পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ পর্ব-২১+২২

0
5942

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -২১ (বার্থডে স্পেশাল)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা ঘুমাচ্ছে এখন। ফিহার মা ফাতেমা মেয়েকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। আজ যদি মেয়েটার কিছু হয়ে যেতো কি হতো তার। শুধুমাত্র এই মেয়েটার জন্য সে বেঁচে আছে। যাকে বলে এক বড় দায়িত্ব পালন। ফিহার মা উঠে দাঁড়ায়.। ক্যালেন্ডারে চোখ বুলিয়ে নেয়। কালকে ফিহার জন্মদিন। সেই ছোট্ট ফিহা ১৫ বছরে পা রাখতে চলেছে। ফিহার মা একপলক ফিহার দিকে তাঁকায়। গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। কে বলবে এই মেয়ে ১৫ বছরে পা রাখতে চলেছে। ফিহার মা বক্স টা বের করে বেসলেট টা বের করে নেয়। ফিহার হাতে যত্নসহকারে পড়িয়ে দেয়। তারপর শক্ত করে চুমু খায় কপালে। ফিহার মা জানে আজকের দিনে অন্তত সে আসবে। ফিহা যে তার কলিজার অংশ। এইসব ভাবতে ভাবতেই ফিহার মা ফিহার গাঁয়ে কম্বলটা জড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
ফিহার প্রতিবছর জন্মদিনে সে এই বেসলেট টা ফিহার মা ফিহার হাতে পড়িয়ে দেয়।

ফারহাজ সব ফোর্স দের দিয়ে ক্লাব গুলো ছিল করিয়ে ফেলেছে। বডি গুলোও ময়নাতদন্তে চলে গেছে। বডি গুলো দেখে বুঝা যাচ্ছে শরীরে কোনো ক্ষত হয়নি। তার মানে কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়েও খুন গুলো করা হয়নি। তাহলে কীভাবে মারা গেলো তারা? তার উত্তর একমাত্র পাওয়া যাবে ময়নাতদন্তের মাধ্যমে।

রুপ এসে বলে উঠে—

স্যার আপনার কথামতো কালকের মধ্যেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট চলে আসবে।

ফারহাজ কিছুটা ভেবে বলে উঠে–
হুম কিন্তু সেখানে কঠোর পাহাড়ার ব্যবস্হা করো রুপ! খুনি প্রচন্ড চালাক। সে নিশ্চই চাইবে নাহ বডি গুলো ময়নাতদন্ত হোক। তাই তো আগের খুন গুলো তে খুন করার পর লাশে আগুন দিয়ে দিতো। এইবার তো পারেনি।
এইবার ও নিশ্চই অন্য কোনো ছক কশবে।

রুপঃ ইউ আ রাইট স্যার!।

এদিকে অজানা ব্যক্তি গাড়িতে উঠে পড়ে। ফ্লাইটের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। আজকে ভোরের মধ্যেই বাংলাদেশে পৌছাতে হবে। একটা স্পেশাল দিন আছে যে। ডক্টরদের সব কিছু বুঝিয়ে এসেছে সে। তার মায়ের যেনো কোনো অসুবিধা না হয়। দুইটা বড় বড় কাজ আছে তার বাংলাদেশে। অজানা ব্যক্তি ফোনটা বের করে কাউকে ফোন করে।

ইরিনা নিজের ঘরের চারদিকে পাইচারি করে যাচ্ছে।

কেননা সে জানে কাজ টা কার। একজন ই আছে যে ফারহাজ এর ক্ষতি চায়।

তখনি তার ফোনটা বেজে উঠে। ইরিনা না দেখেই রিসিভ করে বলে উঠে—

কেন করেছেন ? এইসব। ফারহাজ কে আক্রমন করার সাহস কী করে হয়?

অজানা ব্যক্তিটি বলে উঠে–
ওয়াও ইরিমনি তুমি আমাকে এতোটা ভালোবাসো যে আননোন নাম্বার দেখেও বলে দিতে পারো আমি ফোন করেছি ওয়াও আই লাইক ইট!
আর সাহস সেইটা তো আমি সবসময় ই বেশি ছিলো!

ইরিনা কান্নামাখা কন্ঠে বলে উঠলো–

আমি তো আপনার সব কথাই শুনছি। তাহলে কেন আপনি ফারহাজকে টার্গেট করছেন?

অজানা ব্যক্তিটি হাঁসিটি বাঁকা করে বলে উঠে-

এক পুরনো হিসাব রয়েছে যে!

