#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_৯
ঘর থেকে বের হয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঠতে থাকে পুতুল!এই পথমবার বাড়ির ভেতরে এসেছে সে,না না প্রথমবার না এর আগেও তো এসেছিলো যেদিন সামিরের কাছে ধরা খেয়েছিলো।কিন্তু সেদিন তো আর এই বাড়ির সৈন্দর্যর দিকে নজর রাখে নি।বাহিরটানা যত সুন্দর ভেতরটা আরো সুন্দর,বাড়ির প্রায় বেশ খানিকটা যায়গায় কারু কাজের ছবি প্রিন্ট করা!এবং তাকে যে রুমে থাকতে দেওয়া হয়েছে সেখানে তিনটার মতো ছবি দেওয়া আছে,তার একটায় আবার শিনচেন এর ও ছবি আছে,এর আগে কি কেও এই ঘরে থাকতো?কেও কি হুদা হুদা এগুলো লাগাবে নাকি!
এগুলো ভাবতে ভাবতে সিঁড়ির রেলিং ধরে হাঠছিলো পুতুল!হঠাৎ পেছন থেকে কেও ঝড়ের গতিতে এসে তার আগে নেমে গেলো,হঠাৎ এমন হওয়ায় ভরকে যায় পুতুল।দু হাত দিয়ে রেলিং ধরে অন্যপাশ হয়ে মৃদু চিৎকার দিয়ে চোখ খিচে নেয়।সামির পেছনে তাকিয়ে পুতুলকে এমন অবস্থায় দেখে দু সিঁড়ি উপরে উঠে বলে,
-are you ok?
পুতুল পিট পিট করে চোখ খুলে তার ঠিক এক সিঁড়ি নিচে সামিরকে দেখে!নিজের মাথা দ্রুত গতিতে উপর নিচ করে যার অর্থ “সে ঠিক আছে”। সামির আর কোনো প্রতিত্তোর না করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়।পুতুল বুকে থু থু দিয়ে বড় শ্বাস নিয়ে সেও নিচে নেমে যায়।
সিঁড়ি পাড় করতেই সামিয়া আসে পুতুলের সামনে,তাকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে যায়,সেখানে সামিরো বসে আছে আর সাথে তার বাবা ফায়াজ।পুতুল ফায়াজকে দেখে সালাম দেয়,ফায়াজ মুচকি হেসে সালামের উত্তর নিয়ে কুশল বিনিময় করে পুতুলকে চেয়ারে বসতে বলে,পুতুলও সামিয়ার সাথে বসে যায়।খাবার সার্ভ করা হলে সামির মাথা নিচু করে খেতে লাগে,পুতুলের অনেক অস্বস্তি ফিল হচ্ছিলো তাই জড়সড় হয়ে বসে একটু একটু করে খাচ্ছিলো।পুতুলকে দেখে সামিয়া বুঝে যায় যে সে খুব নার্ভাস তাই খাওয়ার মাঝেই সামিয়া হাসিমুখে বলে,
-পুতুল নার্ভাস হয়ো না,এখানে আমরা সবাই তোমার আপন।তোমাদের বাড়ির সবার মতো আমরাও তোমার বাবা মা ভাই এর মতোই,কোনো অসুবিধা হলে অবশ্যই আমাদের জানাবে।আর আমাদের তো কোনো মেয়ে নেই যে তোমার সাথে ফ্রেন্ডলি সারাক্ষণ থাকবে,তবে আমাকে তুমি তোমার ফ্রেন্ড ভাবতে পারো জানিনা কতটুকু তোমার মনের কথা বুঝতে পারবো রাখতে পারবো তাও আমাদের সবাইকে তুমি আপন করে নাও দেখবে সব ইজি লাগবে,আর আমার ছেলে সামির! সামিরকেও তুমি তোমার ভাই এর মতোই দেখতে পারো,সামির আমার সাথে যেমন ফ্রি তোমার সাথেও তাই হবে দেখো!
