#পরিণীতা
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৪
৮.
পরিণীতা তুই খুব বোকা রে আমার প্লানিং এর কিছু ই বুঝলি না। বলে ই অট্টহাসি দিলো ইরা। আদির নম্বর থেকে মেসেজ দিলাম তুই দ্রুত আসবি আমি জানি
–কী বলছো আপু।
–হে, তুই কী তোর প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট টা একবার ও দেখেছিলি।
–আপন বোন না হতে পারো তাওআপু বড় বোন নাকি মায়ের মতো থাকে। আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করতাম। তাই রিপোর্টটা খুলে দেখায় প্রয়োজন মনে করিনি।
ইরা আবার হাসতে শুরু করলো। পরিণীতা শুধু তাকিয়ে দেখছে। কী বলছে এসব ইরা।
–দেখ পরী আমার আদিকে দরকার ছিলো পেয়ে গেছি এখন তুই আমার কোনো শত্রু না তাই তোর ভুল ধারণাটা ভাঙ্গা প্রয়োজন। আদি আমার শুধু আমার আদি আর আমার মধ্যে যে আসবে তার ও আমি তোর মতো অবস্থা করবো। সে আমার যে ই হক
–কী বলছো আপু এসব।
–শুন। আদি তোকে কখনো স্পর্শ করনি। কারণ যেদিন রাতে তুই আর আদি পার্টির পর দুজনে ই আমার সাথে ছিলি, আমাদের বাগান বাড়িতে। আমি আদিকে আমার রুমে নিয়ে গিয়ে ছিলাম তুই অন্য রুমে ছিলি। ঐদিন কী হয়েছিলো তোর মনে নেই কারন তুই ড্রিংকস করে ছিলি আদি না। তুই পাগলামও করতেছিলি আমি আদিকে বুঝিয়ে আমার রুমে নিয়ে যাই।
–তাহলে তুমি ই তো বললে আমি প্রেগন্যান্ট।
–তুই তো বোকা তোকে আমি যা বুঝাতাম তাই ই বুঝতি। ঐদিন আদি আমাকে কল দিয়ে ছিলো তুই নাকি ড্রিংকস করেছিস। ঐ সুযোগে আমি ও আদির সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যাই তাই আদিকে আমাদের বাগান বাড়িতে তোকে নিয়ে আসতে বলি। আমি জানি তোর রাতের কথা মনে থাকবে না তাই আদির কাছে তোকে খারাপ প্রণাম করার জন্য এসব করি। আমার প্লানিং অনুযায়ী কাজ হয়ে যায় আর আদি আমাকে বিশ্বাস করতে শুরু করে। তোকে খারাপ ভাবে তাই তো আদি বার বার এক কথা ই বলে তোকে স্পর্শ করেনি।
পরিণীতার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে এসব শুনে। সত্যি ই মানুষ নিজের স্বার্থে জন্য অনেক কিছু করতে পারে। ইরাকে না দেখলে পরিণতা হয়তো বা বুঝতো না।
–আদি আমাকে অবিশ্বাস করতে পারলো??
–হাসালি আমার কী মনে হয় জানিস তোদের ভালোবাসা সত্যি ছিলো না। এটা ভালোবাসা ছিলোনা ক্ষনিকের মোহ ছিলো।
–হে হয়তো বা আপু।
–আসলে পরী তোর আত্মসম্মান বলতে কিছু নেই জানিস তো। কেউ আমার সাথে এমন আচর করলে আমি কখনো তার চোখের সামনে যেতাম না।
–হে ইরা আপু সত্যি বলেছো আমার আত্মাসম্মান নেই। একবার কাউকে মন থেকে ভালোবেসে দেখো আত্মসম্মান কী বুঝবে না। সে অবহেলা করলে পৃথিবীটা তোমার কাছে নরক সমতুল্য মনে হবে। এই যে ইরা আপু আমি কষ্ট পেলাম তো কী হয়েছে অনেক কিছু শিখতে পারলাম। এখন থেকে পরিণতা আর বোকা থাকবে না।
কথাটা বলে আর একমুহূর্তে জন্য ও পরী দাঁড়ালো না।
৯