ইরিনাঃ মানে ( অবাক হয়ে)

অজানা ব্যক্তি ঃ আরে এইসব এখন বাদ দাও!
তুমি শুধু আমার কথা অনুযায়ী চলো। তাহলে ফারহাজও সেফ থাকবে। নো চালাকি। তুমি যে কতবার ফারহাজ কে আমার ব্যাপারে বলতে গিয়েছো বাট পারো নি। সব খবর ই আমি পাই।
বেশি বাড়িবারি করবে নাহ বুঝেছো ডার্লিং! আর যদি করো তার পরিনাম এর ছোট্ট টেইলার তো দেখিয়েই দিলাম।

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

ইরিনাঃ নাহ নাহ প্লিয! আমি তেমন কিচ্ছু করবো নাহ!

অজানা ব্যক্তিঃ গুড! আর শুনো তোমার জন্য বিরাট একটা সারপ্রাইজ আছে। আর বাই পরে কথা হবে।

ইরিনা কিছু বলবে তার আগেই অজানা ব্যক্তিটি কট করে ফোনটা কেটে দেয়।

সারপ্রাইজ এর নাম শুনে ইরিনার মনটা কু ডেকে উঠে। কি করতে চলেছে লোকটা?

জানে নাহ ইরিনা।

এদিকে,,

ফারহাজ সিসিটিভিউ ফুটেজ গুলো চেক করছে।

কিন্তু তেমন কোনো ক্লু সে পাচ্ছে নাহ সে। ফারহাজ বুঝে গেছে এই সিরিয়াল কিলারকে ধরা খুব একটা সহজ হবেনা। এই সিরিয়াল কিলারের মাথায় এমন কোনো ভয়াবহ প্লান ঘুড়ছে যা হয়তো কেউ বুঝতে পারছে নাহ। কিন্তু এই খুন গুলোর পিছনেই বা কারন টা কি?

ফারহাজ একবার ঘড়ির দিকে তাঁকায়। ভোর হয়ে গেছে। কাজ করতে করতে কখন ভোর হয়ে গেছে তা খেয়াল ই ছিলো নাহ ফারহাজ এর।

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফারহাজ এর নিজের হাতের বেসলেট এর দিকে নজর যাই।
রুবির অনেক মুল্যবান বেসলেট। যা অনেক স্পেশাল। এই বেসলেট কখনোই নিজের থেকে দূরে রাখিনি ফারহাজ। এইটা তো ছিলো তার শেষ স্মৃতি।

তখনি ফারহাজ এর মনে পড়ে আচ্ছা আজকে কত তারিখ!

ফারহাজ উঠে দাঁড়িয়ে ক্যালেন্ডার চেক করে

হ্যা আজই সেই তারিখ। ছোট্ট একটি নীলাঞ্জনার জন্ম হয়েছিলো সেদিন। ছোট্ট ছোট্ট হাত-পা ছিলো তার।

অজান্তেই ফারহাজ চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে।

ফারহাজ বিড়বিড় করে বলে উঠে–
নীলাঞ্জনা! শুভ জন্মদিন!

ফ্লাইট ল্যন্ড করে ভোর ৪ টার দিকে।

অজানা ব্যক্তি এয়ারপোর্ট এ নেমে পড়ে। সেখানে তার লোকেরা দাঁড়িয়ে আছে।

অজানা ব্যক্তিটি তার মাতৃভুমির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। কতদিন পর এই দেশে ফিরেছে সে।

তাকে দেখে সবাই সোজা করে দাঁড়িয়ে পড়ে।

অজানা ব্যক্তি টি সবাইকে থামিয়ে বলে উঠে–

সব রেডি!।

সবাই মাথা নিচু করে বলে উঠে–

জ্বী স্যার!

অজানা ব্যক্তি অন্য আরেকটি গাড়িতে উঠে পড়ে।

ফিহা ঘুমের মধ্যে অনুভব করে কেউ পরম যত্নে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। পাশে পামকিন চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে।

ফিহা চট করে নিজের চোখজোড়া খুলে ফেলে।

কিন্তু কাউকে দেখতে পায়না।

ফিহার নজর যায় চারদিকে। সারা ঘরে টেডি বিয়ার,বারবি পিন্সেস এর ড্রেসের ছড়াছড়ি।

ফিহার নজর যায় একটি বড় কেক এর উপর।
১৫ বছরের বড় একটি মোমবাতিও রয়েছে।

৫ পাউন এর কেক একেবারে ফিহার পছন্দের হাওয়াই মিঠাই এর শেফ এর। কিন্তু দেখেই বুঝা যাচ্ছে চকলেট কেক।

ফিহার চোখ নিজে যায় নীচের দিকে।

মেঝেতে কাঁচের স্বচ্ছ বড় বোতল দিয়ে লেখা হ্যাপি বার্থডে !

