প্রিয়োসিনী পর্ব-৩৪ এবং শেষ পর্ব

0
489

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_৩৪(প্রথম অংশ)
সকাল সকাল সাগরের কলে ঘুম ভাঙ্গে ইসরাকের।এতো সকালে সগারের কল পেয়ে ভ্রু কুচকে তাকায় ইসরাক।কপালে বিরক্তের ভাজ।
কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নওরিন কথা বলে উঠে,ইসরাক আরেকবার ফোনের দিকে চোখ বুলায়।না এটা সাগরেরই নাম্বার।
-কাজী অফিসে আসুন। বিয়ের সাক্ষী হতে হবে আপনাকে।
ইসরাক থ হয়ে বসে থাকে মাথা ঠিক আছে এই মেয়ের?
ইসরাক ঘুম ঘুম গলায় প্রশ্ন করে,
-কার বিয়ে?কিসের বিয়ে….সকাল সকাল কি শুরু করলা!
-যার ফোন তার বিয়ে।
-মাথা ঠিক আছে তোমার নওরিন? পাগল হয়ে গেছো?
-আসুন। আসার সময় আইডি কার্ডটাও নিয়ে আসবেন…..যদি কোনো ঝামেলা হয় আর আপনাকে কিন্তু সাক্ষী দিতে হবে।
-তুমি কি আমার সাথে মজা করছো?
-নাহ্ আপনি তো বলেছেন আমার সুখের জন্য সব পারেন তাই আপনার কাছে আবদার করলাম এখন আসুন।আসলে বিয়েটা সাগরের বাড়িতে কেউ মানছে না।মেজো খালা তো বলেই দিয়েছে এই বিয়ে করলে নাকি তাজ্য করবে।কিন্তু সাগর এই সবের পরোয়া করে না।তার কাছে ভালোবাসাটাই সব।আমিও তার সিদ্ধান্তে বাঁধা দেই নি। তাই বাধ্য হয়ে কাজী অফিসেই বিয়েটা হচ্ছে।বিয়ে করে একবারে বাড়ি গেলে কেউ ফেলে দিতে পারবে না।আর ফেলে দিলেও কি…আমার বিশ্বাস সাগর তার বউকে ঠিকিই যোগ্য সন্মান দেবে।কিন্তু আপনি প্লিজ আসুন এখানে আপনার থাকাটা জরুরি।আপনাকেই একমাত্র পাত্রীপক্ষ হতে হবে।

নওরিন ইসরাককে ঠিকানা দিয়ে দিয়ে কলটা কেটে দেয়।ইসরাক বার কয়েক কল ব্যাক করলেও অপর পাশ থেকে কোনো রেসপন্স নেই।ইসরাক বাধ্য হয়েই কোনো রকমে উঠে ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় পড়ে ছুট লাগায় যাওয়ার জন্য….দ্রুত পৌছাতে হবে তাকে।

মাঝের কয়েকমাস নওরিনের সাথে তার যোগাযোগ ছিলো না বললেই চলে।নওরিন কলেজে আসলেও ইসরাককে ইগনোর করে চলতো।সামনে নওরিনের পরীক্ষা এটা ভেবে ইসরাকও তাকে সম্পর্কের এই সব জটিলতায় টানতে চায় নি।নওরিনকে সময় দিয়েছে।সবটা বুঝে নিতে…..তবে নওরিনের এই দূরত্ব তাকে বড্ড পুড়িয়েছে।তবে ইসরাক সেটা মেনে নিয়েছে। এর মাঝে সে নিবিড়ের সাথে সরাসরি কথা বলেছে।নিবিড় আর তার মাঝে যেই মিসআন্ডারস্টান্ডিং গুলো ছিলো তা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।

তবে নিবিড়ের একটায় কথা ছিলো নওরিনের পড়াশোনার কোনো ক্ষতি করা যাবে না।তাই সে নিজেও চায় অন্ততঃ পরিক্ষা পর্যন্ত ইসরাকের সাথে দূরত্ব বজাই থাক।আর বাঁকিটা নওরিনের ইচ্ছে নওরিন যা চাইবে তাই সে মেনে নেবে।

