নেশাক্ত ভালোবাসা ২ পর্ব-৬১+৬২+৬৩

0
1564

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬১

মাথার পেছনে একটা সাদা রঙের কুশনে আলতো ভাবে হেলান দিয়ে দোলনাতে বসে রয়েছে আইরাত। মাথার ওপরে খোলা আকাশ। আশেপাশে ছোট ছোট ফুলের গাছ। রোদের মিষ্টি কিরণ এসে মুখের ওপর পরতেই পিটপিট করে চোখে মেলে তাকায় সে। শূন্য নয়নে একবার নিজের চারিপাশে চোখ বুলায়। অতঃপর সবার আগেই হাত টা চলে যায় নিজের পেটের ওপর। এটা ভাবতেই শান্তি লাগে যে নিজের মাঝে একটা না বরং দু-দুটো প্রাণ নিয়ে বেঁচে আছে সে। তার ভেতর আরো দুটো জীবন বেঁচে আছে। মুখের কোণে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। বাতাসে চুলগুলো উড়ে উড়ে যাচ্ছে। স্নিগ্ধ এক পরিবেশ। তখনই টাফি-সফটি এসে দুজনে একে ওপরের পেছনে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগে। তারা আগে থেকে কিছুটা বড়ো হয়েছে। ছুটোছুটি শেষে তাদের গাঢ় গোলাপি রঙের জিভ বের করে আইরাতের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। আইরাত তার পাশে থাকা একটা ছোট বাটি থেকে কিছু বিস্কিট নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে দেয়। দুজনে ছুটে এসে আইরাতের হাত থেকে বিস্কিট নিয়ে খেয়ে ফেলে।
আইরাত আবার হেলান দিয়ে পেটের ওপর এক হাত রেখে শুয়ে থাকে। ওপরে আইরাতের রুম থেকে অর্থাৎ করিডর থেকে নিচে বাগানের দিকটা পুরো দেখা যায়। সেখানে দিয়া, ইলা আর অনামিকার কন্ঠ শুনে আইরাত নিচে একটু উঁকি দেয়। সবাই কে নিচে দেখে আইরাতের নিচে যেতে মন চাইছে। এখানে একা একা বসে থাকতে আর ভালো লাগে না। নিজের গলা ছেড়ে ডাক দেয়।

আইরাত;; আব্রাহাম! আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; এইতো এসে গেছি। কিছু লাগবে বেবিগার্ল?

আইরাত;; সবাই নিচে।

আব্রাহাম;; চলো তোমাকেও নিয়ে যাই।

আইরাত;; বাহ, বুঝে গেছেন।

আব্রাহাম;; হুম চলেন ম্যাডাম।

আইরাত আস্তে করে উঠে পরে। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে ধরে নিয়ে যায়। আজকে ওপরের রুমে উঠেছে আইরাত জিদ করেই। আব্রাহামের কথা একটাও শুনে নি। এর জন্য তাকে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে হচ্ছে। আর তাদের পেছন পেছন টাফি-সফটিও লাফিয়ে লাফিয়ে আসছে।

আব্রাহাম;; আমার একটা কথা যদি শুনতে তুমি আইরাত! এইযে বললাম যে ওপরে সিড়ি বেয়ে উঠতে হবে না। কিন্তু নাহ তুমি তো নিজের মর্জির মালিক।

আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে আইরাত সরু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিশ্চিত রাগে ফুলছে।

আব্রাহাম;; আহা রাগ করছো কেনো? আচ্ছা রাগ করতে হবে না চলো।

আইরাত;; আমি যাবো না।

আব্রাহাম;; না না থাক রাগ করে না, রাগ করে না।

আইরাত;; না না আমি যাবো না, যাবো না। সরেন আপনি।

আইরাত নিজের হাত ঠাস করে ছাড়িয়ে নেয়।

আব্রাহাম;; কি এক জ্বালা। কথায় কথায় শুধু রাগ করে! বেইবি প্লিজ চলো। রাগ করে না সোনা।

আইরাত;; ওহ আচ্ছা আমি, আমি এখন জ্বালা হয়ে গেছি তাই না। থাক জ্বালা আর সহ্য করতে হবে না আপনার।

আব্রাহাম;; 🤦‍♂️

আইরাত;; যান যান।

আব্রাহাম;; জানপাখি প্লিজ চলো। আচ্ছা সরি সরি। এইযে কানে ধরেছ সরি।

আব্রাহাম সত্যি সত্যি আইরাতের সামনে এসে হালকা ভাবে নিজের কানে হাত দেয়। আইরাত তো দুহাত ভাজ করে গাল ফুলিয়ে টিমটিম হয়ে আছে। আব্রাহাম তার মাথা হালকা নিচু করে আইরাতের দিকে তাকায় দেখে আইরাত এখনো গাল ফুলিয়ে রেখেছে। তা দেখে আব্রাহাম তার আঙুল দিয়ে আইরাতের গালে বেলুন ফুটানোর মতো টুস করে টোকা দেয়। এতে আইরাত হেসেই দেয়।

আব্রাহাম;; চলো এখন।

আব্রাহাম তার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগে। ইদানীং এটাই হয়। হুটহাট করেই আইরাতের রেগে যাওয়া, প্রচুর জেদ করে বসা, এটা খাবে না সেটা খাবে না, এখানে যাবে না ওখানে যাবে না, মুড সুইং। তবে সবকিছুই আব্রাহাম সামলিয়ে নেয়। পারফেক্টলি। আইরাত যেমনই থাকুক না কেনো আব্রাহাম এসে আইরাতের পাশে বসে তাকে নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে নিলেই যেনো জোয়ালামুখী শান্ত। নিচে নেমে এসে হলরুম পেরিয়ে বাগানের দিকে চলে যায়। কিন্তু সেখানে খানিক উঁচু ঢিভি ছিলো।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল, ওয়েট। তুমি এখানে দাড়াও।

আইরাত;; কি হয়েছে?

আব্রাহাম;; আসছি আমি।

আব্রাহাম গিয়ে বাগানে আগে একটা চেয়ার ভালোভাবে রেখে আসে। তারপর আবার আইরাতের কাছে আসে। তার দিকে নিজের এক হাত বাড়িয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; Come my 3 in 1…

আব্রাহামের কথা শুনে আইরাত হেসে দেয়৷ আস্তে করে হাত টা আব্রাহামের হাতে রেখে নেমে পরে। তারপর এসে সবার সাথে বাগানে চেয়ারে বসে পরে।

আইরাত;; কি করো দাদি?

ইলা;; এইতো জুস বানাচ্ছিলাম তোর জন্যই। নে নে এটা খেয়ে ফেল আগে।

আইরাত;; না এটা তো জুস না।

ইলা;; আরে জুস-ই তো।

আইরাত;; এটা মিল্ক শেক।

ইলা;; বুঝে গেছে রে 😑।

আইরাত;; হুম হুম চালাকি করো তাই না। ওটি হবে না। আমি খাবো না।

তখনই আইরাতের পাশে আব্রাহাম এসে দুহাত ভাজ করে দাঁড়ায়। গম্ভীর গলায় বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; আইরাত খাও।

আইরাত;; বমি আসে আমার।

আব্রাহাম;; এখন আর আসবে না। দাদি মিল্ক শেক দাও দেখি।

ইলা;; এই নে।

আব্রাহাম মিল্ক শেকে এক গাদা চকোলেট ঢেলে দেয়। মিল্ক শেক থেকে হয়ে গেলো চকোলেট-মিল্ক শেক। সেটা আইরাতের দিকে এগিয়ে দিলে সে খেয়ে ফেলে। খাওয়ার পর আইরাতের ঠোঁটের ওপরে মুচ হয়ে যায়।

আব্রাহাম;; বাহহহ, আমার বউ এর মুচ।

আইরাত;; কৈ কৈ?