ফিহা বুঝতে পারছেনা সে কি স্বপ্ন দেখছে নাকি অন্যকিছু?

কিন্তু এইসব কে করবে? তখনি কারো কন্ঠস্বর ভেসে উঠে

কেউ গাইছে—

Phoolon ka taron ka sabka kehna hai
Ek hazaron mein meri behna hai
Saari umar hamein sang rehna hai

Phoolon ka taron ka sabka kehna hai
Ek hazaron mein meri behna hai
Saari umar hamein sang rehna hai
Phoolon ka taron ka sabka kehna hai

Yeh na jana duniya ne

tu hai kyon udaas
Teri pyaasi aankhon mein
pyaar ki hai pyaas
Hye yeh na jana duniya ne
tu hai kyon udas
Teri pyaasi aankhon main
pyar ki hai pyas
Aa mere paas aa keh jo kehna hai
Ek hazaron mein meri behna hai
Saari umar hamein sang rehna hai
Phoolon ka taron ka sabka kehna hai
Aye la la la
La la la

**************
Bholi bhali japani gudiya jaisi tu
Pyaari pyaari jaadu ki pudiya jaisi tu
Bholi bhali japani gudiya jaisi tu

Pyaari pyaari jaadu ki pudiya jaisi tu
Daddy ka mummy ka sabka kehna hai
Ek hazaron mein meri behna hai
Saari umar hamein sang rehna hai
Phoolon ka taron ka sabka kehna hai
*******

Dekho hum tum dono hain

ek daali ke phool
Main na bhoola tu kaise
mujhko gayi bhool
Haan dekho hum tum dono hain
ek daali ke phool
Main na bhoola tu kaise
mujhko gayi bhool
Aa mere paas aa, keh jo kehna hai
Ek hazaron mein meri behna hai
Saari umar hamein sang rehna hai
Phoolon ka taron ka sabka kehna hain
Ek hazaaron main meri behna hain
saari umar hamein sang rehna hain
phoolon ka taron ka sabka kehna hain

ফিহা কন্ঠস্বরটা শুনে দৌড়ে বেডিয়ে আসে।
একজন সুদর্শন লম্বা করে লোক দাঁড়িয়ে গাইছে।
কিন্তু মুখটা দেখা যাচ্ছে নাহ।

অন্য দিকে ঘুড়ে আছে সে।
।।।।চলবে।

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -২২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা কারো কন্ঠস্বর শুনে ছুটে যায়। বাগানের দিকে। সুদর্শন লম্বা করে একজন লোক দাড়িয়ে আছেন। কিন্তু মুখটা দেখা যাচ্ছে। কেননা সে অন্যদিকে ঘুড়ে আছে। ফিহা এগোতে নিলে হঠাৎ করেই কিছু ধোয়া চারদিকে উড়তে থাকে। ফিহা হাল্কা কেঁশে উঠে। এতো ধোয়ায় সে কিচ্ছু দেখতে পারছে নাহ। ধোয়া গুলো আস্তে আস্তে হাওয়াই মিশিয়ে গেলো। সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গেলো। ফিহা আবারো ছুটলো কোথায় গেলো লোকটা? কিছুক্ষন আগেও তো এখানে ছিলো কোথায় গেলো সে। ফিহা কিছুটা মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলো–কে কোথায় আছেন?? আমাকে শুনতে পারছেন? আপনি কোথায়? ফিহা হাটতে হাটতে
ছোট্ট একটা চিরকুট পেলো। ফিহা তাড়তাড়ি তা খুলে ফেললো। খুলে দেখে তা তাতে লেখা —
আমার প্রিয় কলিজা জন্মদিনের শুভেচ্ছা!
আমাকে খুঁজে লাভ নেই! আমি নিজেই ধরা দিবো সময় হলে। পারলে আমার দেওয়া কেক টা কেটো এতে কিছুটা দূর থেকে হলেও আমি শান্তি পাবো।
ফিহা বুঝতে পারছেনা অই লোকটা কে?
আর এই চিরকুট টা বা কেন দিলো। তার মানে ঘরে এতো কিছু অই লোকটাই দিয়েছে। ফিহা নিজের ঘরে চলে যায়। একটা বড় গাউন আছে বারবির প্রিন্সেস এর! সাথে রয়েছে একটা বড় একটা তাজ!
যাকে বলে প্রিন্সেস এর মুকুট। ফিহা সব কিছুর উপর হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। সত্যি এইসব জিনিস কে ই বা তাকে দিলো আর কেন ই বা তাকে দিলো।
ফিহা মোমবাতি গুলো ফু দিয়ে নিভিয়ে নিজের অজান্তেই কেক টা কেটে এক টুকরো খেয়ে নিলো।
ফিহা জানে নাহ সে কেন এমন করলো। কিন্তু কেনো যেনো অজানা ব্যক্তির কথা টা সে ফেলতে পারলো নাহ।

