পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ পর্ব-৪৬+৪৭

0
1795

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -৪৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারহাজ কিছু বলতে গিয়েও বললো নাহ। এই মুহুর্তে অনেক কথা বলার ছিলো তার কিন্তু আপতত সব কথাগুলো জমা রেখে দিলো। আদোও বলা হবে কিনা যথেষ্ট সংদেহ। এদিকে ফিহা তার কথার একের পর এক ঝুলি নিয়ে বসেছে। ফারহাজ সব কথা মুগ্ধ হয়েই শুনছে। তার পুচকি বউয়ের কথাগুলো সে হাজার কাজের ব্যস্ততা রেখেও শুনতে রাজি। মিসেস ফাতেমা ফিহা রুমে ঢুকে দেখলো ফিহা ফারহাজের সাথে ফোনে কথা বলছে। এতে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেন তিনি। তার মানে সবকিছু ঠিকই আছে। তিনি নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।
ফারহাজকে চুপ থাকতে দেখে ফিহা বলে উঠলেন- হঠাৎ চুপ হয়ে গেলেন যে?
ফারহাজঃ কি আর বলবো?
ফিহাঃ একটা কথা রাখবেন?
ফারহাজঃ বলো!
ফিহা কিছুটা দম নিয়ে বলে উঠে-
আরেকবার পিচ্ছি বউ বলে ডাকবেন?

ফিহার অনুরোধ কতটা আবেগ মেশানো ছিলো তা ফোনের উপার থেকে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।

ফারহাজঃ শুনতে চাইছো যে

ফিহাঃ বড্ড ইচ্ছে করছে।

ফারহাজঃ এইটা আর এমন কী?
কত নামেই তো ডাকি তোমাকে।

কখনো পুচকি কখনো ফিহু আবার কখনো নী কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো ফারহাজ।

ফিহাঃ পিচ্ছি বউ ডাকে এক অন্যরকম অনুভুতি ছিলো। আচ্ছা বাদ দেন। আপনি বুঝবেন নাহ।

ফারহাজঃ তা তুমি বুঝি সব বুঝো?

ফিহাঃ হুম বুঝি তো। আপনার মনের কথা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি আপনি নিশ্চই এতো রাতে কারো সাথে কথা বলছিলেন তাইনা? তাই এতো রাতে আপনাকে এক্টিভ দেখাচ্ছিলো
আর আমি এখন ফোন করেছি বলে আপনি বিরক্ত হচ্ছেন।

ফারহাজ মাথাটাই আগুন ধরে গেলো। ফিহা যে কি মিন করছে তা তার বুঝতে একটুও সমস্যা হলো নাহ। মেয়েটাকে কষিয়ে গালে একটা থাপ্পড় মারলে ফারহাজের শান্তি হতো। নিজের রাগটুকু দমিয়ে বলে উঠে—
হ্যা খুব ভালো করেই জানো দেখছি। এখন রাখো ফোনটা( কিছুটা ধমক দিয়ে)

এই বলে ফারহাজ কট করে ফোনটা কেটে দেয়।

ফিহা বুঝতে পারছে নাহ তাকে এইভাবে ধমক দেওয়ার কারণ টা কী?. লোকটা এতো বাজে কেন?
সবসময় তাকে ধমকায়।

ফারহাজ আপতত কিছুটা হলেও মনটা ভালো লাগছে। ফিহার বোঁকা বোঁকা কথা শুনে যদিও কিছুটা রেগে গিয়েছিলো। এখন শান্তিমতো কাজ করা যাবে। ফারহাজ আবারোও ভাবনায় পড়ে যায় হ্যা নিবিড় এই কেসের সুরাহা করতে পারেনি। কেননা সে মারা গিয়েছিলো। ফারহাজ যতটুকু জানে তার কাকাই এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে। কিন্তু আদোও কি তা এক্সিডেন্ট ছিলো। এইসব এর পিছনে কিং স্যার আছে। কিন্তু এই কে এই ব্যক্তি তার উত্তর একমাত্র আহান আহমেদ ই দিতে পারবে।

