#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_৪
পা থেকে পিন ছুটাতেই গল গল করে র’ক্ত পড়তে শুরু করে পা থেকে,হাত দিয়ে পা চেপে ধরার সাথে সাথে পেছন থেকে কেউ হাত ধরে দাড় করিয়ে দেয়।ফলে পায়ে চাপ লাগে।ওই হাত ধরেই সামির পুতুলকে টানতে টানতে আবার সেই বাগানে নিয়ে যায়,,পুতুল ব্যথায় কাত’রাচ্ছে কিন্ত সেদিকে খেয়াল নেই সামিরের।পুতুলের হাত ধরে বাগানের একটা বড় গাছের নিচে দাঁড়ায় সামির!পেছন থেকে দারোয়ানটা বলে উঠে,,
-বড় সাহেব কে ডেকে দিবো?
সামির পুতুলের দিকে তাকায় দেখে পুতুল পায়ের দিকে তাকিয়ে কান্না করছে,মনে হয় ভয়ে কান্না করছে।একবার ওই বড় গাছটায় আরেকবার পুতুলের চোখের দিকে তাকিয়ে পেছনের দারোয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-কাউকে ডাকার দরকার নেই,আপনি দড়ি নিয়ে আসেন।
-ছাইড়া দেও মাইয়াটারে পিচ্চি মানুষ তাই বুঝে নাই এরপর থেকে আর এমন করবো না।
-আপনাকে এতো বুঝতে হবে না আঙ্কেল আপনি দড়ি নিয়ে আসেন।
দারোয়ান মাথা দুলিয়ে তার ঘর থেকে একটা মোটা দড়ি নিয়ে সামিরের হাতে দিতে দিতে বলে,
-আরেকবার ভাইবা দেখো বাবা মেয়েটার বয়স কম অনেক ভয় পায়তাছে!
সামির রাগ চটা স্বরে বলে,
-কেন চুরি করা মাথায় আসার সময় ভয় করে নি?আপনি এখন যান এখান থেকে,,
দারোয়ান আর কিছু বলে না মাথা নিচু করে চলে যায়,
এদিকে এতক্ষণে এদের কথাকপন কিছুই কানে যায় নি পুতুলের।ব্যথাটা পা থেকে একদম মাথায় উঠে গেছে মনে হচ্ছে এখনি ঢলে পড়বে।সামনে কি হচ্ছে এতটুকু দেখার ক্ষমতা নেই তার।
সামির পুতুলকে গাছের সাথে বাধার আগেই পুতুল মাটিতে পড়ে যায়।সামির আঁতকে উঠে ‘ভয়ে মরে টরে গেলো নাকি এই মেয়ে’ হাটু ভাঝ করে নিচে বসে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছে।এখন কি করবে সে?
গালে হাত দিয়ে ডাকতে থাকে, “এই মেয়ে এই মেয়ে উঠো!দেখো একদম নাটক করবে না আমার সাথে,,আমি জানি তুমি বাচার জন্য এমন করছো তাই বলছি এখনো সময় আছে।”
কিন্তু পুতুলের ওঠার নাম নেই,,হঠাৎ সামিরের চোখ যায় পুতুলের পায়ের দিকে।বাগানের মাটি দিয়ে পায়ে মাখামাখি,তবুও লাল টকটকে র’ক্ত গুলো স্পষ্ট! দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো ধারালো জিনিস দিয়ে ব্যথা পেয়েছে।তাই হয়তো এমন চিৎকার করছিলো।কিন্তু এখন একে নিয়ে কি করবে সেই চিন্তায় পরে যায় সামির।
এভাবে অনেক্ষণ চিন্তা করার পর কোনো উপায় না পেয়ে,পুতুল কে কোলে করে নিয়ে তার রুমে যায়।আসার সময় দু তিনটে গার্ডও তাদের দেখে নেয় আর অবাক ও হয়।সামির এদেকে পাত্তা না দিয়ে পুতুলকে বিছানায় শুয়ে দেয়,,পায়ে ব্যান্ডেজ করার সময় তার চোখ যায় পুতুলের কপালে, যেখানে কা’টা দাগ!তারমানে সেদিনের কাটা এখনো সারে নি নাকি?আর কোনো কিছু না ভেবে সেখানেও একটা ট্যপ লাগিয়ে দেয়।আর অপেক্ষা করতে থাকে তার।জ্ঞান ফিরার।
পুতুলের জ্ঞান ফিরেছে,পিটপিট করে চোখ খুলতেই নিজেকে একটা নতুন ঘরে আবিষ্কার করে যেই ঘর সে তার কোনো জন্মেই দেখে নাই।তারমানে তখন সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল?