দূর থেকে সব কিছুই লক্ষ করছে অজানা ব্যক্তি!
কতদিন পর সে তার কলিজাকে প্রান ভরে দেখতে পারছে। ইসস যদি বোনটাকে একটু আদর করতে পারতো। কাছে গিয়ে এক্টিবার বলতে পারতো–
বোন এই দেখ তোর ভাই! একটি বার ভাইয়া বলে জড়িয়ে ধর নাহ বোন!

আফসোস এখন তা সম্ভব নাহ।

সে আনমনে বলে উঠে–

একটু অপেক্ষা কর কলিজা! আমি তোর সামনে ঠিকই আসবো। শুধু সময়ের অপেক্ষা!

তখনি তার লোকেরা বলে উঠে–

বস আপনার কথামতো সব কিছু রেডি করে এসেছি! ফিহা ম্যাডাম আপনাকে দেখতেও পাইনি

অজানা ব্যক্তি বলে উঠে—

হুম! এইবার তোমরা যেতে পারো!

—- বস আপনি যাবেন নাহ???

অজানা ব্যক্তিটি এক পলক ইরিনার ঘরের দিকে তাঁকায়। ঘরের লাইট এখনো জ্বলছে।
অজানা ব্যক্তি জানে তার ফোন পাওয়ার পর ইরিনা আজকে কিছুতেই ঘুমাবে নাহ!

সে মৃদ্যু হেঁসে বলে উঠে—
নাহ আপতত আমি যাচ্ছি নাহ।
তোমরা চলে যাও!!!!!

ফারহাজ একটা টাওজার ও একটা গেঞ্জি পড়ে
চুলগুলো ঝাকাতে ঝাকাতে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।
এখন প্রায় ভোর প্রায়। এই দিনেই মনটা বড্ড খারাপ করে উঠে ফারহাজ এর!

বাড়ির সবাই এখন ঘুমাচ্ছে। কিন্তু একজন আছে যে নিশ্চই আজকের দিনটা মনে রেখেছে।

ফারহাজ দেরী না করে তাদের বাগানের দিকে রওনা হয়।

সেখানে মিঃ রাইজাদা ( ফারহাজ এর দাদু) একটি বেঞ্চে বসে
একটা ছোট্ট খেলনা নিয়ে নিজের অজান্তেই কথা বলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে তার কত কথা জমে আছে
এই খেলনাটার সাথে।
সাম্নেই টেবিলে ছোট্ট একটা কেক আছে।

ফারহাজের কাছে ব্যাপারটা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নাহ।

ফারহাজ চুপটি করে বেঞ্চ টায় বসে পড়ে। কারো উপস্হিতি টের পেয়ে মিঃ রাইজাদা পাশে তাঁকায়।

ফারহাজ কে দেখে চুপ হয়ে যায়।

কিছুক্ষন নিরবতা থেকে ফারহাজ বলে উঠলো—

কেক টা কাটবে নাহ দাদুন!

ফারহাজ এর কথা শুনে দাদুন মুচকি হেঁসে কেক টা কেটে এক টুকরো ফারহাজ এর দিকে তুলে

ফারহাজ ও কিছুটা খেয়ে তার দাদুন কে খায়িয়ে দেয়।

দাদুন ফারহাজ কে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।

কেননা অন্যান্য দিন গুলোতে দাদুন ফারহাজ কে দূরে ঠেলে দিতে পারলোও। আজকে সে ফারহাজকে দূরে ঠেলতে পারে নাহ। বড্ড ভালোবাসে যে তার নাতিকে। নাতির ভালো চায় বলেই নাতির প্রতি এতো তার অভিমান। কেননা সে কখনোই চায়না ফারহাজ পুলিশে জয়েন হোক।
এই পেশা যে ফারহাজ এর জন্য বিপদজনক। যদি অতীতের পুনরাবিত্তি হয় আবার। কিন্তু ফারহাজ বুঝতেও চায়না। কেননা ভয়ংকর অতীত সম্পর্কে সামান্যতমও ধারনাও নেই ফারহাজ এর।

ইরিনা সারারাত ধরে দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি। কি বলতে চাইছে কি লোকটা কিসের সারপ্রাইজ এর কথা বলছে কিছুই বুঝতে পারছে নাহ ইরিনা।

ইরিনা বাইরের দিকে এক বার তাঁকায়।
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছি। ভোর হয়ে গেছে।

তখনি খেয়াল করে তার বারান্দায় কারো ছায়া।

ছায়াটা দেখে ইরিনা কৌতহল হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে৷ বলে উঠে—

কে কে অইখানে?