সকাল সকাল আহান বেড়িয়ে গিয়েছে। ইরিনা কিচ্ছু ভালো লাগছে নাহ। লোকটা আর কিছুক্ষন থাকলে কি হতো? সে কি জানে নাহ? ইরিনা তাকে চোখে হারায়। জানবে কি করে ইরিনা তো তার কাছে খেলার একটা সামান্য গুটি ছিলো মাত্র। ভাবতেই বুকের ভিতর থেকে গভীর দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে।

তখনি কলিং বেল বেজে উঠে। ইরিনা মুখে হাঁসি ফুটে উঠে। সে ভাবে হয়তো আহান এসেছে। সেই অনুযায়ী ইরিনা দরজা খুলে। দরজা খুলতেই ইরিনার হাঁসিমুখে অন্ধকার ছেয়ে গেলো। এতোদিন পরে ফারহাজকে দেখে বুকটা ধুক করে উঠলো ইরিনার।
ইরিনা অপরাধীর ন্যায় মাথাটা নিচু করে বলে উঠে-

ইরিনাঃ ফারহাজ তুমি এখানে?

ফারহাজঃ আসলে,,, আমি মিঃ আহান আহমেদের সাথে দেখা করতে এসেছি। কিছু কথা ছিলো।

ইরিনাঃ হঠাৎ? উনার সাথে তোমার কি এমন কথা তোমার?

ফারহাজঃ আমাকে কি বাইরেই দাঁড় করিয়ে রাখবে।

ইরিনাঃ নাহ নাহ ভিতরে এসো।

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

।।।।
ফিহা মনটা ক্ষুন্ন করে টেবিলে বসে আছে। দাদুনের ফোন এসেছিলো জিজ্ঞাসা করেছে কবে আসবে সে কিন্তু দাদুনকে কি উত্তর দিবে এখন সে? ফারহাজও তাকে চলে আসতে বলেনি তাকে সে নিজের ইচ্ছেই চলে এসেছে। ভাবলো একটিবার হয়তো ফারহাজকে ফোন করা ভালো কিন্তু করতে গিয়েও করলো নাহ।হয়তো কাজে ব্যস্ত। এখন তো উনার থানার থাকার কথা।

এদিকে,,

ফারহাজ ও ইরিনা বসে পড়ে।

ইরিনাঃ আসলে সেদিন এন্গেজমেন্ট এর দিন যা ঘটেছে। একপ্রকার বাধ্য হয়েই আহানকে বিয়ে করেছি

ফারহাজঃ বাধ্য হয়ে?

ইরিনাঃ হুম

ফারহাজ এইবার উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠে-

আমি সেসব বিষয়ে কথা বলতে চাইনা ইরি। আমি বিশ্বাস করি যে যার তকদিরে ছিলো সেদিন তার সাথেই তার বিয়ে হয়েছে।

ইরিনাঃ আমি জানি ফারহাজ সেদিন যা হয়েছে সব কিছুই আমার হাতে ছিলো নাহ।
আমি এইটাও জানি তুমি আমাকে কোনোদিন ভালোবাসো নি। আমি তোমাকে ভালোবাসতাম। তাই তোমার মাথায় সর্বক্ষন এইটাই ঢুকানোর চেস্টা করতাম তুমিও আমাকে ভালোবাসে।

ফারহাজ ঃ নিজের ভালো লাগা টুকুকে ভালোবাসা ভাবতাম। কিন্তু আমার চোখ খুলে গেছে। আমার এই ২৬ বছরের জীবনে অইটুকু পুচকি এসে আমাকে ভালোবাসার সঠিক মানে বুঝিয়ে দিলো।

ইরিনাঃ ফিহাকে ভালোবেসে ফেলেছো বুঝি?

