পুতুল বউ পর্ব-১৪+১৫

0
299

#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_১৪

এ বাড়িতে এসেছে প্রায় তিনদিন হয়ে গেলো।এই তিন দিনে স্কুলে গিয়েছে মাত্র একদিন,তাও ফায়াজ গাড়ি করে নিয়ে গিয়েছিলো,আজকে আলসেমির জন্য যাওয়া হয় নি,মারজিয়া দেশে যাওয়ায় আরো আগ্রহ লাগে না স্কুলে যেতে।এর জন্য তপ্ত বকা খেতে হয়েছে বাবা ভাই সহ সামিরের কাছেও,”আচ্ছা ভাই আমাকে যদি স্কুলের জন্য বাহিরে যেতেই হয় তাহলে আমাকে অন্য যায়গায় পাঠানোর লাভ কি?তারা চাইলে তো স্কুল থেকেই ক্ষতি করতে পারে,যত্তসব আজাইরা জ্ঞান ওয়ালা মানুষ।আর ওই ইমইন্নারে যদি আমি একবার সামনে পেতাম ওর নারি ভুরি বের করে দিতাম সা’লা কেন দুনিয়াতে কি আর মেয়ে নাই আমার পিছেই পড়তে হলো।ব্যাডার জন্য এখন আমার কি কি সহ্য করতে হচ্ছে,উফফ অসহ্য!”

দুপুরে এতো এতো খাবার খেয়ে এখন পান্ডার মতো পা ছড়িয়ে আস্তে আস্তে হাঠছে পুতুল।পা যেনো চলছেই না,কি বোরিং লাগছে। হাতে আছে গোল একটা ইমোজি ডল বল!একবার এই হাতে নিচ্ছে তো আরেকবার ওই হাতে ক্যাচ করছে,এই নিয়ে প্রায় তিনবার এতো বড় করিডর রাউন্ড দেওয়া শেষ।মা বলেছে বেশি খাওয়া হয়ে গেলে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করতে,কিন্তু এতোক্ষণ হাটার পরও কেনো যে হজম হচ্ছে না আল্লায় জানে।পুতুলের হাটার মাঝেই চোখ যায় সামির হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে,দেখে মনে হচ্ছে খুব ক্লান্ত।”সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আর তাকে দেখে দেখি নি,দুপুরেও আসে নি এখন আবার কই থেকে আসলো?এই কয়দিন তো সারাদিন বাড়িতে বসে থাকতেই দেখলাম!বাহহহ”

সামির গলার টাই খুলতে খুলতে উপরে উঠছে পুতুলকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেও কিছুক্ষণ থামে,সেকেন্ড পার হতেই দৌড়ে পুতুলের সামনে এসে দাঁড়ায়।পুতুল সামিরকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে থাকে,সামির পুতুলকে আটকায়,তার হাত থেকে বলটা নিয়ে নেয়,সামির বেশি লম্বা হওয়ায় পুতুল তার হাত থেকে বলটা নিতে পারে না বেশি চেষ্টাও করে না।শেষে বিরক্ত হয়ে সামিরকে বলে,

-ধুর ভালোলাগতেছে না দিয়ে দেন তো মজা করিয়েন না।

সামির ভ্রু কুঁচকে তাকায়,অন্য সব সময় হলে তো এটা নিয়েই ছাড়তো।সামির হাত নিচে নামিয়ে পুতুলকে জিজ্ঞেস করে,

-কি হয়েছে তোমার,

-কি হবে কিছুনা।

_সত্যি?

-জ্বী ভাইয়া।

-আবার ভাইয়া?

-তো!!!

-তোমাকে কতবার বলছি ভাইয়া বলবে না,পরে যদি ছাইয়া হয়ে যাই তখন কি হবে?

-হু ছাইয়া আর আপনি হাসালেন কিন্তু আমার এখন হাসি আসতেছে না। তাই এখন আমাকে যেতে দিন সরেন।

-দিবোনা কি করবে?

-আপনার গফ এর কথা আঙ্কেলকে বলে দিবো!!

-আমার গার্লফ্রেন্ড আবার কে?

-মিথ্যা বলে লাভ নাই আমি জানি সব।

-হু চাপা!!!

-যাই হোক আমার বল দেন।

-নিতে পারলে নিয়ে নিও

বলে সামির হাত উঁচু করে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো।পুতুল কিছুক্ষণ লাফালাফি করে নেওয়ার চেষ্টা করে আবার দাঁড়িয়ে গেলো ‘এতো লম্বা হওয়ার কি আছে আজব!’ সামির আরেক হাত দিয়ে পুতুলের চুল টেনে দিয়ে বলল,

-লিলিপুট।

-আর আপনি তো খাম্বা পুরা তাল গাছ,আর আমি বয়স অনুযায়ী ঠিকই আছি!এখন ভাই প্লিজ আজাইরা পেচাল পারিয়েন না দিয়ে দেন নাহলে আমাকে যেতে দিন।

