুমে দেখে রিদের রাগ আরো বেরে গেল ৷ রিদ ওর বাবার রুমের সামনে গিয়ে জোড়ে জোড়ে নক করতে থাকে ৷ রায়হান আহাম্মেদ এতোক্ষন রুমে বসে রিদের জন্য অপেক্ষা করছিলো যখনি দরজায় নক করলো রায়হান আহাম্মেদ এর বুজতে অসুবিধা হয়না রিদ বাইরে দারিয়ে নক করতে ৷

রায়হান আহাম্মেদ একটু দম নিয়ে মাথা উচু করে দরজা খুলে দেয় রিদ হুর মুর করে ভিতরে ঢুকে গিয়ে দেখে তার মায়ের মামাতো বোন নতুন বউয়ের মতো বিছানায় বসে আছে ৷ রিদ রক্তিম চোখে তাকায় রায়হান আহাম্মেদ এর দিকে….

“” এই সবের মানে কি বাবা ? মা থাকতে তুমি অন্য মহিলার সাথে … বাকিটা বললো না রিদ কারন তার বাবার সামনে এই ধরনের কথা বলতে রুচিতে বাদছে …

“” কি হলো রিদ কথাটা সম্পূর্ন করো “”

“” মায়ের সাথে এমনটা কেন করলে বাবা?””

“” শোন রিদ তুমি বড় হয়েছো ৷ ভালো মন্দ বিচার বিবেচনা করতে জানো ৷ আর আমি প্রাপ্ত বয়স্ক আমার যা ইচ্ছে আমি করতে পারি ৷ তোমার বা তোমার মায়ের অনুমতি নিশ্চয় আমি নিবো না?””

“” বাবা ভূলে যাবে না মা তোদার স্ত্রী আর আমি তোমার ছেলে ৷ তোমার স্ত্রী থাকতে তুমি অন্য মহিলার সাথে কি করে সম্পর্ক করো তুমি..??””

“” ঠিক তুমি যেভাবে করতে পেরেছিলে ঠিক সে ভাবে…””

রিদ চুপ হয়ে যায় ৷ কারন রিদ তার বাবার কথা গুলো বলার মানে খুব ভালো মতো বুজতে পারছে ৷

“” বাবা মা তোমার স্ত্রী “”

“” ভূল তোমার মায়ের সাথে গতকাল রাতে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে রিদ..””

রায়হান আহাম্মেদ এর কথা শুনে রিদ চমকে যায়……

“” ম,,মানে কি বলছো বাবা?””

“” আমি ঠিক কথা-ই বলছি রিদ ৷ তোমার বিশ্বাস না হলে যাও তোমার মায়ের কাছে জ্বিগাসা করো৷””

রিদ এক ঝলক তার রিমা খালার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেস্ট রুমের দিকে ছুটলো….

“” মা..!””

রিয়ানা বেগম ছেলের গলা শুনে উঠে বসে.. রিদ তার মা কে দেখে যেন তার কলিজা ফেটে যাচ্ছে ৷ একদিনে চেহারার কি হাল হয়েছে ৷ শুকনো মুখ চোখ মুখ বসে গেছে ৷ চোখে নিচে কালি পরে গেছে ৷ এলোমেলো চুল ৷

“” কেমন আছো মা?””

রিয়ানা বেগম আর কিছু বললো না রিদ কে জরিয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে লাগলো… রিদ তার মাকে কাঁদতে বারন করলো না ৷ কাদুক মন খুলে কাদুক ৷ কাঁদলে মন হালকা হবে৷

প্রিয়ন্তি কিছুক্ষন পর প্লেটে খাবার নিয়ে আসে ৷

“” রিদ ভাইয়া খালামনি সকাল থেকে কিছু খায়নি এই খাবার টা খাইয়ে দেও খালামনি কে..””

