প্রিয় অসুখ পর্ব ৮

0
491

প্রিয় অসুখ
পর্ব ৮
মিশু মনি
.
বাস কলাবাগান কাউন্টারে এসে পৌঁছল ভোর চার টায়। শ্রবণা গভীর ঘুমে অচেতন ছিলো। শীতুল ঘুম ভাঙিয়ে শ্রবণাকে নিয়ে বাস থেকে নামলো। শ্রবণা চোখ কচলাতে কচলাতে বললো, ‘এখনো তো রাত শেষ হয় নি। এত তাড়াতাড়ি চলে এলাম যে?’
– ‘রাস্তা ফাঁকা ছিলো। বাস খুব দ্রুত চলেছে তো।’
– ‘কিন্তু..’
– ‘কি? থাকো কোথায়?’
– ‘এই তো স্কয়ার হসপিটালের পাশেই বাসা।’
– ‘বাহ! একে বলে কপাল। এখন বাসায় গিয়ে গোসল সেরে একটা ফ্রেশ ঘুম দাও।’

শ্রবণা মাথা চুলকে বললো, ‘আসলেই একে বলে কপাল। বাসায় যেতে দু মিনিটের রাস্তা। অথচ গেট খুলবে সকাল সাতটায়।’
– ‘সিরিয়াসলি? দাড়োয়ানকে বললে খুলে দেবে না?’
– ‘আমাদের বাসায় দাড়োয়ান নেই। আংকেলকে ফোন দিলে নামবে না এতটুকু শিওর।’
– ‘একা থাকো?’
– ‘সাবলেট।’

শীতুল থমকে কি যেন ভাবলো। ফুটপাতে অনেক যাত্রী বাস থেকে নেমে বসে আছে। বেশিরভাগই ট্যুরিস্ট আর কিছু আদিবাসী। শীতুল ফুটপাতে অনায়াসে ধপ করে বসে পড়লো। শ্রবণা বসতে ইতস্তত করতে করতে শেষ পর্যন্ত বসে গেলো। চোখ কচলে বললো, ‘এখনো ঘুম লেগে আছে। এসির হাওয়ায় মরার মত ঘুম দিয়েছিলাম।’
– ‘কি যে বলো। অবশ্য ঘুমটা দরকার ছিলো।’
– ‘এত যাত্রী এভাবে বসে আছে কেন? সবার কি বাসার গেট লাগানো?’
– ‘ভোরের আলো ফুটলে সবাই চলে যাবে। এখন তো সিএনজি ভাড়াও বেশি। তাছাড়া বেশিরভাগই ট্রাভেলার দেখছো না?’
– ‘হুম। বাস গুলো কেন যে এত তাড়াতাড়ি নামিয়ে দেয়।’
– ‘বাসের দোষ নেই। খাগড়াছড়ি থেকে আর্মির স্কর্টে একসাথে সব বাস ছাড়ে। রাস্তায় জ্যাম না হলে ভোর চারটা নাগাদ সব ঢাকায় ঢোকে। এখানে বেশিরভাগই খাগড়াছড়ির যাত্রী।’
– ‘এত মানুষ খাগড়াছড়ি কি করতে যায়?’
– ‘এখানে যতগুলো ছেলেমেয়ে দেখছো, বেশিরভাগ নিশ্চয় সাজেক ট্যুরে গিয়েছিলো। আর আদিবাসীরা তো আসবেই। আমরাও তো খাগড়াছড়ির বাসে এসেছি।’
– ‘ওহ আচ্ছা। আপনি দেখেই সবকিছু বোঝেন?’

শীতুল হেসে বললো, ‘এক্সপেরিয়েন্স কথা বলে। যাইহোক, মশা কামড়াচ্ছে?’
– ‘তা তো কামড়াচ্ছেই। আপনাকে?’

শীতুল বিদ্রুপ করে বললো, ‘আমার তো স্টিলের শরীর। আমাকে কেন কামড়াবে? কি যে অদ্ভুত কথা বলো।’

শ্রবণা লাজুক ভঙ্গিতে হাসলো। তারপর রাস্তার দিকে তাকালো। হাইওয়ে ফাঁকা। এখনো অন্ধকার রাত বিরাজমান। এইমুহুর্তে কোনো জ্যাম নেই এই শহরে। মাঝেমাঝে দু একটা বাস এসে দাঁড়ায়, যাত্রী নামিয়ে দিয়ে আবার হুশ করে চলে যায়। কাউন্টার গুলো সব বন্ধ। এমনকি কোনো দোকানও খোলা নেই। শুধু ফুটপাতে কাউন্টারের সামনে কিছু যাত্রী চাতকের মত বসে আছে ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায়। ল্যাম্পপোস্ট গুলো কি সুন্দর শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাথায় আলো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া ওদের আর কোনো কাজ নেই।

শীতুল জানতে চাইলো, ‘কি ভাবছো?’

