পূর্ণিমা পর্ব-১২

0
488

#পূর্ণিমা🍂
#পর্ব_১২
#Sanchita(writer)

তিথির হাত থেকে ফোনটা মেঝেতে পড়ে গেলো। তিথি বাকরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে, এদিকে কিছু পড়ার শব্দে পূর্ণি রুম থেকে ব্যালকণিতে গেলো দেখলো তিথি চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। তার ফোনটা মেঝেতে পড়ে আছে এটা দেখে পূর্ণি তিথিকে ভ্রু কুচঁকে জিগাসা করলো।

“তিথি কি হয়েছে! তোমার ফোনটা তো পড়ে গেছে তুলো? তিথি, তিথি কি হলো বলবে প্লিজ? (ভ্রু কুচঁকে)
পূর্ণি এগিয়ে গিয়ে তিথিকে হালকা জাকুনি দিতেই তিথি হু হু করে কেদেঁ উঠলো আর কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলার চেস্টা করলো,,

” ম.. মা আমার ম.. মা! (কাপাঁ কাপাঁ গলায়)
পূর্ণি হতচকিত হয়ে গেছে তিথির কান্না দেখে। তিথির হাত ধরে তাকে শান্তনা দিতে দিতে বলল।

“তিথি প্লিজ কান্না করোনা, শান্ত হও আর বলো কি হয়েছে?
তিথি কোন কথা শুনছেনা সে নিজের মতো করে ফুপিয়ে কেদেঁই যাচ্ছে। এদিকে পূর্ণি তিথিকে কিছুতেই শান্ত করাতে পারছেনা। এভাবে অনেক সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিথি কিছুটা শান্ত হলো আর কাপাঁ কাপাঁ অস্পস্ট স্বরে সব বলল।
পূর্ণি চুপ করে আছে তিথিকে এখন কি বলে শান্তনা দিবে তাই ভাবছে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে পূর্ণি তিথিকে বলে উঠলো।

” তোমার এখন উচিৎ তোমার মায়ের কাছে যাওয়া! তোমার পার্সপোট,ভিসা সব রেডি করে রাখো আর ওখানে চলে যাও! তুমি তোমার ভাই বাবাকে না ক্ষমা করতে পারলেও তোমার মায়ের থেকে এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিওনা এই মুহুর্তে ওনার তোমাকে অনেক প্রয়োজন তুমি ওখানেই যাও! (শান্ত স্বরে)

তিথি নিজেকে অনেক চেস্টায় শান্ত করলো আর চিন্তা করলো তার বাবা আর ভাইয়ের কৃতকর্মের জন্য সে কেনো নিজের মাকে কস্ট সিবে এটা ভেবেই তিথি ঠান্ডা মাথায় সব কিছু রেডি করতে লাগলো কালকেই সে ইউএস এ চলে যাবে।
পূর্ণি তিথির জন্য কিছু বানাতে রান্নাঘরে চলে গেলো।

অন্যদিকে,,
নির্ঝর নিদিয়াকে নিয়ে হানিমুনে সাজেক যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। নিদিয়া ভেবে রেখেছে আর নির্ঝরকে শ্বাস নিতে দিবেনা আজকে রাতেও ওকে মৃত্যুযন্ত্রণা দিয়ে মারবে।

সবশেষে নির্ঝর আর নিদিয়া অনেকখানি পথ অতিক্রমের পর সাজেক পৌঁছালো।
ওখানে তারা একটা রিসোর্ট এ উঠলো, রিসোর্ট টা নিদিয়া ঠিক করেছে যে এটায় ওরা উঠবে নির্ঝরও মেনে গেলো।
তবে নির্ঝররের মনে খটকা লাগছে এই রিসোর্ট টা কেমন জানি ফাকা ফাকা মানুষ কম,
নির্ঝরের জানা মতে সাজেক এর আশেপাশের রিসোর্ট এ মানুষের সমাগম বেশি থাকে কারন এমন মনোরম দৃশ্যকর পরিবেশ দেখতে মানুষ এখানে অনেকদিন থেকে যায় পরিবেশটাকে মন খুলে উপভোগ করতে।
নির্ঝর তার সন্দেহকে চাপা দিয়ে রেখে রিসোর্ট এ উঠলো।
এদিকে নিদিয়া ভেবে রেখেছে আজকে রাতে নির্ঝরের সাথে সে কি কি করবে সব ভেবে সে বাঁকা হাসি দিলো আজকের রাত নির্ঝরের শেষ রাত।

অন্যদিকে,,
সব রেডি করতে করতে প্রায় অনেকক্ষণ সময় ব্যাতিক্রম হয়ে গেলো তিথির। সবশেষে তিথি ভাবছো সব তো রেডি করলো তবে পূর্ণি সে কিভাবে থাকবে সে এমনিতেও গর্ভবস্থায় আছে তার কোন পার্সপোট নেই। তিথি ভাবছে সে কিভাবে পূর্ণিকে একা ফেলে ইউএস এ তার মায়ের কাছে যাবে।
তিথির‌ মাথা কাজ করছেনা ঠিক মতো একদিকে মা অন্যদিকে পূর্ণি।
তিথি অবশেষে ঠিক করেছে সে পূর্ণিকে রেখেই তার মাকে দেখতে যাবে গত একটা বছে সে তার মায়ের চেহারা টুকুও দর্শন করতে পারেনি সাথে কথাও বলতে পারেনি। তিথি এককথায় পুরো রেডি হয়ে আছে কালকের জন্য।
.
রাতে,,
তিথির চোখে ঘুম নেই বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে তার মন খালি ছটফট করছে তার মায়ের সাথে দেখা করার জন্য। এদিকে পূর্ণিও নির্ঘুম তবে নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে সে।
ভাবছে তিথির মায়ের কথা, উনি এখন কেমন আছে! তিথিতো ঘুমাচ্ছে না মায়ের জন্য প্রচুর টেনশন করছে হয়তো। সব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো পূর্ণি।
একটা সময় তিথি উঠে চলে গেলো ব্যালকণিতে তার ভালো লাগছেনা কেন জানি দম বন্ধ লাগছে তার। খোলা হাওয়াতে মন খুলে শ্বাস নিলো তিথি। এক চোখে সে দূরের পানে চেয়ে আছে। হঠাৎ কারো ডাকে তিথি আচমকাই চমকে উঠলো সাথে শিউরে উঠলো খানিকটা।

