পুতুল বউ পর্ব-২০+২১

0
269

#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_২০

শুনশান নীরব লেকের পাড়!মাথার ঠিক উপরে ছোটমোট একটা ব্রিজ,যেখানে যানবাহন চলাচল করছে,তার ঠিক অনেকটা নিচে একটা লেক আর সাইডে সবুজ গাছপালা দিয়ে ঘেড়াও করা।এখানে বিকেলে প্রায় অনেকেই ঘুরতে আসে,কিন্তু এখন দুপুর হাওয়ায় বেশি কাউকে দেখা যাচ্ছে না।ঘাসের মধ্যে ঠোঁট উলটে বসে আছে,পুতুল!মারজিয়া প্যারা নাই চিল মোমেন্টের মতো ভাব নিয়ে পা দুলাচ্ছে আর ফোন চাল্লাচ্ছে, পুতুল একবার মারজিয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে পাশ থেকে একটা ছোট ইটা দিয়ে নদীতে ডিল ছুড়ে বলল,

-মেয়েটা কে হতে পারে?যদি তাদের কেউ হয় তাহলে তো সামিয়া আন্টি আমাকে বলতো।কি জানি আবার নাও বলতে পারে,,

পুতুলের ভাবলেশহীন কথা শুনে মারজিয়া খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলে,

-কি আজাইরা চিন্তা ভাবনা করছিস পুতুল,ওই মেয়ে ওদের কোনো রিলেটিভ হোক বা অন্য কিছু তাতে তোর কি রে?আর এমনো তো হতে পারে ওটা ওই কা’না সিজান নাকি কি ওই ফটকা ছেলেটার গার্লফ্রেন্ড,এমনি যে ক্যারেক্টার ওগুলো তার দ্বারা আশা করাই যায়।

শেষের কথাটুকু খুব আস্তে বলল মারজিয়া,পুতুল চোখ ছোট ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে,

-একদম সিজান আপু সেরকম না,ওনার গার্লফ্রেন্ড থাকলে আমাকে অবশ্যই বলতো,

-সিজান আপু??

মুখটাকে বেকিয়ে কথাটা বলল,মারজিয়া।পুতুল একটু হেসে মারজিয়াকে সেদিনের আপু বলার কাহিনীটা বলল মারজিয়া তা শুনে অবাক হয়ে বলল,

-তোর ছেলেদের আপু ডাকার শখ এটা আমি জানতাম,কিন্তু তুই এই কানা বেটাকে আপু ডাকিস,ছি পুতুল তোর চয়েস কি।

-একদম বাজে কথা বলবিনা,সিজান আপুকে দেখে তোকে কোনদিক দিয়ে কানা মনে হয়।হ্যান্ডসাম আছে,কি কিউট স্মাইল লুক!

-হু লুক পুরা লুচু লুচু,দেখলিনা সেদিন কীভাবে তোর কাধে মাথা রাখতে চেয়েছিলো।ভাজ্ঞিস সামির ভাইয়া এসেছিলো।

পুতুল এইবার মারজিয়াকে ব্যাঙ্ক মেরে হাত নাড়িয়ে বলল,

-হু ‘ভাজ্ঞিস সামির ভাইয়া এসেছিলো’ হা সামির ভাইয়া না কচু!তখন ওই মেয়ের হাত না তোর সামির ভাইয়াই জড়িয়ে ধরে ছিলো সিজান আপু না হুম।

-হু হাত ধরতেই পারে তাতে তোর কি?

-আজব আমার কি!!

-তাহলে চুপ থাক,ওদের চিন্তায় এতোটাই মগ্ন হয়ে গেছিস যে কালকের কথা ভুলেই গেছিস

পুতুল ভ্রু কুঁচকে মারজিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-কালকে কি?

-কত কিছু হতে পারে,

-কালকে কত তারিখ?

– ২৩

-ওহ হো মনে পরেছে

পুতুলের কথায় মারজিয়া উত্তেজিত হয়ে পুতুলের আরো কাছে এসে বলে

-ফাইনালি মনে পড়লো!বল বল কালকে কি,

বলে পুতুলের উত্তরের আশায় আগ্রহ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।পুতুল কিছুক্ষণ তার মাথা চুলকিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে চট করে বলল,

-কালকে আমার সামিয়া আন্টিদের বাড়ি যাওয়ার এক মাস হবে,ঠিক এক মাস আগে এই দিকে আমি তাদের বাড়ি গিয়েছিলাম।মনে আছে তোর?