-এইবার সত্যি যেতে দিতাম বাট আমার ভাই বললে তাই আর এখান থেকে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা বাদ দাও আর এখানেই কাথা বালিশ এনে সংসার পাতার প্রিপারেশন নাও।

পুতুল মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে আবার লাফাতে থাকে বলটা নেওয়ার জন্য সে এখন আজাইরা কথা বলে এই ব্যাডার সাথে ঝগড়া করতে চাচ্ছে না।

সামির কিছুক্ষণ পুতুলের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,হঠাৎ করে তার এক হাত দিয়ে পুতুলের বাহু উঁচু করে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে,আকস্মিক এমন হওয়ায় পুতুলের চোখ মার্বেলের চেয়েও বড় বড় হয়ে যায়,পুতুলের পা মাটি থেকে প্রায় অনকটুকু উচু হয়ে আছে পুতুল ছটফট করছে সামির চোখ বন্ধ করে আছে।পুতুল সামিরের দুই কাধে হাত রেখে তাকে ঠেলে সরে আসে,সামির চোখ খুলে।সেকেন্ড অতিবাহিত হতেই সে বুঝতে পারে সে কি করেছে।সামির তার হাত আগলা করে দেয়,পুতুল ধপাস করে মেঝেতে পরে যায়,বেশি উচু থেকে পরে না কিন্তু ব্যথা পেয়েছে।পুতুল চিল্লিয়ে উঠে সামির পতুলের কাছে এসে বলে,

-সরি সরি আমি বুঝতে পারি নি সরি!

সামির পুতুলের মুখের সামনে এসে বসতেই পুতুল তার সব ব্যথা ভুলে দু হাত দিয়ে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে,সামির হাসে।সে দাঁড়িয়ে যায় এক হাত পকেটে রেখে আরেক হাত পুতুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

-এতো ঢং না করে উঠো।

পুতুল হাত না বাড়িয়ে ওভাবেই থাকে,সামির একটা শ্বাস নিয়ে নিজেই টেনে পুতুলকে ওঠায়।তার হাতে বলটা দিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে চলে যায়।পুতুলের হাত অটোমেটিক ঠোঁটে চলে যায়, ‘কি হলো?’

কতেক মুহূর্ত আগের কথা মনে পড়তেই নিজের মাথায় নিজেই চাপর দেয় পুতুল।লুচু বেডা চুমু দিলো কেনো?পুতুল মাথা চুলকাতে চুলকাতে চলে গেলো।

হাতে চিপস নিয়ে আলিয়ার সাথে বসে বসে গল্প করছে পুতুল!চিপস খাচ্ছে কম হাসছে বেশি।কারণ হচ্ছে আলিয়া ও ওর গ্রামে কি কি ঘটেছি তা সব বলছে,পুতুলেরো খুব ভালো লাগছে সেও আগে সন্ধ্যা বেলা বাগানে গিয়ে ফল চুরি করতো,গাছে বসে বসে খেতো কত মজা ছিলো।

কথা বলার এক পর্যায়ে কোথা থেকে টুপ করে সিজান এসে পুতুলের পাশে বসে,পুতুল অবাক হয়।সেদিনের পর থেকে তার ছায়াও এ বাড়িতে দেখে যায় নি,আজকে হটাৎ?পুতুল হাত দিয়ে হাই দিয়ে বলে,

-হেইই আপু

-হ্যালো বার্বি ডল!!!কেমন আছো।

বলতে বলতে সিজান পুতুলের একদম পাশ ঘেঁষে বসে,সিজান পুতুলের হাত থেকে চিপসের প্যাকেটটা টান দিয়ে নিয়ে খেতে থাকে।

-আ আ আমার চিপস

-ওমা একটু চিপস ই তো খেয়েছি এতো চিল্লানোর কি আছে?

-তাই বলে সব খেয়ে ফেলবেন?

-আছেই তো দুটো।

-না আমার ওই দুটোই লাগবে,

বলেই আবার দুজন ধস্তাধস্তি করতে থাকে,কিন্তু যা হওয়ার তাই হলো,আবার এন্ট্রি নিলো সামির!কিন্তু তখনো পুতুল সিজানের হাত থেকে চিপস নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে পুতুল,সামির পুতুলকে ধমক দিয়ে বলে,

-মন কোথায় থাকে তোমার এতো করে ডাকছি শুনো না?ফোন কোথায় রেখেছো,তোমার বাসা থেকে এতো কল দিচ্ছে দেখো নি?তোমার কলের শব্দে পাশের রুমের থেকে আমার ঘুম ভেঙে গেছে আর তুমি টের পাওনা?

হঠাৎ করে এরকম চেচিয়ে উঠায় ভয় পেয়ে যায় সেখানের উপস্থিত সকলেই,পুতুল আমতা আমতা করে বলে।

-ফোন তো ঘরে রেখে আসছি।

-তো এখনো এখানে কি করো যাও ঘরে গিয়ে কল রিসিভ কর।

পুতুল ঠোঁট উল্টিয়ে ঘরে চলে যায়, “আজব নিজে যখন সেখান দিয়ে আসছেই তাহলে ফোনটা নিয়ে আসলে কি হতো?’