আব্রাহাম;; হাহাহা, এদিকে এসো।

আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁটের ওপরে মুছে দেয়। সবকিছু ভালোই চলছিলো কিন্তু তখন কৌশল আসে।

কৌশল;; আব্রাহাম দাভাই!

আব্রাহাম;; হ্যাঁ

কৌশল;; একটু কথা ছিলো।

আব্রাহাম;; আসছি যা।

আব্রাহাম উঠে কৌশলের সাথে যায়।

আব্রাহাম;; কি হয়েছে?

কৌশল;; একটু অফিসে যেতে হতো তোমার।

আব্রাহাম;; কেনো?

কৌশল;; আসলে কয়েক লাক্ষ টাকা লস হয়েছে।

আব্রাহাম;; কেনো? কীভাবে?

কৌশল;; মানে জিনিস আমাদের কিন্তু তাতে নেমপ্লেট বা ক্রেডিট সম্পূর্ণ অন্যের দেওয়া। আর যেইসব জিনিসে আমাদের কোম্পানির নাম রয়েছে সেখানে জিনিসের গুনগত মান খুবই কম। যার ফলে নাম বদনাম হচ্ছে আমাদেরই। প্রোডাক্ট ভালো থাকলেও সেখানে উল্টা-পাল্টা সব করে রেখেছে অর্থাৎ ভেজাল যুক্ত। যার দরুন লক্ষ খানেক টাকা লস।

আব্রাহাম তার এক হাত কোমড়ে রেখে, আঙুল দিয়ে কপালের পাশে স্লাইড করে একবার পেছন ঘুরে তাকায়।

আব্রাহাম;; কে করেছে এইসব কিছু জানিস?

কৌশল;; খোঁজ লাগাচ্ছি তবে এখনো কিছুই জানা যায় নি। কিছু সময় লাগবে জেনে যাবো সবই।

আব্রাহাম;; আমি ভালো থাকতে চাইলে কি হবে ভালো আমাকে কেউ থাকতে দেয় না।

কৌশল;; হুমম। এখন কি করবে?

আব্রাহাম;; কাল আইরাত কে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তো কাল সময় পাবো না আমি। আচ্ছা দেখি আজ রাতেই অফিসে যেতে পারি কিনা।

কৌশল;; তাহলে এখন আমি ওদিকটা গিয়ে দেখি।

আব্রাহাম;; যা ভালো হয় কর। অয়ন কোথায় রে?

কৌশল;; রাশেদ, অয়ন সবাই তো অফিসে।

আইরাত;; কৌশল ভাইয়া! (কিছুটা চিল্লিয়ে)

কৌশল;; হ্যাঁ বউমনি।

আইরাত;; বাইরে যাচ্ছো?

কৌশল;; হ্যাঁ, কয়েক ঘন্টা পরই এসে পরবো আবার। তোমার কি চকোলেট-চিপ্স বা অন্যকিছু লাগবে?

কৌশলের কথায় আব্রাহাম তার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। ওইযে হাবিজাবি খাবারের নাম শুনে।

আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ তা তো বটেই। কিন্তু আসার সময় অবনি কেও সাথে নিয়ে এসো।

কৌশল;; আচ্ছা। দাভাই আমি গেলাম।

আব্রাহাম;; হুমম দেখে-শুনে যাস।

কৌশল চলে যায়। আব্রাহাম এমনি দাঁড়িয়ে থাকে আর ভাবতে লাগে যে এইসব কিছু আবার আশফাক করছে না তো। কারণ তার পুরো সন্দেহ এখন আশফাকের ওপরেই। তাকে আবার নিজের পার্টনার হিসেবে কাজে না নেওয়াতে আব্রাহামের ওপর বেশ জেদ রয়েছে তার। সে চাইলে এইসব কিছু উল্টো কাজ করতেই পারে। কিন্তু এইসব সে করলে আব্রাহাম তো তাকে আর এমনি এমনি ছেড়ে দিবে না।

আইরাত;; জামাইজান!

আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে আইরাত তাকে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে ডাকছে। আব্রাহাম তার কাছে যায়। সবার সাথে বসে পরে।

আইরাত;; জামাইজান!

আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

আইরাত;; সবকিছু ঠিক আছে তো!

আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

আইরাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কপালে চুমু এঁকে দেয়। তখনই দিয়া আর ইলা ঝেড়ে কাশে।

ইলা;; না মানে বলছিলাম কি যে আমরাও এখানে আছি আর কি!

আব্রাহাম;; তাই কি হয়েছে। তুমি আর দাদাভাইও তো লাভ ম্যারেজ করেছো। প্রথমে চুটিয়ে প্রেম করেছো তারপর পালিয়ে বিয়ে করেছো।

আইরাত;; হায় হায় তাই নাকি! দাদি সত্যিইইইই! আমি তো জানতামই না।

ইলা;; কি করবো আব্রাহামের দাদা সব দিক দিয়ে ঠিকই ছিলো তবুও মেনে নিচ্ছিলো না কেউই তাই পালিয়ে এলাম।

আইরাত;; আহা প্রেম রে।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ দাদার গুণ টাই আমি পেয়েছি।

আইরাত;; কোথায় পেলেন! আমাকে নিয়ে তো ভাগেন নি আপনি!

আব্রাহাম;; কারণ তুমি নিজেই আমার কাছ থেকে দূরে দূরে পালিয়ে বেড়াতে। আমি আর তোমাকে নিয়ে পালাবো কখন। আর ওয়েট আমি কেনো পালাবো। আমি কি চোর না ডাকাত। সবার সামনে দিয়ে নিয়ে এসেছি। ভালোবেসেছি আমি খুন করিনি যে পালাবো।

আইরাত;; খুন করলেই বা কি!

আব্রাহাম;; কি বললে?

আইরাত;; “আমার জামাই টা কি ভালা গো” এটাই বললাম।

আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; আচ্ছা দাদি তোমার কয় বছর বয়সে বিয়ে হয়?

ইলা;; আমাদের যুগে তো মেয়েদের হাত-পা ফুটতে না ফুটতেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো রে। আমার যত টুকু মনে আছে পনেরো বছর বয়সে বিয়ে হয় আমার।

আইরাত;; এহ! বলো কি? এই পনেরো বছর বয়সে তুমি দাদার সাথে পালিয়ে এসেছো?

দিয়া;; জীবনে কি করলাম! 🙂

আইরাত;; 🤣

ইলা;; তোর দাদা আমার থেকে ৫-৬ বছর বড়ো ছিলো। স্কুলে আসার পথে দেখে পছন্দ করে। আস্তে আস্তে প্রেম, বাড়িতে বিয়ে ঠিক করলো কিন্তু তা কি আর হয়। পালিয়ে নিয়ে এলো আর আমিও এসে পরলাম।

আইরাত;; ভয় লাগে নি! যদি ধোকা দিতো?

ইলা মাথা তুলে তাকায়।

ইলা;; লেগেছে তো। অনেক ভয় লেগেছে যাবো কি যাবো না। বাড়ি ছেড়ে আসার সময় কতো পেছন ঘুরে ঘুরে ফিরে তাকিয়েছি। কিন্তু না করে দিতে পারি নি উনাকে। এইটুকু বুঝতে পেরেছিলাম যে বাবা যেখানে বিয়ে ঠিক করেছে সেখানে গেলে আমায় একটা সময় পঁচে মরতে হবে। তাই জীবনের মায়া ত্যাগ করে, সাহস জুগিয়ে ধরলাম তোর দাদাভাই এর হাত। জীবনে সুখ পেয়েছি অনেক। তবে যে সুখের মাধ্যম ছিলো সেই চলে গেলো।

আব্রাহাম;; কেনো আমি আছি না!

