নেশাক্ত ভালোবাসা ২ পর্ব-৪৫+৪৬+৪৭

0
1501

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪৫

সময়ের চাকা ঘুরিয়ে মাঝখানে আরো কেটে যায় বেশ কিছুদিন। আব্রাহাম-আইরাত তাদের বাসাতেই থাকে। সবকিছু তাদের সেখানেই। তবে নিজের দেশ আর ভিন্ন দেশের তফাৎ যেনো আকাশচুম্বী। আব্রাহাম ঠিকঠাক থাকলেও আইরাত যেনো জেদ ধরে বসে আছে যে সে দেশে যাবেই যাবে তাও আবার দুদিনের মাঝেই। এখন কি আর করার যেতে তো হবেই। এখানের তাদের বাড়ি টা ফুল সেইফটি দিয়ে, প্রটেকশন দিয়ে তারপর যেতে হবে। আজ একদম সকাল সকাল আইরাত উঠেই সব গোছগাছ করা শুরু করে দিয়েছে। ট্রোলি ব্যাগে এক এক করে সব জিনিস গুছিয়ে তুলছে। আব্রাহাম ফোনে কথা বলতে বলতে রুমের ভেতরে আসে। আব্রাহাম কে দেখেই টাফি আর সফটি এসে তার পায়ের কাছে লাফানো শুরু করে দেয়। আব্রাহাম গত এক ঘন্টা যাবত ফোনে আর ল্যাপটপে কাজ করেই যাচ্ছে যা আইরাতের রাগ তুলে দিচ্ছে। এখানে এতোগুলো কাজ হেল্প করা বাদ দিয়ে উনি ফোনে লেগে আছেন। আব্রাহাম ফোন কাটতে না কাটতেই আইরাত চিল্লিয়ে ওঠে…

আইরাত;; আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; ওমা, আরে এতো চিল্লাও কেনো কি হয়েছে?

আইরাত;; আপনি দেখেন না কি হয়েছে। এখানে কতো গুলো কাজ এটা ওটা সব গোছাতে হবে আমাকে হেল্প করা বাদ দিয়ে আপনি কি ফোন নিয়ে পরে আছেন বলুন তো!

আব্রাহাম বুঝলো যে আইরাত রেগে আছে। সে আইরাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে তার ঠোঁটে চুমু দিয়ে, হাতটা ধরে নিয়ে বিছানার ওপর বসিয়ে দেয়। আইরাতের হাতে একটা বার্গারের প্লেট ধরিয়ে দিয়ে আব্রাহাম মেকি একটা হাসি দিয়ে এক এক করে সব কাজ করতে লাগে। ব্রেকফাস্ট করে নি এখনো তারা, আইরাত তার দুপা দুলাচ্ছে আর আরামছে খাচ্ছে। আব্রাহাম সবকিছু ভাজ করে করে ব্যাগে তুলে ফেলে।

আব্রাহাম;; মাথা ঠান্ডা হয়েছে বেবিগার্ল?

আইরাত;; হ্যাঁ।

আব্রাহাম;; তো বললেই তো হতো যে ‘আমার ক্ষিদে পেয়েছে আমি বসবো আপনি কাজ করুন’ ব্যাস।

আইরাত;; হয়েছে আপনি আপনার ফোন নিয়েই পরে থাকুন।

আব্রাহাম;; জানপাখি সরি কাজ করছিলাম তো৷

আইরাত;; আচ্ছা হয়েছে। আচ্ছা টাফি আর সফটি কেও খেতে দিন তারাও খায় নি সকাল থেকে। আমি আপনার জন্য গরম খিচুড়ি আনছি।

আব্রাহাম;; আমি হাত দিয়ে খেতে পারবো না।

আইরাত;; আমি খাইয়ে দিতে পারবো না, আমার কাজ আছে অনেক।

আব্রাহাম;; কি বললি?

আইরাত;; আরে দিচ্ছি তো খাইয়ে, হাইপার হন কেনো!

আইরাত গিয়ে একটা প্লেটে করে কিছু খাবার নিয়ে আসে। তারপর আব্রাহাম কে খাইয়ে দেয় আর সে কাজ করতে থাকে। ঘন্টা খানেক সময় পর তারা দুজনেই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। বাড়ির পাশে দশ জন গার্ড কে পাহারায় রেখে দিয়ে গেছে। কেননা বাড়িটা আমেরিকা তে। আর তারা থাকবে বাংলাদেশে। বাড়ি টা আর যাই হোক এভাবে ফাকা রেখে গেলে তো হয় না। চাবি থাকবে আব্রাহামের কাছেই আর এখানে গার্ড রা পাহারায় থাকবে। যখন এখানে অর্থাৎ আমেরিকা তে আসবে তখন এখানেই থেকে যাবে। আব্রাহাম গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। মাঝে মাঝে আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে।

আব্রাহাম;; খারাপ লাগছে না?

আইরাত;; কই! না তো।

আব্রাহাম;; না মানে এতো গুলো দিন এখানে থাকলে বাড়িটাও ছেড়ে আসতে হলো তাই বলছি যে খারাপ লাগছে না!

আইরাত গাড়ির ব্যাক সীটে টাফি & সফটির দিকে একবার তাকায়। তারা দুজন চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।

আইরাত;; কম খারাপ লাগছে। তেমন একটা না।

আব্রাহাম আবার গাড়ি চালানোর দিকে মনোযোগ দেয়। এয়ারপোর্টে এসে পরলে গাড়ি থেকে নেমে পরে। গার্ড রা এক এক করে সব জিনিসপত্র নিচে নামিয়ে আনে। অতঃপর তারা ভেতরে চলে যায়। ফ্লাইটে গিয়ে বসে পরে। এখন এখানে এই ফ্লাইটের ভেতরে আবার কমপক্ষে পুরো একদিন থাকতে হবে। এটা ভেবেই আইরাত লম্বা এক নিঃশ্বাস ছাড়ে।

আব্রাহাম;; আর ইউ ওকে?

আইরাত;; কবে থেকে যে নিজের বাড়ির আর বাড়ির মানুষ দের মুখগুলো দেখি না।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ যাচ্ছি তো। এখন শুধু মুখ না পুরো আপাদমস্তক সব দেখে নিও।

আইরাত;; হুমম।


২৪ ঘন্টা পর~

সেইদিনের রাত গড়িয়ে গিয়ে পরেরদিন ভোর সকাল হয়ে গিয়েছে। ফ্লাইটের ভেতরে এনাউন্সমেন্ট হয়ে গিয়েছে। এই এনাউন্সমেন্ট-এর শব্দেই আইরাতের ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো আর আব্রাহাম তো সারারাত সজাগই ছিলো। ঘুম ভেঙে চোখ মেলে তাকাতেই দেখে তার গায়ের ওপর আব্রাহামের জেকেট রাখা। আস্তে করে হাই তুলতে তুলতে উঠে পরে।

আব্রাহাম;; ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। ঘন্টা খানিকের মাঝেই পৌঁছে যাবো আমরা।

আইরাত;; ওয়েট, আমরা যে যাচ্ছি তা কি বাড়ির সবাই জানে?