রিদ খাবার টা নিয়ে ভাত মেখে এক লোকমা রিয়ানা বেগমের মুখের সামনে ধরতে রিদের হাত কেউ ধরে ফেলে , তাকিয়ে দেখে রায়হান আহাম্মেদ …

“” তোমার সাহস কি করে হয় রিদ আমার অনুমতি না নিয়ে রিয়ানা কে খাবার দেওয়ার..?””

“” বাবা তুমি এমন ভাবে মায়ের পর অর্তাচার করতে পারো না ৷ মা সকাল থেকে এতো রান্না করলো কিন্তু তুমি মাকে খেতে দিলে না.? কেন বাবা?””

“” তোমার মা যখন মুন কে সারাদিন খাটিয়ে খাবার টুকু দিতো না তখন কথায় ছিলে তুমি? আর কোন সাহসে আমাকে তুমি প্রশ্ন করো ? বাড়ি আমার আর এবাড়ির সব খরচ আমি দি তুমি এক টাকাও দেও না ৷ নিজে যা আয় করো তা তুমি খরচ করো সংসারে এক টাকা ও দেও না তো কোন অধিকারে আমার কে প্রশ্ন করো?””

রিদের মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে ৷ রায়হান আহাম্মেদ খাবারের প্লেট টা নিয়ে রিয়ানা বেগমের সামনে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় পিছুনে ফিরে রিয়ানা কে উদ্দেশ্যে করে বলে”” পনেরো মিনিটের মধ্যে সন্ধার নাস্তা যেন রেডি থাকে নাহলে….. বাকি টা আর বললো না প্লেট হাতে বেরিয়ে গেল৷

রিয়ানা বেগম বির বির করে বলে উঠলেন”” পাপ সব আমার পাপের ফল …””

রিদ ওয়াশরুমে ঢুকে হাত ধুয়ে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে ৷ রিয়ানা বেগম রান্না ঘরে গিয়ে পেয়াজ মরিচ কেটে নিয়ে নুডুলস রান্না করে নিয়ে টেবিলে রাখে ৷

কিছুক্ষন পর রিদ দুইটা পেকেট নিয়ে এসে টেবিলের উপর রাখে তারপর রান্না ঘর থেকে দুটো প্লেট নিয়ে এসে পেকেট থেকে বিরয়ানি বের করে প্লেটে ঢেলে আবার এক লোকমা নিয়ে রিয়ানা বেগমের মুখের সামনে ধরে , ছেলের এই ভালোবাসা দেখে রিয়ানা বেগমের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে ৷

“” মা খাওয়ার সময় কাঁদতে নেই জানো না? চুপ চাপ খেয়ে নেও””

রিয়ানা বেগম চুপচাপ ছেলের হাতে পুরো খাবার টা খেয়ে নেয় ৷ দরজার কাছে দারিয়ে প্রিয়ন্তি রায়হান আহাম্মেদ রিমা দারিয়ে দেখছে মা ছেলের ভালোবাসা…

“” রায়হান ভাই দেখলেন তো বুবু আর রিদ বাবাকে ..””

“” হুম দেখছি৷ ছেলেটা ও এবার মানুষ হবে আর রিয়ানাও তার ভূল গুলো বুজতে পারবে৷””
.
.
.
.
.
মুন বোরকা খুলে ফ্রেস হয়ে নিয়ে চা খেতে থাকে৷ বাড়ি এসে জানতে পারে আবিদ নিরব দুজনে বেরিয়েছে ৷ মুন চা খেয়ে রান্না ঘরে যায় ৷ কিন্তু সারবেন্টদের জন্য কোন কাজ করতে পারে না মুন ৷ ফারিহার কড়া নির্ষেধ মুন কে যেন আগুনের সামনে না আসে ৷

“” ম্যাম প্লিজ আপনি রুমে যান আর কি দরকার আমাকে বলুন আমি করে দিচ্ছি ৷ “”(সারবেন্ট)

“” আপু আপনি ব্যাস্ত হবেন না আমি যাস্ট রাতের জন্য কিছু রান্না করবো “” মুন

“” ম্যাম আপনাকে কিছু করতে হবে আমি অলরেডি সব রান্না করে রেখেছি৷ দেখুন..””

