পিচ্চি বউ পর্ব – ৩

0
2429

পিচ্চি_বউ
পর্ব – ৩

লেখা – রাইসার_আব্বু!

পরের দিন সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল।

বাবা আজকে অফিসে যেতে না বলে কথাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিতে বলল!

আমি বাবার কথায় না করতে পারি না, তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডিস্টাবকে নিয়ে বাইকে করে রওয়ানা দিলাম! কলেজের গেটে বাইক দাঁড় করানোর সাথে সাথেই যা দেখলাম তা দেখার একে বারে প্রস্তুত ছিলাম নাহ্ “”” এখন আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না কিছু সাথী কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।
মনে হচ্ছে এখনি বৃষ্টি নামবে। কথাকে কলেজে ভর্তি করে দিয়ে যখনি কলেজ গেট পার হয়েছি তখনি দেখি কলেজের পাশে রেললাইন ও একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মিনিট দশেক পর ট্রেন আসবে।
বুঝতেছিনা কি করবো, বাইক নিয়ে একটু কাছে যেতেই বুকটা কেঁপে ওঠলো। সাথী রেললাইনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে।
ট্রেন আসার শব্দ হচ্ছে। মিনিট পাঁচেক এর মাঝে ট্রেন আসবে।
এদিকে সাথীকে ডাকছি, সাথী চোখ বন্ধ করে আছে। এদিকে বাইক রেললাইনের সাইডে পাথরের সাথে ধাক্বা লেগে পড়ে যায়, বাইক পড়ে আমার উপর।
আমি খুব চেষ্টা করছি আমার উপর থেকে বাইক সরাতে। কিন্তু পাচ্ছিনা।
এদিকে দেখা যাচ্ছে ট্রেন প্রায় কাছে এসে পড়েছে।
বুকের হার্টবির্ট বেড়ে যাচ্ছে! সাথীকে গলা চেঁচিয়ে ডাকছি তারপর সাথী শুনছে না, ।
নাহ্ এ দৃশ্য আমি সহ্য করতে পারবো না, মনে মনে আল্লাহ্ তায়ালার কাছে সাহায্য চাচ্ছি।চোখ দিয়ে নীরবে অশ্রু ঝরছে, হাটু কেটে রক্ত বের হচ্ছে!
বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। পাগলের মতো আল্লাহকে ডাকছি, আর বাইক সরাতে চেষ্টা করছি। মনে মনে বলছি, হে আল্লাহ্ আমাকে শক্তি দাও বাইক সরানোর, আমার হৃদয়টা রেললাইনের মাঝে।
হে পরম করুণাময় রহম করো তোমার বান্দাকে।

আর বাইক সরানোর জন্য চেষ্টা করছি।
এদিকে আল্লাহর নাম নিয়ে বাইক ধাক্বা দিতেই বাইক সরে যায়। এদিকে ট্রেন প্রায় কাছে এসে পড়েছে।
দৌড়ে গিয়ে সাথীকে রাস্তা থেকে সরিয়ে, বুকে জড়িয়ে নিলাম।
সাথী কাঁদছে,এখনো হাটু থেকে রক্তবের হচ্ছে।
সাথী কান্না করে করে আমার শার্ট ভেজিয়ে দিচ্ছে।

.

এদিকে সাথীকে বুক থেকে ছাড়িয়ে, কষে একটা থাপ্পর দিয়ে বললাম” এ পাগলী কেন এমন পাগলামী করছো? জানো না তোমাকে ছাড়া আমি নিজেকে ভাবতে পারি না! কেন মরতে যাচ্ছিলে?

.

আমি তো সেই কবেই মারা গিয়েছি, মারা গিয়েছি তখনই যখন শুনেছি, আমার ভালবাসার মানুষ অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছে ।
চোখ দিয়ে আষাড়ো শ্রাবণ ঝরণা ধারা নেমেছিল। বিরহের অনলে প্রতিনিয়ত পুড়ছি আমি।
আমার দেহটা ছাড়া আত্মাটা সেই কবেই মরে গেছে!
জানো আজ যখন তোমার বাইকের পিছনে ওই মেয়েটাকে দেখলাম কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছিল আমার।
মনে হচ্ছে ধুম বন্ধ হয়ে মারা যাবো।
আমু তোমার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারি না! কি করবো তুমাকে একজন জড়িয়ে ধরে থাকবে, আর আমি কিভাবে দেখবো?
তাই ট্রেনের নিচে পড়ে তুমি হীনা এই জীবন নিঃশেষ করতে চেয়েছিলাম।
কেন বাঁচালে আমাকে, আমি যে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি!