আব্রাহাম;; সবাই না তবে হ্যাঁ রাশেদ আর অয়ন-কৌশল জানে যে আমরা যাচ্ছি।

আইরাত;; বলা উচিত তাই না।

আব্রাহাম;; একদম না। সারপ্রাইজ।

আইরাত;; ওহ আচ্ছা আচ্ছা।

আইরাত উঠে গিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। তারপর এসে আবার সীটে বসে পরে। এয়ার হোস্টেজ এসে তাদের ব্রেকফাস্ট দিয়ে যায়। হালকা ফুলকা কিছু ব্রেকফাস্ট করে নেয়। তার ঘন্টা খানেক পর ফ্লাইট ল্যান্ড করে। ফ্লাইট থেকে নেমে যেতে লাগে। আশেপাশে গার্ড”স সব আছে। বেশ কিছুদূর এগিয়ে যেতেই অয়ন-কৌশল কে চোখে পরে আব্রাহামের। তারা তো আইরাত-আব্রাহাম কে দেখেই একদম ফেটে পরে।

কৌশল;; ওয়েলকাম ব্যাক ম্যান।

অয়ন;; বউমনিইইইইইইইইইইইইইই।

রাশেদ;; ওয়েলকাম স্যার & ম্যাম।

আব্রাহাম গিয়ে সবাই কে জড়িয়ে ধরে। অয়ন তো পারে না কেঁদে দেয়। খেয়াল করে দেখে আইরাতের কোলে সাদা ধবধবে দুটো কুকুর ছানা। এদের দেখে লোভ আর সামলাতে না পেরে কোলেই নিয়ে নিলো।

অয়ন;; যাক আমেরিকা থেকে আর যাই কিছু আনো আর নাই আনো। দুজন নতুন সদস্য কে ঠিকই এনেছো।

আইরাত;; না নিয়ে এসে থাকতেই পারলাম না।

অয়ন;; বউমনি কত্তো যে মিস করেছি তোমাদের দুইজন কে। বলার বাইরে। আমি ভেবেছি আমেরিকা যাচ্ছো হয়তো কিছুদিনেই এসে পরবে কিন্তু মাসের পর মাস হয়ে এলো কোন খবর নেই। যাক অবশেষে ফিরে এলে।

আইরাত;; না এসে থাকা যায় বলো।

আব্রাহাম;; আচ্ছা বাড়ির কাউকে বলিস নি তো?

রাশেদ;; না স্যার, বাড়ির কেউই জানে না।

আইরাত;; ঝটকা খাবে ঝটকা।

কৌশল;; তাহলে যাওয়া যাক।

গাড়িতে ওঠে পরে তারা। অয়ন বাইক দিয়ে যাচ্ছে রাশেদ-কৌশল সামনে আর আব্রাহাম আইরাত পেছনে বসে আছে। ত্রিশ মিনিট বাদেই তারা পৌঁছে যায় আব্রাহামের বাড়ির সামনে।

আব্রাহাম;; শশুড়বাড়ি ফিরে এসো বউ আমার।

আইরাত;; হুম এলাম।

কৌশল;; বউমনি আগে তুমি যাও। আমরা ছেলেরা পরে আসছি। কেননা বাসায় সবথেকে বেশি মিস তোমাকে করা হয়েছে।

আব্রাহাম;; কি বলিস এইসব?

অয়ন;; জ্বি, আপনাকেও মিস করেছে সবাই কিন্তু খুবই কম পরিমাণে।

আব্রাহাম;; বাহহ দারুন। আমাকে কেউ মনেই রাখে নি।

আইরাত;; এর জন্যই তো বলি যে আপনাকে ছোট বেলা কুড়িয়ে পেয়েছে দাদি।

আব্রাহাম;; হয়েছে যাও যাও।

আইরাত ধীর পায়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। কলিং বেলে বার কয়েক চাপ দিতেই খোশমেজাজে ইলা এগিয়ে আসে। হয়তো ভেতরে অনামিকা ছিলো তার সাথেই কথা বলতে বলতে ইলা এগিয়ে আসে। ইলা তো দরজা খুলে সামনে তাকাতেই পুরো থ হয়ে গেলো। আইরাত মেকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাত;; আব…. আচ্ছা দাদি আম্মা এটা কি আইরাত আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী-এর শশুড় বাড়ি??

ইলা কতোক্ষণ চুপ করে থেকে হুট করেই চিৎকার দিয়ে ওঠে।

ইলা;; ওওও অনামিকা গো। দেখো দেখো কে এসেছে। আরে বাইরে এসো জলদি।

অনামিকা;; কি হয়েছে খালামনি? কে এসেছে?

অনামিকা তো বাইরে বের হয়ে আরো অবাক। আইরাত মুখ টিপে হেসে দাঁড়িয়ে আছে। অনামিকা দাঁড়িয়েই ছিলো তবে ইলা আর থাকতে না পেরে ছুটে এসে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে। অনামিকাও তাই। শুরু হলো মা-দাদি কান্নাকাটি। আইরাত এদের সামলাতেই পারে না। আর বাড়ির গেইটের বাইরে সোজা হয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চারজন। আব্রাহাম, অয়ন, রাশেদ, কৌশল। তারা ভেতরের কান্ড দেখছে।

অয়ন;; দেখ ভাই বউমনি যেতে না যেতেই কি শুরু হলো এদের কান্নাকাটি আর না জানি তুই গেলে কি হবে।

আব্রাহাম চুইং গাম চিবুতে চিবুতে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; আমি ভাবছি ভেতরেই যাবো না। কান্না যে কেনো করে এরা বুঝি না। আরে বাড়ির মেয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে কতোদিন পর সুন্দর করে ভেতরে নাও না। কিন্তু না আহারে ম্যালোড্রামা।

আব্রাহামের কথা শুনে রাশেদের কোলে থাকা কুকুরছানা দুটো কিছুটা ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। এতে চারজনই মিলেই হেসে ওঠে। ইলা আর অনামিকা তো আইরাত কে নিয়েই ব্যাস্ত ছিলো কিন্তু হুট করেই আব্রাহামের কথা মনে পরে তাদের।

অনামিকা;; কিরে জামাই কই?

