#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ৬
#Jhorna_Islam
যেটা এতক্ষন তালহা চিল্লাচিল্লি, রাগারাগি, অনুরোধ করে ও পারে নি,সেটা সৌন্দর্য আসার সাথে সাথে হয়ে গেছে। সৌন্দর্য কে না কিছু বলতে হয়েছে আর না কিছু করতে হয়েছে। সৌন্দর্য আসার সাথে সাথে কাজ হয়ে গেছে। সৌন্দর্য আর নূর কে দেখে ইসরাত বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেছে। পিছনে জামার মধ্যে লেগে থাকা ধূলো ঝারতে ঝারতে দাঁত কেলিয়ে নূরের কাছে এসে দাঁড়ায়।
আরে নূর তোরা না ঘুরতে গেলি? এতো তারাতাড়ি ঘুরাঘুরি শেষ তোদের? ইসরাত নূরকে জিজ্ঞেস করে।
নূর ইসরাতের কথায় আহাম্মক সাজে।গাড়ি থেকে নেমে এক ঝলক দেখেছে ইসরাতের কান্ড। এই মেয়ে চোখের পলকে কি করে এমন পল্টি নিতে পারে, নূরের জানা নেই।
তালহা হা করে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা মেয়ে নাকি অন্য কিছু? এটাই মনে মনে ভাবছে তালহা।
সৌন্দর্য তালহার কাছে এগিয়ে আসে। তালহার চোখের সামনে হাত নাড়ায়।এতে তালহার হুশ ফিরে।
ওয়ে এটা মেয়ে নাকি অন্য কিছু মানে? তোর কি কোনো সন্দেহ আছে? দিন দিন তোর এমন অধপতন হচ্ছে? একটা মেয়ের উপর তুই আঙ্গুল তুলছিস এটা মেয়ে কিনা? এটা যদি ইসরাত শুনে ভাবতে পারছিস তোর কি হাল হবে?
আ-আমি আবার এটা কখন বললাম? কানে কি ইদানীং বেশি শুনছিস নাকি সৌন্দর্য? আমতা আমতা করে বলে তালহা।
সৌন্দর্য ব্রু কোচকে বলে তুই বলিস নি তাই না?
না মানে আসলে ইয়ে। বলেছিতো কিন্তু মনে মনে তুই কি করে জানলি?
টপ সিক্রেট! বলেই সৌন্দর্য চোখ টিপ দেয়।
রাখ তোর টপ সিক্রেট। এই মেয়ে কে তো আমি দেখে নিবো।
— এখন দূর থেকে দেখ আর চোখ সংযত রাখ।বিয়ের পর পুরোপুরি দেখে নিস।
— তালহা সৌন্দর্যের কথায় বলে ছেহ্ একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবি না।এই মেয়ে কে আমি জীবনে ও বিয়ে করবো না। আমাকে কি পা’গলা কু/ত্তা কামড় দিয়েছে নাকি?
❝ছাত্রী হয়েই জীবন নাশ!