“তিথু! (শীতল স্বরে)
তিথি ভয়ে ভয়ে পিছু তাকালো দেখলো অন্তিক দেয়ালে হেলান দিয়ে নিস্প্রান চোখে মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তিথি অন্তিকের দিকে তাকাতেই অন্তিক মুচকি হেসে বলে উঠলো।

” তোমার মায়ের অবস্থা ভালোনা তুমি সব মান অভিমান ভুলে ওনার কাছে যাও! হয়তো দোষটা তোমার ভাই -বাবার ছিলো তবে তোমার মা তো আমার বিষয়ে জানতোওনা জানার পর থেকেই তো ওনার এই অবস্থা! তুমিও আর নিজেকে কস্ট দিওনা প্লিজ তিথি নিজের জীবনটাকে আবার আবীরে সাজিয়ে নাও নতুন রং মাখাও নিজের গালে, মিস্টি হাসি আনো মুখে আর শুনো পারলে তোমার বাবা – ভাইকেও ক্ষমা করে দিও! ওনারা হয়তো এই কয়েক বছরে নিজেদের ভুলটা বুঝতে পেরেছে। পরিশেষে বলবো সব ভুলে যাও অন্তিক নামে যে তোমার জীবনে কেউ ছিলো তাও ভুলে যাও! (মুচকি হেসে)

কথাগুলো বলেই অন্তিক অদৃশ্য হয়ে গেলো। তিথির আবারো পুরোনো কথা মনে পড়ে গেলো অন্তিক তার হবেনা। তিথির চোখ বেয়ে নিশ্চুপ অশ্রুজল বেয়ে পড়ছে আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে সে এইটা ছাড়া তার আর কিছুই করার নেই। তবে সব কিছুর মাঝে তিথি অবাক হচ্ছে অন্তিক তো বলেছিলো তার সামনে আর আসবেনা তাহলে আজকে কেনো আসলো? হয়তো ওকে ওর বাবাকে ভাইকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য বলতে এসেছিলো যা বলে চলেও গেছে।
তিথি ভাবছে অন্তিক তো খারাপ কিছুই বলেনি তার জীবনে এখনো অনেকটা পথ বাকি আছে, যদি হোচট খেয়ে পড়ে যায় তাহলে একজন হাত ধরার মতো বিশ্বাসী মানুষ প্রয়োজন পড়বে আর সবাই তো সেই মানুষটাকেই চায়। তিথি চেয়েছিলো তবে অন্য কাউকে না অন্তিককে চেয়েছিলো। তবে ভাগ্য তাদের এক করেনি উল্টা সব ওলোট পালোট করে দিয়েছে। তিথির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে আর কালকের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে।
.
.
ঝাপসা চোখে চারদিকে চোখ বুলাচ্ছে নির্ঝর। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মাথা ঘুড়াচ্ছে তার, সেই কখন থেকে উল্টো হয়ে ঝুলে আছে সে। তখন অন্ধকারে কেউ একজন বেধরল ভাবে তাকে বেল্ট দিয়ে মেরেছে প্রায় আধাঘন্টা। নির্ঝর জ্ঞান হাড়িয়েছিলো এইতো সবে জ্ঞান আসলো। নির্ঝর অস্পস্ট স্বরে ডাকছে কাউকে,,

“নিদিয়া!

হঠাৎই নির্ঝর দড়ি ছিড়েঁ উল্টো ঝুলে থাকা থেকে উপর থেকে নিচে অনেক জোড়ে পড়েছে। এতে মাথায় আর বুকে অনেক ব্যাথা পেয়েছে নির্ঝর।
কেউ একজন যে তার দিকেই আসছে তার হাটার শব্দ শুনেই বুঝতে পারছে নির্ঝর তবে তার নড়ার একটুও শক্তি নেই শরীরটা অচল হয়ে আছে তার।

” গরম পানি! (হালকা কেশেঁ)
গরম পানির কথা বলতেই নির্ঝরের গায়ের উপর কেউ অতিরিক্ত গরম পানি ঢেলে দিলো এদিকে নির্ঝর যেনো জাহান্নামের আগুনে পড়েছে এমন ভাবে জোড়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
এদিকে নিদিয়া নির্ঝরের চিৎকারে বেশ মজা পাচ্ছে
গেম পানিটা সেই নির্ঝরের গায়ে ঢেলেছে।ভেবে রেখেছে এখন কি কি করবে নির্ঝরের সাথে। নিদিয়ার পাশেই আছে সেই‌ মহিলাটা যেই মহিলাটা সেদিন নিদিয়াকে বাচিঁয়ে ছিলো।
নির্ঝর চিৎকার করছে জোড়ে জোড়ে এটা দেখে বিরক্ত হয়ে নিদিয়া আবারো বেল্ট টা হাতে নিয়ে কয়েক ঘা দিলো নির্ঝরের পিঠে,, নির্ঝর যেনো আরও‌ ব্যাথাকাতর হয়ে উঠলো।

#চলবে,,,