আব্রাহাম;; জামাই এসে গেছে শাশুড়ী আম্মু।

অতঃপর সবাই বাড়ির ভেতরে চলে যায়। বাড়িটা যেনো এতোদিন পর পূর্ন মনে হচ্ছে। পরিবার টা পূর্ণ আজ আব্রাহাম-আইরাতের ফিরে আসাতে। বিকেলের দিকে দিয়া, অবনি কেও ডাকা হয় বাসায়। বাড়িতে একটা গেট-টুগেদারের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সবার মিলেমিশে থাকায় বাড়ি টা যেনো পুরো দমে ঝলকাচ্ছে। বাড়ি আজ তার পুরোনো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তবে তাদের এই খুশির মাঝে আইরাতের সনামধন্য ফুপি কিছুটা ঝামেলা পাকিয়ে দেয়।





চলবে~~

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪৬

সবাই মিলেমিশে বেশ ভালো সুন্দর একটা সময় কাটাচ্ছিলো। তবে এর মাঝে সাবিলা অর্থাৎ আইরাতের ফুপি যেনো “এক গ্লাস দুধে এক ফোটা লেবুর রস” হয়ে এলো। তখন সময় প্রায় সন্ধ্যা, আইরাত আর অবনি মিলে রান্নাঘরে টুকটাক কাজ করছিলো। হলরুমে সবাই কে চা দিয়ে এসে পরতে ধরবে তখনই সাবিলার ফোন আইরাতের কাছে। এতোদিন পর নিজের কাছে সাবিলার ফোন পেয়ে যেমন সে অবাক হয় তেমনই সে বেশ খুশিও হয়। খুশি খুশি মনেই ফোন রিসিভ করে কানে ধরে আইরাত৷

আইরাত;; হ্যালো ফুপি!

সাবিলা;; রাখ তোর ফুপি। হ্যাঁ রে আইরাত। তুই এমন মেয়ে বের হবি তা আমি আগে কখনো ধারণাও করি নি।

আইরাত তো অবাকের চরম পর্যায় সাবিলার কথা শুনে। সে আজ সকাল বেলাই তো এলো আমেরিকা থেকে দেশে। এই টুকু সময়ের মাঝে সে এমন কি করে বসলো যে সবিলার চোখে আইরাত উল্টো প্রকৃতির মেয়ে হয়ে গেলো। আইরাত কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই সাবিলা বলে ওঠে…

সাবিলা;; আমি ভাবি নি তোর মুখে মধু অন্তরে বিষ হবে। একটা বারও আটকালি না তুই।

আইরাত;; আরে কিন্তু হয়েছে কি? কি করেছি আমি? আর কাকেই বা আটকাবো? কি করা থেকে আটকাবো? কি বলছো এইসব কিছুই তো মাথায় ঢুকছে না আমার।

আইরাতের কিছুটা জোরে কথা বলায় সবাই তার দিকে তাকায়। আব্রাহাম ইশারাতে আইরাত কে ‘কি হয়েছে’ জিজ্ঞেস করলে আইরাত মেকি হেসে সেখান থেকে কেটে পরে। কিছুটা দূরে চলে আসে।

আইরাত;; ফুপি তুমি এইসব কি বলছো? কি হয়েছে?

সাবিলা;; দেখ আইরাত আমি কিছু বলি না দেখে যে কিছুই বলবো না বা সবসময় ছেড়ে দিবো তেমন টা না।

আইরাত;; আমার সাথে ঝগড়া করে কোন লাভ আছে কি বলো! আর ঝগড়া করছোই বা কি নিয়ে তাই তো জানি না আমি আরে আগে বুঝিয়ে বলবে তো নাকি!

সাবিলা;; নিলয়।

আইরাত;; নিলয়! কি হয়েছে নিলয় ভাইয়ার?

সাবিলা;; নিজের ডান হাত, আর দু পা ভেঙে হস্পিটালে পরে আছে।

আইরাত;; কিহহহ? কি বলো? কীভাবে হলো এইসব কিছু? কখন হলো?

সাবিলা;; হয়েছে থাক থাক বুঝেও আর না বুজার ভান ধরে থাকতে হবে না। জানি আমি সব।

সত্যি এখন আইরাতের মুখ দিয়ে গালি বের হচ্ছে। কিন্তু খুব কষ্টে তা দমিয়ে রেখেছে নিজের মাঝেই। একটা কথা ক্লিয়ার করে না বলেই এভাবে অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছে সাবিলা।

আইরাত;; ফুপি আমি কিছুই জানি না এইসবের। সো প্লিজ বলো।

সাবিলা;; দেখ মানলাম যে নিলয় তোকে ভালোবাসতো, তোকে বিয়েও করতে চেয়েছিলো। চেয়েছিলো কিন্তু তা আর বাস্তবে রুপ নেয় নি। তাহলে এখন এগুলো কেনো?

আইরাত;; মানে?

সাবিলা;; মানে এইসব কিছু আব্রাহাম, তোর জামাই করেছে।

আইরাত;; মাথা কি ঠিক আছে তোমার ফুপি? কি বলছো তা কি একবারও খেয়াল করে দেখছো?

সাবিলা;; আরে আব্রাহাম যে তোকে পাগলের মতো করে ভালোবাসে তা তো জানিই কিন্তু এভাবে একজন কে ক্ষতি করে দিবে নাকি সে!

সাবিলার কথা শুনে আইরাত হাসবে নাকি কাঁদবে ভুলে গেছে। লাইক সিরিয়াসলি! সে আর আব্রাহাম দেশের বাইরে থেকেই আসলো আজকে সকালে আর সেখানে আব্রাহাম কিনা মারতে যাবে তাও আবার নিলয় কে। কোব দুঃখে! নিলয় তো আইরাতের সাথে কিছু করে নি তাহলে আব্রাহাম কেনোই বা তাকে মারতে যাবে। যেখানে তার সাথে নিলয়ের কোন যোগাযোগই নেই। আব্রাহাম আসলে বদমেজাজি, রাগ নাকের ডগায় থাকে তো তাই সবাই তাকে দেখে মনে করে যে আব্রাহাম যখন যা ইচ্ছে তাই করে দিতে পারে। কিন্তু এখন তেমন টা না। আব্রাহাম এতো বড়ো একটা কান্ড করে রাখবে আর আইরাত তা জানবে না তেমন টা হয় না। নিলয়ের সাথে প্রথম দিকে আব্রাহামের অবশ্য একটু ঝামেলা ছিলো তাই সাবিলার আব্রাহাম কেই সন্দেহ করছে। কোথায় না কোথায় যেনো নিজের ছেলে মারপিট করে এসেছে সেই খোঁজ খবর না নিয়ে আব্রাহাম কে সন্দেহের কাটায় রেখেছে। যত্তসব।

সাবিলা;; কিরে কিছু বলিস না কেনো? আচ্ছা নিলয় করেছিলো কি হ্যাঁ যে আব্রাহাম তাকে এভাবে পেটালো?

ব্যাস আইরাতের মাথায় আগুন ধরে গেলো। বাড়ির সবার কথা ভুলে গিয়ে গলা ফাটিয়ে সাবিলা কে বলতে লাগে।

আইরাত;; হ্যাঁ মেরেছে, বেশ করেছে মেরেছে। শুকুর করো যে তোমার গুনধর ছেলে কে জানে মেরে দেয় নি। মানে যে কোন কিছু একটা বলে দিলেই হলো। সম্পূর্ণ টা না জেনেই, না শুনেই দোষ চাপিয়ে দিলাম একজনের ঘাড়ে তাই না!