-ধ্যাত

বলে পুতুলকে ধাক্কা দিয়ে ঝট করে বসা থেকে উঠে পড়লো মারজিয়া,মুখে তার রাগ+অভিমানের ছায়া স্পষ্ট!পুতুল বসা অবস্থায় মাথা তুলে মারজিয়ার দিকে তাকায় রোদের তাপ পুরো চোখে এসে লাগে,বিধায় চোখ হালকে খুলে বলে,

-তোর আবার কি হলো কি কালকে,বলবি তো।

-কিছুনা চল এখান থেকে,

-এখন যাবো কেনো তোর না কিসের কথা আছে আমার সাথে সেটা বল।

-কিছুনা তুই যাবি নাকি আমি চলে যাবো

-থাক রাগ করিস না আয় এখানে বস বস!রাগ স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর আমার মতো সারাদিন বেশি বেশি খা আর মন আর শরীর দুইটাই ঠান্ডা রাখ।

-ধ্যাত

বলে পুতুলের হাত থেকে নিজের হাত ঝটকা মেরে ধুপধাপ করে ব্রিজের উপরে উঠে চলে গেলো।পুতুল পেছন থেকে অনেক ডাকে কিন্তু মারজিয়া পেছনে তাকায় না,সোজা চলে যায়।

-যা বাবা এই মেয়ের আবার কি হলো কথায় কথায় শুধু ছ্যাত মেরে উঠে,এখন আমি একা কীভাবে যাবো এই রোড দিয়ে,,

মুখটা পাংশেটে করে ওভাবেই কিছুক্ষণ বসে থাকে পুতুল।তারপর উঠে জামা ঝাড়া দিতে থাকে,তখন নিজে ঘাসের দিকে চোখ পড়তেই মনে হলো পেছনে লম্বা কারো ছায়ামানব এর মতো কিছু একটা,হাত থামিয়ে আস্তে আস্তে পেছনে তাকিয়ে,

-তুমি?

মারজিয়া রাগে ক্ষোপে পুতুলকে রেখেই লেকের ডাল থেকে ব্রিজে উঠে যায়,কোনো দিকে না তাকিয়ে শুধু সামনের দিকে জোরে জোরে হাঠতে লাগে,ব্রিজের সাইড দিয়ে হাটার সময় একটু দাঁড়ায় মারজিয়া কারণ এতোক্ষণে তো পুতুলের দৌড়ে এসে তার পেছন পেছন আসার কথা ছিলো কিন্তু এখন তো কোনো শব্দই পাওয়া যাচ্ছে না।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে একটু ভাবে পেছন থেকে কেউ আসবে,কিন্তু না এখান চলন্ত গাড়ি ছাড়া এই ভর দুপুরে একটা মানুষের ছিটেফোঁটাও নেই।এদিকে তার মুখ রোদে পুরে লাল হয়ে যাচ্ছে,হিজাবের ভেতরের কান থেকে যেনো ধোয়া বেড় হচ্ছে।একবার পাশের রেলিং এর নিচে লেকের দিকে তাকালো যেখানে তারা বসে ছিলো সেখানটা পুরো ফাকা।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও পুতুলকে দেখা যাচ্ছে না।একটু সন্দেহ লাগে মারজিয়ার কিন্তু এখন তার এইসব চিন্তার থেকে রাগ লাগছে বেশি মনে মনে ভাবছে

“এ কেমন বেস্টি জন্ম দিলাম আমি যে কিনা আমার জন্মদিনের তারিখটাও মনে রাখে না,কেউ আমাকে ভালোবাসে না কেউ না”

বিকেলের দিকে মারজিয়া বিষন্ন মেঘে ঢাকা মন নিয়ে গালে হাত দিয়ে তাদের ছোট্ট উঠোনে বসে আছে,আগে কখনো সে রাগ করলে পুতুল যেভাবেই হোক ফোন বা মেসেজ দিয়ে রাগ ভাঙাতো কিন্তু এখন তার কোনো পাত্তাই নেই।শ্রেয়া ভাবিকে মেসেজে জিজ্ঞেস করেছিলো পুতুল বাসায় নাকি,সে বলেছে মহারানী নাকি দিব্বি বসে বসে খাচ্ছে।মারজিয়া মন খারাপ হয়ে যায়,
“আজকাল পুতুলটা যেনো কেমন একটা হয়ে গিয়েছে সব কিছু কেমন যেনো লুকায়!যেখানে আগে একটা আকাম করলেও তাকে না বলা পর্যন্ত পেটের ভাত হজম হতো না।কি জানি,তবুও তারা আমাদের মা মেয়ের জন্য যা করেছে তার জন্য লাখ লাখ শুকরিয়া”