অনামিকা;; 😅

ইলা;; ওরে হারামি। একটু ইমোশনাল হইছিলাম তাও হাসায় দেয়।

আইরাত;; তাহলে দাদি তোমার বয়স কতো?

আব্রাহাম;; দাদির বিয়ের বয়স কিছুদিন পর ৮০ তে পরবে। এবার হিসেব করে বের করো।

আইরাত;; চলছে ৭৯?

আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; বিয়ের বয়স ৭৯ চলছে। দাদির ১৫ বছরে বিয়ে হয়। তাহলে দাদির বয়স বর্তমানে ৯৪ 😳।

দিয়া;; দাদি কে দেখে একদম বুঝাই যায় না।

আইরাত;; হায়াতের মালিক আল্লাহ।

অনামিকা;; মাশআল্লাহ।

আইরাত তার মাথা টা আব্রাহামের কাধে রেখে দেয়। আর আব্রাহাম আলতো করে তার মাথাও ঠেকিয়ে নেয়। সবাই এভাবেই বসে হাসি-তামাশা করতে লাগে।





চলবে~~

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬২

রাতের বেলা বাসার দিকে সবকিছু ঠিকঠাক করে আব্রাহাম চলে যায় তার অফিসে। এই সময়ে আব্রাহাম কে অফিসে দেখে সবাই কিছুটা অবাক হয়। সবার সাথেই মোটামুটি কুশলাদি বিনিময় করে আব্রাহাম নিজের কেবিনে যায়। মেনেজার কে দিয়ে অফিসের সকল ক্যামেরা ফুটেজ গুলো নিয়ে আসতে বলে। সেগুলো এক এক করে সব চেক করতে লাগে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। ফুটেজে তেমন কোন কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না। গত এক সপ্তাহের মধ্যে যে সকল প্রোডাক্ট গুলো লঞ্চ হয়েছে সেগুলোর প্রত্যেকটার একটা একটা করে স্যাম্বল নিয়ে আসতে বলে। সবকিছু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার পরও কোন ঘাবলা পাওয়া যায় না। সবকিছুই ঠিক আছে। তার মানে পরিষ্কার যে কেউ ইচ্ছে করেই জিনিসগুলো তে ভেজাল মিশিয়ে সেগুলো চালান করা হচ্ছে। নয়তো একই প্রোডাক্ট সবই ঠিক শুধু ভেতরে এক রকম আর বাইরে আরেক রকম কেনো! অর্থাৎ অফিসের ভেতরে ঠিকঠাক কিন্তু বাইরে গেলেই সব ভেজালযুক্ত হয়ে যাচ্ছে। তার মানে দাঁড়ায় এই যে কেউ বাইরে থেকেই সবকিছু নষ্ট করে দিচ্ছে। যদি বাইরের মানুষ এইসব কিছু করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে হেল্প করার জন্য বা তাকে সব ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য ভেতরে কেউ না কেউ তো আছেই। এই সবকিছুই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো আব্রাহামের কিন্তু তখনই রাশেদ ডাক দেয়…

রাশেদ;; স্যার!

আব্রাহাম;; হুম

রাশেদ;; এখন তো আমারও মনে হয় যে সবকিছু আশফাকই করছে।

আব্রাহাম;; এতো প্যাচানো জিনিস ভালো লাগে না। সোজা মেইন পয়েন্টে আসি। এক কাজ করো বেশ কিছু গার্ড কে বলো পাতাল থেকে হলেও এই আশফাক কে ধরে নিয়ে আসতে।

রাশেদ;; স্যার এখন!

আব্রাহাম;; খুঁজতে বা ধরে আনতে তো সময় লাগবে। আজ খুঁজুক, পরে দেখি এই আশফাকের কি ব্যাবস্থা করা যায়।

আরো ঘন্টা খানিকের মতো থেকে আব্রাহাম নিজের বাসায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। বাইরে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে পরে। ব্লুটুথ কানে দিয়ে গান শুনতে শুনতে আসছে। কিন্তু কিছু সময় পর অনামিকা ফোন করে আব্রাহামের কাছে।

আব্রাহাম;; হ্যালো মা!

অনামিকা;; বাবা তাড়াতাড়ি আসো। আইরাতের অবস্থা ভালো না।

আব্রাহাম;; মানে কি! কি হয়েছে? (হাইপার হয়ে)

অনামিকা;; শুধু বমি করে যাচ্ছে। আর দম নাকি ভারি হয়ে আসছে।

আব্রাহাম;; ব্যাথা করছে নাকি পেটে?

অনামিকা;; ব্যাথা করছে না তবে ওর অবস্থা ভালো না।

আব্রাহাম;; আমি দশ মিনিটে আসছি মা তোমরা সবাই প্লিজ আইরাত কে দেখো। আমি আসছি। কেনো যে অফিসে আসতে গিয়েছিলাম আমি এখন।

এই বলেই আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। বুকটা কেমন ধুকপুক করছে। ইতোমধ্যে ঘেমেও গিয়েছে সে। এখন কোন রকমে শুধু বাড়ি পৌঁছে গেলেই হলো। আধা ঘন্টার রাস্তা দশ মিনিটে এসেছে সে। বাড়ির বাইরে গাড়ি থামিয়ে চাবি টা গার্ডের দিকে হালকা ঢিল দেয়। ও পার্ক করে দিবে। আর আব্রাহাম সোজা দৌড়। বাড়ি গিয়েই দেখে আইরাত একটা সিঙ্গেল সোফাতে বসে আছে। তার চারিপাশে সবাই তাকে নিয়েই ব্যাস্ত। আব্রাহাম ছুটে গিয়ে আইরাতের পাশে যায়। আইরাত কোন কথা না বলে শুধু ভারি ভারি দম ছাড়ছে আব্রাহাম কে দেখে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে। সেও আইরাত কে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল! কি হয়েছে জান! ব্যাথা করছে পেটে। চলো হস্পিটালে যাবো।

আইরাত;; না না আমি কোথাও যাবো না। আমার এখন ভালো লাগছে না। আপনি আমার কাছে থাকেন তাহলেই আমি ঠিক থাকবো। আমার শুধু শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

আব্রাহাম আইরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে চুমু এঁকে দেয়।

আব্রাহাম;; ও কি খেয়েছে কিছু?

ইলা;; যা খাচ্ছে সবই তো উল্টিয়ে ফেলে দিচ্ছে।

আব্রাহাম;; আচ্ছা থাক। জানপাখি চলো।

আব্রাহাম আইরাত কে ধরে দাঁড় করায়। আস্তে আস্তে হেঁটে রুমে চলে যায়। তাকে বিছানার ওপর হেলান দিয়ে শুইয়ে দেয়। আব্রাহাম গিয়ে নিজের ওপর থেকে কোট টা খুলে শার্টের হাতা গুলো গুটিয়ে নেয়। বারবার চোখে-মুখে পানি দিতে দিতে আইরাতের জামার বুকের দিকটা আর হাতার দিকগুলো বেশ ভিজে গেছে। তাই আব্রাহাম তাকে চেঞ্জ করিয়ে দেয়। তারপর রেস্ট নিতে বলে। এভাবেই চলে যায় রাত টুকু।

পরেরদিন সকালে উঠেই আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে ডক্টরের কাছে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়। ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। ড্রাইভার কে আস্তে ড্রাইভ করে যেতে বলে আর পেছন সীটে আইরাতের সাথে আব্রাহাম বসে আছে। ডক্টরের কেবিনে চলে যায়…

ডক্টর;; ম্যামের নয় মাসে তো পরে গেছে কিছুদিন আগেই। ডেলিভারির সময় হয়ে এলো বলে।

ডেলিভারির কথা শুনতেই আইরাত আব্রাহামের হাত খামছে ধরে। আব্রাহাম বুঝলো সে অনেক নারভাস তাই নিজের দুহাত দিয়ে আইরাতের এক হাত ভালো ভাবে জড়িয়ে ধরে।

আব্রাহাম;; হুমম।

ডক্টর;; এখন শুধু সবকিছু ভালোয় ভালোয় কেটে গেলেই হলো।

আইরাতের সাথে কেবিনে থাকা অবস্থায় আব্রাহামের কাছে ফোন আসে। রাশেদের ফোন দেখে আব্রাহাম উঠে কেবিনের বাইরে চলে যায়।

আব্রাহাম;; হ্যালো!