ইসরাক ভেবে পায় না হটাৎ এই মেয়ের মাথায় কি ভূত চাপলো….ডিভোর্স নিয়েও সে কনফিউজড। কারণ একটা সইয়ে কখনো ডিভোর্স হয় না।কাগজটা আদও ডিভোর্স পেপার ছিলো কি না তারও ঠিক নেই।
নওরিন কি চাইছে সেটা ইসরাকের মাথায় ঢুকছে না।
সে কি সাগরকে বিয়ে করতে চাইছে?কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব? আর যদি নাই হয় তাহলে কাজী অফিসে কেন ডাকলো?
ইসরাক সজোরে গাড়ির স্টিয়ারিং এ বাড়ি দেয়।রাগে গা জ্বলছে তার।ভেবেছিলো নওরিনকে সময় দিলে সে হয়তো সবটা বুঝে নেবে।কিন্তু এই মেয়ের পাগলামো তো বেড়েই চলেছে।আর সহ্য হচ্ছে না তার….।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে একবারে তুলে নিয়ে আসি।কিন্তু এমনটা করলে আবারও নওরিনকে অসন্মান করা হবে।
______________
মাঝে অনেকটা সময় কেটে গেছে।আমান এখন অনেকটা ম্যাচিউর।পারিবারিক ব্যবসার কাজে হাত লাগিয়েছে সে।আজ আমান ইউকে চলে যাবে।সেখানে নতুন একটা ব্রান্ঞ্চ ওপেন হবে।সেখানের সবটা সে নিজেই সামলাবে।ইশা এখন মোটামুটি সুস্থ হবে সে পুরোপুরি হাটতে পারে না।আমান রেডি হচ্ছে।ইশা বিছানায় বসে বসে দেখছে।
বিছানার উপর দুটো টিকিট রাখা।ইমতিয়াজ চৌধুরী দুজনরেই যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
আমান ইশার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে উঠে
-রেডি হবি না?
ইশা একগাল হেসে বলে,
-কাকে নিয়ে যেতে চাও নিজের বউকে নাকি বউয়ে রূপে থাকা বন্ধুকে?বলো?তোমার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে আমার যাওয়া না যাওয়া….
আমান ফোস করে একটা শ্বাস ফেলে বলে উঠে,
-সারা জীবনের বন্ধুকে…..আপাতোতো এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।
-আপাতোতো?
-হুম্ম….তোকে কখনো আমি সেই চোখে দেখিনি। তিন বার কবুল বললেই কি আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে?
ইশা মুখ কালো করে নেয়,
-আমি যাবো না।এই বন্ধত্বটা আমায় কষ্ট দেয় আমান।তুমি চলে যাও।আমি অপেক্ষা করবো তুমি কখনো আমাকে ভালোবেসে ফিরে আসবে এই অপেক্ষা করবো।জানি অপেক্ষা কষ্টের তবুও আপেক্ষা করবো।নিজের অধিকার পাওয়ার অপেক্ষা।আমার স্বপ্ন ছিলো তোমায় বিয়ে করা বিয়ে তো করে নিয়েছি তবে স্বামী হিসেবে কখনো পাই নি।বলতে গেলে সবকিছুই আমার পাওয়া হয়ে গেছে কিন্তু প্রকৃত পক্ষে কিছুই পাই নি আমি।কাছে থেকে এভাবে দূরে থাকার চেয়ে একেবারে দূরত্বটাই ভালো।কম পোড়াবে….
-আই আম সরি…
আমান তৈরি হয়ে নিচে চলে আসে।ব্যাগ পত্র গুছিয়ে গাড়িতে তোলা হয়।ইমতিয়াজ সিকদার সেখানেই দাঁড়ানো ছিলো।আমানকে একা যেতে দেখে চেঁচিয়ে উঠে,
-ইশা কোথায় ও যাবে না?আর কতো সময় লাগবে রেডি হতে শুনি?তুমি একা নেমে এলে কেন আমান?

ইশা পেছন পেছন এসে বাবাকে থামিয়ে দেয়,
-আমি যাবো না বাবা।আমি তোমাদের সাথে এখানেই থাকবো।শুধু শুধু ওখানে গিয়ে একা থাকতে কষ্ট হবে।
ইমতিয়াজ সিকদার আরো কিছু বলতে চাইলে ইশা বাবাকে থামিয়ে দেয়।ইমতিয়াজ সিকদার অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে মেয়ের দিকে।

জিনাত সিকদার মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
-এভাবে থাকতে পারবি কষ্ট হবে না?
-যেভাবে আছি তার চেয়ে কম কষ্ট হবে।আমি অপেক্ষা করবো ওর ফিরে আসার।আমার বিশ্বাস হয়তো ও ফিরে আসবে।না ফিরলে বুঝবো ভুল পথে ভুল জিনিস চেয়েছি,তার শাস্তি এটা।

আমান একটা শুকনা কাশি দেয়,
-আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে এবার যেতে হবে।
আমান ইমতিয়াজ সিকদারকে জড়িয়ে ধরে,দুজনকেই সালাম করে বেরিয়ে যায়।যেতে যেতে ইশাকে হাত নাড়ে বিদায় নেয়।
ইশা আমানের দিকে তাকিয়ে মলিন একটা হাসি দেয়।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার সব কিছু পেয়েও না পাওয়াই থেকে গেলো।এখন তাকে অপেক্ষা করতে হবে।ভালোবেসে অনিশ্চিত একটা জীবনকে সে বেছে নিয়েছিলো।সেই অনিশ্চয়তার টানা পোড়েনেই হয়তো তাকে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে হবে।নয়তো কোনো একদিন আমান নিজে থেকেই এসে দাঁড়াবে তার দরজায়।হাত বাড়িয়ে গ্রহন করে নেবে তাকে।

তবে এই মুহূর্তে অপেক্ষার চেয়ে বড় শাস্তি আর কিছু নয়…
সত্যি বলতে চাওয়া পওয়া প্রত্যাশা প্রত্যেকটি মানুষের জীবনেই থাকে।চাওয়ার মাত্রা বেশি হবে পাওনা নিজে থেকেই ধরা দেয়।যদি হাজার চাওয়ার পর যদি সেই পাওয়না ধরা না দেয় তবে মানতে হবে তা কখনো তোমার নসিবেই ছিলো না।তবে, ভুল পথ অবলম্বন করে যদি সেই পাওনা পর্যন্ত পৌছাতে চাও তবে দিন শেষে পাওনার খাতা শূন্যতেই থেমে যাবে…….
________________
নোহা আর তিয়াশ এখন তিয়াশের ফ্লাটে শিফট করে গেছে।এখান থেকে তার কলেজ আর তিয়াশের হাসপাতাল দুটোই কাছে হবে।মেডিকেল এ্যাডমিশনের প্রিপারেশন নিতে ভীষন ব্যস্ত সে।তবে হাজার ব্যস্ততার মাঝে তাকে একটু শান্তি দেওয়ার জন্য তিয়াশ নামক একজন স্বামী আছে।যখনই নোহার কোনো সাহায্যে প্রয়োজন হয়, কোথা থেকে তিয়াশ উড়ে এসে হাজির হয়।ঝড়ের মতো এসে সব ঝুট ঝামেলাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়।দুজন মিলে টোনা টুনির সংসার দিব্যি সামলে নিচ্ছে। দিন শেষে এমন সুখই তো নোহা চেয়েছিলো…….এমন একজন পুরুষ।
বাচ্চা কাচ্চার চিন্তা না হয় আরো কিছু দিন পর করা যাবে……আপাতোতো তারা নিজেদের গুছিয়ে নিতে,আর একে অপরকে সামলাতে ব্যস্ত।
____________