বলে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে ঘরে চলে যায়।কিছু সেকেন্ড সময় পার হতে না হতেই মারজিয়ার মা মারজিয়াকে ডাকতে থাকে,মারজিয়া সবেই বিছানায় শুতে নিচ্ছিলো মার ডাক শুনে খানিকটা বিরক্তি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে চেচিয়ে বলে,

-কি হয়েছেটাকি সারাক্ষণ এতো ডাকাডাকি করো কেনো।

-আমার কাজে কি আর ডেকেছি তোকে?দেখ বাহিরে কে জানি এসেছে তোর নাম বলল,

মারজিয়া ভ্রু কুঁচকে জলদি করে বাহিরে বের হয়ে দেখে গেইটের সামনে মাথায় ক্যাপ আর গোলাপি কালার একটা টি শার্ট পড়া ছেলে, মনে হচ্ছে কোনো কোম্পানির টি শার্ট। কাধে বড় একটা ব্যাগ আর হাতে একটা প্যাকেট!মারজিয়া সামনে যায় ছেলেটা মারজিয়াকে দেখে বলে,

-আপনিই কি মারজিয়া রৌণ?

-জ্বী!

ছেলেটা তার হাতের প্যাকেট মারজিয়ার দিকে দিয়ে বলে,

-আপনার পার্সেলটা

মারজিয়া ভীষণ অবাক হয়,সে তো কোনো অর্ডার দেয়নি কে পাঠালো এগুলো?আর এই গ্রামে তো কোনো ডেলিভারি ম্যান আসে না তাহলে?

-ভাইয়া আমি তো কোনো কিছু অর্ডার দেই নি!

-না আপু এটা আমাদের মার্কেট থেকে আপনাকে ডেলিভারি করা হয়েছে।

– আ,,আচ্ছা কত টাকা?

-না আপু পেমেন্ট আগেই পে করে দিয়েছে,

বলেই মারজিয়াকে আর কিছু না বলতে দিয়ে ছেলেটা চলে গেলো।মারজিয়া তো হা করে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে,কে দিলো এটা কে দিলো এটা? পুতুল!

মারজিয়া ঘরে এসে প্যাকেটটা ভালো করে চেক করে দেখে উপরের ডাকটিকিটে তার নাম লেখা,প্যাকেটটা খুলে তো আরো বেশি অবাক হয়।চকলেট ক্রিম মিক্সড কালারের একটা শাড়ী দেখে মনে হচ্ছে অনেক দামী।সাথে চকলেট কালার দু মুঠো চুড়ি আর অনেক গুলো চকলেট।মারজিয়া তো পুরোই অবাক এগুলো দেখে,চকলেট বক্স খুলতেই একটা হলুদ খামের চিঠি পায়,যেখান দু তিন লাইনে লেখা

~ ডিয়ার ছ্যাতরাণী,
এই হুটহাট আগুনে ঘি ঢালার মতো ছ্যাত করে ওঠা বাদ দাও।আর এই চকলেট গুলো পরিধান করে আমার প্রেমে চকলেটের মতো গলে যাও।অগ্রীম শুভ জন্মদিন আমার কিটকেট!
জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।”

চলবে..!