রাশেদ;; স্যার আশফাক কে তো পাই নি তবে তার জন্য কাজ করে এমন একজন কে পেয়েছি।

আব্রাহাম;; জমিয়ে খাতির-দারি করে আশফাক বর্তমানে কোথায় আছে তা বের করো।

রাশেদ একবার তার পেছন ফিরে তাকিয়ে আবার আব্রাহামের সাথে কথা বলে।

রাশেদ;; স্যার তাকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখে
মারতে মারতে মুখ-নাক দিয়ে রক্ত বের করে ফেলেছি। কিন্তু তেমন কিছু একটা বলে না। কি করবো?

আব্রাহাম;; ঘি সোজা আঙুলে বের না হলে আঙুল বাঁকা করতে হয়। লিসেন যাকে তুলে এনেছো তার ফ্যামিলি তে কে কে আছে তা খোঁজ করো। এবং তাদের নিয়ে ব্লেকমেইল করো। ওকে বলো যে সে যদি মুখ থেকে কিছু না বের করে তাহলে তার পরিবারের লোকজন দের ক্ষতি করে দিবে। তবে এটা যেনো শুধু বলা অব্দিই সীমাবদ্ধ থাকে এর আগে না বাড়ে। ভূল করেও যেনো ওর পরিবারের লোকদের ওপর একটা টোকাও না পরে। কোন ক্ষতি যেনো ওর পরিবারের লোকজন দের না হয়। ওকে এটা বলো শুধু ওকে ভয় দেখানোর জন্য ব্যাস আর কিছুই না। আমি আবার বলছি বাকিদের কোন কিছু যেনো না হয় ওকে!

রাশেদ;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। বাকি সব চেকাপ শেষে আইরাত কে নিয়ে বের হয়ে পরে। আইরাত আব্রাহামের কিছুটা রাগি মুখ দেখে বারবার জিজ্ঞেস করে যে সবকিছু ঠিক আছে কিনা! আব্রাহাম মুচকি হেসে হ্যাঁ বলে। বাসায় এসে পরে তারা। ডক্টর ৪ দিনের সময় দিয়েছে এরপরেই আইরাতের ডেলিভারির ডেট। এই কয়েকটা দিন আইরাত কে আরো বেশি কেয়ার ফুল থাকতে বলেছে ডক্টর। একদম বেড রেস্ট দিয়েছে।

রাতের বেলা আইরাত শুয়ে আছে আর আব্রাহাম তার জন্য জুস নিয়ে আসছে। আইরাতের হাতে জুস টা ধরিয়ে দেয় তখনই দরজাতে অয়ন আসে।

অয়ন;; দাভাই!

আব্রাহাম;; হুমম। অফিস থেকে কখন আসলি?

অয়ন;; আগে এদিকে এসো কথা আছে।

আব্রাহাম;; আইরাত সম্পূর্ণ জুস টুকু শেষ করা চাই ওকে!

আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম অয়নের সাথে চলে যায়। অয়ন আব্রাহামের হাতে একটা ট্যাব ধরিয়ে দেয়। আর তাতে দেখা যাচ্ছে ওই লোকটাকে যে আশফাকের জন্যই কাজ করে। অর্থাৎ তাকে কি অবস্থায় রাখা হয়েছে তাই আব্রাহাম কে দেখাচ্ছে।

আব্রাহাম;; শালার ব্যাটা এতো মার খেয়েছে তবুও কিছু বলছে না!

অয়ন;; নাহ, অবশেষে বলেছে। আশফাক নাকি আজ ভোরের দিকেই শহরে এসেছে। মানে এই কদিন ও শহরের বাইরে ছিলো আজই এসেছে।

আব্রাহাম;; হুমম। আচ্ছা আমি দেখছি।

অয়ন;; ওহ আরেক কথা। হ্যাঁ আমাদের সন্দেহ-ই ঠিক ছিলো। এইসব কাজ আশফাকই করাচ্ছে।

আব্রাহাম;; ওই আধা মরা লোকটা বলেছে?

অয়ন;; হ্যাঁ। ও নাকি নিজেই সবকিছু তে উপস্থিত ছিলো।

আব্রাহাম;; হুমম।

অয়ন;; কাল…

আব্রাহাম;; অফিসে যাচ্ছি আমি।

অয়ন “হুমমম” বলে চলে যায়।

আইরাতের ঘুম থেকে ওঠার আগেই আব্রাহাম উঠে একদম রেডি। আব্রাহাম নিজের ওপরে এশ কালারের জেকেট জড়াচ্ছিলো তখনই আইরাত আস্তে আস্তে উঠতে ধরে বিছানা থেকে। আব্রাহাম তা আয়নাতে দেখে দ্রুত আইরাত কে এসে ধরে। তারপর ধরে তুলে বসিয়ে দেয়।

আইরাত;; সমস্যা নেই হাঁটাহাঁটি করতে পারি আমি বেশ ভালো করেই।

আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; অফিস?

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল একদমই যেতে চাইছিলাম না কিন্তু একটু প্রব্লেম হয়েছে তাই যেতে হচ্ছে।

আইরাত;; আরে বুঝতে পেরেছি আমি। সমস্যা নেই আপনি যান।

আব্রাহাম;; ওঠো ফ্রেশ হও।

আইরাত গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর দুজন একসাথে রুমের বাইরে বের হয়ে আসে। আব্রাহাম সবার কাছে আইরাত কে ভালোভাবে রেখে বাইরে এসে চোখে গ্লাসে’স পরে নিজে দ্রুত অফিসে যাওয়ার জন্য ছুটে। আইরাত বাইরে এসেই দেখে সবাই বসে আছে। তবে দিয়া, ইলা রেডি হয়েছে হাতে কিছু ব্যাগ। এটা দেখেই তো আইরাতের মাথায় আগুন।

আইরাত;; এই এইই কোথায় যাও তোমরা?

দিয়া;; তুই আজ এতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পরলি যে।

আইরাত;; শুয়ে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগে না। কোথায় যাচ্ছিস?