ইসরাক একরক ফুল স্প্রিডে গাড়ি চালিয়ে নিওরিনের বলা ঠিকানায় পৌছে যায়।নওরিন একটা কাজী অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।নওরিন একটা হালকা গোলাপি শাড়ি পড়েছে তার সাথে হালকা সাজ।কি সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে পরীর মতো।ইসরাক রোজই তাকে দেখে।তার রূপে রোজই মুগ্ধ হয়।রোজই নুতন করে তার প্রেমে পড়ে। ইসরাককে দেখে সে হাত নাড়ায়।

ইসরাক দ্রুত পায়ে তার দিকে এগিয়ে যায়।ইসরাক দুম করে এসে নওরিনকে জড়িয়ে ধরে।
-তুমি কি আমার সাথে মজা করছো নওরিন?তোমার মাথা ঠিক আছে?কিসের বিয়ে!

নওরিন ইসরাককে ঠেলে সরিয়ে দেয়,
-কি করছেন?এমন দুম দাম করে জড়িয়ে ধরছেন লজ্জা লাগে না?
ইসরাক থমথমে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে,
-বাবা এই ক দিনে তো তোমার অনেক শক্তি বেড়েছে দেখছি।সে যাই হোক নিজের বউ কে ধরতে লজ্জা কিসের?
-কিসের বউ? আমাকে না আপনি তালাক দিয়ে দিলেন…ভুলে গেলেন?
-উহু,হুদাই,বিচ্ছেদ এতোই সোজা?খোদাই প্রদত্ত পবিত্র কালেমা পড়ে তোমাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেছি।বিয়ের বন্ধন ভাঙ্গা এতো সোজা নয় নওরিন।
-চুপ করুন তো।
-মজা করার জন্য ডাকছো?
-আমাকে কি পাগল মনে হয়।নাকি জোকার মনে হয় সব সময় মজা দিবো?আমি সিরিয়াস ইসরাক সিকদার।
-বরের নাম ধরে ডাকো কেন বউ গুরুজনরা বিয়াদব বলবে।
নওরিন মুখ বাঁকায়,
পেছন থেকে নিবিড় আর সাগর বেরিয়ে আসে।
নিবিড় এসে ইসরাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
-নওরিন তোমাকে সব জানিয়েছে?এই বিয়েতে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?পরে কোনো ঝামেলা করবে না তো?তোমাদের সিকদারদের বিশ্বাস নেই কখন কি করো!
এবার ইসরাকের গলা শুকিয়ে যায়
নিবিড়ও তো একই কথা বলছে।সত্যিই কি তবে তার বউকে অন্যকারো সাথে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে?এতো বড় অনাচার। সে কিছুতেই মানবে না।

ইসরাক কোনো কথা না বলেই নওরিনকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে
-আমি জীবিত থাকতে এটা হতে দেবো না।বিয়ে তো হবেই না ।আর করতে চাইলে নওরিন আমি মরে যাচ্ছি আমার লাশের উপর দিয়া গিয়া বিয়ে করো!
নওরিন নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়,
-দুইজন ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করতে চাইছেন লজ্জা করে না আপনার?কিসের লাশ আশ্চর্য।আমি তো ভাবলাম আপনি খুশি হবেন।
ইসরাক সটাং হয়ে দাঁড়িয়ে যায়,
-ভালোবাসো?আচ্ছা নওরিন আমি কি এতোই খারাপ?মানছি আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি…তোমাকে কষ্ট দেয়েছি অপমান করেছি তার পেছনে কারন ছিলো….আমি যা করেছি ভুল বুঝে করেছি।আমার চোখের সামনে সব প্রমান ছিলো আমি কি করে সেগুলোকে অগ্রাহ্য করতাম বলো?তুমি নিজেও তো কখনো কিছু বলো নি?দোষ কি আমার একার?আচ্ছা মানলাম সব দোষ আমার….আমার অন্যায়ের অনেক তো শাস্তি দিলে আর কতো পুড়াবে বলো?