সাবিলা;; আইরাত তুই………..

আইরাত;; অনেক হয়েছে অনেক আলতু-ফালতু বকেছো এবার চুপ করো। আব্রাহাম আর আমি আমেরিকা থেকে দেশেই ফিরেছি আজ সকালে আর এখন তুমি বলো কিনা যে আব্রাহাম নিলয় ভাই কে মেরেছে! ওহ আচ্ছা ভালো। তো আমি হস্পিটালে আসছি তোমার ছেলেকে খুন করতে। আমার জামাই তো আধোমরা করেছে আমি পুরো মেরে ফেলবো। এরপর আবার বাড়ি আসবো। আমি আসছি দাড়াও।

এই বলেই আইরাত ফোন কেটে দিলো। আর সাবিলার তো চোখ ছানাবাড়া। আইরাত কে এভাবে কথা বলতে দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম আস্তে করে উঠে গিয়ে আইরাতের পাশে দাঁড়ায়।

আব্রাহাম;; কি হয়েছে?

আব্রাহামের কথা শুনে আইরাত ফিক করে হেসে দেয়। হিহিহিহি করে হাসতে হাসতে রান্নাঘর থেকে এসে হলরুমে সোফাতে বসে পরে।

অনামিকা;; এই ভেটকানো বন্ধ কর। কে ফোন করেছিলো? আর কার সাথে এভাবে চটে চটে কথা বলছিলি তুই?

আইরাত;; তোমারই ননদিনী।

ইলা;; কি হয়েছে রে?

আইরাত;; মানে মানুষ কত্তো পরিমাণে আজাইরা হলে এইসব আবোলতাবোল বকতে পারে তা ফুপি কে না দেখলে বুঝতামই না।

রাশেদ;; ম্যাম এনিথিং সিরিয়াস!?

আইরাত;; আরে না তেমন না। নিলয় ভাইয়া হয়তো কারো সাথে মারপিট করে নিজের বডি পার্ট ভেঙে হস্পিটালের বেডে শুয়ে আছে আর ফুপি এখন ফোন করে বলে যে আব্রাহাম নাকি নিলয় ভাইয়া কে এভাবে মেরেছে।

আব্রাহাম;; ওয়াহহহহহহ 🙂

আইরাত তো আরো হাসি।

আব্রাহাম;; সমস্যা নেই। দুলাভাই আর শালার মাঝে এমন টুকটাক মারপিট হয়েই থাকে।

এবার যেনো সবাই হেসে দেয়।

অনামিকা;; আচ্ছা একবার দেখতে যাওয়া উচিত তাই না!

আইরাত;; আমি পারবো না যেতে। তোমার ননদের পোলা, তুমি যাও।

দিয়া;; এই যা কি বলিস। যাই হোক সব বাদ দে। দিয়ে চল একটা বার দেখে আসি।

অয়ন;; ওরে তোমার বড্ড মায়া লাগছে এই নিলয়ের জন্য তাই না!

দিয়া;; আরে একটা মানুষ অসুস্থ তাই বলেছি।

অয়ন;; এহহহ রে গরিবের মাদার তেরেসা।

আইরাত;; এই তোরা এখন ঝগড়া লাগাস না তো আবার।

সবাই বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো তার মাঝেই আব্রাহাম বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!

আইরাত;; হ্যাঁ।

আব্রাহাম;; আই থিং নিলয় কে একবারের জন্য হলেও তোমার দেখতে যাওয়া উচিত।

আইরাত চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে।

আইরাত;; আজ সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠেছিলো গো?
আব্রাহাম;; মানে কি?

আইরাত;; আপনি বলছেন এই কথা? সত্যি!

আব্রাহাম;; না আমার মনে হলো যে একটা বার দেখে আসা উচিত তাই বললাম আর কি।

আইরাত;; আচ্ছা আপনি রেগে এই কথা গুলো বলছেন না তো আবার?

আব্রাহাম;; আরে না না একদম না। তুমি শাশুড়ী আম্মু কে নিয়ে যেতে পারো সমস্যা নেই।

আইরাত অনামিকার দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; মা আপনি আইরাত কে নিয়ে যেতে পারেন আমি সাথে ড্রাইভার আর গার্ড কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

অনামিকা;; আচ্ছা।

বাসায় সবাই আছে। কাউকেই আজকে যেতে দেয়নি। সবাই একসাথেই থাকবে। তবে এখন আইরাত আর অনামিকা চলে যায় হস্পিটালের জন্য। বেশ সময় পর গিয়ে থামে হস্পিটালের বাইরে। পেছনে ড্রাইভারের হাতে এতোগুলো জিনিস। রেসিপশনে গিয়ে নিলয়ের রুম নাম্বার জেনে নিলো আইরাত তারপর সেদিকেই যায়। আর যেতেই দেখে বেডে পুরো সাদা ব্যান্ডেজে জড়িয়ে আছে একজন ব্যাক্তি। মাথায়ও তার ভারি ব্যান্ডেজ। দু পা ব্যান্ডেজ করে ওপরের দিকে কিছুটা উঁচু করে রাখা। নাকের ওপর ছোট্ট একটা ব্যান্ডেজ করে রাখা হয়েছে। অনামিকার কপালে চিন্তার ছাপ এইসব দেখে। তবে আইরাতের মুখের কোণে ঝুলছে শয়তানি হাসি। কি পরিমাণ যে হাসি আসছে তার কিন্তু খুব কষ্টে তা দমিয়ে রেখেছে এই মুহুর্তে। সাবিলা নিলয়ের পাশেই বসে আছে। অনামিকা দ্রুত সাবিলার দিকে এগিয়ে যায়।

অনামিকা;; সাবিলা!

সাবিলা;; ভাবি এসেছো তুমি?

অনামিকা;; কি রে এইসব কিছু কি করে হলো?

সাবিলা;; জানি না আমি। নিলয় কে জিজ্ঞেস করলেও কিছুই বলছে না। ডাক্তার অব্দি জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু কিছুই বলে না। এখন ডাক্তার বলছে যে বেশি সিরিয়াস কিছু হলে পুলিশ স্টেশনে ফাইল করতে হবে।

অনামিকা হালকা ভাবে নিজের মাথা দুলিয়ে আইরাতের দিকে তাকায় দেখে আইরাত মুখে হাত দিয়ে মুখ টিপে হাসছে। অনামিকা কিছুটা চোখ গরম করে তাকায়। আইরাত চুপ করে আবার ফিক করেই হেসে দেয়।

সাবিলা;; জানি না কি হবে।

আইরাত;; কিছুই হবে না। নিজের ছেলেকে দেখে রেখো মেডিসিন ঠিকঠাক ভাবে সব খাইয়ে দাও তাহলেই হবে। বেড রেস্টে রেখো তাহলেই হবে। আর রইলো কথা পুলিশ চক্করের তো তার চিন্তা বাদ দাও কিছুই হবে না। চিন্তা নেই।

সাবিলা;; তুই বলছিস এই কথা?

