#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_২
পরনের লম্বা স্কার্টটা উঁচু করে আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে পুতুল!এখন যদি বাবা তাকে এই কাটাছেঁড়া অবস্থায় দেখে তাহলে তার খবর তো আছেই সঙ্গে ওই ছেলেরো কপালে শনি আছে।তাই চুপিসাড়ে নিজের ঘরে যাচ্ছে।ড্রয়িংরুমেই বাবা বসে খবরের কাগজ পড়ছে,একটু শব্দ পেলেই বুঝে যাবে সে এসেছে।কিন্তু কথায় আছে না “যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়” তার বেলাও ঠিক তাই হলো।পেছন থেকে পুতুলের বড় ভাই পুতুলকে ডেকে উঠলো,
-কিরে কাঠপুতুল এরকম লুকিয়ে লুকিয়ে কোথায় যাস?
খবরের কাগজ থেকে মুখ উঠিয়ে পুতুলের দিকে তাকালো পুতুলের বাবা।পুতুল একটা শুক্ন ঢোক গিলে,কপালের কাঁটা যায়গা সামনে চুল দিয়ে ঢেকে এক হাত কোমড়ে গুজে আরেক হাত নাড়াতে নাড়াতে পুলুতের ভাই প্রণয়কে বলতে থাকে,
-এই ভাইয়া তোকে আমি কতবার বলেছি তুই আমাকে কাঠপুতুল বলে ডাকবিনা,আমার নাম পুতুল,শুধু পুতুল!কাঠ পুতুল না,,,
-আরে কাঠপুতলি এতো চেঁচাস কেনো তুই তো কাঠের মতো শুক্না তাই তো তোকে কাঠপুতুল বলে ডাকি।
-কেন রে পুতুলরা কি তোর মতো হাতি হয় নাকি?তারা একদম স্লিম হয় একদম আমার মতো।
-হুম আসছে,
-তো আসবে না কি যাবে নাকি?
ঝগড়ার মাঝে পুতুল প্রায় ভুলেই গেছিলো তার তখন কার কথা আর এও ভুলে গেছিলো যে আব্বু জানলে বকা দিবে।ঝগড়ার মাঝেই পুতুলের বাবা পুতুলকে ডেকে ওঠে,তখন তার মনে হয় এই কাঁটার কথা!সামনে প্রণয় ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে আর সোফায় আব্বু ডাকছে,এখন সেখানে যাওয়া মানেই ধরা খাওয়া।কি করবে ভেবে পাচ্ছে না পুতুল,তাই সেখানে দাঁড়িয়েই হাতের নখ কামরাচ্ছে।তার বাবা আরেকবার ডেকে উঠলো
-কিরে পুতুল আয় এদিকে তোকে ডাকছি তো!
পুতুল তাও সেখানে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে,কি করবে এখন দুঃখে কষ্টে খুব কান্না পাচ্ছে তার।সব দোষ ওই ইমনের চ্যালার সা’লা এখন তোর জন্য বাবার কাছে বোকা খেতে হবে।রেডি থাক তুই তুইও মার খাবি আমার বাবা আর ভাই এর কাছে।
কিন্তু ধরা খাওয়ার আগেই শয়ং ফেরেশতা এসে হাজির হলো সেখানে,মানে পুতুলের ভাবি।সে যানে এখন পুতুলের ব্যথার কথা জানলে পুরো বাড়ি মাথায় করে দিবে এই দুই বাপ বেটা তাই সে রিস্ক নিতে চায় না।ড্রয়িং রুমে এসে দেখে বাবা পুতুলকে সমান তালে ডেকে যাচ্ছে আর পুতুল সেখানেই ভয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।তাই পুতুলকে বাঁচানোর জন্য বাবার উদ্দেশ্য বলে,,
-বাবা আসলে পুতুল একটু পুকুর পাড়ে গিয়েছিলো তো তাই শরীরে একটু কাঁদা লেগেছে ও ফ্রেশ হয়ে আসুক তারপর নাহয় কথা বলা যাবে।
পুতুল যেনো এইবার জান ফিরে পেলো।তবে এখন কোনো রিয়েকশন দিলো না মনে মনে ভাবিকে অনেক অনেক থ্যাংকিউ দিলো।কাউকে কোনো কিছু না বলতে দিয়ে উল্টো হয়ে দৌড়ে ঘরে চলে গেলো।ঘরে এসে বুকে হাত দিয়ে বড় করে শ্বাস নিলো,আয়নার সামনে গিয়ে একবার নিজের মুখ পরখ করে নিলো ফর্সা কপালে দু টো দাগ পরে গেছে,পা এর কাঁটা নাহয় ঢাকা যাবে কিন্তু এই কপালেরটা কি করবে?ধুরু ভালো লাগে না।