নওরিন একটু অবাক হয়ে বলে
-কোথায় শাস্তি দিলাম?
-এই দূরত্বটা কি কম শাস্তি? আগুনের মতো জ্বলছি।কাছে থেকে নিজের বউয়ের সাথে কথা বলতে পারছি না।
-কিসের কষ্ট?আপনি তো আমাকে ভালোই বাসেন নি?
-কে বলেছে?আমাদের সম্পর্কটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছিলো।তবে আমি কখনো এই সম্পর্কটা অস্বীকার করি নি।এতো কিছু এক্সপ্লেইন করতে পারবো না।শুধু বিশ্বাস করো এই পৃথিবীতে এই মুহূর্তে আমার থেকে বেশি আর কেউ তোমাকে ভালোবাসে না।
ইসরাক হাটু গেড়ে নওরিনের সামনে বসে পড়ে,
-প্লিজ ক্ষমা করে দাও…আচ্ছা ক্ষমা না করো আরো শাস্তি দাও। যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেবো।প্লিজ আমাকে ত্যাগ করো না।
ইসরাক কথা বলতে বলতে কেঁদে দেয়,

নওরিন কি বলবে ভেবে পায় না।
তবে মনে মনে সে খুশি,
নিজেকে দেওয়া কথা সে রেখেছে “ইসরাক সিকদারের চোখের পানি নাকের পানি এক করেই ছেড়েছে….কিন্তু কি ভাবে?ওমা ইসরাক কি তবে ভাবছে সে সাগরকে বিয়ে করছে?আশ্চর্য লোক তো….কিছুই কি নিজে থেকে বুঝে না?সবকিছুই কি বলে বলে বুঝিয়ে দিতে হবে?”
নওরিন কপালে হাত দেয়।

তার মাঝেই সাগর চেচিয়ে উঠে,
-নওরিন প্লিজ চলে আসো।এবার তো ফ্লাইটের দেড়ি হয়ে যাবে।বিয়ে শেষ করে ঠিক সময়ের মধ্যে পৌছাতে হবে

সাগর কথাটা বলা মাত্র ইসরাক উঠে দাঁড়ায়। রক্ত চক্ষু করে সাগরের দিকে তাকায়।ছুটে যায় সাগরকে আঘাত করার জন্য সেই মুহূর্তে কোথা থেকে স্নেহা এসে ইসরাকের সামনে দাঁড়ায়।
-ভাইয়া প্লিজ।
ইসরাক চোখ বুলায়। স্নেহার পড়নে বউয়ের পোশাক।লাল শাড়ি সাথে গাঢ় লিপস্টিক। তেমন গয়না না পড়লেও দেখতে বউ বউ লাগছে।

ইসরাকের চক্ষুচড়ক গাছ।নওরিনের দিকে তাকায়।নওরিন মুচকি হেসে জানায়।
-ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে।মেজো খালা মানছে না তাই আমিই বলেছি এভাবে বিয়েটা সেড়ে ফেলতে।যদিও বিয়ে হয়ে গেলেও রিস্ক থেকে যায়।মেজো খালা কোনো না কোনো ঝামেলা করে হওয়া বিয়েও ভেঙ্গে দিতে পারে তাই সাগর আজই স্নেহাকে বিয়ে করে বিদেশ চলে যাবে।ঐখানে কিছুদিন থাকার পর সবটা শান্ত হলে ফিরবে।আর হ্যা স্নেহার আপন বলতে বর্তমানে একমাত্র আপনিই আছেন যে ওর পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকতে পারবে তাই আপনাকে আসতে বলেছি।প্লিজ না করবেন না সাগর ওকে ভালো রাখবে দয়া করে মেনে নিন।

ইসরাক কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।সে বর্তমানে শকে আছে।ভেবেছিলো কি আর ঘটলি কি?তার চেয়ে বড় কথা স্নেহা আর সাগর সম্পর্ক সেটা তো কল্পনাতেও সে ভাবে নি।তবুও সে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

যেমনটা ভেবেছিলো তেমন ভয়ংকর কিছু ঘটছে না এটাই অনেক।
সব বোঝা পড়া শেষে সাগর আর স্নেহার বিয়েটা হয়ে যায়।
স্নেহার পক্ষ থেকে সাক্ষী দেয় নওরিন আর ইসরাক।


বিয়ে শেষ করে সাগর আর স্নেহাকে নিয়ে ইসরাক আর নওরিন রওনা হয় সিকদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
স্নেহা বিদেশ যাওয়ার আগে একবার জিনাত সিকদারের সাথে দেখা করতে চায়।
বাড়ি গিয়ে ইসরাক মাকে সব বুঝিয়ে বলে।জিনাত সিকদার তাদের দোয়া করে দেয়।
জিনাত সিকদারকে সালাম করে তারা রওনা হয় এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য। স্নেহাকে কয়েকবার মায়ের সাথে দেখা করতে বললও সে মায়ের সাথে দেখা না করেই চলে যায়।
তারা পাড়ি জমায় নতুন ঠিকানার উদ্দেশ্যে।সেখানে নতুন জীবন শুরু করবে তারা।


সাগর আর স্নেহার সাথে সাথে নওরিনও সিকদার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।ইসরাক বাঁধা দিলেও সে মানে না।ইসরাকের প্রতি তার অনুভূতিগুলো নিয়ে তার মনে এখনো বেশ কিছু সংকোচ এখনো রয়ে গেছে।ভালোবাসাটা সে অনুভব করতে পারে না।এতোগুলা মাসের দূরত্ব ও তাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছে দিতে পারছে না।
নওরিন ফিরে আসতে চাইলে জিনাত সিকদার তার হাত ধরে কান্না কাটি করে।আপাতোতো সে বাড়ির একমাত্র বউ।ইশা তো তার পায়ে পরে যায়।তবুও নওরিন কেন যেন তার মনকে মানাতে পারছে না।সে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।