পায়ে তাকিয়ে দেখে ব্যান্ডেজ করা,’কে করেছে এমপির ছেলে?না সে তো করবে না,আব্বু যদি জানে আমাকে তো মেরেই ফেলবে।কিন্তু এটা আবার কার ঘর,’
আশে পাশে চোখ বুলাতেই দেখতে পায় জানালার পর্দার দিকে মুখ ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেও একজন।গায়ের টি শার্ট দেখে পুতুল শিউর এটা ওই এমপির ছেলে যাকে কিনা সে এতোদিন ইমনের সঙ্গী ভেবেছিলো!তখন তো দড়ি দিয়ে বাধতে চেয়েছিলো এখন না জানি এই ঘরে কি করে,,
পুতুল চুপিচুপি বিছানা থেকে দৌড় দিতে যাবে তার আগেই তার মনে হলো সে হাওয়ায় ভাসছে,আবার পেটে প্রচন্ড চাপ লাগছে।ভয়ে চোখ খিচে নেই,এক চোখ খুলে একবার নিজের পেটে আরেকবার পেছনের মানুষটিকে দেখার চেষ্টা করে।না যা ভেবেছিলো তাই ‘সামির’!তার মানে সামির তাকে দেখে নিয়েছে এখন কি হবে?পুতুল আবার চোখ খিচে নেয়,
সামির ওই হাত দিয়েই তাকে বিছানায় ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।সামির পুতুলের দিকে তাকিয়ে হাত ভাঝ করে ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
-তো কি যেনো বলছিলেন ম্যাডাম, আমি কার যেনো ও হ্যা ইমন নামের কোন ছেলের চামচা,আর কি কি যেনো আমার গাড়ির মতো তিন চারটে গাড়ি বাসায় ধুলো পরে আছে।আর তোমার সাহস হয় কি করে আমার বাগানের ফুল চুরি করতে এসেছো,তাও আবার আমার সাথে তুই তুকারি করে আমাকে চোর বলে?আজ পর্যন্ত কেও এই গাছের একটা পাতাও নিতে পারে নি আর তুমি কিনা এই পুরো গাছটাই নেয়ার চ্যালেঞ্জ করছো?বাহহ তোমার সাহস আছে বলতে হবে,,তো ম্যাডাম এখন আপনাকে কি করা যায় বলুন তো.!
সামিরের নীরবে হুমকির স্বরুপ কথা গুলো শুনে পুতুলের রীতিমতো হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গিয়েছে,সে ভয়ে ভয়ে কোনো মতে বাচার জন্য বলতে থাকে,
-দেখুন ভাইয়া সরি,আমি সত্যি সরি আর হবে না এমন। দেখুন মানুষ মাত্রই তো ভুল!আর আমি তো একটা ছোট বাচ্চা,সত্যি আর হবে না এমন আর যদি এমন করে থাকি তাহলে এই আপনি,আপনি নিজে আমার নাম বদলে দিবেন।প্লিজ ভাইয়া এই প্রথম এই লাষ্ট!
পুতুলের এই কথা গুলো শুনে সামিরের খুব হাসি পাচ্ছে সঙ্গে ভালো লাগছে,একদম বাচ্চাদের মতো অনুরোধ করছে না হলে এখনি কেঁদে ভাসিয়ে দিবে।কিন্তু এইসব ভালোলাগা সব সাইডে রেখে রাগ দেখিয়ে পুতুলকে অনেক্ষণ শ্বাসালো!সবার শেষে বলল,
-এখন তোমাকে মাফ করে দিলাম নেক্সটাইম যদি তোমাকে এই বাড়ির আশেপাশে দেখি তাহলে খবর আছে,আর ভুলেও যেনো আমার সামনে না পড়,মাইন্ড ইট!এখন যাও,,
হাফ ছেড়ে বাচে পুতুল!বিছানা থেকে নেমে দৌড় দিতে যাবে তার আগেই ব্যান্ডেজ করা পায়ে ব্যথা পায়।কিন্তু আপাতত সেটাকে পাত্তা না দিয়ে আবার দৌড় দিতে যাবে তার আগেই সামির পুতুলের হাত খপ করে ধরে ফেলে।আকস্মিক হাতে কেও চেপে ধরায় আতকে উঠে পুতুল।এখন আবার না জানি কি বলে,ভয়ে চিৎকার দেওয়ার আগেই সামির ধমকের স্বরে বলে,
-এই মেয়ের জ্ঞান বুদ্ধি দেখি কিছুই নেই।এখন কি ড্যাংড্যাং করে বাড়ি সবার সামনে দিয়ে বাহিরে যাবে নাকি?ডাফার!
পুতুলে আস্তে আস্তে পেছনে কাধ ঘুরিয়ে বলে,
-তাহলে কোথা দিয়ে যাবো?
-যাবে সেখান দিয়েই যাবে,এখন বেশি কথা না বলে আমার পিছু পিছু আসো।
পুতুল বিনা বাক্যে সামিরের পিছে পিছে যেতে থাকে।সামির খুব সাবধান হয়ে করিডর পার করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই একজন মহিলাকে সেখান দিয়ে যেতে দেখা যায়,দেখে মনে হচ্ছে বাড়ির কাজে
লোক।তাকে দেখেই সামির নিজের এক হাত দিয়ে পুতুলকে তার পেছনে পিঠের সাথে লাগিয়ে দেয়।সামিরের হাত লাগে পুতুলের পেটে,পুতুলের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।কিন্তু কিছু বলে না,
বাড়ি থেকে বের হয়ে আবার পুতুল দৌড় দিতে নেয়,কিন্তু তার আগেই সেই তখন কার মতো পুতুলের হাত ধরে নেয় সামির।পুতুলের এখন খুব বিরক্ত লাগছে,কিসের জন্য যে এ বাড়িতে আসলো উফফফ..!