বলে ধপাস করে চৌকিতে বসে পড়লো।দু হাত বিছানায় উল্টো করে রেখে পা ঝুলাতে ঝুলাতে ভাবতে থাকে কি করবে সে,এতো সুন্দর ছেলে কিনা ওই দাঁত পোকা ইমনের চা’ম’চা ভাবা যায়?দেখে তো ভালো ঘরের ছেলেই মনে হয়।আহারে না জানি কিভাবে ব্লাকমেইল করে এই ছেলেকে এই রাস্তায় এনেছে,অবশ্য টাকার জন্য মানুষ সব করতে পারে।
ভাবতে ভাবতেই বিছানায় কুশনের সাথে হেলান দিলো আবার ভাবতে লাগলো।এই ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো সে টেরি পায় নি।ঘুম ভাঙলো ভাবির ডাকে,পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে ভাবি উপর হয়ে তার কপালে কিছু একটা লাগাচ্ছে আর তাকে ডাকছে।দেখে পুতুল ঘুম থেকে উঠে গেছে, তা দেখে পুতুলের ভাবির মুখে হাসি ফুটে ওঠে,
-আরে উঠেছিস উঠ উঠ ভালো হয়েছে তুই ঘুমিয়েছিলি না হলে তোকেও তাদের সঙ্গে যেতে হত!
শোয়া থেকে উঠে বসে পুতুল!কাঠের জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে বাহিরের প্রকৃতি হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে,তার মানে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।জানালা থেকে চোখ ঘুরিয়ে ভাবির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
-এদের সঙ্গে যেতে হতো মানে,কোথায় যেতে হতো?
-বাবা মা আর তোর ভাই তো গিয়েছে এমপিদের বাসায় তোকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু ঘুমিয়ে ছিলি বিধায় নিতে পারে নি আর তুই তো এমনি তেও ও বাসায় যাবি না তাই ভালোই হলো।আর তর কথা বলে আমিও থেকে গেলাম।এখন কিছু একটা করা যাবে এই মলমটা দিয়ে দিলাম আশা করি এখন ঠিক হয়ে যাবে।
-ও ভালোই হলো বল!আচ্ছা চলো বাগানে গিয়ে আমরা পেয়ারা পেরে খাই।
-হুম চল কিন্তু তুই কি এই অবস্থায় গাছে উঠতে পারবি?
-আরে ভাবিপু প্যারা নিয়ো না তো এই পুতুল সব পারে চলো।
তারপর তারা চুপিসারে বাড়ির গার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাগানে চলে গেলো।এই গ্রামের সব চেয়ে বড় বাগান হচ্ছে চেয়ারম্যান বাড়ির বাগানটি,চারোপাশ দিয়ে গাছ-পালা মাঝখান দিয়ে একটা গোলাকারের পুকুর!কিছুসংখ্যক মানুষ ছাড়া কেওই এই বাগানে ডুকতে পারবে না,তাই এই পুকুর আর বাগান স্বচ্ছ, এখানে সব ধরনের ফুল থেকে শুরু করে ফলের গাছ আছে।পুকুরের এক পারে শুধু ফুলের গাছ যেটার নাম দেওয়া হয়েছে “পুতুলের ফুলের রাজ্য” আরেক পাশে সব ফল এর গাছ যার নাম “ফল বাগান” আর বাকি দু পাশে শুধু গাছ।এইসব যত্ন করে পুতুলের বাব দাদা গড়ে তুললেও এখন এর সব নাম দেওয়া পুতুলের।কিন্তু সন্ধ্যা বেলা এই বাগানে সবার আসা নিশিদ্ধ তাই তারা লুকিয়ে এসেছে।
তারা ফল বাগানে যায়।সবার প্রথম পুতুল পেয়ারা গাছে উঠে পায়ের জন্য একটু কষ্ট হলেও সেটাকে পাত্তা না দিয়ে আরামছে পেয়ারা পেরে নিচে ভাবির হাতে নিয়ে সে গাছের ডালে বসে বসেই খেতে থাকে।