ইসরাকও সমস্যাটা বুঝতে পরেছে।এখন এর একটা সমাধান করা উচিৎ……নওরিনকে বুঝাতে হবে তার ভালোবাসাটা।তারপরও যদি সে নিজে অনুভূতি গুলো অস্বীকার করে তাহলে নওরিনকে সে একেবারে মুক্তি দিয়ে দেবে।
___________
ভোর ভোর উঠেই নওরিন ফজরের নামাজটা পড়ে নেয়।আজকে তার পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোবে।চিন্তায় হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তার।পরীক্ষা খুব ভালো দিয়েছে এমন নয়, তাই তো চিন্তায় এই অবস্থা।
নওরিন নামাজ পড়ে কিছুসময় জায়নামাজে বসেই দোয়া করে।তারপর উঠে জ্বানালার পাশে দাঁড়ায়। ইসরাক আজকে আসে নি।এই ক মাস সে রোজ নামাজ পড়ে পর্দা সরালেই ইসরাকের মুখটা দেখতে পেতো।লোকটা রোজ এখানে এসে দাঁড়াতো। একবার চোখাচোখি হতেই সে আবার ফিরে যেতো। আজ না থাকাতে নওরিনের বুকের ভেতরটা কেমন করে যেন করে উঠে।

কেন নেই লোকটা….

এইসব ভাবতে ভাবতেই নওরিনের ফোনে কল আসে তিয়াশ কল করেছে।নওরিন কল রিসিভ করতেই,তিয়াশ উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে,
– নওরিন প্লিজ দ্রুত চলে এসো……

চলবে……….

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_৩৪(দ্বিতীয় অংশ)
…অন্তিম পর্ব….
হাসপাতালের মেঝেতে কান্না করতে করতে গড়াগড়ি খাচ্ছে নওরিন।পাশে নোহা বসা।নওরিন যে এভাবে কান্না করতে পারে তা তার কল্পনারও বাহিরে।নোহা ভেবে পাচ্ছে না নওরিনকে কি করে থামাবে।থামাবে নাকি আরেকটু উসকে দেবে?

তিয়াশ অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে নোহার দিকে।সে একবার নওরিনকে দেখছে একবার নোহাকে দেখছে।
শেষ মেষ বন্ধুর জন্য তাকে মিথ্যেও বলতে হলো নাহ্ বন্ধুর জন্য নয় বউয়ের জন্য।

নিবিড় এসে নওরিনকে মেঝে থেকে তুলে।চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
তিয়াশের দিকে গভীর চোখে তাকায়।
তিয়াশ মাথা নিচু করে বলে উঠে,

-আসলে ইসরাক বলেছে,না মানে ইসরাকের এক্সিডেন্ট হয়েছে।ভোর বেলা কি একটা কাজে বার হয়েছিলো সে হাইওয়ে ক্রস করতেই একটা ট্রাকের সাথে।ও আসলে নওরিনের সাথে দেখা করতে চায়…জীবনের শেষ ইচ্ছে। তাই নওরিনকে ফোন করেছিলাম।
নিবিড় একটু উদ্বীগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করে,
-জামাই এখন কেমন আছে?
তিয়াশ মুখ কাচুমাচু করে,তাকিয়ে আছে নিবিড়ের দিকে..।দুলাভাই যে পড়ে তাকে মেরে তক্তা বানিয়ে দেবে।
তিয়াশকে কিছু বলতে না দিয়ে
পাশ থেকে নোহা ফট করে বলে উঠে,
-খুবই খারাপ ভাইয়া।যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। বড় আম্মুকে এখনো জানানোই হয় নি…..!
জানলে হয় তো…… নোহা অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে।
নওরিন একটু লাফিয়ে উঠে,
-প্লিজ ভাইয়া ওনাকে দেখবো…কোথায় ওনি?
তিয়াশ হাত উঁচু করে একটা কেবিন দেখিয়ে দেয়
-ঐযে ঐখানে
নওরিন এক মুহূর্ত দেরী না করে ছুট লাগায় সেদিকে।
কেবিনে ঢুকতেই দেখে ইসরাক শোয়া।মাথায় ব্যান্ডেজ সারা শরীর চাদরে ঢাকা।

নওরিন ছুটে গিয়ে ইসরাককে জড়িয়ে ধরে,
ইসরাকের কপালে গালে মুখে অজস্র চুমু খায়।
-কে বলেছিলো এতো সকালে বার হতে?
-(…)
-প্লিজ কথা বলুন।আমাকে ছেড়ে যাবেন না স্বামী। মানছি আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি কিন্তু আপনিও তো আমাকে কম কষ্ট দেন নি।এবার তো কাটা কুটি হয়ে গেছে বলুন?এখন তো সব ঠিক করার পালা তাই না?কি হলো স্বামী কথা বলেন না কেন?
-(…)
-আমি ছোট বেলায় স্বপ্ন দেখতাম রূপকথার রাজপুত্রের মতো বর হবে আমার।সাগরকেও তেমনই মনে করতাম।কিন্তু।বিশ্বাস করুন প্রথম যেদিন শুনেছিলাম আপনি সব জেনে আমায় বিয়ে করেছেন আপনার প্রতি আমার সন্মান সেদিনই কয়েকগুন বেড়ে গিয়েছিলো।নতুন করে জীবনটা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিলাম।কিন্তু……
নওরিন একটু থামে
-পরে সবটার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি।তবে আমার অভিমানগুলো তো আর আমার বসে নেই।আমার চাওয়া পাওয়ার হিসেবগুলো আমার নিয়ন্ত্রণে নেই।আমি চাইলেই হয়তো সব ঠিক করতে পারতাম।কিন্তু মনের জোর হয়তো ছিলো না তাই পারি নি।
-(…)
-প্রেমিক পুরুষদের জন্য সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো দূরত্ব আমি শুধু আপনাকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম।আমি চেয়েছিলাম আপনি ভালোবেসে সব দূরত্ব কাটিয়ে আমাকে যত্ন করুন…আপনি যা যা করেছেন তার বিচার করতে বসলে সারা জীবনের দূরত্ব আপনি ডিসার্ভ করেন।কিন্তু এই দূরত্বের নিজেরও কষ্ট হচ্ছে। বিশ্বাস করুন আমিও তো আপনাকে ভালোবাসি।আপনাকে ছাড়া বেঁচে থাকার কথা কল্পনাও করতে পারি না।যেদিন আপনি মেজো ভাইকে বললেন আমাকে তালাক দেবেন সেদিন আর সামলাতে পারি নি নিজেকে।অভিমানগুলো আর সেদিন আমার বসতা স্বীকার করে নি।তাই যা তা একটা ডিভোর্স পেপার বানিয়ে সই করিয়েছে।আপনিও তো দেখলেন না….
তবে আমি আপনাকে ভালোবাসি