আড়াল থেকে কেউ বেড়িয়ে আসে। তাকে দেখে ভয়ে ইরিনার বুক ধুক করে উঠে। একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে যায় সে।

ইরিনাঃ আপনি বাংলাদেশে( কাঁপাকাঁপা কন্ঠে)

সে বাঁকা হেঁসে বলে উঠে—
কেন আমাকে আশা করেনি বুঝি!

ইরিনাঃ কেনো এসেছেন আপনি? চলে যান বলছি!

—আমি কি সেই এতোদূর থেকে এসেছি!
ফিরে যাওয়ার জন্য?কত কাজ বাকি আমার!

ইরিনা ঃ আপনি নিশ্চই ফারহাজ এর ক্ষতি করতে এসেছেন? তাইনা? এই বলে ইরিনা হু হু করে কেঁদে দেয়!

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

সে একটু এগিয়ে এসে বলে উঠে–
ইরিমনি এইভাবে কাঁদলে কি তোমায় মানায় নাকি?
তোমাকে সবসময় হাঁসিখুশি মানায়।

ইরিনা অবাক পানে তাঁকায় তার দিকে।

।।।।।।
সকাল হতে নাহ হতেই ফিহাকে তার মা পায়েশ খায়িয়ে দিলো। ফিহা কেক ও গিফটের বিষয় মিসেস ফাতেমাকে বললে তিনি এক প্রকার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এমনকি ফিহাকেও এই বিষয়ে কাউকে কিছু বলতেও নিষেধ করেছে।

রিহা ফিহার জন্য আজ সব পছন্দের খাবার রান্না করেছে।

ফিহাকে সব নিজের হাতে খায়িয়ে দিচ্ছে।

ফিহা ঃ মামনি আমি ছোট্ট একটা মানুষ এতো কিছু কি খেতে পারবো?

রিহাঃ দিব্বি খেতে পারবি বুঝেছিস

ফিহাঃ৷ এতো খাবার খেয়ে আমার পেট তো ফুলে ফুটেই যাবে। তখন আমাকে একেবারে বিচ্ছিরি লাগবে দেখতে ( মুখ ফুলিয়ে)

ফিহার কথা শুনে রিক ও ফিহার মা হেঁসে দেয়।

রিক ফিহার পাশে বসে বলে উঠে–
তা বললে কীভাবে হবে মামনি? আজকে তো তোমাকে সব খেতে হবে।

বেচারি ফিহা আর কি করবে সেও খেয়ে যাচ্ছে কেননা সে জানে আজকের দিনে তার মামনির এই খাবারের অত্যাচার সহ্য করতে হবে।

রিকঃ আমি একটা প্ল্যান করছে!

রিহাঃ কি প্ল্যান?

রিকঃ আমাদের ফিহা মায়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে
আজকে আমরা পরিবারের সবাই বাইরে ঘুড়তে যাবো। রাতের ডিনার টাও বাইরে করবো।

বাইরে ঘুড়তে যাওয়ার কথা শুনে ফিহা খুশিতে লাফিয়ে উঠে।

কিন্তু ইরিনার মুখে কোনো হাঁসি নেই। সে এক গভীর চিন্তায় চিন্তিত। সামনে আর কি হবে কে জানে?

ফারহাজ নিজের ইউনিফর্ম পড়ে নীচে এসে দেখে
যে যার নিজের কাজে ব্যস্ত! কারো আজকের দিনটা মনেই নেই। তা অবশ্য কোনো বছরই কারো মনে থাকে নাহ। একমাত্র ফারহাজ ও তার দাদুন ছাড়া।

নিলয় ভিডিও গেম খেলতে ব্যস্ত। ইশিকা নিজের ঘরে ঘুমাচ্ছে।

ফারহাজ এর বাবা খবরের কাগজ পড়ছে। ফারহাজ এর কাকাই ব্রেকফাস্ট করছে আর তার কাকি তাকে খাবার সার্ফ করে করে দিচ্ছে। ফারহাজ এর দাদি পান সাজাচ্ছে আর ফারহাজ এর মা ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত।

সবার কাজকর্ম দেখে ফারহাজ এক তাচ্ছিল্যের হাঁসি হাঁসে।

চলবো।।