পুতুল ঘরে এসে দেখে সত্যি বিছানার উপরে পরে থাকা ফোন বাজছে,পুতুল তাকিয়ে দেখে ভাবিপু কল দিয়েছে।সে রিসিভ করে ওপাশ থেকে কিছু না বলতে দিয়ে বলে,

-কি হয়েছে এতো বার কল দিচ্ছো কেনো?

শ্রেয়া অবাক হয়,সে তো কল দিলোই এখন তাও আবার এক বার রিং হতেই পুতুল রিসিভ করে নিলো।

-কই আমি তো কল দিলামি একবার তাও তুই রিসিভ করে নিলি এতো বার কখন দিলাম?

পুতুল ভ্রু কুঁচকায়,কান থেকে ফোন সামনে এনে কল সেটিং চেক করে দেখে সত্যি কেউ কল দেয় নি।তার মানে সামির মিথ্যা বলল,কিন্তু কেনো?অপাশ থেকে ভাবির আওয়াজ আসতেই পুতুল আবার ফোন কানে নিয়ে বলে,

-না ভাবি আমি ভেবেছিলাম মারজিয়া আসলে মারজিয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে তো তাই ও বার বার কল দিচ্ছিলো আরকি..!

-তুই আবার মারজিয়াকে কবে থেকে তুমি বলা শুরু করলি?

-উফফ ভাবি এইসব কথা বাদ দাও,আর বলো কি বলবা।

-তোর খবর নেওয়ার জন্য কল করলাম,তোর ভাই অফিস থেকে মেসেজ দিয়ে আমাকে পাগল করে দিচ্ছে তোকে যেনো কল দিয়ে খবর নিয়ে নেই,তারা খুব ব্যস্ত সামনে আবার ইলেকশন আসছে,অনেক ঝামেলা।বাড়িতেও সারাদিন অনেক কাজ থাকে,,আচ্ছা যাই হোক তুই ভালো আছিস তো?

-হুম গো আমি ভালোই আছি,জানো এখানের সামিয়া আন্টিটা ভীষণ ভালো এবং ফ্রেন্ডলি সাথে আলিয়া ফায়াজ আঙ্কেল তারা খুব আদর করে আমাকে।

-যাক আলহামদুলিল্লাহ,চিন্তা করিসনা ইলেকশনের পরেই তোকে আবার ফিরে আনবো এর মধ্যে সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে দেখিস!

-হুম!!

কথার বলার মাঝেই পুতুলের মনে হলো তার মাথার উপর দিয়ে কেমন ঝনঝন শব্দ হচ্ছে,যেটা পুরো শরীর বেয়ে নিচে পড়ছে।পুতুল ঘাবড়ে যায়,মৃদু চিৎকার দিয়ে তাকিয়ে দেখে তার হাটুর মধ্যে নানা রকমের চিপস দিয়ে ভরা,চারো দিকে তাকিয়ে দেখে বিছানার বেশিরভাগ চিপসের প্যাকেটে পরিপূর্ণ!পুতুল মুখ হা করে সামনে তাকিয়ে দেখে সামির দাঁড়িয়ে আছে,তার হাতে বড় একটা খালি ব্যাগ হয়তো এটার মধ্যেই এর সব চিপস ছিলো।পুতুল চোখ বড় বড় করে চারো দিকে তাকায়।

-কিরে কিসের শব্দ?

ভাবির কথা শুনে হুশ ফিরে পুতুলের, ‘না কিছুনা রাখি’ বলে কল কেটে সামিরের দিকে তাকিয়ে বলে,

-এগুলো কি?

-চিপস?

-হুম সেটা তো আমিও জানি কিন্তু এতো গুলো আর কার জন্য?

-এই বাড়ির পেত্নীর জন্য আনবোনা অবশ্যই কারন তারা তো দু টো চিপসের জন্য ছেলেদের সাথে ধস্তাধস্তি করে না।

পুতুল এইবার বুঝতে পারে সামির তাকে খোচা মেরে কথা বলছে আর এইসব তার জন্যই এনেছে,

-মানে আমার জন্য?

-জ্বী এখন আমার সামনে,এই এক্ষুনি সব গুলো চিপস খেয়ে দেখাবেন,তারপর দেখবো আপনি দু টো চিপসের জন্য কিভাবে ঝগড়া করেন।

-আরে আজব লোক তো আপনি,ওটা তো আমি জাস্ট সিজানের সাথে মজা করছিলাম।

-ও মা আবার নাম ধরেও ডাকা হচ্ছে দেখি,

-ধ্যাত

পুতুল তার কোলের সব গুলো চিপস ফেলে উঠতে যাবে তখন আবার ফোনটা বেজে উঠে,পুতুল বিরক্তি নিয়ে দেখে ভাবিপু কল দিয়েছে,”এই বেডি আবার কল দিল কেন কিছুক্ষণ আগেই তো কথা বললাম।”

পুতুল বিরক্ত নিয়ে কল রিসিভ করে বলে,

-হ্যালো এখন আবার কি হয়েছে?