শ্রবণা নির্বিকার ভঙ্গিতে হাঁটু তুলে হাঁটুর উপর হাত রেখে বললো, ‘ভাবছি ল্যাম্পপোস্ট গুলো কত মহান। সারারাত মাথায় আলো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।’

শীতুল অভিভূত হয়ে শ্রবণার দিকে তাকালো। বিস্ময়ে খানিক হেসে বললো, ‘বাহ! অসাধারণ একটা কথা বলেছো তো। সারারাত মাথায় আলো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। গ্রেট!’
– ‘হুম। আলো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া ওদের আর কোনো কাজ নেই। না, আরেকটা কাজ আছে। সেটা হচ্ছে ধূলাবালি খাওয়া, গাড়ির হর্ন আর মানুষের কোলাহল সহ্য করা।’

শীতুল মাথা ঝাঁকালো। ভোরের আলো ফোটার আগে রাতের সৌন্দর্য যেন কয়েক গুণ বেড়ে যায়। শহরের রাত গুলো আরো অদ্ভুত সুন্দর। ল্যাম্পপোস্ট গুলো হঠাৎ করেই যেন কোমল আলো দিতে শুরু করে। গাড়িগুলো সব বোধহয় নিয়মের মধ্যে এসে পড়ে। বিরতি দিয়ে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়, আবার হুশ করে ছেড়ে চলে যায়। রাস্তাগুলো ফাঁকা, রাস্তার ধারে কয়েকটা রিক্সাওয়ালারা রিক্সায় পা তুলে বসে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। মাঝেমাঝে যাত্রীদের সাথে ভাড়া নিয়ে দড় কষাকষি হচ্ছে। ভাড়া বেশি শুনে কেউ আর যেতে চায় না। রিক্সাওয়ালা গুলো আবার ভাব নিয়ে বসে থাকে।

শ্রবণার কথায় ওর দিকে ফিরে তাকালো শীতুল। শ্রবণা বললো, ‘আপনি কোথায় থাকেন জানা হলো না তো।’
– ‘ধানমন্ডি ২৭।’
– ‘কাছেই তো আছে। একটা রিক্সা নিয়ে চলে যান। নাকি আপনারও বাসার গেট দেরিতে খুলবে?’
– ‘আমি বাপের বাড়িতেই থাকি।’
– ‘তাহলে তো ভালোই। চলে যান।’

শীতুল কিছু না বলে ব্যাগ থেকে বিস্কুটের প্যাকেট বের করে খেতে আরম্ভ করলো। শ্রবণা উত্তরের আশায় শীতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। শীতুল বিস্কুটের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘চলবে?’
– ‘হ্যাঁ, থ্যাংকস।’
– ‘একটা প্রশ্ন করি? যদি কিছু মনে না করেন।’

শ্রবণা উৎসুক চোখে শীতুলের দিকে তাকালো। শীতুল শ্রবণা’র চোখে চোখ রেখে বললো, ‘আমাকে কতটুকু চিনেছেন এই অল্প সময়ের পরিচয়ে?’

শ্রবণা ঝটপট উত্তর দিলো, ‘মানুষ হিসেবে খুবই ভালো, অন্য ছেলেদের সাথে তুলনা করলে সবার চেয়ে আলাদা।’
– ‘আমার দ্বারা কোনো ক্ষতি হবেনা এতটুকু শিওর তো?’
– ‘হুম হান্ড্রেড পারসেন্ট। কেন বলুন তো?’

শীতুল বিস্কুটের প্যাকেট শ্রবণার হাতে দিয়ে পানির বোতল বের করলো। ঢকঢক করে পানি খেয়ে সেটা নিচে রেখে বললো, ‘আমার মা অনেক ভালো মহিলা। মা হিসেবে সবাই ভালো। আমি কিন্তু স্পেসিফিক মহিলা হিসেবে বললাম। উনি আমার মা ছাড়াও মেয়ে হিসেবে অনেক ভালো। তোমার জন্য খুব ভালো হবে যদি আমাদের বাসায় যেতে কোনো আপত্তি না থাকে?’