মুন ডাইনিং টেবিলের সামনে গিয়ে দেখে অনেক রকম পদ রান্না করা ..গরুর মাংস ভূনা, রুই মাছের কালিয়া, টমেটোর চাটনি, ডিমের কোরমা, রোস্ট, পোলাও, সাদা ভাত, পাবদা মাছের ভূনা, আর ছোট চিংড়ি মাছ আর ডালের বড়া…

“” আল্লাহ এতো কিছু রান্না করে ফেলেছো তুমি..??””(মুন)

“” জ্বি ম্যাম, আর কিছু করতে হবে ?””

“” নো নো আর কিচ্ছু তোমাকে করতে হবে না কারন আমি এখন পায়েস রান্না করবো….””

“”ম্যাম…””

“” নো মোর ওয়ার্ড , যাও রেস্ট করো বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি””

“” ওকে ম্যাম””

মুন নিজের মতো করে পায়েশ রান্না করে হাত ধুয়ে আবিদ আর নিরবের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো৷ ফারিহার বাবা ফারুক খান কাজের জন্য ঢাকা চলে যায় ৷ আর ফারিহা আয়ানকে নিয়ে দেশের বাইরে গেছে ঘুরতে ৷ মূলত আবিদ আর মুন কে একা ছাড়ার জন্য ফারিহার এই ডিসিশন ৷

রাত আটটায় নিরব আবিদ দুজনে ফিরে আসে ৷

“” বনু কেমন আছো?””

“” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া , আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি কেমন আছেন? আর মামা মামি সামির সামিরা কেমন আছে?””

“” ওয়ালাইকুম আসসালাম , আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে৷””

” ভাইয়া আর আবিদ তোমরা ফ্রেস হয়ে আসো আমি খাবার সার্ব করছি ৷””

“” ওকে বনু..””

দুজনে রুমে চলে যায় ৷ ফ্রেস হয়ে নিচে আসে মুন আবিদ নিরব তিন মিলে ডিনার করে রাত বারটা পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে যায়৷ দেখতে দেখতে তিন তিনটে মাস কেটে যায় এর মাঝে আবিদের বাবা আবিদের বরিশালের ঠিকানা পেয়ে সেখানে এসে সিন ক্রিয়েট করে কিন্তু আবিদ বা মুন কে কেউ আলাদা করতে পারেনি শুধুমাত্র ফারিহা আর আয়ানের জন্য ওরাই সবটা সামলেছে ৷ ফারিহার ক্ষমতার কাছে আফজাল সাহেবের ক্ষমতা ফিকে হয়ে গেছে৷ ফারিহার ক্ষমতার সাথে না পেরে আফজাল সাহেব বাধ্য হয় খুলনা চলে যায়৷

প্রিয়ন্তির বিয়ে হয়ে গেছে দুমাস আগে .. রায়হান আহাম্মেদ এখনো রিয়ানা বেগম কে ক্ষমা করে নি বরং আরো জ্বালিয়ে যাচ্ছে রিমা কে দেখিয়ে,, রিদ আর আগের মতো নেই ৷ মুন কে দেখে এখন আর রিদের তেমন কষ্ট হয়না কিন্তু মাঝে মাঝে আবিদ আর মুন কে এক সাথে দেখলে বুকের ভিতর চিন চিনে ব্যাথা অনুভব করে রিদ৷ তবে প্রিয়ন্তির বিয়ের এক সপ্তাহ পর নিরব আর আবিদ মুখে মাক্স পরে দুজন মিলে রিদ কে পিটিয়েছে৷ প্রায় দু সপ্তাহ রিদ হাসপাতালে ভর্তি ছিলো৷ রিদ জানে কে তাকে মেরেছে কিন্তু কোন প্রতিবাদ করে না ৷ সুস্থ হয়ে আবার ও অফিস যাওয়া শুরু করে তবে এখন আর মুন বা আবিদ তেমন রিদ কে শাস্তি দেয় না তবে দুপুরে লান্চ করার সময় রিদ কে সামনে দার করিয়ে রাখে ৷