অনেক্ষন হয়ে গেলো সামির দাঁড়িয়ে আছে আর পুতুলের ভাবভঙ্গি দেখছে,এই মেয়েটাকে তো আজকে শিক্ষা দিয়েই ছাড়বে,তাকে ভাইয়া বলে সমন্বয় করে অথচ বাহিরের একটা ছেলের সাথে কত ঢলাঢলি!এই পিচ্চিটাকে যে কবে বোঝাতে পারবো ও শুধু আমার।আমার কালো গোলাপ তার নামের,,সেই যে আমার বউ #পুতুল_বউ।

কিন্তু পুতুল সেই কখন থেকে কানে ফোন ধরে আছে তো আছেই,কোনো ‘রা’ করছে,হঠাৎ করে পুতুলের কান থেকে ফোনটা মেঝেতে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যায়।সামির ভ্রু কুঁচকে পুতুলকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে,পুতুলের চোখে পানি তার পুরো শরীর কাপছে।সামির দৌড়ে তার পাশে গিয়ে বসে ধরে বলে,

-কি হয়েছে পুতুল কাঁদছো কেনো?কি হয়েছে বলো?

পুতুল কাপাকাপা স্বরে অস্পষ্ট হয়ে শুধু বলে, ‘আ আব্বুউ’

-কি আব্বু কি?

-আব্বুর এ’ক্সি’ডে’ন্ট হয়েছে?

-কি??আচ্ছা তুমি টেনশন করো না আমি দেখছি!

-আমি আমি আব্বুর কাছে যাবো।

-হুম নিয়ে যাবো তুমি কান্না করো প্লিজ তোমার আব্বু ঠিক হয়ে যাবে,,

-না আমি এখনি যাবো প্লিজ আমি আব্বুর কাছে যাবো।

সামির পুতুলকে ধরে বাহিরে নিয়ে আসে,প্রণয়ের কাছ থেকে হসপিটালের এড্রেস নিয়ে সামিয়াকে ডেকে সব বলে,

-মা এখন আমি পুতুলকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি,আর তোমারা আরেকটা গাড়ি নিয়ে আসো।আর হ্যা একটা ড্রাইভার কেউ নিবে না,এতে রিস্ক আছে।

সামিয়া পুতুলের সামনে এসে তার মুখ স্পর্শ করে বলে,

-আচ্ছা যা আমরা আসতেছি,আর পুতুল মা চিন্তা করিস না তোর বাবার কিচ্ছু হবে না।

সামির তারা দিয়ে,সোফায় বসা সিজানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-তোকে ওখানে বসে সিন দেখার জন্য রাখা হয়েছে?গাড়ি বের কর ফাস্ট!

সিজান গাড়ি নিয়ে আসে,পুতুল আর সামির পেছনের সিটে বসে,পুতুল কেঁদেই যাচ্ছে।সামির কি বলে শান্তনা দিবে বুঝতে পারছে না।

হসপিটালের সামনে আসতেই তারা নেমে যায়,পুতুল সবার আগে নেমে দৌড়ে যেতে থাকে,সামির সিজান পেছন পেছন যায়।ভেতরে আসতেই সামির সিজানকে বলে,

-তুই পুতুলকে নিয়ে তিন তোলায় যা!আমি আসতেছি।

সিজান মাথা নাড়িয়ে দৌড় দেয় পুতুলকে ধরার জন্য,কারণ পুতুল অনেকটা দূরে চলে গেছে।সামির আবার পেছন ঘুরে চলে যায়।

পুতুলকে নিয়ে সিজান তিন তোলার আসতেই দেখতে পায় আই সি ইউ রুমের সামনে সবাই বসে আছে,পুতুল ছুটে মা ভাবির কাছে যায়।পুতুলকে দেখে তার মা হু হু করে কেঁদে দেয় সাথে পুতুলও!পুতুল প্রণয়ের কাছে যায় প্রণয় একদম নিশ্চুপ কাঠ হয়ে আছে।পুতুল প্রণয়েকে জেরা করতে থাকে কি হয়েছে,কিন্তু সামির বলে না।তখন রুম থেকে একজন নার্স বের হয় পুতুল তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে বাবা কেমন আছে,নার্সটা সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,

-দেখুন আপনার বাবা কেমন আছে তা এখন আমরা ক্লিয়ারলি বলতে পারছিনা,উনাকে সর্ব প্রথম দু টো গুলি করা হয়েছে তারপর গাড়িতে এক্সিডেন্ট হয়েছে,ডক্টর এখন তার শরীর থেকে গুলি গুলো বের করছে।বাকি গুলো আল্লাহর হাতে।