শ্রবণা বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো। শীতুল বললো, ‘না মানে এভাবে সাতটা পর্যন্ত রাস্তায় বসে থাকার কোনো মানে হয় না। প্রচণ্ড মশা কামড়াচ্ছে, পরে ডেঙ্গু বেঁধে যাবে। তাছাড়া বাসে আমার ঘুম হয়না, বাসায় গিয়ে একটা ফ্রেশ ঘুম দিতে হবে। আপনাকে ফেলে যাওয়াটা কেমন বেখাপ্পা দেখায়। বাকিটা আপনি ভেবে দেখুন।’

শ্রবণা মনেমনে খুশি হলো। প্রকৃতি কি তাহলে অনুকূলে আসতে চাইছে! পরিস্থিতি শীতুলের বাসা দেখার সুযোগ করে দিতে চাইছে। পরিস্থিতিকে আরো সামনে বাড়তে দেয়া উচিৎ। দেখা যাক কতদূর নিয়ে যায় সে?

শীতুল জিজ্ঞেস করলো, ‘কি ভাবছো?’
– ‘যেতে পারি। কিন্তু আপনাকে অযথা বিরক্তিতে ফেলে দিতে চাইছি না।’
– ‘বিরক্ত কি কম করেছো?’

বলতে বলতে হেসে ফেললো শীতুল। শ্রবণাও হেসে উঠলো। শীতুল হাসি থামিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিতে নিতে উঠে দাঁড়ালো। কেন যেন প্রচণ্ড হাসি আসছে ওর। শ্রবণাও মিটমিট করে হাসছে। শীতুল শ্রবণার ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো, ‘আমাকে দাও। আমার বাসার মেহমানকে সযত্নে নিয়ে যাওয়াটা আমার দায়িত্ব না?’

শ্রবণা মুচকি হেসে বললো, ‘কেউ বিরক্ত হতে চাইলে আমার কষ্ট নেই। কিছু কিছু মানুষকে বিরক্ত হলে আরো সুন্দর দেখায়।’
– ‘সুন্দরের গুষ্টি কিলাই। হিজড়া রা দেখলেই গায়ের উপর উঠে পড়ে।’

শ্রবণা হো হো করে হেসে উঠলো। হাসি থামতেই চাইছিলো না। শীতুল একটা সিএনজি ডাক দিলে শ্রবণা বললো, ‘রিক্সায় গেলে কি রিস্ক আছে?’

শীতুল একটু ভেবে বললো, ‘আযান হয়ে গেছে। এখন আশাকরি কোনো সমস্যা হবে না।’
– ‘আমার অনেকদিনের ইচ্ছে অন্ধকারাবৃত ভোরে ঢাকা শহরে রিক্সায় ঘুরবো। পুরো রাস্তা থাকবে ফাঁকা। জ্যামহীন ঢাকায় ভোরবেলা ঘুরতে দারুণ উপভোগ্য লাগবে না?’

শীতুল বাঁকা ঠোঁটে হেসে বললো, ‘ভেবেছিলাম নিরামিষ। এখন দেখছি আমিষও আছে।’

শ্রবণা ভ্রু কুঁচকালো। শীতুল রিক্সা ঠিক করে শ্রবণাকে উঠতে বললো। শ্রবণা রিক্সায় উঠে হাত বাড়িয়ে নিজের ব্যাগ নিয়ে ব্যাগটা কোলের উপর রেখে আনন্দে টগবগ করতে লাগলো।

শীতুল পাশে বসার পর শ্রবণা’র এত আনন্দ হচ্ছিলো যে চিৎকার দিতে যাচ্ছিলো। শীতুল অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রিক্সাওয়ালা দ্রুত রিক্সা টানছেন। শো শো করে বাতাস লাগছে। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আয়রনযুক্ত পানিতে পেয়ারা পাতা ডুবিয়ে রাখলে যে রঙ হয়, ভোরের রংটা ঠিক সেরকম লাগছে। এরকম একটা সকাল কখনো দেখেনি শ্রবণা।

শীতুল শ্রবণা’র আনন্দ দেখে প্রথমে অবাক হলেও পরে নিজেই বুঝতে পারলো রিক্সায় উঠে কতটা ভালো করেছে। এত সুন্দর একটা সকাল না দেখলে জীবনের অনেক কিছুই অপূর্ণ থেকে যেত। অবশ্য ভোরবেলা ফুটপাতে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় বসে থাকার মাঝেও একটা অন্যরকম অনুভূতি ছিলো। আজকের সকালটা সত্যিই অন্যরকম, একেবারে অন্যরকম।

ফাঁকা রাস্তায় রিক্সা যেন উড়ে চলেছে। এতেও আনন্দ হচ্ছে ভীষণ। শ্রবণার গান গাইতে ইচ্ছে করছে। গুণগুণ করে গেয়েও উঠলো দুটো লাইন। একটা কথা মনে পড়ে যাওয়ায় গান থামিয়ে শীতুলের দিকে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা তখন আপনি ওটা বললেন কেন?’
– ‘কোনটা?’
– ‘এই যে, একেবারে নিরামিষ না। আমিষও আছে। আমিষ বলতে?’