#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_২১

মারজিয়া ভাবে গিফটটা পুতুল তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ও গুলো দিয়েছে,কিন্তু সে শিউর না।এখন কি করবে ভেবে পায়না সে,আবার বলল ‘চকলেট খাও আমার প্রেমে গলে যাও’ এইসব কি?আর বার্ডের কথা তো পুতুল ছাড়া কারো জানার কথা না। যদি অন্য কেউ দিয়েও থাকে তাহলে আমার বাড়ির এড্রেস জানলো কীভাবে,এর মধ্যে যদি ওই পুতুলের হাত থেকে থাকে ওকে তো আজকে আমি খেয়েই ফেলবো।

বলে তরিঘড়ি করে কোনো মতে মাথায় হিজাব বেধে প্যাকেটটা নিয়ে পুতুলদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দেয়।জলদি করে রিকশা নিয়ে পুতুলদের বাড়ির সামনে এসে দৌড়ে গেট দিয়ে ভেতরে চলে যায়।দারোয়ান মারজিয়াকে চিনে বিধায় বাধা দেয় না তবে অবাক হয়ে চেয়ে থাকে এতো তাড়াহুড়ো দেখে।

মারজিয়া ধুপধাপ করে পা ফেলে ড্রয়িং রুমে গিয়ে পৌছাতেই দেখতে পায় পুতুল হাতে একটা আপেল নিয়ে কামরাতে কামরাতে উপরে উঠছিলো মারজিয়াকে এমন করে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।আরেকবার আপেলে কামড় দিয়ে ভ্রু নাচাতে নাচাতে মারজিয়ার সামনে এসে বলে,

-কিরে তুই না তখন ছ্যাত করে উঠে আমাকে একা ফেলে চলে আসলি।কি ভেবেছিস আমি একা আসতে পারবোনা হা দেখ জলজ্যান্ত পুতুল তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছে,যাই হোক ওইসব কথায় না আসি এই তোর হাতে কিরে?

বলে মারজিয়ার হাতের প্যাকেটটা ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়।মারজিয়া চারো দিকে তাকিয়ে দেখে ড্রয়িং রুমের সব কাজের লোক পুতুলের আম্মু সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে,মারজিয়া পুতুলের হাত শক্ত করে ধরে থামিয়ে দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক একটা হাসি দিয়ে পুতুলকে টানতে টানতে উপরে নিয়ে যায়।পুতুলের ঘরে এসে দরজা আটকে দিয়ে, পুতুল খপ করে মারজিয়ার হাত থেকে প্যাকেট নিয়ে বলে,

-আমার রাগ ভাঙানোর জন্য গিফট নিয়ে এসেছিস?উম সেটা আগে বললেই হতো এরকম টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসার মানে কি।

মারজিয়া পুতুলের কথায় ফুসতে ফুসতে পুতুলের হাত থেকে টান দিয়ে নিয়ে বলে,

-এটা কি?

-আজব তুই এনেছিস তুই জানিস এটা কি!

-এটা তুই দিস নি?

-আজব আমি কেন দিবো আমি আরো ভাবলাম তুই আমার জন্য এনেছিস।

-তার মানে কালকের ব্যপারে তুই কিছু জানিস না?

-আরে আজব কি বলছিস এইসব?মাথা খারাপ করার ধান্দা না?কিন্তু আমি এইসব পাত্তা দিবোনা,যেই দিয়ে থাকুকনা কেনো দেখি এর ভেতর কি আছে।

মারজিয়া চুপ হয়ে যায় কালকে তার জন্মদিন সেটা পুতুল ভুলে গেছে তাহলে তো আদারস কারো জানার কোথাই না কে দিলো!

সেদিন কোনো মতে পুতুলকে পার্সেল এর কথা বলে শাড়ীটা দেখিয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছিলো।রাতে সে নির্ঘুমে রাত কাটাচ্ছে,ঘরের দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বারোটা তিন বাজে,তার কোনো পারসোনাল ফোন নেই যা দরকার হয় মার ফোন দিয়ে করে,পুতুলের সাথে টুকটাক মেসেজ করে সিম নাম্বারে এতটুকুই।শোয়ার এক মিনিট আগে পুতুলের একটা মেসেজ পায় যেখানে লেখাছিলো “কালকে স্কুলে যাবো না একটু ঘুরতে যাবো তোর যাওয়ার দরকার নেই।” মারজিয়া আর কোনো রিপ্লে করে না,কালকে তারও যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।এইযে তার নিজের বেস্টফ্রেন্ড যে এমন একটা দিনের কথা ভুলে গেছে তাতে তার কোনো আফসোস নেই।সে চাইলে জানাতে পারতো তাকে,এবং অবশ্যই তাকে কিছুনা কিছু নতুনত্ব দিতো কিন্তু তাতে তার বিন্দু মাত্র লোভ নেই।তার জীবনে এমন কয়জন মানুষ এসেছে তাতেই সে নিজেকে ভাগ্যবান থেকে কম মনে করে না।