আবার কান্নার রোল পরে যায় চারোদিকে,সব নীরব দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছে সিজান।দুটো চেয়ারে বসে আছে প্রণয় আর পুতুল,প্রণয়ের কাধে মাথা রেখে কাঁদছে পুতুল!হঠাৎ প্রণয়ের ফোনে ম্যাসেজ আসে,প্রণয় পকেট থেকে ফোন বের করে মেসেজটুকু পরে সঙ্গে সঙ্গে আবার পকেটে পুরে নেয়,কিন্তু তার আগেই পুতুল ফোনটা হাতে নিয়ে ম্যাসেজটুকু পরে।সব পরে এক পলক তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে,চোখের জল মুছে নিজেকে শান্ত করে দাঁড়িয়ে যায়।প্রণয় চোখ দিয়ে ইশারা করে না করে।কিন্তু পুতুল তা না মেনে উচ্চ স্বরে বলে,

“আমি ইমনকে বিয়ে করবো”

চলবে..!

#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_১৫

“আমি ইমনকে বিয়ে করবো”

বাক্যটুকু শুনে সেখানের উপস্থিত সবাই ‘থ’ মেরে যায়।প্রণয় রাগে জিদ্দে চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়,,সিজান কিছু বুঝতে না পেরে সবার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে।সামিরো তখন মুখে মাস্ক পড়ে এখানে আসে,আর কোনো কথা না শুনলেও পুতুলের বলা শেষ বাক্যেটুকু তার কান অব্দি পৌছে যায়।পেছনেই ছিলো সামিয়া আর ফায়াজ সাথে কিছু সংখ্যক গার্ড!

শ্রেয়া অবাক হয়ে বসা থেকে উঠে পুতুলের সামনে এসে বলে,

-পুতুল এইসব কি বলছিস তুই?

পুতুল নিজের অগোছালো চুল এক হাত দিয়ে পেছনে টেনে চোখের পানি মুছে নেয়,মনের সাথে হাজারো যুদ্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,

-হ্যা ভাবিপু আমি যা বলছি তাই হবে,এটাই আমার সিদ্ধান্ত যেহেতু আমি বিয়ে করে সংসার করবো তো আমার ভালো আমাকেই বুঝতে দাও।আর এ কথাটা ওনাদের বলে দাও!!

-কি বলছিস তুই এগুলো পাগল হয়ে গেছিস এতটুকু মেয়ে কি বুঝিস তুই?আর প্রণয় তুমি ওকে কিছু বলছোনা কেনো!!

প্রণয়ের কাধ ঝাকাতে ঝাকাতে বলল শ্রেয়া,পুতুলের নির্দ্বিধায় মেনে নেওয়া প্রণয়ের চুপ থাকা সে এই বিষয়টা যেনো নিতে পারছে না,তার বোন নেই সেই বোনের যায়গাটা পুতুলকে দিয়েছে শ্রেয়া!আর নিজের চোখের সামনে নিজেরি আপন বোন একজন ধ’র্ষ’ক এর কাছে বলিদান হবে কথাটা ভাবতেই কেমন লাগছে শ্রেয়ার।এই মুহুর্তে পুরো দিশেহারা হয়ে গেছে সে।কিন্তু এতো ডাকার পরও প্রণয়ের সেই একি ভাবে মুখ ঘুড়িয়ে থাকা দেখে শ্রেয়া এইবার উন্মাদ এর মতো প্রণয়কে চিল্লিয়ে বলে,

-কিছু বলছোনা কেনো??

প্রণয়ের কিছু বলার আগেই পুতুল বলে উঠলো,

-মা ভাইয়া এটা আমার লাইফ আমি যা মন চায় করবো এতে কাউকে দখল দারি করতে না বলো।

শ্রেয়া এইবার কিছুনা বলেই পুতুলের গালে একটা চ’র দিয়ে বসলো।পুতুল টাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে লাগলে সামিয়া এসে তাকে বুকে টেনে নেয়,এমনিতেই এতো কান্না করে গাল সহ সারা মুখ লাল হয়ে ছিলো,এখন এই থাপ্পড়ের দাগ যেনো সঙ্গে সঙ্গে এক গালে গেথে গেলো।

পুতুল সামিয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ওখান থেকে চলে যায়,সামিয়া পেছনে যেতে নেয়।কিন্তু তার আগেই প্রণয় তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
-আন্টি ওকে যেতে দিন উপরে রুমে একটু রেস্ট নিক আমি পরে বুঝিয়ে বলবোনি।

সামিয়া আর কিছু বলে না,পুতুলের মার পাশে গিয়ে বসে থাকে।স্নিগ্ধা বাড়িতেই আছে তাই তাকে আনতে যেতে গার্ডকে বলা হয়,তখন শ্রেয়া উঠে বলে “আমিও যাবো সাথে কিছু খাবার নিয়ে আসি” আর কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে শ্রেয়া গার্ডের সাথে গাড়িতে করে চলে যায়।

সিজান সামিরের কাছে এসে বলে

-কেসটা কিরে মামা?