দিয়া;; একটু বাইরে।

আইরাত;; আমিও যাবো। বাসায় থেকে থেকে শেষ, কবে থেকে বাইরে যাই না আমি। আমাকেও নিয়ে যাও না।

অনামিকা;; না থাক, তুই বাড়িতে থাক।

আইরাত;; আরে আমি তো বাইরে গিয়ে আর হাঁটছি না। গাড়িতেই তো থাকবো। যাই যাই প্লিজ যাই।

আইরাতের আকুতি আর কেউ ফেলে দিতে পারে না। আর আসলেই তো কবে থেকে যে বাইরে যায় না সে। এই বাড়িতেই। সবাই যখন যাচ্ছে তাহলে তাকেও নিয়েই যাওয়া যায়। অবশেষে আইরাত কেও নিয়ে যাবে বলে ঠিক করে। অন্যদিকে আব্রাহাম অফিসে গিয়ে বড়ো কাচের ডেস্কের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা গরম কফির মগ। সামনেই সব ফাইল এলোমেলো হয়ে আছে। যে লোকটাকে ধরে বেধে সব উগ্লিয়েছে তাকে ছেড়ে দিতে বলেছে। যদিও সে বর্তমানে হস্পিটালে এডমিট রয়েছে। ঘন্টা খানিক চলে যায় আব্রাহামও তার কাজে ডুবে আছে। হাজার করলেও আর কাজ শেষ হবে না। পাশে থাকা ফোন বেজে ওঠে, কাজের ব্যাস্ততায় নাম্বার না দেখেই ফোন রিসিভ করে কানে তুলে।

আব্রাহাম;; হ্যালো।

আশফাক;; হ্যালো স্যার। কেমন আছেন আপনি? বহুদিন পর আপনার এই ভরাট কন্ঠস্বর টা শোনার সৌভাগ্য হলো।

কন্ঠ চিনতে আর এক মুহুর্ত দেরি হলো না আব্রাহামের যে এই কে।

আব্রাহাম;; যাহহ,, যার জন্য ফাঁদ পাতলাম সে তো দেখি নিজের ইচ্ছে তেই ধরা পরেছে আমার কাছে।

আশফাক;; কিন্তু সেই ফাঁদে তো আমি পরবো না। পরবেন আপনি।

আব্রাহাম;; সোজাসাপটা কথা বল।

আশফাক;; আপনি কি ভেবেছেন নজর শুধু আপনি একাই রাখতে পারেন। আমি পারি না। আমিও রেখেছি।

আব্রাহাম;; মানে?

আশফাক;; এইযে আপনার দাদি, শালি আর প্রাণভোমরা অর্থাৎ বউ। আপনার অনাগত সন্তানের মা। তারা সকলে যে দেখি বাইরে। আমার নজরের সামনেই। কিন্তু আমি তাদের থেকে বেশ দূরে।

এটা শুনতেই আব্রাহামের কলিজা টা কেমন ছাত করে ওঠে। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ছিলো সে, আশফাকের কথা শুনে সোজা হয়ে ওঠে বসে।

আব্রাহাম;; ওরা সবাই বাইরে কি করে? আর সাথে আইরাত! আইরাত কেনো? ও বাইরে এসেছে কেনো?

আশফাক;; এখন স্যার, একবার ভাবুন তো আমি যদি আইরাত ম্যাম কে কিডন্যাপ………..

আব্রাহাম;; আশফাক আমাকে চিনিস না তুই। একটা আচড় অব্দি এলেও তোকে আমি এমন মৃত্যু দিবো যে মৃত্যু নিজেও ভয় পেয়ে যাবে তোর অবস্থা দেখে।

আশফাক;; দেখা যায় কি হয়।

আব্রাহাম ফোনটা এক আছাড়ে ভেঙে খানখান করে ফেলে। মাথা ফেটে যাচ্ছে তার রাগে। সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে আগে নিজের বাসায় যায় আব্রাহাম। বাড়ির ফোনে ফোন করে। এক সময় ফোন ধরে অনামিকা।

অনামিকা;; হ্যালো।

আব্রাহাম;; মা আইরাত আর দাদি, দিয়া সবাই কোথায় গিয়েছে? কেনো গিয়েছে?

অনামিকা;; তারা সবাই তো একটু বাইরে গিয়েছে। আইরাত কে রেখেই যেতে চাইছিলো কিন্তু তার নাকি বাসায় দম বন্ধ লাগছে। এমন ভাবে বললো যে মানা করতেই পারলো না। তাই নিয়ে গেলো। সমস্যা নেই আইরাত গাড়িতে রয়েছে তাকে নামতেও দিবে না।

আব্রাহাম;; কথা সেটা না মা। আচ্ছা ওরা কোথায় গিয়েছে?

অনামিকা;; সুপার শপে গিয়েছে।

আব্রাহাম;; আচ্ছা আমি রাখি। আর তুমি সাবধানে থেকো প্লিজ।

অনামিকা;; আচ্ছা।

আব্রাহাম এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে আরেক হাত মুখের কাছে নিয়ে রেখেছে। হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে তার চিন্তায় আর রাগে।





চলবে~~

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬৩

আব্রাহাম সোজা ঘোড়ার বেগে ছুটছে সুপার শপে যাওয়ার জন্য। কারণ ইলা, দিয়া আর আইরাত সবাই সেখানেই আছে। তবে ড্রাইভ করা অবস্থায় আব্রাহামের ফোনে ফোন আসে। সে না দেখেই রাগে ফোন কেটে দেয়। যখন তৃতীয় বারের মতো ফোন বেজে ওঠে তখন আব্রাহাম বিরক্তি হয়েই ফোন রিসিভ করে। কানে তার ব্লুটুথ ছিলো। হ্যালো বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই ওপর পাশ থেকে দিয়া ঘাবড়িয়ে হাপাতে হাপাতে বলে ওঠে….

দিয়া;; হ হ্যা হ্যালো জিজু!

আব্রাহাম;; দিয়া আর ইউ ওকে? কি হয়েছে?

দিয়া;; জিজু অবস্থা খুব বেশি খারাপ।

আব্রাহাম;; হয়েছে কি আর আশেপাশে এতো চিল্লাপাল্লা কিসের?

দিয়া;; আইরাত নেই জিজু।

এক নিমিষেই আব্রাহাম তার গাড়ি থামিয়ে দেয়। হুট করেই এতো দ্রুত গাড়ির ব্রেক কষেছে যে অল্পের জন্য আব্রাহামের এক্সিডেন্ট হয়নি। চোখে মুখে ব্যাপক হয়রানির ছাপ নিয়ে আব্রাহাম আধো আধো গলায় বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; নেই মানে! আইরাতের কি হয়েছে? কোথায় ও?

দিয়া;; জিজু আমি জানি না। আমরা সবাই শপের ভেতরেই ছিলাম। কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়িতে উঠতে ধরেছিলাম। কিন্তু তখনই খেয়াল করি যে গাড়ির এক পাশের টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে। ড্রাইভার ঠিক করাচ্ছিলো ম্যাকানিক কে দিয়ে। এর মধ্যে আমরা সবাই কিছুটা দূর গিয়ে দাঁড়াই। কিন্তু এর মাঝে কি যে একটা হৈচৈ বেধে যায় যে আগুন লেগেছে। সাধারণত আমরা সবাই ভয় পেয়ে যাই। আইরাত কে নিয়ে আস্তে ধীরে আসছিলামই কিন্তু কোথা থেকে যেনো একটা গাড়ি এসে আইরাত কে তুলে নেয়।

আব্রাহাম;; তোম………

দিয়া;; না জোরজবরদস্তি করে নি। শুধু গান এনে আমাদের দিকে তাক করে ব্ল্যাকমেইল করে। আর আইরাত কে শুধু গাড়িতে উঠতে বলে। নইলে আমাদের সবাইকে গুলি করে দিবে এটা বলে। আইরাত আর অন্য কোন উপায় না পেয়ে উঠেই পরে গাড়িতে। আমাদের সবার সামনে আইরাত কে নিয়ে যায় জিজু কিন্ত আমরা কিছুই করতে পারিনা।

আব্রাহাম;; দাদি আর তুমি ঠিক আছো তো?