সকালে মারজিয়াদের বাড়ির উঠোনে দুটো চেয়ার পেতে বসে আছে মারজিয়া আর তার মা।মারজিয়ার মা বাটিতে করে পায়েশ এনে চামচ দিয়ে তাকে খাইয়ে দিচ্ছে,যেটা প্রতিবারি করে।

মারজিয়া আনমনে খেয়ে যাচ্ছে হঠাৎ তার মাথায় আসলো ‘তার মা দিলোনা তো গিফটা’ মারজিয়া একবার তার মা এর দিকে তাকালো পরক্ষণেই মাথা ঝাকা দিয়ে বলল ‘ধুর আমার মা কি এইসব বুঝে নাকি’ বলে আবার গালে হাত দিয়ে বসে রইলো।
মারজিয়ার মা শেষের পায়েস টুকু মারজিয়ার মুখে তুলে বাটিটা সাইডে রেখে মারজিয়ার গালে হালকা করে একটা চড় মারে।মারজিয়ার ঘোর কেটে যায় এতো ভাবনার মধ্যে হঠাৎ মায়ের চড় খেয়ে যেনো আরো অবাক হয়ে যায়।হা করে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে,মারজিয়ার মা কিছুটা উচ্চ স্বরে ক্ষোপ নিয়ে বলে,

-তোকে কতবার বলেছি এভাবে গালে হাত দিয়ে থাকবি না।গালে হাত দেওয়া অলক্ষুণে লক্ষ্মণ!

-ওহ মা তুমিও না ভয় পায়িয়ে দিয়েছিলে।

-হুম আর কখনো যেনো এভাবে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে না দেখি।

মারজিয়া খানিকটা বিরক্তি নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।মারজিয়ার মা পেছন থেকে তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলো ‘এই মেয়ের এই রাগ কবে যে কি পরিনতি করে আল্লায় জানে’ বলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে যায়।

মারজিয়ার বিছানায় এসে নানা রকমের চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে যায়,,তার ঘুম ভাঙে মায়ের ফোনের রিংটোনে,যেটা তার বালিশের নিচেই ছিলো।ঘুম ঘুম চোখে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে ‘শ্রেয়াপু’ নামে সেভ করা।এই সময় আবার ভাবিপু কেনো ফোন দিলো।মারজিয়া উঠে বসে ফোনটা রিসিভ করা মাত্রই ওপাশ থেকে শ্রেয়া বলে উঠে,

-হ্যা হ্যালো মারজিয়া।

-জ্বী আসসালামু আলাইকুম ভাবি

-হ্যা ওয়ালাইকুম সালাম।

-মারজিয়া এখন কি তুমি ফ্রি আছো?

-কেনো ভাবিপু কোনো দরকার?

-আসলে তুমি তো জানোই পুতুলের জীদ এর কথা একবার যা বলবে তাই করতে হবে,আর এয়ো হয়তো জানো আজকে তার আমার আর প্রণয় এর সাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিলো,কিন্তু আকস্মিক তোমার ভাইয়াত জরুরি কাজ থাকায় যেতে পারছে না আমারো কিছু কাজ আছে,এখন নাকি তার যেতে হবেই সেই কখন থেকে ঘর বন্ধ করে বসে আছে।এখন তো একা ওকে ছাড়া যায়না বলছিলাম কি মারজিয়া তুমি কি একটু পুতুলের সাথে যাবে?

মারজিয়া কিছু সেকেন্ড ভাবে,তারো একটু ঘুরতে যেতে মন চাচ্ছিলো এতে করে মনটা একটু ফ্রেশ লাগবে।তাই মারজিয়া ‘হ্যা’ করে দেয়।

শ্রেয়া কল কেটে দেয়।পেছন থেকে পুতুল পিলপিল করে বেড় হয়ে ভাবির দিকে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,

-ডান??

শ্রেয়া একটা মুচকি হেসে বলে,”ডান!” পুতুল ভীষণ এক্সাইটেড হয়ে যায়।টুকুস করে চুমু খেয়ে বলে ‘এক ঢিলে দুই পাখ’ প্রবাদটা আজকে সত্যি হয়েই গেলো।শ্রেয়া ভ্রু কুঁচকে পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলে,

-তুই আবার কি বুদ্ধি করছিস হ্যা?