করিডরের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে সিজান আর সামির!সামির জানালার দিকে ঘুরে আছে,এখান দিয়ে বাহিরের ঢাকা শহরের জামজট স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।সিজান আঙুল দিয়ে চিন্তার ভাব নিয়ে কথাটা বলতে বলতে সামিরের কাধে হাত রাখে,সামিরের দিকে তাকিয়ে দেখে,সামির হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে,মুখ দেখে মনে হচ্ছে রেগে গেছে কপালের রোগ ভুলে স্পষ্ট হয়ে আছে।সিজান চোখ বড় বড় করে ফেলে,হা করে তাকিয়ে বলে,

-কি রে তোর আবার কি হলো এরকম বম হয়ে আছিস কেনো?আন্টি তো বলেছিলো ইমন নামের ছেলেটা নাকি খারাপ ওর জন্য ওকে তোদের বাসায় রাখা হয়েছে,কিন্তু হঠাৎ বার্বি ডল ওই ছেলেকে বিয়ে করবে বলল কেনো?ওর বাবাকেই বা কে গুলি করলো?কত রহস্য নারে!!

সামির কিছুক্ষণ চুপ থাকে,সিজানের কথা গুলো বেশ ভাবাচ্ছে তাকে।ও এইসব ইঙ্গিত করে কি বোঝাতে চাচ্ছে?সামির অবিশ্বাস্য চোখে সিজানের দিকে তাকায়,সিজান একটা মুচকি হেসে সামিরের কাধ চাপড়িয়ে “আসি” বলে শিশ বাজাতে বাজাতে চলে যায়।সামির এক দৃষ্টিতে সিজানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে,সিজান চোখের আড়াল হতেই সামির দেয়ালে একটা লাথি মেরে “ওহহ শিট” বলে বড় করে শ্বাস নিয়ে ওখানের একটা চেয়ারে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে।

পুতুল ওয়াশরুম থেকে বেড় হয়ে হসপিটালের এই লম্বা করিডর জুরে হাঠতে থাকে,এটা পাঁচ তলা।পুতুলের বাবার কেবিন এখানেই দেওয়া হয়েছে কিন্তু তিনি এখন তিন তলার অপারেশন রুমে আছে,পুতুল যেয়ে একটা চেয়ারে বসে

পৃথিবীতে কোনো মেয়ের সর্ব স্থানে যদি কোনো পুরুষ থেকে থাকে,তাহলে সেটা হলো তাদের বাবা।মানুষ অনেক সুখ পেতে পেতে একটা সময় এক যায়গায় এসে ঠেকে যায়।আর এই যায়গা থেকে বের হওয়া তাদের প্রতি খুব কঠিন হয়ে পরে,সেরকমি একটা দেয়ালের সাথে আটকে আছে পুতুল সব কিছু উলোটপালোট লাগছে তখন তো কথাটা বলে দিলো তাকে তো তার পরিবারকে বেচানোর জন্য এইটুকু করতেই হবে।

_____________

-ইয়াসিন ব্যপারটা আরেকবার ভেবে দেখলে হয় না?

-আরে রাখো তোমার ভেবে দেখা,চকচকা হিরা হাতে পেতে হলে তো ওইটুকু করতেই হয়।

-আপনার ছেলের করা সব কু কর্মের দিকটা আইন থেকে আমি সামলে নিলেও এই বিষয় আমার কিছু করার নেই,এইবারে যে কেসটা আপনার ছেলের নামে চলছে তা কিন্তু ভবিষ্যতে ভয়াবহ হতে পারে।

ইয়াসিন এইবার কিছুটা চিন্তিত হলো,হাত নিয়ে হাটুতে চাপড়াতে চাপড়াতে ভাবান্তর হয়ে বলল,

-এটাও তো ভাবার বিষয় কিন্তু এটা নিয়ে পরে গবেষণা করবো।

-কিন্তু চেয়ারম্যান এর সাথে এমন করাটা ঠিক হয় নি,উনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি।আর আপনারা তো জানেনি ওনাকে নিয়ে যতোই গসিপ হোকনা কেনো সবসময় এর মতো এই বারো তিনি চেয়ারম্যান পদটাই পাবেন।

ইমন এইবার রেগে গিয়ে পুলিশের কলার চেপে ধরে বলল,

-এই পুলিশ! ওইসব ঠিক ঠাক আমরা বুঝে নিবো তুই তোর মতো কাজ করতে থাক আর এই টাকা নিয়ে এখন এখান থেকে ফুট হ।

ইমনের হাত থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে চেয়াল শক্ত করে পুলিশ কাপের চা টুকু শেষ করে টেবিলে থাকা টাকার বান্ডিলটা পকেটে পুড়ে নিলো।ইয়াসিনকে “আসি” বলে বিড় বিড় করে বলতে লাগলো ”টাকার জন্য এতো বছর ধরে এই বাপ বেটার গোলাম হয়ে আছি নাহলে কবে এগুলোকে লাথি দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দিতাম।”

পুলিশ চলে যেতেই ইয়াসিন ইমনকে আবার বসিয়ে দিয়ে বলল,

-আহা মাথা ঠান্ডা কর!এখন মেজাজ গরম করলে কাজের কাজ কিচ্ছু হবে না,তুই চেয়ারম্যান এর মেয়ার ব্যপারে চিন্তা কর।আমি ওই দিকটা দেইখা নিমুনে,,

-না বাবা তুমি ওটা পারবে না,ওই এ..!