ইসরাক ধপ করে বিছানায় উঠে বসে,
-ভালোবাসো সত্যিই???
নওরিন হা করে তাকিয়ে আছে।ইসরাককে এভাবে উঠতে দেখে নওরিন কয়েক মুহূর্ত হতভম্বের মতো বসে থাকে তারপর ফট করে নওরিনকে জড়িয়ে ধরে,
ইসরাক নওরিনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,
-আমাকে আর লজ্জা দিও না নওরিন….অনেক অন্যায় করেছি।অনেক ভুল করেছি। প্লিজ ক্ষমা করো।অনেক তো হলো….
-আপনি ঠিক আছেন স্বামী?
-ঠিক নেই তোমার বিরহে সয্যা নেওয়ার অবস্থা হয়েছে আমার দেখো না….
নওরিন ইসরাকের বুকে দুই চারটা কিল দেয়,
-সব তাহলে নাটক হচ্ছিলো?
-কে বলেছে সব নাটক?তোমাকেই দেখতে যাচ্ছিলাম। মাঝে ছোট্ট একটা এক্সিডেন্টে বেশি না।তবে সব নোহার প্লান ছিলো।

নওরিন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়।যাই হোক মানুষটা তো ভালো আছে।
-তবে নোহা যে বললো?নাটক করছিলেন এভাবে
ইসরাক নওরিনের হাত ধরে,টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে
-কথা দিচ্ছি আজকের পর থেকে তোমাকে কখনো কষ্ট দেবো না।এখন তোমাকে কষ্ট দেওয়ার মানে নিজের সত্তাকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া। প্লিজ আমাকে আর ফিরিয়ে দিও না নয়তো এভাবেই মরে যাবো।

পুরোটা সময় ইসরাক নওরিনকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলো।
নোহার ডাকে ইসরাক নওরিনকে ছেড়ে দেয়,
-কনফিউশান দূর হয়েছে নওরিন?
-কি?
-হুম্ম।ভালোবাসা না বাসার কনফিউশান।ভালোবাসা হারিয়ে ফেললেই ভালোবাসার মূল্য বোঝা যায়।হারিয়ে ফেলার ভয় বন্ধনগুলোকে আরো দৃঢ় করে।যদিও আমি সবটা জানি না তবুও তোমাকে যতটুকু চিনি সংসার ত্যাগ করে চলে যাওয়ার মতো মেয়ে তুমি না।ঠিকিই ফিরতে আসতে।তবে আমি শুধু চেয়েছিলাম তুমি দাভাইয়ের প্রতি ভালোবাসাটা অনুভব করেই ফিরে এসো।
প্লিজ এবার আর কোনো ড্রামা না।
ইসরাক ভ্রু কুচকে তাকায় বোনের দিকে,
-ওকে ওকে ড্রামা নয় টম এন জেরির ভালোবাসা হলো তো

নিবিড় নোহার কথা শুনে আনমোনেই হেসে দেয়।
____________
নওরিনের রেসাল্ট খুব ভালো না হলেও মোটামুটি ভালোই হয়েছে বললেই চলে।ইসরাক হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে গেছে।সঙ্গে নোহা আর তিয়াশও…
আর নওরিন নিবিড়ের সাথে বাড়ি চলে এসেছে।সন্ধ্যায় ইসরাকের পরিবারের লোকজন আসবে। অনুষ্ঠানের দিন তারিখ ঠিক করতে।জিনাত সিকদার বউমাকে ঘরে তোলার জন্য এক পায়ে দাড়িয়ে আছে।
নওরিন রাজি না থাকায় নিতে পারেনি।আজ নওরিন রাজি তার খুশি দেখে কে?

সন্ধ্যায় সিকদার পরিবারের সবাই আসে।কাল দিন পড়েই তারা বড় করে আয়োজন করে নওরিনকে উঠিয়ে নেবে।প্রথমে নওরিনের বাবা মা আমতা আমতা করলেও পড়ে সবাই রাজি হয়ে যায়।