দিয়া;; না জিজু। আমি পরে গিয়ে মাথায় অনেক ব্যাথা পেয়েছি। আর দাদি ঠিকই আছে।

আব্রাহাম;; আসছি আমি।

আব্রাহাম ফোন টা নিয়ে পাশের সীটে ছুরে মারে রাগে। তার বুঝতে আর বাকি নেই যে কে এগুলো করিয়েছে। আশফাকের বলা কথাই তাহলে সত্যি হলো। মন চাইলে সব আগুন লাগিয়ে দিক। আইরত কে না জানি কোথায় নিয়ে গেছে! কি হালে আছে ও! ইশশশ অসহ্যকর আর ভাবা যায় না এইসব। আব্রাহামের রাগে সোজা কথা হাত-পা অবশ হয়ে গেছে। সে নিজেকে অনুভব করতেও পারছে না। মন চাইছে শুধু হাতে একটা চাকু বা ধারালো কোন অস্ত্র নিক আর তা দিয়ে শুধু মানুষ কে মেরে যাক। সে আবার হাওয়ার বেগে ছুটতে লাগে। সুপার শপে এসে পরলে দেখে দিয়া ইলা কে নিয়েই ব্যাস্ত। ইলা চিৎকার করে কাঁদছে। আব্রাহাম খেয়াল করে দেখে দিয়াও মাথায় কম ব্যাথা পায় নি। এমনকি তার মাথার পাশ দিয়ে রীতিমতো রক্ত ঝড়ছে। তাই নিজের ওরনা দিয়ে চেপে রেখেছে। আব্রাহাম কে দেখে দিয়া ছুটে যায়। গিয়েই হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।

আব্রাহাম;; দিয়া, দিয়া কান্না করো না। প্লিজ ঠিক থাকো। আর তোমার অবস্থা তো ভালো না। হস্পিটালে চলো এভাবে থাকলে পরে ভয়াবহ রুপ ধারণ করবে। অয়ন! অয়ন কে ফোন করেছো?

দিয়া;; অয়ন, কৌশল ভাইয়া সবাই কেই বলেছি। তারা আসছে।

বলতে না বলতেই অয়ন আর কৌশল এসে হাজির হয়ে যায়। অয়ন তো দিয়ার অবস্থা দেখে পাগল প্রায়।

আব্রাহাম;; দেখ এখন ইমোশনাল হওয়ার টাইম নেই। অয়ন তুই দ্রুত দিয়াকে হস্পিটালে নে। আর কৌশল তুই দাদি কে নিয়ে জলদি বাড়ি যা। আর বাক…….

তার মাঝেই ফোন বেজে ওঠে। হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার। রিসিভ করে। আর জানা মতেই ওপর পাশ থেকে আশফাকের অট্টহাসি। যা শুনেই পুরো মুখমণ্ডল লালচে বর্ণ ধারণ করে আব্রাহামের।

আশফাক;; আফসোস হচ্ছে?

আব্রাহাম;; অনেক বেশিই।

আশফাক;; নিজের ওপর তাই তো?

আব্রাহাম;; হুম

আশফাক;; আগেই বলেছিলাম আমি যে আমাকে নিজের বিজন্যাস পার্টনার বানিয়ে নিন। এতে তো আপনার আর লস হতো না তাই না।

আব্রাহাম;; আমার আফসোস হচ্ছে। প্রচন্ড রকমের আফসোস হচ্ছে। কিন্তু তা আমার ওপর না তোর ওপর, তোর কপালের ওপর।

আশফাক কিছু না বুঝে কপাল কুচকায়।

আব্রাহাম;; আমি জানি যে আমার আইরাত তোর কাছেই আছে। ওকে তুই-ই নিয়ে গেছিস নিজের সাথে।

আশফাক;; হ্যাঁ।

আব্রাহাম;; দেখ তোর শত্রুতা, তোর জেদ যা কিছুই আছে সবই আমার সাথে। আমার বউ বা পরিবারের কোন লোকদের সাথে না। যদি আসলেই মানুষ হয়ে থাকিস তাহলে তুই ওদের কিছুই করবি না আর যদি কাপুরুষ হয়ে থাকিস তাহলে ক্ষতি বাকিদেরই আগে করবি।

আশফাক;; এতোটাও ভীতু নই আমি। আমার টার্গেট কি তা তো আপনি এই সময়ে বুঝেই গেছেন তাই না। চিন্তা করবেন না আমি জানি যে এখন যদি আমি একজন কে মারি তাহলে একজনের সাথে সাথে আরো দুজন অর্থাৎ তিনজন মরবে। আর বাকিরা আধামরা। আমি তা করবো না। শুধু আপনাকে এখানে আনার চেষ্টা। আমার দূর্বল জায়গায় আঘাত করা।

আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে কৌশল দাদি কে গাড়িতে বসাচ্ছে। আব্রাহাম দ্রুত ইশারাতে কৌশল কে ডাক দেয়।

আব্রাহাম;; জানিস তো দূর্বল জায়গাই যখন শক্ত হয়ে যায় তখন তার পরিণাম খারাপই হয়।

আশফাক;; হাহাহাহাহা,, আমি যখন ইচ্ছে তখনই আপনার এক বিরাট মাপের ক্ষতি করে দিতে পারি।

আব্রাহাম;; ব্যাটা, তুই এক কাজ কর। তুই না তোর হাতে চুড়ি পরে বসে থাক।

আব্রাহামের কথা শুনতেই ফোনের ওপর পাশ থেকে আশফাক চিল্লিয়ে ওঠে রাগে।

আব্রাহাম;; আস্তে আস্তে। চুড়ি পড়তে কেনো বলেছি জানিস কারণ তুই নিসন্দেহে একটা কাপুরুষ তাই তো মেয়েদের আশ্রয় নিস। তাদের ক্ষতি করার হুমকি দিস।

আশফাক;; হুমকি টা সত্যে পরিণত হলে কি হবে একবারও ভাবতে পারেন কি আপনি!

আব্রাহাম;; নিজের মরণ কে এভাবে নিজেই ডেকে আনিস না আশফাক।

আশফাক;; দেখা যাক কি হয়।

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। কারণ এই আশফাকের কথা আর সহ্য হচ্ছে না তার। তবে এই কথা বলার মাঝেই আব্রাহাম একটা বুদ্ধিমানের কাজ করেছে তা হচ্ছে কৌশল কে ডাক দিয়ে এনে দ্রুত আশফাকের লোকেশন ট্রেক করে ফেলেছে। কেননা আব্রাহাম যখন আশফাকের সাথে ফোনে কথা বলছিলো তখন তো অবশ্যই তার ফোনের লোকেশন অন ছিলো। কথা বলার বাহানার ছলে আর উষ্কানি মূলক কথার জালে ফেলে তাকে। আর এই সুযোগেই তার লোকেশন ট্রেক করে নেয়। এখন আব্রাহাম অনায়াসেই জেনে যাবে যে এই ছুপা রুস্তাম কোথায় আছে বা কি করছে। এবার আব্রাহাম দ্রুত দিয়ার সাথে অয়ন কে হস্পিটালে দিয়ে আসতে বলে। আর ইলা কে বাড়ি। তারপর যে জায়গায় আব্রাহাম গিয়েছে সেখানে চলে আসতে বলে।

জেকেট টা নিজের ওপর থেকে ছুড়ে গাড়ির পেছন সীটে ফেলে শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে গিয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সীটে বসে। মাথার ওপর যেনো কেউ জ্বলন্ত কয়লা রেখে দিয়েছে এমন ভাবে রাগ ধরে আছে আব্রাহামের। আজ আশফাক কে হাতের কাছে পেলে কি যে করবে সে আল্লাহ মালুম।