মুনের ইদ্দত শেষ হতে আর মাত্র পাঁচদিন বাকি খান বাড়িতে উৎসব লেগে গেছে৷ পুরো বাড়ি বিয়ে বাড়ির মতো করে সাজানো৷ নিরবের মামা মামি সামির সামিরা মৃন্ময় আবিদের মেজ ভাই আবির সবাই এসেছে আবিদ আর মুনের বিয়ে উপলক্ষে ৷ হ্যা আবিদ আর মুনের আবার বিয়ে হবে ৷

“” আপুউউউ …”” জোড়ে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো মৃন্ময় মুনকে…

“” উফফ কানের তালা ফাটিয়ে দিলি ভাই , কি হয়েছে বল এভাবে চিৎকার করছিস কেন?”” (মুন)

“” আপু তোর মেহেন্দি হলুদ আর বিয়েতে কি পরবো আমি ! বাড়ি থেকে আসার সময় তো ভালো কোন জামা কাপড় নিয়ে আসেনি””

“” কোন বেপার না সালাবাবু এই নেও তোমার ড্রেস ….”” রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো আবিদ….

“” জিজু আপনি..””

“” হ্যা এই নেও তোমার জন্য এখানে পান্জাবি আর কিছু ড্রেস আছে ৷৷এখানে চার পাঁচ সেট জামা কাপড় আছে সব ফাংশনে পরতে পারবে তুমি ৷ “”

“” থ্যাংকিউ জিজু ,””

“” ওয়েলকাম আর শোন এটাতে সামির আর সামিরার জন্য ড্রেস আছে তুমি ওদের দিয়ে দিও “”

“” ওকে জিজু”” মৃন্ময় চলে যেতে আবিদ মুনের দিকে এগোতে এগোতে বলতে লাগলো…

“” মনপাখি আর মাত্র পাঁচদিন তারপর তুমি চিরদিনের জন্য আমার হয়ে যাবে””

“” কেন এখনও কি আমি তোমার না..??””

“” উহু ভূল বললে তুমি আগে ও আমার ছিলে আর এখনো আমার আছো আর ভবিষ্যৎতে ও তুমি আমার থাকবে ৷ “”

আবিদ মুন কে জরিয়ে ধরে ঠোটে ঠোট ছুইয়ে দিয়ে বললো আবিদ ৷ মুন লজ্জা পেয়ে আবিদের বুকে মুখ লুকায়… তখনি দরজার দারিয়ে কেউ কাশি দিলো সাথে সাথে মুন আবিদ দুজনে দু দিকে ছিটে গেল…

“” ওয়াও জিজু কি রোমান্টিক সিন দেখলাম ৷ আর এই যে আমার বর টা রোমান্সের র ও জানে না “” মুখ ভাঙিয়ে বললো ফারিহা…

ফারিহার কথা শুনে আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে ফারিহার কানে কানে বলে উঠলো “” রোমান্স কাকে বলে সেটা তোমাকে রাতে আমি বুঝাবো সুইটহার্ট…”” কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আয়ান…

এদিকে আয়ানের ঠান্ডা হুমকি শুনে ফারিহা শুকনো ঢোক গিলে আবিদ আর মুনের দিকে তাকাতে দেখে আবিদ মুন দুজনে ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে৷ ফারিহা পরলো মহা বিপাকে আবিদ মুন কে জ্বালাতে এসে আয়ানকে রাগিয়ে দিলো এখন রাতে ওর কপালে কি নাচছে সেটা একমাত্র আল্লাহ জানে…. আবিদ ব্রু কুচকে ফারিহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো “” আব তোমহারা ক্যা হোগা সালিকা ?”

