প্রিয়োসিনী পর্ব-২৫

0
384

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_২৫
-পাগলের প্রলাপ শোনার জন্য সময় এবং মন দুটোই লাগে।প্রশ্ন যদি করো,আমার মন নেই বলছো?
উওরে বলবো মনের খবর জানি না।কারন তোমার মন অবধি আমি এখনো পৌছাতেই পারি নি।তবে সময়ের ব্যাপ্যারটা ঠিক ধরতে পেরেছি।তোমার সময় নেই কিংবা সময় হয় না নতুবা তুমি চাও না।
ইশার এমন কথায় আমান মৃদু হাসে,
-আমার মনের খবর রাখতে চাও?
ইশা গলাটা অস্বাভাবিক করে উওর দেয়
-আজকাল তো নিজের মনেরই খবর রাখা হয় না।দ্বিতীয় ব্যক্তির মনের খবর নেয়া সে তো এভারেস্ট অভিযানের মতো কঠিন মনে হয় আমার কাছে।তবুও এভারেস্ট জয়ের ইচ্ছেটাতো বরাবরই ছিলো আমার…….
আমান ইশার পাশে মেডিসিনের বাটিটা এগিয়ে দিতে দিতে বলে উঠে,
-আমার মন অব্দি তুমি কখনো পৌছাতে পারবে না ইশা।আমার মন তার নিজস্ব ঠিকানায় তোমাকে অনেক আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে।এখন হাজার চাইলেও সেখানে তোমার ঠায় হবে না।
-কখনোই না?
-উহু।তবে তুমি আমার বন্ধু হবে।তোমার সুখ দুঃখে পাশে থাকবো। আশা করি তুমি এতটুকুতেই খুশি থাকবে।এর চেয়ে বেশি কিছু চাইবে না
-চাইবো না।
ইশা আর কিছু বলে না।আমান বাটিতে সব গুলো ঔষুধ খুলে দিয়েছে।ইশা সবগুলো একসাথে খেয়ে নেয়।
আমান পানি এগিয়ে দেয়,
-কি করো…গলায় বাঁধবে তো।
-কিছু হবে না।কৌ মাছের প্রাণ আমার এতো উঁচু থেকে পড়েও যখন মরিনি এভাবে তো মরার প্রশ্নয় উঠে না।বিধাতা হয়তো আমায় মৃত্যুর চেয়ে ভয়ংকর কোনো শাস্তি দিতে চান।
আমান জোর করে হাসার চেষ্টা করে,ইশা মুখ বাকিয়ে উওর দেয়,
-কোথায় হাসা উচিৎ আর কোথায় কান্না করা উচিৎ তুমি সেটাও ভুলে গেছো।অকালে এমন দেউলিয়া হলে সমস্যা।

আমান মুখ কালো করে নেয়।

হাসপাতালে আজকে ইশার নবম দিন।শরীরে অনেক ক্ষয়ক্ষত থাকলেও অন্যদিনের চেয়ে কিছুটা সুস্থ সে।রাতের খাবার খেতে খেতে দুজন গল্প করছিলো।আজকে রাতে আমান আর জিনাত সিকদার হাসপাতালে থাকবে।তিনি এখনো পৌঁছান নি।আমান একাই আছে।
তিয়াশ রেগুলার চেকআপে আসে।ইশাকে কথা বলতে দেখে মুচকি হাসি দেয়,
-কেমন আছো ইশা?
-আগের চেয়ে ভালো।
-হুম্ম খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেবো তোমায়। বাড়ি যেতে পারবে…..তবে আশা করি এমন কান্ড আর কখনো ঘটাবে না
-ঘটাবো না প্রমিস।কবে ছাড়বেন?
-এই ধরো কাল পরশু।

ইশা একটু মুখ কালো করে উওর দেয়,
-বাড়ি ছেড়ে দেবেন ভাইয়া কিন্ত আমি তো সুস্থ হইনি।
তিয়াশ একটু উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে,
-কেন তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে ইশা?
-পা তো নাড়াতে পাড়ছি না…ঠিক হবো না আমি।হাটতে যে পাড়ি না।এভাবে অন্যের হিল্লায় থাকতে কষ্ট হয় তো।