জিনাত সিকদার নিজে হাতে নওরিনের জন্য শাড়ি গয়না সবকিছু দিয়ে যায়।যাওয়ার সময় নওরিনের কপালে ছোট্ট করে চুমু একে দেয়,
-তুমি ছোট্ট মেয়েটা কতো কি সহ্য করেছো।পৃথিবীর সব সুখ তোমার প্রাপ্য।
নওরিন মুচকি হাসি দেয়,
এই মানুষটাই তাকে এক সময় কতো অপমান করতো।অথচ আজ এই মানুষই তাকে আপন করে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
_________
নওরিন বাবা মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসেছে।মেয়েটার চোখের পানি নাকের পানি এক হয়ে গিয়েছে কান্না করতে করতে,
ইসরাক নওরিনের দিকে রুমাল এগিয়ে দেয়,
-বউ তুমি বলছিলা না আমার চোখের পানি নাকে পানি এক করেই ছাড়বে এদিকে দেখো তুমি নিজেই নিজের চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলেছো।
নওরিন চোখ মুছতে মুছতে ইসরাকের দিকে রাগী চোখে তাকায়।তারপর কিছু একটা ভেবে মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে তোলে,
-সাগর ভাইয়ের বিয়ের দিনে কে যেন রাস্তার মাঝখানে বসে বসে কান্না করছিলো।সেই চোখ সেই নাক সেই কান লোকটা বোধহয় দেখতে একেবারে আপনার মতোই ছিলো না সরি সরি আপনিই ছিলেন তাই না?

ইসরাক ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায়।কতোটা পাগল সে৷কি না কি ভেবে কান্নাকাটি করেছে তাও বউয়ের সামনে।বউ এখন তাকে খোঁটা দিবে।শুধু বউ কেন ভবিষ্যৎ বাচ্চা কাচ্চাকে দিয়েও হয়তো খোঁটা দেওয়াবে
________
নওরিন সাওয়ার সেরে চুল মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ায়।
ইসরাক এসে একবার নওরিনের দিকে তাকায়
-সাজ উঠায়ে ফেলসো?
-হুমম। বলা তো যায় না আমার স্বামী নামক আস্বামী হুট করে এসে আবারও আমাকে সং বলে দিলো।তাই রিস্ক নিতে চাই নি।

ইসরাক নওরিনকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,
-সরি বড়। এখনো ক্ষমা করতে পারো নি তাই না?
-বাদ দিন
নওরিন ইসরাককে ছাড়িয়ে নেয়।তোয়ালেটা বারন্দার দিয়ে ঘরে আসে।
ইসরাক বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
-নওরিন
-কবে কখন কিভাবে তোমাকে এতোটা ভালোবেসেছি জানি না আমি।কিছুই জানি না।তবে যেদিন থেকে বুঝেছি তোমাকে আমার লাগবে সেদিন থেকে নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করেছি।প্লিজ এই অগোছালো ইসরাক সিকদারকে নিজের সাথে মিশিয়ে একটু গুছিয়ে দাও

নওরিন ইসরাকের পাশে বসতে বসতে বলে উঠে,
-আমি নিজেই তো বড্ড অগোছালো। আমার জীবনের গল্পটাও বড্ড অগোছালো এলোমেলো। আপনার জীবন কি করে গুছাবো আমি?
ইসরাক নওরিনলে কাছে টেনে নওরিনের কপালে চুমু খায়।
-আমরা একজন আরেক জনকে গুছিয়ে নেবো।ভালোবাসায় আগলে রাখবো দেখো কখনো কোনো কষ্ট পেতে দেবো না।
ইসরাক কথা বলতে বলতে নওরিনের নাকে নাক ঘষে।
-এবার চলো বংশের বাত্তি জ্বালানোর কথা চিন্তা করি….বউ তুমি অনুমতি দিলে
নওরিন ইসরাককে থামিয়ে দেয়,
-যদি না দিই?
ইসরাক উঠে বসে,
-ইট’স ওকে!
-তাহলে যান বেরিয়ে যান।প্রথম দিনের মতো সারারাত ছাদে কাটিয়ে দিন।
নওরিন দরজার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখায়।
ইসরাক একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গায়ে একটা টিশার্ট জড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
নওরিন হেসে কুটি কুটি হয়ে কিছুক্ষণ বিছানায় গড়া গড়ি খায়।
তারপর সেও পেছন পেছন ছুট লাগায়।
-ইস্ লোকটা কি রাগ করলো?

ইসরাক ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে রাস্তার দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে।নওরিন পা টিপে টিপে ইসরাকের কাছে যায় ইসরাককে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
-এলে কেন?
-এমনি।রাগ করেছেন?
ইসরাক সামনে ফিরে তাকায়,নওরিনের কপালে ছোট্ট করে চুমু খায়…
-কোই না তো
-ঘরে চলুন।আমাদের ফিচার বেবি আমাদের জন্য ওয়েট করছে।
_____
প্রাশ বেশ কিছুদিন কেটে গেছে।শিউলি পারভিন বিছানা শয্যা নিয়েছে।স্নেহার এভাবে চলে যাওয়া সে মেনে নিতে পারে নি।
তারউপর আমানের বাবা মায়ের ঘটনার জন্য জিনাত সিকদার তাকে বেশ কথা শুনিয়েছে।