এতক্ষণ খাওয়া বাদ দিয়ে হা করে তাকিয়ে তাকিয়ে সামিয়ার কথা শুনছিলো পুতুল!উনি এতো কনফিডেন্স নিয়ে কথা বলছে যা শুনে পুতুলের বুকের পাথরটা হালকা সরে যায়।সামিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মাথা দুলায় অর্থাৎ “সে মানিয়ে নিতে পারবে” পুতুলের ইশারা বুঝে সামিয়া আর ফায়াজও হাসে,সামিয়া পুতুলের কাধে হাত রেখে বলে,”,এইবার খাও” পুতুলও বিনা বাক্যে খেতে থাকে,,এদিকে সামির খাচ্ছে কম প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে বেশি।তার মায়ের সব কথা এতক্ষণ সে শুনেছে,তবে বার বার নিজেকে পুতুলের ভাই বলে সমন্বয় করাটা ঠিক পছন্দ হয় নি তার।একটা গার্লফ্রেন্ডের বয়সী মেয়ে তার মা বাবাকে,মা বাবার মতো দেখবে ঠি আছে,তাই বলে কি তাদের ছেলেকেও ভাই হিসেবে দেখবে নাকি আজব!
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে একটু রেস্ট নিয়ে ছাদে সামিয়ার সাথে গল্প করতে থাকে পুতুল!টেবিলে তিনটা হুমায়ূন আহামেদ এর বই আছে,আরেকটা সামিয়ার হাতে।সামিয়া নাকি ছোট বেলা থেকেই বই পড়তে ভালোবাসে,এর আগে অনেক বই প্রেমিদের কথা শুনেছে পুতুল।কিন্তু আজ পর্যন্ত স্কুলের বই ছাড়া বাহিরের কোনো বই পড়া হয় নি তার।বই এর পচ্ছদ গুলো দেখে খুব ভালো লাগে তার,তারো পড়তে মন চায় কিন্তু একটু গিলটি ফিল হওয়ার কারনে বইটা আর হাতে নেয় না।সামিয়া মন দিয়ে চোখে চশমা লাগিয়ে বই পড়ছে,পুতুল এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,এখান দিয়ে কালো গোলাপ গাছটা পুরো পুরি দেখা যায়,তার দিকেই তাকিয়ে আছে সে,সেই সময়ে ছাদে টি শার্ট আর থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট পড়ে আসে সামির।এই সময়ে মা আর পুতুলকে এখানে আশা করে নি সামির।তুবও একবার ছাদে এসে আমার ঘুরে নিচে যাওয়াটা বেমানান লাগে তাই সে কোনো দিকে না তাকিয়ে ছাদের অন্যপাশের রেলিং এ গিয়ে দাঁড়ায় যেখানে কালো গোলাপ গাছ আছে,,
সামিরকে ছাদে আসতে দেখেই পুতুল চোখ নামিয়ে নেয়,, সামিয়াও সামিরের উপস্থিতি টের পায়,তাই পেছন থেকে ডেকে বলে “সামির আয় এখানে আমদের সাথে গল্প কর” সামির না চাইতেও মায়ের কথা রাখার জন্য তাদের পাশে গিয়ে বসে,পুতুল মাথা নিচু করে ফেলে,,সামির বসে টেবিল থেকে একটা বই নিয়ে পড়তে থাকে,পুতুল ভালো করে চেয়ে দেখে বইটির নাম ‘নবনী’ যেখানে লেখা হুমায়ূন আহামেদ এর প্রেমের উপন্যাস!পুতুল মনে মনে ভাবে “বাবাহ উনি আবার প্রেমের উপন্যাস ও পড়ে নাকি?” সামির একদম শেষের পেইজের আগের পেইজ থেকে পড়তে থাকে, পুতুল ভাবে,’সে কি উল্টা পড়ছে নাকি আগে থেকেই পড়া ছিলো যতটুকু বাকি ছিলো তা এখন পড়ছে’
পুতুলের ভাবনার মাঝেই সামিয়া হাতের বইটা বন্ধ করে টেবিলে রেখে চোখের চশমা খুলে পুতুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
-বোর হচ্ছো?
পুতুল গভীর ভাবনায় থাকায় প্রথমে সামিয়ার কথা বুঝতে পারে না,কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে যখন কথার ধ্বনিটা বুঝতে পারে,তখন চটজলদি করে মাথা এদিক ওদিক করে যার অর্থ ‘সে বোর হচ্ছে না’।সামিয়া হালকা হেসে বলে,
-ও আচ্ছা,বই পড়া হয় কখনো?
পুতুল আবার আগেই নেই মাথা নাড়ায় যে ‘সে কখনো বই পড়ে নি’
-হ্যা তুমি তো এখনো ছোট,তবে বই পড়বে মাঝে মাঝে বই পড়বে।তাতে মন ও মস্তিষ্ক দুটোই ফ্রেশ থাকবে।
পুতুলের উত্তর দেওয়ার আগেই সামিয়া আবার বলে উঠে,
-আমি শুনেছিলাম পুতুলের নাকি ফুলের রাজ্য আছে,তা সেই ফুলের রাজ্য এখন কে দেখবে শুনি?