মুহূর্তেই তিয়াশের মুখটা ফ্যাক্যাশে হয়ে যায়।আমান আর তিয়াশ একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে।তখনই হুট করে
জিনাত সিকদার উপস্থিত হয়,সঙ্গে ইমতিয়াজ সিকদার।
-কেমন আছো আম্মা?শরীর ভালো তো?
ইশা মুখে একটা হাসি এনে বলে,
-ঠিক আছি আব্বা শুধু পা নাড়তে পারি না।নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়।পিঠে ব্যাথ্যা
-সব ঠিক হয়ে যাবে আম্মা চিন্তা করিও না।

ইমতিয়াজ সিকদার ইশার পাশে গিয়ে বসে।আমান চেয়ার টেনে জিনাত সিকদারকে বসিয়ে দেয়।তিয়াশ তখনো সেখানে দাড়ানো।তিয়াশকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইমতিয়াজ সিকদার বলে উঠে
-কিছু বলবা বাবা?কোনো সমস্যা?
-না তেমন কিছু না।একটু কথা ছিলো।
-বলো না?

তিয়াশ একটু অস্বস্তিতে পড়ে যায়।
-না থাক পরে বলবো।আমি বাড়ি যাচ্ছি আঙ্কেল।কোনো সমস্যা হলে জানাবেন।আমি চলে আসবো।

তিয়াশ বেড়িয়ে যায়।নোহাকে বিয়ের প্রস্তাবটা সে আজো দিতে পারলো না।এটা বিয়ের কথা বলার মতো উপযুক্ত সময় নয়।কিন্তু বাড়ি থেকে বিয়ে বিয়ে করে মা কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে।এদিকে নোহাকে ছাড়া তারও কষ্ট হচ্ছে।ইসরাককে জানাতে হবে।কিন্তু ইসরাককে বলারও সাহস হচ্ছে না তার।যদি খারাপ কিছু মনে করে বসে!!!
_________
জিনাত সিকদার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।ইশার চুল এলোমেলো
-চুল গুলো বেঁধে দিই!
-দাও আম্মা
-(..)
-আম্মা
-নওরিন আসে নাই?ও কি আমারে মাফ করবে না?বড্ড কষ্ট হয়।আফসোস হয়….কেন করলাম এইসব? কার জন্য করলাম?সবচেয়ে কাছের মানুষগুলারে কষ্ট দিলাম।
ইমতিয়াজ সিকদার মেয়েকে থামিয়ে দেন,
-এখন এইসব বলার কি দরকার!থামো না আম্মা।
জিনাত সিকদার চোখের ইশার স্বামীকে থামিয়ে দেন।”ওরে বলতে দেন”
-নওরিনকে একবার আসতে বলবা আম্মা একটু দেখবো।
-ও আসছিলো সকালে তুই তখন ঘুমে
-আমারে ডাকে নাই কেন?রেগে আছে আমার উপর?
-রাগে আছে কি না জানি না…শুধু জানি নওরিনের জন্যই তুই বেঁচে আছিস।তোকে রক্ত দিয়েছে মেয়েটা।মাফ না করলে দিতো না হয়তো।
-তুমি ওরে চিনো না আম্মা।ও কখনো আমারে ক্ষমা করবে না।আমি জানি।সব রাগ অভিমান নিজের মধ্যে চেপে রাখবে।আমার প্রয়োজনে সাড়া দিবে তবে ক্ষমা করবে না।কিন্তু কখনো বলবেও না
-তুই ওর মানে আঘাত করছিস।মেয়ে মানুষের মান ছাড়া কি আছে?সন্মানই তো সবচেয়ে বড় ধন।মেয়েটা অপমানে মাটিতে মিশে গিয়েছিলো

ইশা মাথা নিচু করে নেয়।
-লজ্জা হচ্ছে।
জিনাত সিকদার ইশার মুখটা তুলে বলে
-অনুতাপ হওয়া ভালো।আফসোস অনুতাপ নিয়ে ক্ষমা চাইলে আল্লাহও ফিরায় না মাফ করে দেয়।আশা করি নওরিনও ফিরাবে না।তুই অন্যায় করেছিস।নত স্বীকার তো করতেই হবে।দুটো মন্দ কথা বললে শুনতে হবে।আত্নহত্যা সমাধান নয়।লোকের দয়ার পাত্রী হওয়া বড্ড অসম্মানের