-কিছুনা ভাবিপু তুমি তোমার কাজ করতে থাকো।

বলে আরেকটা চুমু দিয়ে দৌড় দেয়।

মারজিয়া রেডি হয়ে বেড় হতে যাবে তখন ফোনে পুতুলের নাম্বার থেকে মেসেজ আছে ‘তোর শাড়ীটা নিয়ে আসিস আমি পড়বো’

মারজিয়া আর বেশি কিছু না ভেবে শাড়ির প্যাকেটটা নিয়ে পুতুলদের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা দেয়।এমনিতেও সে যেহেতু জানেনা কে দিয়েছে তাই ভেবেছে পুতুলকে দিয়ে দিবে।

পুতুল দরজা দিয়ে শুধু উকি দিচ্ছে মারজিয়া আসছে নাকি।আর বার বার ফোন চেক করছে,বেশি সময় নেই একটু পর সন্ধ্যা নেমে পড়বে আবার তাদের বাড়ি ফিরতে হবে।তার ভীষণ খুশি খুশি লাগছে,মারজিয়াকে এতো গুলা থ্যাংস দিতে মন চাচ্ছে আসলে অনেকগুলা চুমু দিবে।

প্রণয় সেদিন দিয়েই যাচ্ছিলো পেছন থেকে পুতুলকে এমন উঁকিঝুঁকি করতে দেখে সে আস্তে আস্তে যেয়ে পুতুলের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।কিন্তু পুতুলের ওদিকে হুশ নেই,সে এক পা উচু করে বাহিরের দিকে মাথা বের করে রাখছে।প্রণয় পেছন থেকে পুতুলের মাথায় বাড়ি দেয়,হঠাং এমন হওয়ায় পুতুল তাল সামলাতে না পেরে পড়তে পড়তে বেচে যায়।সামনের দেয়াল আকরে ধরে কোনো মতো দাঁড়ায় বুকে হাত দিয়ে একটা বড় শ্বাস নিয়ে সামনে তাকায় কে তা দেখার জন্য।দেখে তার গুনোধর ভাই দুই হাত ভাজ করে তার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত কপাটি বের করে হেসে যাচ্ছে।

পুতুল চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে,

-তুই আমাকে ধাক্কা দিলি কেন কু’ত্তা যদি পড়ে যেতাম!

-গেলে যেতি!এখানে দাঁড়িয়ে এরকম উঁকিঝুঁকি দিয়ে কি দেখছিলি দেখি।

বলে এক হাত দিয়ে পুতুলের মাথা সরিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে সামনে তেমন কেউ নেই শুধু একটা মধ্যে বয়সি লোক যে এই গ্রামে ধান চাষ করে,তাদের বাড়িতে ধান দিতে এসেছে।প্রণয় হালকা হেসে মজা নেওয়ার জন্য পুতুলের দিকে তাকিয়ে মুখের নাজেহাল অবস্থা করে বলল,

-ছি কাঠপুতল এই বয়সে শেষে কিনা রাসেল (ধান চাষক লোকটা) এর দিকে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকিয়ে আছিস?তুই কি আমাদের সম্মান রাখবিনা?অবশ্য ভালোই হলো সারাবছর ফ্রিতে ধান পাবো।

বলে আবার হাসতে লাগলো।পুতুল রাগে গজগজ করতে করতে একটা জোরে চিৎকার দিয়ে প্রণয়ের চুল টেনে ধরে,

-দেখ ভাইয়া তোর মজা বন্ধ কর এখানে আমি মারজিয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম।

মারজিয়ার কথা শুনে প্রণয়ের পুতুলের কাছ থেকে নিজের চুল রক্ষা করে,শার্টের কলার ঠিক করে বলল,

-ওহহ মারজিয়া তো কই তোর বান্ধুবি দেখিনা তো।

বলে মাথা উঁচু করে আবার উকি দিতে থাকে প্রণয়।পুতুল প্রণয়কে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে,

-চরিত্রহীন।

প্রণয় পুতুলের কথায় পাত্তা না দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে যেতে বলে,

-আমার বউ আছে,,

পুতুল একটা ভেংচি কাটে,আবার একি ভাবে উকি দিয়ে মারজিয়ার অপেক্ষা করতে থাকে।

চলবে..!