বাড়ির কথা মনে পড়তেই পুতুলের আবার মন খারাপ হয়ে যায়!পুতুল মাথা নিচু করে দু হাত নাড়াতে থাকে,সামিয়া বুঝতে পারে সে পুতুলের মন ভালো করতে গিয়ে মন আরো খারাপ করে দিয়েছে তাই পুতুলের কাধে হাত রেখে বলে,
-আরে পাগলি মন খারাপ করে না সব ঠিক হয়ে যাবে,তুমি এখন আমাদের দায়িত্বে আছো যদি এখন মন খারাপ করে থাকো তাহলে কিন্তু আমাদের খুব খারাপ লাগবে,প্লিজ মামুনি একটু হাসো নাহলে কিন্তু আমি রাগ করবো হুম!
সামিয়ার এমন আহ্লাদী স্বরের কথা শুনে পুতুল হাজারো মন খারাপের মাঝে ফিক করে হেসে দেয়।যখন সে শুনেছিলো এমপির বউ খুব শিক্ষিত তখন সে ভেবেছিলো অনেক অহংকার থাকবে!তার রুপের কোনো শেষ নেই কেউ দেখলে বলতেই পারবে না তার এত বড় একটা ছেলে আছে,সামিরো তার মার বহি রুপ!একদম একি রকম সৌন্দর্য পেয়েছে,এখনকার জেনারেশনে এরকম মানুষ পাওয়া খুবি কঠিন,কি সুন্দর কথা বার্তা ভাবনা।সব যেনো মন কেরে নিচ্ছে পুতুলের।
এতক্ষণে সামিরের বই পুরোটা পড়া শেষ।সেও বইটা টেবিলে রাখে,সামিয়া পুতুলের হাসি দেখে সেও হাসে,পুতুলের হাত ধরে বলে,
-আমি কি তোকে তুই করে বলতে পারি?
-জ্বী জ্বী আন্টি অবশ্যই!
-কি তুই আমাকে আন্টি বললি?আমাকে দেখে কোন দিক দিয়ে আন্টি মনে হয় বল?
পুতুল আবার হেসে দেয়,পাশ থেকে আলিয়া মানে এ বাড়ির ছোট কাজের মেয়ে শয়তানির ছলে বলে উঠে,
-আফা আপনার ছেলেকে এখন বিয়ে দিলে কয়দিন পড় নানি হয়ে যাবেন আর আপনি বলতাছেন
আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই সামির তার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই চুপ থাক,চা দিতে এসেছিস দিয়ে যা” আলিয়া আর কিছু না বলে চা দিয়ে দৌড়ে চলে যায়।
সামিয়া আবার কিছুক্ষণ হাসে সাথে পুতুলো!সামির ট্রে থেকে চা নিয়ে খেতে থাকে,সামিয়া হাসতে হাসতে বলে,
-আচ্ছা পুতুল চা টুকু খেয়ে নে,তারপর তোকে আমাদের বুক শেল্ফ দেখাতে নিয়ে যাবো।যেটা আমি এবং সামির দুজোনে যত্ন করে অনেক আগে থেকে তৈরী করেছি!এতদিন তো সামির দেশের বাহিরে ছিলো তাই আমি দেখাশোনা করেছি।
“এ বাড়িতে আবার বুক শেল্ফও আছে?তাও আবার সামিরের!ওমা না না আমি যাবো না ওই কালো গোলাপের মতো আবার এটার জন্য দড়ি দিয়ে বাধবে নাতো?”
পুতুল ভয়ে ভয়ে চায়ের কাপ মুখে নিয়ে সামিরের দিকে তাকায়,সামিরো তার দিকে তাকিয়ে ছিলো পুতুল তা দেখে সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নেয়,সামির পুতুলের ভয়ার্ত মুখ দেখে হালকা হাসে।
পুতুলের খাওয়া শেষ!সামিয়াও নিজের সম্পুর্ন চা শেষ করে কাপটা টেবিলে রেখে,সামির ও পুতুলকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-তো চলো তোমরা শেল্ফে যাওয়া যাক।
সামির কিছু না বলে আগে আগে হাঠতে লাগে সামিয়া আর পুতুল একসঙ্গে।করিডরে আসতেই সামিয়া সামিরকে বলে,
-সামির তুই পুতুলকে নিয়ে ভেতরে যা,আমি তোর বাবাকে বলে আসছি।পুতুল তুই সামিররের সাথে যা আমি এক্ষুনি আসছি।
বলেই কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে সামিয়া চলে যায়।পুতুল ভয় পেয়ে যায়,এখম যদি সামির তাকে একা পেয়ে দড়ি দিয়ে বাধে?