ইমন কিছু বলার আগেই তার ফোনে কল আসলো।পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে আবেদ নাম দিয়ে সেভ করা। সচরাচর এই নাম্বার থেকে কল আসে না কোনো দরকার ছাড়া।এখন আবার কি হলো?

ইমন কল রিসিভ করে বলে,

-হ্যালো কি হয়েছে?

-বস আরাফাত এর লা’স পাওয়া গেছে,,

-কি বলিস এই ব্যাডা আবার কোন গার্লফ্রেন্ড এর জন্য সুইসাইড করলো?

-না বস ওকে খু’ন করা হয়েছে,শরীরকে বিভিন্ন অংশে বি’ভ’ক্ত করে জঙ্গলে ফেলে রেখেছে।আজকেই মা’রা হয়েছে

-কি বলিস ও তো নিখোঁজ হয়েছে প্রায় এক মাস,আজ লা’স কি করে পেলি?আর তুই শিউর আজকেই মা’রা হয়েছে?

-জ্বী বস শরীর থেকে টাটকা র’ক্ত বের হচ্ছে ধারণা অনুযায়ী প্রায় দু ঘন্টা আগে পুরোপুরি ভাবে মে’রে এখানে রেখে দেওয়া হয়েছে।

-আচ্ছা আমি আসতেছি।

ইমন কল রেখে হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে,ইয়াসিন শুধু দেখেই যায় কাহিনির আগা মাথা কিছুই বুঝলো না তবুও এই বিষয় নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে টিভি দেখা শুরু করলো।

___________
সাততলা বিশিষ্ট হসপিটালের ঠিক নিচে দাঁড়িয়ে আছে সামির,বাহিরে এসে মুখের মাস্ক খুলে একটা স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।ছোট বেলা থেকেই তার হসপিটালের ফ্লোরের স্মেলটা ভালো লাগতো না।ঠিক সহ্য হয়না তার দম আটকে আসে।অনেক কষ্টে সে এতক্ষণ ভেতরে ছিলো।পুতুলের বাবাকে বেডে নেওয়া হয়েছে,তবে এখনো জ্ঞান ফিরে নি।ডক্টরের আদেশ সহ সব ধরের ওষুধ আনার ফলে অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে তাকে,প্রণয় সেই কখন বের হয়েছে এখনো আসার নাম নেই,সামিয়া পুতুলের মা আর ভাবির দিকটা সামলাচ্ছে।কিন্তু এখন পর্যন্ত পুতুলকে চোখে পরেনি তার,পুতুলের কাছে যাওয়া দরকার।তবে তার আগে প্রয়োজন পানি!এখন প্রায় রাত দশটা পার হয়ে গিয়েছে তবুও খুব গরম।

সামির একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে সামনের দিকে এগুতে থাকে দোকান খোজার জন্য।হসপিটালে ক্যান্টিন থাকা সত্ত্বেও সেখানের পানিটুকু খাওয়ার সাহস নেই সামিরের।সামনে একটা দোকান পেতেই সেখান ঢুকে যায় সে,পানির বোতল কিনে বাহির হয়।তখন দেখা মিলে প্রণয়ের মাটির দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে হাঠছে,সামির হালকা দৌড়ে প্রণয়ের কাধে হাত দিয়ে বলে,

-প্রণয় কি হয়েছে তোমার কোথায় গিয়েছিলে?আন্টি তোমাকে খুব খুজেছিলো..!

সামির আর কিছু বলতে পারলো না,,প্রণয় এর চোখে পানি।

সামির আর প্রণয় একসাথে ভেতরে যায়,লিফট দিয়ে পাঁচ তলায় আসতেই দেখতে পায় করিডরের সারি পাতা তিনটা চেয়ার মধ্যে একটায় বসে আছে শ্রেয়া তার কলে স্নিগ্ধা।প্রণয়কে দেখে স্নিগ্ধা শ্রেয়ার কোল থেকে নেমে প্রণয়কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,

-পাপা তুমি কোথায় ছিলে,দাদুর কি হয়েছে আমরা এখানে কেনো?

