পূর্ণিমা পর্ব-১০

0
343

#পূর্ণিমা🍂
#পর্ব_১০
#Sanchita

“তোমাকে কত করে বললাম আমার ভ্রনে আসতে তুমি কেনো আসছোনা অন্তিক!আমিতো তোমায় ভ্রমে চাই!চাই যেনো তুমি আমার আমার কাছে আসো হাজারো গল্প করো!(আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো তিথি)

তিথি অন্ধকারে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আকাশের পানে চেয়ে অন্তিকের কথা ভাবছে।পূর্ণি এখন ঘুমাচ্ছে মেলা রাত হয়েছে যাকে বলে গভীর রাত।
তিথির হাতে ফোন ছিলো,ফোনের স্কিনে অন্তিক আর তার হাসিমাখা একটা ছবি দেওয়া আছে।
কেউ ফোন করাতে ফোন জ্বলজ্বল করে উঠলো
অন্তিকের ভাবনায় কেউ কল করাতে তিথির কান্নার সাথে রাগ হচ্ছে।কেউ তার ভ্রমে,কল্পানাতে আর অন্তিককে আসতে দিতে চায় না।
তিথি ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে তার বেস্টফ্রেন্ড কল করেছে।
বিরক্তির সাথে কল রিসিভ করে কানে ধরলো তিথি।
ওপাশ থেকে কেউ কন্দনরত গলায় বলে‌ উঠলো।

“দোস্ত আজকে আবার আমি ছ্যাঁকা খাইসি!ইশাইন্নার একটা না তিন তিনটা গার্লফ্রেন্ড আছে!ধোঁকা খাইসি!রাইত বাজে দুইটা এখন আমি ছয় বোতল মোজো নিয়া একটু চুমুক খেয়ে খেয়ে মাতলামি করতাছি!(কন্দনরত গলায় বলে উঠলো রিফা)

তিথি ফোনটা কান থেকে সরিয়ে মনে মনে বলে উঠল।
” এইটা আসলেই‌ একটা বলদ যেখানে সেখানে খালি ছেলেদের উপর ক্রাশ খাবে আর পরিশেষে বাঁ/শ খেলে মোজো খেয়ে মাতলামি করবে সাথে আমাকেও মোজো বিহীন মাতাল বানাবে!(মনে মনে)

তিথি ঢুগ গিলে বলে‌ উঠলো।

“এই‌নাম্বারের মালিকটি এই মুহুর্তে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আছে!দয়া করিয়া কাল সকাল ছাড়া ফোন করিলে আপনার কপালে ছিড়াঁ জুতা ছাড়া আর কিছুই জুটিবে না!ওকে বাই(নরম স্বরে)
কথাটা বলেই তিথি ফোন কেটে দিলো আর সাইলেন্ট মুডে করে রাখলো।
তিথি সব ছেড়ে আবারো অন্তিকের ভাবনায় ডুবে গেলো
🌼
দুদিন পর,,

“বস আপনিকি আর নারিপাচার,কিডনির ব্যাবসা করবেন না!(চিন্তিত গলায়)

ইরফাদের কথা শুনে বিষম খেলো নির্ঝর।সবেমাত্র এক কাপ কফি নিয়ে বসেছিলো সে নিজেকে একটু সতেজ রাখার জন্য।
পরপর তার দুই ভাই,ভাবি,মা-বাবা মারা গেলো‌‌ আকস্মিক ভাবে।এটা নির্ঝর মানতেই‌ পারছেনা।
সব কিছু ভুলে একটু নিজের মতো করে সময় কাটানোর জন্য কফি নিয়ে বসেছিলো সে।ইরফাদের কথা শুনে তার সে মেয়েটির কথা মনে পড়ে গেলো।এই কাজটার জন্যই তো তার সাথে মেয়েটা এমন করছে।নির্ঝর ভাবছে মেয়েটার আপন কারো সাথে হয়তো সে কিছু করেছে যার প্রতিশোধ সে নিচ্ছে।
নির্ঝর সেই মেয়েটার ভয়ে বাড়ির সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিয়েছে।
নির্ঝরের নাক-মুখ দিয়ে কফি বের হচ্ছে আর কাশঁছে সে।ইরফাদের কলটা সে কেটে দিয়েছে।
নির্ঝর অনুভব করলো তার মাথায় কেউ‌ আস্তে আস্তে হাত বুলাচ্ছে।
নির্ঝর কাশঁতে কাশঁতে সেদিকে তাকালো দেখলো নিদিয়া দাড়িয়ে আছে আর ওই তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে
নির্ঝরের মাথায় হাত বুলাচ্ছে নিদিয়া।নিদিয়ার মুখে রয়েছে অন্যরকম একটা হাসি।
নির্ঝরের পিঠে আস্তে আস্তে চড় দিতে দিতে নিদিয়া বলে উঠলো।