“” ঠিক হয়েছে আমাদের জ্বালাতে এসে এখন নিজে জ্বলছিস কেমন লাগছে বল ফারিহা,””

“” ডাইনি তোর খবর আছে ৷”” রাগে ফোস ফোস করতে করতে ফারিহা বেরিয়ে যায়.. ফারিহা যেতে আবিদ মুন দুজনে হেসে ওঠে ৷ অন্যদিকে…..
.
.
.
.
#চলবে…………

#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-২৬
.
.
.
আবিদ ব্রু কুচকে ফারিহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো “” আব তোমহারা ক্যা হোগা সালিকা ?”

“” ঠিক হয়েছে আমাদের জ্বালাতে এসে এখন নিজে জ্বলছিস কেমন লাগছে বল ফারিহা,””

“” ডাইনি তোর খবর আছে ৷”” রাগে ফোস ফোস করতে করতে ফারিহা বেরিয়ে যায়.. ফারিহা যেতে আবিদ মুন দুজনে হেসে ওঠে ৷ অন্যদিকে আবিদের বাবা আফজাল সাহেব আর মুনের মা আলিয়া বেগম দুজনে মিলে পরিকল্পনা করছে কি করে আবিদ আর মুন কে আলাদা করা যায়৷

এদিকে মেহেন্দীর আয়োজন করা শেষ৷ ফারিহা এখনো আয়ানের থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছে ৷ তিন দিন ধরে ফারিয়া তন্নির সাথে রুম শেয়ার করে থাকছে ৷ ভয়ে আয়ানের সামনে পর্যন্ত যাচ্ছে না ফারিহা ৷ ফারিহা নিজে রেডি হয়ে মুন কে রেডি করে নিচে নিয়ে আসে ৷ মুন সবুজ আর সোনালি রঙের একটা লেহেঙ্গা পরেছে তার উপর ম্যাচিং জুয়েলারি সেট পড়া ৷ ফারিহা ও সেইম সাজে সেজেছে৷ যে কেউ দেখলে দুজন কেই বিয়ের কনে ভেবে বসবে৷ ফারিহার এই সাজ মূলত আয়ানের জন্য যাতে আয়ানের রাগ টা ভাঙাতে পারে৷

আবিদ আয়ান দুজনে মুন ফারিহা কে দেখছে ৷ কারোর-ই পলক পড়ছে না ৷

ফারিহা মুন কে নিয়ে নিচে নেমে আসে ৷ ততোক্ষনে তন্নি সানজু আরো মেয়েরা এসে মুন কে ঘিরে ধরে ৷ ছোট্ট একটা স্টেইজ বানানো হয়েছে ৷ তার উপরে মুন কে বসানো হয় ৷ দুজন মেয়ে এসে মুন আর ফারিহা কে মেহেন্দি পড়াতে থাকে৷ দুর থেকে আবিদ আয়ান সবটা দেখছে ৷ কিছুক্ষণ পর আয়ান আবিদ দুজনে মুন ফারিহার দিকে এগিয়ে আসে ৷ দুজনে মেহেন্দীর টিউব নিয়ে আয়ান ফারিহার হাতে আর আবিদ মুনের হাতে নিজেদের নাম লিখে দেয়৷ ফারিহা ধরে নেয় আয়ান আর রেখে নেই কিন্তু আয়ান মেহেন্দি লাগিয়ে থমথমে মুখ নিয়ে চলে যায়৷ আর আবিদ মুন কে ইশারায় ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিয়ে আড়াল হয়ে যায়৷ মুন লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে এদিকে তন্নি সানজু মুনকে জ্বালিয়ে যাচ্ছে ৷ সুন্দর ভাবে মেহেন্দি অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায়৷ মুন আর সানজু একরুমে থাকতে দেওয়া হয়েছে ৷ আবিদ নিরবের সাথে রুম শেয়ার করবে বিয়ের আগ পর্যন্ত ৷

ফারিহা ভয়ে ভয়ে রুমে ঢুকে ওয়াশরুমে ঢুকতে যাবে তখনি আয়ান ফারিয়ার হাত হ্যাচকা টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে ফারিহার হাত দুটো চেপে ধরে…

“” এখন কি করে জানপাখি ?””