সামির দাঁত কামরে আস্তে আস্তে বলে,
-এই মেয়ে এখন আবার কই যাও?
পুতুল তো অবাক নিজেই বাড়িতে যেতে বলে,আবার নিজেই এখন বলছে ‘কই যাও?’
-কেন বাড়ি.!
-এভাবে এই অবস্থায় যাবে নাকি?আর এখন গেইট দিয়ে বের হতে পারবে তুমি?সত্যি তোমার মাথায় একটুও ঘিলু নেই,
পুতুল মাথা নিচু থেকে চোখ উচিয়ে সামিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-তো এখন আমি কি করবো?
-কি করবে মানে?আমার সাথে যাবে,তুমি এখানেই দাড়াও আমি গাড়ি নিয়ে আসছি।
পুতুল আর কিছু বলে না,”নিজের জান বাচানো ফরজ” ভেবে।কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হতেই সামির গাড়ি নিয়ে এসে পড়ে,এটা সেদিনের গাড়ি না।তবে এই গাড়িও তাদের বাসায় আছে হহু..!
পুতুল গাড়ির সামনে এসে পেছনের দড়জা খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না,কিছুতেই খুলতে পারছে না,দু হাত দিয়ে চেষ্টা করেও সে ব্যার্থ!এটা আর নতুন না সবসময় এমন হয় কোনো দিনো সে গাড়ির দরজা খুলতে পারে না শক্তিতে কুলোয় না।সববারি তাদের গার্ডরা খুলে দেয়,কিন্তু এখন কি করবে সে?
এদিকে সামিরের পুতুলের করা এমন কান্ড দেখে খুব হাসি পাচ্ছে,কিন্তু এখন নিজের হাসি চেপে রেখে বিরক্তি নিয়ে নিজে গাড়ি থেকে বের হয়ে পুতুলের সামনে এসে তার হাত ঝটকা মেরে ছাড়িয়ে নিযে দরজা খুলে দিতে দিতে বলে,
-এতটুকু কাজ ই পারে না আবার আসছে ফুল চুরি করতে গাধী!যাও বস।
পুতুল কোনো কিছু না বলে চুপচাপ গাড়ির পেছনের সিটে বসে পরে।সামিরো ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়,কিছু রাস্তা যেতেই সামনে মারজিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পুতুল দিশেহারা হয়ে পেছন থেকে সামিরের কাধ চাপরাতে চাপরাতে বলে, “এইযে এখানেই রাখুন ওইযে আমার বান্ধুবি এখন আমি তার সাথেই বাসায় যেতে পারবো”
সামির বিরক্তি নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে একটা হিজাব পড়া একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আর কিছু না বলে গাড়িটা তার সামনে এনে দাড় করিয়ে ভেতর থেকেই পেছনের দরজা খুলে দেয়।
পুতুল চট করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে,সামিরও আর কিছুনা বলে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায়।
মারজিয়া কতক্ষণ চুপ করে বোঝার চেষ্টা করে কি হচ্ছে টা কি!পুতুলের দিকে একবার ভালো করে নজর দিয়ে দেখে,সে যাওয়ার সময় যেভাবে গিয়েছিলো এখন তার কানি কোনাও নেই,বোরকা ওড়না হিজাব কিছুই নেই,শুধু স্কার্ট আর টপ্স পড়া।পায়ে ব্যান্ডেজ কপালে কাটা যায়গায় ট্যাপ লাগানো।মারজিয়া চিন্তায় পড়ে যায়, পুতুলের কাধ ঝাকাতে ঝাকাতে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে,
পুতুল আস্তে আস্তে সব বলে।সব শুনে মারজিয়া তো অবাকের চরম পর্যায়ে,এতকিছু হয়ে গেলো আর সে কিনা হুদ্দাই এখানে অপেক্ষা করছিলো?
-হয়েছে?হয়েছে এইবার তোর শিক্ষা,এ জনমে আর কোনো ফুলের নাম নিস না বোন।এই অবস্থায় গ্রামের কেউ দেখে নিলে কি হবে একবার ভেবে দেখেছিস?এই বিভিন্ন বিপদ আর কাটা ছেড়া করেই তোর জীবন যাবে।যাহ এখন যা করবি কর,আমি এর মধ্যে নেই।
-আরে ধুর যা হবে পরে দেখা যাবে এখন বাসায় চল ভাবির সাহায্য নিতে হবে।
-হুম চল।
তারপর তারা হেটে পুতুলদের বাসায় যায়,এই টাইমে বাসায় পুরুষ বলতে কেউ নেই তাই হাফ ছেড়ে বাঁচে পুতুল।মারজিয়া আর ভাবির সাহায্য নিয়ে পায়ের ব্যান্ডেজ আর কপালের ট্যপ খুলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।এতক্ষণে ভাবির বিশাল বকুনি খেতে হয়েছে।
চলবে..!