অন্যদিকে আইরাতের দম যেনো যায় যায় অবস্থা। অনেক অস্থিরতা কাজ করছে তার মাঝে। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। মাথার পাশ দিয়ে ঘামের বিন্দু বেয়ে বেয়ে পরছে। জোরে জোরে দম নিচ্ছে। আস্তে আস্তে চোখের পাতা খুলে ফেলে। নিজেকে আবিষ্কার করে একটা এলোমেলো ধুলোযুক্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমে। একটা চেয়ারের ওপর বসে আছে সে তবে তার হাত-পা বাধা না। সবকিছুই ঠিক আছে। শুধু বসে আছে সে। মাথার ঠিক ওপরেই একটা হলুদ রঙের বাতি আছে। সেটা জ্বলছে নিভু নিচু ভাবে। সেটাই পুরো ঘর কে আবছা আলোকিত করে রেখেছে। আইরাত সম্পূর্ণ পরিস্থিতি বুঝে ওঠে। তাকে নিশ্চিত অজ্ঞান করার মেডিসিন দিয়ে অজ্ঞান করে তারপর এখানে বসিয়ে রেখে গিয়েছে। সবার আগে আইরাতের হাতটা যায় নিজের পেটের ওপর। এক হাতের উল্টো পাশ দিয়ে কপালের ঘাম গুলো মুছে ফেলে আর ভার ভারি দম ছাড়ে। থেকে থেকেই কিছুটা কাশি দিয়ে ওঠছে। এক হাত পেটের নিচের অংশে ধরে চেয়ার থেকে আস্তে করে উঠে দাঁড়িয়ে পরে আইরাত। ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে গিয়ে রুমের দরজার কাছে চলে যায়। সেখানে গিয়ে দরজাতে আস্তে করে বার কয়েক বারি দেয়।

আইরাত;; এখানে কি কেউ আছেন? দরজা খুলুন প্লিজ। আমার, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্লিজ কেউ দরজা খুলুন। কেউ কি আছেন?এখানে কি কেউ আছেন? প্লিজ একটা বার কেউ দরজা খুলে দিন।

বেশ কয়েক বার ডেকেও বাইরে থেকে কোন সাড়াশব্দ পায় না আইরাত। আব্রাহামের কথা খুব করে মনে পরছে। দাঁড়িয়ে থাকা তার পক্ষে আর সম্ভব না তাই সে গিয়ে আবার আগের চেয়ারে আস্তে করে বসে পরে। আশে পাশে কেমন অগোছালো প্রকৃতির সবকিছু। বেশ ভয়ও লাগতে শুরু করলো এবার আইরাতের। আইরাত আর না পেরে এক সময় হুহু করে কেঁদেই দেয়।

আশফাক আইরাত কে ধরে এনেছে তার নিজেরই এক বাড়িতে। তবে তা বেশ পুরনো। আশফাক নিজেই এই বাড়িতে এসেছে কমপক্ষে তিন-চার বছর পরে। নিজের ওই বাড়ির হলরুমে বসে বসে একের পর এক ঢকঢক করে মদ খেয়ে যাচ্ছে সে। আর আইরাত কে বন্ধ করে রেখেছে ওপরের এক রুমে। দীর্ঘদিন কেউ এই বাড়িতে না থাকার ফলে আর সেই সাথে পরিষ্কার না করার ফলে ধুলো-বালি সব জমে এক হয়ে গেছে।


আব্রাহাম এসে পরে আশফাকের বাড়ির সামনে। এসেই কপাল কুচকে তাকায়। এটাকে ভুতুড়ে বাড়ি বললেও কম হবে না। বাড়ির বাইরে বুলডগের মতো দু-দুটো কালো গার্ড দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম কিছু না বলেই আবার নিজের গাড়িতে উঠে পরে। গাড়ি বেশটুকু পিছিয়ে নেয়। পিছিয়ে নিয়েই আবার হাওয়ার বেগে গাড়ি স্টার্টআপ দিয়ে সামনের দিকে ছুটতে লাগে। গাড়ি এতোই জোরে সামনে এগিয়েছে যে এই দুজন গার্ডের আর কিছু করার সাহস বা গাড়ির সামনেই যাওয়ার দমে ধরেনি। তারা সোজা সামনে থেকে সরে এসে পরে। আর আব্রাহাম বাড়ির মেইন গেট একদম ভেঙে চৌচির করে ভেতরে ঢোকেছে। গেইট আর আস্তো নেই। গগন কাপানো বিকট শব্দে বাড়ির ভেতরে আশফাকের হোস আসে। শব্দ টা এতোই জোরে হয়েছে যে তা আইরাতের কান অব্দিও পৌঁছে গেছে। তবে সে কিছু না বুঝে শুধু নিজের আশেপাশে তাকাতাকি করে। বাড়ির ভেতরে আরো আশফাকের কিছু চেলাটেলা ছিলো। তারা আব্রাহামের দিকে এগিয়ে গেলে আব্রাহাম রিভলবার বের করে সব কটা তাদের দেহে ঢুকিয়ে দেয়। আশেপাশে কোন দিকে তোয়াক্কা না করে একদম বাড়ির ভেতরে চলে যায়। হলরুমে এসে দেখে আশফাক মদ গিলতে ব্যাস্ত। তবে হলরুমে আসার আগে আব্রাহাম তার হাতে একটা লোহার লম্বাটে দন্ড নিয়ে আসে। যা মূলত বাড়ির গেইটেরই একটা অংশ ছিলো। আশফাক আব্রাহাম কে দেখে একটা শান্ত চাহনি দেয়।

আব্রাহাম;; আইরাত কোথায়?

আশফাক;; আরে আছে আছে। এতো হাইপার কেনো হচ্ছেন!

আব্রাহাম;; দেখ আমি নিজেকে খুব খুব খুব বেশি সংযত রেখেছি সেই জন্যই এখন অব্দি তুই নিঃশ্বাস নিতে পারছিস। আমি আমার আগের রুপ কে ফিরিয়ে আনতে চাই না। নয়তো তা মোটেও তোর জন্য সুবিধে জনক হবে না। এই বিজনেস পার্টনারশিপ নিয়ে যদি তোর সাথে আমার রেশারেশি হতো তাহলে তা মিটমাট করে নেওয়া যেতো কিন্তু এখন কথা আমার পরিবারের ওপর দিয়ে এসেছে। এনেছিস তুই। আমাকে বাধ্য করিস না আশফাক। সত্যি করে বল। আর শেষ বারের মতো জিজ্ঞেস করছি তোকে যে আমার আইরাত কোথায় আছে?

আশফাক;; আরে রিলেক্স মিস্টার আব্রাহাম চৌধুরী। আছে আপনার অনাগত সন্তান দের মা। কিছু হয়নি আপনার বউ এর। ঠিকই আছে এখনো মরে নি……………..

