#পরিণয়
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১৪
তারপর পল্লবীকে ভালো করে দেখল। পল্লবীকে দেখেই সাদেক সাহেবের মনটা কোমন জানি অস্থির হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে সেই চেনা মুখটা ভেসে আসছে বারবার। মনে হচ্ছে সেই চেনা মুখের অবয়বে পল্লবীর মুখের অবয়বটায় বেশ মিল আছে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাদেক সাহেবকে এভাবে তাকাতে দেখে পল্লবী বিচলিত হয়ে গেল। সাদেক সাহেবের চোখে চোখ পড়তেই পল্লবীর মনটা ব্যকুল হয়ে গেল। সাদেক সাহেবের চোখের কোণে এক বিন্দু চোখের জল চিকচিক করতে দেখে মনের ভেতরটা যেন কেঁপে উঠল। পল্লবী মোলায়েম কন্ঠে বলল
– স্যার কিছু হয়েছে? আপনাকে একটু অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত।
সাদেক সাহেব হাত দিয়ে নিজের থুতনীর ছোট ছোট দাঁড়ি গুলোকে মুঠো করে ধরে বলল
– চলুন আপনার কাজের জায়গাটা দেখিয়ে আসি। তারপর বলি কী হয়েছে।
পল্লবী মাথা নেড়ে সাদেক সাহেবের দিকে এগুতে লাগল। সাদেক সাহেব একটা রুম দেখিয়ে পল্লবীকে বলল
– এটা আপনার কাজের জায়গা। আশা করি পছন্দ হয়েছে।
পল্লবী রুমটার চারপাশ তাকিয়ে দেখল বেশ পরিপাটি করে সাজানো। এসিও আছে। পল্লবী হালকা হেসে বলল
– এমন রুমে বসে কাজ করা তো ভাগ্যের ব্যপার। পছন্দ হবে না কেন? বরং অনেক পছন্দ হয়েছে। এবার বলুন আপনার কথা। কী নিয়ে এত চিন্তা করছিলেন।
সাদেক সাহেব পল্লবীকে একটা চেয়ার দেখিয়ে নিজে একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল
– আপনি ঐ চেয়ারটায় বসুন আপনাকে আমি সব বলছি।
পল্লবী চেয়ারটায় বসে বলল
– এবার বলুন।
– শুনোন আমার একটা বড় বোন ছিল। তার নাম মাধবী। আমার বোনটা দেখতে ঠিক আপনার মতোই ছিল। আপনার চোখটা যেমন ঠিক তেমন। দুই বছর আগে আমার বোনটা বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে মারা যায়। সত্যি বলতে নিজের জীবন নিয়ে সে অনেক বিরক্ত ছিল। সারাদিন কান্নাকাটি করত।কত কিছু বুঝাতাম তবুও তার বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা ছিল ক্ষীণ। শুধু পেটের বাচ্চাটার জন্য বেঁচে ছিল। বারবার বলত আমার বাচ্চাটা হওয়ার পর যেন আমি মরে যাই। আমার কষ্ট হয় অনেক। এ কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেলে খুশি হব। আমার বোনটার সাহস কম তো তাই আত্নহত্যা করেনি।তবে তার চাওয়া আল্লাহ কবুল করে ফেলছিল এজন্য বাচ্চাটা হওয়ার সময় সে মারা গেল।
পল্লবী বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
– আপনার বোন নিজের জীবন নিয়ে এত হতাশ কেন ছিল?
সাদেক সাহেব দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল
– ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। আমার বোনের সংসারটাও ভেঙ্গে যায় পরকিয়ার জন্য। ওর অবশ্য ডিভোর্স হয়নি। তবে কথা ছিল বাচ্চা প্রসবের পর আমার বোন জামাই তাকে ডিভোর্স দিবে। কারণ প্র্যাগনেন্সি অবস্থায় তো ডিভোর্স হয় না।আমার বোনটা সেটা মানতে পারছিল না।দুজন আলাদা থাকা শুরু করলেও আমার বোনের মন পড়ে ছিল অন্যদিকে।তার অশান্তি হত এটা ভেবেই বাচ্চা হওয়ার পর তার জীবন থেকে তার ভালোবাসার মানুষ বিদায় নেবে। তার ভালোবাসার মানুষের প্রতি থাকা সকল অধিকার কেড়ে নেবে ডিভোর্স নামক কাগজ। এটা ভেবেই সে হতাশ হত। আর বলত আমি সায়েমের বউ হয়েই মরতে চাই। বাচ্চা হওয়ার পর যেন আমি মরে যাই।(সায়েম হাসনাত আমার বোন জামাইয়ের নাম।) আল্লাহ হয়তো আমার বোনের দোআটা কবুল করে ফেলেছে তাই বাচ্চাটা হওয়ার পরপরই মারা যায়। আপনাকে দেখলে মাঝে মাঝে আমার বোনের মুখ অবয়বটা ভেসে আসে। ঐদিন যখন শুনলাম আপনি ডিভোর্সি প্র্যাগনেন্ট তখন আমার বোনের কথাটা মনে পড়ে যায়।এরপর থেকেই একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমি আপনাকে কোনো কুপ্রস্তাব দেবো না।কারণ আমি একজনকে পছন্দ করি তার সাথে কিছুদিন পর আমার বিয়ে হবে। তাই আপনাকে আমার বোনের জায়গাটা দিতে চাই। আপনি কী আমার বোন হবেন? বড় বোনটা আমাকে যেভাবে তুই তুই করে ডাকত ঠিক সেভাবে ডাকবেন।
পল্লবীর চোখে জল চিকচিক করছে। ভাঙ্গা সুরে বলল
– তা তো হওয়ায় যায়। আমিও একটা ছোট ভাই পেলাম। আমার বড় ভাই আছে এখন না হয় একটা ছোট ভাই ও হলো।মাধবী আপুর বাচ্চাটা কোথায়?