ফারহাজঃ এই উত্তরটা না হয় নাই বললাম

ইরিনার আর বুঝতে বাকি রইলো নাহ ফারহাজও ফিহাকে এই কয়দিনে অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছে।

ফারহাজ আবারোও বলে উঠে-
তুমিই বলো সেদিন না হয় আহানকে বিয়ে করেছিলে বাধ্য হয়ে কিন্তু সত্যি করে বলোতো? তুমি এই কয়দিনে আহানকে ভালোবাসো নি?

ইরিনাঃ আমি অস্বীকার করবো নাহ। হ্যা আমি ভালোবাসি আহানকে। জানি নাহ কীভাবে।
আসলে বিয়ের বন্ধন টাই এমন। বিয়ের এই তিনটে কবুলের মাধ্যমেই একজন নারী ও একজন পুরুষের মাঝে ভালোবাসার একটি সেতু বন্ধন সৃষ্টি করিয়ে দেয়। যেই ভালোবাসার মাঝে রয়েছে একরাশ পবিত্রতা।

ফারহাজঃ হুম

ইরিনা আবারোও বলে উঠে-
আচ্ছা সেসব না হয় বাদ দাও এইবার বলো কি দরকার?

ফারহাজঃ আসলে

ফারহাজ প্রথম থেকে সব কিছু খুলে বলে ইরিনাকে।

ইরিনাঃ বিশ্বাস করো ফারহাজ৷ উনি আর যাই হোক এইসব এর খুনের পিছনে উনার হাত থাকতেই পারে নাহ। উনাকে আমি যতটুকু চিনি।

ফারহাজঃ তোমাকে তো বললাম ই ইরিনা। আহান হয়তো প্রত্যক্ষ বা পরক্ষভাবে দায়ী কিন্তু এইসব এর মুল কিং স্যার নামে কেউ।

ইরিনাঃ কিং স্যার? হ্যা হ্যা আমি এর আগেও এই নামটি শুনেছি উনার মুখেই উনি বলেছেন আজকে উনি যতটুকু এসেছেন সবকিছুর জন্য নাকি কিং স্যার এর জন্যে। কিং স্যার উপর কৃতজ্ঞ উনি। আর সব থেকে বড় কথা। উনার নাকি মির্জা বাড়ির সাথেও এক শ্রত্রুতা আছে। তাই সেদিন আমাকে গুটি হিসেবে ব্যবহার করে বিয়ে করেছিলেন যাতে তোমাদের মান- সম্মান সব শেষ হয়ে যায় আর যেনো তুমি ভেজ্ঞে পড়ো।

ফারহাজঃ ওয়াট?? মির্জা বাড়ির সাথে শত্রুতা? কিন্তু কেন?

ইরিনাঃ সেইটার উত্তরও তো আমার জানা নয়।

ফারহাজঃ আমার যতটুকু মনে আছে। এইযে মির্জা বাড়ির সাথে আহানের এক শত্রুতা এইসবের পিছনেই এই কিং স্যার ই দায়ী৷ অতীতে কিছু তো একটা হয়েছিলো। কিন্তু কি সেই অতীত সেইটাই আমাকে বের করতে হবে। আর সব থেকে বড় কথা আহান কে? কি তার পরিচয়? কি বা শত্রুতা তার আমাদের সাথে।

ফারহাজের কথা গভীরভাবে চিন্তা করতে থাকলো ইরিনা।

কমিশনার সাহেব ফারহাজের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে আছেন। ফারহাজকে কমিশনার স্যার নিজের কেবিনে ডেকে পাঠিয়েছে।
ফারহাজ ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে বসে আছে।

কমিশনারঃ ফারহাজ তোমাকে আমি কি বলেছিলাম?

ফারহাজঃ কি বলেছিলেন? ( ভ্রু কুচকে)

কমিশনারঃ তুমি কি আমার সাথে মজা করছো??

ফারহাজঃ কেনো? আপনি আমার বিয়াই হোন সম্পর্কে?