ইমতিয়াজ সিকদার স্ত্রীর দিকে রাগী চোখে তাকান।
-এগুলো বলার কি খুব প্রয়োজন আছে?
–আমার সন্তানদের জীবনের পাঠ আমি শিখাবো।খারাপ সন্তানের মা আমি হতে চাই না।আমি সবসময় চেয়েছি সন্তানদের সুশিক্ষা দিতে।
ইমতিয়াজ সিকদার আর কোনো কথা বলেন না।
ইশা আমানকে বাড়ি চলে যেতে বলে।
-এতোগুলো মানুষের থাকার দরকার নেই আম্মা থাকলেই হবে।আমানভাই আব্বারে নিয়া বাড়ি যাও।
আমান মাথা নাড়ে।কিছুক্ষণ থাকার পর ইমতিয়াজ সিকদারকে নিয়ে বাড়ি চলে যায়।
হাসপাতালে আজকে শুধু ইশা আর জিনাত সিকদার থাকবে।
__________________
নওরিন বাড়িতে একা আছে।তিশা আর মেজো ভাই বাবার বাড়ি গেছে।আর বাকি সদস্যারা বড় ভাইয়ের শ্বশুড় বাড়িতে।আজ দুপুরেই নওরিনের বড়ভাইয়ের শ্বশুড় মারা গিয়েছে।নওরিনকে যেতে বললে সে যেতে চায় না।এই কয়দিনের ধকলে সে কাহিল।একটু রেস্ট দরকার। বাবা মা ও আর নওরিনকে জোড় করে নি।নওরিন বাসায় একা থাকবে শুনে নোহা চলে আসে এ বাড়িতে।সিকদার বাড়িতে তার মন টিকছে না।সঙ্গে ইসরাক এসেছে ।
ইসরাক নোহাকে নওরিনের বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে দরজা থেকেই চলে যেতে নিলে নওরিন পেছন থেকে ডেকে উঠে,
-ভেতরে আসুন
-তুমি ডাকলে আমায়?
-না আমার পৃত আত্মা ডেকেছে আপনাকে।ভেতরে আসুন।আত্মার ডাক শুনতে হয়। না হলে হায় লাগে
ইসরাক ভ্রু কুচকে ভেতরে যায়।
-চা খাবেন না কফি?
-এগুলো খাওয়াতে ডেকেছো?
-আরো কিছু খেতে চান বুঝি?
-তোমাকে!
-রাক্ষস আপনি!
ইসরাক হেসে দেয়
-আমি যাই…কিছু খাবো না!
নওরিন একটু থেমে মাথা নিচু করে বলে উঠে,
-থেকে যান না….!
ইসরাক নওরিনের দিকে তাকায়।নওরিন নিচের দিকে তাকিয়ে নখ খুটলাচ্ছে,
-কোথায় থাকার আবদার করলে?তোমার বাড়িতে না কি তোমার জীবনে?
নওরিন একটু ভেবে উওর দেয়,
-আপাতোতো বাড়িতেই থাকুন পরেরটা পরে ভাবা যাবে।

ইসরাক কেন যেন নওরিনের আবদারটা ফেলতে পারে না।
-জামা কাপড় দাও গোসল করবো।ভীষণ মাথা ধরেছে…..
ইসরাককে পড়ার জন্য কাপড় দিয়ে নওরিন টেবিলে খাবার বেড়ে দেয়।
নোহা ইসরাক নওরিন তিনজনই খেতে বসে।তিনজনই আলাদা প্রকৃতির মানুষ একে অপরের মাঝে সুখ খুঁজা খুজি করছে।হৃদয়ে হাজার ক্ষত থাকলেও তিনজনের মুখেই হাসি।ইস্ কি সুখ।

খাওয়া শেষ করে নোহা ঘরে চলে যায়।তিয়াশ বার বার ফোন করছে।নোহা কাটছে।তিয়াশ নাছর বান্দাদের মতো নোহার কল কাটার সাথে তালে তাল মিলিয়ে একটার পর একটা কল দিয়েই যাচ্ছে।
“ইস্ কি নির্লজ্জ লোক।একেবারে জ্ঞান বুদ্ধিহীন”
নোহা দ্রুত খাওয়া শেষ করে একরকম ছুট দিয়েই ঘরে চলে যায়।
ইসরাক একটু বিরক্ত হয় কিন্তু কোনো প্রশ্ন করে না….।

খাওয়া শেষ করে নওরিন উঠে দাড়ায়।ইসরাককে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
-খেতে ইচ্ছে না করলে খেতে হবে না। খাবার রেখে ভেতরে যান।আমি সব ঘুছিয়ে আসছি।