“” আ,,আয়ান আমি তখন তোমার সাথে মজা করেছিলাম ট্রাস্ট মি””

“” তাই বেবি এখন মজা করার ফল ভোগ করো ৷””

আয়ান ফারিহার গলায় মুখ গুজে গলায় কামড় বসিয়ে দেয়….

“” আহা আয়ান কি করছো তুমি…””

“” এখনো তো শুরু করেনি জানপাখি ৷””

আয়ান ফারিয়া কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লাইট অফ করে দিলো…….

পরেরদিন সবাই ভিষন ব্যাস্ত মুনের আজ গায়ে হলুদ ৷ হলুদের জন্য গার্ডেনে ছোট্ট স্টেইজ বানানো হয়েছে ৷ তার মাঝখান দিয়ে পর্দা দিয়ে দেওয়া হয়েছে কারন মুন আবিদ দুজনের আজ এক সাথে হলুদ হবে৷

মুনকে লাল পায়ের হলুদ শাড়ি আট পেরে করে পড়ানো হয়েছে ৷ তার উপর কাঁচা ফুলের সাজ ৷ অসাধারণ লাগছে মুন কে ৷ ফারিহা মুনের কানের পিঠে কাজলের টিকা লাগিয়ে দেয়…

“” এটা কি করলি ফারিহা?””

“” নজর না লাগে তাই কালো টিকা লাগিয়ে দিলাম বুজলি ৷ এখন চল জিজু তোর জন্য নিচে অপেক্ষা করছে৷ “”

“” হু চল “”

ফারিহা মুন কে নিয়ে স্টেজে বসিয়ে দিলো ৷ আবিদ পর্দার আড়ালে মুন কে দেখার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ৷ কিন্তু ফারিয়া তন্নি সানজুর জন্য পারছে না৷ একে একে সবাই দুজন কে হলুদ লাগিয়ে দিলো ৷ হঠাৎ করে আয়ান ফারিহার হাত ধরে স্টেজের পিছুনে টেনে নিয়ে যায়…

“” কি হলো আয়ান এভাবে সবার সামনে দিয়ে টেনে আনলে কেন?””

“” কারন এখন আমার সুইটহার্ট কে হলুদ লাগাবো…””

“” কই তোমার হাতে তো হলুদ নেই তাহলে কি করে হলুদ লাগাবে হু?”” ব্রু কুচকে জ্বিগাসা করলো ফারিহা…
আয়ান মুচকি হেসে ফারিহার গালে সাথে নিজের ছুইয়ে দিয়ে হলুদ লাগিয়ে দিলো… লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেছে ৷ আয়ান ফারিহার লজ্জা মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে নাকে ঘষে হুট করে ফারিহার ঠোটে ঠোট জোড়া বসিয়ে দিলো তখনি পাশ থেকে কেউ সিটি বাজায় ৷ ফারিহা ধাক্কা দিয়ে আয়ান কে সরিয়ে দিয়ে দেখে নিরব আবিদ সানজু তন্নি দারিয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসতে লাগলো…

ফারিহা দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায় ৷

“” ব্রো পাবলিক প্লেসে রোমান্স করছো ?”” (নিরব)

“” লাইন্সেস করা বউ আমার , রোমান্স করার অধিকার আছে আমার বুজলে ব্রো…”” হাত ভাজ করে নিরব কে উদ্দেশ্য করে বললো আয়ান….

“” তোমাদের রোমান্স যেহেতু শেষ তাহলে চলো স্টেজের সামনে…””

ছেলে মেয়েরা মিলে নাচ গান হই হইল্লোর করে কাটালো ৷ ফারিহা তন্নি সানজু আর আয়ান সাব্বির নিরব মিলে কাপল ডান্স করে….