কমিশনারঃ ফারহাজ তুমি কথা ঘুড়ানোর চেস্টা করো নাহ। আমি জানি তুমি এখনো সেই কেস টার তদন্ত করছো। যেখানে আমি তোমাকে এই কেস থেকে সরিয়ে ফেলেছি।

ফারহাজঃ প্রথমত এই কেসের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু কেনো আমাকে সরানো হয়েছে তা সঠিক কারণটা আমি জানি নাহ। তাই আমি এই কেসের সুরাহা না করে ছাড়বো নাহ।

কমিশনারঃ তুমি আমার মুখের উপরে কথা বলছো? জানো? আমি তোমাকে সাস্পেন্ড(বরখাস্ত) করতে পারি।(

ফারহাজঃ আই ডোন্ট কেয়ার! দেখি আপনি ঠিক কি কি করতে পারেন কিন্তু এই কেস থেকে আমি সরবো নাহ।

এই বলে ফারহাজ সানগ্লাসটা চোখে পড়ে বেড়িয়ে পড়ে।

কমিশনার রাগে ফুশতে ফুশতে বলে উঠে-

কিং স্যারকে তো আর চিনো নাহ। কি ভয়ংকর অবস্হা হবে তা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই।
আমি এইটুকু বলতে পারি নিজের কাকাইয়ের থেকে চরম ভয়ংকর অবস্হা হবে তোমার ফারহাজ মির্জা।

এদিকে,,

টিফিন পিরিয়ডে ফিহা মাঠের এক কোনো বসে বসে কিছু ভাবছে।মুখটা একেবারে শুকিয়ে গেছে সিমি অনেক্ষন তা লক্ষ করছে।

সিমিঃ কি হয়েছে ফিহা?

ফিহাঃ আমি জানি নাহ রে। লাটসাহেব এর জন্যে মনটা কেমন কু ডাকছে। এমন তো কোনোদিন হয়না। উনার কোনো বিপদ হবে নাহ তো?
( কিছুটা কান্নার সুরে বললো ফিহা)

চলবে কি? 🙂

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ৪৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
জীবনটা বড্ড অদ্ভুদ। কখন কোন সত্যি সামনে চলে আসে তা কেউ হয়তো তা ভাবতে পারে নাহ। তেমনি ইরিনার সামনেও এমন একটি সত্যি চলে এসেছে যার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো নাহ। কিছুক্ষন আগে ইরিনা আহানের আলমারি ভালো করে গুছিয়ে রাখছিলো তখনি একটা এলবাম নীচে ছিটকে পড়ে যায়। ইরিনা এলবাম টা কৌতহল বশত খুলে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। এতো আদ্রোর ছোটবেলার এলবাম। আদ্রোর কোলে ছোট্ট নীলা( ফিহা) আরেকপাশে ফারহাজ ও অপরপাশে ইরিনা নিজে।
প্রায় ১১ বছর আগের ছবি এইটা। এইরকম একটি ছবিই সেদিন ইরিনা দেখেছিলো কিন্তু ছবিটা ঘোলা ছিলো বিধায় তখনি ইরিনা বুঝতে পারেনি। কিন্তু এইসব ছবি আহানের কাছে কি করছে? ইরিনা একের পর এক হিসাব মিলাতে থাকে। হিসাব মিললে এইটাই হয় যে আদ্র ই আহান। কিন্তু এইটা কী করে সম্ভব?
প্রায় ১১ বছর আগে আদ্রসহ তার পুরো পরিবার একটা এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিলো তখন ইরিনা ও ফারহাজ ২০ দিনের স্কুল কেম্পের জন্যে চিটাগাং গিয়েছিলো
যখন ফারহাজ এই ঘটনা টা শুনতে পারে তখন সে একটুও টু শব্দ করেনি পর্যন্ত। চোখ দিয়ে এক ফোটা জলও গড়িয়ে পড়েনি তার। ।
নিজের বেস্টফ্রেন্ড হারানোর শোক,নিজের নিবিড় কাকাইয়ের মৃত্যু, আরিশা কাকির মৃত্যু সব থেকে তার নীলাঞ্জনার মৃত্যর খবর সে নিতে পারেনি। এক প্রকার পাথর হয়ে গিয়েছিলো ফারহাজ। নিজেকে ঘর-বন্ধি করে রেখেছিলো ফারহাজ। তখন একমাত্র বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলো ইরিনা। কিন্তু ফারহাজের মন থেকে কখনোই নীলাঞ্জনা নামটি সরাতে পারেনি ইরিনা। মাঝে মাঝে ফারহাজের নীলাঞ্জার প্রতি খানিক্টা হিংসা হতো ইরিনার। কিন্তু আজ সবটাই অতীত। ইরিনার মন জুড়ে এখন শুধু আহানের ই বসবাস। যাকে একসময় শুধুই অবহেলা করতো ইরিনা।