ইসরাক প্লেটে খাবার নিয়ে কয়েকবার মুখে দিয়ে বাঁকি খাবার নিয়ে নাড়াচারা করছিলো
-কোন ঘরে যাবো?
-যেই ঘরে ইচ্ছে সেই ঘরে যান।মন চাইলে আমার ঘরেও যেতে পারেন আপনার ইচ্ছে….
ইসরাক মুচকি হাসে..
-যাবো তার আগে তোমায় একটু হেল্প করি
-লাগবে না।
-করি না।
ইসরাক আর নওরিন মিলে টেবিলটা গুছিয়ে রাখে।রান্না ঘরে একসাথে থালাবাটি ধুয়ে রান্না ঘর গুছিয়ে নেয়।
তারপর দুইজন একসাথে ঘরে যায়।
ইসরাক ঘরে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়,
-শরীর খারাপ লাগছে?
-না তো
-হু
-নওরিন
-হু
-তোমার রাগ হয় না আমাদের উপর?
নওরিন ইসরাকের দিকে তাকায়।কিন্তু কিছু বলে না….
-ইশাকে রক্ত দিলে….ওকে ক্ষমা করে দিয়েছো?
-মিথ্যে বলবো না ইশা সিকদারকে হয়তো আমি কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত ও দিয়েছে।খুব কাছের ছিলো তো তাই ধাক্কাটা নিতে পারি নি।কিন্তু এখন
আমার মনটা না দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে একমন বলে ক্ষমা করে দে আরেক মন বলে দিস না।তবে আমি কখনো ইশার খারাপ চাইবো না।ক্ষমা করি বা না করি।
-আর বাকিদের ক্ষেত্রে কি বলবে!
-আমান সিকদার আমার জীবনের কলঙ্ক ভবিষ্যতে উনাকে এড়িয়ে চলবো।ক্ষমার কথা জানি না।ঘেন্না লাগে ওনার সাথে কথা বলতে।
-আর আমি?

নওরিন ইসরাকের দিকে তাকায়।একপলক দেখে চোখ ফিরিয়ে নেয়,হাটা দেয় জ্বানালার কাছে।
-ইসরাক সিকদার আমার স্বামী আমি হয়তো তাকে ত্যাগ করতে পারবোনা।বাঙালি মেয়ে তো স্বামী যে বড্ড প্রিয়ো হয়!খুনি, মাতাল,কসাই,গাঁজাখোর নেশা খোর যাই হোকনা কেন স্বামীর সংসার ছাড়তে মন চায় না।যদিও আপনি তেমন নন!
তবে ক্ষমা করার প্রশ্নই আসে না কারণ আপনি তো ক্ষমাই চাননি।
ইসরাক মুচকি হাসে,
-তোমার মেজো ভাই চায় আমি তোমাকে ছেড়ে দেই।তোমার থেকে দূরে চলে যাই।আমি নাকি তোমার জীবনের অভিশাপ। তুমিও কি তাই চাও নওরিন?
নওরিন জানালার গ্রীলে হেলান দিয়ে ইসরাকের দিকে ফিরে তাকায়,
-কি মনে হয়।
-জানি না।আমি খুব খারাপ স্বামী আমি জানি।আমাকে হয় তো ক্ষমা করা যায় না তবুও আমি চেষ্টা করবো নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে।

নওরিন কিছু বলে না।একই ভাবে দাড়িয়ে থাকে ইসরাক একপা দুইপা করে নওরিনের দিকে এগিয়ে আসে।
থুতনিতে হাত রেখে নওরিনের মুখটা উচু করে ধরে।
“শুধু তোমাকেই ভাবতে মনেরই অজান্তে চোখের পাতা জলে ভিজে যায়
পোড়ামন বলে রাত নেমে এলে কতোদিন দেখিনি তোমায়”
নওরিন মুখ বাঁকিয়ে উওর দেয়
-রোজই তো দেখেন
-দিখি তবে এভাবে নয়।
কথা বলতে বলতে ইসরাক নওরিনের কপালে চুমু খায়।
হাতটা শক্ত করে ধরে,
–আমি বুঝিনি কখন তোমার মায়ায় এতোটা জড়িয়ে গেছি। যখন কাছে ছিলে তখন তোমার কদর বুঝিনি অবহেলা করেছি।কষ্ট দিয়েছি। আজ যখন দূরে চলে গেছো তখন বুঝতে পারছি তুমি কতো মূল্যবান ছিলে।তোমার ভাইকে কথা দিয়েছিলাম তোমার থেকে দূরে চলে যাবো।তোমার ভবিষ্যৎ জীবনে বাঁধা হবো না।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি পারবো না।যেদিন তুমি আমার থেকে দূরে চলে যাবে সেদিন এই ইসরাক সিকদারের মৃত্যু হবে!