বিয়ে করলে শুধু কপালে জুটবে বাঁশ আর বাঁশ।❞
তালহার এরকম ছন্দ শুনে সৌন্দর্য বলে,,
বাহ ভাই শিক্ষকতা ছেড়ে কবির পেশা বেছে নিলেও পারিস।খুব নাম কামাবি।
আরে রাখ তোর নাম কামানো এখন এটা বল,এই মেয়ে কে এতো বলার পরও আমি এখান থেকে উঠাতে পারি নি।কিন্তু দেখ তুই আসার সাথে সাথে উঠে গেছে। অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার। আমাকে বুঝি টিচার হিসেবে মানেই না।
তোকে তো বর হিসেবে মানতে চায় টিচার হিসেবে না দোস্ত।
তালহা আর সৌন্দর্যের কথায় কিছু বলে না চুপ হয়ে যায়। এই বেটা আজ লে’ক ফুল করার জন্য হাত ধুয়ে পরেছে বুঝতে পারছে। তাই চুপ করে থাকাই বেটার।
এইদিকে ইসরাত সব ভুলে নূর কে খোঁচাচ্ছে, কি হয়েছে, কোথায় গিয়েছিল। সৌন্দর্য কিছু বলেছে বা করেছে কিনা।
নূর ইসরাতের এরূপ প্রশ্ন শুনে ইসরাতের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। আমরা এখানে আমরা কি করেছি বা আমাদের মাঝে কি হয়েছে সেসব বলতে আসিনি। তুই কি করছিস সেটা শুনে এসেছি ইসু।
ইসরাত না জানার ভান করে বলে,,,আমি? আমি আবার কখন কি করলাম? কিছু করিনিতো।
সব করেছে এই তালহা স্যার আর সতীন।
সতীন?কিসের সতীন? নূর জিজ্ঞেস করে।
আরে দেখ ঐ যে ঐ মেয়ে টা দেখতে পাচ্ছিস না? ঐটা আমার সতীন।তোর বান্ধবীর কপাল পুড়লো বান্ধবী। বলেই নে’কি কান্না শুরু করে দেয় ইসরাত।
এই এই একদম অভিনয় করবে না অভিনয় অফ করো।ন্যা’কামো করে।কোথা থেকে এসে বলা নেই কওয়া নেই হুট করে নিচে বসে ড্রামা শুরু করে দিয়েছে। তালহা এগিয়ে আসতে আসতে বলে।
আমি ড্রামা করছি? এই মেয়ে টা আপনার কে হয় বলেন? বলেন বলেন।
যা ইচ্ছে হোক তোমাকে বলবো কেন? (তালহা)
আমাকে বলবেন না তো কাকে বলবেন? (ইসরাত)
যাকে ইচ্ছে তাকে বলবো,তবুও তোমাকে বলবো না। ছাত্রী হয়ে টিচারের উপর হুকুমদারি কোথা থেকে আসছে হু্হ।(তালহা)
আ-আমি এখন আপনার ছাত্রী নই।(ইসরাত)
এক সময় ছিলেতো।(তালহা)
এখন আপনি আমার এক্স স্যার হোন।আর ভবিষ্যতে,,,, বলেই ইসরাত মুচকি হাসি দেয়।
তালহা ব্রু কোচকে জিজ্ঞেস করে ভবিষ্যতে কি?
ঐ যে ঐটা পরলে ঐটা হয় ঐটা।(ইসরাত)
কোনটা পরলে কোনটা? তালহা পুরাই কনফিউজড।
এদের এসব কনভারসেশন সৌন্দর্যের আর ভালো লাগছে না। তাই দুইজন কে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। উফফ তোরা দুইজন টেপ রেকর্ডার চুপ করবি? ননস্টপ বেজেই চলেছিস থামাথামির নাম নেই।
তালহা সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে বলে,, আমাকে বলছিস কেন সৌন্দর্য? একে বল কোনো সম্মান নেই। টিচারদের সাথে কি করে কথা বলতে হয় জানে না। টিচার হচ্ছে বাপ সমতুল্য অন্য কিছু ভাবা ও পাপ।
সৌন্দর্য কপাল চুলকাতে চুলকাতে বলে এটা খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?
ইসরাত মাঝখান দিয়ে বলে উঠে,, তাহলে সৌন্দর্য স্যার আর নূর কি অন্য গ্রহ থেকে এসেছে?