(লেখিকা ঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

ফিহা সবেমাত্র স্কুল থেকে ফিরলো। বড্ড ক্লান্ত লাগছে। বিছানায় গা হেলিয়ে দিলো। পামকিন ঘরের চারপাশে লাফালাফি করছে। ফিহা চুপচাপ দেখে যাচ্ছে। লাফালাফি থেকে একটি ঘটনা ফিহার মনে পড়ে যায়,,

কিছুদিন আগে,,,

ফিহা পামকিনকে নিয়ে বাগানের চারপাশে দৌড়াচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ আবার সেই খুড়ো বুড়ির সামনে চলে আসে। যার গাছের আম সে চুরি করেছিলো আর সেই খুড়ো বুড়ি তাকে থানায় নিয়ে গিয়ে ফারহাজের কাছে বিচার দিয়েছিলো চোর অপবাদ দিয়ে।

ফিহাঃ আপনি এখানে? (কিছুটা তোতলিয়ে)

খুড়ো বুড়িঃ আমার কথা আগে বাদ দে। আগে এইটা বল দেখি বাপু তুই আমার গাছের চুরি করেছিলি।
রাম, রাম! তোর তো এখন থানায় বন্দী থাকার কথা। কোথায়? আমার ফারহাজ বাবা তো আমাকে বলেছিলো তোকে জেলে পুড়ে দিবে।

ফিহা শুকনো ঢুক গিলল। এই বুড়ি কি এখনো তাকে জেলে পাচার করে দিতে চায় নাকি? সে তো আর হিরে মুক্তা চুরী করেনি কয়েকটা আম ই চুরি করেছিলো।

তখনি ফারহাজ এসে পকেটে হাত রেখে বলে উঠে-
কে বলেছে দিদা এই পুচকি চোরনিকে আমি বন্ধী করে রাখি নি?

পুচকি চোরনি নাম টা শুনে আবারোও মুখটা ফুলিয়ে ফেলে ফিহা। লাটসাহেব তাকে আবারোও চুরনি বলল। এই মুহুর্তে প্রচন্ড ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে ফিহার। কিন্তু সে চুপ হয়ে রইলো।

ফারহাজ তার খুঁড়ো বুড়িকে জড়িয়ে ধরে।

খুঁড়ো বুড়িঃ তা তোমার এই পুচকি চোরনীকে কীভাবে বন্ধী করে রেখেছো? ফারহাজ দাদাভাই?

ফারহাজ এক পলক ফিহার দিকে তাঁকিয়ে রহস্যময়ী হেঁসে বলে উঠে-

কীভাবে আবার মনের গহীনে বন্ধী করে রেখেছি। যেখানে আর কারো বসবাস নেই। অনেক সাধনার ফল৷ এই পুচকি চোরনি বুঝেছো গো দিদা?

ফারহাজ এই অদ্ভুদ কথার মানে বুঝতে কিছুটা অসুবিধা হলো ফিহার।

খুঁড়ো বুড়ি এইবার ফিহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে-
সুখে থাকো দিদি! স্বামী-সংসার নিয়ে। আর আমাকে আবার ভুল বুঝিস নাহ কিছুটা মজা করছলাম। ফারহাজ কিন্তু খুব ভালো রে। এমন হিরের টুকরো ছেলে এতো ভালো মনের অধিকার স্বামী খুব কমই পাওয়া যায়।