. বলতে পারো কেন এতটা ভালবাসার পরও তুমি আমার নও? কেন আজ তোমার বুকে অন্য জনের ঠাঁয়, যে স্বপ্নগুলো তোমায় নিয়ে দেখতাম সে স্বপ্নগুলো অন্য কেউ নিয়ে দেখে? প্লিজ তুমি আমাকে গলা টিপে হত্যা করো নয়তবা তোমায় পায়ের নিচে আমাকে একটু জায়গা দাও! যানো রাজ তুমি বিয়ে করার পর একটা রাতও আমি ঘুমাতে পারি না! প্রতিরাতে কেঁদর কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছি! তোমায় বুকে একটু জায়গা দিবে? একটু জড়িয়ে নাও না প্লিজ! নাও না, নাও না প্লিজ। ( কান্না করতে করতে কথা গুলো বললো সাথী)

.

সাথীর মুখে এমন কথা শুনে বুকের বা পাষটা চিন চিনে ব্যাথা করছে। চোখ দিয়ে টুপটাপ করে পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। কিছু ভাবতে পাচ্ছিনা খুব ইচ্ছে করছে, সাথীকে জড়িয়ে দরে বলি, সাথী খুব ভালোবাসি তোমায় নিজের থেকেও বেশি। মনে হচ্ছে কথাটা বললে বুকের ব্যাথাটা কমবে। তাই সাথীকে হেচকা টান দিয়ে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলাম। কপালে একটা চুপু দিয়ে বললাম” বড্ড ভালবাসি, খুব বেশি ভালবাসি তোমায় হয়তো নিজের জীবনের চেয়ে বেশি! পাগলীটা কেঁদে কেঁদে শার্ট ভিজিয়ে ফেলছে! পাগলীটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে আছে আমায়! এদিকে সাথীকে বললাম, খুব শ্রীঘই আমরা বিয়ে করছি! কথাকে খুব তাড়াতাড়ি ডির্ভোস দিচ্ছি! সাথী ডির্ভোসের কথা শুনে আবারো জড়িয়ে ধরে কপালে চুপু দিয়ে চলে গেল! এদিকে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি ২ টা ভেজে গেছে! তার মানে ৩০ মিনিট আগে কলেজ ছুটি হয়ে গেছে! তাড়াতাড়ি বাইক স্ট্যার্ড দিয়ে কলেজের সামনে যেতেই অবাক হয়ে গেলাম! অনেক গুলো মেয়ে জমা হয়ে আছে। কাছে গিয়েই দেখি, কথা ছোট বাচ্চার মতো কাঁদছে! কয়েকটা মেয়ে বোঝাচ্ছে।

.

আমি কাছে গেতেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল” আমি আর কলেজে আসবো না, তুমি আমায় ভালবাসো না! কখন কলেজ ছুটি হয়েছে! ছেলেরা কিরকম ভাবে আমার দিকে তাকায়! আমার ভয় লাগেনা সবাইকে বলে দিছি,আমার দিকে তাকালে চোখ তুলে ফেলবে আমার বর! ঠিক বলেছি তো?

.

সবাই হাসছে মুখ ধরে। পাস থেকে একটা মেয়ে বলে ফেলল” ভাইয়া পৃথিবীতে খুব কম ছেলেই আপনার স্ত্রীর মতো বউ পায়।একটা মেয়ে যে স্বামীকে এতো ভালবাসতে পারে, সারাটা দিন ক্লাসের মাঝে আপনার কথায় বলেছে। আপনি নিতে আসতে দেরি করেছেন বলে,ছোটছোট বাচ্চা মেয়ের মতো কাঁদতেছে। হাসি ও পাচ্ছে আবার কান্নাও আসছে, এখনকার যুগে এমন মেয়েও পাওয়া যায়!

.

এদিকে, কথাকে বাইকে উঠাতেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরল! মনে হচ্ছে খুব ভয় পাচ্ছে।

.
কথাকে বাসায় নিয়ে আসার পর,, মাকে কান্না করে করে সব বলল! রাগে আমার শরীর ঘ্যান ঘ্যাণ করছে। দুপুরে খেয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে গেলাম!

.