জীবনের হিসাব কষতে কষতে হটাৎ একদিন ঘুমের মাঝেই স্ট্রেক করে সে।ভাগ্য ভালো থাকায় প্রাণে বেঁচে গেলেও শরীরের জোড় সে ফিরে পায় নি।
মনই যে শরীরের চাবিকাঠি। মনে জোড় না থাকলে শরীরে জোড় কি করে পাবে।দিন যেতে থাকে আর শিউলি পারভিনের শরীর আরো খারাপ হতে থাকে।সে না নিয়ম করে খাবার খায় না অসুধ।
জিনাত সিকদার শিউলির পাশে বসে আছে।শিউলি পারভিনের অবস্থা বেশি ভালো না।জিনাত সিকদার বাবা মাকে খাবর পাঠিয়েছে।সাথে এ্যাম্বুলেন্সও ডেকেছে সে,
শিউলি হাপাতে হাপাতে বোনকে কাছে ডাকে
-আপা মরার আগে সত্যি বলতে চাই
জিনাত সিকদার চারপাশে তাকিয়ে ঘর ফাকা করে।বোনের কাছে গিয়ে অবাক হয়ে বোনকে প্রশ্ন করে,
-কিসরে সত্যিই?
-আমানের বাবার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিলো না বুবু।
-কি বললি?
-আমাকে থামিও না বলতে দাও।হয়তো আর কখনো সুযোগ পাবো না।,সেদিন ইসারাক বাবা খাবেনা বলে ছুটাছুটি করছিলো।ছুটতে ছুটতে ঐ ঘরে যায়।ইসরাক বেরিয়ে যায় আমার ওর পিছু যেতে গেলে আমার মাথা ঘুরে যায় নিচে পড়ে যেতে নিলে আমানের বাবা আমাকে ধরে ফেলে।ঐ মুহূর্তেই প্রিয়োতা চলে আসে।আর আমাদের ঐভাবে দেখে ফেলে।বুবু বিশ্বাস করো আমাদের কোনো দোষ ছিলো না।আমি বুঝিয়ে বলতে চেয়েছিলাম।আমানের বাবাও চেয়েছিলো, প্রিয়োতা সুযোগ দেয় নি।
জিনাত সিকদার থমথমে মুখ করে বসে আছে,
-আমার সিফাত ভাই (আমানের বাবার ম্যানেজারের) সাথে সম্পর্ক ছিলো।কিন্ত এক পর্যায়ে সে আমিকে অস্বীকার করে।তখন দিশে হারা হয়ে আমানের বাবার কাছে সাহায্য চাই।আমানের বাবা শুধু আমাকে করুণা করতো।এক ডিভোর্সি প্রতারিত নারী হিসেবে।সেটাকেই প্রিয়োতা অন্য চোখে দেখেছে।ওর সন্দেহ প্রবণ মন ওকে যা দিখিয়েছে ও তাই দেখেছে।আমানের বাবার অতীতটা হয়তো সে পুরোপুরি ভুলতে পারে নি।

-বুবু বাচ্চাটাও সিফাতভাইয়ের ছিলো।সে সুযোগ বুঝে পালিয়ে গেলো।আমানের বাবাও চলে গেলো।আমার শেষ ঠিকানা ছিলো সিকদার বাড়ি।বাবা মা যে আমাকে ওভাবে রাখবে না তা তো তুমি জানতে।ভেবেছিলাম বাচ্চার উছিলায় একটা ঠিকানা পেয়ে যাবো।সিকদার বাড়ির চিলেকোঠায় হলেও একটা আশ্রয় পাবো।তারপর হয়তো সিফাত ভাই সেই বাচ্চার টানেই ফিরে আসবে। তাই কিছু বলিনি বুবু।খুব কি অন্যায় করে ফেলেছি?
তিনি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলে উঠেন
-হ্যা অন্যায় করেছি।একজন মৃত মানুষকে বদনাম করেছি।তবে বিশ্বাস করো বুবু আমি সেদিন প্রিয়োতাকে বুঝাতে চেয়েছিলাম সে সুযোগ দিলো না।ওরা কি আমাকে ক্ষমা করবে না?
শিউলি পারভিন সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

জিনাত সিকদার হতবাক।হয়ে বোনের পাশে বসে আছে।সে যেন কান্না করতেও ভুলে গেছে।
শিউলি পারভিনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।ডাক্তার শিউলি পারভিনকে মৃত ঘোষনা করে।মারা যাওয়ার আগে একমাত্র মেয়ে স্নেহার মুখটাও তার দেখা হলো না।
____________
মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।আজো জিনাত সিকদারের আফসোস হয়, ইস্ এতোগুলো বছর ধরে বোনকে কতোই না অপমান করেছে সে।প্রিয়োতার সংসার ভাংগার সব দোষ তাকে দিয়েছে।আচ্ছা সেদিন যদি প্রিয়োতা একটু ঠান্ডা মাথায় সবটা বিচার করতো, শুনতো তাহলে কি আজকে এই দিনটা দেখতে হতো?নাহ্ হয়তো আমান তার বাবা মাকে নিয়ে সুখে থাকতো!জিনাত সিকদার একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে জায়নামাজ বিছায়।আজকাল দিনের বেশির ভাগ সময়ই তিনি ইবাদতে মশগুল থাকেন।সংসারের সব দায়িত্ব ছোট চাচী আর নওরিনের।নওরিন পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে সংসার সামলাচ্ছে।সব মিলিয়ে সুখেই আছে সে।আপাতোতো সে এই সিকদার বাড়ির রাণী।ইসরাক চাকুরি ছেড়ে পারিবারিক ব্যবসায়ে যুক্ত হয়েছে।
______
ইশা আজও আমানের অপেক্ষায় আছে।আমান রোজ তাকে কল করে।খোঁজ নেই।মাঝে মাঝে ভিডিও কলও দেয়।তবে দিন শেষে সে অপূর্ণ। আমান ফিরে আসে নি।এতোগুলো বছরেও সে ফিরেনি।সব পেয়েও আজ সে নিঃস্ব।তবুও সে আশায় বুক বেঁধে বসে আছে হয়তো কোনো দিন আমান ফিরবে…ভালোবেসে তাকে আগলে নেবে।তারও একটা সংসার হবে।আমানের সাথে সে ঘর বাঁধবে। পূর্ণতা পাবে তার জীবনও

…………………সমাপ্ত………….