“” ফারিহা মা হলুদ অনুষ্ঠান শেষ ওদের কে রুমে পাঠিয়ে দেও গোছল করে নিক সন্ধা হয়ে গেছে এর পর ওদের ঠান্ডা লেগে যাবে৷ “” (মামি)

“” ওকে আন্টি””

ফারিহা ওদের দুজন কে আলাদা আলাদা রুমে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে ও রুমে চলে যায় ফ্রেস হতে…….
.
.
.
.
________ ” রিদ বাবা দরজা খোল , রিদ কি হয়েছে এভাবে গত দুইটা দিন ধরে নিজেকে রুমে বন্দি করে রেখেছি কেন বল বাবা কে , রিদ?””

ভিতর থেকে কোন আওয়াজ না পেয়ে রায়হান আহাম্মেদ ভয় পেয়ে আশে পাশের লোকজন দের ডাকে দরজা ভাঙার জন্য,

“” তারাতারি করেন ভাই ৷ ছেলে টা কি করছে ভিতরে কোন দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেনি তো..??”(রায়হান )

“” ভাইসাহেব মনে সাহস রাখেন দেখবেন সব ঠিক আছে রিদ বাবাজি ও ঠিক আছে..”” পাশে থাকা লোক টি বলে উঠলো …

কিছুক্ষনের মধ্যে দরজা ভেঙে ফেলে তারা , রায়হান আহাম্মেদ সবার আগে ভিতরে ঢুকে যা দেখলেন তা দেখার জন্য মটেও প্রস্তত ছিলেন না ৷ পুরো ফ্লোর রক্তে তলিয়ে গেছে ৷ রিদের কাটা হাত দিয়ে এখনো রক্ত বের হচ্ছে ৷ চোখ বন্ধ করে আছে রিদ ৷ বোঝা যাচ্ছে রিদের জ্ঞান নেই৷ রায়হান আহাম্মেদ দিশে হারা হয়ে পড়লেন কি করবেন ভেবে পাচ্ছে না ৷ আশে পাশের লোকজন এম্বুলেন্সে কল করে আসতে বলে ৷

অপারেশন থিয়েটারের নিয়ে যাওয়া হয়েছে রিদ কে আর বাইরে বসে আছে রায়হান আহাম্মেদ রিয়ানা বেগম, রিমা , প্রিয়ন্তি কে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে রিয়ানা বেগম , ডখবর পেয়ে প্রিয়ন্তি আর তার স্বামি আসিবুল বেরিয়ে পরে ৷

দু ঘন্টা পর ডক্টর বেরিয়ে এসে গম্ভির মুখ করে দারায় রায়হান আহাম্মেদ এর সামনে..৷

“” ডাক্তার আমার ছেলে কেমন আছে ও সুস্থ হয়ে যাবে তো?””( রায়হান আহাম্মেদ )

“” চুপ ডাক্তার”” ডাক্তার কে চুপ থাকতে দেখে রিয়ানা বেগম চিৎকার করে কান্না করতে থাকে…

“” ডাক্তার কিছু বলছেন না কেন দয়া করে বলুন আমার ছেলে সুস্থ হয়ে যাবে তো?””

“” স্যরি রায়হান সাহেব প্রচুর ব্লাড লস আর উইক ছিলো আর মনে গতো দু তিন দিন ধরে উনি কিচ্ছু খায় নি ৷ আমরা ব্লাড দিচ্ছি ৷ ৪৮ ঘন্টা না গেলে আমরা কিছু বলতে পারছি না ৷ সব টা এখন আল্লাহর হাতে… “”

রায়হান আহাম্মেদ ধুপ করে ফ্লোরে বসে পরে ৷ রিয়ানা বেগম রিমা দুজনে ছুটে আসে রায়হাম আহাম্মেদ এর কাছে ৷ ডাক্তারের প্রত্যেকটা কথা প্রিয়ন্তি আর তার স্বামী হাসিবুল শুনেছে৷ প্রিয়ন্তির দু-চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে ৷ প্রিয়ন্তি কখনো ভাবেনি যে তার রিদ ভাইয়ার এমন অবস্তা হবে কখনো…