তালহার মুখ এক নিমিষেই বন্ধ হয়ে গেছে ইসরাতের মুখের এরূপ কথা শুনে।
চুপপ আর একটা কথা ও বলবি না, একদম চুপ।সৌন্দর্যের ধমকে দুইজনই চুপ হয়ে যায়। ইসরাত তালহার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙচি দিতে ভুলে না।
এবার আমাকে খুলে বল এই মেয়ে টা কে? (সৌন্দর্য)
ও রিমি আমার স্টুডেন্ট। কিছু নোটে সমস্যা হয়েছিল, আর আমাকে ফোনে পাচ্ছে না তাই এখন দেখা হওয়ায় বলছিল। রাগী দৃষ্টিতে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলে তালহা।
রিমি এর মাঝে বলে,,সরি স্যার আমি বুঝতে পারিনি এই সামান্য বিষয় টা নিয়ে এতো বড় ঝামেলা হয়ে যাবে।এমন কিছু হবে জানলে আমি কলেজেই সব সমাধান করে নিতাম।
ইট’স ওকে রিমি তুমি এখন যাও বাকিটুকু কাল কলেজে বুঝিয়ে দিবো।(তালহা)
ঠিক আছে স্যার।আবারও সরি বলেই রিমি চলে যায়।
ইসরাত তার ভুল বুঝতে পারে। না বুঝে শুধু শুধু ঝামেলা করে ফেলেছে। এজন্য সবকিছু বিচার বিবেচনা করে করতে হয়। ইসরাতের ও কি করা তালহা কে সেই কবে থেকে ভালোবাসে।লোকটা বুঝে ও বুঝেনা। ইসরাত ঠোঁট উল্টে বলে আমিও সরি।
তালহা বলে লাগবে না আমার কারো সরি।
নূর এতোসময় নিরব দর্শক ছিলো। এবার নীরবতা ভেঙে বলে,,আচ্ছা এসব ছাড়ুন না চলুন আমরা সবাই মিলে কোথাও একটা বসি।
নূরের কথায় সকলেই সম্মতি জানায়। একসাথে পাঁচ জন ঘুরে। দুপুরের খাবার ও খায়। ঘুরাঘুরি শেষে সৌন্দর্য গাড়ি করে প্রথমে তালহা,পরে ইসরাত কে নামিয়ে দিয়ে আসে তাদের বাড়ির সামনে। গাড়িতে এখন শুধু ফাতিহা,নূর আর সৌন্দর্য।
গাড়ি পুরোই নীরব।নূরতো এমনিতেই কম কথা বলে। সৌন্দর্য ও চুপচাপ। ফাতিহা ইসরাতের সাথে মিলে অনেক কথা বলেছে দুষ্টুমি ও করেছে তাই এখন চুপচাপ বসে আছে নূরের কোলে।
সৌন্দর্য গাড়ি চালিয়ে নূরদের বাড়ির সামনে এনে রাখে। নূরের হুঁশ ই নেই তার বাড়ির সামনে এনে গাড়ি দাঁড় করিয়েছে। সৌন্দর্যের কথায় বুঝতে পারে এসে গেছে।
তা ম্যাডাম গাড়িতেই থাকবেন নাকি আমাদের বাড়িতে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন কোনটা? এটা করে থাকলে আশা বাদ দিন আপনাকে আমাদের বাড়িতে নেওয়া হচ্ছে না।
আমি মোটেও আপনাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা ভাবিনি আর না ইচ্ছে আছে যাওয়ার। বলেই নূর ফাতিহা কে আদর করে গাড়ি থেকে নেমে যায়। ফাতিহা নূর কে বলে,, মাম্মা যেও না থেকে যাও।আমাদের সাথে আমাদের বাড়িতে চলো।
না মা।আজ না আমার তো এক্সাম আছে পড়তে হবে।আজ যাও আবার আমরা দেখা করবো ঠিক আছে?
ফাতিহা ছলছল চোখে সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে বলে,,মি. ওয়াহিদ মাম্মা আমাদের সাথে যাবে না?
নাহ্ মাম। যেইদিন তোমার মাম্মা নিজের জন্য লড়তে পারবে।নিজের ভালো বুঝতে পারবে ঐদিনই নিয়ে যাবো।
তাহলে আমি থেকে যাই মাম্মার সাথে?
একদম না। কাল তোমার স্কুল আছে, সো মাম্মা কে বায় বলো।
ফাতিহা আর কিছু বলে না। নূর ফাতিহার কপালে চুমু দিয়ে চলে যেতে ঘুরে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরে। এরমধ্যে কানে আসে, কি খেয়ে বড় হয়েছে কে জানে ভদ্রতার খাতিরে ও যে বলতে হয় বাসায় আসেন সেটা জানে না। নিজের শ্বশুর বাড়িতেও যেতে বলে না হাহ্।
নূর নিজের ভুল বুঝতে পেরে পিছনে ফিরে বাড়ি আসার কথা বলতে নিবে তার আগেই সৌন্দর্য গাড়ি নিয়ে হাওয়া। অদ্ভুত লোক সবসময় একটা না একটা ভুল ধরবেই। ধূর ভালো লাগে না বলেই নূর চলে যায়।
——————–
পরের দিন নূর আর ইসরাত যথাসময়ে এক্সাম দিতে আসে। নূরের ভিতর আজ না চাইতেও ভয় ঢুকে গেছে। ভয় নিয়েই এক্সাম হলে ঢুকে। আজ আর রিতা কে দেখতে পায় নি। খাতা আর প্রশ্ন দেওয়ার পর লিখা শুরু করে। এরমধ্যে নিজের পাশে কারো উপস্থিত টের পায়। নূর বুঝতে পারে স্যার হয়তো গার্ড দিচ্ছে, কালকের ঐ ঝামেলার জন্য এখানে হয়তো বেশি নজর দিচ্ছে। না চাইতেও নূরের স্যারের দিকে চোখ যায়। নূরের চোখ এখানেই থমকে যায়।
#চলবে,,,?