ফিহা ফারহাজের দিকে তাঁকায়। ফারহাজ মাথা চুলকে অন্য সাইডে চলে যায়।

ফারহাজের কথা ভাবতেই ফিহার মনটা আবারোও খারাপ হয়ে যায়। কত ভালো আনন্দময় স্মৃতি রয়েছে ফিহার ফারহাজের সাথে। ফিহার মনটা আবারোও খারাপ হয়ে গেলো। আজকে সকাল থেকেই ফারহাজের জন্যে তার বড্ড চিন্তা হচ্ছে কি জানি মনটা এতোটা কু ডাকছে কেন।

আহান রুমে ঢুকতে ইরিনার মুখোমুখো হয়ে যায়।

আহানঃ কি হলো এইভাবে তাঁকিয়ে কি দেখছো?( দৃড় কন্ঠে)

ইরিনাঃ ভাবছি একটা কথা!

আহানঃ কি কথা( ভ্রু কুচকে)

ইরিনা ঃ না মানে আপনাকে ঠিক কি নামে ডাকবো।
আদ্র নাকি আহান

ইরিনার এই কথা শুনতে মোটেও প্রস্তত ছিলো নাহ
আহান।

ইরিনা আহানের দিকে সেই ছবির এলবাম টা এগিয়ে দিলো।

ইরিনাঃ দেখুন তো এই এলবাম টা আপনার কি না..

আহান এইটাই ভাবছে ইরিনা এলবাম টা ঠিক কোথায় পেলো।

ইরিনাঃ কি হলো মিঃ আহান আহমেদ থুরি মিঃ আদ্র মির্জা উত্তর দিন।

কেনো লুকিয়েছেন এতো বড় সত্যিটা? তুমি বেঁচে আছো? কেনো বলোনি এই এতো বড় সত্যি
এন্সার মি! (চিল্লিয়ে)

আহান এই মুহুর্তে ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে নাহ।ইরিনা তার পরিচয় জেনে ফেলেছে। আহান
নিজেকে শান্ত করে নেয়। অতীতের ভয়ংকর কাহিনী গুলো চোখে ভেসে উঠলো আহানের।

এদিকে,,

ফারহাজ বেড়িয়ে যেতেই কমিশনার কাউকে ফোন করে —

কমিশনারঃ হ্যালো!

কিং স্যারঃ হ্যা বলো!

কমিশনারঃ খবর কিছু রাখো? ফারহাজ বড্ড বেড়েছে ওর একটা ব্যবস্হা তোমাকে করতেই হবে।

এই বলে কমিশনার সব খুলে বলল কিং স্যার কে।

কিং স্যারঃ জানি আমি! ফারহাজ আবার এই কেস থেকে পুরোপুরি সরিয়েই ফেলবো। যেখানে শত চেস্টা করলেও ফারহাজ আর ফিরতে পারবে নাহ

(কিছুটা শয়তানী হাঁসি দিয়ে)

ফিহা ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ে পামকিনকে নিয়ে।
মনটাকে আর সে মানাতে পারছে নাহ সে। শুধু মনে হচ্ছে ফারহাজের কোনো বিপদ হয়নি তো।

ফিহা পামকিনকে নামিয়ে ফোনটা বের করে ফারহাজের নাম্বারে ফোন করে।

এদিকে,,

ফারহাজ গাড়ি ড্রাইভ করছে। উদ্দেশ্য মিঃ রাইজাদার অফিসে যাওয়া। কেননা এই কেসের সাথে মির্জা বাড়ির কোন যোগসুত্র আছে সেইটাই জানতে হবে। আর আহানের সাথে কেন ই বা মির্জা বাড়ির কি শত্রুতা রয়েছে? সব উত্তর একমাত্র তার দাদুন রাইজাদা মির্জা ই দিতে পারবে।

তখনি ফারহাজের ফোনটা বেজে উঠে। ফিহার ফোন
ফারহাজ ড্রাইভ করতে করতেই ফোনটা রিসিভ করে।

ফিহাঃ হ্যালো লাটসাহেব !

ফারহাজঃ হুম ফিহু বলো!