আইরাত;; শুনো আমার জামাই এর না এতো ঠ্যাকা পরে নাই যে তোমার ছেলে কে মারবে। আব্রাহামের তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তাই না। যখন মুখে যা আসে তাই বলে দাও। একটা বারও কি কথার সত্যতা কতোটুকু তা যাচাই করো নাকি, আজাইরা। এইসব হাবিজাবি ফালতু বদনাম দেওয়ার পরও যে আমি আর আমার মা তোমার ছেলে কে দেখতে এসেছি তাই তোমার ভাগ্য। তোমার ছেলে তো এখন কোন কথা বলতে পারছে না। ঠিক হলে না হয় ওকেই জিজ্ঞেস করে নিও যে কীভাবে এমন করে হাত-পা ভেঙেছে!

এই বলেই আইরাত সেখান থেকে এসে পরে। মেজাজ তুঙ্গে ওঠে গেছে। হস্পিটালের বাইরে এসে অনামিকা কে ফোন করে বলে দেয় সে যেনো পরে বাসায় এসে পরে আইরাত এখন চলে যাবে। তাই ড্রাইভার কে হস্পিটালের সামনে রেখেই আইরাত একটা টেক্সি করে এসে পরে।
বাসায় এসে দেখে দিয়া আর অবনি গালে হাত রেখে বসে আছে। বাকিরাও বসে আছে তবে অবনি আর দিয়ার মাঝে কিছুটা ভিন্নতা আছে। আইরাত গিয়ে তাদের মাঝে বসে পরে।

আইরাত;; কিরে কি হয়েছে?

অবনি;; আর বলিস না অয়ন ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করেছে?

আইরাত;; দিয়া?

অবনি;; হ্যাঁ।

আইরাত;; কিন্তু কেনো?

অবনি;; আরে দিয়ার সাথে আমাদের ভার্সিটির এক বড়ো ভাই জাস্ট কথা বলেছিলো তাই অয়ন ভাইয়া একদম রেগে বম।

দিয়া;; বুঝলাম না কথা বলেছি আমি সমস্যা কেনো উনার!

অবনি;; হ্যাঁ উনি তো ভার্সিটির সিনিয়র তো কথা বলেছে এভাবে এমন রিয়েকশন দে……..

কৌশল;; তুমি যেনো ভুলেও কথা না বলো।

অবনি;; হুয়াট!

কৌশল অবনির পাশ দিয়ে যেতে যেতে এই কথা বলে। দিয়া আর অবনি হা হয়ে বসে আছে। আর আইরাত হেসে দেয়। কিছু সময় পর অনামিকা বাসায় এসে পরে। হলরুমে আব্রাহাম নেই। আইরাত সিড়ির ওপরে নিজেদের রুমের দিকে তাকায়। আব্রাহাম কে খুঁজে চলেছে। আইরাত ওপরের রুমে চলে যায়। দেখে সেখানেও আব্রাহাম নেই। তবে রুমের পুরো হুলিয়া পালটে গেছে। রুমের লাইট সব প্রায় নেভানো শুধু বড়ো বড়ো কয়েকটা সাদা মোমবাতি জ্বলছে। তার মাঝেই হুট করে আব্রাহাম আইরাতের পেছন থেকে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। এতে আইরাত কিছুটা চমকে ওঠে। আব্রাহাম পেছন থেকেই আইরাতের গালে চুমু দিয়ে দেয়।





চলবে~~

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪৭

জীবন চলছে আপন গতিতে। সুখের ছোয়া চারিদিকে। নেই কোন দুঃখের ছাপ-চিহ্ন। সবকিছুই নিজ নিজ আপন ধারায় প্রবাহমান। অনামিকা চলে গেছে নিজের বাসায়। বাসায় ইলা আর আইরাত থাকে। সেও নিজের ভার্সিটি তে যায়। তাকে তার পড়াশোনায় ফাকি দিতে দেয় না আব্রাহাম। সে নিজের অফিসে যায় আবার বাসায় থেকেও কাজ করে। আবার আইরাত কেও নিজে পড়ায়। এভাবেই চলছে সব।

তবে আজ ছুটির দিন। আজ সবাই বাসায় থাকলেও আইরাত গিয়েছে তার মায়ের বাড়ি। সকালে যখন আব্রাহাম ঘুম থেকে উঠে তখন শুধু আইরাত তার কপালে একটা চুমু দিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পরে। এখন দুপুর হয়ে এলো বলে। ফোনে কথা হয়েছে তাদের। তবুও কেমন যেনো একটা ফাকা ফাকা লাগছে। সবকিছু কেমন পানসে পানসে লাগছে, খেতে বসেও খাওয়ার প্লেটে শুধু আঙুল ঘুরিয়ে যাচ্ছে আব্রাহাম। মুখ টাও কেমন ফ্যাকাশে। তা দেখে ইলা বলে ওঠে…

ইলা;; কিরে খাচ্ছিস না যে?

আব্রাহাম;; ভালো লাগছে না আমার।

ইলা;; আরে আইরাত তো এসেই পরবে।

আব্রাহাম;; না তার জন্য না।

ইলা;; হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝি আমি।

আব্রাহাম;; আমি উঠলাম।

এই বলেই আব্রাহাম খাবার টেবিল থেকে উঠে পরে। উঠে করিডরে গিয়ে আইরাতের নাম্বারে ফোন করে। দুবার ফোন বেজে কেটে যায়। ফোন না ধরায় এখন রাগ হচ্ছে আব্রাহামের। তিন বারের মাথায় গিয়ে ফোন রিসিভ হয়।

আব্রাহাম;; এই মেয়ে ফোন ধরতে এতো দেরি হয় কেনো?

আইরাত;; না মানে আমি হলরুমে ছিলাম আর ফোন ছিলো রুমে।

আব্রাহাম;; বাসায় এসো।

আইরাত;; আরে ক……

আব্রাহাম;; দরকার পরলে আম্মু কে নিয়েই এসে পরো। তাও তুমি বাসায় আসো।

আইরাত;; আব্রাহাম, আপনি এমন করছেন কেনো?

আব্রাহাম;; কারণ ভালা লাগতাছে না আমার তোরে ছাড়া বুঝছোস তুই!

আইরাত;; আল্লাহ, চিল্লান কেনো? আচ্ছা ঠিক আছে আসছি আমি।

আব্রাহাম;; দুই মিনিটের ভেতরে আসবা।

এই বলেই আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়।

আইরাত;; ওই মায়ায়ায়ায়া।

অনামিকা;; এই ষাড়ের মতো চিল্লাবি না।

আইরাত;; সবাই খালি বকাই দেয় আমারে 🙂

অনামিকা;; বকা খাওয়ার মতো কাজ-কাম করিস কেনো?