” আরে আস্তে‌ আস্তে এত কাশঁছেন কেনো! কোন কিছু শুনে কি বিষম খেলেন নাকি! কাশঁতে কাশঁতে দেখি মরেই যাবেন আপনি।

নির্ঝর কিছুক্ষণ কাশাঁর পর স্বাভাবিক হলো।
নিদিয়া নির্ঝরের পাশে বসে বলে উঠলো।

“আচ্ছা আপনার কি আপনার প্রথম স্ত্রী,কি যেনো নাম! ও হ্যাঁ পূর্ণিমা ওর কথা কি মনে পড়েনা!(স্মিত হেসে)

নির্ঝে নিদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।

” যেটা অতীত সেটা অতীতই থাক আর সেটা বর্তমানে সেটা বর্তমানেই থাক!এদের মধ্যে অতীত কে টানতে যেওনা নিদিয়া।পূর্ণিমাকে কখনো আমি ভালোইবাসিনি প্রথমে তার বাপের কিছু টাকা,আর রুপ দেখে বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।তবে বিয়ের দীর্ঘদিন পর জানলাম পূর্ণিমা এতদিন যাদের কাছে ছিলো তারা তার আসল বাবা মা না।তাদের বাচ্চা হয়নি দেখে এতিম খানা থেকে পূর্ণিমাকে পালক আনেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো পূর্ণিমার আসল মা হলো‌ আমাদের বাড়ির আশ্রিতা আর কাজের লোক।এরপর থেকেই তার প্রতি থেকে আমার মন উঠে গেছে!বলো লো লেভেলের লোকদের সাথে আমি থাকিনা আর স্বামী -স্ত্রী হয়ে তো আরও আগেনা!তাইতো ‌আমাদের বিয়ের দিনেই ওকে ডিভোর্স দিয়েছি
আসল পেপারটায় ওকে অনেক আগেই কৌশলে সাইন করিয়ে নিয়েছি।আর নকল টা দিয়ে আমাদের বিয়ের দিন সাইন করিয়েছি তবে সেটা কোন কারনে পুড়ে যায়!তবে যাই হোক ওর তারাতে পেরেছি এটাই অনেক ছোটলোক কোথাকারের!(মুচকি হেসে)

নির্ঝরের কথা শুনে মুহুর্তেই নিদিয়ার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।তার ইচ্ছে করছে এক্ষুনি নির্ঝরের শার্টের কলার ধরা টেনে কষে কয়েকটা চড় দিতে।
আপাতত নিদিয়া চুপ করে আছে কারন নির্ঝরের জন্য সামনে ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে সেটা নির্ঝরও ভালো করে জানেনা।
.
.

“পূর্ণি আপু আমার এক ফ্রেন্ডের বিয়েতে আমাকে ইনভাইট করেছে‌ তুমিকি আমার সাধে যাবে!একা বাড়িতে থেকে কি করবে চলো আমার সাথেই!(স্মিত কন্ঠে)

পূর্ণি তিথির দিকে তাকালো।পূর্ণির চোখ মুখ শুকনো শুকনো লাগছে।
তিথি শাড়ির ভাজ ঠিক করে পূর্ণির দিকে তাকালো পূর্ণি মনমরা হয়ে বসেই‌ আছে আর তার দিকে শুকনো নজরে তাকিয়ে আছে। পূর্ণির চেহারা শুকিয়ে গেছে অনেকটা।