ব্যাস এইটুকু কথাই আশকাফের বলার সৌভাগ্য হয়। কেননা এইটা বলার সাথে সাথেই আব্রাহাম এক হিংস্র রকমের গর্জন দিয়ে তেড়ে এসে হাতে থাকা লোহার রড টা সোজা আশফাকের গলার শ্বাসনালি বরাবর ঢুকিয়ে দেয়। মূহুর্তেই পরিস্থিতি সব শান্ত আর আশফাক নিজেও। তার গলাতে লোহার দন্ড টা পুরো ঢুকিয়ে দিয়ে আব্রাহাম রাগে ফুসতে লাগে। তার কপালের রগগুলো কেমন ফুলে ওঠেছে। হাতের রগগুলোও জ্বলজ্বল করছে। দাঁত গুলো কটমট করে আশফাকের দিকে তাকিয়ে আছে। আশফাক এখন শান্ত কেননা আব্রাহামের করা আঘাতে সাথে সাথেই সে মরে গেছে। আব্রাহাম তো এখন পুরো পুরি অন্ধ, রাগে অন্ধ হয়ে গেছে এখন। লোহার দন্ড টা আশফাকের গলা থেকে টেনে তুলে আবার আগের মতোই শ্বাসনালিতে আঘাত করে। এভাবে আব্রাহামের হাতে যতো কোলায় বারেবার আঘাত করেই গিয়েছে। একটা সময় আশফাকের গলা-ঘাড়ের মাংশ, হাড়, রগ সব ছিড়ে যায়। ঠিক যেনো দেহ থেকে মুন্ডু ছিড়ে নিচে পরে যাওয়ার মতো বাজে, বিভৎস দৃশ্য। আব্রাহাম রডটা তুলে নিচে ছুরে মারে। রাগ কমেছে তার। আর এখন তাকে কমাতেই হবে কেননা আইরাতের সামনে তার এই অবস্থায় যাওয়া যাবে না। এক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আব্রাহাম আশফাকের দিকে।

আব্রাহাম;; এর জন্যই সবসময় নিজের অকাদ অনুযায়ী মানুষের সাথে টক্কর নিতে হয়।

এটা বলে আব্রাহাম এসেই পরতো কিন্তু তার চোখ যায় আশফাকের পকেটের দিকে। একটা চাবির মতো কিছু ঝুলছে। তা হাতে নিয়ে দেখে একটা ০৮ নাম্বার রুমের চাবি। আব্রাহাম বুঝলো যে এটাই আইরাত যে রুমে আটকে আছে সেই রুমের চাবি। সিড়ি বেয়ে দ্রুত ওপরের রুম গুলোর দিকে এগিয়ে যায়। ১ ২ ৩ সব রুমই আসে তবে ৮ আর আসে না। আব্রাহাম তো খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। কিন্তু পায় না। আব্রাহাম ভাবে এখানে আইরাত নেই তাই আবার নিচে চলে যেতে ধরে। আর ওদিকে আইরাতও বুঝে যে হয়তো এখানে কেউ একজন এসেছে। আইরাত তো আর এই বদ্ধ রুমে থাকতে পারছে না, দম যেনো এই গেলো চলে। তাই আইরাত বহু কষ্টে চিল্লিয়ে ওঠে “কেউ আছেন!” বলে। আব্রাহাম শুনতে পায় আইরাতের কন্ঠ। তা শুনেই যেনো অশান্ত বুকে একরাশ শান্তি এসে ভর করে। দ্রুত ছুটে যায়। দেখে ৬ নাম্বার রুমের শেষেই একটা মোড়ের মতো আসে আর তারপরেও ৭/৮ রুম আছে। ৮ নাম্বার রুম চাবি দিয়ে দিয়ে খুলে ফেলে। আর ভেতরে যেতেই দেখে আইরাত হাপিত্তেশ করছে। ঘেমে গেছে সে। জোরে দম ত্যাগ করছে শুধু। আব্রাহাম দ্রুত আইরাতের কাছে যায়। তার চুলগুলো হাত দিয়ে পেছনে সরিয়ে দিয়ে মুখে অজস্র চুমু খেতে থাকে। পরিবেশ ভালো না আর এই জায়গা আইরাতের জন্য সেইফও না তা বুঝতে পেরে আব্রাহাম আইরাত কে আস্তে করে দাঁড় করিয়ে নেয়। তারপর ওপর থেকে নিচের দিকে সিড়ি বেয়ে নামতে শুরু করে। নেমে হলরুমে আসতেই আইরাতের চোখ কপালে উঠে যায়। কেননা হলরুমে শুধু রক্ত আর রক্ত। আইরাতের মাথা যেনো ঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা। আইরাত যেই না নিজের মাথা ঘুরিয়ে পেছনের দিকে তাকাতে যাবে তখনই আব্রাহাম নিজের একহাত দিয়ে তার চোখ গুলো ধরে আটকিয়ে দেয়। কারণ আইরাতের থেকে ঠিক কয়েক হাত পেছনেই আশফাকের ক্ষত-বিক্ষত নিথর দেহ টা চেয়ারের ওপর পরে রয়েছে। যা দেখা আইরাতের জন্য অবশ্যই মঙ্গল জনক হবে না। আইরাতকে নিয়ে হলরুম পেরিয়ে বাইরে এসে পরলে আব্রাহাম নিজের হাতটা তার চোখের ওপর থেকে সরিয়ে ফেলে। তবুও আইরাত খেয়াল করে দেখে কতোগুলো লোক মাটিতে পরে পরে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়। কিন্তু আব্রাহাম একটা ডোন্ট কেয়ার ওয়ালা ভাব নিয়ে বলে….

আব্রাহাম;; জাস্ট ইগনোর দ্যাম বেবিগার্ল।

আইরাত কে নিয়ে সোজা বাইরে এসে পরে। আর যেই গাড়ি দিয়ে আব্রাহাম এসেছে তা দিয়ে যাতায়াত করা এক প্রকার অসম্ভব। কারণ গাড়ির হুলিয়া আব্রাহাম গেইট ভেঙে পুরো পালটিয়ে দিয়েছে। তবুও আব্রাহাম ওই গাড়ির কাছে গিয়ে গাড়ির সামনের দরজা খুলে দেয়। সেখানে সীটের ওপর আইরাত কে বসিয়ে দেয়। তারপর একটা পানির বোতল বের করে আইরাতের চোখে-মুখে দিয়ে দেয়। এতোক্ষণে গিয়ে আইরাত যেনো একটু স্বস্থি পায়। তার মিনিট কয়েক পর অয়ন, কৌশল আর রাশেদ আসে গাড়ি নিয়ে। সাথে দিয়াও এসে পরে। দিয়ার মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ করা।

আইরাত;; জামাইজান!

আব্রাহাম;; হ্যাঁ জানপাখি।

আইরাত;; আমি বাড়ি যাবো। আমি আর নিতে পারছি না এইসব কিছু। খুব বেশি খারাপ লাগছে আমার।

আব্রাহাম;; আচ্ছা কে বলেছিলো বাইরে আসতে। তুমি আমায় বলতে যে কি কি লাগবে আমি সেইসবের বন্যা ভাসিয়ে দিতাম। এই সময়ে কেউ বাইরে যায় বুঝো না তুমি জান!

আইরাত;; আমি কি জানতাম নাকি যে এমন কিছু একটা হবে।

আইরাতের ঝাড়ি ওয়ালা মুখ দেখে এতোকিছুর মাঝেও আব্রাহাম ফিক করে হেসে দেয়।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ তাও ঠিক।

রাশেদের কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে নেয় আব্রাহাম। আর তাদের এইসব আধো মরা মানুষ কে নিয়ে যেতে বলে। যারা বেঁচে আছে তাদের হস্পিটালে নিয়ে যেতে বলে আর যারা মরে গেছে তাদের কবরস্থানে। অয়ন কে ভেতরে আশফাকের লাশের ব্যাপারে সবকিছুই আব্রাহাম বলে এসে পরে। বাকি টুকু সামলানো অয়ন আর রাশেদের ব্যাপার। গাড়ি দিয়ে আব্রাহাম-আইরাত, কৌশল আর দিয়া এসে পরে। পেছনের সীটে আইরাতের দুপাশে আব্রাহাম আর দিয়া বসে আছে আর সামনে ড্রাইভ করছে কৌশল। ভালোই ভালোই যাচ্ছিলো তারা সবাই কিন্তু এবার বাধে আরেক বিপত্তি। বেশ বড়ো বিপত্তি।





চলবে`~