আইরাত;; আচ্ছা শুনো! তুমি কি আমার সাথে যাবে?

অনামিকা;; কোথায়?

আইরাত;; কোথায় আবার বাড়িতে।

অনামিকা;; না রে এখন আর না যাই। বাড়ি ফাকা আর কাজও আছে অনেক। তুই যদি যাস তো চলে যা। সেখানেও খালামনি একা।

আইরাত;; আচ্ছা তাহলে গেলাম আমি।

অনামিকা;; আব্রাহাম কি ফোন করেছিলো?

আইরাত;; হ্যাঁ ফোন করে ছোটখাটো একটা বাঁশ দিলো।

অনামিকা;; আচ্ছা বুঝেছি, তুই যা।

আইরাত সেখান থেকে বাইরে বের হয়ে গাড়িতে উঠে পরে তারপর ড্রাইভ করে চলে আসে। বেশ কিছু সময় পর বাড়ি পৌঁছেও যায়। বাড়ির মেইন দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে সামনে অর্থাৎ কিচেন ডেস্কের দিকে তাকাতেই আইরাত অবাক। কপাল কুচকে আসে আপনা আপনি। আব্রাহাম একটা সাদা স্লিভল্যাস গেঞ্জি পরে আছে তার ওপরে আবার সাদা কিচেন এপ্রোন পরা। বডির সাথে লেগে আছে। চুলগুলো কপালে এসে পরেছে, গালভর্তি চাপদাড়ি গুলো ফর্সা মুখে ফুটেছে মারাত্মক। কিন্তু হাতে রয়েছে স্টিলের বড়ো গোল একটা পাত্র। আর তাতে রয়েছে অনেক টুকু লিকুইড চকোলেট। আর তাই হাতের ভাজে রেখে শুধু ঘুটিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ হাতের উল্টো পাশ দিয়ে সে তার কপালের দিকটায় হালকা ছুইয়ে দেয় এতে ময়দার মতো কিছু সাদা জিনিস তার কপালে লেগে যায়। আব্রাহামের দুহাতেই চকোলেট লেগে আছে। শল্ডারেও খানিক লেগে আছে। সে তার মতো করে কাজ করেই যাচ্ছে। আর আইরাত তো আব্রাহাম কে এমন লুকে দেখে অবাক। সে কি বলবে খুঁজে পায় না। আব্রাহাম কে পুরাই চকোলেট বয় লাগছে এখন। আইরাত আশেপাশে তাকিয়ে ইলা কে খুঁজতে লাগে। সে কোথায়! আইরাত তার হাত থেকে ব্যাগ টা সোফার ওপরে রেখে দিয়ে আব্রাহামের দিকে এগোয়। ডেস্কের সামনে এসে দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে পরে। কিন্তু তবুও তাতে আব্রাহামের যেনো কোন হেলদোল নেই। সে তার মতো করেই কাজ করে যাচ্ছে। আজব তো! আইরাত কে এতো বেশি তাড়া দিয়ে বাড়ি আনলো সে আর এখন কিনা তার নিজেরই কোন খবর নেই। আব্রাহাম তার দিকে তাকাচ্ছে না দেখে আইরাত তার গলা কিছুটা খাকাড়ি দিয়ে ওঠে। নাহ, তবুও আব্রাহামের খেয়াল নেই। তা দেখে আইরাত নিজেই বলে ওঠে…

আইরাত;; এগুলো কি হচ্ছে?

আব্রাহাম;; কোথায় কি হচ্ছে?

আইরাত;; আপনি কিচেনে কেনো আর এতোগুলো চকোলেট কেনো?

আব্রাহাম;; চকোলেট কেক বানাবো তাই।

আইরাত;; আপনি পারেন বানাতে! (অবাক হয়ে)

আব্রাহাম;; অবশ্যই, আমি কি তোমার মতো ঢেড়স নাকি!

আইরাত;; কি আমি, আমি ঢেড়স!

আব্রাহাম;; হ্যাঁ একদম।

আইরাত;; হুম ভালো। দাদি কোথায় দেখছি না যে?

আব্রাহাম;; দাদি অনাথ আশ্রমে গিয়েছে।

আইরাত;; একাই গেলো নাকি!

আব্রাহাম;; না সাথে রাশেদ আর গার্ড কে পাঠিয়ে দিয়েছি।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা ভালো করেছেন।

আইরাত কিচেনের ভেতরে এসে সবকিছু উঁকি দিয়ে দিয়ে দেখতে লাগে। নাহ, সবই ঠিক আছে। সত্যি বলতে আইরাত নিজেও এতো ভালো ভাবে কেক বানাতে পারে না৷ আব্রাহামের কোন পাত্তাই নেই সে তার মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তাকে কি যে কিউট লাগছে দেখতে।

আইরাত;; আমাকে এতো তাড়া দিয়ে মায়ের কাছ থেকে নিয়ে এসে এখন নিজেরই কোন হদিস নেই। (ফিসফিস করে)

এই কথা বলেই একটা ছোটখাটো ভেংচি কেটে আইরাত সেখান থেকে এসে পরতে ধরবে কিন্তু তখনই আব্রাহাম পেছন থেকে খপ করে আইরাতের হাত টেনে ধরে ফেলে। এক টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। নিজের চকোলেট ওয়ালা হাত দিয়েই আইরাত কে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। আইরাতের পরণে সাদা জামা ছিলো তা যেনো মূহুর্তেই চকোলেটের কালারে পুরো ভরে গেলো। আব্রাহাম মুখ ডুবিয়ে দেয় আইরাতের ঘাড়ে। তবুও আইরাত চলে আসতে চাইলে আব্রাহাম আরো শক্ত করে তাকে ধরে কানের লতিতে কামড় দিয়ে বসে। আইরাত চোখ মুখ কুচকে ফেলে। আব্রাহাম নিজের ওপর থেকে এপ্রোন টা খুলে ফেলে। আইরাতের কোমড়ে ধরে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয়। আব্রাহামের বুকের ওপর সে নিজের দুহাত রেখে দেয়। সে এবার ইচ্ছে করেই আইরাতের গলায়, বুকে ছুইয়ে দেয়। দুহাতে ইচ্ছে মতো আইরাতের পেটে স্লাইড করতে লাগে এতে চকোলেট দিয়ে একাকার হয়ে যায় আইরাত। আব্রাহাম তার বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে আইরাতের ঠোঁটের পাশে ছুইয়ে দেয়, সেখানে চকোলেট লেগে গেলে আব্রাহাম নিজের ঠোঁট আইরাতের ঠোঁটের পাশে বসিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর উঠে আসে। আর তখন আইরাতের খেয়াল হয় যে আব্রাহামের হাতে অনেক চকোলেট ছিলো। সে নিজের দিকে আকায়। সাদা জামা চকোলেট কালার হয়ে গেছে। আইরাতের তো মাথায় হাত।

আইরাত;; এই এইই আপনি এটা কি করলেন?