ফিহা বলে উঠে-

আপনি এখন কোথায়? আপনি ঠিক আছেন তো? শরীর খারাপ হয়ে যাইনি তো? কোথায় আপনি বলুন নাহ ( কিছুটা উত্তেজিত হয়ে)

ফারহাজঃ ফিহু আস্তে আস্তে বলো একটু খানিক্টা দম নাও! এতো প্রশ্ন একসাথে করলে উত্তর কী করে দিবো
আমি ঠিক আছি আমার আবার কি হবে?

ফিহাঃ নাহ মানে আসলে এমনিতেই!

ফারহাজঃ তা ফোন করেছো কেন?

ফিহাঃ আমি আবার বরকে ফোন করেছি তাতে কার কি? শুনুন আমি শুধু আপনাকে ছেড়ে চলে এসেছি সম্পর্ক শেষ করেনি হুহ।

ফারহাজ অইপাশ থেকে মুচকি হাঁসে।

ফারহাজ ঃ এই সম্পর্ক যে শেষ হওয়ার নয় (মনে মনে)

ফিহা এইবার কিছুটা অনুরোধের কন্ঠে বলে উঠলো-
আমি জানি না কেন? কিন্তু আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে নাহ আপনি দয়া করে নিজের খেয়াল রাখবেন

ফারহাজ কিছু বলতে যাবে তখনি সে খেয়াল করে কয়েকটা গাড়ি তাকে ফলো করছে। ফারহাজের বুঝতে বাকি রইলো নাহ এরা নিশ্চই কিং স্যার ই লোক।

ফারহাজ ঃ ফিহু তুমি এখন কলটা রাখো ঠিক আছে? আমি তোমাকে পরে ফোন করে নিবো।

এই বলে ফারহাজ ফোনটা রাখতে নিলেই দুইপাশ থেকে দুই গাড়ি থেকে অনবরত গুলি ছুড়তে থাকে ফারহাজের গাড়ির উপর। ফারহাজ ফোন টা ফেলেই
জোড়ে জোড়ে ড্রাইভ করছে। নিজের গান টা বের করে ফারহাজ এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে অপর হাত দিয়ে গুলি করে যাচ্ছে সেই গাড়ি গুলোকে। যথাসম্ভব নিজেকে প্রটেক্ট করার জন্যে। অইপাশ থেকে ফোন থেকেই সব কিছু শুনতে পারছে ফিহা। কেননা ফারহাজ ফোনটা কাটতেই ভুলে গেছে। ফিহার বুকে মোচর দিয়ে উঠে। ফোনের অইপাশ থেকে গুলাগুলির শব্দ আসছে। লাটসাহেব এর কিছু হলো নাহ তো? ফিহা অইপাশ থেকে লাটসাহেব বলে চিল্লিয়ে যাচ্ছে।

ফিহাঃ লাটসাহেব! আমাকে শুনতে পারছেন নাহ? উত্তর দিন নাহ আপনি ঠিক আছেন তো?

এদিকে,

ফারহাজ শুট করাতে যথেষ্ট পারদর্শী বলে সে খুব ভালো করেই পর পর দুই গাড়িতে শুট করে যাচ্ছে। আরেক হাত দিয়ে ড্রাইভ করে যাচ্ছে। ফোনটাও নীচে পড়ে আছে। এইসময় কাউকে ফোন করাও সম্ভব নয়।

শত্রুপক্ষ আর না পেরে ফারহাজের গাড়ির ইঞ্জিনের দিকে গুলি ছুড়ে যার কারণে বিরাট বড় একটা বিস্ফোরণ ঘটে।

ফারহাজের ফোন কেটে যায়।এতো জোড়ে শব্দ ফিহা নিতে না পেরে ফিহা মাটিতে ধপ করে বসে পড়ে। কিসের শব্দ ছিলো অইটা তার লাটসাহেব ঠিক আছে তো? ফিহা জোড়ে কেঁদে উঠে।

চলবে —! 💔💔💔💔
(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু 🙂)