রিদ কে আই সি ইউ রুমে রাখা হয়েছে পুরো রাত প্রত্যেকটা মানুষ কেউ দু চোখের পাতা এক করেনি ৷ প্রিয়ন্তি রিদের আই সি ইউ রুমের বাইরে দারিয়ে রিদ কে দেখছে ৷ এক দিনে চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে ৷ মুখের চোয়াল ভেঙে গেছে ৷ সুন্দর মুখ টা নিমিষেই বিষাদের বর্ন ধারন করেছে ৷
কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছুনে তাকিয়ে দেখে রায়হান আহাম্মেদ দারিয়ে ৷ প্রিয়ন্তি কিছু না বলে রায়হান আহাম্মেদ কে জরিয়ে ধরে কাদঁতে লাগলো ৷ রায়হান আহাম্মেদ প্রিয়ন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন…

“” কাদিস না মা , আমার ছেলেটা কেন এমন করলো জানি না তবে মন দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো যেন ও তারা তারি সুস্থ হয়ে যায়৷””

“” খালু তুমি সত্যি বলছো তো , রিদ ভাইয়া সুস্থ হয়ে যাবে তো?””

“” হ্যা মা সুস্থ হয়ে যাবে তুই চিন্তা করিস না ৷ আল্লাহর উপর ভরশা রাখ ৷””

“” হুম “”
.
.
.
.

ফজরের আজান মুনের কানে পৌছাতে মুন ঘুম থেকে উঠে বসে ৷ তারপর উজু করে নামাজ পরে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দারায় ৷ আজ মুনের খুব ইচ্ছে করছে আবিদ কে সাথে নিয়ে সূর্য উদয় দেখার কিন্তু তা আজ সম্ভব নয় ৷ উওরের হাওয়ায় মুনের চুল গুলো হাওয়ায় উড়ছে ৷ মুন তার অতিতের সাথে আজকের দিনের পার্থক্য খুজে যাচ্ছে ৷ আর হিসেব শেষে মুনের ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠলো …. “” দীর্ঘ এক বছর তিন মাস দশ দিন পর মুন তার ভালোবাসার মানুষ টাকে নিজের একান্ত করে পাবে ৷ ভাবতে মুনের চোখ মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো ৷

চারিদিক সূর্যের কিরন ছড়িয়ে পরেছে ৷ পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে জানান দিচ্ছে ভোর হয়ে গেছে ৷

বিয়ে বাড়ি তাই সবাই ফজরের আজানের পর পর ঘুম থেকে উঠে কাজে লেগে পরে ৷ মুন বেলকনিতে দারিয়ে সবার ব্যাস্ততা দেখছে ৷ তবুও চোখের কোনে জল চিক চিক করছে মুনের … আজ বড্ড বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছে মুনের , কিন্তু মানুষের সব আশা পূরন হতে হবে এমনটা নয় ৷ কিছু কিছু ইচ্ছে কখনো পূরন না হওয়াই উচিত কারন কোন কোন ইচ্ছে মানুষের জীবনে খুশির বদলে দুঃখ বয়ে আনে৷ আর হয়তো তার বাবা মায়ের বিয়ে বাড়িতে আশাটা খুশির বদলে দুঃখ বয়ে আনবে৷

মুনের চোখ জোড়া ঘুমে ভেঙে আসছে ৷ মুন ধির পায়ে সানজুর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো৷

দুপুর বার টায় মুনের ঘুম ভাঙে ৷ সানজু ফারিহা মুন কে গোসলে পাঠিয়ে বিয়ের ড্রেস জুয়েলারি মেকয়াপ সব বিছানায় সাজিয়ে রাখে ৷ এক ঘন্টা পর মুন ওয়াশরুম থেকে বের হতে ফারিয়া হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে মুনের চুল শুকিয়ে দিয়ে পার্লারের মেয়েদের কাছে সাজতে বসিয়ে দিয়ে নিজেরাও সাজতে বসে যায় অন্যদিকে আলিয়া বেগম আফজাল সাহেব আর আজমির লোক জন নিয়ে রওনা হয় ফারিহার বাড়ির উদ্দেশ্যে…..
.
.
.
#চলবে…………