অন্ধকার হওয়ার আগে আগেই তারা বাড়ির ভেতরে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পরেই পুতুলের মা বাবা ভাই চলে আসে।এতক্ষণ দুই ভাবি ননদ মিলে খুব হৈ-হুল্লোড় করলেও তারা আসার পর সব স্বাভাবিক হয়ে যায় যেনো তারা এতক্ষণ এভাবেই চুপচাপ ছিলো।রাতে অনেক কষ্টে নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে পুতুল যাতে ভাইয়া বা বাবার চোখে না পড়ে।
সকাল সকাল উঠেই ফ্রেশ হয়ে স্কুল ড্রেস পরে চুলে দুই বেনি করে পুতুল রেডি হয়ে যায় স্কুলে যাওয়ার জন্য।কপালের কাঁটা দাগ লুকানোর জন্য হালকা পাউডার দেয় তাতে একটু দাগটা লুকিয়েছে।নিচে গিয়ে সবার সাথে নাস্তা করে বাবাকে একটা লম্বা হাগ করে বেড়িয়ে যায় স্কুলে যাওয়ার জন্য।বাড়িতে এতো এতো গাড়ি থাকতেও স্কুলে হেঁটে যায় পুতুল,তার নাকি গাড়িতে যেতে ভালো লাগেনা বমি বমি পায়।প্রথমে কেউ মানতে না পারলেও পরে তার জেদ আর ভাবির কোথায় তাকে একাই যেতে দেওয়া হয় স্কুলে।
হাঁটতে হাঁটতে কাঁচা রাস্তা পাড় হয়ে পাকা রাস্তায় পা রাখে পুতুল।তার দৃষ্টি বাম দিকের লম্বা বাগানটার দিকে,অবশ্য সেখানে ইট দিয়ে ঘের দেওয়া যেটা তার হাইটের চেয়েও দিগুণ বড়।কিন্তু তার নজর লম্বা গাছটার উপর যেখানে মুক্তার মতো ধরে রয়েছে অসংখ্য কালো গোলাপ।
“আহা কি মহনীয় এই গাছটা যদি আমার হতো কতোই না ভালো হতো। আচ্ছা গাছ না হোক এই গাছের একটা ফুল যদি আমার হতো,কিন্তু এই বেডা দারোয়ান তো আমাকে এদিকে আসতেই দেয় না ফুল নিবো কিভাবে?”
ভাবতে ভাবতে সামনে যেতেই এসে পড়ে এই বাগানের মালিকের বাড়ি মানে এমপিদের বাড়ি।পুরো এই কালো গোলাপের মতোই এই বাড়িটা একদম দৃষ্টিকারার মতো।এই গ্রামে দুটো বাড়ি এরকম মহনীয় এক, তাদের বাড়ি মানে চেয়ারম্যানদের বাড়ি আর দুই, এই এমপিদের বাড়ি।কত বন্ধুত্ব এই দুই চেয়ারম্যান এমপিদের অথচ তার মেয়েকেই কেও চিনে না এটা কি মানা যায়?বাড়ির দারোয়ানকে কতবার বলেছে,
আমি চেয়ারম্যানের মেয়ে পুতুল!
আমাকে এই বাড়িতে একটু ঢুুকতে দেন না হয় আপনি একটা ফুল ছিড়ে এনে দেন।কিন্তু প্রতিবারি তার উত্তর ছিলো
“হু এরকম কত জনেই তো বলে আমি অমুকের মেয়ে তমুকের মেয়ে তাই বলে কি আমি বিশ্বাস করবো নাকি?যাও যাও খুকি বাসায় চলে যাও”
আর প্রতিবারি সে দারোয়ানের সাথে তুক্ষের ঝগড়া করে তারপর বাড়ি যায়।
বাড়ির গেইটের সামনে আসতেই একটু দাড়ায় পুতুল।যদি একটু সুযোগ পায় ওমনি টুক করে বাড়ির ভেতরে চলে যাবে।কিন্তু এই দারোয়ান হয়তো এতক্ষণ পুতুলেরি অপেক্ষা করছিলো,তাই তো একদম সিনা টান করে দাঁড়িয়ে আছে।পুতুলকে দেখতেই তার পান খাওয়া লাল দাঁত দিয়ে একটা শয়তানি ভেটকি দেয়।তা দেখে পুতুল মুখ ভেংচি দিয়ে ধুপ ধাপ পা ফেলে সামনে চলে যায়।আর বিড় বিড় করে বলতে থাকে,
“এখন নিতে না পারলাম তো কি হয়েছে,দেখিস একদিন এর গাছটাই পুরো আমার রাজত্বে থাকবে”
চলবে..!