#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ৭
#Jhorna_Islam
নিজে কিছু না করেও যখন কোনো একটা অপবাদ মাথায় এসে পরে তখন সেই ব্যক্তিটাই বুঝতে পারে কেমন লাগে।আজ নূর কিছুতেই শান্তিতে এক্সাম দিতে পারছে না। মনটা কেমন উশখুশ করছে।চারপাশ থেকে যেনো অস্বস্তি গুলো নূর কে ঘিরে রেখেছে। খাতায় লিখছে আর মনে হচ্ছে এই বুঝি স্যার খাতা টান দিলো এই বুঝি আবার খাতার ভিতর থেকে আলাদা কোনো পেপার পাওয়া গেলো।
এই বুঝি স্যার আবার কথা শুনাবে।মনের অশান্তির জন্য নিজের খাতা নিজেই দুইবার চেক দিয়েছে। আজ আর ওয়াশরুমে ও যায় নি। আজ রিতা নেই তাও ভয় কাটাতে পারছে না।
কালকের ঘটনার পর সকলেই একটু বেশিই সতর্ক হয়ে গেছে। স্যাররা ও কড়াকড়ি গার্ড দিচ্ছে।
নূর লিখতে লিখতেই নিজের পাশে এসে কারো দাঁড়ানোর উপস্থিতি টের পায়। মনে মনে ভাবে স্যার হয়তো আজ নূরের দিকে বিশেষ নজর রাখছে। না চাইতেও নূরের চোখ স্যারের দিকে যায়। স্যার কে দেখে নূরের হাত থেকে কলম টা খাতার উপর পরে যায়। নূর শুকনো ঢুক গিলে চোখ সরিয়ে লিখায় মন দেয়। কেন যেন হাতটা সামান্য কাপছে। সৌন্দর্য কে আজ নূর আশা করে নি এখানে। সৌন্দর্য এখানে আসবে এটাই স্বাভাবিক তবুও নূরের কেমন লাগছে। না চাইতেও চোখ দুটো সৌন্দর্যের দিকে চলে যাচ্ছে।
সৌন্দর্য তখন নূরের বেঞ্চ বরাবর দাঁড়িয়ে পুরো ক্লাসে নজর বুলাচ্ছে।
নূর লিখতে পারছে না। লোকটার গায়ের কড়া পার্ফিউমের ঘ্রাণ নাকে এসে বারি খাচ্ছে। মাথা কেমন ভনভন করছে। নূর মন থেকে চাইছে সৌন্দর্য তার বেঞ্চের কাছ থেকে সরে যাক।অন্য দিকে তো কতো জায়গা আছে, ঐদিকে না দাঁড়িয়ে এখানে এসেই দাঁড়াতে হলো লোকটা কে। সব বাদ দিয়ে নূর লিখায় মন দেয় কিছুতেই তাকাবে না।দাঁড়িয়ে থাকুক যতক্ষন ইচ্ছে, তাতে নূরের কি। সবকিছু থেকে মনোযোগ সরিয়ে নূর লিখতে থাকে। কয়েক মিনিট পর সৌন্দর্যের বাজখাঁই স্বরে কিছু টা কেঁপে ওঠে।
হেই ইউ! তোমার সাহস কি করে হলো পিছনে ঘাড় ঘুরানোর? একটা স্টুডেন্ট কে বলে সৌন্দর্য।
সৌন্দর্যর ধমকে ছেলে টা কেঁপে ওঠে। এমনিতেই ছেলেটা একটু ভীতু টাইপের। ছেলেটা সৌন্দর্যের দিকে কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে তাকায়।
আনসার মি!