শীতুল হাসতে হাসতে বললো, ‘আরে বাবা ফাজলামো করেছি। আমি ভেবেছিলাম একটু অদ্ভুত হলেও মেয়ে হিসেবে টিপিক্যাল মেয়েদের মতই হবে। কিন্তু কিছু কিছু জিনিস দেখে খুব অবাক হচ্ছি। আর দু একটা কারণ পেলে অসাধারণ বলাই যায়।’

শ্রবণা তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, ‘জাজ যদি এত নরমাল ব্রেইন পোষে, ভালো কিছু কি করে আশা করা যায়?’
– ‘কি বললে?’
– ‘থাক বাবা। এখন ঝগড়া করে এই সুন্দর সকালটাকে নষ্ট করে দিতে চাইছি না।’

শীতুল হাসলো। শ্রবণার সাথে বন্ধুত্ব করার কোনো ইচ্ছে ই ছিলো না। তবুও বন্ধুত্বটা হয়ে গেলো। মাঝেমাঝে না চাইলেও প্রকৃতি কিছু মানুষ জুটিয়ে দেন। হঠাৎ করে পুরনো সেই ব্যথাটা আবার চিনচিন করে উঠলো। শ্যামলতা! কোথায় তুমি?

শ্যামলতার কথা মনে হতেই মনটা অশান্ত হয়ে গেলো। চিঠি পড়তে ইচ্ছে করছে। এই মুহুর্তে ব্যাগ থেকে ডায়েরি বের করে একটা চিঠি পড়ে ফেলা যায় না? কিন্তু এখন তো আবছা অন্ধকার। কোনোভাবেই পড়া যাবে না। মনটা নিমেষে খারাপ হয়ে গেলো শীতুলের।

শ্রবণা বললো, ‘এই সকালটা কিন্তু বাঁধিয়ে রাখার মত।’
– ‘এত বড় ফ্রেম কোথায় পাবেন? আর সকালটা টাঙানোর মত দেয়ালই বা পাবেন কোথায়?’

শ্রবণা হেসে বললো, ‘দুষ্টু মানুষ একটা। সবকিছু কি ফ্রেমে বাঁধাতে হয়? মনের ফ্রেমে মনের দেয়ালে টাঙিয়ে রাখবো।’
– ‘সকালের সেই ফ্রেমে কি আমিও থাকবো?’
– ‘হুম। আপনাকে ছাড়া সকালটা অন্যরকম হতোই না।’
– ‘বাব্বাহ তাই! হুম নতুন একজন বন্ধু জুটে গেলো। অনিচ্ছাসত্ত্বেও বন্ধুত্ব হয়ে গেলো না?’
– ‘তা হয়েছে। কিন্তু বন্ধুত্বের চেয়ে বেশিকিছু আশা করা যায় না?’
– ‘আশা না করাই ভালো। কারণ সম্ভাবনা একেবারেই নেই।’

শ্রবণা একটা হালকা নিশ্বাস ফেললো। সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই সেটা ও ভালো করেই জানে। তবে সময়ের স্রোত যেদিকে টেনে নিয়ে যায়, সেদিকে যেতে আপত্তি নেই শ্রবণা’র। জীবনের একজনই স্বপ্নের রাজকুমার ছিলো, প্রকৃতি হয়তো কষ্ট দিতে দিতে শেষবেলায় প্রসন্ন হতেও পারে।

১০
বাসার সামনে পৌঁছে রিক্সাভাড়া মিটিয়ে গেটে শব্দ করলো শীতুল। দাড়োয়ান গেট খুলে দিয়ে বললো, ‘কি অবস্থা চাচ্চু?’