– আমাদের কাছেই আছে। বাচ্চাটার বয়স এখন দুই চলে। আমি তো জানতাম প্র্যাগন্যান্ট অবস্থায় ডিভোর্স হয় না আপনার হয়েছে কীভাবে?
– ডিভোর্সের সময় আমি জানতাম না যে আমি প্র্যাগনেন্ট। তবে পরে জানতে পারি। যদিও আমাদের ডিভোর্স টা হয়নি। তবে ঐ নোংরা মানুষটার কাছে এ বাচ্চার জন্য দয়া চাইতে একদম ইচ্ছা করছে না। সাহিল জানেও না আমি মা হতে চলেছি। সে হয়তো রুশিকে নিয়ে ভালোই আছে।
যাইহোক তোর চিন্তা নাই। আমি আজকে থেকে তোর বড় বোন। তা তোর পছন্দের মানুষটার নাম কী? একদিন তো দেখাবি নাকি? নাকি বোনকে না দেখিয়েই বিয়ে করে ফেলবি?
পল্লবীর তুই করে কথা বলাটা শুনে সাদেক সাহেবের মনটা শীতল হয়ে গেল। মুখে হাসি টেনে বলল
– কেন দেখাব না আপাই। অশ্যই দেখাব তোমায়।কালকেই দেখাব। এখন তুমি তোমার কাজ করো। পরে এসে কথা হবে। আমার অনেক কাজ বাকি।
পল্লবী হাসতে হাসতে বলল
– আচ্ছা যা।
বলেই পল্লবী ডেস্কে গিয়ে বসল। আর সাদেক সাহেব রুম থেকে বের হলো। পল্লবীর মনটায় স্বস্তির হাওয়া বইতে লাগল। পল্লবীর আজকে কুরআানের একটা আয়াত খুব মনে পড়ছে তা হলো
“নিশ্চয় আল্লাহ এত দেবেন এত দেবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবা”
পল্লবীও ভাবতে লাগল সত্যিই আল্লাহ কষ্ট দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করে। তা না হলে এত শান্তির ছোয়া পেতাম না। কষ্ট পেয়েছি বলেই শান্তির ছোয়া পেয়েছি,নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছি।আশেপাশের মানুষগুলোকে চিনতে পেরেছি। মাঝে মাঝে খারাপ সময় আসলে মানুষ চেনা যায়। মুখোশের আড়ালে থাকা মানুষগুলো মুখোশ খুলে তখন রূপ দেখায়। সেদিনের মতো পল্লবী তার কাজ শেষ করে বাসায় ফেরে।
বেশ ভালোই কাটতে লাগে পল্লবীর জীবন।সাদেক সাহেবের সাথে সম্পর্কটাও বেশ ভালো হয়ে উঠে। আর এদিকে নিজের অবস্থান গড়তে পেরেও সে খুব খুশি। একটা মাস পার হয়। আজকে পল্লবীর বেতন পাওয়ার তারিখ। পল্লবী শুধু জানে এ পোস্টের বেতন ভালো তবে কত টাকা বেতন সেটা সাদেক সাহেব তাকে বলেনি পল্লবীও আর জিজ্ঞেস করেনি। পল্লবী তখন কাজ করতেছিল। এমন সময় সাদেক সাহেব দরজার সামনে এসে বলল
– আপাই আসতে পারি?
পল্লবী হালকা হেসে বলল
– আয়।
সাদেক সাহেব রুমে ঢুকে পল্লবীর হাতে একটা খাম দিয়ে বলল
– তোমার এ মাসের বেতনটা। প্রথম মাসের বেতন পেয়েছ সুতরাং আমাকে ট্রিট দিতে হবে।আমার সাথে আমার পছন্দের মানুষটাও থাকবে তাকেও ট্রিট দিতে হবে। কবে দিবে বলো।
– কালকেই নিয়ে আয়। তা তোর পছন্দের মেয়েটার নামটায় তো জানতে পারলাম না। নাম কী তার?
সাদেক সাহেব লাজুক গলায় জবাব দিল
– আশালতা।
– বাহ! ভারি সুন্দর নাম। তা কালকে নিয়ে আয়।
– আচ্ছা আমি ওকে বলে রাখব।
পল্লবী হাসতে হাসতে মাথা ঝাঁকাল।
– আমি এবার গেলাম আপাই।
বলেই সাদেক সাহেব রুম থেকে বের হলো। সাদেক সাহেব বের হতেই পল্লবী খামটা খুলে টাকা গুলো গুণে বিস্মিত হয়ে গেল।সে ভাবতেই পারছে না যে সে ৪৫ হাজার টাকা বেতন পেয়েছে। তার মনে খুশির জোয়ার বইছে। আজকে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে নিল। কাজ শেষে বাসায় যেতে লাগল হেঁটে হেঁটে। এমন সময় সাহিলের সামনে পড়ল পল্লবী। সাহিলকে দেখেই পল্লবী থেমে গেল। এ দিকে সাহিল-