প্রণয় স্নিগ্ধকে কোলে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,

-কিছু হয়নি মা,তোমার দাদু এমনি ঘুমাচ্ছে,কালকে সকালে উঠে যাবে।এখন তুমিও বাসায় চলে যাও।

-না আমি তোমাকে ছাড়া যাবোনা,

প্রণয় চুপ হয়ে যায়,পেছন থেকে সামির এসে স্নিগ্ধাকে প্রণয় এর কোল থেকে নিজে নিয়ে বলে,

-তুমি তো আমাদের বাসায় যাবা,সেখানে তোমার ফুপিও যাবে।তোমার পাপারাও পরে যাবে, ওখানে গিয়ে তুমি তোমার ফুপির সাথে খুব মজা করবে আমি তোমাকে চকলেট কিনে দিবো।

সামিরের কথা শুনে স্নিগ্ধা খুশি হয়ে যায়,সামিরের গলা জড়িয়ে বলে,

-সত্যি তুমি আমাকে ফুপির শশুড় বাড়ি নিয়ে যাবে?

ফুপির শশুড় বাড়ি কথাটা শুনে থম থমে খেয়ে যায় সামির!অবাক দৃষ্টিতে প্রণয়ের দিকে তাকায় প্রণয়ও মেয়ের এমন কথাতে কিছুটা লজ্জা বোধ করে, সামির ব্যপারটা বুঝতে পেরে বলে,

-হ্যা এখন চলো তোমার ফুপিকে নিয়ে আসি,

সামির কেবিনের ভেতরে চলে যায়,দেখে পুতুল তার বাবার মাথার কাছে বসে আছে।পুতুলকে প্রথমে বাড়ি যাওয়ার কথা বললে সে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না অনেক কষ্টে সবাই বুঝিয়ে স্নিগ্ধার কথা বলে যাওয়ার জন্য রাজি করায়,প্রণয় তাদের গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে
দিয়ে যায়।পুতুল চুপচাপ গাড়িতে উঠে যায়,স্নিগ্ধা সামিরের কোলে,,

বাড়িতে এসে সামির স্নিগ্ধাকে নিয়ে তার ঘরে চলে যায়,পুতুল নিজের ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে স্নিগ্ধাকে নিতে যায়,,ঘরে গিয়ে দেখে রুম পুরো ফাঁকা পুতুল তাকিয়ে দেখে বেডের একদম মাঝখানে স্নিগ্ধা ঘুমিয়ে আছে,চারো পাশ দিয়ে বালিশ দেওয়া।উল্টিয়ে পরে না যায় তার জন্য হয়তো।পুতুলের চোখ যায় বেলকনির কাচের দরজার দিকে,সেখান সামিরকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,সাথে কালো গোলাপ গাছটাও।

পুতুল কিছুটা এগিয়ে যায়,দু কদম এগিয়ে আবার পিছিয়ে যায়।তার আগেই সামির ডেকে উঠে পুতুলকে,তার মানে তাকে দেখে ফেলেছে?পুতুল একটা শ্বাস নিয়ে কাচের দরজা পাড় হয়ে বেলকনিতে যায়।সামির পুতলকে জিজ্ঞেস করে,

-স্নিগ্ধাকে নিতে এসেছো?

-হু!!

-তুমি নাকি চলে যাচ্ছো?

পুতুল শুধু মাথা নারায়,কিছুক্ষণ দু জন চুপ থাকে।হুট করে সামির পুতুলের দু হাত ধরে। পুতুল চোখ উচিয়ে তার দিকে তাকায়।পুতুলের দু হাত নিজের কপালে ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বড় শ্বাস নিয়ে বলে,

-তুমি কোথাও যাচ্ছো না।।

কার কি হয় কে যানে পুতুল হুট করে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে,ফুপানোর শব্দ শুনে সামির চোখ খুলে তাকায়। পুতুল ফুপাচ্ছে কোম হেচকি তুলতছে বেশি।এই প্রথম সামির পুতুলকে এমন ভাবে কাঁদতে দেখলো।কিন্তু হঠাৎ কিছু একটা ভেবে পুতুল আবার কান্না থামিয়ে দেয়,সামিরের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে নেয়,সামির আবার পেছন থেকে ধরে নেয়,

-একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের জীবনটা নষ্ট করবেনা

-আমি এই বিষয় নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না।

-না তোমায় আমায় বলতেই হবে,কি এমন হলো হুট করে তোমার ভাই এর ক্ষতি করলো তোমার বাবার ক্ষতি করলো তাও কিনা একজন গ্রামের সাধারণ মানুষ আর তোমরা প্রভাবশালী হয়ে তাদের করা ফাদে নিজেদের ইচ্ছায় পা দিচ্ছো?

পুতুল চুপ করে থাকে,এর উত্তর তার কাছে নেই সামির আবার বলে,

-বলো!!

পুতুল এইবার ঝড়ের গতিতে সামনে ঘুরে সামিরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে।হু হু করে কেঁদে উঠে সামির পুতুলকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয় নিজের বুকের সাথে,পুতুল ওভাবেই কান্না করতে করতে বলে,

-জানিনা আমি কিচ্ছু জানিনা,শুধু জানি আমি ওই ইমনকে বিয়ে করবো না,,

চলবে..!