শীতুল দাড়োয়ানকে জাপটে ধরে বললো, ‘আরে চাচা কতদিন পর। ভালোই আছো তাহলে?’
– ‘হ্যাঁ বাবা। স্লামালেকুম মামনি।’

শ্রবণা সালামের উত্তর দিয়ে শীতুলের সাথে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো। অজান্তেই প্রশ্ন করে ফেললো, ‘উনি কি আপনার চাচা?’
– ‘আরে না না। আমাদের বাসার দাড়োয়ান। চাচা বলে ডাকি।’
– ‘দাড়োয়ানকে জড়িয়ে ধরার মত ছেলে এই শহরে কমই আছে।’
– ‘আমি সবসময় নিজেকে কমের দলে রাখতেই চেষ্টা করি।’

শ্রবণা প্রসন্নভাবে হাসলো। শীতুল ওকে নিয়ে উপরে উঠে এলো। শীতুলের সাথে যত সময় পেরোচ্ছে তত মুগ্ধ হতে হচ্ছে। এদিকে শীতুলও কম অভিভূত হয়নি। কিন্তু ওর মনে শ্যামতার ছায়া অশান্তির ছাপ ফেলতে ফেলতে একেবারে কুঁকড়ে দিচ্ছে।

শীতুল মাকে দেখেই জাপটে ধরলো। উনি ছেলেকে আদর করে দিয়ে শ্রবণার দিকে তাকালেন। সাত সকালে একটা মিষ্টি মেয়েকে দেখে অবাক হয়ে বললেন, ‘কে রে বাবা?’

শীতুল পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো, ‘আম্মু, ও আমার ফ্রেন্ড। বাস খুব ভোরে নামিয়ে দিয়েছে কিন্তু ওর বাসা দেরিতে খুলবে। তাই নিয়ে এলাম। একসাথে নাস্তা করবো। আগে আমাকে শাওয়ার নিতে হবে। গোসল না করলে ভালো লাগবে না। ‘

আন্টি গিয়ে শ্রবণাকে জড়িয়ে ধরে সৌজন্যতা সূচক হাসলেন। শীতুল শ্রবণাকে মায়ের সাথে থাকতে বলে নিজের রুমের দিকে গেলো। রুমে ঢুকে ব্যাগ থেকে ডায়েরি বের করে আগে ডায়েরির উপর চুমু দিলো শীতুল। তারপর ডায়েরিটা টেবিলের ড্রয়ারে রেখে চেঁচিয়ে মাকে বললো ব্যাগের কাপড়গুলো শুকাতে দিতে।

মা শ্রবণাকে বাথরুম দেখিয়ে দিয়ে রান্নাঘরে গেলেন খাবার গরম করতে। এরপর শীতুলের ব্যাগ থেকে একটা একটা করে সব জামাকাপড় বের করে বিছানার উপর রাখলেন। শ্রবণা গোসল সেরে এসে দেখলো উনি শীতুলের জামাকাপড় গুলো যত্ন সহকারে বেলকুনিতে মেলে দিচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃতির কি অদ্ভুত নিয়ম, শীতুল আগেই ডায়েরি নিজের ড্রয়ারে রেখে দিয়েছে। শ্রবণার সামলে কাপরগুলো বের করলে ডায়েরিটাও চোখে পড়তো ওর। কিন্তু প্রকৃতি সেটা হতে দিলো না। এদিকে শীতুল শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে শ্যামলতাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠছিলো। শ্যামলতার চেহারা কেমন হতে পারে সেটা ভেবে মনের মধ্যে ওর একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করছিলো।

মা শ্রবণার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো, ‘তোমার নামটা যেন কি?’

শ্রবণা মুচকি হেসে বললো, ‘আন্টি আমার নাম শ্রবণা। অবশ্য বাবা আমার নাম রেখেছিলেন শ্যামলতা।’
– ‘আমি কি বলে ডাকবো?’
– ‘শ্যামলতা বলে কেউ ডাকেনা। সবাই শ্রবণা নামেই চেনে। আপনিও শ্রবণা- ই বলুন।’
– ‘আচ্ছা মা। তুমি থাকো কোথায়?’
– ‘কলাবাগানে আন্টি।’
– ‘কলা পাহারা দাও? হা হা হা।’

আন্টির সাথে শ্রবণাও হেসে উঠলো। এমন সময় শীতুল এসে বললো, ‘কিসের এত হাসি শুনি?’

মা কথাটা বলতে বলতে আবার হেসে ফেললেন। শীতুলও হাসলো। শীতুল আর একটু আগেই এলে শ্রবণার ‘শ্যামলতা’ নামটা শুনতে পেতো। কিন্তু পরিস্থিতি এবারো ওদের সাথে অদ্ভুত খেলা খেললো।

চলবে..