স্যার আ-আসলে আমার কোয়েশ্চেন পেপার টা বাতাসে উড়ে পিছনে চলে গেছে।
ছেলেটির কথায় সৌন্দর্য এগিয়ে আসে। চেক করে দেখে সত্যি পিছনের ছেলের পায়ের কাছে পরে আছে প্রশ্ন টা। সৌন্দর্য ঐ ছেলেটা কে উঠাতে বলে।ছেলেটা তুলে সৌন্দর্যের কাছে দেয়। সৌন্দর্য হাতে নিয়ে ভালো করে চেক করে কোনো লিখা আছে কিনা। সত্যি উড়ে এসেছে? নাকি তুমি পিছনে দিয়েছো?
না-না স্যার।বিশ্বাস করুন একদম না। ছেলেটি মনে হয় একদম কেঁদেই দিবে এমন ভাব। সৌন্দর্য ছেলেটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন দিয়ে দেয়। নেক্সট টাইম সবকিছু যেনো সামলে রাখে বলেই সামনে টিচারের কাছে গিয়ে কথা বলতে থাকে।
নূর খাতায় লিখতে লিখতে আড় চোখে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। লোকটা গম্ভীর মুখে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কি যেনো বলছে নিচু গলায়। কিছু সময় পর সৌন্দর্য হল থেকে চলে যায়। যেতে যেতে নূরের দিকে এক পলক তাকাতে ভুলে না। নূর সব ভুলে এক্সাম দেওয়ায় মন দেয়।
—————————–
বিকেলে দুইজন টিউশনি থেকে বাড়ি যাচ্ছে। ইসরাতের খুব খিদে লেগেছে বলতে গেলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়ার শখ জেগেছে মনে। কিন্তু নূর ম্যাডাম কিছুতেই যাবে না। বেচারি ইসরাত বলতে বলতে নিজের গলা শুকিয়ে ফেলেছে নূর কিছুতেই রাজি হচ্ছে না ।
প্লিজ বোন চল, এই চল না বার্গার খেতে খুব মন চেয়েছে ইয়ার। দেখ আমার পেট বার্গারের নাম শুনেই আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে খাওয়ার জন্য। দেখ কেমন ডাকছে বলেই ইসরাত নূরের হাত নিয়ে নিজের পেটে রাখে।
নূর ইসরাতের পেট থেকে হাত সরাতে সরাতে বলে,এটা বার্গারের নাম শুনে নয়,তোর এমনিতেই খিদে লেগেছে। আর তুই নাম দিচ্ছিস বার্গারের।
চল দোস্ত। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
নূর আর কি করবে রাজি না হয়ে পারলো না। এই মেয়ে টা এসব চাইনিজ, টাইনিজ খাওয়ার জন্য এতো পাগল। অগত্যা রাজি হয় যেতে।
আচ্ছা ঠিক আছে চল।(নূর)
সত্যিইইই? বলেই ইসরাত লাফিয়ে উঠে।
না।আমি গেলাম বলেই নূর হাঁটা ধরে।
এই না না দোস্ত চল।তোকে এতো এতো থ্যাংকস বলেই নূরের গালে টুপ করে চুমু বসায়।
নূর ইসরাত বলেই চিল্লিয়ে উঠে। তার এসব একদম পছন্দ না। শরীর কেমন গুলিয়ে আসে।
ইসরাত নিজেকে সামলে বলে,,সরি সরি দোস্ত এক্সাইটেডে ভুলে গেছি। তারপর মনে মনে বলে,,আমি দেওয়ায় তোমার এলার্জি না? যখন সৌন্দর্য স্যার দিবে তখন এমন করে দেখো তোমার কি অবস্থা করে হুহ।
দুইজন একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে ভিতরে নিরিবিলি একটা টেবিল খুঁজে বসে।ইসরাত দুইজনের জন্য বার্গার অর্ডার করে।
খাবার আসতে একটু সময় লাগবে। এরমধ্যে ইসরাতের একটা কল আসে তার কাজিন নাকি এসেছে কি একটা দিতে। পাঁচ মিনিটের জন্য বাইরে যেতে হবে।নূরকে বলে ইসরাত চলে যায়।