কথাগুলো বলতে বলতে ইসরাক নওরিনকে জড়িয়ে কান্না করে দেয়।নওরিন ইসরাককে বিছানায় এনে বসায়।
-থামুন কি শুরু করলেন।
ইসরাক কান্না করেই যাচ্ছে
-এই যে স্বামী বাচ্চাদের মতো কেন করছেন।আমি কোথাও যাবো না
নওরিন অনুভব করে ইসরাকের নাক দিয়ে রক্ত আসছে।মুহূর্তের মধ্যেই ইসরাক নওরিনের গায়ে ঢলে পড়ে,
নওরিন প্রচন্ড জোরে চেচিয়ে উঠে,
-স্বামী শুনছেন?কি হলো আপনার!
___________
ইসরাককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।ভাইকে এভাবে সেন্সলেস হতে দেখে নোহা অসহায়ের মতো সর্ব প্রথম তিয়াশকে কল করে।তিয়াশ ই ইসরাককে হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করে।

নওরিন আজকে প্রথমবার ইসরাকের অসুস্থতা সম্পর্কে জানলো।নওরিনের গোটা দুনিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।এতো ন্যায় অন্যায়ের হিসাব নিকাশের মধ্যে সে কখনো যে ইসরাকে এতোটা আপন করে নিয়েছে তা তার নিজেরও জানা নেই।পৃথিবীর কোনো নারীই হয়তো স্বামীর দুঃসময়ে স্থির থাকতে পারবে না।স্বামী কারো গল্পের সবচেয়ে নিকৃষ্ট চরিত্র হলেও পরবে না।ইসরাককে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে।তিয়াশের মতে ইসরাকের ট্রিটমেন্ট আরো আগে শুরু করতে হতো।ইশার ঝামেলায় ইসরাক গুরুত্ব দেয়নি।সে নিজেও দেয় নি।

ইসরাককে আজকে প্রথম রেডিও থেরাপি দেওয়া হবে।এটা উপর ডিপেন্ড করবে নেক্সট কি ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন হবে।ইসরাক বিছানায় বসা।পাশেই নওরিন তাকে জড়িয়ে কাঁদছে।
-কাঁদো কেন?
-আমাকে কিছু জানানি কেন?
-তোমায় আর কষ্ট দিতে চাই না নওরিন। এমনিতেই অনেকটা দিয়ে ফেলেছি।
-এভাবে জানিয়ে আরো বেশি কষ্ট দিলেন
-কিছু হবে না আমার
-আমিও সেটাই চাই
-নওরিন আমি যদি মরে যাই আমাকে ক্ষমা করে দিও।তবে কথা দিচ্ছি আমি যদি বেঁচে থাকি তোমার সাথে করা সব অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত আমি করবো।দরকার পড়লে হৃদয়ের একাংশ দিয়ে হলেও তোমায় খুশি করবো।
ইসরাক নওরিনের কপালের সাথে কপাল ঠেকায়।নওরিন চোখ বন্ধ করে নেয়।
________
জিনাত সিকদার নামাজ ঘরে বসে নামাজে মগ্ন।আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছেন তিনি।একই হাসপাতালে তার হৃদয়ের দুইটা অংশ ভর্তি আছে।একজন যে কখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না,সারা জীবন অন্যের কাঁধে বোঝা হয়ে বাঁচবে। আরেকজন যে শরীরে এতো বড় একটা রোগ নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে।

চোখে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
“আল্লাহ আমাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিন।আমার কলিজার টুকরা দের পানাহ দান করুন”
বার বার একই দোয়া যপে যাচ্ছেন তিনি।নওরিন ও ওযু করে এসে শ্বাশুড়ির পায়ে বসে।
জিনাত সিকদার মনকে শক্ত করে নেয়।নওরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,
–আল্লাহ কাছে দোয়া করো।তিনি তোমার দোয়া রাখবেন।
নওরিন হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়,
-অপ্রয়োজনে অনেক কষ্ট পেয়েছো আশা করি খোদা তোমায় আর কষ্ট দিবে না।
কথাগুলো বলেই তিনি নওরিনকে বুকে টেনে নেন,
নওরিন শ্বাশুড়ির বুকে মুখ গুজে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।আজকে প্রথমবার তার জিনাত সিকদারকে শ্বাশুড়ি নয় মা মনে হচ্ছে….

চলবে……..