কথাটা মনে পড়তেই চোখ খিচে দাঁড়িয়ে যায় পুতুল!সামনে থেকে সামির বলে ওঠে,
-ভয় নেই আমার সঙ্গে এসো দড়ি দিয়ে বাধবো না।
পুতুল অবাক হয়ে যায় সামিরের দিকে তাকিয়ে দেখে সে অলরেডি হাটা শুরু করে দিয়েছে।পুতুল আস্তে আস্তে সামিরের পিছে পিছে যেতে থাকে।যেতে যেতে সবার শেষের একটা ঘরের সামনে গিয়ে থামে,পুতুলো পা চালানো বন্ধ করে দেয়।সামির চাবি দিয়ে লক খুলে ভেতরে ঢুকে,পুতুলো যায়।পুতুল ভেতরে গিয়ে খুব অবাক হয়,চোখ চক চক করে ওঠে।চারো দিকে বিভিন্ন ডিজাইনের সেল্ফের উপর শুধু বই আর বই।জীবনের প্রথম এতো গুলো বই একসাথে দেখলো সে,লাইব্রেরিটা একদম পরিস্কার।কোনো ধুলোবালি নেই,হয়তো সবসময় গুছানো হয়,
হাঠতে হাঠতে পুতুল অন্য সাইডে চলে যায়।হঠাৎ মনে হয় পায়ে কিছু বাজছে,সে এতো বেশি পাত্তা না দিয়ে হাঠতে থাকে।হঠাৎ সামনে দেখে দৌড়ে দুটো ইঁদুর আসে,তা দেখে পুতুলের চোখ বড় বড় হয়ে যায়,ইঁদুর গুলি তার দিকেই তেড়ে আসছে,পুতুল আম্মু বলে চিল্লিয়ে দেয় এক দৌড়।সামির পুতুলের চিৎকার শুনে এদিকেই আসছিলো,তার আগেই ধুম করে তার বুকের সাথে কিছু একটা লাগে,তাকিয়ে দেখে পুতুল!আকস্মিক এমন দ্রুত বাড়ি খাওয়ায় বুকে বেশ খানিকটা ব্যথা পায় সামির।কপালে ভাঝ এনে ধকমের স্বরে পুতুলকে জিজ্ঞেস করে,
-কি হয়েছে?
পুতুল কপাল ধরে পিছিয়ে যায়,তখন আবার পেছনের সেল্ফের সাথে পায়ে বাড়ি খায়,পুতুল ভার গিয়ে পড়ে ওই ছোট সেল্ফটাতে ফলে পেছন থেকে ওটা পরে যতে নেয়,পুতুল ওখান থেকে না সড়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে,সেল্ফটা পুতুলের উপরে পড়ার আগেই সামির পুতুলকে সেখান থেকে সড়িয়ে আগলে নেয়।পুতুল ভয়ে সামিরের টি শার্ট শক্ত করে ধরে রাখে।
উপর থেকে এতো শব্দে দৌড়ে আসে সামিয়া ফায়াজ আর কিছু স্টাফ এসে বইয়ের এমন ছড়াছড়ি আর পুতুল সামিরকে এমন অবস্থায় দেখে সবাই বেশ অবাক হয়।সামির পুতুলের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মায়ের কাছে দিয়ে সব খুলে বলে।সামিয়া পুতুলকে আকড়ে রাখে,পুতুল এখনো ভয়ে কাপছে।সে এক পা উচু করে আছে,হয়তো খুব ব্যথা পেয়েছে,সামিয়া পুতুলকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
-কিচ্ছু হয় নি মা দেখো তুমি ঠিক আছো ভয় পেয়ো না।সামির তুই পুতুলকে কলে করে ঘরে নিয়ে যা ও পায়ে হয়তো ব্যথা পেয়েছে।
সামির মায়ের কাছ থেকে পুতুলকে পাজ কোল করে ঘরে নিয়ে যায়।যেতে যেতে বলে,
‘ইডিয়েট ইঁদুর দেখে কেও এমন ভাবে দৌড় দেয়,আমি না থাকলে তো ইঁদুরের মতো ম’রে ভেটকায় থাকতে’
পুতুল কিছু বলে না সামিরের গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে থাকে।
চলবে..!