নূর একা একা বসে আছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। এখন ব্যাগ থেকে বই নিয়ে পড়তে ও মন চাচ্ছে না।বসে বসে নখ খোঁচাচ্ছে। এরমধ্যে পরিচিত কন্ঠ স্বর শুনতে পায়।তবে সব সময়ের মতো রাগী,গম্ভীর, ঠাট্টার সুর না। হাস্যরত কন্ঠ স্বর।
নূর কর্ণারের টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে যা ভেবেছিলো তাই। সৌন্দর্য বসে আছে কয়েকজন লোকের সাথে। সকালের সেই রূপ এখন আর নেই পুরো ভিন্ন। পোশাক-আশাক মুখের এক্সপ্রেশন। কি সুন্দর করে হেসে হেসে কথা বলছে। ভার্সিটির স্টুডেন্টরা এখন এই সৌন্দর্য কে দেখলে নিশ্চয়ই অবাক হয়ে যেতো।দিন আর রাতের তফাত যেনো এ।
নূর কিছুতেই চোখ সরাতে পারছে না। এমন করে আগে কখনো সৌন্দর্য কে দেখা হয় নি।এমনকি কোনো ছেলেকেই দেখা হয়নি।
কি সুন্দর লোকটা কে দেখতে। যেমন চেহারা,তেমন এটিটিউড।নীল রংয়ের শার্টে কি সুন্দর মানিয়েছে। সুন্দর শরীরে নীল রং টা ফুটে আছে। হাতা গুলো স্লিভ করা হাতের র’গ গুলো ও ভাসমান। ছেলে মানুষের বুঝি এতো সুন্দর হতে হয়? কই নূর তো এতো সুন্দর না সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে নূর নিজের হাতের দিকে তাকায়। নিজের চেহারায় হাত বুলায়। সৌন্দর্যের পাশে কেমন নিজেকে তুচ্ছ লাগছে।
সৌন্দর্য নূরকে লক্ষ করে নাই নাকি করেছে কে জানে।হয়তো বুঝতে ও পারছে না কেউ একজন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকে দেখছে।
নূরের সৌন্দর্য কে দেখে মনে মনে আওড়ায় ,,
❝ সৌন্দর্য এক অদ্ভুত অনুভূতি,
চোখের মুগ্ধতায় উড়ে বেড়ানো নীল প্রজাপতি। ❞
নূরের ভাবনার মাঝেই ইসরাত এসে বসে। কিন্তু নূরের কোনো সারা শব্দ নেই একই ভাবে তাকিয়ে আছে। নূরের তাকানো লক্ষ করে ইসরাত ও তাকায়।কিন্তু কোথাও কিছু দেখতে পায় না। একটা ওয়েটার শুধু টেবিল পরিষ্কার করছে। ঐখানে এমন করে তাকিয়ে থাকার কি আছে ইসরাত বুঝলো না। নূরের সামনে তুড়ি বাজায়। নূর ঘাবড়ে গিয়ে ইসরাতের দিকে তাকায়।
কি দোস্ত কি হয়েছে? আর ঐদিকে কি?(ইসরাত)
ক-কই কি হয়েছে? বলেই আবার ঐদিকে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। আশ্চর্য হুট করে হাওয়া হয়ে গেলো নাকি। তারপর ইসরাতের কথা ভেবে নূর হাফ ছাড়ে ভালো হয়েছে দেখেনি। দেখলে কি বিব্রত পরিস্থিতিতে পরতে হতো।
কিছু না এমনি তাকিয়ে ছিলাম।
ইসরাত আর কথা বাড়ায় নি।দুইজন বার্গার আসলে খেয়ে বেরিয়ে পরে বাড়ির উদ্দেশ্যে।
এরমধ্যে নূরের ফোনে মেসেজ আসে। নূর বেশি পাত্তা দেয় নি। রাতে সকল কাজ,পড়াশোনা শেষ করে ঘুমানোর সময় ফোন হাতে নেয় নূর এলার্ম সেট করার জন্য। তখন আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ দেখে ক্লিক করে দেখার জন্য।
“কারো দিকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে নেই নজর লেগে যায়। আর আমার দিকে তো একদম না কারণ আমার একটা হা’বা’গো’বা বউ আছে। ”
#চলবে??