বিয়ের জন্য বাসা থেকে চাচি চাপ দিতো অনেক। পরিণীতা বাবা মা না থাকায় “” বসে বসে অন্য ধ্বংস করিস কথাটা শুনতে হতো সব সময়। তাই আদিকে বললে বিয়ে করে নেয়। কোনো রেজিষ্ট্রি হয়নি। কথা ছিলো যখন সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করবে তখন রেজিষ্ট্রি করে নিবে। তাও ঐদিন ডিভোর্স পেপার দিয়েছে যদি কখনো কোনো সমস্যা করি।
কয়েকদিন আগে পরিণীতা আদির সঙ্গে একটা পার্টিতে গিয়েছিলো। বন্ধুদের পালায় পড়ে ড্রিংকস করেছিলো। পরিণীতার ড্রিংকস করার পর থেকে আর কিছু মনে ছিলো না।যার ফলে যেভাবে পারে ইরা ভুল বুঝিয়ে ছিলো।
হঠাৎ একদিন শরির খারাপ করেছিলো । পরিণীতার শরির খারাপ দেখে ইরা একগ্লাস শরবত এনে দিয়েছিলো পরিণীতা না খেতে চাইলে ও জোর করে খাইয়ে দেয় ইরা। এর পর থেকে ই বমি শুরু হয়। ডক্টর এর কাছে ইরা নিয়ে যায়। আর ইরার প্লান অনুযায়ী প্রেগন্যান্ট বলে। মিথ্যে রিপোর্ট দেয়।।।
প্রেগ্ন্যাসির বিষয়ে এতো বেশি ধরনা ছিলোনা পরিনীতার তাই হালকা বমি হওয়া থেকে ই বিশ্বাস করেছিলো বাচ্চার মা হতে চলেছে।।।
বিয়ের পর থেকে আদির অবহেলা বেড়ে ই চলছিলো।। যতদিন যাচ্ছিলো আদি পরীকপ বিরক্তি ভাবতো।। আদি কখনো পরীকে স্পর্শ করেনি, এমনি কী বিয়ের পর ও না। বলেছিলো সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করার পর সব হবে, আবার নতুন করে বিয়ে, বাসর হানিমুন। এখন সব ই হবে শুধু পরীর নামক মানুষটার জায়গায় ইরা নামক আদির ভালোবাসা থাকবে।
ইরা সত্যি ই বলেছে আদি কখনো পরীকে ভালো ই বাসতো না। সব ক্ষনিকের মোহ ছিলো।।। নারীর স্পর্শে এলে কী সব পুরুষ ই মোমের মতো গলে যায় প্রশ্ন টা বার বা মাথায় ঘুরপাকা খাচ্ছে।।।।।।
আদির প্রতি আজ থেকে পরিণীতার কাছে কোনো ভালোবাসা নেই। নিতান্ত ই আদি একটি ঘৃণা হয়ে থাকবে।।।
কল্পনার জগৎ থেকে বের হয় রিক্সাওয়ালার ডাকে।
–চইলা আইছি। নামবেন না।
পরী নেমে রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে অফিসে ডুকে। ডুকতে ই রবিন এসে সামনে দাড়ায়।
–ম্যাম আজকে আপনার খবর আছে। স্যার অনেক রেগে আছে। একদিন আমি স্যারের কথার অবাধ্য হয়েছিলাম। রেগে গিয়ে এমন এক থাপ্পড় দিয়ে ছিলো আমার নাক দিয়ে রক্ত বেড়িয়ে গেছিলো। পরে আবার স্যার মাফ চেয়ে নিয়েছেন। তাও রেগে থাকলে স্যার কী করেন নিজে ও বলতে পারেন না।
–এতো রাগি উনি দেখতে তো দেখা যায় না।
–আপনাকে অনেক খুজেছে মনে হয়। কারণ আপনাকে না পেয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে ছিলো এখন মাত্র আসলো দেখেন ঘড়িতে কয়টা বাজে।
–চারটা অলরেডি বেজে গেছে। সব স্টাফরা চলে গেছে। শুধু আমি আর স্যার আছি।
–আরে স্যারকে আমি ভয় পাই না। তোমার স্যার আগুন হলে আমি পানি।
এটা বলে ই দেখি অর্ণব রক্তবর্ণ চোখ নিয়ে আমার পেছনে দাড়িয়ে আছে। দেখে আমার অনেক ভয় লাগছে।
–রবিন তুমি বাসায় চলে যাও।
এটা বলার সাথে সাথে রবিন অফিস থেকে বের হয়ে যায়। আল্লাহ অনেক রেগে আছে এখন আমার কী হবে।
চলবে।