আব্রাহাম;; এখনো তেমন কিছু করি নি কেবল তো শুরু।

আইরাত;; আরে আমি জামার কথা বলছি। আমার জামা শেষ। দেখুন আপনি চকোলেট দিয়ে কি করেছেন। এখন এগুলোর দাগ তো আর উঠবে না। কি করলেন আপনি?

আব্রাহাম;; আরে সমস্যা নেই। এমন একটা জামা গেলে হাজার টা এসে পরবে। এতো কিপ্টুস কেনো গো তুমি?

আইরাত;; কিপ্টুস না আব্রাহাম। জামা টা তো নষ্ট হলো নাকি!

আব্রাহাম;; আরে ছাড়ো তো।

আব্রাহাম আইরাতের গালে বেশ টুকু চকোলেট লাগিয়ে দেয় তারপর তার গাল থেকেই খেতে শুরু করে। দুজনেই পুরো চকোলেট চকোলেট হয়ে গেছে। আব্রাহামের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে এখন আইরাতও হাতে চকোলেট নিয়ে আব্রাহামকে লাগিয়ে দেয়। কেকের বারো টা বেজে গেছে। তারা দুই জামাই-বউ চকোলেট দিয়েই শেষ। আব্রাহাম আইরাত কে তুলে ডেস্কের ওপরে বসিয়ে দেয়। আইরাত তার পা দুলাচ্ছে আর আব্রাহাম কে দেখছে। আব্রাহাম চকোলেটের একটা বড়ো স্লাইস এনে অর্ধেক নিজের ঠোঁটে নিয়ে আইরাতের দিকে ধরে। আব্রাহামের ঠোঁট থেকে বাকি অর্ধেক চকোলেট টুকু আইরাত নিজের ঠোঁটে কামড় দিয়ে নিয়ে নেয়। তখনই ওপর থেকে নিচে সিড়ি বেয়ে দ্রুত পায়ে টাফি & সফটি নেমে আসে। যেনো তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা চলছে যে কে কার আগে যেতে পারে। আব্রাহাম-আইরাত দুজনেই হেসে দেয়।


অন্যদিকে অবনিও ভাবছে যে রিপোর্টিং এর কাজ ছেড়ে দিবে। ভার্সিটি করবে আর নিজের মতোই থাকবে। ভার্সিটির ক্যান্টিনে অবনি আর দিয়া বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো তখনই কতোগুলো ছেলে এসে হুট করেই তাদের পাশে চেয়ার টেনে নিয়ে যার যার মতো করে বসে পরে। তারা মোট তিনজন। দিয়া আর অবনি তো বেশ অবাক। সাথে রাগও করে বেশ।

দিয়া;; এটা কোন ধরনের অসভ্যতা!

১ম ছেলে;; কেনো এটা তো ক্যান্টিন, আর এখানে যেখানে ইচ্ছে সেখানে আমরা বসতে পারি।

অবনি;; তাই বলে এভাবে কেউ বিনা বলে কয়ে পাশে বসে। উঠুন জলদি।

২য় ছেলে;; ও হ্যালো সিনিয়র আমরা তোমাদের সো সম্মান দিয়ে কথা বলো।

দিয়া;; হাহ, সম্মান তখন দেওয়া যায় যখন কেউ সেই সম্মানের যোগ্য হয়। আর সিনিয়র হয়েছেন তো কি মাথা কিনে নিয়েছেন নাকি। উঠুন।

৩য় ছেলে;; প্রশ্নই আসে না। আর যেখানে তোমাদের মতো সুন্দরি বসে তাদের রেখে অন্য কোথাও কি করে বসি বলো!

এক কথায় দুই কথায় বেশ বার বেড়ে যায় ছেলেগুলো। অনেক বেশিই উতক্ত করতে লাগে দিয়া আর অবনি কে। ভার্সিটির ক্যান্টিন টা থেকে আবার মেইন রোডে সবই দেখা যায়। অর্থাৎ খোলা মেলা। তখনই সেদিক দিয়ে কৌশল গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলো। একটা ফোন কল আসে তার কাছে যার দরুন তাকে গাড়ি থামিয়ে তারপর ফোন রিসিভ করতে হয়। তবে কথা বলতে বলতেই কিছুটা চিল্লাপাল্লার আওয়াজ তার কানে ভেসে আসে। কৌশল কানে ফোন ধরা অবস্থাতেই কপাল কুচকে আশেপাশে তাকাতাকি করতে লাগে। আর চোখে পরে দিয়া আর অবনি কে। কিছু ছেলে তাদের বিরক্ত করছে বেশ। কৌশল ফোন কেটে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পরে। ছুটে গিয়ে ছেলে গুলো কে টেনে দূরে সরিয়ে আনে তাদের থেকে। এক একটার কলারে ধরে সোজা মুখ বরাবর ঘুষি মেরে দেয়। আর ছেলে গুলো তো কৌশল কে দেখেই চিনেছে। আব্রাহামের সাথে সাথে অয়ন-কৌশলের নাম ডাকও কিন্তু কম না। কৌশল এলোপাতাড়ি ভাবে মারতেই থাকে তাদের। হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই দিয়ে মারছে। দিয়া আর অবনি আস্তে করে এক সাইড হয়ে দাঁড়ায়। কৌশল পাশে তাকিয়ে দেখে একটা ক্রিকেট ব্যাট পরে আছে। দ্রুত তা হাতে নিয়ে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি আঘাত করতে লাগে তাদের। ছেলে গুলো নিচে শুয়েই গড়াগড়ি খাচ্ছে। মুখ নাক দিয়ে রক্তও বের হয়েছে অনেক টা। দিয়া কপাল কুচকে দেখছে এইসব, আর অবনি দিয়ার হাত খামছে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। ইচ্ছে মতো মারার পর সব কটা কে ওপরে দাড় করিয়ে ধরে।

কৌশল;; এখানে যদি দ্বিতীয় বার তোদের দেখি তো পিঠের ছাল তুলে নিবো একেবারে। আর হ্যাঁ তোরা হাতে তোদের টিসি লেটার পেয়ে যাবি।

কৌশল ছেলে গুলো কে ভাগিয়ে দেয়। তারপর শার্টের দুহাতা গুটাতে গুটাতে দিয়া আর অবনির দিকে এগিয়ে আসে।

কৌশল;; ঠিক আছো তোমরা?