রাত নয়টায় সময় ফোন বের করে দেখি, বাবা ৫ বার ফোন দিয়েছে অন্য দিকে, কথার নাম্বার থেকে , ১০০ + ফোন এসেছে! তাড়াহুড়া করে বাসায় গিয়ে দেখি বাবা, দরজায় দাড়িয়ে আছে।

.

বাবার সামনে যেতেই বললো” ঘরে নতুন বউ রেখে, বাহিরে কোন ছেলে থাকে? আর যদি এমন হয় আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি!

.

কিছুনা বলে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম! কিছুক্ষর পর দেখি, কথা আমাকে ডাকছে!

.

এই ডাকতেছে কেন? কি হয়েছে?

.

“তুমি খাবে না? বাবা খুব বকা দিয়েছে তাই না! এই নাও হা করো, আমি খাইয়ে দেয়! ”

কথাটা বলে মুখের কাছে খাবার তুলে দিতেই, একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলাম! খাবারের প্লেটটা ফ্লরে ফেলে দিলাম!

.
” তুই কি চাস? আমার জীবনটা তো নরক বানিয়ে দিয়েছিস। আমার বুক থেকে আমার ভালবাসার মানুষটাকে সরিয়েছিস। এখন আমার বাবার কাছ থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে আমার সমস্ত সম্পদ তোর করার প্ল্যান করছিস।আমি তুকে এ মাসেই ডির্ভোস দিবো! ( একদমে কথাটা বলে নিলাম! কথার ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে)

.
তোমার সাথে খাবো বলে খায়নি! ক্ষমা করে দিয়ো এতিম তো,! এতিম খানায় বড় হয়েছি! তাই মা-বাবার আদর পায়নি। তোমার মা -বাবাকে নিজের বাবা -মা করে নিয়েছিলাম। শুধু ভালবাসা চেয়েছিলাম।এতিম হয়ে জন্ম নিলেও সম্পদের প্রতি কোন মোহ নেই!

.

কথার দিকে চেয়েই দেখি, কাঁদছে, চোখগুলি লাল হয়ে গেছে। ন্যাঁকা কান্না দেখে শরীরটা রাগে ফেটে যাচ্ছে। দুনয়নে দেখতে মন চাচ্ছে না কথাকে। এই এতিম মেয়েটার জন্যই আজ, সাথী মরতে বসেছিল!

.
এই তুই এখানে কাঁদবি? প্লিজ তোর অলক্ষলে চেহারা নিয়ে আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যা প্লিজ । কথাটা বলে শুয়ে পড়লাম!

.

এদিকে কথা সুন্দর করে অযু করে, শ্বশুরের দেওয়া কুরআনটা পড়ে, নামাযে দাঁড়িয়ে গেল। নামায শেষ করলো কেঁদে কেঁদে। নামায শেষ করে আজকেও মোনাজাত ধরে আল্লাহর কাছে অনেক ক্ষণ কাঁদলো! মোনাজাত শেষ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

.

এদিকে ফজরের নামাযের আযান শুনে ঘুম ভাঙতেই অবাক হলাম ” কথা মেয়েটাকে রাতে এতো বকা দেওয়ার পরও জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে! মন চাচ্ছে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়! এই কি হচ্ছে ওঠো? আর একটু ঘুমাই! এই বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।

.

এখন ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে! জোরে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিলাম। আহ্ করে চিল্লানি দিয়ে ওঠলো! আমি বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি কথা খুড়িয়ে হাটছে!

.
কথা মা তোমার কি হয়েছে খুঁড়িয়ে হাটছো কেন? ( মা)

.

মা রাতে ঘুম থেকে উঠে পাজরে ব্যাথা পাচ্ছি! কথাটা বলে করুণভাবে আমার দিকে তাকালো।

.

নিজেকে অপরাধি মনে হচ্ছে! পরের দিন বাবা আমাকে আর কথাকে হানিমুনে পাঠিয়ে দিল। আমি সাথীকে বলে সব রেডি করে রেখেছি! আমাদের সাথে সাথীও কক্সবাজার যাবে। সবাই জানবে আমি হানিমুন করতে যাচ্ছি কথার সাথে কিন্তু না, আমি হানিমুন করবো সাথীর সাথে “”””

“”” সাথীকে,এসব বলে ফোন রাখতেই পিছন দিকে তাকাতেই দেখি কথা সিলিং ফ্যানের সাথে, ঝুলছে”””””” চলবে “””””

বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।