” কি হলো আপু তোমার মুখ-চোখ এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেনো!কি হয়েছে কোন কিছু নিয়ে কি চিন্তায় আছো!(মৃদ্যু স্বরে)

তিথির কথা শুনে পূর্ণি মুচকি হাসি দিয়ে বলে‌উঠলো।

“ভাবছি আমার পথচলা কতদূর আগাবে একা ‌একা! আমার প্রচুর খারাপ লাগছে কেনো জানি আচ্ছা সবসময় আমার সাথেই কেনো এএন হয়!জানো আমার পালিত মা সবসময় আমায় বলতো আমার নামের মতোই নাকি আমার কপাল,চেহারা উজ্জল স্নিগ্ধ আলো ছড়ায়।আমার ভাগ্য নাকি অনেক ভালো তবে আমার সাথেই কেনো এমন টা হলো! আমার কপালে কি এইসবই লেখা ছিলো? ( থমথমে স্বরে)
পূর্ণির কথা শুনে তিথি চুপচাপ দাড়িয়ে গেলো।স্থির নজর দিলো পূর্ণির দিকে, পূর্ণির চোখে স্পষ্ট পানি চিকচিক করছে যেনো পলক‌ ফেললেই তার বর্ষিত হবে।
পূর্ণি আর কিছু বলল না কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করার পর পূর্ণি উঠে গেলো সে ঠিক করেছে বাড়িতে একা না থেকে তিথির সাথে বিয়েতে যাবে।
তাই সে রেডি হতে লাগলো।তিথির একটা সিম্পল শাড়ি পড়ে নিলো।আসা পর্যন্ত সে তিথির কাপড় গুলোই ব্যাবহার করছে কারন সঙ্গে করে সেতো‌ আর‌ কাপড় আনেনি।

পূর্ণি তৈরি হয়ে গেলো বিয়ে বাড়িতে।সাজবিহীন সাদামাটা ভাবে শাড়ি পড়ে।তিথির মুখে হালকা হাসি থাকলেও পূর্ণির মুখে হাসির রেখা নেই। সে তার চিন্তায় মত্ব আছে ভাবছে জীবনটাকে আবার কিভাবে সাজাবে। কিভাবে একা সে একজনের দায়িত্ব নিবে! ভাবছে আর কতদিন তিথির সাথে থেকে থেকে তার টা খাবে তার‌ কাপড়-চোপড় ব্যাবহার করবে। ইদানিং পূর্ণিকের নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হয়। পূর্ণির ইচ্ছে করে আবার আগেের মতো করে বাচঁতে তবে আগের মতো প্রাণচ্ছল ভাবে জীবনটাকে উপভোগ করতে পারবেনা পূর্ণি।
কারন তার পূর্ণিমা নামক অধ্যায়ের চাঁদটা আস্তে আস্তে অমাবস্যায় ঢেকে যাওয়া চাঁদে পরিণত হচ্ছে।
পূর্ণির ভাবনার মাঝেই কেউ পূর্ণিকে বলে উঠলো।

” হেই তুমি কোন পক্ষের বরপক্ষ নাকি‌ কনেপক্ষ!দেখেতো মনে হয়না বিয়ে বাড়িতে এসেছো!মনে হয় শোকসভায় এসেছো এমন ভাবে আসছো!মুখে তো কোন মেকাপই নাই?
এই তুমি সত্যি করে বলোতো তুমি এখানে কি করছো,কোন পক্ষের নাকি তুমি‌‌ এখানে ফ্রীতে এসেছো বিয়ে খাওয়ার জন্য!(ভ্রু কুচঁকে,গম্ভীর গলায়)

কারো এমন গম্ভীর গলার স্বর শুনে চোখ তুলে সামনে তাকালো পূর্ণি। হলদে সবুজ রঙা পান্জাবি পড়া একটা ছেলে ভ্রু কুচঁকে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
পূর্ণি মুখটাকে ছোট বানিয়ে ফেলল। সে বিয়ে বাড়িতে এসেছে তবে সে জানেনা সে কোন পক্ষের হয়ে এখানে এসেছে।
জানবে কি করে সেতো তিথির সাথে এসেছে।বোধহয় কনেপক্ষই হবে হয়তো।

#ভলবে,,