দিয়া;; জ্বি ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ ভাই, কি যে বিরক্তিকর লাগছিলো।

কৌশল;; হুমম। আমি তো তাও কিছুই করলাম না। আব্রাহাম ভাই থাকলে তো লাশ বানিয়ে দিতো এখনই। আচ্ছা চলো দেখি গাড়িতে ওঠো তোমরা। বাড়ি দিয়ে আসছি আমি।

দিয়া;; আচ্ছা ভাইয়া। অবনি চল।

দিয়া আগে আগেই হেঁটে যেতে লাগলো। আর অবনি কৌশলের সাথে যাবে কি যাবে না দ্বিধায় পরে যায়। তখন কৌশল বলে ওঠে…

কৌশল;; অবনি প্লিজ গাড়িতে ওঠো। সিন ক্রিয়েট আর করো না গাড়িতে ওঠো।

অবনি গিয়ে গাড়ির পেছনে উঠে বসে দিয়ার পাশে। কৌশল উঠে ড্রাইভিং সীটে বসে পরে। আগে দিয়া কে তার বাড়ির সামনে ড্রপ করে দিয়ে এসে পরে। তারপর মাঝ পথে এসে থেমে যায়। ব্যাক সীটে মাথা নামিয়ে বসে ছিলো অবনি। হঠাৎ গাড়ি থামাতে দেখে অবনি চোখে তুলে ওপরে তাকায়।

কৌশল;; অবনি সামনে এসে বসো।

অবনি;; আব…না না ঠিক আছি আমি। আপনি যান।

কৌশল;; আমি অবশ্যই তোমার ড্রাইভার নই। সামনে এসো।

হালকা ফুলকা একটা ধমক খেয়ে গটগট করে অবনি সামনে এসে বসে পরে। কৌশলও গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। অবনির বাসার সামনে এসে থামিয়ে দেয় গাড়ি। দেখে বাড়ির সামনে অর্থাৎ ছোট একটা বাগানের মতো খোলা জায়গা আছে সেখানে অবনির মা দাঁড়িয়ে। অবনি গাড়ি থেকে নেমে যায়। যাওয়ার আগে একবার পেছন ফিরে তাকায় দেখে তার বাড়ির একদম ভেতরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কৌশল দাঁড়িয়েই আছে। ভেতরে চলে গেলে কৌশলও চলে যায়। অবনির মা কিছু জিজ্ঞেস করে না। তবে ভেতরে রুমে গিয়ে অবনির মনে পরে যে ‘কৌশল কি করে তার বাড়ির এড্রেস জানলো?’ তবে উত্তর নেই। মনের প্রশ্ন যেনো মনেই রয়ে যায়।


পরেরদিন সকালে অফিসে গেলে কৌশল কে কেবিনে ডাকে আব্রাহাম। সেও আসে।

কৌশল;; আসবো?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ আয়।

কৌশল;; ডেকেছিলি ভাই!

আব্রাহাম;; শুনলাম কাল নাকি তুই মারপিট করেছিস?

কৌশল;; মারপিট করিনি, আমি মেরেছি।

আব্রাহাম;; জ্বি, তা খুব পূন্যের কাজ করেছেন আপনি। তো কেনো করলেন এমনটা?

কৌশল;; অবনি আর দিয়া কে জ্বালা……..

অয়ন;; কিহহহ দি দ দিয়া কে মানে! দিয়া কে কি?

অয়ন আব্রাহামের কেবিনেই কাজ করছিলো কৌশলের মুখে এমন কথা শুনে সে তড়িঘড়ি করে বলে।

কৌশল;; আরে ভাই কথা তো শোন। তিনজন ছেলে দিয়া আর অবনি কে জ্বালাচ্ছিলো আমি দেখেছি তাদের। তো তাই মেরে ভাগিয়ে দিয়েছি প্লাস যেই ভার্সিটির স্টুডেন্ট ছিলো তারা তা থেকে বরখাস্ত করে দিয়েছি।

আব্রাহাম;; ভুল করেছিস তুই।

কৌশল;; কি?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ ভুল করেছিস।

অয়ন;; কিন্তু …

আব্রাহাম;; ওদের তৎক্ষনাৎ খুন করে জলে ভাসিয়ে দেওয়া উচিত ছিলো। যে ছেলে কোন নারীকে সম্মান করতে জানে না সে অবশ্যই কোন সম্মানিত নারীর ছেলেও না।

অয়ন;; একদম। আচ্ছা দুজনেই ঠিক আছে তো?

কৌশল;; হ্যাঁ।

এভাবেই সময় টা যেতে থাকে। আব্রাহাম রাতে যখন বাড়ি যায় তখন দেখে আইরাতের মুখটা কেমন শুকনো, কেমন যেনো মলিনতার ভাব। নিজের ওপর থেকে কোর্ট টা খুলে রেখে দেয়। আইরাত রুম গোছাচ্ছে। আব্রাহাম কে দেখেও না দেখার ভান করে আছে। আব্রাহাম শার্টের হাতা ওপরে তুলতে তুলতে আইরাতের কাছে যায়।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!

আইরাত কিছু বলে না। উল্টো আব্রাহাম কে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আব্রাহাম কপাল ভাজ করে তার যাওয়ার দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; এর আবার কি হলো? (মনে মনে)

আব্রাহাম;; আইরাত!

আইরাত শুধু দ্রুত পা চালিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছে। আব্রাহাম এবার আইরাতের হাত ধরে আটকে দেয়। আইরাত কে বিছানাতে বসিয়ে আব্রাহাম তার সামনে এক হাটু ভাজ করে বসে। নরম সুরেই আইরাত কে জিজ্ঞেস করে…

আব্রাহাম;; কি হয়েছে বেবিগার্ল?

আইরাত;; কিছুই না।

আব্রাহাম;; কিছু তো হয়েছে। বলো আমায়।

আইরাত;; আজ আমার এক বান্ধুবীর বিয়ে ছিলো।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ তো!

আইরাত;; কিছু না।

আব্রাহাম;; আমাদের তো বিয়ে অনেক আগেই হয়ে গেছে তাই না। এক বছর হবে কিছুদিন পরই।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; আরে বাবা কেনো মন খারাপ তা তো বলবে নাকি?

আইরাত;; না কিছু না।

আব্রাহাম;; জানপাখি বলো। (আইরাতের গালে হাত দিয়ে)

আইরাত;; আমাদের বিয়ে টা কেমন সিচুয়েশনে হয়েছে জানেন তো আপনি তাই না!

আব্রাহাম;; কেমন সিচুয়েশন?

আইরাত;; কেমন?

আব্রাহাম;; বলবে তো কেমন।

আইরাত;; আপনি জানেন না কেমন?

আব্রাহাম;; না (না জানার ভান করে)

আইরাত;; আচ্ছা থাক জানতে হবে না আপনার। (দাঁত কটমট করে)

এই বলেই আইরাত চটে সেখান থেকে উঠে চলে যায় আর আব্রাহাম হেসে হেসে সেখান থেকে ওঠে পরে। আইরাত কেনো এমন করলো তা সে ভালোই জানে। আব্রাহাম সবই বুঝে, তবুও না বুঝার ভান ধরে।





চলবে~~